All Stories
Showing posts with label কাবা ঘর. Show all posts
Showing posts with label কাবা ঘর. Show all posts
দ্বিতীয় পর্ব



আলোচিত মেহেদির পূর্বাপর এবং বাকি বৃত্তান্ত
এর আগে প্রস্তুতি হিসেবে সে এই পূর্বালোচিত মেহেদী বা প্রেরিত পুরুষ হিসেবে মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহ্তানী বলে মৃদুভাষী একটি তরুণ ধর্ম প্রচারক কে চিহ্নিত করে।এই ক্ষেত্রে হাদিসে সেই প্রেরিত পুরুষের নাম বা তাঁর বাবার নাম এবং এই লোকটির ক্ষেত্রেও একই হওয়া একটি বড় হাতিয়ার হয়।একই সাথে বর্ণিত মেহেদির উন্নত কপাল ,রোগা গড়ন ,উন্নত নাসিকা ইত্যাদি মিল একটি মোক্ষম সুযোগ এনে দিলো। প্রথমে কাহতানি নিজেকে দেখতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে জুহাইমান এর মোহে আবিষ্ট হয়ে সত্যিই নিজেকে ওই ভাবে ভাবতে শুরু করে।এই সখ্যতা আরো পোক্ত হয় যখন তার বড় বোন কে জুহাইমান তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে বিয়ে করে।
অভিযানের আগে কাবা একটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে ইমাম মেহেদী কে শত শত মক্কাবাসী স্বপ্নে দেখেছে শীর্ষ মসজিদের মিনারে ইসলামের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একই সাথে দলের অভ্যন্তরে এই ইমামের বিষয়ে কোনো সন্দেহের প্রশ্ন রাখার অবকাশ সে রাখে নি।একদিকে যখন জুহাইমান আর তাঁর দল প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রস্তুতি নিচ্ছিল ওই সময়ে সৌদি বাদশা পুত্র এবং এক অর্থে ক্ষমতার কর্নধার ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ ছিল তিউনিসিয়ায় আরব লীগের একটি বৈঠকের সফরে আর প্রিন্স আব্দুল্লাহ ,জাতীয় সুরক্ষার প্রধান ছিল মরোক্কো সফরে।দেশের দেখভাল করার জন্য ছিল বৃদ্ধ এবং অসুস্থ রাজা খালেদ আর রক্ষামন্ত্রী প্রিন্স সুলতান।
সৌদি রাজশক্তির তৎপরতা :
সেই সকালেই খবর পেয়ে শেখ নাসের রাজা খালেদকে এই খবর দেন।রাজা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স সুলতান বিন আব্দুল আজিজ এবং অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের সর্বোচ্চ কর্তা প্রিন্স নাইফ বিন আব্দুল আজিজ কে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আদেশ করে।পরবর্তিতে মক্কার প্রশাসক প্রিন্স ফাওয়াজ বিন আব্দুল আজিজ,গুপ্তচর বিভাগের প্রিন্স তুর্কি অকুস্থলের কাছে চলে আসে।তুর্কি স্বীকার করে যে জুহাইমান আর তার গোষ্ঠী তুলনামূলক ভাবে একটু ছোট দল হওয়ার কারণে এদের উপরে নজর রাখা হলেও সামগ্রিক কোন বিপদের আশংকা বা এই ধরনের কোনো কান্ড করতে পারে তা তারা ভাবতেও পারে নি।
সৌদি পুলিশ প্রথমে এই দখলের গুরুত্ব বুঝতেই পারে নি।সকালে একজন পুলিস অফিসার বিষয়টি দেখতে একটি জিপ নিয়ে এগিয়ে গেলে দখলদার বাহিনীর গুলিতে আহত হয়।একই ভাবে অন্য দিক থেকে আসা অন্য পুলিস অফিসারদের গাড়ি গুলোতেও ভিতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে।এই পর্যায়ে ভিতরে থাকা সাধারন মানুষদের ঢাল বানিয়ে এই দলটি ক্রমশ আক্রমন চালিয়ে যায় সৌদি পুলিশের উপরে।এই পর্যায়ে আহত বা নিহত এই সব মানুষদের দেহ উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও তাদের উপরে একই ভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকে ভিতর থেকে।মৃত্যু হয় এক পুলিস অফিসারের এবং ভিতরের এক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা এক কিশোরের।ইমামের মতো আরো কিছু সৌদি নাগরিক পিলারের আড়াল ধরে ধীরে ধীরে একটি জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে একদল রোগা পাতলা লোক বাইরে পালাতে স্বক্ষম হয়।মসজিদ চত্ত্বরে থাকা সৌদি নারী পুরুষদের জোর করে এই ঘোষিত ইমামের পক্ষে শপথ পাঠ করানো চলতে থাকে।
প্রিন্স তুর্কি মসজিদের পাশের হোটেল সৌবরাতে এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠক করতে এলে,হোটেলের দরজাতে হাত দেওয়া মাত্র একটি বুলেট তার দিকে ছুটে আসে,কপাল গুনে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে দরজার কাজ চুরমার করে দেয়।তড়িঘড়ি তাঁকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।এই বুলেট এসেছিল মসজিদের আব্দুল আজিজ দরজার জোড়া মিনারের থেকে।হোটেলটি মসজিদের থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দুরে থাকায় ওই দখলদার বাহিনীর স্নাইপারের আওতায় ছিল আর সৌদি কর্তিপক্ষ তা আগে একদম আন্দাজ করতে পারে নি।
সৌদি উপলব্ধি এবং পরবর্তী কাজকর্ম:
এইবার সৌদি শাসক গোষ্ঠী বুঝতে পারে এদের প্রস্তুতি বা শক্তি অনেক বেশি।এরপরে এই কাবা এবং শীর্ষ মসজিদের চারপাশে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে।বিশেষ রক্ষী বাহিনী ,বিশেষ ছত্রী বাহিনী আর বিশেষ স্বশস্ত্র দল কে মোতায়েন করা হয়।সমস্যা হলো,পাল্টা আক্রমন করার ক্ষেত্রে,যেহেতু সব চেয়ে পবিত্র এই স্থানে কোনো অস্ত্র ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া বা পাল্টা আক্রমন এতো সহজ ছিল না,এর সাথে গোটা মুসলিম দেশগুলোর মানুষের এবং নিজের দেশের মানুষের অনুভুতির প্রশ্ন জড়িত ছিল।এই কারণে দরকার ছিল উলেমাদের থেকে ধর্মীয় নির্দেশ।এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভারপ্রাপ্ত উলেমাদের দল দুই দিন সময় নিয়েছিল।এই দুই দিন সৌদি প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে থাকে আর একই সঙ্গে পুরো জায়গাটির উপরে নজর রাখা শুরু করে।
হেলিকপ্টারের চক্কর এবং জঙ্গি বিমানের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়।নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুটে আসে,ভাগ্যক্রমে একজন চালক রক্ষা পায় তার বদলে সঙ্গের বেতার ব্যবস্থার গায়ে গুলি লাগার কারণে।এই সময়ে নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার কারণে দেখা যায় ভিতরে স্বশস্ত্র পুরুষই না,বেশ কিছু নারী ও অস্ত্র নিয়ে ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।পরবর্তিতে সৌদি প্রশাসন জানতে পেরেছিল এই জুহাইমানের সাথে তার স্ত্রী আর বাকিদের অনেকের পরিবার বা সন্তান ও এসেছিল এই অভিযানে।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে ওঠে মোকাবিলার জন্য।
পরেরদিন সরকারী ভাবে অতি ভোরে রিয়াদ রেডিও থেকে ঘোষণা করা হয় এই কাবা এবং সংলগ্ন মসজিদ দখলের আর দখলকারী গোষ্ঠির কোনো এক ব্যক্তিকে সেই মেহেদী ঘোষণার কথা।ইতিমধ্যেই অবশ্য মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের সূত্র ধরে এই খবর গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল।এই দ্বিতীয় দিনে সেই সময়ের নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি ভয়াবহ অসত্য খবর দিয়ে ফেলে যাতে শিরোনাম ছিল, “মক্কা মসজিদ দখল করা বন্দুকধারীর দল সম্ভবত ইরানের জঙ্গি গোষ্ঠী।
বিশ্বজুড়ে নতুন অশান্তির সূচনা:
এই খবর এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরী করলো,কারণ এর কিছু দিন আগেই ইরানের শাহ কে অপসারণ করে মোল্লা গোষ্ঠির বা আরো নির্দিস্ট করে বললে শিয়া পন্থী খোমেইনি ক্ষমতা দখল করে আমেরিকার দুতাবাসে ৫২ জন মার্কিন নাগরিক এবং বাকিদের আটকে রেখেছিল।এরপরে এর প্রত্যুত্তর দিতে খোমেইনি পাল্টা দায়ী করে আমেরিকাকে আর চারিদিকে পল্লবিত হতে থাকে গুজবের নানান বিষয়।
এরপরেই একদল লোক পাকিস্থানে মার্কিন দুতাবাসে আক্রমন করে সেটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।দুজন মার্কিন এবং দুজন পাকিস্থানি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী এই ঘটনায় মারা ও যায়।পরবর্তিতে একই কারণে খোমেইনীর অভিযোগের ভিত্তিতে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে একই ভাবে মার্কিন দুতাবাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়,এই ঘটনা এতটাই সুদুরপ্রসারী হয়েছিল যে পরবর্তী ২৫ বছর ওই দেশে আর মার্কিন কোনো দুতাবাস স্থাপনা হয় নি।
এই সবের মাঝে, ঘটনার দু দিন পরে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ সব জল্পনা শেষ করে পরিস্কার জানায় আমেরিকা বা ইরান অথবা অন্য কোনো দেশ এতে জড়িত না।এই ঘটনা সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ একটি গোষ্ঠির কাজ যারা ‘পথভ্রষ্ট‘ হয়েছিল।
এই সময়ের মধ্যে একাধিকবার এই মসজিদ বা পুরো স্থাপনার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেও সফল হয় নি সৌদি বাহিনী।এই সময়ে পুরো অভিযানের নেতৃত্ব দিতে নিয়ে আসা হয় সৌদি রাজার স্বশস্ত্র ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফালেহ আল দাহরি কে।ঠিক হয় ,মারওয়া দরজা উড়িয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকবে এই বাহিনী।এই সময়ে এক কঠিন অবস্থার সামনে পড়েছিল সৌদি শাসকরা।ইমাম মেহেদির তত্বে বিশ্বাসী একাংশ ধরে নিয়েছিল এই বিরোধিতা আসছে শয়তানের পক্ষ থেকে এই সাজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে।অর্থাৎ একটা জন সমর্থন গড়ে ওঠার অবস্থা তৈরী হয়েছিল এই ইমাম মেহেদীকে কেন্দ্র করে যাতে শাসক গোষ্ঠী শয়তানের দোসর হিসেবে ভুমিকা নিতে যাচ্ছিল।এই পর্যায়ে একটি বুদ্ধিমানের মতো কাজ সৌদি প্রশাসন করে,পুরো অভিযানের নানান পর্যায়ে এরা সংবাদ মাধ্যমকে নিজেদের কাজের বিষয়ে জানানো বা সঙ্গে রাখার কাজ শুরু করে ফলে বিষয়টি অনেক স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।
প্রথমদিনে সাজোয়া গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেলেও তীব্র গুলির কারণে শারীরিক ভাবে মসজিদের আশেপাশে নেমে অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ পায় নি সৌদি বাহিনী।এরপরের দিন কৌশলগত ভাবে আসেপাশের উচু অবস্থাপনা গুলোতে পাল্টা দূর পাল্লার বন্দুকবাজ মোতায়েন করে সৌদি বাহিনী।এইবার উচ্চ অবস্থান থেকে পাল্টা গুলি চালিয়ে অনেকটাই নিস্ক্রিয় করে ফেলতে পারে ওই দখলদার বাহিনীর স্নাইপার গুলো কে।একই সাথে আকাশ থেকে নিরীক্ষণের মাধ্যমে সৌদি বাহিনী জানতে পারে উত্তর ভাগের মারওয়া দরজা অপেক্ষাকৃত কম প্রতিরোধের জায়গা হতে পারে।
এই পর্যায়ে ২২ তারিখ,ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ, সৌদি গোলন্দাজরা কম মাপের বিস্ফোরক গোলা ছুড়তে থাকে,এটি স্রেফ ওই অবস্থানরত প্রতিরোধকারীদের নজর অন্যদিকে নিয়ে আরো একটি বাহিনীকে সাফা-মারওয়া পথের পূর্ব দিকে অবস্থান নিতে করা হয়েছিল।এই কাজে অর্ধেক পথ এগিয়ে গেলেও তীব্র গুলির কারণে বেশ কিছু সেনার মৃত্যু হলে বাহিনী আবার পিছু হটে যায়।একই ভাবে আগে বলা সেই মারওয়া দরজার দিকে বিস্ফোরক সহযোগে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকতে পারলেও সফল হলো না।
ফতোয়ার জোরে নতুন শক্তি প্রাপ্তি:
অবশেষে,নভেম্বর ২৩তারিখে ইসলামের ইতিহাসে সূচনা থেকে এই প্রথম,জুম্মার নামাজ পড়া হলো না এই শীর্ষ মসজিদে।দিনের শেষে উলেমারা ফতোয়া দিলো “এই জঙ্গিদের অস্ত্র ত্যাগ করে আত্মসমর্পর্ন করার আবেদন করা হোক,তা না মানলে কোরানের আল বাকারাহর বিধান অনুযায়ী যদি আল মসজিদ আল হারাম এ আক্রমন না করার এবং যদি একান্তই আক্রান্ত হও তবে তাদের হত্যা করার আদেশের ভিত্তিতে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হোক”
এইবার এই ফতোয়ার আনুকূল্যে একটা শক্ত অবস্থান পেলো সৌদিশক্তি।এতদিন বাইরে থেকে প্রত্যাঘাত করলেও এবার ধর্মীয় সমর্থনে ভিতরে মারার অধিকার একটা নির্দিস্ট দিক নির্দেশ দিলো।প্রথমে ওই ফতোয়ার নির্দেশ ধরে আত্মসমর্পর্ন করার কথা ঘোষনা করা হয়,কোনো সদুত্তর না পাওয়ার পরে মিনারগুলোতে রকেট নিক্ষেপ করা হয় উপরে থাকা দুরপাল্লার(স্নাইপার)রাইফেলধারী লোকদের নিস্ক্রিয় করতে।একই সাথে সেই আগের বলা সাফা-মারওয়া পথের বাইরের দিকের আগেই ভেঙ্গে দেওয়া দরজা দিয়ে গোলা দাগা শুরু করে।
অবশেষে,শনিবার, নভেম্বর ২৪ তারিখ এই সাফা মারওয়া পথের দখল নিতে পারে সৌদি বাহিনী।জুহাইমান আর তার দল উপরের অংশ থেকে পিছু হটে আশ্রয় নেয় মসজিদের মাটির নিচের ঘরগুলোতে।এই জায়গায় সর্বসাকুল্যে ২২৫টী ঘর পরস্পরের সাথে সংযোগ যুক্ত ছিল।পর্যাপ্ত অস্ত্র,গুলি আর প্রয়োজনীয় খাদ্য নিয়ে আরো এক সপ্তাহ লড়াই করার অবস্থায় ছিল বলে ধারণা করা হয়।বোমা,গুলি এমনকি নানান কার্পেট বা গাড়ির টায়ার পুড়িয়ে সব রকম ভাবে সৌদি বাহিনী কে বাধা দিয়ে যায় জুহাইমানের বাহিনী।এই সময়ে কাদানে গ্যাস দিয়ে এদের বের করে নিয়ে আসার কাজ ও ব্যর্থ হয়।ভূগর্ভে থাকার কারণে এই গ্যাস আবার মাটির উপরের দিকেই উঠতে থাকে আর এই লোকগুলো মুখে জলে ভিজানো কাপড় লাগিয়ে রাখার কারণে কোনো প্রতিকুল অবস্থায় পড়ে নি বরং উল্টে এই গ্যাস মাটির উপরে থাকা সৌদি বাহিনীর জন্য বিরূপ অবস্থা তৈরী করে।এই পর্যায়ে সমস্যা আরো প্রকট হয় কারণ মসজিদে নামাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোটা মুসলিম বিশ্বে প্রভূত সম্মানহানি হতে থাকে।গোটা পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোতে এই আজান সম্প্রসার বা এর প্রতীকী একটি মূল্য ছিল যা ধাক্কা খায়। সৌদি শাসকদের অত্যন্ত অস্বস্তির কারণ হতে থাকে এই সময়টি। সৌদি শাসকের সেনা একের পর এক উপায়ে চেষ্টা করে যেতে থাকে এদের উৎখাত করতে তবে সফলতা পাচ্ছিল না এই অসংখ্য কক্ষ আর ভূগর্ভের কক্ষে এদের অবস্থানের কারণে।আরো একটি কারণ ছিল , সৌদি শাসক পাখির চোখের মতো লক্ষ্য করেছিল এদের পালের গোদা কে জীবন্ত ধরার জন্য।অতঃপর,এই অস্বস্তিকর অবস্থা এবং বিশ্বজুড়ে চাপ অবসান করতে সৌদি রাজা সাহায্যের জন্য ফরাসি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে।
পরবর্তী পর্বে এই দখলের অন্তিম পরিনতি এবং বিষ বৃক্ষের সূচনার প্রাসঙ্গিক কথা থাকবে।ততক্ষণ আবার একটি চা পানের বিরতি।
এই পর্বের তথ্যসূত্র:
১. ইতিহাসের পাতা থেকে https://medium.com/@haramainarchives/makkah-grand-mosque-seizure-1979-ae55625315a5
২. যে অসত্য খবর পরিবেশন করার পরে পৃথিবীতে এক নতুন অশান্তি শুরু হয়েছিল https://www.nytimes.com/1979/11/21/archives/mecca-mosque-seized-by-gunmen-believed-to-be-militants-from-iran.html
৩. স্রেফ ছবির হিসেবে দেখলেও পর্ব ধরে দেখতে পারেন এই প্রতিবেদন গুলো https://www.youtube.com/watch?v=Z7kzj-zPoOM
৪. একই ভাবে পরের পর্ব https://www.youtube.com/watch?v=JufzBz6gbnA
৫. তিন নম্বর পর্ব https://www.youtube.com/watch?v=oomQ6IyWyg4

কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাস–দ্বিতীয় পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব



আলোচিত মেহেদির পূর্বাপর এবং বাকি বৃত্তান্ত
এর আগে প্রস্তুতি হিসেবে সে এই পূর্বালোচিত মেহেদী বা প্রেরিত পুরুষ হিসেবে মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহ্তানী বলে মৃদুভাষী একটি তরুণ ধর্ম প্রচারক কে চিহ্নিত করে।এই ক্ষেত্রে হাদিসে সেই প্রেরিত পুরুষের নাম বা তাঁর বাবার নাম এবং এই লোকটির ক্ষেত্রেও একই হওয়া একটি বড় হাতিয়ার হয়।একই সাথে বর্ণিত মেহেদির উন্নত কপাল ,রোগা গড়ন ,উন্নত নাসিকা ইত্যাদি মিল একটি মোক্ষম সুযোগ এনে দিলো। প্রথমে কাহতানি নিজেকে দেখতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে জুহাইমান এর মোহে আবিষ্ট হয়ে সত্যিই নিজেকে ওই ভাবে ভাবতে শুরু করে।এই সখ্যতা আরো পোক্ত হয় যখন তার বড় বোন কে জুহাইমান তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে বিয়ে করে।
অভিযানের আগে কাবা একটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে ইমাম মেহেদী কে শত শত মক্কাবাসী স্বপ্নে দেখেছে শীর্ষ মসজিদের মিনারে ইসলামের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একই সাথে দলের অভ্যন্তরে এই ইমামের বিষয়ে কোনো সন্দেহের প্রশ্ন রাখার অবকাশ সে রাখে নি।একদিকে যখন জুহাইমান আর তাঁর দল প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রস্তুতি নিচ্ছিল ওই সময়ে সৌদি বাদশা পুত্র এবং এক অর্থে ক্ষমতার কর্নধার ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ ছিল তিউনিসিয়ায় আরব লীগের একটি বৈঠকের সফরে আর প্রিন্স আব্দুল্লাহ ,জাতীয় সুরক্ষার প্রধান ছিল মরোক্কো সফরে।দেশের দেখভাল করার জন্য ছিল বৃদ্ধ এবং অসুস্থ রাজা খালেদ আর রক্ষামন্ত্রী প্রিন্স সুলতান।
সৌদি রাজশক্তির তৎপরতা :
সেই সকালেই খবর পেয়ে শেখ নাসের রাজা খালেদকে এই খবর দেন।রাজা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স সুলতান বিন আব্দুল আজিজ এবং অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের সর্বোচ্চ কর্তা প্রিন্স নাইফ বিন আব্দুল আজিজ কে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আদেশ করে।পরবর্তিতে মক্কার প্রশাসক প্রিন্স ফাওয়াজ বিন আব্দুল আজিজ,গুপ্তচর বিভাগের প্রিন্স তুর্কি অকুস্থলের কাছে চলে আসে।তুর্কি স্বীকার করে যে জুহাইমান আর তার গোষ্ঠী তুলনামূলক ভাবে একটু ছোট দল হওয়ার কারণে এদের উপরে নজর রাখা হলেও সামগ্রিক কোন বিপদের আশংকা বা এই ধরনের কোনো কান্ড করতে পারে তা তারা ভাবতেও পারে নি।
সৌদি পুলিশ প্রথমে এই দখলের গুরুত্ব বুঝতেই পারে নি।সকালে একজন পুলিস অফিসার বিষয়টি দেখতে একটি জিপ নিয়ে এগিয়ে গেলে দখলদার বাহিনীর গুলিতে আহত হয়।একই ভাবে অন্য দিক থেকে আসা অন্য পুলিস অফিসারদের গাড়ি গুলোতেও ভিতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে।এই পর্যায়ে ভিতরে থাকা সাধারন মানুষদের ঢাল বানিয়ে এই দলটি ক্রমশ আক্রমন চালিয়ে যায় সৌদি পুলিশের উপরে।এই পর্যায়ে আহত বা নিহত এই সব মানুষদের দেহ উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও তাদের উপরে একই ভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকে ভিতর থেকে।মৃত্যু হয় এক পুলিস অফিসারের এবং ভিতরের এক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা এক কিশোরের।ইমামের মতো আরো কিছু সৌদি নাগরিক পিলারের আড়াল ধরে ধীরে ধীরে একটি জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে একদল রোগা পাতলা লোক বাইরে পালাতে স্বক্ষম হয়।মসজিদ চত্ত্বরে থাকা সৌদি নারী পুরুষদের জোর করে এই ঘোষিত ইমামের পক্ষে শপথ পাঠ করানো চলতে থাকে।
প্রিন্স তুর্কি মসজিদের পাশের হোটেল সৌবরাতে এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠক করতে এলে,হোটেলের দরজাতে হাত দেওয়া মাত্র একটি বুলেট তার দিকে ছুটে আসে,কপাল গুনে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে দরজার কাজ চুরমার করে দেয়।তড়িঘড়ি তাঁকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।এই বুলেট এসেছিল মসজিদের আব্দুল আজিজ দরজার জোড়া মিনারের থেকে।হোটেলটি মসজিদের থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দুরে থাকায় ওই দখলদার বাহিনীর স্নাইপারের আওতায় ছিল আর সৌদি কর্তিপক্ষ তা আগে একদম আন্দাজ করতে পারে নি।
সৌদি উপলব্ধি এবং পরবর্তী কাজকর্ম:
এইবার সৌদি শাসক গোষ্ঠী বুঝতে পারে এদের প্রস্তুতি বা শক্তি অনেক বেশি।এরপরে এই কাবা এবং শীর্ষ মসজিদের চারপাশে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে।বিশেষ রক্ষী বাহিনী ,বিশেষ ছত্রী বাহিনী আর বিশেষ স্বশস্ত্র দল কে মোতায়েন করা হয়।সমস্যা হলো,পাল্টা আক্রমন করার ক্ষেত্রে,যেহেতু সব চেয়ে পবিত্র এই স্থানে কোনো অস্ত্র ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া বা পাল্টা আক্রমন এতো সহজ ছিল না,এর সাথে গোটা মুসলিম দেশগুলোর মানুষের এবং নিজের দেশের মানুষের অনুভুতির প্রশ্ন জড়িত ছিল।এই কারণে দরকার ছিল উলেমাদের থেকে ধর্মীয় নির্দেশ।এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভারপ্রাপ্ত উলেমাদের দল দুই দিন সময় নিয়েছিল।এই দুই দিন সৌদি প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে থাকে আর একই সঙ্গে পুরো জায়গাটির উপরে নজর রাখা শুরু করে।
হেলিকপ্টারের চক্কর এবং জঙ্গি বিমানের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়।নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুটে আসে,ভাগ্যক্রমে একজন চালক রক্ষা পায় তার বদলে সঙ্গের বেতার ব্যবস্থার গায়ে গুলি লাগার কারণে।এই সময়ে নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার কারণে দেখা যায় ভিতরে স্বশস্ত্র পুরুষই না,বেশ কিছু নারী ও অস্ত্র নিয়ে ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।পরবর্তিতে সৌদি প্রশাসন জানতে পেরেছিল এই জুহাইমানের সাথে তার স্ত্রী আর বাকিদের অনেকের পরিবার বা সন্তান ও এসেছিল এই অভিযানে।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে ওঠে মোকাবিলার জন্য।
পরেরদিন সরকারী ভাবে অতি ভোরে রিয়াদ রেডিও থেকে ঘোষণা করা হয় এই কাবা এবং সংলগ্ন মসজিদ দখলের আর দখলকারী গোষ্ঠির কোনো এক ব্যক্তিকে সেই মেহেদী ঘোষণার কথা।ইতিমধ্যেই অবশ্য মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের সূত্র ধরে এই খবর গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল।এই দ্বিতীয় দিনে সেই সময়ের নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি ভয়াবহ অসত্য খবর দিয়ে ফেলে যাতে শিরোনাম ছিল, “মক্কা মসজিদ দখল করা বন্দুকধারীর দল সম্ভবত ইরানের জঙ্গি গোষ্ঠী।
বিশ্বজুড়ে নতুন অশান্তির সূচনা:
এই খবর এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরী করলো,কারণ এর কিছু দিন আগেই ইরানের শাহ কে অপসারণ করে মোল্লা গোষ্ঠির বা আরো নির্দিস্ট করে বললে শিয়া পন্থী খোমেইনি ক্ষমতা দখল করে আমেরিকার দুতাবাসে ৫২ জন মার্কিন নাগরিক এবং বাকিদের আটকে রেখেছিল।এরপরে এর প্রত্যুত্তর দিতে খোমেইনি পাল্টা দায়ী করে আমেরিকাকে আর চারিদিকে পল্লবিত হতে থাকে গুজবের নানান বিষয়।
এরপরেই একদল লোক পাকিস্থানে মার্কিন দুতাবাসে আক্রমন করে সেটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।দুজন মার্কিন এবং দুজন পাকিস্থানি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী এই ঘটনায় মারা ও যায়।পরবর্তিতে একই কারণে খোমেইনীর অভিযোগের ভিত্তিতে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে একই ভাবে মার্কিন দুতাবাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়,এই ঘটনা এতটাই সুদুরপ্রসারী হয়েছিল যে পরবর্তী ২৫ বছর ওই দেশে আর মার্কিন কোনো দুতাবাস স্থাপনা হয় নি।
এই সবের মাঝে, ঘটনার দু দিন পরে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ সব জল্পনা শেষ করে পরিস্কার জানায় আমেরিকা বা ইরান অথবা অন্য কোনো দেশ এতে জড়িত না।এই ঘটনা সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ একটি গোষ্ঠির কাজ যারা ‘পথভ্রষ্ট‘ হয়েছিল।
এই সময়ের মধ্যে একাধিকবার এই মসজিদ বা পুরো স্থাপনার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেও সফল হয় নি সৌদি বাহিনী।এই সময়ে পুরো অভিযানের নেতৃত্ব দিতে নিয়ে আসা হয় সৌদি রাজার স্বশস্ত্র ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফালেহ আল দাহরি কে।ঠিক হয় ,মারওয়া দরজা উড়িয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকবে এই বাহিনী।এই সময়ে এক কঠিন অবস্থার সামনে পড়েছিল সৌদি শাসকরা।ইমাম মেহেদির তত্বে বিশ্বাসী একাংশ ধরে নিয়েছিল এই বিরোধিতা আসছে শয়তানের পক্ষ থেকে এই সাজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে।অর্থাৎ একটা জন সমর্থন গড়ে ওঠার অবস্থা তৈরী হয়েছিল এই ইমাম মেহেদীকে কেন্দ্র করে যাতে শাসক গোষ্ঠী শয়তানের দোসর হিসেবে ভুমিকা নিতে যাচ্ছিল।এই পর্যায়ে একটি বুদ্ধিমানের মতো কাজ সৌদি প্রশাসন করে,পুরো অভিযানের নানান পর্যায়ে এরা সংবাদ মাধ্যমকে নিজেদের কাজের বিষয়ে জানানো বা সঙ্গে রাখার কাজ শুরু করে ফলে বিষয়টি অনেক স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।
প্রথমদিনে সাজোয়া গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেলেও তীব্র গুলির কারণে শারীরিক ভাবে মসজিদের আশেপাশে নেমে অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ পায় নি সৌদি বাহিনী।এরপরের দিন কৌশলগত ভাবে আসেপাশের উচু অবস্থাপনা গুলোতে পাল্টা দূর পাল্লার বন্দুকবাজ মোতায়েন করে সৌদি বাহিনী।এইবার উচ্চ অবস্থান থেকে পাল্টা গুলি চালিয়ে অনেকটাই নিস্ক্রিয় করে ফেলতে পারে ওই দখলদার বাহিনীর স্নাইপার গুলো কে।একই সাথে আকাশ থেকে নিরীক্ষণের মাধ্যমে সৌদি বাহিনী জানতে পারে উত্তর ভাগের মারওয়া দরজা অপেক্ষাকৃত কম প্রতিরোধের জায়গা হতে পারে।
এই পর্যায়ে ২২ তারিখ,ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ, সৌদি গোলন্দাজরা কম মাপের বিস্ফোরক গোলা ছুড়তে থাকে,এটি স্রেফ ওই অবস্থানরত প্রতিরোধকারীদের নজর অন্যদিকে নিয়ে আরো একটি বাহিনীকে সাফা-মারওয়া পথের পূর্ব দিকে অবস্থান নিতে করা হয়েছিল।এই কাজে অর্ধেক পথ এগিয়ে গেলেও তীব্র গুলির কারণে বেশ কিছু সেনার মৃত্যু হলে বাহিনী আবার পিছু হটে যায়।একই ভাবে আগে বলা সেই মারওয়া দরজার দিকে বিস্ফোরক সহযোগে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকতে পারলেও সফল হলো না।
ফতোয়ার জোরে নতুন শক্তি প্রাপ্তি:
অবশেষে,নভেম্বর ২৩তারিখে ইসলামের ইতিহাসে সূচনা থেকে এই প্রথম,জুম্মার নামাজ পড়া হলো না এই শীর্ষ মসজিদে।দিনের শেষে উলেমারা ফতোয়া দিলো “এই জঙ্গিদের অস্ত্র ত্যাগ করে আত্মসমর্পর্ন করার আবেদন করা হোক,তা না মানলে কোরানের আল বাকারাহর বিধান অনুযায়ী যদি আল মসজিদ আল হারাম এ আক্রমন না করার এবং যদি একান্তই আক্রান্ত হও তবে তাদের হত্যা করার আদেশের ভিত্তিতে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হোক”
এইবার এই ফতোয়ার আনুকূল্যে একটা শক্ত অবস্থান পেলো সৌদিশক্তি।এতদিন বাইরে থেকে প্রত্যাঘাত করলেও এবার ধর্মীয় সমর্থনে ভিতরে মারার অধিকার একটা নির্দিস্ট দিক নির্দেশ দিলো।প্রথমে ওই ফতোয়ার নির্দেশ ধরে আত্মসমর্পর্ন করার কথা ঘোষনা করা হয়,কোনো সদুত্তর না পাওয়ার পরে মিনারগুলোতে রকেট নিক্ষেপ করা হয় উপরে থাকা দুরপাল্লার(স্নাইপার)রাইফেলধারী লোকদের নিস্ক্রিয় করতে।একই সাথে সেই আগের বলা সাফা-মারওয়া পথের বাইরের দিকের আগেই ভেঙ্গে দেওয়া দরজা দিয়ে গোলা দাগা শুরু করে।
অবশেষে,শনিবার, নভেম্বর ২৪ তারিখ এই সাফা মারওয়া পথের দখল নিতে পারে সৌদি বাহিনী।জুহাইমান আর তার দল উপরের অংশ থেকে পিছু হটে আশ্রয় নেয় মসজিদের মাটির নিচের ঘরগুলোতে।এই জায়গায় সর্বসাকুল্যে ২২৫টী ঘর পরস্পরের সাথে সংযোগ যুক্ত ছিল।পর্যাপ্ত অস্ত্র,গুলি আর প্রয়োজনীয় খাদ্য নিয়ে আরো এক সপ্তাহ লড়াই করার অবস্থায় ছিল বলে ধারণা করা হয়।বোমা,গুলি এমনকি নানান কার্পেট বা গাড়ির টায়ার পুড়িয়ে সব রকম ভাবে সৌদি বাহিনী কে বাধা দিয়ে যায় জুহাইমানের বাহিনী।এই সময়ে কাদানে গ্যাস দিয়ে এদের বের করে নিয়ে আসার কাজ ও ব্যর্থ হয়।ভূগর্ভে থাকার কারণে এই গ্যাস আবার মাটির উপরের দিকেই উঠতে থাকে আর এই লোকগুলো মুখে জলে ভিজানো কাপড় লাগিয়ে রাখার কারণে কোনো প্রতিকুল অবস্থায় পড়ে নি বরং উল্টে এই গ্যাস মাটির উপরে থাকা সৌদি বাহিনীর জন্য বিরূপ অবস্থা তৈরী করে।এই পর্যায়ে সমস্যা আরো প্রকট হয় কারণ মসজিদে নামাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোটা মুসলিম বিশ্বে প্রভূত সম্মানহানি হতে থাকে।গোটা পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোতে এই আজান সম্প্রসার বা এর প্রতীকী একটি মূল্য ছিল যা ধাক্কা খায়। সৌদি শাসকদের অত্যন্ত অস্বস্তির কারণ হতে থাকে এই সময়টি। সৌদি শাসকের সেনা একের পর এক উপায়ে চেষ্টা করে যেতে থাকে এদের উৎখাত করতে তবে সফলতা পাচ্ছিল না এই অসংখ্য কক্ষ আর ভূগর্ভের কক্ষে এদের অবস্থানের কারণে।আরো একটি কারণ ছিল , সৌদি শাসক পাখির চোখের মতো লক্ষ্য করেছিল এদের পালের গোদা কে জীবন্ত ধরার জন্য।অতঃপর,এই অস্বস্তিকর অবস্থা এবং বিশ্বজুড়ে চাপ অবসান করতে সৌদি রাজা সাহায্যের জন্য ফরাসি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে।
পরবর্তী পর্বে এই দখলের অন্তিম পরিনতি এবং বিষ বৃক্ষের সূচনার প্রাসঙ্গিক কথা থাকবে।ততক্ষণ আবার একটি চা পানের বিরতি।
এই পর্বের তথ্যসূত্র:
১. ইতিহাসের পাতা থেকে https://medium.com/@haramainarchives/makkah-grand-mosque-seizure-1979-ae55625315a5
২. যে অসত্য খবর পরিবেশন করার পরে পৃথিবীতে এক নতুন অশান্তি শুরু হয়েছিল https://www.nytimes.com/1979/11/21/archives/mecca-mosque-seized-by-gunmen-believed-to-be-militants-from-iran.html
৩. স্রেফ ছবির হিসেবে দেখলেও পর্ব ধরে দেখতে পারেন এই প্রতিবেদন গুলো https://www.youtube.com/watch?v=Z7kzj-zPoOM
৪. একই ভাবে পরের পর্ব https://www.youtube.com/watch?v=JufzBz6gbnA
৫. তিন নম্বর পর্ব https://www.youtube.com/watch?v=oomQ6IyWyg4

Posted at April 18, 2019 |  by Arya ঋষি
No photo description available.
এক বিষ বৃক্ষের সূচনা -১ম পর্ব 
মুখবন্ধ: আমরা অনেক কাছের বিষয় দেখি না বা ভুলে যাই।এই লেখাটি একটি ঐতিহাসিক তবে কালান্তক ঘটনার উপরে লেখা যা একটি দেশ বা গোটা পৃথিবীতে এক রক্ষণশীল ঘেরাটোপের সূচনা করেছিল। আসুন,জানি , ঠিক কি ছিল সেই ঘটনা। ইতিহাসের নিরিখে বেশি আগের নয় , স্রেফ চার দশকের আগে একটি ধর্মান্ধ মানুষ আর তার তৈরী একটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠী আচমকা দখল নিয়েছিল কাবা এবং এর মধ্যে থাকা মসজিদ আর নানান স্থাপনাগুলো।এই ঘটনা ইসলামিক দুনিয়া তো বটেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়াকে।একই সাথে তুলনামূলক আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সৌদি আরবকে পরিবর্তিত করেছিল একটি ধর্মের ঘেরাটোপে মধ্যযুগের একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়। সেই কলঙ্কিত দিনগুলোর শুরু হয় ২০শে নভেম্বর , ১৯৭৯ সালে।এই সময়ের এক মাস আগে ছিল হ্বজ এবং ঈদের উৎসবের সময়।দুনিয়ার নানান প্রান্ত থেকে আগত পুণ্যার্থী এবং আশেপাশের নানান দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় মানুষের সমাগম হয়েছিল ওই মাসে মানে অক্টবরে।পরের মাসেও প্রায় হাজার পঞ্চাশেক মানুষ ছিল এই কাবা প্রাঙ্গনে সকালের প্রথম প্রার্থনা মানে ফজরের নামাজের সময়ে।এই সময়েই দুশো অস্ত্রধারী লোকের সাথে এই পবিত্রতম স্থানের দখল নিয়েছিল চল্লিশ বছরের জুহাইমান আল উতায়বি।কাবা সংলগ্ন শীর্ষ মসজিদের ইমাম তার ফজরের নামাজ শেষ করার পরেই এই ঘটনা ঘটে। কি করে লোকটি এই ঘটনা ঘটিয়েছিল ? এই কাজের সুযোগ পেয়েছিল কারণ পঞ্চাশের দশক থেকেই এই স্থানের প্রসারণ এবং আরো মানুষের স্থান করে দিতে নানান প্রাসঙ্গিক নির্মাণের কাজ হচ্ছিল সেই প্রথম বাদশা সৌদ এর সময় থেকেই।ওই মাস সেই বছরের ইসলামী নতুন বছরের শুরুর কারণে আরো একটু বেশি নির্মাণের কাজ চলছিল।ঠিক এই সুযোগ নিয়েছিল এই দলটি। এই নতুন ইসলামী বছর মানে ১৪০০ উজ্জাপনের ধর্মীয় রীতির জন্য সৌদি এবং বিদেশী অনেক নাগরিক যখন ওই জায়গায় এসেছিল,ঠিক সেই সময়েই কয়েকটি ট্রাকে নির্মাণ শ্রমিকদের নিত্য আনাগোনার পথেই নজর এড়িয়ে মসজিদের ফাতাহ দরজা দিয়ে ঢুকে যায় এই দলটি।আল সুবাইল যিনি ওই সময়ের ইমামতি করতেন ,তার ভাষায় ,ফজরের নামাজ আদায়ের পরেই দেখতে পেলেন তার দিকে বিশ /তিরিশজন সশস্ত্র মানুষ এগিয়ে আসছে।আশংকা প্রবল হয়ে উঠলো যখন তিনি প্রাঙ্গনে বন্দুকের আওয়াজ শুনতে পেলেন।এই পুরো জায়গাটি দখলের শুরুতেই দরজার দুজন লাঠি হাতে থাকা রক্ষী গুলিতে নিহত হলো এই সময়ে।এই আতংক আর হুড়োহুড়ির মধ্যেই বেশ কিছু মানুষ এই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো।এরপরেই এই দখলকারী বাহিনী বেরিয়ে যাওয়ার দরজা গুলো বন্ধ করে দিলো।এই পর্যায়ে তিনজন সশস্ত্র লোক ইমামের দিকে এগিয়ে এলো ,এদের একজন মানে জুহাইমান মাইক দখল করে নির্দেশ দিতে থাকলো তার সঙ্গের নানান অস্ত্রধারীদের। সব মিনারের উপরে বন্দুকধারী আর প্রত্যেক দরজায় একই ভাবে তাঁদের অবস্থান নিতে নির্দেশ দিলো সে। সোজা কথায় কেউ অগ্রসর হলেই গুলি করতে ফরমান জারি করে সে।এই দলটি তাদের অস্ত্র এবং অন্য গোলা বারুদ নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করেছিল কফিনের মধ্যে।এই জায়গাতে প্রায়শই মৃত মানুষের দেহ নিয়ে আসা হয় অন্তিম যাত্রার আগে মৃতের কল্যাণের জন্য। জুহাইমান এর পরে মাইক দেয় তার অপর সঙ্গী আরো এক ধর্মপ্রচারক খালেদ আল ইয়ামিকে।সে পূর্ব লিখিত ভাষণ থেকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে তাদের সাথে আছে প্রত্যাশিত সেই ইমাম মেহেদী যার পরিচিত নাম মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহ্তানী।এই বিষয়ে বলতে গিয়ে এও বলা হয় যে , সে কুরেশ বংশের এবং তার বাবা এবং মা আশরাফ।একই সাথে এর বংশপরিচয়ে নবী মোহাম্মদের সঙ্গী এবং আত্মীয় আর অন্যতম খলিফা আলীর এবং ফাতেমার ঔরসজাত সন্তানের ধারক ও বলা হয়।এই গুণাবলী গুলি প্রত্যাশিত ইমাম মেহেদির থাকার কথা যা এই মানুষটির আছে এই ছিল মূল দাবি।এই পর্যায়ে বলতে ইচ্ছে হয় , সব জায়গায় সেই একই উচ্চ বংশ এবং শ্রেণী বিভাজনের জন্য আলাদা ব্যবস্থার কথা দেখা যায়,কোনো ব্যতিক্রম নেই !এই সঙ্গে বলা হয় তাঁরা এক পরিচ্ছন্ন দুনিয়া বিশেষতঃ কুশাসন মুক্ত সৌদি প্রশাসনের জন্য এসেছে।একই সাথে তৎকালীন সৌদি রাজতন্ত্র এবং উলেমা এবং অন্য ইসলামী ধর্মীয় গুরু যাঁরা সৌদি সমাজে স্বীকৃত ছিল তাদের উৎখাত এবং তাদের নির্দেশাবলী কে নস্যাৎ করার কথাও বলে।উপস্থিত সব মানুষকে তাঁদের ঘোষিত মেহেদির আনুগত্য জানাতে আহ্বান ও জানানো হয় একই সাথে।তাদের এই কার্যাবলী সবই মানুষকে কোরান এবং হাদিসের পথে নিয়ে যাওয়ার তাই কোনো অন্যায় করতে তাঁরা আসেনি,এই ছিল ভাষণের মূল বক্তব্য। এই মেহেদির আবির্ভাব একটি অত্যাশ্চর্য ঘোষণা ছিল ওই মসজিদ চত্বরে উপস্থিত সব পুণ্যার্থীর জন্য। যারা জানেন না তাঁদের জন্য বলে রাখি , এই ইমাম মেহেদির আগমন কেয়ামতের আগে ঘটবে এবং এক সার্বিক যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীতে আবার অন্যায় ,অবিচার ইত্যাদি মিটিয়ে শোষণ নির্যাতন দূর করে এক সুবর্ন যুগের সূচনার কথা ইসলামী হাদিসে বলা আছে। এই আবির্ভাব হওয়ার কথা নবী মোহাম্মদ বলেছে বলেই বলা হয় আর তাই এই ঘোষণা এক অভূতপূর্ব চাঞ্চল্য তৈরী করে ওই জায়গায় থাকা সবার কাছেই। এই ঘটনার মূল চক্রী জুহাইমান এরপরে নাটকীয় ভাবে সবার সামনে তুলে ধরা সেই মেহেদীকে সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা জানায় আর তারপরেই তার দলের "আল্লাহ আকবর " উল্লাস ধ্বনি শোনা যায়।এক সার্বিক অচলাবস্থার সূচনা হয়।এই পুণ্যার্থীদের একটি বড় অংশ ছিল বিদেশী এবং তাঁরা আরবি সে ভাবে জানতো না। এই কারণে ঠিক কি হচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারে নি। এর সাথে এই সর্বাধিক পবিত্র জায়গায় নিষিদ্ধ ছিল কোনো অস্ত্র বহন করা তাই এতো অস্ত্রধারী আর এই সব কান্ড দেখে তাঁরা হতচকিত হয়ে যায়।সত্যি বলতে কাবাতে ওই সময়ে অস্ত্রের প্রবেশ এতোটাই নিষিদ্ধ ছিল যে মূল দরজার রক্ষীদের হাতেও স্রেফ লাঠি থাকতো। এই প্রবল বিশৃঙ্খলার মধ্যে ইমাম কোনক্রমে তার মসজিদের অফিসে ঢুকে যেতে তার উর্দ্ধতন কর্তিপক্ষ শেখ নাসের বিন হামাদ আল রাশিদ যিনি ওই সময়ের প্রাসঙ্গিক বিষয়ের কর্তা ছিলেন তাকে ফোনে বিষয়টি জানান,একই সাথে আসেপাশে হওয়া ঘটনার গুরুত্ব বুঝাতে ফোনটি ধরে রাখে যাতে বন্দুকের আওয়াজ শোনানো যায়।এরপরে তিনি খেয়াল করেন এই দখলদারের দল বিদেশী পূন্যার্থীদের চলে যেতে দিচ্ছে তবে আরব বিশেষত সৌদি নাগরিকদের না।ঘন্টা চারেক অপেক্ষা করে নিজের নির্দিস্ট ইমামতির পোশাক ছেড়ে সাধারণ পোশাকে ভূগর্ভস্থ দরজা দিয়ে ইন্দোনেশীয় তীর্থযাত্রীদের সাথে বাইরে চলে আসতে স্বক্ষম হন। স্রেফ এক ঘন্টার মধ্যেই এই দলটি পুরো কাবা এবং সংলগ্ন পুরো জায়গাটি দখল করে নিয়ে সোজাসুজি সৌদি রাজার মানে রাজশক্তির জন্য অতীব বিপদজনক সংকেত তৈরী করে দিলো।এই দখলদারি করা লোকগুলো একটি সংগঠন তৈরী করেছিল এর আগে যার নাম আল-জামা আল-সালাফিয়া আল মুহতাসিবা বা JSM যেটির মূল দাবি ছিল ইসলামী পথে তৎকালীন সৌদি আরব কে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। সোজা কথায় একটি পুরো দস্তুর ধর্মীয় পথে রাষ্ট্রের চালনা এবং তৎকালীন শাসকের অপসারণ। মূল ঘটনার পূর্বাপর বৃত্তান্ত তিরিশের দশকের পর থেকে তেলের টাকার কারণে একটা অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক আর সামাজিক পটপরিবর্তন শুরু হয়েছিল গোটা আরব অঞ্চলে। নানান ভোগের সামগ্রী অতি সুলভ আর ক্রমশঃ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো নারী পুরুষের সামাজিক মেলামেশা ইত্যাদি নানান নতুন বস্তুর প্রচলন এক শ্রেণীর মৌলবাদী আর প্রাচীন পন্থী মানুষের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল।এই সময়ে এই জেএসএম নামের দল বা এদের সমর্থক গোষ্ঠী সেই পুরোনো ধাঁচে কোরান পাঠ ,হাদিসের বা প্রাসঙ্গিক পথেই চলার কাজ করে চলেছিল। এদের কাছে সৌদি রাজার কোনো অনুশাসনের বদলে স্রেফ কোরানের বাক্য ধরে চলার পথ গ্রহণীয় হয়েছিল।এক কথায়,সৌদি রাজতন্ত্রের কোনো অনুশাসন তাদের কাছে গ্রাহ্য ছিল না।দলের তরুণ নেতৃত্ব দেওয়া জুহাইমান সৌদি আরবের সাজির বলে একটি অঞ্চলের বেদুঈন পরিবারের সন্তান ছিল।তাঁর প্রথম জীবনের সৌদি রাজার সেনাদলের কাজের অভিজ্ঞতা এই অভিযানের জন্য কাজে লেগেছিল।এক পর্যায়ে সেনার চাকরি থেকে বেরিয়ে এসে এই কাজে যোগ দেয় এই লোকটি। দিনের পর দিন নিজের এলাকাতে মরুভূমির রাতের আসরে নিজের আগের জীবনের পথ ভুল ইত্যাদি বলে সঠিক পথ দেখানোর এই ধর্মীয় কথা বলে গিয়েছিল অসংখ্য নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের কাছে।এই ভাবে সে ব্যক্তিগত অনুসারীর দল ও তৈরী করে ফেলেছিল। তার এই ধর্মীয় বয়ান বা নানান প্রাসঙ্গিক আসরের প্রত্যক্ষদর্শী ওসামা আল কোয়াশি ,যে নিজেও একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিল ,বলেছিল যে জুহাইমান এই সময়ে বেআইনি নেশার বস্তু চোরাচালানের কাজ ও করছিল।ক্রমশঃ এক বড় সংখ্যক অল্পবয়েসী ছেলেদের আকর্ষিত করে তাঁর অনুসারী করে ফেলে।একটিই জায়গায় তার খামতি ছিল যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এমনকি অন্য আর পাঁচটি ধর্মীয় গুরুর মতো প্রাসঙ্গিক পড়াশোনাতে। এই প্রসঙ্গে তার এক সময়ের অনুসারী নাসের আল হজেইমির বয়ানে জানা যায় যে লোকটি মুলত প্রত্যন্ত বেদুইন অঞ্চলেই নিজের প্রচার করতো যেহেতু তার নিজের ভাষা মানে আরবির ধাঁচ ছিল তাঁদের মতো।শহরের বিশেষতঃ বুনিয়াদি আরবি ভাষাতে তাঁর দখল কম থাকায় কোনো শহরের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় স্থানে নিজের বক্তব্য রাখতে যায় নি।এই কাজ করতে গেলে তাঁর ওই শ্রোতাদের কাছে সম্ভ্রম বা শ্রদ্ধা আদায় করা সম্ভব হতো না ওটা সে নিজেও বুঝেছিল। এই ইমাম মেহেদী মোহ নিয়ে ওই সময়ের সৌদি রাষ্ট্রীয় নজরদারি বিভাগ বা ইন্টালিজেন্সির প্রধান তুর্কি আল ফায়সাল পরবর্তীতে একটি স্বাক্ষাৎকারে জানিয়েছিল যে এই গোষ্ঠীতে অসংখ্য ছাত্র ছিল যাঁরা এই মেহেদির আবির্ভাব কে আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করতো।প্রাথমিক পর্যায়ে কাবা এবং গোটা সৌদি আরবের ক্ষমতা দখল এবং পরবর্তীতে গোটা ইসলামী দুনিয়ায় নেতৃত্ব করা একটি প্রবল বাসনা ছিল এই দলটির।পাঠক,আল কায়দা বা আইসিস এর সাথে অনেকটাই মিল পাচ্ছেন কি ? যাইহোক ,একটা মজার বিষয় দেখুন , এই একই ভাবে প্রায় সব প্রচলিত ধর্মেই একজন পরিত্রাতা অন্তে আসার কথা বলা হয়েছে যে এই ধরিত্রীর সব পাপ বা ক্লেশ ইত্যাদি দূর করে একটি কাঙ্খিত যুগের সূচনা করবে। এই ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম নেই ,এক বহু যুগের এই আকাঙ্খা কে পুঁজি করে অনেক লোক এই কাজ করেছে।মুসলিম সমাজেও নানান দেশে এই কাজ আগেও হয়েছে।ঊনবিংশ শতকে মোহাম্মদ আহমেদ নামের এক সুদানিস শেখ ১৮৮১তে এই ধরণের একটি উত্থানের কাজ করতে গিয়েছিল তৎকালীন মিশরীয় পরাধীনতায় থাকা শাসকের বিরুদ্ধে। মজার কথা হলো এই মেহেদির কোনো প্রসঙ্গ কোরানে কিন্তু নেই।কেয়ামতের মানে শেষ দিনের আগে এই ধরণের ঘটনার আভাস থাকলেও হাদিস বর্ণিত কোনো ঘটনার বিষয় নেই বলেই মতামত দিয়েছে ইসলামের নানান পন্ডিত মহল।সে যে যাই বলুক,জুহাইমান এই মেহেদী বলে কাঙ্খিত মানুষের ভিত্তিতে এক বড় সংখ্যক অনুসারীর দল বানিয়ে ফেলেছিল।এই অনুসারীদের নিয়ে একটি নিকটস্থ মসজিদে এক জায়গায় হয় এই অভিযানের তিনদিন আগে।এই প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক নানান স্বাক্ষাতকারে দেখতে পাই এই অনুসারীদের প্রাক্তন কয়েকজন সদস্য এই গোষ্ঠিকে সালাফি আন্দোলনের একটি ধারা বলেছে,যাদের প্রবীন মাথাদের সরিয়ে এই নতুন প্রজন্মের দল পুরো নেতৃত্ব হাতে নিয়েছিল জুহাইমানের নেতৃত্বে। পরবর্তী পর্বে থাকবে এক চলমান পনেরো দিনের ক্রমাগত লড়াই এবং বিশ্ব রাজনীতিতে বিবিধ দোলাচল আর অন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়-ততক্ষণ একটু চা পানের বিরতি  তথ্যসূত্র : ১. আলোচিত বইটির লেখকের একটি স্বাক্ষাতকার দেখুন 

https://www.youtube.com/watch?v=1hNjJY1OXmM ২. যারা বিষয়টি প্রতিবেদনের আকারে দেখতে চাইছেন তাদের জন্য https://www.youtube.com/watch?v=HItn3u02RwU ৩. নির্মোহ তবে আংশিক একটি প্রতিবেদন https://www.bbc.com/news/stories-50852379 ৪.  আরো একটি ভালো প্রতিবেদন  https://www.arabnews.com/node/1371221/saudi-arabia ৫. মূল বইটির লেখকের একটি স্বাক্ষাতকার এবং ঘটনার বিবরণ জানতে পারেন এই সুত্রে https://www.npr.org/templates/story/story.php?storyId=112051155

কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাসঃ-১ম পর্ব

No photo description available.
এক বিষ বৃক্ষের সূচনা -১ম পর্ব 
মুখবন্ধ: আমরা অনেক কাছের বিষয় দেখি না বা ভুলে যাই।এই লেখাটি একটি ঐতিহাসিক তবে কালান্তক ঘটনার উপরে লেখা যা একটি দেশ বা গোটা পৃথিবীতে এক রক্ষণশীল ঘেরাটোপের সূচনা করেছিল। আসুন,জানি , ঠিক কি ছিল সেই ঘটনা। ইতিহাসের নিরিখে বেশি আগের নয় , স্রেফ চার দশকের আগে একটি ধর্মান্ধ মানুষ আর তার তৈরী একটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠী আচমকা দখল নিয়েছিল কাবা এবং এর মধ্যে থাকা মসজিদ আর নানান স্থাপনাগুলো।এই ঘটনা ইসলামিক দুনিয়া তো বটেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়াকে।একই সাথে তুলনামূলক আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সৌদি আরবকে পরিবর্তিত করেছিল একটি ধর্মের ঘেরাটোপে মধ্যযুগের একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়। সেই কলঙ্কিত দিনগুলোর শুরু হয় ২০শে নভেম্বর , ১৯৭৯ সালে।এই সময়ের এক মাস আগে ছিল হ্বজ এবং ঈদের উৎসবের সময়।দুনিয়ার নানান প্রান্ত থেকে আগত পুণ্যার্থী এবং আশেপাশের নানান দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় মানুষের সমাগম হয়েছিল ওই মাসে মানে অক্টবরে।পরের মাসেও প্রায় হাজার পঞ্চাশেক মানুষ ছিল এই কাবা প্রাঙ্গনে সকালের প্রথম প্রার্থনা মানে ফজরের নামাজের সময়ে।এই সময়েই দুশো অস্ত্রধারী লোকের সাথে এই পবিত্রতম স্থানের দখল নিয়েছিল চল্লিশ বছরের জুহাইমান আল উতায়বি।কাবা সংলগ্ন শীর্ষ মসজিদের ইমাম তার ফজরের নামাজ শেষ করার পরেই এই ঘটনা ঘটে। কি করে লোকটি এই ঘটনা ঘটিয়েছিল ? এই কাজের সুযোগ পেয়েছিল কারণ পঞ্চাশের দশক থেকেই এই স্থানের প্রসারণ এবং আরো মানুষের স্থান করে দিতে নানান প্রাসঙ্গিক নির্মাণের কাজ হচ্ছিল সেই প্রথম বাদশা সৌদ এর সময় থেকেই।ওই মাস সেই বছরের ইসলামী নতুন বছরের শুরুর কারণে আরো একটু বেশি নির্মাণের কাজ চলছিল।ঠিক এই সুযোগ নিয়েছিল এই দলটি। এই নতুন ইসলামী বছর মানে ১৪০০ উজ্জাপনের ধর্মীয় রীতির জন্য সৌদি এবং বিদেশী অনেক নাগরিক যখন ওই জায়গায় এসেছিল,ঠিক সেই সময়েই কয়েকটি ট্রাকে নির্মাণ শ্রমিকদের নিত্য আনাগোনার পথেই নজর এড়িয়ে মসজিদের ফাতাহ দরজা দিয়ে ঢুকে যায় এই দলটি।আল সুবাইল যিনি ওই সময়ের ইমামতি করতেন ,তার ভাষায় ,ফজরের নামাজ আদায়ের পরেই দেখতে পেলেন তার দিকে বিশ /তিরিশজন সশস্ত্র মানুষ এগিয়ে আসছে।আশংকা প্রবল হয়ে উঠলো যখন তিনি প্রাঙ্গনে বন্দুকের আওয়াজ শুনতে পেলেন।এই পুরো জায়গাটি দখলের শুরুতেই দরজার দুজন লাঠি হাতে থাকা রক্ষী গুলিতে নিহত হলো এই সময়ে।এই আতংক আর হুড়োহুড়ির মধ্যেই বেশ কিছু মানুষ এই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো।এরপরেই এই দখলকারী বাহিনী বেরিয়ে যাওয়ার দরজা গুলো বন্ধ করে দিলো।এই পর্যায়ে তিনজন সশস্ত্র লোক ইমামের দিকে এগিয়ে এলো ,এদের একজন মানে জুহাইমান মাইক দখল করে নির্দেশ দিতে থাকলো তার সঙ্গের নানান অস্ত্রধারীদের। সব মিনারের উপরে বন্দুকধারী আর প্রত্যেক দরজায় একই ভাবে তাঁদের অবস্থান নিতে নির্দেশ দিলো সে। সোজা কথায় কেউ অগ্রসর হলেই গুলি করতে ফরমান জারি করে সে।এই দলটি তাদের অস্ত্র এবং অন্য গোলা বারুদ নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করেছিল কফিনের মধ্যে।এই জায়গাতে প্রায়শই মৃত মানুষের দেহ নিয়ে আসা হয় অন্তিম যাত্রার আগে মৃতের কল্যাণের জন্য। জুহাইমান এর পরে মাইক দেয় তার অপর সঙ্গী আরো এক ধর্মপ্রচারক খালেদ আল ইয়ামিকে।সে পূর্ব লিখিত ভাষণ থেকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে তাদের সাথে আছে প্রত্যাশিত সেই ইমাম মেহেদী যার পরিচিত নাম মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহ্তানী।এই বিষয়ে বলতে গিয়ে এও বলা হয় যে , সে কুরেশ বংশের এবং তার বাবা এবং মা আশরাফ।একই সাথে এর বংশপরিচয়ে নবী মোহাম্মদের সঙ্গী এবং আত্মীয় আর অন্যতম খলিফা আলীর এবং ফাতেমার ঔরসজাত সন্তানের ধারক ও বলা হয়।এই গুণাবলী গুলি প্রত্যাশিত ইমাম মেহেদির থাকার কথা যা এই মানুষটির আছে এই ছিল মূল দাবি।এই পর্যায়ে বলতে ইচ্ছে হয় , সব জায়গায় সেই একই উচ্চ বংশ এবং শ্রেণী বিভাজনের জন্য আলাদা ব্যবস্থার কথা দেখা যায়,কোনো ব্যতিক্রম নেই !এই সঙ্গে বলা হয় তাঁরা এক পরিচ্ছন্ন দুনিয়া বিশেষতঃ কুশাসন মুক্ত সৌদি প্রশাসনের জন্য এসেছে।একই সাথে তৎকালীন সৌদি রাজতন্ত্র এবং উলেমা এবং অন্য ইসলামী ধর্মীয় গুরু যাঁরা সৌদি সমাজে স্বীকৃত ছিল তাদের উৎখাত এবং তাদের নির্দেশাবলী কে নস্যাৎ করার কথাও বলে।উপস্থিত সব মানুষকে তাঁদের ঘোষিত মেহেদির আনুগত্য জানাতে আহ্বান ও জানানো হয় একই সাথে।তাদের এই কার্যাবলী সবই মানুষকে কোরান এবং হাদিসের পথে নিয়ে যাওয়ার তাই কোনো অন্যায় করতে তাঁরা আসেনি,এই ছিল ভাষণের মূল বক্তব্য। এই মেহেদির আবির্ভাব একটি অত্যাশ্চর্য ঘোষণা ছিল ওই মসজিদ চত্বরে উপস্থিত সব পুণ্যার্থীর জন্য। যারা জানেন না তাঁদের জন্য বলে রাখি , এই ইমাম মেহেদির আগমন কেয়ামতের আগে ঘটবে এবং এক সার্বিক যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীতে আবার অন্যায় ,অবিচার ইত্যাদি মিটিয়ে শোষণ নির্যাতন দূর করে এক সুবর্ন যুগের সূচনার কথা ইসলামী হাদিসে বলা আছে। এই আবির্ভাব হওয়ার কথা নবী মোহাম্মদ বলেছে বলেই বলা হয় আর তাই এই ঘোষণা এক অভূতপূর্ব চাঞ্চল্য তৈরী করে ওই জায়গায় থাকা সবার কাছেই। এই ঘটনার মূল চক্রী জুহাইমান এরপরে নাটকীয় ভাবে সবার সামনে তুলে ধরা সেই মেহেদীকে সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা জানায় আর তারপরেই তার দলের "আল্লাহ আকবর " উল্লাস ধ্বনি শোনা যায়।এক সার্বিক অচলাবস্থার সূচনা হয়।এই পুণ্যার্থীদের একটি বড় অংশ ছিল বিদেশী এবং তাঁরা আরবি সে ভাবে জানতো না। এই কারণে ঠিক কি হচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারে নি। এর সাথে এই সর্বাধিক পবিত্র জায়গায় নিষিদ্ধ ছিল কোনো অস্ত্র বহন করা তাই এতো অস্ত্রধারী আর এই সব কান্ড দেখে তাঁরা হতচকিত হয়ে যায়।সত্যি বলতে কাবাতে ওই সময়ে অস্ত্রের প্রবেশ এতোটাই নিষিদ্ধ ছিল যে মূল দরজার রক্ষীদের হাতেও স্রেফ লাঠি থাকতো। এই প্রবল বিশৃঙ্খলার মধ্যে ইমাম কোনক্রমে তার মসজিদের অফিসে ঢুকে যেতে তার উর্দ্ধতন কর্তিপক্ষ শেখ নাসের বিন হামাদ আল রাশিদ যিনি ওই সময়ের প্রাসঙ্গিক বিষয়ের কর্তা ছিলেন তাকে ফোনে বিষয়টি জানান,একই সাথে আসেপাশে হওয়া ঘটনার গুরুত্ব বুঝাতে ফোনটি ধরে রাখে যাতে বন্দুকের আওয়াজ শোনানো যায়।এরপরে তিনি খেয়াল করেন এই দখলদারের দল বিদেশী পূন্যার্থীদের চলে যেতে দিচ্ছে তবে আরব বিশেষত সৌদি নাগরিকদের না।ঘন্টা চারেক অপেক্ষা করে নিজের নির্দিস্ট ইমামতির পোশাক ছেড়ে সাধারণ পোশাকে ভূগর্ভস্থ দরজা দিয়ে ইন্দোনেশীয় তীর্থযাত্রীদের সাথে বাইরে চলে আসতে স্বক্ষম হন। স্রেফ এক ঘন্টার মধ্যেই এই দলটি পুরো কাবা এবং সংলগ্ন পুরো জায়গাটি দখল করে নিয়ে সোজাসুজি সৌদি রাজার মানে রাজশক্তির জন্য অতীব বিপদজনক সংকেত তৈরী করে দিলো।এই দখলদারি করা লোকগুলো একটি সংগঠন তৈরী করেছিল এর আগে যার নাম আল-জামা আল-সালাফিয়া আল মুহতাসিবা বা JSM যেটির মূল দাবি ছিল ইসলামী পথে তৎকালীন সৌদি আরব কে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। সোজা কথায় একটি পুরো দস্তুর ধর্মীয় পথে রাষ্ট্রের চালনা এবং তৎকালীন শাসকের অপসারণ। মূল ঘটনার পূর্বাপর বৃত্তান্ত তিরিশের দশকের পর থেকে তেলের টাকার কারণে একটা অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক আর সামাজিক পটপরিবর্তন শুরু হয়েছিল গোটা আরব অঞ্চলে। নানান ভোগের সামগ্রী অতি সুলভ আর ক্রমশঃ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো নারী পুরুষের সামাজিক মেলামেশা ইত্যাদি নানান নতুন বস্তুর প্রচলন এক শ্রেণীর মৌলবাদী আর প্রাচীন পন্থী মানুষের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল।এই সময়ে এই জেএসএম নামের দল বা এদের সমর্থক গোষ্ঠী সেই পুরোনো ধাঁচে কোরান পাঠ ,হাদিসের বা প্রাসঙ্গিক পথেই চলার কাজ করে চলেছিল। এদের কাছে সৌদি রাজার কোনো অনুশাসনের বদলে স্রেফ কোরানের বাক্য ধরে চলার পথ গ্রহণীয় হয়েছিল।এক কথায়,সৌদি রাজতন্ত্রের কোনো অনুশাসন তাদের কাছে গ্রাহ্য ছিল না।দলের তরুণ নেতৃত্ব দেওয়া জুহাইমান সৌদি আরবের সাজির বলে একটি অঞ্চলের বেদুঈন পরিবারের সন্তান ছিল।তাঁর প্রথম জীবনের সৌদি রাজার সেনাদলের কাজের অভিজ্ঞতা এই অভিযানের জন্য কাজে লেগেছিল।এক পর্যায়ে সেনার চাকরি থেকে বেরিয়ে এসে এই কাজে যোগ দেয় এই লোকটি। দিনের পর দিন নিজের এলাকাতে মরুভূমির রাতের আসরে নিজের আগের জীবনের পথ ভুল ইত্যাদি বলে সঠিক পথ দেখানোর এই ধর্মীয় কথা বলে গিয়েছিল অসংখ্য নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের কাছে।এই ভাবে সে ব্যক্তিগত অনুসারীর দল ও তৈরী করে ফেলেছিল। তার এই ধর্মীয় বয়ান বা নানান প্রাসঙ্গিক আসরের প্রত্যক্ষদর্শী ওসামা আল কোয়াশি ,যে নিজেও একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিল ,বলেছিল যে জুহাইমান এই সময়ে বেআইনি নেশার বস্তু চোরাচালানের কাজ ও করছিল।ক্রমশঃ এক বড় সংখ্যক অল্পবয়েসী ছেলেদের আকর্ষিত করে তাঁর অনুসারী করে ফেলে।একটিই জায়গায় তার খামতি ছিল যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এমনকি অন্য আর পাঁচটি ধর্মীয় গুরুর মতো প্রাসঙ্গিক পড়াশোনাতে। এই প্রসঙ্গে তার এক সময়ের অনুসারী নাসের আল হজেইমির বয়ানে জানা যায় যে লোকটি মুলত প্রত্যন্ত বেদুইন অঞ্চলেই নিজের প্রচার করতো যেহেতু তার নিজের ভাষা মানে আরবির ধাঁচ ছিল তাঁদের মতো।শহরের বিশেষতঃ বুনিয়াদি আরবি ভাষাতে তাঁর দখল কম থাকায় কোনো শহরের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় স্থানে নিজের বক্তব্য রাখতে যায় নি।এই কাজ করতে গেলে তাঁর ওই শ্রোতাদের কাছে সম্ভ্রম বা শ্রদ্ধা আদায় করা সম্ভব হতো না ওটা সে নিজেও বুঝেছিল। এই ইমাম মেহেদী মোহ নিয়ে ওই সময়ের সৌদি রাষ্ট্রীয় নজরদারি বিভাগ বা ইন্টালিজেন্সির প্রধান তুর্কি আল ফায়সাল পরবর্তীতে একটি স্বাক্ষাৎকারে জানিয়েছিল যে এই গোষ্ঠীতে অসংখ্য ছাত্র ছিল যাঁরা এই মেহেদির আবির্ভাব কে আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করতো।প্রাথমিক পর্যায়ে কাবা এবং গোটা সৌদি আরবের ক্ষমতা দখল এবং পরবর্তীতে গোটা ইসলামী দুনিয়ায় নেতৃত্ব করা একটি প্রবল বাসনা ছিল এই দলটির।পাঠক,আল কায়দা বা আইসিস এর সাথে অনেকটাই মিল পাচ্ছেন কি ? যাইহোক ,একটা মজার বিষয় দেখুন , এই একই ভাবে প্রায় সব প্রচলিত ধর্মেই একজন পরিত্রাতা অন্তে আসার কথা বলা হয়েছে যে এই ধরিত্রীর সব পাপ বা ক্লেশ ইত্যাদি দূর করে একটি কাঙ্খিত যুগের সূচনা করবে। এই ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম নেই ,এক বহু যুগের এই আকাঙ্খা কে পুঁজি করে অনেক লোক এই কাজ করেছে।মুসলিম সমাজেও নানান দেশে এই কাজ আগেও হয়েছে।ঊনবিংশ শতকে মোহাম্মদ আহমেদ নামের এক সুদানিস শেখ ১৮৮১তে এই ধরণের একটি উত্থানের কাজ করতে গিয়েছিল তৎকালীন মিশরীয় পরাধীনতায় থাকা শাসকের বিরুদ্ধে। মজার কথা হলো এই মেহেদির কোনো প্রসঙ্গ কোরানে কিন্তু নেই।কেয়ামতের মানে শেষ দিনের আগে এই ধরণের ঘটনার আভাস থাকলেও হাদিস বর্ণিত কোনো ঘটনার বিষয় নেই বলেই মতামত দিয়েছে ইসলামের নানান পন্ডিত মহল।সে যে যাই বলুক,জুহাইমান এই মেহেদী বলে কাঙ্খিত মানুষের ভিত্তিতে এক বড় সংখ্যক অনুসারীর দল বানিয়ে ফেলেছিল।এই অনুসারীদের নিয়ে একটি নিকটস্থ মসজিদে এক জায়গায় হয় এই অভিযানের তিনদিন আগে।এই প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক নানান স্বাক্ষাতকারে দেখতে পাই এই অনুসারীদের প্রাক্তন কয়েকজন সদস্য এই গোষ্ঠিকে সালাফি আন্দোলনের একটি ধারা বলেছে,যাদের প্রবীন মাথাদের সরিয়ে এই নতুন প্রজন্মের দল পুরো নেতৃত্ব হাতে নিয়েছিল জুহাইমানের নেতৃত্বে। পরবর্তী পর্বে থাকবে এক চলমান পনেরো দিনের ক্রমাগত লড়াই এবং বিশ্ব রাজনীতিতে বিবিধ দোলাচল আর অন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়-ততক্ষণ একটু চা পানের বিরতি  তথ্যসূত্র : ১. আলোচিত বইটির লেখকের একটি স্বাক্ষাতকার দেখুন 

https://www.youtube.com/watch?v=1hNjJY1OXmM ২. যারা বিষয়টি প্রতিবেদনের আকারে দেখতে চাইছেন তাদের জন্য https://www.youtube.com/watch?v=HItn3u02RwU ৩. নির্মোহ তবে আংশিক একটি প্রতিবেদন https://www.bbc.com/news/stories-50852379 ৪.  আরো একটি ভালো প্রতিবেদন  https://www.arabnews.com/node/1371221/saudi-arabia ৫. মূল বইটির লেখকের একটি স্বাক্ষাতকার এবং ঘটনার বিবরণ জানতে পারেন এই সুত্রে https://www.npr.org/templates/story/story.php?storyId=112051155

Posted at March 12, 2019 |  by Arya ঋষি

এক বিষ বৃক্ষের সূচনা -অন্তিম পর্ব



মুখবন্ধ বা নিজের কিছু কথা : এই লেখার শেষ পর্বে দাঁড়িয়ে কোনো একটি পর্বে এক পাঠকের কথা মনে পড়ছে। তিনি সৌদি সংস্কার বা ধর্মীয় মৌলবাদের রাস্তা ত্যাগ করে অন্য পথে যেতে পারে তা নস্যাৎ করেছিলেন কোনো যুক্তি না দিয়েই। আংশিক বিরক্ত হলেও পরবর্তীতে বিষয়টি ভাবলাম , দেখলাম ,এই ধরণের নীতি নির্ধারকরা নানান দেশে অতীব সফল হয় এই কারণেই। আমরা মূল উদ্দেশ্য দেখি না তাই অতীব সহজে একটা বিভাজন নিয়ে এসে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা অতি সহজ হয়। কোনো রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মের ধ্বজা ধরে নিজেদের স্বার্থ পূরণের জন্য যা আমরা ভুলে যাই। একই ভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে সরব নানান স্বঘোষিত পক্ষ আবার এর উল্টো স্রোতের সুযোগ নেয় সেই একই কারণে। নীরবে কাজ করে মানুষের একমুখী অগ্রগতি।আমরা অনেকেই জানি না যে ওই সময়ে মানে এই ঘটনার আগে পর্যন্ত ওই দেশে বাকি আর পাঁচটা মধ্য প্রাচ্যের তুলনামূলক সংস্কার পন্থী দেশের মতো ওই সময় মেয়েরা গাড়ি চালাতেন বা সিনেমা হল ইত্যাদি চালু ছিল।এই ঘটনার পরেই সব শেষ হয়ে যায়।যাইহোক,ইতিহাস স্বাক্ষী,কিছু সময়ের জন্য মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে তবে সামগ্রিক মানব উত্তরণ আটকে দেওয়া কারোর সাধ্যে নেই।নিজের কথা রাখি,আসুন দেখি বিষবৃক্ষের রোপন এবং কালের নিয়মে এর অপসারণ কি ভাবে হচ্ছে।
বিষবৃক্ষের রোপন এবং তাঁর বৃদ্ধি:
সৌদি রাজতন্ত্রর কাছে গদি বড় দায় তাই কোনো ঝুকি না নিয়ে একদম মোল্লাতন্ত্র চালুর পথে যেতে পুরো একটা উল্টো দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা।পাশের ইরানের মোল্লাতন্ত্র সৌদি রাজাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল,ইসলামের মূল ধারকের গদি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় এবং নিজেদের টিকে থাকার একটা কারণ একেবারে ঘড়ির কাটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করলো।শুধু নিজের দেশেই না,গোটা পৃথিবীতেই এই গোড়া মানসিকতা এবং নিজেদের মতে চলার মতো করে একটি ভাবনা বা আজকের পরিচিত ওয়াহাবী মতের প্রসার শুরু করলো পেট্রো ডলার এর অনুদান দিয়ে।এক কথায়, নিজেদের মনমতো ইসলামের রপ্তানি একটি মূল লক্ষ্য হয়ে উঠলো।
শুনলে অবাক হবেন এই জুহাইমান এবং এদের দলের নানান দাবি মেনে নেওয়া হয়।এর মধ্যে ফুটবল খেলা ,টিভিতে বিনোদনের নানান অনুষ্ঠান বা মেয়েদের দেখানো ইত্যাদি যা কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেছিল সব বন্ধ হয়ে গেলো।পশ্চিমের সভ্যতার পথে চলা সৌদি আরব মধ্যযুগের মোল্লাতন্ত্রের পথে চলা শুরু করলো। ইতিহাসের কি পরিহাস, একই ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল কয়েক মাস আগে এদের প্রবল বৈরী শিয়া পথের ইরানেও।একই সঙ্গে মেয়েদের চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা,এমনকি মেয়েদের ছবি পত্রিকা ইত্যাদিতে ছাপানো সবই নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।
যে জেদ্দা শহরে মেয়েরা স্বচ্ছন্দে সিনেমায় যেতে পারতো তা নিষিদ্ধ হলো। বিশেষ বস্তার বোরখা সার্বিক হলো।আজকে অবাক লাগতে পারে , ওই সময়ে সৌদি টিভি তে বা রেডিওতে পুরুষ এবং নারী উভয়েই অংশ গ্রহণ করতো।এরপরে ? সব বন্ধ হয়ে গেলো।শুধু দেশের না , আশেপাশের বিখ্যাত গায়ক গায়িকা যেমন লেবাননের ফাইরুজ বা সামিরা আগে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিল ওই দেশের টিভিতে।যে দেশ সংগীতপ্রেমী ছিল তাঁদের জন্য এরপরের দশকগুলো কেবল অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছিল।
এতেই শেষ না , এসে গেলো ধর্মীয় এক ষাঁড়ের দল মানে নীতি পুলিশ।নাগরিকের জীবনের সর্বত্র এদের হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেলো।এই অন্ধকারের দিনের জন্য দায়ী সৌদি রাজ্ পরিবার আর তাদের গোষ্ঠী।সোজা কথায়, অপরিণত এই অশিক্ষিত মৌলবাদী শ্রেণীকে তোষণ এবং এদের নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসতে পুরো ভোল পাল্টে ফেলার কাজ করেছিল সৌদি রাজতন্ত্র।
প্রিন্স তুর্কির ভাষায়, তাঁরা ইসলাম যে একটি রাজনৈতিক দর্শন ওটা উপলব্ধি করে এর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র সাজিয়ে ফেলেছিল যাতে আর এই ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাজ না হয়। ঈমাম এবং বশংবদ উলেমাদের সামনে রেখে একটি আবরণ তৈরী করলেই যে রাজত্ব অনেক সহজ হয় ওই উপলব্ধি হয়েছিল তা পরিষ্কার।আধুনিক চিন্তার বদলে এই ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার দোকান খুলে বরং এই ভাবধারা আরো প্রসার করা হয়ে উঠলো মুখ্য লক্ষ্য। রপ্তানি করা শুরু করলো নিজেদের ওয়াহাবি তত্বের পথ যতদিন না বুঝতে পারলো বোতলের দৈত্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
বোধদয়ের পালা:
আইসিস এবং আল কায়দার উত্থান এদের আবার ভাবতে বাধ্য করেছে যে এই ভাবে কিছু হবে না। একই সাথে তেলের বিকল্প নিয়ে গোটা পৃথিবী রাস্তা খুঁজে বের করছে।সোজা কথায় এই ২০৩০ এর সময়ের কিছু আগে বা পরে এই তেলের মুফতে খাওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।তাই এরপরে ওই গোড়া মনঃবৃত্তি নিয়ে চললে দেশের আয়ের তিন ভাগের এক ভাগের রোজগার যা আসে এই হ্বজ বা ওমরা থেকে তাতে ভাটা আসতে পারে।
মহম্মদ বিন সালমান মানে আজকের মূল ক্ষমতার অধিকারীর কথা এক অর্থে আশার বাণী মনে হয় ,তিনি আগামী তিরিশ বছরের এই ধ্বংসের যন্ত্রনা না বহন করে এখনই এই ভাবনা চিন্তা গুলো শেষ করতে চাইছেন।অন্ততঃ রিয়াদে তিন বছর আগের একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে তাই বলেছেন।একই ভাবে পরের বছর সেই কালান্তক সময়ের থেকে দেশে যে অসহ এক লৌহ বর্মের অবস্থান আর মধ্যযুগের আইন চলছে তার অবসান ও চেয়েছেন তিনি।বাস্তবিক দিক থেকে খুব ভুল বলেন নি।ষাটের বা সত্তরের দশকের সৌদি আরব কিন্তু এক ভিন্ন পরিবেশ বহন করে চলতো। এই বিষয়ে বিবিধ সূত্র ধরে যা দেখছি তাতে এই ধর্মান্ধের কারবার যে কি পরিমান ক্ষতি করেছে তার প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন ,সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
অনেক গুলো কাজ ইতিমধ্যেই করেও ফেলেছেন।যা সংস্কার হয়েছে এই পর্যন্ত,তার প্রধান কিছু নিচে দিলাম:
১.একদম শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বাধীন মত প্রকাশ করা ব্লগার বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে শাস্তির বিশেষতঃ অতীব গুরুতর অপরাধ ছাড়া প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের ফরমান তুলে নেওয়া হয়েছে।
২.সৌদি মহিলাদের কাজের পরিধিতে আগে শতকরা ২২ ভাগ অংশগ্রহণের ধার্যকৃত অংশের বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে অর্থাৎ মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার পথে চলছে দেশটি।
৩.সবচেয়ে আলোচতি যে বিষয়টি আমরা সবাই জেনেছি তা হলো মেয়েদের এই অভিশপ্ত সময়ের আগে রাস্তায় গাড়ি চালানোর যে স্বাধীনতা ছিল তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০১৮ তে।
৪.আগের মতো চাকরি করতে যাওয়ার সময়ে কোনো মহিলাকে তার তথাকথিত পুরুষ অভিভাবকের থেকে অনুমতি নিতে হতো।কোনো ক্ষেত্রে তার স্বামী,কখনো বাবা বা ভাই ইত্যাদি।এই বিষয়টি রদ করা হয়েছে ,আর এর দরকার হবে না।একই ভাবে কোনো উচ্চশিক্ষার জন্য এমনকি কোনো শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একেই কুৎসিত এই আইনের রদ হয়েছে।আজ এই সব ক্ষেত্রে মেয়েরা একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৫. পরিবর্তিত আইনে এখন মেয়েরা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করা , বিয়ে/ বিবাহ বিচ্ছিন্নতা সংক্রান্ত নিবন্ধন করা এমনকি কোনো নাবালক /নাবালিকার অভিভাবিকা হতে পারবেন।আগে এর একটিও অধিকার তাঁদের ছিল না।
৬. আগের কালা কানুন বিদেশ গমন বা পাসপোর্ট তৈরির আগে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির আইন ও বাতিল হয়েছে।
৭. সিনেমা বা আগের সেই সংগীত ইত্যাদির কনসার্ট আবার চালু হয়েছে।একই সাথে দোকান বা ব্যবসার অনেক ক্ষেত্র এখন ২৪ঘন্টা খুলে রাখার অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে আর পাঁচটি আধুনিক সমাজের মতো।
৮. ফৌজে মেয়েদের যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং ফুটবল ইত্যাদি খেলার পুনরায় প্রচলন আর মাঠে দর্শক হিসেবে মেয়েদের প্রবেশের অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে।
৯. নীতি পুলিশ নামের কুৎসিত এক চাপিয়ে দেওয়ার বাহিনী কে প্রত্যাহার করা হয়েছে।এরা মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তুলছিল এই কয়েক দশক ধরে।
১০. স্রেফ ধর্মীয় দু একটি জায়গা বাদে দেশের অন্য সর্বত্র অমুসলিম এবং বিদেশী পর্যটকের জন্য অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা হয়েছে।
১১. শিক্ষা ব্যবস্থা কে আধুনিক করে সৌদি নতুন প্রজন্ম কে মূল ধারার বাকি পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
আজকে বিদেশী মেয়েরা সৌদির রাস্তায় বোরখা ইত্যাদি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারে এবং একই সুযোগ নিচ্ছে সৌদি মেয়েরাও,অন্তত যারা একটু সাহসী।প্রসঙ্গত এই নানান কাজ গুলো আগে পর্দার আড়ালে হতো যা আজ বৈধতা প্রাপ্ত হয়েছে।রেস্তেরা বা অন্য সামাজিক জায়গায় নারী পুরুষের এক সাথে থাকা বা এই মুক্ত হওয়ার কারণে অবশ্যই প্রবীন বা ধর্মীয় ভাবধারায় চলা এক দল লোকের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে।ভয় একটাই,এদের নিয়ন্ত্রন যেন গুরুত্ব সহকারে করা হয়।এর কারণ,যে কোনো পরিবর্তন কেই প্রতিরোধ করা মানুষের একটি স্বাভাবিক ধর্ম বিশেষত মনন যদি একটি ধাঁচে আগেই তৈরী হয়ে যায়।একটু ধীরে ধীরে সংস্কার গুলো করে যাওয়া আর তাকে আরো কিছু দশক বহাল রাখার কাজ হলেই আবার দেশটি আধুনিক পথে চালিত হবে।
এই চমক লাগানো সংস্কারের জন্য আলোচ্য মোহাম্মদ বিন সালমান এর মূল শক্তির একটি জায়গা হলো বর্তমান সৌদি আরবের জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ ৩৪ বছরের কম বয়েসী বলে। এক অর্থে রাজতন্ত্রের এই শাসকের এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে ভাবতে পারেন।
না,আমি মোটেই বলছি না যে এই লোকটি একটি সজ্জন।তবু , যদি বড় অংশের সংস্কার হয় আর তাতে যদি পৃথিবীর চেহারা একটু অন্য হয় তবে ক্ষতি কি ? মূল বইটির লেখক এবং বাকি আরো অনেকেই যা বলেছে তার প্রতিধ্বনি করে বলা যায় জুহাইমান ওই লড়াইয়ে হেরে গেলেও বৃহৎ রণাঙ্গনে কিন্তু জিতেছিল।আজ সঙ্গত কারণে,দুর্জন হলেও সলমান স্বাগত তার এই কাজগুলোর জন্য অন্তত আমার কাছে।
আশার আরো কথা আছে , রাহা মোহার্রাক বলে এক প্রথম সৌদি মহিলা পর্বতারোহী উঠেছেন মাউন্ট এভারেস্ট এ ২০১৩ তে আরো অনেক চূড়াতে উঠবে এই আরব নারীকুল।আমরা সবাই তা দেখবো , কোনো অলীক কল্পনা না ,এটি আমার যুক্তিভিত্তিক চিন্তা।
শেষ করছি,আবার অশেষ রবীন্দ্রনাথ কে স্মরন করে,তিনি এক দল স্বঘোষিত আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অস্বস্থি বাড়িয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সেই সময়ের তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’ নিবন্ধে,একটু ওই জায়গাটি তুলে ধরার সাধ হলো,তিনি বলেছিলেন “এর মধ্যে যে গলদ কিছুই নেই তা বলি নে; গুরুতর গলদ আছে। সেজন্যে একদিন এদের বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে--কিন্তু ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না--সজীব মনের তত্ত্বের সঙ্গে বিদ্যার তত্ত্ব যদি না মেলে তা হলে হয় একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে।“ –অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছিল,সেই সময়ের সেভিয়েত ইউনিয়নে,একই ফলাফল হবে অন্য দেশেও যদি বাকি রাষ্ট্রনায়করা তা না বুঝতে পারে।অমিত শক্তির মানুষ ছাঁচে ফেলার প্রাণী না।





কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাসঃ– পর্ব ৪


এক বিষ বৃক্ষের সূচনা -অন্তিম পর্ব



মুখবন্ধ বা নিজের কিছু কথা : এই লেখার শেষ পর্বে দাঁড়িয়ে কোনো একটি পর্বে এক পাঠকের কথা মনে পড়ছে। তিনি সৌদি সংস্কার বা ধর্মীয় মৌলবাদের রাস্তা ত্যাগ করে অন্য পথে যেতে পারে তা নস্যাৎ করেছিলেন কোনো যুক্তি না দিয়েই। আংশিক বিরক্ত হলেও পরবর্তীতে বিষয়টি ভাবলাম , দেখলাম ,এই ধরণের নীতি নির্ধারকরা নানান দেশে অতীব সফল হয় এই কারণেই। আমরা মূল উদ্দেশ্য দেখি না তাই অতীব সহজে একটা বিভাজন নিয়ে এসে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা অতি সহজ হয়। কোনো রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মের ধ্বজা ধরে নিজেদের স্বার্থ পূরণের জন্য যা আমরা ভুলে যাই। একই ভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে সরব নানান স্বঘোষিত পক্ষ আবার এর উল্টো স্রোতের সুযোগ নেয় সেই একই কারণে। নীরবে কাজ করে মানুষের একমুখী অগ্রগতি।আমরা অনেকেই জানি না যে ওই সময়ে মানে এই ঘটনার আগে পর্যন্ত ওই দেশে বাকি আর পাঁচটা মধ্য প্রাচ্যের তুলনামূলক সংস্কার পন্থী দেশের মতো ওই সময় মেয়েরা গাড়ি চালাতেন বা সিনেমা হল ইত্যাদি চালু ছিল।এই ঘটনার পরেই সব শেষ হয়ে যায়।যাইহোক,ইতিহাস স্বাক্ষী,কিছু সময়ের জন্য মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে তবে সামগ্রিক মানব উত্তরণ আটকে দেওয়া কারোর সাধ্যে নেই।নিজের কথা রাখি,আসুন দেখি বিষবৃক্ষের রোপন এবং কালের নিয়মে এর অপসারণ কি ভাবে হচ্ছে।
বিষবৃক্ষের রোপন এবং তাঁর বৃদ্ধি:
সৌদি রাজতন্ত্রর কাছে গদি বড় দায় তাই কোনো ঝুকি না নিয়ে একদম মোল্লাতন্ত্র চালুর পথে যেতে পুরো একটা উল্টো দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা।পাশের ইরানের মোল্লাতন্ত্র সৌদি রাজাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল,ইসলামের মূল ধারকের গদি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় এবং নিজেদের টিকে থাকার একটা কারণ একেবারে ঘড়ির কাটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করলো।শুধু নিজের দেশেই না,গোটা পৃথিবীতেই এই গোড়া মানসিকতা এবং নিজেদের মতে চলার মতো করে একটি ভাবনা বা আজকের পরিচিত ওয়াহাবী মতের প্রসার শুরু করলো পেট্রো ডলার এর অনুদান দিয়ে।এক কথায়, নিজেদের মনমতো ইসলামের রপ্তানি একটি মূল লক্ষ্য হয়ে উঠলো।
শুনলে অবাক হবেন এই জুহাইমান এবং এদের দলের নানান দাবি মেনে নেওয়া হয়।এর মধ্যে ফুটবল খেলা ,টিভিতে বিনোদনের নানান অনুষ্ঠান বা মেয়েদের দেখানো ইত্যাদি যা কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেছিল সব বন্ধ হয়ে গেলো।পশ্চিমের সভ্যতার পথে চলা সৌদি আরব মধ্যযুগের মোল্লাতন্ত্রের পথে চলা শুরু করলো। ইতিহাসের কি পরিহাস, একই ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল কয়েক মাস আগে এদের প্রবল বৈরী শিয়া পথের ইরানেও।একই সঙ্গে মেয়েদের চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা,এমনকি মেয়েদের ছবি পত্রিকা ইত্যাদিতে ছাপানো সবই নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।
যে জেদ্দা শহরে মেয়েরা স্বচ্ছন্দে সিনেমায় যেতে পারতো তা নিষিদ্ধ হলো। বিশেষ বস্তার বোরখা সার্বিক হলো।আজকে অবাক লাগতে পারে , ওই সময়ে সৌদি টিভি তে বা রেডিওতে পুরুষ এবং নারী উভয়েই অংশ গ্রহণ করতো।এরপরে ? সব বন্ধ হয়ে গেলো।শুধু দেশের না , আশেপাশের বিখ্যাত গায়ক গায়িকা যেমন লেবাননের ফাইরুজ বা সামিরা আগে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিল ওই দেশের টিভিতে।যে দেশ সংগীতপ্রেমী ছিল তাঁদের জন্য এরপরের দশকগুলো কেবল অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছিল।
এতেই শেষ না , এসে গেলো ধর্মীয় এক ষাঁড়ের দল মানে নীতি পুলিশ।নাগরিকের জীবনের সর্বত্র এদের হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেলো।এই অন্ধকারের দিনের জন্য দায়ী সৌদি রাজ্ পরিবার আর তাদের গোষ্ঠী।সোজা কথায়, অপরিণত এই অশিক্ষিত মৌলবাদী শ্রেণীকে তোষণ এবং এদের নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসতে পুরো ভোল পাল্টে ফেলার কাজ করেছিল সৌদি রাজতন্ত্র।
প্রিন্স তুর্কির ভাষায়, তাঁরা ইসলাম যে একটি রাজনৈতিক দর্শন ওটা উপলব্ধি করে এর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র সাজিয়ে ফেলেছিল যাতে আর এই ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাজ না হয়। ঈমাম এবং বশংবদ উলেমাদের সামনে রেখে একটি আবরণ তৈরী করলেই যে রাজত্ব অনেক সহজ হয় ওই উপলব্ধি হয়েছিল তা পরিষ্কার।আধুনিক চিন্তার বদলে এই ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার দোকান খুলে বরং এই ভাবধারা আরো প্রসার করা হয়ে উঠলো মুখ্য লক্ষ্য। রপ্তানি করা শুরু করলো নিজেদের ওয়াহাবি তত্বের পথ যতদিন না বুঝতে পারলো বোতলের দৈত্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
বোধদয়ের পালা:
আইসিস এবং আল কায়দার উত্থান এদের আবার ভাবতে বাধ্য করেছে যে এই ভাবে কিছু হবে না। একই সাথে তেলের বিকল্প নিয়ে গোটা পৃথিবী রাস্তা খুঁজে বের করছে।সোজা কথায় এই ২০৩০ এর সময়ের কিছু আগে বা পরে এই তেলের মুফতে খাওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।তাই এরপরে ওই গোড়া মনঃবৃত্তি নিয়ে চললে দেশের আয়ের তিন ভাগের এক ভাগের রোজগার যা আসে এই হ্বজ বা ওমরা থেকে তাতে ভাটা আসতে পারে।
মহম্মদ বিন সালমান মানে আজকের মূল ক্ষমতার অধিকারীর কথা এক অর্থে আশার বাণী মনে হয় ,তিনি আগামী তিরিশ বছরের এই ধ্বংসের যন্ত্রনা না বহন করে এখনই এই ভাবনা চিন্তা গুলো শেষ করতে চাইছেন।অন্ততঃ রিয়াদে তিন বছর আগের একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে তাই বলেছেন।একই ভাবে পরের বছর সেই কালান্তক সময়ের থেকে দেশে যে অসহ এক লৌহ বর্মের অবস্থান আর মধ্যযুগের আইন চলছে তার অবসান ও চেয়েছেন তিনি।বাস্তবিক দিক থেকে খুব ভুল বলেন নি।ষাটের বা সত্তরের দশকের সৌদি আরব কিন্তু এক ভিন্ন পরিবেশ বহন করে চলতো। এই বিষয়ে বিবিধ সূত্র ধরে যা দেখছি তাতে এই ধর্মান্ধের কারবার যে কি পরিমান ক্ষতি করেছে তার প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন ,সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
অনেক গুলো কাজ ইতিমধ্যেই করেও ফেলেছেন।যা সংস্কার হয়েছে এই পর্যন্ত,তার প্রধান কিছু নিচে দিলাম:
১.একদম শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বাধীন মত প্রকাশ করা ব্লগার বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে শাস্তির বিশেষতঃ অতীব গুরুতর অপরাধ ছাড়া প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের ফরমান তুলে নেওয়া হয়েছে।
২.সৌদি মহিলাদের কাজের পরিধিতে আগে শতকরা ২২ ভাগ অংশগ্রহণের ধার্যকৃত অংশের বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে অর্থাৎ মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার পথে চলছে দেশটি।
৩.সবচেয়ে আলোচতি যে বিষয়টি আমরা সবাই জেনেছি তা হলো মেয়েদের এই অভিশপ্ত সময়ের আগে রাস্তায় গাড়ি চালানোর যে স্বাধীনতা ছিল তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০১৮ তে।
৪.আগের মতো চাকরি করতে যাওয়ার সময়ে কোনো মহিলাকে তার তথাকথিত পুরুষ অভিভাবকের থেকে অনুমতি নিতে হতো।কোনো ক্ষেত্রে তার স্বামী,কখনো বাবা বা ভাই ইত্যাদি।এই বিষয়টি রদ করা হয়েছে ,আর এর দরকার হবে না।একই ভাবে কোনো উচ্চশিক্ষার জন্য এমনকি কোনো শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একেই কুৎসিত এই আইনের রদ হয়েছে।আজ এই সব ক্ষেত্রে মেয়েরা একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৫. পরিবর্তিত আইনে এখন মেয়েরা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করা , বিয়ে/ বিবাহ বিচ্ছিন্নতা সংক্রান্ত নিবন্ধন করা এমনকি কোনো নাবালক /নাবালিকার অভিভাবিকা হতে পারবেন।আগে এর একটিও অধিকার তাঁদের ছিল না।
৬. আগের কালা কানুন বিদেশ গমন বা পাসপোর্ট তৈরির আগে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির আইন ও বাতিল হয়েছে।
৭. সিনেমা বা আগের সেই সংগীত ইত্যাদির কনসার্ট আবার চালু হয়েছে।একই সাথে দোকান বা ব্যবসার অনেক ক্ষেত্র এখন ২৪ঘন্টা খুলে রাখার অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে আর পাঁচটি আধুনিক সমাজের মতো।
৮. ফৌজে মেয়েদের যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং ফুটবল ইত্যাদি খেলার পুনরায় প্রচলন আর মাঠে দর্শক হিসেবে মেয়েদের প্রবেশের অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে।
৯. নীতি পুলিশ নামের কুৎসিত এক চাপিয়ে দেওয়ার বাহিনী কে প্রত্যাহার করা হয়েছে।এরা মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তুলছিল এই কয়েক দশক ধরে।
১০. স্রেফ ধর্মীয় দু একটি জায়গা বাদে দেশের অন্য সর্বত্র অমুসলিম এবং বিদেশী পর্যটকের জন্য অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা হয়েছে।
১১. শিক্ষা ব্যবস্থা কে আধুনিক করে সৌদি নতুন প্রজন্ম কে মূল ধারার বাকি পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
আজকে বিদেশী মেয়েরা সৌদির রাস্তায় বোরখা ইত্যাদি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারে এবং একই সুযোগ নিচ্ছে সৌদি মেয়েরাও,অন্তত যারা একটু সাহসী।প্রসঙ্গত এই নানান কাজ গুলো আগে পর্দার আড়ালে হতো যা আজ বৈধতা প্রাপ্ত হয়েছে।রেস্তেরা বা অন্য সামাজিক জায়গায় নারী পুরুষের এক সাথে থাকা বা এই মুক্ত হওয়ার কারণে অবশ্যই প্রবীন বা ধর্মীয় ভাবধারায় চলা এক দল লোকের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে।ভয় একটাই,এদের নিয়ন্ত্রন যেন গুরুত্ব সহকারে করা হয়।এর কারণ,যে কোনো পরিবর্তন কেই প্রতিরোধ করা মানুষের একটি স্বাভাবিক ধর্ম বিশেষত মনন যদি একটি ধাঁচে আগেই তৈরী হয়ে যায়।একটু ধীরে ধীরে সংস্কার গুলো করে যাওয়া আর তাকে আরো কিছু দশক বহাল রাখার কাজ হলেই আবার দেশটি আধুনিক পথে চালিত হবে।
এই চমক লাগানো সংস্কারের জন্য আলোচ্য মোহাম্মদ বিন সালমান এর মূল শক্তির একটি জায়গা হলো বর্তমান সৌদি আরবের জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ ৩৪ বছরের কম বয়েসী বলে। এক অর্থে রাজতন্ত্রের এই শাসকের এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে ভাবতে পারেন।
না,আমি মোটেই বলছি না যে এই লোকটি একটি সজ্জন।তবু , যদি বড় অংশের সংস্কার হয় আর তাতে যদি পৃথিবীর চেহারা একটু অন্য হয় তবে ক্ষতি কি ? মূল বইটির লেখক এবং বাকি আরো অনেকেই যা বলেছে তার প্রতিধ্বনি করে বলা যায় জুহাইমান ওই লড়াইয়ে হেরে গেলেও বৃহৎ রণাঙ্গনে কিন্তু জিতেছিল।আজ সঙ্গত কারণে,দুর্জন হলেও সলমান স্বাগত তার এই কাজগুলোর জন্য অন্তত আমার কাছে।
আশার আরো কথা আছে , রাহা মোহার্রাক বলে এক প্রথম সৌদি মহিলা পর্বতারোহী উঠেছেন মাউন্ট এভারেস্ট এ ২০১৩ তে আরো অনেক চূড়াতে উঠবে এই আরব নারীকুল।আমরা সবাই তা দেখবো , কোনো অলীক কল্পনা না ,এটি আমার যুক্তিভিত্তিক চিন্তা।
শেষ করছি,আবার অশেষ রবীন্দ্রনাথ কে স্মরন করে,তিনি এক দল স্বঘোষিত আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অস্বস্থি বাড়িয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সেই সময়ের তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’ নিবন্ধে,একটু ওই জায়গাটি তুলে ধরার সাধ হলো,তিনি বলেছিলেন “এর মধ্যে যে গলদ কিছুই নেই তা বলি নে; গুরুতর গলদ আছে। সেজন্যে একদিন এদের বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে--কিন্তু ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না--সজীব মনের তত্ত্বের সঙ্গে বিদ্যার তত্ত্ব যদি না মেলে তা হলে হয় একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে।“ –অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছিল,সেই সময়ের সেভিয়েত ইউনিয়নে,একই ফলাফল হবে অন্য দেশেও যদি বাকি রাষ্ট্রনায়করা তা না বুঝতে পারে।অমিত শক্তির মানুষ ছাঁচে ফেলার প্রাণী না।





Posted at February 21, 2019 |  by Arya ঋষি

৩ পর্ব
সৌদি বাহিনীর সমস্যা এবং লড়াইয়ের অন্তিম অবস্থা:
একই সাথে জুহাইমানের সঙ্গে থাকা অনেকেই এই মক্কার মসজিদ আল হারাম এ পড়াশোনার এবং জীবনের একটা বড় অংশ কাটানোর কারণে এই ভূগর্ভের বা পুরো জায়গাটি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানতো।এই কারণে ২০ তারিখ থেকে পরের দিন গুলো এই জায়গায় আক্রমন করতে গিয়ে একের পর এক সৌদি সেনা বা বাহিনীর লোক মারা পড়েছিল।সৌদি রাজশক্তি বুঝতে পারলো,এইভাবে হবে না,অন্য কোন উপায় নিতে হবে।
ফরাসী সহায়তা :
সমাধান পেতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য ফরাসি সরকারের সাহায্য চায় তাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি (Valéry Giscard d'Estaing) র কাছে।ফরাসি রাষ্ট্রপতি গোপনে তাদের ওই সময়ে সদ্য তৈরী সন্ত্রাসবাদ দমনের বিভাগ GIGN এর তিনজন বিশেষজ্ঞকে সৌদি আরবে পাঠান।গোপনে পাঠানো হয় যাতে এই অমুসলিম কোনো রাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো খবর বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রতিক্রিয়া না হয় ওই জন্য।
ফরাসি এই দল কাছের একটি হোটেল তাইফ এ অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে।এরা এই লোকগুলোকে উপরে নিয়ে আসার জন্য ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোতে বিশেষ গ্যাস পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাতে শ্বাস নিতে না পেরে এই লোকগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কক্ষগুলোতে মাটির তলা দিয়ে গর্ত করে বিশেষ গ্রেনেড এর মাধ্যমে এই গুলো ভিতরে ফাটানো হয় যাতে কোনো মৃত্যুর বদলে স্রেফ গ্রেনেড দিয়ে ওই গ্যাস কক্ষে ভরে যায়।এই গ্যাস ব্যবহার বা প্রাসঙ্গিক রসায়নিক ব্যবহারের একটা প্রশিক্ষণ তারা দিয়েছিল সৌদি সেনাদের কারণ অমুসলিম কারোর কাবা বা ওই মসজিদ আল হারাম এ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এই বিশেষ গ্যাসের নাম রসায়নিক হিসেবে বিশাল তবে সংক্ষেপে বলা হয় CB,যা দীর্ঘক্ষণ ফুসফুসে ঢুকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে প্রাথমিক পর্বে এতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হয় আর খোলা জায়গায় যেতেই হয়।
সাফল্যের মুখ দর্শন:
অবশেষে ডিসেম্বরের তিন তারিখ সকালে মাটির নিচের ওই কক্ষগুলোর ভিতরে এই গ্যাসের নিক্ষেপ করার জন্য জমির উপরে গর্ত করে এই গ্যাসের ক্যানিস্টার ফেলা হয় যা ভিতরে গিয়ে ফেটে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ রাখছিল না।এতে আংশিক সাফল্য এসেছিল,লড়াই চলে আরো ১৮ ঘন্টা।অবশেষে ডিসেম্বরের চার তারিখ প্রতিপক্ষের গুলির বা বোমার আওয়াজে বিরতি আসে।
একটি ছোট অপরিসর ভূগর্ভস্থ ঘরে জনা কুড়ি বিদ্ধস্ত,ক্লান্ত,যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলে আতঙ্কিত এই জঙ্গিদের একসাথে দেখা গেলো।এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্রিগেডিয়ার আল দাহারি অনুমান করেন এই সংঘর্ষের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনেই তথাকথিত সেই ঈমাম মেহেদির রূপে থাকা আল কাহতানি মারা পড়েছিল।এই খবর জুহাইমান গোপন রেখেছিল বা নিজেই এক পর্যায়ে একে মেরে বিষয়টি গোপন রেখেছিল।যাই হোক,ঈমাম মেহেদী গুলি বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে না এই লোকগুলোর অটল বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল যা সামগ্রিক মনোবলে আঘাত এসেছিল বলে ধরা হয়।এই পরিপূর্ণ দখলের আগে অবশ্য সৌদি বাহিনী জানতেও পারে নি যে তথাকথিত ইমাম মাহদী বা মেহেদী আগেই মারা গিয়েছে।
এই ঘরগুলোর ভিতরে ওই গাদাগাদি করে থাকা লোকেদের ভিতরে সেনাদল পায় সেই জুহাইমানকে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আল দাহরি নিজেই সনাক্ত করে এই লোকটিকে।পূর্ব নির্দেশের কারণে এবং পুরো বিষয়ের বাকি খবর বের করার জন্য একে আলাদা করে নিয়ে যায়।পুরো একটি সেনা স্কোয়াড এই যুহাইমান কে অক্ষত রাখার জন্য প্রহরাতে নিয়োজিত হয়।
কাবা এবং মসজিদ আল হারাম মুক্ত হওয়ার রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং পরবর্তী কার্যক্রম:
অবশেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ আল হারাম মসজিদ এবং কাবা স্থাপনার পুরো জায়গা মুক্ত হয়েছে ঘোষণা করে।গোটা দেশ এবং বিশ্বের কাছে এই জুহাইমান আর তার বাকি জীবিত সঙ্গীদের স্থির এবং ভিডিও ছবি দেখায়।
সব মিলিয়ে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় ঠিক পনেরো দিন পরে ডিসেম্বর ৫ তারিখের ভোর দেড়টার স্থানীয় সময়ে।একই সঙ্গে প্রিন্স নাইফ সরকারী ভাবে জানায় এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সেনাদল সেই মহম্মদ আল কাহতানির মৃত দেহ খুঁজে পেয়েছে।গুলি এবং অন্য ভাবে ক্ষতবিক্ষত এই মৃতদেহ দেখানো হয় টিভিতে।সৌদি ইন্টালিজেন্স এর প্রধান প্রিন্স তুর্কির মতে এই লোকটিকে জুহাইমান নিজেই খুন করেছিল যাতে জীবিত ধরা পড়ে পুরো মিথ্যের বিষয়টি আরো প্রকট না করতে পারে।
দেশের সাংবাদিকদের বা অন্য মানুষদের এই জায়গাটি দেখানো হলে তারা দেখতে পায় এই লোকগুলো আগুন জ্বালানোর জন্য পবিত্র কোরান ছিড়ে তার পাতা ও ব্যবহার করেছে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সঙ্গীদের মৃতদেহের মুখ যাতে না চিনতে পারে তার জন্য মুখের উপরে এই কাগজ জ্বালিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল।আশা করি পুরো বিষয়টি কত বিভৎস্য আর এই লোকগুলো প্রয়োজনে সবই করতে পারে তার একটা ধারণা পেয়েছেন।
এরপরে সেই ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় রাজা খালিদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টি শেষ হওয়া আর এই দখল মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন।এরপরে বুলেটের ক্ষত বাদে বাকি পুরো স্থাপনা কে এক অতি দ্রুততার সাথে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় পরের দুই দিনের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ছয় তারিখে বাদশা খালেদ একদল উচ্ছসিত নামাজির সাথে এই চত্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আসেন।পুরো ধর্মীয় রীতি মেনে হজর আল আসওয়াদ চুম্বন,কাবা গৃহকে সাতবার রীতি মেনে প্রদক্ষিন এবং জমজম এর জল পান করে আবার পুরনো রীতির সূচনা করেন।এরপরের দিন জুম্মার নমাজ হয় এক অন্য পরিবেশে।এতে অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ আগেই এসে জড়ো হয়েছিল আগের রাত থেকেই।পুরো ইসলামী বিশ্বের দেশগুলোতে এই ঘটনা উপগ্রহর মাধ্যমে সমপ্রসার করা হয়।
হতাহতর বিবরণ এবং জুহাইমানের চরিত্রের এক ঝলক :
যে উদার পথের সমাজ রেখে চলার কাজ শুরু করেছিল এই সৌদি রাজবংশ তার মূল্য দিতে হয়েছিল অতীব কঠিন ভাবে আর তা দিয়েছিল মূলত সৌদি নাগরিকরা।এই ঘটনায় হতাহত মানুষের মধ্যে ১২৭জন বিভিন্ন বাহিনীর মানুষ।এছাড়া তাদের ৪৫১ জন আহত হয়েছিল এই সময়ে।অন্যদিকে সরকারী ভাষ্যে জানা যায় সাধারণ পুন্যার্থীর মধ্যে ২৬জন ওই জায়গায় থাকা মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সৌদি ছাড়াও ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,মিশর এবং বার্মার নাগরিক ছিল।এ ছড়া আহত হয়েছিল একশো জন।
অন্যদিকে এই দখলদারি করা জুহাইমানের দলের ২৬০জনের মধ্যে ১১৭ জন নিহত হয়েছিল,সরাসরি লড়াইয়ে ৯০জন আর পরে হাসপাতালে আরো ২৭জন। গ্রেফতার করা জুহাইমান তার কাজের বিষয়ে কোনো অনুতাপ দেখায় নি বলে জানা যায়।সেই সময়ের সৌদি প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল তাকে এই কাজ কেন করেছে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর ছিল "সবই ভাগ্য " ,তার কিছু চাই কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জল খেতে চায়।এই ঘটনার পরে জুহাইমান আর জীবিত সঙ্গীদের ক্যামেরার সামনে আনা হয়।আরো কিছু পরে হাসপাতালে তার সাথে দেখা হয় প্রিন্স তুর্কির,সেই সময়ে জুহাইমান নির্লজ্জের মতো বাদশা খালেদের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে,এই কাজ করে সে অনুতপ্ত এই বলে।উত্তরে তুর্কি তাকে বলে এই কাজের জন্য সে ক্ষমার যোগ্য না।এই ছিল সৌদি রাজশক্তির সাথে তাঁর শেষ বার্তালাপ।
সৌদি বিচার যেখানে রাজাই শেষ কথা :
জুহাইমানের দলের বাকি ১৪৩ জনের মধ্যে ৬৩জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সৌদি আদালতে।১৯৮০ সালের ৯ তারিখে সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আটটি জায়গায় এদের শিরোচ্ছেদে মৃত্যুর ফরমান জারি করে।কেন আটটি জায়গায়?এই বিষয়ে বাখ্যা দিতে আরো এক শীর্ষব্যক্তি প্রিন্স তুর্কি বলে যে এটি ছিল গোটা সৌদি আরবের বিষয় তাই মুখ্য জায়গাগুলোতে এই কাজগুলো করা হয় যাতে সার্বিক ভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।এই ৬৩ জনের মধ্যে ৪১জন সৌদি নাগরিক,১০জন মিশরের,সাতজন ইয়েমেনের,তিনজন কুয়েতের,একজন সুদানের আর একজন ইরাকের ছিল।যেমন বলেছি,আলাদা করে এদের ১৫জন কে মক্কাতে,১০ জন কে রিয়াদে,মদিনা,দাম্মাম,বুরাইদাহ এবং আবহাতে সাত জন করে,হাইল এবং তাবুক এ পাঁচজন করে এই মৃত্যুদন্ড পাওয়া লোকেদের শিরচ্ছেদ করা হয়।প্রথমে মৃত্যুদন্ড পেলেও পরবর্তিতে কারাদন্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে।এ ছাড়া এই দলে থাকা ২৩ জন মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মহিলাদের ২ বছর করে কারাদন্ড আর শিশুদের নির্দিস্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।জুহাইমানকে ওই ১৫ জনের সাথে মক্কাতে শিরচ্ছেদ করা হয় জানুয়ারির নয় তারিখ,১৯৮০তে ।
সরকারী ভাবে সৌদি প্রশাসন ঘোষণা করে যে এই নানান দেশের লোক যুক্ত হলেও কোনো দেশ এই কাজে উস্কানি দেয় নি বা সাহায্য করে নি।পুরো বিষয়টি একটি ধর্মীয় কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে হওয়া কাজ।জনমানসে এই বিষয়ে কোনো ছাপ পড়েনি,অন্তত কোনো জায়গায় এই নিয়ে কোনো আলোড়ন বা বিক্ষোভ দেখা যায় নি।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টা একটা বিশাল মানসিক ধাক্কা ছিল প্রশাসক বা সাধারণ মানুষের কাছে।
বিষ বৃক্ষের সূচনা বা এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন:
এতে সব শেষ হয় না , সৌদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ঘটনা কট্টরপন্থীদের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সৌদি ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী।এই গোড়া মানসিকতার থেকে আর কোনো বিদ্রোহ যাতে তাদের গদিচ্যুত না করে তার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই দেশটি মধ্যযুগীয় একটি ব্যবস্থায় চলে যায়।আজকের পরিচিত লাদেনের প্রচারেও পরবর্তীতে এই ঘটনা এবং এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে না মিটিয়ে গোটা স্থাপনার অপমানকর অবস্থা করার জন্য সৌদি রাজ্ পরিবারের উপর অভিযোগ দেখা যায়।
জুহাইমান সৌদি দূরদর্শনে মহিলাদের দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।এই ঘটনার পরে আর কেউ কোনো মহিলা উপস্থাপিকাকে সৌদি দূরদর্শনে দেখা যায় নি।সম্প্রতি সামাজিক সংস্কারের পরে কিছু হবে কি না জানা গেলেও সেই দিন গুলো এখনো অনুপস্থিত।
পরবর্তিতে বা অন্তিম পর্বে থাকবে বিষবৃক্ষের অবসানের বিষয়ে আশার আলোর বিবরণ।আমার একটি দুর্বলতা আছে আর তা হলো আমি নেতিবাচক বিষয়গুলো একটু এড়িয়ে যাই,হয়তো অনেকেই এটিকে পলায়নী মনোবৃত্তি ভাবতে পারেন তবে আজ পর্যন্ত অনেক এই ধরনের বিষয়ের গভীরে গিয়ে দেখেছি আবার স্ব্দর্থ্ক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে তাই আলাদা করে ওই অন্ধকারের অবসানের বিষয়ে লেখার জন্য রাখলাম চতুর্থ পর্ব।
আমার খুব প্রিয় একটি উদ্ধৃতি আছে ওটা দিয়েই আবার এই পর্ব শেষ করছি, “মাভৈ! রাত যতো অন্ধকার,প্রত্যুষ ততোই নিকটে জানিবেন “ .....হ্যা নির্দিস্ট তথ্যসূত্র আর যুক্তির নিরিখেই এই দাবি আবার রাখলাম।




প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র:
১. দখলমুক্ত করার পরে বাদশার কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দর্শন https://www.youtube.com/watch?v=eCfv0_ee9pw
২. একটু পাকিস্থানের কাগজ থেকে ,আল কায়দার সূচনা হওয়ার বিষয়টি সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এতে https://www.dawn.com/news/503835/thirty-years-on-mecca-mosque-siege-reverberates
৩. একই ভাবে পরবর্তী সন্ত্রাসবাদের যোগ সূত্র নিয়ে সুখপাঠ্য একটি লেখা https://www.thoughtco.com/indispensable-books-on-the-middle-east-2353389
৪. আলোচিত সেই জুহাইমানের সন্তান হয়েছে অন্য রকম একজন সুনাগরিক-প্রমাণিত হয় পরিবেশ একটি বড় ফারাক করে দেয় মানুষের গঠনের https://english.alarabiya.net/en/News/gulf/2018/09/03/Son-of-Juhayman-infamous-Mecca-attacker-promoted-to-be-a-Saudi-Guards-colonel.html
৫. একটু ফিরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা https://www.brookings.edu/events/terrorism-in-saudi-arabia-past-and-present/

কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাসঃ-৩ পর্ব


৩ পর্ব
সৌদি বাহিনীর সমস্যা এবং লড়াইয়ের অন্তিম অবস্থা:
একই সাথে জুহাইমানের সঙ্গে থাকা অনেকেই এই মক্কার মসজিদ আল হারাম এ পড়াশোনার এবং জীবনের একটা বড় অংশ কাটানোর কারণে এই ভূগর্ভের বা পুরো জায়গাটি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানতো।এই কারণে ২০ তারিখ থেকে পরের দিন গুলো এই জায়গায় আক্রমন করতে গিয়ে একের পর এক সৌদি সেনা বা বাহিনীর লোক মারা পড়েছিল।সৌদি রাজশক্তি বুঝতে পারলো,এইভাবে হবে না,অন্য কোন উপায় নিতে হবে।
ফরাসী সহায়তা :
সমাধান পেতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য ফরাসি সরকারের সাহায্য চায় তাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি (Valéry Giscard d'Estaing) র কাছে।ফরাসি রাষ্ট্রপতি গোপনে তাদের ওই সময়ে সদ্য তৈরী সন্ত্রাসবাদ দমনের বিভাগ GIGN এর তিনজন বিশেষজ্ঞকে সৌদি আরবে পাঠান।গোপনে পাঠানো হয় যাতে এই অমুসলিম কোনো রাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো খবর বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রতিক্রিয়া না হয় ওই জন্য।
ফরাসি এই দল কাছের একটি হোটেল তাইফ এ অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে।এরা এই লোকগুলোকে উপরে নিয়ে আসার জন্য ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোতে বিশেষ গ্যাস পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাতে শ্বাস নিতে না পেরে এই লোকগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কক্ষগুলোতে মাটির তলা দিয়ে গর্ত করে বিশেষ গ্রেনেড এর মাধ্যমে এই গুলো ভিতরে ফাটানো হয় যাতে কোনো মৃত্যুর বদলে স্রেফ গ্রেনেড দিয়ে ওই গ্যাস কক্ষে ভরে যায়।এই গ্যাস ব্যবহার বা প্রাসঙ্গিক রসায়নিক ব্যবহারের একটা প্রশিক্ষণ তারা দিয়েছিল সৌদি সেনাদের কারণ অমুসলিম কারোর কাবা বা ওই মসজিদ আল হারাম এ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এই বিশেষ গ্যাসের নাম রসায়নিক হিসেবে বিশাল তবে সংক্ষেপে বলা হয় CB,যা দীর্ঘক্ষণ ফুসফুসে ঢুকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে প্রাথমিক পর্বে এতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হয় আর খোলা জায়গায় যেতেই হয়।
সাফল্যের মুখ দর্শন:
অবশেষে ডিসেম্বরের তিন তারিখ সকালে মাটির নিচের ওই কক্ষগুলোর ভিতরে এই গ্যাসের নিক্ষেপ করার জন্য জমির উপরে গর্ত করে এই গ্যাসের ক্যানিস্টার ফেলা হয় যা ভিতরে গিয়ে ফেটে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ রাখছিল না।এতে আংশিক সাফল্য এসেছিল,লড়াই চলে আরো ১৮ ঘন্টা।অবশেষে ডিসেম্বরের চার তারিখ প্রতিপক্ষের গুলির বা বোমার আওয়াজে বিরতি আসে।
একটি ছোট অপরিসর ভূগর্ভস্থ ঘরে জনা কুড়ি বিদ্ধস্ত,ক্লান্ত,যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলে আতঙ্কিত এই জঙ্গিদের একসাথে দেখা গেলো।এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্রিগেডিয়ার আল দাহারি অনুমান করেন এই সংঘর্ষের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনেই তথাকথিত সেই ঈমাম মেহেদির রূপে থাকা আল কাহতানি মারা পড়েছিল।এই খবর জুহাইমান গোপন রেখেছিল বা নিজেই এক পর্যায়ে একে মেরে বিষয়টি গোপন রেখেছিল।যাই হোক,ঈমাম মেহেদী গুলি বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে না এই লোকগুলোর অটল বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল যা সামগ্রিক মনোবলে আঘাত এসেছিল বলে ধরা হয়।এই পরিপূর্ণ দখলের আগে অবশ্য সৌদি বাহিনী জানতেও পারে নি যে তথাকথিত ইমাম মাহদী বা মেহেদী আগেই মারা গিয়েছে।
এই ঘরগুলোর ভিতরে ওই গাদাগাদি করে থাকা লোকেদের ভিতরে সেনাদল পায় সেই জুহাইমানকে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আল দাহরি নিজেই সনাক্ত করে এই লোকটিকে।পূর্ব নির্দেশের কারণে এবং পুরো বিষয়ের বাকি খবর বের করার জন্য একে আলাদা করে নিয়ে যায়।পুরো একটি সেনা স্কোয়াড এই যুহাইমান কে অক্ষত রাখার জন্য প্রহরাতে নিয়োজিত হয়।
কাবা এবং মসজিদ আল হারাম মুক্ত হওয়ার রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং পরবর্তী কার্যক্রম:
অবশেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ আল হারাম মসজিদ এবং কাবা স্থাপনার পুরো জায়গা মুক্ত হয়েছে ঘোষণা করে।গোটা দেশ এবং বিশ্বের কাছে এই জুহাইমান আর তার বাকি জীবিত সঙ্গীদের স্থির এবং ভিডিও ছবি দেখায়।
সব মিলিয়ে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় ঠিক পনেরো দিন পরে ডিসেম্বর ৫ তারিখের ভোর দেড়টার স্থানীয় সময়ে।একই সঙ্গে প্রিন্স নাইফ সরকারী ভাবে জানায় এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সেনাদল সেই মহম্মদ আল কাহতানির মৃত দেহ খুঁজে পেয়েছে।গুলি এবং অন্য ভাবে ক্ষতবিক্ষত এই মৃতদেহ দেখানো হয় টিভিতে।সৌদি ইন্টালিজেন্স এর প্রধান প্রিন্স তুর্কির মতে এই লোকটিকে জুহাইমান নিজেই খুন করেছিল যাতে জীবিত ধরা পড়ে পুরো মিথ্যের বিষয়টি আরো প্রকট না করতে পারে।
দেশের সাংবাদিকদের বা অন্য মানুষদের এই জায়গাটি দেখানো হলে তারা দেখতে পায় এই লোকগুলো আগুন জ্বালানোর জন্য পবিত্র কোরান ছিড়ে তার পাতা ও ব্যবহার করেছে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সঙ্গীদের মৃতদেহের মুখ যাতে না চিনতে পারে তার জন্য মুখের উপরে এই কাগজ জ্বালিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল।আশা করি পুরো বিষয়টি কত বিভৎস্য আর এই লোকগুলো প্রয়োজনে সবই করতে পারে তার একটা ধারণা পেয়েছেন।
এরপরে সেই ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় রাজা খালিদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টি শেষ হওয়া আর এই দখল মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন।এরপরে বুলেটের ক্ষত বাদে বাকি পুরো স্থাপনা কে এক অতি দ্রুততার সাথে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় পরের দুই দিনের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ছয় তারিখে বাদশা খালেদ একদল উচ্ছসিত নামাজির সাথে এই চত্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আসেন।পুরো ধর্মীয় রীতি মেনে হজর আল আসওয়াদ চুম্বন,কাবা গৃহকে সাতবার রীতি মেনে প্রদক্ষিন এবং জমজম এর জল পান করে আবার পুরনো রীতির সূচনা করেন।এরপরের দিন জুম্মার নমাজ হয় এক অন্য পরিবেশে।এতে অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ আগেই এসে জড়ো হয়েছিল আগের রাত থেকেই।পুরো ইসলামী বিশ্বের দেশগুলোতে এই ঘটনা উপগ্রহর মাধ্যমে সমপ্রসার করা হয়।
হতাহতর বিবরণ এবং জুহাইমানের চরিত্রের এক ঝলক :
যে উদার পথের সমাজ রেখে চলার কাজ শুরু করেছিল এই সৌদি রাজবংশ তার মূল্য দিতে হয়েছিল অতীব কঠিন ভাবে আর তা দিয়েছিল মূলত সৌদি নাগরিকরা।এই ঘটনায় হতাহত মানুষের মধ্যে ১২৭জন বিভিন্ন বাহিনীর মানুষ।এছাড়া তাদের ৪৫১ জন আহত হয়েছিল এই সময়ে।অন্যদিকে সরকারী ভাষ্যে জানা যায় সাধারণ পুন্যার্থীর মধ্যে ২৬জন ওই জায়গায় থাকা মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সৌদি ছাড়াও ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,মিশর এবং বার্মার নাগরিক ছিল।এ ছড়া আহত হয়েছিল একশো জন।
অন্যদিকে এই দখলদারি করা জুহাইমানের দলের ২৬০জনের মধ্যে ১১৭ জন নিহত হয়েছিল,সরাসরি লড়াইয়ে ৯০জন আর পরে হাসপাতালে আরো ২৭জন। গ্রেফতার করা জুহাইমান তার কাজের বিষয়ে কোনো অনুতাপ দেখায় নি বলে জানা যায়।সেই সময়ের সৌদি প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল তাকে এই কাজ কেন করেছে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর ছিল "সবই ভাগ্য " ,তার কিছু চাই কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জল খেতে চায়।এই ঘটনার পরে জুহাইমান আর জীবিত সঙ্গীদের ক্যামেরার সামনে আনা হয়।আরো কিছু পরে হাসপাতালে তার সাথে দেখা হয় প্রিন্স তুর্কির,সেই সময়ে জুহাইমান নির্লজ্জের মতো বাদশা খালেদের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে,এই কাজ করে সে অনুতপ্ত এই বলে।উত্তরে তুর্কি তাকে বলে এই কাজের জন্য সে ক্ষমার যোগ্য না।এই ছিল সৌদি রাজশক্তির সাথে তাঁর শেষ বার্তালাপ।
সৌদি বিচার যেখানে রাজাই শেষ কথা :
জুহাইমানের দলের বাকি ১৪৩ জনের মধ্যে ৬৩জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সৌদি আদালতে।১৯৮০ সালের ৯ তারিখে সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আটটি জায়গায় এদের শিরোচ্ছেদে মৃত্যুর ফরমান জারি করে।কেন আটটি জায়গায়?এই বিষয়ে বাখ্যা দিতে আরো এক শীর্ষব্যক্তি প্রিন্স তুর্কি বলে যে এটি ছিল গোটা সৌদি আরবের বিষয় তাই মুখ্য জায়গাগুলোতে এই কাজগুলো করা হয় যাতে সার্বিক ভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।এই ৬৩ জনের মধ্যে ৪১জন সৌদি নাগরিক,১০জন মিশরের,সাতজন ইয়েমেনের,তিনজন কুয়েতের,একজন সুদানের আর একজন ইরাকের ছিল।যেমন বলেছি,আলাদা করে এদের ১৫জন কে মক্কাতে,১০ জন কে রিয়াদে,মদিনা,দাম্মাম,বুরাইদাহ এবং আবহাতে সাত জন করে,হাইল এবং তাবুক এ পাঁচজন করে এই মৃত্যুদন্ড পাওয়া লোকেদের শিরচ্ছেদ করা হয়।প্রথমে মৃত্যুদন্ড পেলেও পরবর্তিতে কারাদন্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে।এ ছাড়া এই দলে থাকা ২৩ জন মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মহিলাদের ২ বছর করে কারাদন্ড আর শিশুদের নির্দিস্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।জুহাইমানকে ওই ১৫ জনের সাথে মক্কাতে শিরচ্ছেদ করা হয় জানুয়ারির নয় তারিখ,১৯৮০তে ।
সরকারী ভাবে সৌদি প্রশাসন ঘোষণা করে যে এই নানান দেশের লোক যুক্ত হলেও কোনো দেশ এই কাজে উস্কানি দেয় নি বা সাহায্য করে নি।পুরো বিষয়টি একটি ধর্মীয় কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে হওয়া কাজ।জনমানসে এই বিষয়ে কোনো ছাপ পড়েনি,অন্তত কোনো জায়গায় এই নিয়ে কোনো আলোড়ন বা বিক্ষোভ দেখা যায় নি।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টা একটা বিশাল মানসিক ধাক্কা ছিল প্রশাসক বা সাধারণ মানুষের কাছে।
বিষ বৃক্ষের সূচনা বা এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন:
এতে সব শেষ হয় না , সৌদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ঘটনা কট্টরপন্থীদের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সৌদি ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী।এই গোড়া মানসিকতার থেকে আর কোনো বিদ্রোহ যাতে তাদের গদিচ্যুত না করে তার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই দেশটি মধ্যযুগীয় একটি ব্যবস্থায় চলে যায়।আজকের পরিচিত লাদেনের প্রচারেও পরবর্তীতে এই ঘটনা এবং এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে না মিটিয়ে গোটা স্থাপনার অপমানকর অবস্থা করার জন্য সৌদি রাজ্ পরিবারের উপর অভিযোগ দেখা যায়।
জুহাইমান সৌদি দূরদর্শনে মহিলাদের দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।এই ঘটনার পরে আর কেউ কোনো মহিলা উপস্থাপিকাকে সৌদি দূরদর্শনে দেখা যায় নি।সম্প্রতি সামাজিক সংস্কারের পরে কিছু হবে কি না জানা গেলেও সেই দিন গুলো এখনো অনুপস্থিত।
পরবর্তিতে বা অন্তিম পর্বে থাকবে বিষবৃক্ষের অবসানের বিষয়ে আশার আলোর বিবরণ।আমার একটি দুর্বলতা আছে আর তা হলো আমি নেতিবাচক বিষয়গুলো একটু এড়িয়ে যাই,হয়তো অনেকেই এটিকে পলায়নী মনোবৃত্তি ভাবতে পারেন তবে আজ পর্যন্ত অনেক এই ধরনের বিষয়ের গভীরে গিয়ে দেখেছি আবার স্ব্দর্থ্ক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে তাই আলাদা করে ওই অন্ধকারের অবসানের বিষয়ে লেখার জন্য রাখলাম চতুর্থ পর্ব।
আমার খুব প্রিয় একটি উদ্ধৃতি আছে ওটা দিয়েই আবার এই পর্ব শেষ করছি, “মাভৈ! রাত যতো অন্ধকার,প্রত্যুষ ততোই নিকটে জানিবেন “ .....হ্যা নির্দিস্ট তথ্যসূত্র আর যুক্তির নিরিখেই এই দাবি আবার রাখলাম।




প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র:
১. দখলমুক্ত করার পরে বাদশার কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দর্শন https://www.youtube.com/watch?v=eCfv0_ee9pw
২. একটু পাকিস্থানের কাগজ থেকে ,আল কায়দার সূচনা হওয়ার বিষয়টি সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এতে https://www.dawn.com/news/503835/thirty-years-on-mecca-mosque-siege-reverberates
৩. একই ভাবে পরবর্তী সন্ত্রাসবাদের যোগ সূত্র নিয়ে সুখপাঠ্য একটি লেখা https://www.thoughtco.com/indispensable-books-on-the-middle-east-2353389
৪. আলোচিত সেই জুহাইমানের সন্তান হয়েছে অন্য রকম একজন সুনাগরিক-প্রমাণিত হয় পরিবেশ একটি বড় ফারাক করে দেয় মানুষের গঠনের https://english.alarabiya.net/en/News/gulf/2018/09/03/Son-of-Juhayman-infamous-Mecca-attacker-promoted-to-be-a-Saudi-Guards-colonel.html
৫. একটু ফিরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা https://www.brookings.edu/events/terrorism-in-saudi-arabia-past-and-present/

Posted at November 18, 2018 |  by Arya ঋষি

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top