লিখেছেনঃ এম ডি আলী
উত্তরঃ যেই হাদিস দ্বারা ইসলাম বিদ্বেষীরা মিথ্যাকথা বলে আগে সেই হাদিস জেনে নেইঃ
* ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১/১৫৩ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২৬৫: মুহাম্মদ ইবনে মুনতাশির (রহ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, আমি আয়েশা (রা) কাছে (আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা) এর উক্তিটি উল্লেখ করলাম । তিনি বললেন আব্দুল্লাহ আবু আব্দুর রহমানকে রহম করুন । আমি রাসুল (সা) কে খুশবু লাগাতাম । তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন । তারপর ভোরবেলায় এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধতেন যে তাঁর দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়ত ।
* ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১/ ১৫৩ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২৬৬: আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল (সা) তাঁর স্ত্রীগণের কাছে দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়কর্মে মিলিত হতেন । তাঁরা ছিলেন ১১ জন । বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কি এত শক্তি রাখতেন ? তিনি বললেন আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে তাঁকে ৩০ জনের শক্তি দেয়া হয়েছে । সাইড (রহ), কাতাদা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন , আনাসের (রা) কাছে হাদিস বর্ণনার প্রসঙ্গে ১১ জনের স্থলে ৯ জন স্ত্রীর কথা বলেছেন ।
* ই,ফাঃ সহিহ বুখারি ১/ ১৫৪ পৃষ্ঠাঃ হাদিস নং ২৬৮: আয়েশা (রা) বলেন রাসুল (সা) কে সুগন্ধি লাগিয়েছি তারপর তিনি পর্যায়কর্মে তাঁর স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়েছেন এবং তাঁর ইহরাম অবস্থায় প্রভাত হয়েছে ।
নিরপেক্ষ বিশ্লেষণঃ
১/ উপরের হাদিস থেকে ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রমান করতে চায় যে "রাসুল (সা) প্রত্যেক রাতেই তাঁর সব স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন অথবা সেক্স করতেন" - এটি খাটি মিথ্যাকথা । কারন উপরের হাদিসের কথাও "প্রত্যেক রাতেই সব স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন" এই শব্দই নাই ।
২/ মুলত উপরের হাদিসে পরিষ্কার বুঝা যায় রাসুল (সা) তাঁর স্ত্রীদের সাথে দেখা করতেন বা মিলিত হতেন অথবা সাক্ষাৎ করতেন ।
৩/ "৩০ জনের শক্তি দেয়া হয়েছে" - এই শক্তি যে শুদুই "যৌনশক্তিই" বুঝানো হয়েছে এর কোন প্রমান নাই মানে নবী (সা) কে নবী হিসেবে আল্লাহ্ তাঁকে অন্যদের চেয়ে বেশি শক্তি দিয়েছেন এটাই তো স্বাভাবিক ।
৪/ যদি ধরেও নেই সহবাস করেছেন তাতেও প্রব্লেম নাই কারন একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেই পারে এটাও একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার । বৈধ সম্পর্ক । জায়েজ সম্পর্ক । পবিত্র সম্পর্ক । এক্কেবারে সোজা হিসাব ।
এখন প্রমান করব নবী মুহাম্মদ (সা) শুদু মাত্র একদিন তাঁর একাধিক স্ত্রীদের সাথে সহবাস করেছিলেনঃ
* ই,ফাঃ আবু দাউদ ১/ ১১২ পৃষ্ঠাঃ হাদিস নং ২১৮, এছাড়া বুখারি, মুসলিম , তিরমিজি, নাসাইঃ আনাস (রা) থেকে বর্ণিত একদিন রাসুল (সা) তাঁর স্ত্রীদের সাথে সহবাসের পর একবার গোসল করেন ।
* ই,ফাঃ আবু দাউদ ১/ ১১২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২১৯: আবু রাফে (রা) হতে বর্ণিত একদা নবী (সা) তাঁর স্ত্রীদের সাথে সহবাস করেন । এক স্ত্রীর সাথে সহবাসের পর অপর স্ত্রীর সাথে সহবাসের আগে তিনি গোসল করেন । রাবি বলেন, আমি রাসুল (সা) কে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কেন একবার গোসল করলেন না (সবশেষে একবার গোসল করলেই হত কেন আপনি বারবার গোসল করলেন ?) তিনি (সা) বলেন, এরুপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট ।
এখন প্রমান করব নবী মুহাম্মদ (সা) সব সময় তাঁর স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন নাঃ
* ই,ফাঃ আবু দাউদ ৩/১৫৩ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২১৩২: হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ রাসুল (সা) আমাদের কারো উপর কাউকে ফযিলত (শ্রেষ্ঠত্ব) প্রদান করতেন না, আমাদের সাথে অবস্থানের ব্যাপারে । এরুপ খুব কমই হত যেদিন তিনি আমাদের সকলের নিকট আসতেন না এবং সহবাস বেতিত তিনি সকল স্ত্রীর সাথে খোশালাপ করতেন । এরপর যেদিন যার সাথে রাত্রিযাপনের পালা পড়ত , সেদিন তিনি তাঁর সাথে রাতযাপন করতেন ।
এখন প্রমান করব রাসুল (সা) নারীকামী ছিলেন নাঃ
* ইবনে আবি শাইবা, সিরাতুন নবী এছাড়া যত সিরাতের কিতাব আছে সবঃ মুশরিক উতবাহ ইবনে রাবিআ , নবী মুহাম্মদ (সা) কে টাকা , নেতা এবং সুন্দরী নারীর অফার দেয় যাতে সে ইসলামের দাওয়াত দেয়া বন্ধ করে দেয় কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা) পরিষ্কার শব্দে বলেন আমার এক হাতে চাঁদ আরেক হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি এই সত্য কথা তথা ইসলামের দাওয়াত দেয়া অন্ধ করব না আমি সত্য বলেই যাব । তিনি শুদু নারীর অফার ত্যাগ করেন নি সাথে মোটা অংকের টাকা এবং নেতৃত্বর ক্ষমতাও ত্যাগ করে দিয়েছিলেন ।
স্ত্রীদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে নবী মুহাম্মদ (সা) এর সচেতনতাঃ
* ই,ফাঃ আবু দাউদ ৩/ ১৫৩ পৃষ্ঠা , হাদিস নং ২১৩১: হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা) তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফভিত্তিক সব কিছুই বণ্টন করতেন এবং বলতেন ইয়া আল্লাহ্ আমার পক্ষে যা সম্ভব আমি তা করেছি আর আপনি যার অন্তরের মালিক এবং আমি নই । সে ব্যাপারে আমাকে দোষারোপ করবেন না ।
আসুন কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেইঃ
১/ "প্রত্যেক রাতেই অথবা সবসময় নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর সব স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন" - এই শব্দে একটি সহিহ হাদিস দেখান?
২/ যেই হাদিস থেকে আপনারা ভুল দাবি করেন সেই হাদিস থেকে "সহবাস করতেন" শব্দ দেখান ? ইংলিশ অনুবাদ যা আছে ওইটা ভুল অনুবাদ করা হয়েছে যেখানে "সেক্সুয়াল অ্যাক্ট" শব্দ আছে যা ভুল । তাই ভুল অনুবাদ দেখালে হবে না ।
৩/ আমরা পরিষ্কার প্রমান করেছি "শুদুমাত্র একদিন" রাসুল (সা) তাঁর একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছেন ।
৪/ প্রমান করেছি "সবসময়" রাসুল (সা) স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন না ।
৫/ প্রমান করেছি তিনি স্ত্রীদের অধিকার আদায়ে অনেক সচেতন ছিলেন । একজন আদর্শ শ্রেষ্ঠ স্বামী বলে কথা ।
৬/ প্রমান করেছি রাসুল (সা) নারীকামী ছিলেন না এমন কি টাকা অথবা নেতৃত্বর লোভও নবী মুহাম্মদ (সা) এর ছিলেন না ।
৭/ নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডেও আসলে এটি কোন অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না কারন নাস্তিক ধর্মের দেবদ্যূত ড হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ । আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে,এটুকু । নাস্তিক ধর্মের এই ফতোয়ার আলোকে কি প্রমান হয়েছে যে নবী (সা) যে তাঁর একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছেন এটি খারাপ ? উত্তর হচ্ছে না । কারন নবীজি (সা) এর এই কাজ দ্বারা কি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । নবীজি স্ত্রীরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং স্বয়ং নাস্তিক ধর্মের আলোকেই এটি আসলে কোন অভিযোগ না বরং নবীজি (সা) যা করেছেন সেটি সম্পূর্ণ সঠিক এখানে নাস্তিক ধর্মে বিশ্বাসীদেরও কোন আপত্তি থাকার কথা না । আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
৭/ নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডেও আসলে এটি কোন অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না কারন নাস্তিক ধর্মের দেবদ্যূত ড হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ । আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে,এটুকু । নাস্তিক ধর্মের এই ফতোয়ার আলোকে কি প্রমান হয়েছে যে নবী (সা) যে তাঁর একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছেন এটি খারাপ ? উত্তর হচ্ছে না । কারন নবীজি (সা) এর এই কাজ দ্বারা কি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । নবীজি স্ত্রীরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং স্বয়ং নাস্তিক ধর্মের আলোকেই এটি আসলে কোন অভিযোগ না বরং নবীজি (সা) যা করেছেন সেটি সম্পূর্ণ সঠিক এখানে নাস্তিক ধর্মে বিশ্বাসীদেরও কোন আপত্তি থাকার কথা না । আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
পরিশেষে আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিঃ
এই অভিযোগ ক্যাবল তারাই করতে পারে যারা যৌনজীবনে অক্ষম ! এবং হ্যাঁ, নাস্তিক ধর্মের অনুসারীরা যৌনজীবনে অক্ষম । কারন একমাত্র অসুস্থ মানুষরাই বলতে পারে স্ত্রী কেন নিজ স্বামীর সাথে সহবাস করল !
0 Comments: