তিহাসে এমন প্রমাণ ও লিখিত দলিল রয়েছে যার ভিত্তিতে এটি প্রমাণ করা যায় যে কুতুব মিনার সনাতন ইমারত, বিষ্ণু স্তম্ভ বা ধ্রুব স্তম্ভ।
এম এস ভাটনগর এই স্তম্ভের মূল উৎস, নাম এবং সামগ্রিক ইতিহাস সম্পর্কে দুটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে, প্রচলিত সমস্ত তথ্যগুলি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে, যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে বা সাধারণত এটি সম্পর্কে কথিত হয়ে থাকে।
আরবীতে ‘কুতুব’ শব্দের অর্থ ‘অক্ষ’ বা ‘কেন্দ্রবিন্দু’। ‘কুতুব’ শব্দ আরবীতে মহাকাশ সংক্রান্ত গণনাতে বা জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহার করা হতো। সুতরাং, কুতুব মিনার যে জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত স্তম্ভ বা মিনার সেটা বলা যেতেই পারে। সুলতান যুগে এ নামটি উল্লিখিত হয়। পরে একই নামে আদালতের নথিপত্রেও এর উল্লেখ দেখা যায়। পরবর্তীকালে, এর নাম সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবকের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এবং মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে এটি কুতুবউদ্দিন আইবক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
প্রোফেসর এমএস ভাটনগর, গাজিয়াবাদ এই অনন্য ইমারতের ঐতিহাসিক সত্যতা সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং দিল্লির মুঘল রাজা এবং কিছু প্রত্নতাত্ত্বিকদের সমস্ত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, বিপরীত ব্যাখ্যা এবং ভুল তথ্যের পর্দাফাঁস করেন।
প্রথমেই দেখা যাক এই এই ‘মিনার’ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচলিত ইতিহাস কি বলছে? উত্তর হলো এটি একটি বিজয় স্তম্ভ। কাকে হারিয়ে কে জিতলেন? মোহাম্মদ ঘোরি রাই পিথোরা (পৃথ্বীরাজ) -কে পরাজিত করেছিলেন। যুদ্ধের ময়দান কোথায় ছিল? পানিপথের কাছে তরাইনে। তাহলে এই বিজয় স্তম্ভটি কেন দিল্লিতে তৈরি হয়েছিল? এর উত্তর প্রচলিত ইতিহাস আপনাকে দেবে এই বলে, ঘোরি বিজয় স্তম্ভ দিল্লিতে বানানো শুরু করেন কারণ দিল্লি নাকি তাঁর রাজধানী ছিল। তবে যারা ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন তাঁরা জানেন ঘোরি কখনই দিল্লিকে তাঁর রাজধানী বানাননি! কারণ ইতিহাস সাক্ষী তিনি ফিরে গিয়েছিলেন নিজের দেশে। তাঁর রাজধানী ছিল গজনী। তাহলে এতো বড় বিজয়ের উদযাপন করতে স্তম্ভ দিল্লিতে তৈরির কী কারণ ছিল?
●প্রচলিত_ইতিহাস_সম্পর্কে_যা_জানি_আমরা:--
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক এই মিনার তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচলিত ইতিহাস কি বলছে।
উত্তর হল এটি একটি বিজয়স্তম্ভ।
●১) তাহলে কাকে হারিয়ে কে জিতে ছিলেন ?
মোহাম্মদ ঘোরি রাই ,শ্রীমান পৃথ্বীরাজ চৌহান কে পরাজিত করেছিলেন।
●২) যুদ্ধের ময়দান কোথায় ছিল ??
পানিপথের কাছে তরাইন। এটা আমরা সকলেই জানি ।
●৩) তাহলে এই বিজয় স্তম্ভ দিল্লিতে তৈরি হয়েছিল কিভাবে ??
মোহাম্মদ ঘোরি , বিজয় স্তম্ভ দিল্লিতে বানানো শুরু করেন কারণ দিল্লি নাকি তার রাজধানী ছিল। তবে এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি যারা ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন তারা জানেন মোহাম্মদ ঘোরি কখনোই দিল্লিকে তার রাজধানী বানাননি ,কারণ ইতিহাস সাক্ষী তিনি ফিরে গিয়েছিলেন নিজের দেশে আর তার রাজধানী ছিল গজনী।
●৪) তাহলে এত বড় বিজয় উদযাপন করতে স্তম্ভ দিল্লিতে তৈরীর কারণ কি?
বিজয়স্তম্ভ যদি মোহাম্মদ ঘোরি শুরু করেন তবে এর নামকরণ তো হওয়া উচিত ছিল ঘোরি_মিনার, কুতুবমিনার নয় ।
●৫)তবে কেন একে কুতুবমিনার বলা হবে ??
প্রামাণ্য ইতিহাস রচয়িতা দের বক্তব্য কুতুবউদ্দিন আইবক নাকি এই বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন এবং তিনি যেহেতু মোহাম্মদ ঘোরির দাসানুদাস ছিলেন তাই তার মালিকের নামে নামকরণ করেছিলেন বিজয়স্তম্ভে।
●৬) যদি এই যুক্তি সঠিক হয় তবে তিনি কেন বিজয়স্তম্ভে জন্য দিল্লি কে বেছে নিয়েছিলেন ?
এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এর একটা খুব সোজা উত্তর আছে কুতুবউদ্দিন আইবক এর রাজধানী ছিল দিল্লিতে।
●৭) এখন প্রশ্ন হলো ঘোরির জীবদ্দশায় যদি এই মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় অর্থাৎ তখন তিনি তো জীবিত ছিলেন তাহলে তার দাসানুদাসের সাহস কিভাবে হয় যে মালিকের রাজধানী গজনী থেকে দিল্লিতে পরিবর্তন করার?
লক্ষণীয় বিষয় হলো মোহাম্মদ ঘোরি মারা যাওয়ার পরে কুতুবউদ্দিন আইবককে লাহোরের_সুলতান নির্বাচিত করা হয়। তিনি দিল্লীতে বসে রাজকার্য চালাতেন না কখনো।
এবং তিনি লাহোর থেকেই শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতেন আর শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান লাহোরেই।
লাহোর তার রাজধানীর হবার সত্বেও কেন তিনি দিল্লীতে বিজয় স্তম্ভ তৈরি করেছিলেন অনেকের মতে মিনারটি আসলে কোন বিজয় স্তম্ভ নয় বরং একটি মজিনা।
একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন আজান দেওয়ার জন্য মিনার থাকে এবং এই স্তম্ভ নাকি কুয়াত-উল-ইসলাম মসজিদের মজীনা।
তবে ভারতের সমসাময়িক ইতিহাসে কুয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ বলে কোন মসজিদের উল্লেখ নেই।
উনিশ শতকে এই কুতুবমিনার টার্মটি প্রথম কায়েম করেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান।
এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে ভারতীয় ইতিহাসে কুতুবমিনার এর মত কোন শব্দই তখনও অব্দি ছিলনা। সাম্প্রতিক সময়ে একটি অনুমানমূলক যুক্তি যে এই মিনারটি মুয়াজ্জিনের মিনার যদি তাই হয় তবে মসজিদের প্রাথমিক গুরুত্ব রয়েছে এবং মিনারের গুরুত্ব তত নয়।
দুর্ভাগ্যজনক যে এর নিকটবর্তী মসজিদ বর্তমানে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে তবে তারপরে মুয়াজ্জিনের মিনার কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই বাস্তব বিষয় হলো মসজিদ এবং মজিনা একটি সম্পূর্ণ মন ভরা গল্প।
তথাকথিত কুতুবমিনার এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জামে মসজিদ এবং মিনার নির্মাণকারী সমসাময়িক ব্যক্তি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।
কুতুবমিনার অনেক পুরনো একটি স্তম্ভ ।
●৮) তাহলে কুরআনের আয়াত কেন এর গায়ে খোদাই করা আছে ??
ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন মিনারের গায়ের খোদাই করা কুরআনের আয়াত গুলি হল হিন্দু নকশার সুন্দর চিত্রের উপরে জোর করে লেখা প্রাণহীন কয়েকটি ছত্র ।
অন্যান্য মসজিদের কুরআনের আয়াত এরকম নকশার ওপরে কখনোই খোদাই করা থাকে না।
●●জেনে_নিন_আসল_সত্যি:--
এখন প্রশ্ন হল এই মিনারটি আসলে কি।
◆১) হ্যাঁ এটি হলো ধ্রুবস্তম্ভ বা প্রাচীন হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের অন্যতম প্রধান পর্যবেক্ষণ স্তম্ভ।
হক_আই_ভিউ থেকে দেখলে এই স্তম্ভে চব্বিশটি (২৪) পাপড়ির পদ্মফুল দেখা যায় এর প্রত্যেকটি পাপড়ি আসলে দিনের ২৪ ঘন্টা পরিমাপের মাপকাঠি চিহ্ন।
২৪ টি পাপড়ি সহ পদ্ম ফুলের আকৃতির স্তম্ভ সম্পূর্ণরূপে একটি সনাতন ধারণা ।
এটি পশ্চিম এশিয়ার শুষ্ক অংশের দর্শনের ধারক চিহ্ন নয়, কারণ পদ্মফুল পৃথিবীর ওই অংশে জন্মায় না ।
যা তারা কখনো দেখেননি ,এ দেশে পদার্পণ করা মাত্রই সেই আকৃতির মিনার বানিয়ে ফেলবেন কল্পনা করাও কষ্টকর।
◆২) এই স্তম্ভের উলম্ব প্রজেকশন রেখাগুলি প্রতিটি তলের উপর দিয়ে সূক্ষ্ম কারিগরের মধ্য দিয়ে গিয়ে শীর্ষে যে এক সমান মাপের পাপড়িওয়ালা পদ্ম ফুল তৈরি করে তা খুবই সূক্ষ্ম কারিগরির পরিনাম ।
পদ্ম আকৃতির ধ্রুবস্তম্ভ যে অতীতের কোনো সাধারণ স্থপতি বানিয়েছে এটা ভাবতে গেলে অনেক সন্দেহের অবকাশ আছে।
◆৩) ধ্রুব স্তম্ভ কে মোহাম্মদ ঘোরি বা কুতুবউদ্দিন আইবক এর সৃষ্টি বলে চিন্তা করা যায় না ।
সুলতানরা হয়তো যার নাম স্তম্ভ তৈরিতে যুক্ত তার শিলালেখ ধ্বংস করে দেন ।
পাথর গুলিতে মানুষ বা প্রাণী গুলির আকার খোদিত ছিল তার উপরেই আরবিতে লিপি খোদিত যে হয়নি তারও কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই ।
প্রকৃতপক্ষে মিনার তৈরিতে সুলতানদের কোন হাত ছিল না কারণ এটি শুরু করার সময়কার কোন শিলালিপি বা কোনরকম চিহ্ন কিন্তু পাওয়া যায়নি।
কুতুব মিনার সম্পর্কে অনেক প্রমান রয়েছে যে এটি কুতুবুদ্দিনের ভারত ভূখণ্ড পদার্পণের বহু বছর আগেই ছিল ।
কুতুব মিনারের কাছের বসতির নাম মেহরৌলি।
এটি মিহির_আবেলি নামে একটি সংস্কৃত শব্দ।
এই শহর সম্পর্কে কথিত আছে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির ( যিনি বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন এর মধ্যে একজন অন্যতম রত্ন )এখানে থাকতেন । তাঁর সঙ্গে এই অঞ্চলে বাস করতেন তার সহকারি গণিতবিদ ও প্রযুক্তিবিদরাও ।
তারা এই তথাকথিত কুতুবমিনার কে জ্যোতির্বিদ্যার গণনা অধ্যায়নের জন্য ব্যবহার করতেন।
এই স্তম্ভের চারিপাশে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান গণনা করার রাশিচক্রে উৎসর্গীকৃত সাতাশটি (২৭) নক্ষত্রের জন্য মণ্ডপ বা গম্বুজযুক্ত ভবন ছিল। কুতুবুদ্দিনের সমসাময়িক ঐতিহাসিক বর্ণনাতে আছে তিনি এই সমস্ত মণ্ডপগুলি বা গম্বুজযুক্ত ভবনগুলি ধ্বংস করে দিয়েছেন, তবে কোথাও এটা লেখা ছিল না তিনি একটি মিনার তৈরি করেন ।
তথাকথিত কুতুব মিনার থেকে উত্তোলিত পাথরের এক পাশে ছিল হিন্দু মূর্তি অন্যদিকে আরবি অক্ষর বর্তমান। এই পাথরগুলি বর্তমানে মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।
এটি প্রমাণ করে যে আক্রমণকারীরা মন্দিরের দেওয়ালের মূর্তি ইত্যাদি নষ্ট করত এবং আরবিতে লিখিত সামনের অংশটি তৈরি করার জন্য প্রতিমার মুখের বা সম্মুখের অংশের পরিবর্তন করতো। অনেকগুলি কমপ্লেক্সের স্তম্ভ এবং দেওয়ালে সংস্কৃত বিবরণ কিন্তু এখনো আপনি কুতুব মিনারের গেলেই চোখে পড়বে।
কার্নিশে অনেক মূর্তি দেখা যায়, তবে নাক চোখ এবং সূক্ষ্ম কারুকার্য্য গুলি ভেঙে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
এটা চিন্তা করা কঠিন যে পূর্ববর্তী হিন্দু ভবন গুলির চারপাশে যথেষ্ট জায়গা ছিল এবং কুতুবউদ্দিন এসে সেখানে একটি মিনার তৈরি করেছিলেন স্তম্ভটির অলংকৃত শৈলীতে প্রমাণিত হয় যে এটি একটি সনাতন স্থাপত্য।
মুসলিম মিনার গুলির বহির্ভাগ সম্পূর্ণ সমতল হয়। যারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই মিনারটি মুসলিমদের আজান দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো ,তাদের এই তথ্য এজন্যই ব্যর্থ যে এত উঁচুতে উঠে আজান দিলে মিনারের নিচে দাঁড়িয়ে কেউ শুনতে পাবে না, আর সে সময় তো মাইক আবিষ্কার হয়নি ।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টাওয়ারের প্রবেশপথটি অন্য ইসলামিক স্থাপত্য পশ্চিমে নয় উত্তর দিকে ।
যখন ইসলামী ধর্ম তত্ত্ব এবং ঐতিহ্য মোতাবেক পশ্চিম দিকে গুরুত্ব রয়েছে।
প্রবেশপথের এক পাশে একটি পাথরের পদ্মফুল রয়েছে। মধ্যযুগীয় ইমারত গুলিতে পাথরের পদ্ম ফুল তৈরি করা একটি সনাতন ঐতিহ্য, আরবী রীতিতে কখনও ভবন নির্মাণের সময় এই জাতীয় ফুল তৈরি করা হতো না ।
মিনারের গায়ে খোদিত নমুনা গুলিতে বহু ভেজাল রয়েছে, পদ্ম কুঁড়ির মত সনাতন মোটিফের মাঝে আরবি মোটিফ ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২৪ সংখ্যাটি বৈদিক ঐতিহ্যে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এটি ৮ এর গুণফল।
■লৌহ_স্তম্ভ / গরুর_ধ্বজ:--
নিকটে অবস্থিত কখনো মরিচা না পড়া লোহার স্তম্ভের উপরে, সংস্কৃত ভাষায় ব্রাহ্মীলিপিতে খোদিত আছে বিষ্ণুর স্তম্ভটি বিষ্ণুপদ নামে একটি পাহাড়ের নির্মিত হয়েছিল।
এই বর্ণনা থেকে এটি পরিষ্কার যে মিনারটির মাঝখানে অবস্থিত মন্দিরে শুয়ে থাকা বিষ্ণুর মূর্তিটি মোহাম্মদ ঘোরি এবং তার দাসানুদাস কুতুবউদ্দিন আইবক ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।
মিনারটিতে সাতটি তলা ছিল যা এক সপ্তাহের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এখন টাওয়ার থেকে কেবল পাঁচটি তল রয়েছে ।
ষষ্ঠ তলা থেকে উপরের অংশ মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় এবং সংলগ্ন মাটিতে পুনরায় স্থাপন করা হয়।
লোহার স্তম্ভটিকে গরুর ধ্বজা গরুর স্তম্ভ বলা হত। এটি যে কোনো বিষ্ণু মন্দিরের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হতো।
এটি একদিকে ২৭ নক্ষত্রের মন্দিরগুলির ডিম্বাকৃতি চারপাশের অংশ ছিল ।
লাল পাথরের একটি বিশাল অলংকৃত দরজা নক্ষত্রমন্ডল নামে পরিচিত ছিল সুতরাং ঐতিহ্যগতভাবেই প্রধান ফটকটি আলয় দ্বার হিসাবে পরিচিত ছিল।
কানিংহামের মত ঐতিহাসিকরা সুলতান আলাউদ্দিন এর সঙ্গে এই দরজার নাম জুড়ে দেন যদিও আলাউদ্দিন স্বয়ং এরকম কোনো দাবি করেননি।
প্রশ্ন হল আলাউদ্দিনের সময় কালে এই স্থানটি পুরোপুরি ধ্বংস স্তুপে রূপান্তরিত হয়েছিল এমন পরিস্থিতিতে আলাউদ্দিনকে কেন এমন কোন জায়গার অলংকৃত দরজা তৈরি করবেন ?এটিকে মুয়াজ্জিনের মিনার বলাও একটি নির্জলা মিথ্যা কথা ।
কোনও মোয়াজ্জিন এমনকি একদিনের জন্যেও কি ৩৬৫ টি সংকীর্ণ এবং অন্ধকার সিঁড়ি ওঠার সাহস পাবে !!
স্তম্ভের পরিধি যথাযথভাবে ২৪ মোড়ের সমন্বয়ে গঠিত এবং এর মধ্যে বৃত্তের আকার এবং ত্রিভুজের আকার পর্যায়ক্রমে আসে।
এতে আলো আসার জন্য সাতাশটি গর্ত রয়েছে। এই সাতাশটি যদি সাতাশটি নক্ষত্রমন্ডল এর সঙ্গে যুক্ত বলে বিবেচনা করা হয় তবে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে স্তম্ভটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য পর্যবেক্ষণ স্তম্ভ ছিল।
তথাকথিত কুতুব মিনার এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জাম-এ-মসজিদ এবং মিনার নির্মাণকারী সমসাময়িক ব্যক্তি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কুতুব মিনার অনেক পুরনো একটি স্তম্ভ। তাহলে কুরআনের আয়াত কেন এর গায়ে খোদাই করা আছে, এ প্রশ্ন ওটা স্বাভাবিক।
ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, মিনারের গায়ে খোদাই করা কুরআনের আয়াতগুলি হ’ ল হিন্দু নকশার সুন্দর চিত্রবল্লরীর নকশার উপরে জোর করে লেখা প্রাণহীন কয়েকটি ছত্র। অন্যান্য মসজিদে কুর আনের আয়াত এরকম নকশার উপর খোদাই করা থাকে না।
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে এই মিনারটি আসলে কি? এটি হলো ধ্রুব স্তম্ভ বা প্রাচীন হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের অন্যতম প্রধান পর্যবেক্ষণ স্তম্ভ। ‘হক আই ভিউ’ থেকে দেখলে এই স্তম্ভে ২৪ পাপড়ির পদ্ম ফুল দেখা যায়। এর প্রত্যেক পাপড়ি আসলে দিনের ২৪ ঘন্টা পরিমাপের মাপকাঠি চিহ্ন। চব্বিশটি পাপড়ি সহ পদ্ম ফুলের আকৃতির স্তম্ভ সম্পূর্ণরূপে একটি সনাতন ধারণা। এটি পশ্চিম এশিয়ার শুষ্ক অংশের দর্শনের ধারক চিহ্ন নয়। কারণ পদ্মফুল পৃথিবীর ঐ অংশে জন্মায় না! যা তাঁরা কখনো দেখেননি, এদেশে পদার্পণ মাত্রই সেই আকৃতির মিনার বানিয়ে ফেলবেন এ তো কল্পনা করাও কষ্টকর।
এই স্তম্ভের উল্লম্ব প্রজেকশন রেখাগুলি, প্রতিটি তলের উপর দিয়ে সূক্ষ্ম কারিগরীর মধ্যে দিয়ে গিয়ে শীর্ষে যে এক সমান মাপের পাপড়িওয়ালা পদ্ম ফুল তৈরি করে, তা খুবই সূক্ষ্ম কারিগরির পরিণাম। পদ্ম আকৃতির ধ্রুব স্তম্ভ যে অতীতের কোনও সাধারণ স্থপতি বানিয়েছে, এটা ভাবতে গেলে অনেক সন্দেহের অবকাশ আছে। ধ্রুব স্তম্ভকে মোহাম্মদ ঘোরি বা কুতুবুদ্দিন আইবকের সৃষ্টি বলে চিন্তা করতে অনেক সন্দেহের কারণ আছে। সুলতানরা হয়তো যার নাম এই স্তম্ভ তৈরিতে যুক্ত তার শিলালেখ ধ্বংস করে দেন, পাথরগুলিতে মানুষ বা প্রাণীগুলির আকার খোদিত ছিলো, তার উপরই আরবিতে লিপি খোদিত যে হয় নি, তারও কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে, মিনার তৈরিতে সুলতানদের কোনো হাত ছিলো? কারণ এটি শুরু করার সময়কার কোনো শিলালিপি বা কোনোরকম চিহ্ন কিন্তু পাওয়া যায় নি।
কুতুব মিনার সম্পর্কে অনেক প্রমাণ রয়েছে যে এটি কুতুবুদ্দিনের ভারত ভূখন্ডে পদার্পণের বহু বছর পূর্ব থেকেই ছিলো। কুতুব মিনারের কাছের বসতির নাম মেহরৌলি। এটি মিহির-আবেলি নামে একটি সংস্কৃত শব্দ। এই শহর সম্পর্কে কথিত আছে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ মিহির (যিনি বিক্রমাদিত্যের দরবারে নবরত্নের একজন) এখানে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে এই অঞ্চলে বাস করতেন তাঁর সহকারী, গণিতবিদ ও প্রযুক্তিবিদরাও। তারা এই তথাকথিত কুতুব মিনারকে জ্যোতির্বিদ্যার গণনা, অধ্যয়নের জন্য ব্যবহার করতেন।
এই স্তম্ভের চারপাশে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান গণনা করার রাশিচক্রকে উৎসর্গীকৃত ২৭ টি নক্ষত্রের জন্য মন্ডপ বা গম্বুজযুক্ত ভবন ছিল। কুতুবুদ্দিনের সমসাময়িক ঐতিহাসিক বর্ণনাতে আছে তিনি এই সমস্ত মণ্ডপগুলি বা গম্বুজযুক্ত ভবনগুলি ধ্বংস করে দিয়েছেন, তবে কোথাও এটা লেখা ছিলো না তিনি একটি মিনার তৈরি করেন। তথাকথিত কুতুব মিনার থেকে উত্তোলিত পাথরের একপাশে ছিল হিন্দু মূর্তি, অন্যদিকে আরবি অক্ষর বর্তমান। এই পাথরগুলি বর্তমানে মিউজিয়ামে রক্ষিত
এটি প্রমাণ করে যে আক্রমণকারীরা মন্দিরের দেওয়ালের মূর্তি ইত্যাদি নষ্ট করতো এবং আরবীতে লিখিত সামনের অংশটি তৈরি করার জন্য প্রতিমার মুখের বা সম্মুখ অংশটির পরিবর্তন করতো। অনেকগুলি কমপ্লেক্সের স্তম্ভ এবং দেয়ালে সংস্কৃত বিবরণ এখনও পড়া যায়। কার্নিসে অনেক মূর্তি দেখা যায় তবে নাক চোখ ও সূক্ষ্ম কারুকাজ ভেঙে নষ্ট করা হয়েছে।
এটা চিন্তা করা কঠিন যে পূর্ববর্তী হিন্দু ভবনগুলির চারপাশে যথেষ্ট জায়গা ছিল এবং কুতুবুদ্দিন এসে সেখানে একটি মিনার তৈরি করেছিলেন। স্তম্ভটির অলঙ্কৃত শৈলীতে প্রমাণিত হয় যে এটি একটি সনাতন স্থাপত্য। মুসলিম মিনারগুলির বহির্ভাগ সম্পূর্ণ সমতল হয়। যারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই মিনারটি মুসলিমদের আজানের জন্য ব্যবহৃত হতো, তাঁদের তত্ত্ব এজন্য ব্যর্থ যে এতো উঁচুতে উঠে আজান দিলে মিনারের নীচে দাঁড়িয়েই কেউ শুনতে পাবে না, সেসময় কিন্তু মাইকও আবিষ্কার হয় নি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ ল টাওয়ারের প্রবেশ পথটি অন্য ইসলামিক স্থাপত্যের মতো পশ্চিমে নয়, উত্তর দিকে, যখন ইসলামী ধর্মতত্ত্ব এবং ঐতিহ্য মোতাবেক পশ্চিম দিকের গুরুত্ব রয়েছে।
প্রবেশ পথের একপাশে একটি পাথরের পদ্ম ফুল রয়েছে। মধ্যযুগীয় ইমারতগুলিতে পাথরের ফুল তৈরি করা একটি সনাতন ঐতিহ্য। আরবী রীতিতে কখনও ভবন নির্মাণের সময় এ জাতীয় ফুল তৈরি করা হতো না। মিনারের গায়ে খোদিত নমুনাগুলিতে বহু ভেজাল রয়েছে, পদ্ম কুঁড়ির মতো সনাতন মোটিফের মাঝে আরবি মোটিফ ছড়িয়ে পড়েছে।
নিকটে অবস্থিত কখনো মরিচা না পড়া লোহার স্তম্ভের উপরে, সংস্কৃত ভাষায় ব্রাহ্মী লিপিতে খোদিত আছে বিষ্ণুর এই স্তম্ভটি বিষ্ণুপদ গিরি নামে একটি পাহাড়ে নির্মিত হয়েছিল। এই বর্ণনা থেকে এটি পরিষ্কার যে মিনারটির মাঝখানে অবস্থিত মন্দিরে শুয়ে থাকা বিষ্ণুর মূর্তিটি মোহাম্মদ ঘোরি এবং তাঁর দাস কুতুবউদ্দিন হয়তো ধ্বংস করেছিলেন।
লোহার স্তম্ভটিকে গরুড় ধ্বজ বা গরুড় স্তম্ভ বলা হত। এটি বিষ্ণুর মন্দিরের প্রহরী স্তম্ভ হিসাবে বিবেচিত হত। একদিকে ২৭ নক্ষত্রের মন্দিরগুলির ডিম্বাকৃতির চারপাশের অংশ ছিল। লাল পাথরের একটি বিশাল, অলঙ্কৃত দরজা নক্ষত্রমণ্ডল নামে পরিচিত ছিলো। সুতরাং ঐতিহ্যগতভাবে, প্রধান ফটকটি আলয় দ্বার হিসাবে পরিচিত ছিল। কানিংহামের মতো ঐতিহাসিকরা সুলতান আলাউদ্দিনের সঙ্গে এই দরজার নাম জুড়ে দেন। যদিও আলাউদ্দিন স্বয়ং এরকম কোনও দাবি করেননি।মিনারটিতে সাতটি তলা ছিল যা এক সপ্তাহের প্রতিনিধিত্ব করে, তবে এখন টাওয়ারটিতে কেবল পাঁচটি তলা রয়েছে। ষষ্ঠ তলা থেকে উপরের অংশ মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় এবং সংলগ্ন মাটিতে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছিল।
প্রশ্নটি হ’ ল আলাউদ্দিনের সময়কালে এই স্থানটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে রূপান্তরিত হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে আলাউদ্দিনকে কেন এমন কোনও জায়গায় অলঙ্কৃত দরজা তৈরি করবেন? এটিকে মুয়াজ্জিনের মিনার বলাও একটি নির্জলা মিথ্যা। কোনও মুয়াজ্জিন এমনকি একদিনের জন্যও কি ৩৬৫ টি সংকীর্ণ এবং অন্ধকার সিঁড়ি ওঠার সাহস পাবে?
স্তম্ভের পরিধি যথাযথভাবে ২৪ মোড়ের সমন্বয়ে গঠিত এবং এর মধ্যে বৃত্তের আকার এবং ত্রিভুজের আকার পর্যায়ক্রমে আসে। এতে আলো আসার জন্য ২৭ টি গর্ত রয়েছে। এই জিনিসটি যদি ২৭ টি নক্ষত্রমণ্ডলগুলির সঙ্গে যুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়, তবে কোনও সন্দেহ হয়তো থাকে না যে স্তম্ভটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য পর্যবেক্ষণ স্তম্ভ ছিল।
এইরকম আরো অনেক সনাতনী স্থাপত্য আছে যেগুলো গায়ের জোরে ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাস আসলে গৌরবের ইতিহাস, যাকে নির্দিষ্ঠ কিছু রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনৈতিক উদ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে বিকৃত করেছে, এবং সেই আসল তথ্য কখনোই সামনে আনতে দেয়নি।
ক্রমান্বয়ে আমি সেই সমস্ত তথ্য আপনাদের সামনে তুলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
আপনারা সবাই শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন আসল সত্য।
0 Comments: