“গজনীর বর্বর মাহমুদ”
পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউএটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী' এটা করেছে। সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের সুপুত্র'মাহমুদ', যে ভারতের ইতিহাসে 'গজনীর মাহমুদ' বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাসকরা দুরুহ মনে হয়।অনেক বর্বর সাম্রাজ্যবাদী এবং লুটেরাদের কাহিনী ইতিহাসে লেখা আছে। সেইলুটের ধরন বর্তমানে একটু পালটেছে, কিন্তু যুদ্ধবাজদের মনের আসল উদ্দেশ্যএকই আছে। কোনো রাজনৈতিক মতের কথা বলুন বা ধর্মীয় মতের কথা বলুন,আসল উদ্দেশ্য নিরীহ মানুষের ওপরে অত্যাচার করে নিজে ভালো থাকবো।মোদ্দা কথা এটাই। একমাত্র সনাতনি দর্শন এবং তার ধারক ও বাহকদের বাদদিয়ে এই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক, সামাজিক মতকে আশ্রয়করে যুগে যুগে যা হয়েছে সেটা বিরুদ্ধবাদী নিরীহ মানুষের অপর অত্যাচার।আজ এই গন্তান্ত্রিক যুগেও সেই কাজ চলছে, সারা পৃথিবীতে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠারনামে
অর্থনৈতিক শোষনের পরিকল্পনা।
বর্তমান বাদ দেই। ঐতিহাসিক আমলে, পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার (মহান???), এটিলা দি হুন, রোম সম্রাটেরা, আরবী তুর্কি জিহাদীরা, চেংগিজ খান, হুন রাজ মিহিরকুল, রক্ত পিপাসু তৈমুর লং, কুষান সম্রাটেরা , মোঘল সম্রাটেরাবিশেষ করে আকবর আর ঔরংজেব, ক্যমুনিষ্ট রা, নাৎসী বাহিনী, এরা সবাই এই কাজ করেছে। অন্যের দেশ দখল করে,তাদের সর্বাস্ব লুট করে নিজে আরাম আয়েষ করেছে। এরা এই সব করেছে, কোনো বিশেষ একটি ধর্মীয় মোড়কেরাজনৈতিক মতবাদকে আশ্রয় করে। আক্রমন করো, ধ্বংস করো ,লুট করো, লুটের মাল নিজে রাখো আর উচ্ছিষ্ট যারা লুটকরতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যে বিলি করে তাদের খুশী রাখো ( রানা মানসিংহের সংগে আকবরের অলিখিত চুক্তিইছিলো, তুমি জায়গা দখল করো- জায়গা আমার,লুটের মাল তোমার। বর্তমান অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীহাবার জন্য ওই একই কাজ করেন—“ সাধারন মানুষকে লুট করো, নিজে রাখো কিন্তু আমাকে ক্ষমতাশালী করো। আমারক্ষমতা থাকলে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। এই তো চলছে মানুষের ইতিহাস।
যে জন্য এতো কথা বলার, সেটা হলো, ইতিহাস ঘাটলে এমন নজির পাওয়া যাবে না যে মাত্র একটি প্রাচীন দেশের শান্তিপ্রিয়মানুষকে লুট তরাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থান কলুষিত করে, অসংখ্য সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে , কোনো একটিবিশেষ ধর্মীয় মতকে আশ্রয় করে এবং সেই মতের প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ব্যাক্তি ৩০ বছর ধরে ১৭ বার সেই দেশ আক্রমনকরেছে। পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউ এটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী’ এটা করেছে।সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের (যার কথা আমরা আগেই জেনেছি) সুপুত্র ‘মাহমুদ’, যে ভারতের ইতিহাসে‘গজনীর মাহমুদ’ বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাস করা দুরুহ মনেহয়। সেই বর্বরের হাত থেকে নিজ রাজ্য এবং প্রজা কুলকে রক্ষা না করতে পেরে শাহী রাজ জয়াপাল আগুনে আত্মাহুতিদিয়েছিলেন। (এই বিষয়ে আর বিস্তারিত প্রশ্ন করবেন না কারন আমি আমার টাইমলাইনে আগেই বেশ কয়েকবার পোষ্টকরেছি।)
আমাদের শেখা ইতিহাসে এই “মহান জিহাদী” র কথা কি আছে?? শুধু এই লেখা আছে ‘মাহমুদ’ ১৭ বার ভারত আক্রমনকরেছিলো। কিন্তু কোথাও পাবেন না, ওই ১৭ বারে সে কি করেছিলো? শান্তির বানী প্রচার করেছিলো না ‘অশান্তির দাবানল’ জালিয়েছিলো, সারা উওর-পশ্চিম ভারতে। সেই থেকে ভারত বাসীর সার্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশা , রাজনৈতিক, সামাজিক,ধর্মীয় এবং সাংষ্কৃতিক অবক্ষয়ের শুরু।
এই ইতিহাস অতি করুন এবং কঠিন বাস্তব, যা আমরা জানি না, আমাদের আজো জানানো হয়নি। পরবর্তি কিছুআলোচনায় আমরা দেখবো সেই ‘ আশান্তির দাবানল’ এর বিধ্বংসী তান্ডবতা, লুটের বহর এবং তার ফলশ্রুতি।
অনেক বর্বর সাম্রাজ্যবাদী এবং লুটেরাদের কাহিনী ইতিহাসে লেখা আছে। সেই লুটের ধরন বর্তমানে একটু পালটেছে, কিন্তুযুদ্ধবাজদের মনের আসল উদ্দেশ্য একই আছে। কোনো রাজনৈতিক মতের কথা বলুন বা ধর্মীয় মতের কথা বলুন, আসলউদ্দেশ্য নিরীহ মানুষের ওপরে অত্যাচার করে নিজে ভালো থাকবো। মোদ্দা কথা এটাই। একমাত্র সনাতনি দর্শন এবং তারধারক ও বাহকদের বাদ দিয়ে এই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক, সামাজিক মতকে আশ্রয় করে যুগে যুগে যাহয়েছে সেটা বিরুদ্ধবাদী নিরীহ মানুষের অপর অত্যাচার। আজ এই গন্তান্ত্রিক যুগেও সেই কাজ চলছে, সারা পৃথিবীতেগনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে
অর্থনৈতিক শোষনের পরিকল্পনা।
বর্তমান বাদ দেই। ঐতিহাসিক আমলে, পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার (মহান???), এটিলা দি হুন, রোম সম্রাটেরা, আরবী তুর্কি জিহাদীরা, চেংগিজ খান, হুন রাজ মিহিরকুল, রক্ত পিপাসু তৈমুর লং, কুষান সম্রাটেরা , মোঘল সম্রাটেরাবিশেষ করে আকবর আর ঔরংজেব, ক্যমুনিষ্ট রা, নাৎসী বাহিনী, এরা সবাই এই কাজ করেছে। অন্যের দেশ দখল করে,তাদের সর্বাস্ব লুট করে নিজে আরাম আয়েষ করেছে। এরা এই সব করেছে, কোনো বিশেষ একটি ধর্মীয় মোড়কেরাজনৈতিক মতবাদকে আশ্রয় করে। আক্রমন করো, ধ্বংস করো ,লুট করো, লুটের মাল নিজে রাখো আর উচ্ছিষ্ট যারা লুটকরতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যে বিলি করে তাদের খুশী রাখো ( রানা মানসিংহের সংগে আকবরের অলিখিত চুক্তিইছিলো, তুমি জায়গা দখল করো- জায়গা আমার,লুটের মাল তোমার। বর্তমান অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীহাবার জন্য ওই একই কাজ করেন—“ সাধারন মানুষকে লুট করো, নিজে রাখো কিন্তু আমাকে ক্ষমতাশালী করো। আমারক্ষমতা থাকলে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। এই তো চলছে মানুষের ইতিহাস।
যে জন্য এতো কথা বলার, সেটা হলো, ইতিহাস ঘাটলে এমন নজির পাওয়া যাবে না যে মাত্র একটি প্রাচীন দেশের শান্তিপ্রিয়মানুষকে লুট তরাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থান কলুষিত করে, অসংখ্য সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে , কোনো একটিবিশেষ ধর্মীয় মতকে আশ্রয় করে এবং সেই মতের প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ব্যাক্তি ৩০ বছর ধরে ১৭ বার সেই দেশ আক্রমনকরেছে। পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউ এটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী’ এটা করেছে।সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের (যার কথা আমরা আগেই জেনেছি) সুপুত্র ‘মাহমুদ’, যে ভারতের ইতিহাসে‘গজনীর মাহমুদ’ বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাস করা দুরুহ মনেহয়। সেই বর্বরের হাত থেকে নিজ রাজ্য এবং প্রজা কুলকে রক্ষা না করতে পেরে শাহী রাজ জয়াপাল আগুনে আত্মাহুতিদিয়েছিলেন।
আমাদের শেখা ইতিহাসে এই “মহান জিহাদী” র কথা কি আছে?? শুধু এই লেখা আছে ‘মাহমুদ’ ১৭ বার ভারত আক্রমনকরেছিলো। কিন্তু কোথাও পাবেন না, ওই ১৭ বারে সে কি করেছিলো? শান্তির বানী প্রচার করেছিলো না ‘অশান্তির দাবানল’ জালিয়েছিলো, সারা উওর-পশ্চিম ভারতে। সেই থেকে ভারত বাসীর সার্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশা , রাজনৈতিক, সামাজিক,ধর্মীয় এবং সাংষ্কৃতিক অবক্ষয়ের শুরু।
এই ইতিহাস অতি করুন এবং কঠিন বাস্তব, যা আমরা জানি না, আমাদের আজো জানানো হয়নি। পরবর্তি কিছুআলোচনায় আমরা দেখবো সেই ‘ আশান্তির দাবানল’ এর বিধ্বংসী তান্ডবতা, লুটের বহর এবং তার ফলশ্রুতি।
********
তুর্কী দাস সুবিক্তিগীনের সুপুত্র মাহমুদ। তার ঠাকুরদা, আলাপ্তিগীন ছিলো ‘তুর্কী দাস’, যাদের মুল কাজ ছিলো, খলিফারদেহ রক্ষী হিসাবে। সিন্ধু বিজয়ের পর প্রায় ৩০০ বছর খলিফারা ব্যাস্ত থাকে ইউরোপ, আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তার করানিয়ে। সিন্ধু বিজয় করতে যে খেসারত দিতে হয়েছিলো, সেই ঘা শুকাতে অনেক সময় লাগে। তাই আরবীরা অন্য দিকে দৃষ্টিদিয়েছিলো। ভারতের হিন্দু রাজাদের শক্তির কিছু পরিচয় ওরা নিজেরাই পেয়েছিলো। আর আলেকজান্ডারের কি পরিনতিহয়েছিলো সেটাও জানতে ওদের বাকী ছিলো না। তাই ওদের দৃষ্টি গেলো অন্য দিকে।
সেই সুযোগে, খলিফার ই বিজিত দেশ উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানের ক্রীত দাসদের একজন আলপ্তীগীন খলিফাররাজত্বের থেকে আফগানিস্তানের একটি অংশ দখল করে নেয়। খলিফাকে সন্তুষ্ট রাখতে তার অধীনে সামন্ত শাসকহিসাবে,কর দিয়ে খলিফার আশীর্বাদ নিয়ে গজনী কেন্দ্রিক সেই রাজত্ব স্তাপন করে। আলপ্তীগীনের ছেলে সুবুক্তিগীন সিন্ধুরউত্তর থেকে শুরু করে ,পাঞ্জাব,প্রাচীন গান্ধার রাজ্য এবং কাশ্মীরের অধীশ্বর ‘শাহী রাজ জয়াপালা’র সংগে সংগ্রামে লিপ্তহয়। সেই প্রচেষ্টা সফল হয় নি (বিস্তারিত পড়ুন আমার আগের লেখা তে)।।
সুবুক্তিগীনের মৃত্যুর পর তার সুপুত্র মাহমুদ গজনীর সুলতান হয় ৯৯৮ সালে। তার ঠিক দু বছর পর মাহমুদ তার শ্যেন দৃষ্টিনিয়ে তাকায় ভারতের দিকে। তার কারন মুলত দুটি---- এক, জয়াপালার হাতে তার বাবার হেনস্তা এবং খলিফাকে খুশীকরতে ভারতে ‘জিহাদী তান্ডব চালিয়ে’ ৩০০ বছর আগে সিন্ধু বিজয়ী মোহাম্মদ বিন কাসিমের অপঘাতে মৃত্যুর (সিন্ধুরাজদাহিরের দুই কন্যার অকুতোভয় কুট বুদ্ধির ফলে) বদলা নিতে।
৩০০ বছরে ইসলামের শিকড় সিন্ধুতে খুব শক্ত ভাবেই গ্রোথিত হয়ে গিয়েছিলো। কোরান,হাদিস এবং শরিয়ত সিন্ধুর জনজীবন নিয়ন্ত্রিত করছে তখন। মুহাম্মদ (গজনী) সেই ‘জিহাদী মন্ত্রে’ সুশিক্ষিত। সে খলিফাকে প্রতিজ্ঞা করলো ‘আমিযতোদিন বাঁচবো, প্রতি বছর হিন্দুস্তানের পুতুল পুজোকারীদের জীবন অতিষ্ট করে দেবো, তাদের সর্বস্ব লুট তরাজ করেকেড়ে নেবো, তাদের মন্দিরের সব মুর্তি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবো,তাদের জমি জায়গার দখল নেবো, ইসলামী শাসন কায়েমকরবো”। খলিফা জানতো লুটের মালের (গনিমতের মাল) অর্থ , দাস দাসীর (যৌন দাসী) আর অভাব হবে না।
মাহমুদ তার কথা রেখেছিলো। ১০০০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছরে সে ১৭ বার ভারতে আসে লুট তরাজ করতেআর মন্দির ধ্বংস করতে। তার এই মহান ‘জিহাদী’ কৃত কর্মের জন্য ইসলামিক ঐতিহাসিকরা তাকে অকুন্ঠ প্রশংষাকরেছে। ‘ফতে-নামা’ তে মাহমুদ নিজের সম্বন্ধে লিখেছে “ ধর্ম যুদ্ধ’ র নায়ক হিসাবে। খলিফা ‘আল কাদির বিল্লা’ তারপাঠানো উপঢৌকনের বন্যায় ভেসে তাকে ‘আমিন –উল- মিল্লা’ এবং ‘ইয়ামিন-উদ-দৌলা’ (দক্ষিন হস্ত) বলে উপাধী দিলো।সেই থেকে মাহমুদের বংশ “ইয়ামিনি বংশ’ বলে খ্যাত হলো।
খলিফার আশীর্বাদ ধন্য এবং তারদক্ষিন হস্ত ( ইয়ামিন-উদ দৌলা)খেতাব প্রাপ্ত মাহমুদের ‘জিহাদী’মানসিকতা’ দশ গুন বেড়েগেলো খলিফার কাছের মানুষহবার পর। একের পর একচললো তার ‘ধ্বংসের রথ’-----
১০০০ সালে মাহমুদ কিছু সীমান্তঅঞ্চল দখল করে সেখানেনিজের প্রশাসক নিযুক্ত করে।ওই অঞ্চলে বসবাসকারিহিন্দুদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্যকরা হোলো, যারা করলো না, তারা মরলো। তাদের উপাসনালয় মাটিতে গুড়িয়ে দেওয়া হলো।
১০০১ থেকে ১০০৩ সাল অবধি তার কেটে গেলো, ওয়াইহিন্দ (প্রাচীন পুরুষপুর =পেশোয়ার) দখলকরতে। রাজা
জয়াপালা বন্ধী হন। তার ১৫ জন সেনাপতি এবং আত্মীয় বন্ধী হলেন। এদের একজন ‘সুখপাল’মুসলমান হয়ে, নওয়াশা শাহ নাম নিয়ে, মাহমুদের অধীনে প্রসাশনের দ্বায়িত্ব পান। এটা ছিলো তারএকটি চাল, রাজা জয়াপালের জীবন বাচানোর জন্য। কিছু দিন পর যখন রাজা জয়াপাল নিজেরপ্রজা এবং রাজ্য রক্ষা না করতে পারার জন্য এবং চারিদিকে ‘জিহাদী তান্ডব’ দেখে আর সহ্য নাকরতে পেরে রাগে, দুঃখে, হতাশায় আগুনে আত্মাহুতি দেন। ঠিক তার পরেই সুখপাল বিদ্রোহ করেএবং হিন্দু হন। মাহমুদ তাকে পরাজিত করে, হত্যা করে। রাজা জায়াপাল ২৫০০০০ (আড়াই লক্ষ---একট স্বর্ন মুদ্রা ,যার নাম দিনার= ১২০ গ্রাম সোনা) স্বর্ন মুদ্রা মুক্তিপন দিয়ে তার এবং সুখপাল বাদেবাকী ১৪ জনের মুক্তি আদায় করেন। জয়াপালের পুত্র আনন্দপাল কাশ্মীরে চলে যান এবং তারস্বাধীনতা সংগ্রাম চালু রাখেন। তিনি, তার ছেলে ত্রিলোচন পাল এবং নাতি ভীম পাল, মাহমুদের সংগেযুদ্ধ করে শহীদ হন। বাকি বংশধরেরা, আত্মীয় স্বজন রা ধর্ম পরিবর্তন করে বেচে যায়। অনেকেইমাহমুদের অধীনে বেতনভুক ছোট বড়ো সৈনাপত্য নিয়ে বেচে থাকে। এই ভাবে একটি শক্তিশালীএবং ঐশ্বর্য্যশালী হিন্দু রাজ্য চিরতরে মুসলমানী শাসনে চলে গেলো। আজ সেই রাজ্যে চলছে ভারতভুমি থেকে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন (কাশ্মীর), সেই শাহী সাম্রাজ্যের বর্তমান বাসিন্দা, যারা এক সময়সনাতনি ছিলো, (পাকিস্তান, আফগানিস্তান) তাদের বংশধরেরাই তাদের পুর্ব পুরুষদের সংষ্কৃতিরধারক বাহকদের সর্বনাশ করতে ঊঠে পড়ে লেগেছে।
মাহমুদের সেক্রেটারী ছিলো আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী। সেই ‘ঊথবী’ বলছেন, ভেরা, মুলতান,যেখানে একটিও মুসলমান ছিলো না, সে গুলো সব সম্পুর্ন ভাবে মুসলিম হয়ে গেলো, কোনো পুতুলপুজা কারী আর রইলো না। তাদের মন্দির ধুলায় মিশে গেলো অনেক মসজিদ তৈরী হলো”।
এই উথবী একজন নামী লোক। এর লেখা দিয়েই শেষ করবো ৩০ বছরের ধ্বংসের বিবরন। পুরোবিবরন লিখতে গেলে প্রায় একটি বই হয়ে যাবে। একের পর এক শহরের পর শহর, গঞ্জের পর গঞ্জমাহমুদের লুটের আর ধ্বংসের সামিল হলো। জন জীবনে সৃষ্টি হলো এক নিদারুন ত্রাসের।মহিলাদের মান সম্মান ধুলায় লুটিয়ে গেলো, মন্দিরের পর মন্দির ধুলায় মিশে গেলো। এটাই হচ্ছে মুলকথা। ১০১৫ সালে কাশ্মীর, এবং এর আগে পরে ১৯৩০ সালের মধ্যে ভেরা, মুলতানের দখল শক্তপোক্ত করে, মথুরা,বারান (বুলন্দসর), কনৌজ (কানপুর) সব জায়গার একই দশা হলো। সারা উত্তরপশ্চিম ভারত তখন এই মাহমুদের ‘জিহাদী তান্ডব’ থেকে থর থর করে কাঁপতে থাকে, কখন মাহমুদআসবে ( কব গব্বর আ জাঁয়েগা) । ১০২৩ সালের চৌদ্দতম তান্ডবে কিরাত,নুর,লোকাট আর লাহোরধ্বংস এবং পরিবর্তিত হয়ে গেলো ্সব প্রাচীন ঐতিহ্য।
মন্দির লুট করা এবং সেটাকে অপবিত্র করা মাহমুদের একটি খেলা ছিলো। কতো মন্দির তার তান্ডবেশেষ হয়ে গেছে সেই তালিকা আজ আর দিয়ে লাভ নেই। কেউ বিশ্বাস করবে না, বলবে প্রমান কি?যে মন্দির আর দাঁড়িয়ে নেই, বেশীর ভাগ স্থানে অন্য প্রার্থনা স্থল তৈরি হয়েছে, তা বলতে গেলেবিরোধীরা চীৎকার শুরু করবে। ছোট গুলো বাদ দিয়ে শুধু মাত্র বড়ো দুটির কথা এখানে লিখবো। ---
থানেশ্বরের ‘চক্রস্বামীর’ মন্দির লুট এবং ধ্বংস করে মন্দিরের ‘বিষ্ণু মুর্তি’ নিয়ে গিয়ে গজনী শহরেতৈরী ‘হিপোড্রোমে’ ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। মাহমুদ নিজে মথুরা নগরী এবং সেখানকার মন্দিরেরসৌন্দর্য্যের প্রশংষা করেছে। সেই মথুরা নগরীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিখ্যাত ‘কৃষ্ণ মন্দির’ লুট করেসে অগাধ ঐশ্বর্য্য হাসিল করে, আর মন্দিরের সব মুর্তি গুড়িয়ে দেয়। উথবীর কথায় (মাহমুদেরসেক্রেটারী আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী) একমাত্র কনৌজে প্রায় ১০০০০ হাজার মন্দির ধ্বংস হয় (আমি বাড়া বাড়ি বলে মনে করছি—কারন এতো মন্দির থাকা এবং তা ধ্বংস করা কি সহজ ব্যাপার? )যারা এই সব অঞ্চলে বাস করতো, তাদের মধ্যে যারা ধর্ম পরিবর্তনে রাজী ছিলো না তারা হয় পালিয়েঅন্যত্র্ গেলো (আমার বাবা এবং আমার মতো উদবাস্তু হলো), নইলে মরলো (ল্যাটা চুকে গেলো)।
চক্রস্বামী মন্দিরের মতো দশ হলো গুজরাটের ‘সোমনাথ’ মন্দিরের। সেখানকার শিব মুর্তি নিয়েগেলো গজনীতে। তার ভাংগা টুকরো দিয়ে তৈরী হলো গজনীর জামা মসজিদের সিড়ি। সেই গজনী ওনেই ,মসজিদ আর নেই। সব পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে মাহমুদেরই এক শত্রু যাদের ওপরেমাহমুদ অত্যাচার করেছিলো। তারাও ছিলো আফগানিস্তানের এক উপজাতি। সোমনাথের শিবমন্দিরের কিছু ভগ্ন অংশ পাঠানো হয়েছিলো খলিফার কাছে। সেই টুকরো শেষ মেশ পৌছায় তুরষ্কে।তাই দিয়ে তৈরী হয় ইস্তানবুলের বিখ্যাত “তোপকাপি” মসজিদের সিড়ি। (আমার কোনোদিন বিশ্বাসহয়নি, যতোদিন না আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি ২০১২ সালে সেই সিড়ি, যেখানে পরম গর্বেরসংগে এই ইতিহাস লেখা আছে। ছবি তোলা নিষেধ না হলে দেখাতাম সেই স্ক্রিপ্ট পাথরে খোদাইকরা।)
সোমনাথ মন্দির ধ্বংস এবং লুট মাহমুদের কাছে এক পবিত্র কাজ ছিলো সেটা সে নিজেও লিখেরেখে গেছে ‘ফতে নামা’ তে। এই পবিত্রতা এই জন্য যে, ঠিক একই ভাবে মক্কার কাবা শরীফে , যারনাম ছিলো ‘আল-মান্নাত’ সেখানকার মুর্তি ভেঙ্গেছিলেন নবী নিজে। সোমনাথ লুট এবং ধ্বংসের সালটা ছিলো ১০২৬। তার এই কাজের জন্য পরবর্তি সময়ে সুফী, দরবেশ রা মাহমুদের অতি উচ্চ প্রশংষাকরে গেছে। সমসাময়িক ঐতিহাসিক, কুয়াজ্জিনি, ফার-হিস্তা এবং মাহমুদের সেক্রেটারী আবুনাসের মুহাম্মদ উথবী, সবাই মাহমুদের ৩০ বছর ব্যাপি বর্বরতার বিবরন লিখে গেছেন নিখুত ভাবে।সেই লিপিতে তার অতি উচ্চ প্রশংষা করতে গিয়ে আসল সত্য চেপে রাখতে পারেন নি। আসল সত্যচেপে রাখলে মহিমা কম হয়ে যায়। এই মুসলিম ঐতিহাসিকরা সেই সময় মাহমুদের বর্বরতাকেবর্বরতা না বলে ধর্মীয় কাজ বলেছেন। তাই আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে।
সোমনাথ লুটের খবর খলিফার কাছে পৌছালে, খলিফা আল কাদির বিল্লা খুশীতে বিশাল জাক জমককরে উৎসব পালন করে। মাহমুদকে তিনি এবারে দেন নতুন এক উপাধী—‘খাপ-উদ-দৌলা ওয়াআল ইসলাম”। সেই সংগে তাকে হিন্দুস্তানের সম্রাট বলে ঘোষনা করে দিলো। সম্রাট মাহমুদ এইপ্রথম লাহোর থেকে নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করলো।
মাহমুদ যে বিপুল ধন দৌলত ভারত থেকে লুট করে নিয়ে যায় ৩০ বছর ধরে তার হিসাব কষতেচার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিম সিম খেয়ে যাবে। আমাদের ঐতিহাসিকেরা বেমালুম চেপে গেলেও,মাহমুদের সেক্রেটারী সেই আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী সেই লুটের বহর স্পষ্ট করে লিখে রেখে গেছে,কারন সেক্রেটারী হিসাবে সেই কাজ তাকে করতে হতো। আমাদের ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপারএবং অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহাসিকেরা এই সত্য ভারতবাসীর থেকে চেপে গেলেও ঐতিহাসিক ‘কেএস লাল’ এর মতো কিছু ঐতিহাসিক আজো তাদের বিবেক বিদেশীদের (আরবী /তুর্কি) কাছে বেচেদেন নাই। সেই কে এস লালের লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত করে ঐতিহাসিক Andrew G Bostom তৈরীকরেছেন এক প্রামান্য দলিল, যার নাম “The legacy Of Jihad—Islamic Holy war and the fate of the Non-Muslims”, Published by ‘ Prometheus Books’, 59 John Glenn Drive, Amherst,New York- 14228 -2119. ( এই লেখা সেই কে এস লাল এবং Andrew G Bostom এর লেখাকে ভিত্তি করে। প্রমানযারা চাইবেন তারা ঐ ঠিকানায় যোগা যোগ করবেন)
(১)ভারতে বিদেশী শাসন শুরু হয়েছে ৭১২ সাল থেকে শে্যহয়েছ ১৯৪৭ সালে। প্রায় ১২০০ বছর। আরব এবং তুর্কি শাসনচলেছে ১৭৫৭ সাল অবধি প্রায় ১০০০ বছর। ইংরেজ শাসনকরেছে ১৯০ বছর।৭১২ সালে, ইরাকের শাসন কর্তা ‘হেজাজ’ এরভাইপো ‘মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করেআফগানিস্তানের ‘ঘুর’ রাজ্যে থেকে আসা ‘মোহাম্মদ ঘোরী’ কেউভারতে বসবাস করেনি। এরা সবাই ভারতীয় হিন্দুদের ধনসম্মপত্তি লুট করে নিয়ে নিজের দেশে গিয়ে তাদের আরামদায়কপ্রাসাদ বিলাস বৈভবের মধ্যে বাস করেছ। নিজেদের দেশে চলে
যাবার সময়, নিজের বশংবদ কাউকে শাসন কর্তা হিসাবে রেখে গেছে যারা নিয়মিত ভাবে সেই লুটেরা বিদেশীর বিলাসিতারযোগান দিয়ে গেছে। মুহাম্মদ বিন কাসিম থেকে শুরু করে সুলতানী আমাল এমনকি মোঘল আমলেও তুরষ্কের বিলাসবহুলপ্রাসাদে বাস করা খলিফার খেদমতগারী করা এই আরবী এবং তুর্কি দের একমাত্র কাজ ছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরইংরাজরা এই পরজীবী খলিফা প্রথা বন্ধ করে দেয়। সেই দুঃখে আমাদের গান্ধী মুহাম্মদ আলী নামে দুই ভাইকে নিয়ে ব্রিটিশবিরোধী “খিলাফত আন্দোলন” শুরু করে। আমরা ইতিহাসে গান্ধীর সেই “মড়াকান্না” পড়ে তাকে জাতির জনক এবং‘মহাত্মা’ বলে পুজো করে চলেছি।
‘মাহমুদের লুট করা হিন্দু সম্পত্তির খতিয়ান’
আমাদের কাছে ব্রিটিশ শাসনে ই ভারতীয় হিন্দু দের সর্বনাশ হয়েছে , ১৯০ বছরে লন্ডন সমৃদ্ধিশালী হয়েছে ভারতীয় অর্থে,আর আমরা দরিদ্র হয়ে গেছি। আমরা তাই নিয়ে আজো বিশদ ভাবে তর্ক বিতর্ক ইতিহাস ঘাটা ঘাটি করে চলেছি। কিন্তু, ১০০০ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে যে বিপুল ধন সম্পদ আরব, ইরাক,ইরান, বাগদাদ, ব্যাবিলন, সিরিয়া,দামাস্কাস, তুরষ্ক,ইস্তানবুল, কাবুল, গজনী (যদিও সেটা আজ আর নেই, আছে শুধু একটি গ্রাম) শহর গুলোকে এবং আমাদের ঘরের কাছে, বুখারা (বুখারীরা ওখান থেকে এসেই কলকাতায় আমাদের ঘাড়ের ওপরে জাকিয়ে বসে আমাদের ওপর ফতোয়া দিয়েযাচ্ছে), সমরখন্দ, তাসখন্দ ইত্যাদি শহর গড়ে ঊঠেছে তা নিয়ে মোটাই চিন্তা ভাবনা করি না। আমাদের স্বাধীনতারসংগ্রামের ইতিহাস শুরু হয় গান্ধীকে নিয়ে। কিন্তু আমাদের পরাধীনতার ইতিহাস, যা আমরা প্রকারান্তরে আজো আছি এবংভবিষ্যতে হতে চলেছি (যদি না হিন্দুরা তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজ ভুমি এবং সংষ্কৃতি পুনরায় ফিরে পাবার চেষ্টাকরে, যার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন) । যে মোঘলদের নিয়ে আমরা আজ গর্ব করি, সেই মোঘল শাসনের সুত্রপাত যাকে দিয়ে, সেই বাবুর তার লেখা ‘বাবুর নামা’য় সারা জীবন তার সাধের ‘কাবুল’ এ বাস না করতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গেছে।এই সব বিদেশীদের বংশ ধর আজো তাকিয়ে থাকে পশ্চিমের দিকে,পুবের দিক তাদের না পছন্দ। অথচ তারাই আমদেরকাছে মহান এবং তাদের আজো আমরা আমাদের পোষ্য পুত্র করে রেখে দিয়েছি।, একের পর এক নিজ ভুমি তাদের হাতেতুলে দেবার সব ব্যাবস্থা, আন্দোলন করে চলেছি।
অতীতে হিন্দুরাই তাদের নিজেদের দেশটা বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়েছে, সেই সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে মোঘলদেরশাসন অবধি। আজ সেই খলিফাতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে উগ্র পন্থীরা সিরিয়া ইরাক থেকে এসে কাশ্মীর ,পাকিস্তান, বাংলাদেশ, পশ্চিমবংগে এসে ঘাটি গাড়ছে আমরাই তাদের এখানে পুষে রাখতে সাহায্য করছি। সত্যিই, কি বিচিত্র এইদেশ!!!!!!
১০০০ বছর ধরে কতো হিন্দু সম্পত্তি লুন্ঠিত হয়ে বিদেশে গেছে??? তার পরিমান কতো????
এখানে শধু গজনীর মাহমুদ ৩০ বছরে ১৭ বার ভারত আক্রমন করে যে ধন সম্পত্তি তার দেশে নিয়ে গেছে সেই খতিয়ানদেওয়া হচ্ছে। হিন্দুর অর্থে গজনীর শহর তৈরী হয়েছিলো। শুধূমাত্র মাহমুদের প্রাসাদ (যা তার আততায়ীরা পুড়িয়েদিয়েছিলো) তৈরীতে খরচ হয়েছিলো ৭০ লক্ষ স্বর্ন মুদ্রা, যার একটির ওজন ছিলো ১২০ গ্রাম। কতো সেই অংক টা????? হিসাব করুন। ১৯০ বছরে ব্রিটিশ তার ১০০ ভাগের এক ভাগ ও নিতে পারেনি, কারন নিয়ে যাবার মতো বিশেষ কিছু আরবাকি ছিলো না। ঝড়তি পড়তি যা স্থানীয় মুসলিম শাসক দের কাছে পড়েছিলো বা জিহাদীদের নজরে পড়েনি, তাই নিয়েগেছে ,যেমন “কোহিনুর”, আর বেশী কি???? নীলের (ইন্ডিগো) কথা বলছেন??? তার থেকেও অনেক বেশী ‘নীল” এইদেশে চাষ হতো এবং তা গেছে ঐ সব আরবী, তুর্কি দুনিয়ায়। ভারতের সব মসলিন দিয়েই তৈরী হতো খালিফা,সুলতান,আমীর উমরাহ দের পোষাক আসাক, দরজা জানালার পর্দা। (নীলের সেই হিসাব ও পাবেন আমার কাছে।)
এই হিসাব, কারো কষ্ট কল্পিত কাহিনী নয়। মাহমুদের সচিব ‘আবু নাসের মোহাম্মদ উথবী’, যে সেই হিসাব স্বযত্নে লিখেরেখেছিলো তার মনিবের জন্য এবং তার কাছে হিসাব দেবার জন্য, সেই হিসাব আজ আমাদের সামনে এসেছে। তারভিত্তিতে লেখা ঐতিহাসিক কে এস লাল’এর লেখা ভারতে ইসলামিক আগ্রাসনের তিন অধ্যায় ( সিন্ধু বিজয়, গজনীরমাহমুদ এবং ঘোরী –পৃথ্বীরাজ)। সেই থেকে সংকলিত হয়েছে, “THe legacy Of Jihad Edited by Andrew G Bostom”.Published by Prometheus Books, New York.Page-440-446. আমি শধু বাংলা ভাষায় তার সার সংক্ষেপকরেছি আপনাদের জন্য (বিশেষ করে আমার এক ফেসবুক ভাই এর অনুরোধে। ) দেখুন সেই হিসাব, যে হিসাব আমাদেরকাছ থেকে আজ অবধি লুকিয়ে রাখা হয়েছে আমাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার জন্য।।
(২)
লেখাটা আমার স্বাভাবিক লেখার মতো বেশ বড়ো, কারন ৩০ বছরের লুট অল্পেতে লেখা যায় না।
*** হিসাব কষার আগে এটা জানতে হবে ‘দিনার’ এবং ‘দিরহাম’কাকে বলে। দিনার হচ্ছে এক একটি স্বর্ন মুদ্রা যা সেই সময়প্রচলিত ছিলো আরবে। ভারতে সেটা স্বর্ন মুদ্রা নামেই প্রচলিত ছিলো। একটি স্বর্ন মুদ্রায় থাকতো ১২০ গ্রাম খাটি সোনা।বর্তমান বাজার মুল্যে সেটা দাঁড়ায় ৩০০০০ টাকা করে এক গ্রামের দাম ধরলে প্রায় ৩৬০০০০ (তিন লক্ষ ষাট হাজার)একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম। সেই সময় ১ টাকায় ৪০ মন চাল বাজারে পাওয়া যেতো। (অনেক বার হিসাব করার চেষ্টা করেপারিনি, যদিও স্কুল ফাইনালে অংকের দুটি বিষয়ে একশোর মধ্যে একশো ই পেয়েছিলাম। মাইরি বলছি একদম টোকাটুকিকরিনি। তোমাদের মধ্যে যে বা যারা হিসাব পারদর্শী আমাকে একটূ বলো Inflation ইত্যাদি ধরে একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম কতোহয়???)*******
১) মাহমুদ ‘হিন্দু শাহী রাজ’ রাজা জয়াপাল এবং তার ১৫ জন আত্মীয়, সৈন্যাধক্ষ্য কে আটক রেখে ২৫০,০০০ (আড়াইলক্ষ দিনার ) এর মুক্তিপন আদায় করে।
২) রাজা জয়াপালার গলার নেকলেস টির সেই সময়কার দাম ছিলো ২০০,০০০ (দুই লক্ষ দিনার)। সেটি মাহমুদ নিয়ে যায়।
৩) রাজা জয়াপালার আত্মীয় স্বজন দের গায়ের গহনা ইত্যাদির মোট মুল্য ৪০০, ০০০ (চার লক্ষ ) দিনার
৪) ‘ভেরা’ শহর, যাকে মাহমুদের সেক্রেটারী ‘উথবী’ উল্লেখ করেছে, ‘ মানুষ যতোটা কল্পনা করতে পারে তেমনিসম্পদশালী’ ছিলো। সেই ভেরা লুট করতে প্রায় ২ বছরে ২ বার মাহমুদকে আসতে হয়। (১০০৪ সালের প্রথম থেকে ১০০৫সালএর শেষ) সমস্ত ধন দৌলত নিয়ে যেতে কয়েক হাজার ঊঠ নিয়ে আসতে হয় ।
৫) ১০০৫ থেকে ১০০৬ সাল লেগে যায় ‘মুলতান’ লুট করতে । সেখান থেকে যে সম্পত্তি নিয়ে যায় তার মোট মুল্য২০,০০০,০০০ (কুড়ি লক্ষ) ‘দিরহাম’ (রৌপ্য মুদ্রা)
৬) রাজা জয়াপালের এক সেনাপতি যাকে মাহমুদ মুসলমান বানিয়ে নাম দিয়েছিলো ‘নওয়াশা শাহ’, সে রাজা জয়াপালেরআগুনে আত্মাহুতি দেবার পর পুনরায় হিন্দু হয়। মাহমুদ তাকে পরাজিত এবং আটক করে তাকে শুধু হত্যা করে তাই নয়তার সব সম্পত্তি যার মোট মুল্য ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা)
৭) মাহমুদ “ভীম নগর” দুর্গ দখল করে সেখানকার ‘হিন্দু শাহী মুদ্রা’ র ৭০,০০,০০০ (সত্তর লক্ষ) লুট করে নিয়ে যায়।
8) ‘ভীম নগর’ দুর্গে ছিলো একটি পুজা মন্ডপ। সেটি ছিলো ১৫ গজ (৪৫ ফুট) চওড়া, ৩০ গজ (৯০ ফুট) লম্বা। তার দুটি খুটিছিলো সোনার,দূটি রুপোর, ওপরের ছাঊনি (গম্বুজ) রুপোর । মন্ডপটি খুলে রাখা যেতো। সেটির নিয়ে যায়। তার মুল্য‘উথবী’ উল্লেখ করে নি।
৯) ‘বারান’ (বুলন্দসর) থেকে মাহমুদ লুট করে ১০,০০০,০০০ (দশ লক্ষ) রৌপ্য মুদ্রা।
১০) ‘মথুরা’ মন্দির লুট করে ৫ টি সোনার ‘রাধা –কৃষ্ণ’ মুর্তি নিয়ে যায়, যার মোট ওজন ৯৮৩০০ মিসকাল (দশ মন) ।(আমি ব্যাংককে ৫ টনের বুদ্ধ মুর্তি দেখে এসেছি,সুতরাং ২ মনের রাধা-কৃষ্ণ মুর্তি অসম্ভব নয়)। তাছাড়া মোট ২০০ টিরৌপ্য নির্মিত নানা দেব দেবীর মুর্তি নিয়ে যায়।
১১) কনৌজ, মুঞ্জ,আশনি, সার্বা ইত্যাদি লুট করে অপরিমিত ঐশ্বর্য্য নিয়ে যায়।
১২) ‘সোমনাথ’ মন্দির থেকে মাহমুদ নিয়ে যায় এক বিপুল ঐশ্বর্য্য। তার পরিমান শুনলে পরম বিশ্বাসীর ও অবিশ্বাস হবে।কিন্তু ‘উথবী’ র লেখা বিশ্বাস না করে কার কথা বিশ্বাস করবো? সেই লুটের মোট অংক উথবী করেছে ২০,০০০, ০০০ স্বর্নমুদ্রা বা ‘দিনার’।
১৩) লুটের বহর ৩০ বছরে এতো বিশাল ছিলো যে মাহমুদ, সেই অপর্য্যাপ্ত সম্পদ দেখভাল করা এবং সুষ্ঠ ভাবে গজনীতেনিয়ে যাবার জন্য দু জন হিসাব রক্ষক এবং ব্যাবস্থাপক নিযুক্ত করে। সেই দুজনের নাম ও উথবী বার বার উল্লেখ করেছে।সেই দুই মহাপুরুষ হচ্ছেন ‘আলতুন্টাস’ এবং ‘আশীক্তিন’।
১৪) শুধু মাত্র সুলতান নয়। তার সৈণ্য সামন্ত হিন্দু রাজাদের মৃত হিন্দু সৈন্যদের দেহ তল্লাশী করে তাদের গয়না পত্র, সাধারন হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুট করে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যায়। লুটের এই ‘মহা সুযোগ’ নিতে স্থানীয় হিন্দু লোকের মধ্যেওমাহমুদের সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য কাড়া কাড়ি পড়ে যায়। (অবিশ্বাস্য হলেও একেবারে খাটি কথা ‘উথবী’লিখেছে।। দেশী গব্বরের অভাব কোনো কালেই ভারতে ছিলো না। মুসলমান ‘জিহাদী’দের আরবী /তুর্কি সৈন্যের সংখ্যাথেকেও দেশী হিন্দু লুটেরার সংখ্যা খুব কম ছিলো বলে আমার মনে হয় না। ইতিহাসে সে কথা, ফা-রিস্তা, আলবেরুনী লিখেরেখে গেছেন। ভুলে যাবেন না, আকবরের হয়ে রানা মানসিং ৭৭ টি যুদ্ধ করে যার মধ্যে ৫৭ টি যুদ্ধ সে জেতে এবং বিজিতরাজ্য আকবর কে দেয়,নিজে রাখে লুটের মাল। রানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর কেউ করেনি ওই মানসিং। আমাদেরবাংলাদেশ দখল আর কেউ করেনি,করেছিলো ওই শয়তান মানসিং এবং সে তিন তিন বার বাংলা,বিহার ,উড়িষ্যার প্রসাশকহয় আকবরের অধীনে। যশোরের বিখ্যাত ‘মা কালী’ র মুর্তি এখন শোভা পাচ্ছে মানসিং এর “অম্বর” দুর্গে। পা চাটা কুকুরেরকোনো অভাব সেই রামায়নের যুগ থেকে আজ অবধি ভারতে কম পড়ে যায় নি।)
১৫) শাহী সাম্রাজ্য থেকে লুটের বহ্র এমনই ছিলো যে, রাজা জয়াপাল, আনন্দপাল, ত্রিলোচন পাল, কারো মুদ্রা আজো খুজেপাওয়া যায়নি। (তাই আমাদের ঐতিহাসিকেরা ধরেই নিয়েছেন ওই বংশ ছিলোই না। তাহলে সুবিক্তিগীন এবং মাহমুদ ভুতেরসংগে যুদ্ধ করেছিলো)।
১৬) অর্থনিতী বিদেরা বলেন “ মাহমুদের লুটের পর অর্থের বন্যা ভারত থেকে চলে গেলো সিন্ধুর পশ্চিম পারে। গজনীরএবং আরবী দুনিয়ার মুদ্রা (দিনার এবং দিরহাম) শক্ত পোক্ত হয়ে শুধু স্থীরতা পেলো তাই নয়,হয়ে গেলো বিশেষ দামী।ভারতীয় স্বর্ন মুদ্রার সোনার পরিমান ১২০ গ্রামের জায়গায় নেমে এলো ৬০ গ্রামে আর রৌপ্য মুদ্রার দাম আর প্রায় রইলোনা ব্যাবাসার জন্য। সারা দুনিয়ার কাছে ভারতীয় মুদ্রা আর খুব বেশী আকর্ষনীয় রইলো না”।
“মাহমুদের বর্বরতার সুদুর প্রসারী ফল”
পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার, কুষান, আরবী এবং পরবর্তীতে তুর্কি দাসদের দ্বারা একের পর এক আগ্রাসী আক্রমনের যে সমুহ ফল বৈদিক সনাতনিভারতবর্ষের জন জীবনে পড়লো তার ফলে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবংসাংষ্কৃতিক পরিবর্তন হলো তার সঠিক মুল্যায়ন আজ অবধি হয়নি।
কি করে বৈদিক আফগানিস্তান (কেকয়, কম্বোজ এবং গান্ধার) আজ এক সম্পুর্নভিন্ন নিম্ন মানের সংষ্কৃতির এবং ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদীদের বিচরনস্থল হয়েছে তারইতিহাস আমরা জেনেছি। আজ যে পাকিস্তান ঝড়তি পড়তি ভারতকে শেষ
করার খেলায় মেতেছে, নিউক্লিয়ার বোম দিয়ে উড়িয়ে দেবার কথা বলছে (আজইআমেরিকান সামরিক প্রধানের বক্তব্য পড়ুন) ওই অঞ্চল তো সিন্ধু এবং হিন্দু শাহীসাম্রাজ্যের অংশ ছিলো। যে বাংলাদেশে আজ উগ্রপন্থীরা সমবেত হচ্ছে সেটাইতো বৈদিক সনাতনী ছিলো। সে সব কোথায় হারিয়ে গেলো??? যেসামাজিক,অর্থনৈতিক এবং সাংষ্কৃতিক পরিবর্তন এই বৈদিক সনাতনী সভ্যতার জন্ম ভুমিতে হয়েছে সেই সার্বিক পরিবর্তনচীরস্থায়ী এবং মানব সভ্যতার ইতিহাসে অশ্রুতপুর্ব এবং অন্য কোনো উদাহরন নেই।
উত্তর পশ্চিম ভারতবর্ষ তো অনেক আগেই চলে গেছে। পশ্চিম ভারত পাকিস্তান হয়ে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে তো সমস্যারশেষ নেই। পুর্ব ভারতের এক বিশাল ভুমি বাংলাদেশ। পশ্চিমবাংলা ধুকছে।
সনাতনি দর্শন হিংসায় বিশ্বাসী নয়। সনাতনি সভ্যতা শান্তি সম্প্রতির কথা বলে। মানবিকতা সেখানেই, সমৃদ্ধি শান্তিতেধ্বংসে নয়। এই চরম ঐশ্বরিক কথা ওই অঞ্চলে আজ আর কেউ শুনতে পাবেন না কোনো দিন। নীল চাষীদের অপরেব্রিটিশের অত্যচারের কথা আমরা “নীল দর্পন” জেনেছি। তার লেখক উত্তর ২৪ পরগনার নিমতলাতে (বনগাঁর কাছে ) জন্মেছিলেন। তিনি যদি জানতেন, নীল চাষ আগেও হতো, তাহলে হয়তো আর একটি নাটক লিখতেন। মাহমুদ প্রতি বছর যেপরিমানে নীল নিজের জন্য নিয়ে যেতো এবং তার প্রভু খলিফার কাছে পাঠাতো তার হিসাব আছে “উথবী” র লেখাতে। সেইকথা লিখে এই ইতিহাস আর দীর্ঘায়িত করবো না। বেশী লিখলে কল্প কষ্টিত এবং অসত্য বলে অনেকে সমালোচনার ঝড়বইয়ে দেবেন জানি।
আসুন আমরা দেখি, মাহমুদের উত্তর পশ্চিম ভারতকে শ্মশান ভুমি করে দেবার পর, কি করে ‘জিহাদী তান্ডব’এসেপৌছালো খোদ দিল্লীতে। একেবারে সনাতনি ভারতের হৃদস্থলে। সেই কাহিনীও অতি করুন।। বুকে পাথর দিয়ে সেই কথাশুনুন। সেই ইতিহাসকেও আমাদের থেকে গোপন করে রাখা হয়েছে।ইতিহাস যুগে যুগে শাসকদের কথা মতোই লেখাহয়েছে বেশীর ভাগ সময়। খুব কম ঐতিহাসিক আছেন যারা সত্যবাদী। আমাদের দেশে রমেশ চন্দ্র মজুমদার, যদুনাথসরকার, কে এস লাল ,শ্রী বাস্তবের লেখা কে পড়ে???
এখন তো রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবের দিন, এই দুজনেই বামপন্থী মতের প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু সভ্যতার ইতিহাসএকেবারে চেপে গেছে ।শুধু তাই নয় বিকৃত করেছে। কারন আর কিছু নয়। চানক্য ই বলেছেন আর ইংরেজ ম্যাকুলেবলেছে, কোনো জাতিকে শেষ করতে হলে, পদানত রাখতে হলে বা নিজের মত চাপিয়ে দিতে চাইলে, প্রথম এবং অকৃত্রিমকাজ সেই জাতির ইতিহাস , সংষ্কৃতি, ধর্ম বিকৃত করা, গালাগালি দেওয়া, তাদের উপাসনা স্থল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া। যুগেযুগে অনেক মহামানব এই কাজ করেছেন। ভারতের হিন্দুদের ওপরে এই অভব্য কাজ করা হয়েছে সব থেকে বেশী।।
ইরফান হাবিব ই বলেছে "হিন্দুরা জামা কাপড় পরতে শিখেছে বিদেশীদের থেকে যারা ভারত শাসন করেছে"। আমাদের পুর্বপুরুষরা সব তাহলে ল্যাংটো থাকতো, তাই না???
লেখক-
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
কোলকাতা- ভারত।
No comments
Posted at June 28, 2020 |  by
Arya ঋষি