বই ডাউনলোড লিংকঃ-
ইসলামি শান্তি ও বিধর্মী সংহার
আপনারা নিশ্চই রাজশাহীর একটাকিয়া রাজাদের কথা শুনেছেন, রাজশাহীর চলনবিল এলাকায় সপ্তদূর্গা বা সাতপাড়ায় যাদের রাজধানী ছিল। এরা রাজা হলেও প্রতি বছর একবার অন্তত গৌড় বা দিল্লীর বাদশাহ র নিকট গিয়ে তাদের বন্দনা করতে বাধ্য ছিলেন। সেই নিয়ম অনুসারে রাজা মদন নারায়ন নিজের দুই পুত্র কন্দর্প নারায়ন ও কামদের নারায়নকে সঙ্গে নিয়ে গৌড়ের বাদশাহ (নবীজীর বংশদর বলে পরিচিত) সৈয়দ হোসেন শাহ-র সাথে সাক্ষাত করতে আসলেন। সৈয়দ হোসেন শাহ-র চার স্ত্রীর গর্ভে বহু কন্যা সন্তান হয়েছিল। তার মধ্যে দুটির বয়স ২০ বছরের অধিক হয়েছিল, অথচ যোগ্য পাত্র না পাওয়ায় তাদের বিয়ে দিতে না পারায় খুব চিন্তিত ছিলেন। হোসেন শহ সৈয়দ বংশের লোক, নিন্মশ্রেনী থেকে ধর্মান্তরিত এ সকল দেশীয় মুসলমানগনকে তিনি সমকক্ষ বলে মনে করতেন না। তাই হোসেন শাহ দেখলেন মদনের পুত্রদ্বয় অতি সুন্দর, বিদ্বান , বুদ্ধিমান এবং যুবা পুরুষ। তারা কুলীন ব্রাম্মন এবং রাজপুত্র। সুতরাং সর্বাংশেই তারা কন্যার যোগ্য পাত্র। তিনি অমনি মদকে স্বপুত্রক আটক করে তার মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব করলেন। রাজা মদন অতি বিনীতভাবে বললেন, ধর্মাবতার, আপনি আমাদের রাজা এবং রক্ষক, আমি আপনার একান্ত অনুগত এবং হিতার্থী ভৃত্য। আমার প্রতি অত্যাচার করা হুজুরের পদমর্যাদার অযোগ্য। বাদশাহ চতুরতা পূর্বক বললেন - দেখুন আমি একটাকিয়ার রাজবংশকে অতিশয় ভালবাসি এবং মান্য করি । আপনাদের কন্যা যেমন অপর কোন হিন্দু বিয়ে করতে পারেনা , তেমনি আমাদের কন্য ও সৈয়দ বংশের বাইরে কোন মুসলিম বিয়ে করতে পারে না। আপনাদের অতীব সম্ভ্রান্ত জেনেই আপনার পুত্রদ্বয়ের সঙ্গে আমি আমার দুই কন্যার বিয়ে দিতে ইচ্ছা করি, কোনরূপ অত্যাচার করার অভিপ্রায় আমার নেই। আমি আপনাদের মুসলমান হতে বলিনা, বরং পত্নীই পতির ধর্ম অনুসরন করবে। ইহাই জগতের সাধারন রীতি। আপনি যদি আমার কন্যাদের স্বজাতিতে মিলিয়ে নিতে চান, আমি সম্মত আছি। নতুবা আপনার পুত্ররা আমার ধর্ম গ্রহন করুক। আমি তাদের আমার স্বজাতিতে মিলিয়ে নেব। এই উভয় প্রস্তাবের মধ্যে যেটি আপনার বাঞ্চিত হয় আমি সেটাই মেনে নিব। কিন্তু যদি আপনি উভয় অস্বীকার করেন, তবে আমি বলপূর্বক আপনাকে বাধ্য করবো।
রাজা মদন বাদশাহের উগ্র স্বভাবের কথা জানতেন। তিনি দেখলেন বাদশাহর প্রস্তাব অস্বীকার করলে বহু লোকের প্রাণনাশ ও জাতি নাশ হবে। আর মুসলমান মেয়েকে নিজ জাতিতে মেলাবার কোন উপায়ও নাই। অগত্যা তিনি পুত্রের মায়া ত্যাগ করলেন। তারা মুসলমান হয়ে শাহজাদীদ্বয়কে বিয়ে করলেন। হোসেন শাহ পরে মদনের অন্য পুত্র ও ভাতুষ্পুত্র সহ আরো এগারো জনকে ধরে এনে মুসলমান বানালেন এবং তাদের সঙ্গে নিজের অবশিষ্ট সমস্ত কন্যাদের বিয়ে দিলেন। রাজা মদন চতুর্থ পুত্র রতিকান্তের দৃষ্টিশক্তি কম ছিল, সে রাতে একেবারেই দেখতে পেতোনা। বাদশাহ কেবল তাকে ছেড়ে দিলেন। বাদশাহ রসিকতা করে মদনকে বললেন- বুঝেছেন, যে অন্ধ সে হিন্দুই থাকুক, আর যার চক্ষু আছে তার মুসলমান হওয়া উচিত।
এইভাবে শুধু একটাকিয়ার রাজ পরিবার থেকে ২৯ জন রাজ কুমারকে মুসলমান করা হয়েছিল। সম্রাট আকবর একটাকিয়ার রাজকুমার চন্দ্র নারায়ন এবং সংগীত শাস্রবিদ বিখ্যাত কাশ্মিরী পন্ডিত তানসেনের সাথে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। আরঙ্গজেবের প্রথম জামাতা কাশ্মিরী পন্ডিত কৃষ্ণ নারায়ন। আলমগীর ততকালীন বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাকে আদেশ দিয়েছিলেন যে, একটিয়ার ঠাকুর বংশে সুপাত্র থাকলে তাদের আটক করে মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করে প্রহরীবেষ্টিত অবস্থায় দিল্লীতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এই পাত্র যে পর্যন্ত ভক্ত মুসলমান না হয় সে পর্যন্ত যেন তাকে দিল্লিতে পাঠানো না হয়। কেননা তার কন্যার বর ঘৃণিত কাফের হলে তার সামনে হজির হওয়া তিনি ইচ্ছা করেন না।
আমার দাদীর কাছে থেকে এই ইতিহাস ছোট বেলায়ই শুনেছি । দাদী আরো বলেছিলেন, আমরা রাজকুমার কন্দর্প নারায়নের বংশধর। কামদেব নারায়ন অদৃষ্টকে মেনে নিলেও কন্দর্প নারায়ন মনে প্রাণে মুসলমান হতে পারলেন না। কিন্তু অন্য কোন উপায়ও ছিল না। তাই বংশ পরম্পরায় এই ইতিহাস পরবর্তী বংশধরদের জানিয়ে রাখতে হুকুম করে দিয়েছিলেন তিনি। আমি কন্দর্প নারায়নের -২৩ তম বংশধর। আমার পূর্বপুরুষের সেই অপমান অত্যাচারের জ্বালা আমার রক্তে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু তা বলে আমি কালাচাদ ওরফে কালা পাহাড়ের মত দুলারী বিবিকে এবং যদুকে ওরফে জালালুদ্দিনের মত আশ্মান তারাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়ে স্বজাতির প্রতি আক্রোশ বশত ইসলামী বর্বরতা চেপে যাওয়ার মত আহাম্মক নই ।
কি আশ্চর্য, আমার পূর্বপুরুষ তার কালা পাহাড় শুধু বিয়ে করতে বাধ্য হয়ে সমাজচ্যুত হয়েছিলেন, অথচ এদেশের ৯০ সতাংশ মুসলমান কালা পাহাড়, জালালউদ্দিন সহ অন্যদের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে মুসলমান হয়েছিল সে কথা এরা মনেই রাখেনি। মধ্যযুগে ইসলামী সুনামীর বর্বরতার মরূভূমির বালি এসে এদেশের উর্বর মাটি ঢেকে ফেলেছে। সে মরু বালি সরিয়ে উর্বর মাটি পূনরুদ্ধারের কারো কোন ইচ্ছা নাই। অন্ধকার রাতের ঝড়-ঝঞ্জায় নাবিক পথ হারালে ভোর হলে তিনি সঠিক পথের সন্ধান করে নেন। অথচ আশ্চর্য , এরা কেউ সঠিক পথের সন্ধান করছেন না। সত্যিই বাংলার মানুষের বড় ভূলো মন। এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাতে আমি মধ্যযুগীয় মুসলিম বর্বরতার কিছু ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তুলে ধরতে চেয়েছি আমাদের পূর্ব পুরুষ কোন পরিস্থিতিতে মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছিলেন।
১০২৬ খৃষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ ৩০ হাজার অশ্বারোহী ও অসংখ্য মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে বিশাল বাহিনী সহ সোমনাথ মন্দিরের সামনে উপস্থিত হলেন। চতুর্দিক থেকে বহু সংখ্যক রাজপুত যোদ্ধা ও রাজাগন সোমনাথ মন্দির রক্ষার্থে অগ্রসর হলেন। প্রায় পাচ হাজার হিন্দু সোমনাথ মন্দির রক্ষার্থে প্রাণ বিসর্জন দিলেন , কিন্তু মন্দির রক্ষা করতে পারলেন না। মন্দিরের পূজারী সহ বহু সংখ্যক ব্রাম্মনকে হত্যা করে মাহমুদের আদেশে মন্দির অপবিত্র করে মন্দিরের সকল বিগ্রহাদি ভেঙে ফেলা হল। এই মন্দির হতে দুই কোটি স্বর্ণমুদ্রা ও বিগ্রহের অলংকারাদি হতে প্রভূত পরিমান স্বর্ণ রৌপ্য মনি মুক্তা তিনি লুণ্ঠন করলেন।
মন্দির ও প্রতিমা ধ্বংসের আয়াতটি হল-
"রোজ কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদেশে তার ফিরিস্তারা প্রতিমাপূজক এবং দেব প্রতিমাগুলোকে একত্র করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবে।" (কোরান-৩৭/২২-২৩)
সুলতান মাহামুদের পর মোহাম্মদ ঘোরী ভারত আক্রমন করেন। মোহাম্মদ ঘোরী ভাতিন্দা আক্রমণের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কালে পৃথ্বীরাজ তাকে ধাওয়া করেন। ধানেশ্বরের নিকট তয়াইন নামক স্থানে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হল। ঘোরীর সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হল এবং ঘোরী স্বয়ং যুদ্ধে আহত হলেন ও বন্ধী হলেন।
পৃথ্বীরাজ হিন্দু অনুশাসান মতে ঘোরীকে ক্ষমা করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিলেন। এই ভারতীয় নীতিই পৃথিরাজের জন্য ও ভারতের হিন্দুদের জন্য কাল হয়ে দাড়াল। হতভাগা পৃথিরাজ জানতেন না ভারতীয় নীতি আর কোরানের নীতি এক নয়। আর তাই পরের বছর (১১৯২) কোরানের আদর্শ মতে যুদ্ধের নীতি ভঙ্গ করে ঘোরী পৃথিরাজকে হত্যা করলেন।
এরপর ঘোরী স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন আজমীরের হিন্দু মন্দির ধুলিস্যাত করে সেখানে মসজিদ ও ইসলাম ধর্মের শিক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করলেন। তারপর হিন্দুর রক্তে রাঙিয়ে তিনি দিল্লী ও বেনারস অভিযান করেন। অসান দুর্গ দখল করে মুসলমানেরা নির্বিচারে হিন্দু হত্যা করতে করতে বেনারস পৌছায় এবং সেখানেও হিন্দু হত্যা চালাতে থাকে। ঐতিহাসিক হাসান নিজাম তার 'তাজ উল মাসির' গ্রন্থে এই বর্বরতা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, " তার তরবারির ধার সমস্ত হিন্দুকে নরকের আগুনে নিক্ষেপ করল। তাদের কাটা মুন্ড দিয়ে আকাশ সমান তিন খানা গম্বুজ নির্মাণ করা হল এবং মাথাহীন দেহগুলো বন্য পশুর খাদ্যে পরিণত হল।"
এরপর ঘোরীর উত্তরসূরী কুতুবউদ্দিন এক হাজার ঘোরসওহার বিশিষ্ট বাহিনী নিয়ে কাশীর দিকে অগ্রসর হল। কাশী নগরী দখল করার পর কুতুবউদ্দিন মুসলমানদের আদেশ দিলেন , সকল হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতে হবে। তারা প্রায় এক হাজার হিন্দু মন্দির ধ্বংস করল এবং সেই মন্দিরের ভিতের উপর মসজিদ নির্মান করল।
হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার চেষ্টা করায় এক দিনে ২০ হাজার নও-মুসলিমকে হত্যা
১১৯৬ সালে কুতবউদ্দিন গোয়ালিয়র আক্রমন করেন। এই ঘটনাটি বর্ণনা করতে গিয়ে হাসান নিজামী তার 'তাজ উল মসির' - এ লিখেছেন -
" ইসলামের সেনারা সম্পূর্ণভাবে বিজয়ী হল। মূর্তি পুজার সমস্ত কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠানকে (মন্দিরকে) ধ্বংস করা হল এবং সেখানে ইসলামের নিদর্শণ স্বরূপ মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মান করা হল।"
১১৯৭ সালের জানুয়ারী মাসে কুতুবউদ্দিন ও মোঃ ঘোরী গুজরাট আক্রমন করেন এবং পথে নাহারয়োলা দুর্গ আক্রমন করেন। মাউন্ট আবুর এক গিরিপথে রাজা করন সিং ও মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে করন সিং হেরে যান।
মিনহাজ লিখেছেন- "প্রায় পঞ্চাশ হাজার শব দেহের স্তুপ পাহাড়ের সমান উচু হয়ে গেল। বিশ হাজারেরও বেশি ক্রীতদাস কুড়িটি হাতি সহ এত লুটের মাল বিজয়ীদের হাতে এলো যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।"
১২০২ সালে কুতুব উদ্দিন কালিঞ্জর দুর্গ আক্রমন করেন।
এই প্রসঙ্গে মিনহাজ লিখেছেন -
" সমস্ত মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হল, ৫০ হাজার হিন্দুকে (নারী ও শিশু-সহ) ক্রীত দাস হিসেবে পাওয়া গেল এবং হিন্দুর রক্তে মাটি পীচের মত কালো হয়ে গেল।"মুসলমানের হত্যাযজ্ঞে ভীত হয়ে প্রাণ রক্ষার্থে এবং জিজিয়া কর না দিতে পারার কারনে যারা মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের উপর দয়া করেই মুসলমান শাসকগণ মন্দির গুলোকে ঘষে মেজে ও প্লাস্টার করে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলেন। এই সব নও মুসলমানদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে তারা নিয়মিত নামাজ রোজা পালন করে খাটি মুসলমান হলে তাদেরকে উচ্চ রাজকর্মচারী পদে নিযুক্ত করা হবে। কিন্তু সাধারন সৈনিকের কাজ ছাড়া অন্য কোন বৃত্তি গ্রহনের সুযোগ না পাওয়ায় এবং তাদেরকে দিয়ে হিন্দু মন্দির ধ্বংস, হিন্দু হত্যা ও হিন্দু নির্যাতন করালে মুসলমানদের আচরণে বীতশ্রদ্ধ হতে তারা পূনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার উদ্যোগ নিলে গুজরাট হতে ফিরবার পথে সম্রাট আলাউদ্দিনের আদেশে এক দিনে ২০ হাজার নও-মুসলিমে হত্যা করে নারকীয় পৈশাচিকতার পরিচয় দেন।
১৩০৩ খৃষ্টাব্দে আলাউদ্দিন চিতোর আক্রমন করেন। চিতোর আক্রমনের প্রত্যাক্ষ কারন ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রাজপুত রানা রতন সিংহের অন্যন্যা সুন্দরী রানী পদ্মিনীকে হস্তগত করা । রতন সিংহ বীরদর্পে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত পরাজিত ও বন্ধি হলেন । রাজপুত বীর গোরাচাদ ও বাদল অসাধারণ বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করলেন । কিন্তু বিশাল সুলতানী বাহিনীকে পরাজিত করা অসম্ভব দেখে রাজমহলের নারীগন জহরব্রত অর্থাৎ অগ্নিকুন্ডে ঝাপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিলেন । এভাবে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে তারা মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়ে অপমানিত হওয়া থেকে পরিত্রান পেলেন।
কাজী মুগিস উদ্দিন বলেছেন সম্রাট আলাউদ্দিন কার্যসিদ্ধির মানে ইসলাম প্রতিষ্টার জন্য ন্যায় অন্যায় বা নীতি আদর্শের কোন ধার ধারতেন না ।
অর্থের প্রাচুর্য্য থাকলেই বিদ্রহের মনোবৃত্তি ও সামর্থ্য জন্মে- এই ছিল আলাউদ্দিনের ধারণা । এজন্য তিনি ধনবান হিন্দুদের নানাভাবে শোষণ করে তাদের অর্থবল নাশ করলেন ।
তিনি দোয়াব অঞ্চলের হিন্দুদের নিকট হতে উতপন্ন ফসলের অর্ধাংশ রাজস্ব হিসেবে আদায় শুরু করলেন এবং হিন্দু জনসাধারণের উপর এমন অসহনীয় করভার স্থাপন করলেন যাতে তারা এই করমুক্তির আশায় দলে দলে ইসলাম গ্রহন করে ।
এই কার্যকলাপে মুসলমান মাওলানাগণ খুব খুশি হয়েছিলেন । মিশরের জনৈক বিখ্যাত ইসলামী আইন বিশারদ আলাউদ্দিন খিলজীকে এক পত্রে লিখেছিলেন-
"শুনলাম আপনি নাকি হিন্দুদের এমন অবস্থা করেছেন যে, তারা মুসলমানদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করছে । এরূপ কাজ করে আপনি ইসলামের অশেষ উপকার করেছেন। একমাত্র এই কাজের জন্যই আপনার সকল পাপের মার্জনা হবে ।"
পুরীর জগন্নাথদেবের বিগ্রহ পদলিত ও এক লাখ ২০ হাজার হিন্দু হত্যা
আলাউদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরন করে সম্রাট গিয়াসউদ্দিন ও হিন্দুরা যেন মুসলমানদের বাড়ীতে ভিক্ষা করে বেড়ায় সেজন্য বিভিন্ন নির্দেশ জারী করলেন। এর পর ক্ষমতায় আসলেন ফিরোজ শাহ । তিনি ক্ষমতায় এসেই নবীজির আদর্শ অনুসরণ করে বিভিন্ন মন্দিরকে মসজিদে রুপান্তর ও মন্দির সমূহকে অপবিত্র করতে লাগলেন । তিনি পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ দেবের মন্দির অপবিত্র করলেন এবং জগন্নাথ দেবের মূর্তিটি মুসলমানগন দ্ধারা পদদলিত করবার উদ্দেশ্যে দিল্লী নিয়ে গেলেন।
!["Firuz reached puri, occupied the Raja's palace and took the great idol, which he sent to to be trodden under foot by the faithful." [Cambridge History of India. WI-Ill. 171 ]](file:///C:/Users/HP%20NPC/AppData/Local/Packages/Microsoft.Office.OneNote_8wekyb3d8bbwe/TempState/msohtmlclipclip_image001.png)
তৈমুর লং এক দিনেই হত্যা করেছিলেন ১ লক্ষ হিন্দু
এরপর ভারত আক্রমন করলো তৈমুর লঙ । 'দিল্লীর সুলতনগন পৌত্তালিকতার উচ্ছেদ সাধন না করে পৌত্তালিকদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করছে,' এই অজুহাতে তিনি দিল্লী আক্রমন করলেন । দিল্লী অভিমুখে যাত্রাপথে দীপালপুর, ভাতনেইর প্রভৃতি স্থান লুন্ঠন করে এবং অসখ্য নর-নারীর প্রাণ নাশ করে দিল্লীর উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হলেন । সেখানে তিনি প্রায় এক লক্ষ হিন্দু বন্দীকে হত্যা করে এক নারকীয় কান্ড ঘটালেন । এরপর তৈমুর দিল্লী পৌছালে তার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিন্দু নাগরিকগন আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে এক ব্যপক হত্যাকান্ড শুরু হয় । তৈমুরের দুর্ধষ বাহিনী অগনিত হিন্দু নর নারীর রক্তে দিল্লী নগরী রঞ্জিত করলো । দিল্লী নগরীতে কয়েকদিন ধরে পৈশাচিক হত্যাকান্ড ও লুণ্ঠনের পর তৈমুর সিরি, জাহাপনা ও পুরাতন দিল্লী সহ আরো তিনটি শহরে প্রবেশ করে অনুরূপ লুণ্ঠন ও হত্যাকান্ড ঘটান ।
দিল্লী হত্যাকান্ড এমন পৌশাচিক এবং এত পরিমান মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল যে, এই হত্যা কান্ডের পরবর্তী দু'মাস পর্যন্ত দিল্লীর আকাশে কোন পাখি উড়ে নাই ।
ঐতিহাসিকদের মতে তৈমুর মোট ১৭ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছিলেন যা সেই সময়ের হিসাবে সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫-৭% ।
তথ্যসুত্রঃ Wiki
তৈমুর তার আত্ম জীবনীতে লিখেছেন-দিল্লিতে আমি ১৫ দিন ছিলাম। দিনগুলি বেশ সুখে ও আনন্দে কাটছিল। দরবার বসিয়েছি, বড় বড় ভোজ সভা দিয়েছি। তারপরেই মনে পড়ল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই আমার হিন্দুস্থানে আসা। খোদার দয়ায় আমি সর্বত্রই আশাতীত সাফল্য পেয়েছি। লক্ষ লক্ষ কাফের হিন্দু বধ করেছি। তাদের তপ্ত শোনিতে ধৌত হয়েছে ইসলামের পবিত্র তরবারি--------তাই এখন আরাম-আয়েসের সময় নয় বরং কাফেরদের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করা উচিৎ।
এই হত্যকান্ড এত পৈশাচিক হয়েছিল যে, বিভিন্ন স্থানে মুসলমান রাজকর্মচারীরা এই খবর প্রচার করে করে হিন্দুদেরকে ইসলাম গ্রহন করতে নির্দেশ দেয়; নির্দেশ না মানলে তৈমুরের বাহিনীকে খবর দেবে, এই ভয়ও দেখানো হয় । ফলে বিভিন্ন স্থানে ভয়ার্ত মানুষ দলে দলে মুসলমান হতে লাগল । সেজন্য বাংলায় এখনো "শুনে মুসলমান" কথাটি প্রচলিত আছে ।
সিকান্দার শাহ ছিলেন অত্যান্ত ধার্মিক মুসলমান । তিনি হিন্দুদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতেন । তারই আদেশে মথুরার বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরটি ধুলিস্যাত করা হয়েছিল । তিনি হিন্দুদের যমুনা নদীতে স্নানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন । জৈনক ব্রাম্মন "হিন্দু ধর্ম ইসলাম ধর্ম অপেক্ষা কোন অংশেই হীন নহে"- এই কথা বলার অপরাধে সুলতানের আদেশে প্রণ হারিয়েছিলেন । তিনি ছিলেন প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্বেষী ও ইসলাম ধর্ম মতে পরম ধার্মিক মুসলমান শাসক । তার অত্যাচারে এবং আদেশে কাশ্মীরের হিন্দুগন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছিলেন ।
(সুত্রঃ- ভারত ইতিহাস কথা, ডক্টর কে সি চৌধুরী, পৃ-১৩৭ )
মুসলমানের অত্যাচার থেকে বাচাতে মেয়েদের মাথা মুড়িয়ে দিতো বাবা মা
পরম্পরা অনুসারে ১৩৯৪ খৃষ্টাব্দে সিকান্দার কাস্মীরের গদি পেলেন । তিনি প্রচন্ড মূর্তি বিদ্ধেষী ছিলেন । তিনি হিন্দুদের সামনে তিনটি বিকল্প পথ রাখলেন - ধর্মান্তর, দেশত্যাগ অথবা মৃত্যু । যারা ইসলাম গ্রহন করল না অথচ দেশত্যাগও করল না এমন কতজন যজ্ঞোপবীতধারী কিংবা পন্ডিত হত্যা করলেন তার হিসাব প্রসঙ্গে লরেন্স বলেছেন- সংখ্যা দিয়ে গোনা সম্ভব নয়, তাই শিরচ্ছেদ করার পর সেই হিন্দুদের যজ্ঞোপবীত একত্রিত করে ওজন করা হল । দেখা গেলো সেগুলোর ওজন ৭ মন হয়েছে ।
হিন্দু শাস্রে বিদ্যাভ্যাসের জন্য কয়েক পুরুষ ধরে যত্ন করে রাখা অগনীত গ্রন্থাবলী এই সুলতান কাস্মীরের 'ডাল' সরোবরে ডুবিয়ে নষ্ট করলেন ।
১৭৫০ থেকে ১৮১৯ পর্যন্ত কাষ্মীর পাঠান আধিপত্যে ছিল । পাঠানদের রাজ্য শাষনকালে এ রকম কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়েও ভীষণ নিষ্ঠুর কার্যক্রম চালু করা হয়েছিলো ।
আজাদ খান নামক এক পাঠান প্রশাসকের হিংস্র বাতিক ছিল ব্রাম্মনদের জোড়ায় জোড়ায় ঘাসের বস্তায় ভরে ডাল সরোবরে ডুবিয়ে মারা । তিনি জিজিয়া করও পুনঃ চালু করলেন । মীর হজর নামক আর একজন পাঠান প্রশাসক আজাদ খানের পদ্ধতির একটু পরিবর্তন করলেন । ঘাসের বস্তার বদলে তিনি চামড়ায় বস্তা ব্যবহার করতে লাগলেন ।
তারপর এলেন মুহাম্মদ খান । ইনি বেশি অত্যাচার করতেন মেয়েদের উপর । তার হাত থেকে নিজেদের ঘরের মেয়েদের রক্ষা করতে হিন্দুরা মেয়েদের সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্য তাদের মাথা মুড়িয়ে ফেলেতেন এবং অনেক সময় নাকও কেটে ফেলতেন ।
হিন্দু নারী অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ
দিনের পর দিন এই সব ভয়ঙ্কর অত্যাচার কাশ্মীরবাসী সহ্য করতে থাকলেন এই আশায় যে কাশ্মীরে হিন্দু আধিপত্য আসবে । অনেকে বাধ্য হয়ে মুসলমান হলেন।
রাজা হরি সিং ক্ষমতায় থাকাকালে মুসলমানদের বিশ্বাসঘাতকতা কাকে বলে তা বুঝলেন । পাকিস্থান স্ৃষ্টির দু'মাস পরে ১৯৪৭ -এর ২২শে অক্টোবর পাকিস্তানের মুসলমান গোষ্টী কর্তৃক কাশ্মীর অক্রান্ত হল । তখন কাশ্মীরের নিজস্ব সৈন্যবাহিনী ছিল । সেই সৈন্য ছিল মুজাফরাবাদে । নারায়ন সিং ছিলেন সেই বাহিনীর প্রধান । অধিকাংশ সৈনিকেরা ছিল মুসলমান । বেতন দিতেন কাশ্মীরের রাজা । যখন আক্রমন হলো তখন বাহিনীর মুসলমান সৈনিকেরা অস্ত্র শস্ত্র সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আক্রমনকারী পাকিস্তানী মুসলমানদের সাথে মিলিয়ে গেলো । শুধু তাই নয়, তারা সমস্ত গোপন জায়গা দেখিয়ে দিল এবং যাবার সময় তারা সেনাবাহিনীর প্রধান এবং উপ প্রধানকেও হত্যা করে গেল । ৪ঠা নভেম্বর মুসলমান সৈনিকেরা লে. কর্নেল মজিদ খানের নের্তত্বে গিলিটে স্বতন্ত্র রাজ্যের ঘোষণা করলো । সম্পত্তি লুটপাট করা এবং হিন্দু মেয়েদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো ।
ভি.পি.মেনন লিখেছেন, "নাদির শাহ'র দিল্লী ধ্বংসের বর্ণনা আমরা পড়েছি । এরা তারই পুনরাব্ৃত্তি এখানে করেছে ।"
৮ই নভেম্বর হিন্দুস্থানের সৈন্যরা বারমুল্লা পুনরুদ্ধার করলো । ১৪ হাজার লোক বসতির সেই জায়গা বড়জোর এক হাজার লোক বেচে ছিল । ১১ই নভেম্বর রাজৌরীতে মুসলমানদের অমানুষিক অত্যাচারের নমুনা দেখা গেল । দশ হাজার হিন্দু হত্যা করা হল । তিন হাজার হিন্দু মহিলা তহশিল অফিসের মধ্যে অগ্নিকুন্ড রচনা করে তার মধ্য প্রবেশ করলো । হিন্দুস্থানের সৈন্যরা যখন রাজৌরীতে পৌছলো তখন তারা দেখলো শুধু মৃত দেহের স্তুপ । ২৫শে নভেম্বর মীরপুরে ১৫ হাজার হিন্দু হত্যা করা হল ।
আজও চলছে...।
.............................................................পরেরে পর্বে আরো🧾
"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেন, তাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"
0 Comments: