All Stories

২০০০ সালের প্রথমদিকে জীবনের প্রথম পথ চলা কীভাবে শুরু হয় এই গবেষণার প্রধান দুইটা তত্ত্ব প্রচলিত ছিল। আরএনএ ঘরানার বিজ্ঞানীগণ মনে করতেন প্রাণের বিকাশ হয়েছিল নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এমন অণুজীব থেকে। ইতিমধ্যে যেসব বিজ্ঞানীগণ “বিপাক ক্রিয়া” প্রথম শুরু হয়েছিল বলে মনে করতেন তারা গভীর সমুদ্রের আগ্নেয়গিরির গরম তরল প্রবাহের জ্বালামুখে কীভাবে প্রাণের বিকাশ হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ হাজির করলেন। যাইহোক চলমান এই বিতর্কের মধ্যেই আমাদের সামনে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে প্রাণের উৎস গবেষণার তৃতীয় আর একটা মতবাদ।

আমরা জানি পৃথিবীতে জীবিত সব প্রাণই কোষ দ্বারা গঠিত। প্রতিটি কোষই মূলত নরম তুলতুলে ছিদ্রযুক্ত গোলাকার সদৃশ বস্তু যার চারিধার অমসৃণ পর্দার আবরণে ঘেরা। কোষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল কোষ জীবনের সব প্রয়োজনীয় উপাদান একত্রে ধরে রাখে। যদি কোষের দেয়াল কোন কারণে জীর্ণ হয়ে ধ্বসে যায় তাহলে কোষের মূল উপাদান বেরিয়ে পড়ে এবং কোষের মৃত্যু ঘটে। ঠিক যেমন যদি কোন মানুষের উদর থেকে নাড়ীভুঁড়ি কেটে ফেলে দিই তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সে আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না।

পৃথিবীর আদিতে প্রচণ্ড তাপ আর ঘূর্ণিপাকে কিছু রাসায়নিক উপাদান একত্রিত হয়ে অবিকশিত কোষ গঠিত হয়। কোষের বাইরের পর্দার আবরণ এতই প্রয়োজনীয় যে প্রাণের উৎস সন্ধানী কিছু গবেষক যুক্তি দেখালেন যে, কোষ সৃষ্টির আগেই কোষের আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করতেন ‘যেভাবে জীবনের শুরু’ বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচিত “জীনতত্ত্ব প্রথম” এবং চতুর্থ অধ্যায়ের “বিপাক ক্রিয়া প্রথম” ধারণাগুলো বিভ্রান্তিকর। তাদের বিকল্প মতবাদটি ছিল “কোষের কাঠামো পৃথকীকরণ প্রথম” ঘটেছিল। এই মতবাদের পুরোধা ব্যক্তি হলেন ইটালির রোমে অবস্থিত রোমা ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ের লুইগি লুইজি।

লুইজির মতবাদের স্বপক্ষে কারণ যথেষ্ট সহজ সরল হলেও ব্যাখ্যা করার জন্য এত সহজ ছিল না। কীভাবে আপনি প্রমাণ করবেন “বিপাক ক্রিয়া” বা “স্বয়ম্ভূ আরএনএ” মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব যদি একটা বিশেষ স্থানে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো যায়। অন্যথায় অণুজীব থেকে প্রাণ সঞ্চার হবে কোথায়?

যদি আপনি উপরের যুক্তি স্বীকার করে নেন তাহলে প্রাণ সৃষ্টির একটাই উপায় আছে সেটা হল, যেকোনভাবে আদি পৃথিবীর উত্তপ্ত ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেও প্রাণ সৃষ্টির কিছু কাঁচামাল একত্রিত হয়ে অবিকশিত কোষ বা প্রাথমিক কোষের জন্ম নেয়া। প্রতিকূলতা পেরিয়ে গবেষণাগারে এই তত্ত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণাগারেই একটা সরল এককোষী জীবন্ত কোষ বানানো সম্ভব করেছেন।

কোষের জন্ম
All living things are made up of cells (Credit: Cultura Creative RF/Alamy)

লুইজি যেন তার সব চিন্তার সাথে যোগসূত্র স্থাপনে ফিরে গেলেন অ্যালেক্সান্ডার ওপারিনের কাছে এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রাণের সৃষ্টি রহস্য গবেষণার ঊষালগ্নে। অ্যালেক্সান্ডার ওপারিনের গবেষণার বিষয় ইতিমধ্যে প্রথম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। ওপারিন গুরুত্বের সাথে দেখালেন কোয়াসারভেট থেকে উৎসারিত কিছু উষ্ণ রাসায়নিক তরলের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে যার কেন্দ্রে আছে কিছু অবিকশিত কোষের মত বস্তু। তিনি দাবী করেন কোয়াসারভেটগুলোই আসলে কোষের প্রথম নমুনা।

সঠিক উপাদান থাকার পরেও গবেষণাগারে কোষের প্রাথমিক নমুনা সৃষ্টি খুব কঠিন কাজ। যেকোনো চর্বিযুক্ত বা তৈলাক্ত বস্তু আছে এমন পানিতে ব্লব বা ফিল্ম সৃষ্টি হয় আর এইসব রাসায়নিক উপাদান একসাথে লিপিড নামে পরিচিত। আলোচনার এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীগণ ধারণা পোষণ করতে থাকেন লিপিড থেকেই জীবনের প্রথম সূচনা। আমরা প্রাণের সৃষ্টি গবেষণায় বিজ্ঞানের এই মতবাদকে ‘লিপিড ঘরানা’ বলতে পারি।

কিন্তু শুধুই রাসায়নিক উষ্ণ ঘন তরলের ধারা সৃষ্টি করলেই সব সমাধা হয়ে গেল এমন নয় বিষয়টা। বিগত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করেও লুইজি এমনকিছু বানাতে পারলেন না যা দিয়ে তিনি বিজ্ঞানীদের সম্মতি অর্জনের জন্য জীবন-সদৃশ কিছু উপস্থাপন করা যায়। এখানে উল্লেখ্য উষ্ণ রাসায়নিক পানির প্রবাহের স্থিতিশীলতা থাকতে হবে এবং সেই প্রবাহ থেকে বিভাজিত হয়ে আর একটা ধারা সৃষ্টি করার সক্ষমতা থাকতে হবে। সেই ধারার মধ্যে কী কী উপাদান পরিবাহিত হচ্ছে তার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এতকিছু করতে হবে কিন্তু আধুনিক একটা কোষের পরিণত প্রোটিন ব্যবহার না করেই।

কোষের জন্ম
Somehow cells formed (Credit: Christian Jegou/Publiphoto Diffusion/Science Photo Library)

এরপরে ১৯৯৪ সালে লুইজি এক সাহসী প্রস্তাবনা রাখলেন। তিনি বলেন প্রাথমিক পর্যায়ের কোষে অবশ্যই আরএনএ থাকতে হবে। তিনি আরও দাবী করেন এই আরএনএ অবশ্যই নিজের আর একটা প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে সম্ভব। লুইজির প্রস্তাবনা বিজ্ঞানের নতুন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিলো। তার মানে হল, প্রাণ বিকাশের প্রথম প্রস্তাবনায় আমরা আসলে প্রাণের সৃষ্টি রহস্য গবেষণার বিভিন্ন তত্ত্বের মিলন মেলায় মিলিত হয়েছি এবং দীর্ঘ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি। লুইজির প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি আমলে নিলে, প্রাণ বিকাশের প্রথম প্রস্তাবনা কম্পার্টমেন্টালাইজেশন তত্ত্ব বা কোষের বিভাজন তত্ত্বকে বাতিল করে দিতে হয়। কিন্তু লুইজির কাছেও উপযুক্ত কারণ ছিল।

ভিতরে জীন বিহীন চারপাশে আবৃত কোষ খুব বেশী কিছু করতে পারে না। হয়ত কোষ বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তারা নিজের বংশগতির কোন তথ্য, উপাত্ত পরবর্তী কোষের মাঝে সঞ্চার করতে পারবে না। কোষ কেবল তখনি বিবর্তিত হতে শুরু করবে এবং ক্রমাগত জটিলতর হয়ে উঠতে পারবে যদি কোষের অভ্যন্তরে জীন থাকে।

এই তত্ত্ব খুব দ্রুত জ্যাক সোসটাকের সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। আমরা ইতিমধ্যে তৃতীয় অধ্যায়ে সোসটাকের আরএনএ নিয়ে গবেষণা আলোচনা তুলে ধরেছি। যখন লুইজি ছিলেন কম্পার্টমেন্টালাইজেশন তত্ত্বের প্রথম দিকের সমর্থক ঠিক তখন সোসটাক সমর্থন করতেন জীনতত্ত্বকে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন কোন মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত ছিল না। আমরা প্রাণের সৃষ্টি রহস্য গবেষণার বিভিন্ন তত্ত্বের মিলন মেলায় মিলিত হয়েছি এবং দীর্ঘ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি এবং সোসটাকের গবেষণার সূত্র ধরে নির্ধারণ করছে চাচ্ছি কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মোটের উপর আমরা বুঝতে পারলাম দুই গবেষণাতেই কোষের উপস্থিতি আছে। আমরা একটা সম্মতিতে এলাম যে প্রাণের উৎস সন্ধানে কম্পার্টমেন্টালাইজেশন বা বিভাজন তত্ত্ব এবং জীনতত্ত্ব উভয় গবেষণাতেই কোষ খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

কোষের জন্ম
Almost all life is single-celled (Credit: Science Photo Library/Alamy)

সোসটাকের তত্ত্ব প্রাণের উৎস গবেষণার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী এবং সোসটাক অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন তার গবেষণা তত্ত্বে অর্থ বিনিয়োগ করবেন যেখানে তার আগ্রহ। কারণ হিসেবে বললেন, “এমন একটা তত্ত্বের সমর্থনে তত্ত্বকে গবেষণার বাইরে রাখতে পারি না।” তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন প্রাথমিক কোষ দিয়ে গবেষণা শুরু করবেন।

দুই বছর পরে সোসটাক এবং তার দুইজন সহকর্মী ২০০১ সালে বড় ধরণের সাফল্যের সুসংবাদ দিলেন। বিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত ‘নেচার’ জার্নালে তারা যুক্তি দেখিয়ে লিখলেন প্রকৃতিতে প্রাপ্ত আপাত বিচ্ছিন্ন উপাদান থেকে সহজেই প্রাথমিক কোষ সৃষ্টি করা সম্ভব। চর্বিযুক্ত তেলতেলে বস্তুর সংস্পর্শে আরএনএ নিজের নিজের প্রতিলিপি জন্ম দিতে পারে।

কোষের জন্ম
Vesicles are simple containers made of lipids (Credit: Alfred Pasieka/Science Photo Library)

সোসটাক এবং তার গবেষক-দল কোষের ভেসিকল (কোষের তরল পূর্ণধারক) নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ভেসিকল দেখতে অনেকটা সর্পিল ঘন তরলের আকার যার গভীরে এবং বাইরের আবরণে দুইটা ফ্যাটি এসিডের স্তর আছে। ভেসিকলের উৎপাদন ত্বরান্বিত করার উপায় খুঁজতে গিয়ে সোসটাকের গবেষক-দল এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের জটিল যৌগের কাদার মত দেখতে থকথকে একটা বস্তুকে বিক্রিয়ার কাজে লাগিয়ে দিলেন এবং মনে করলেন এই নিরীক্ষা প্রাণ গবেষণার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এই যৌগের মিশ্রণ গবেষণা কাজে যোগ করার পরেই ভেসিকলের উৎপাদন ১০০ গুণ ত্বরান্বিত হয়ে গেল। কাদার মত বস্তুর পৃষ্ঠতল ভেসিকল উৎপাদনে অনুঘটকের কাজ করে যে কাজটা সচারচার এনজাইম করে থাকে।

তদুপরি, ভেসিকল এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের জটিল যৌগের কাদার কণা এবং কাদার পৃষ্ঠতল থেকে আরএনএ গ্রহণ করতে পারে। প্রথমদিকের এইসব কোষ এখন বহন করছে জীন এবং অনুঘটক আর এতকিছু ঘটে যাচ্ছে একটা সরল কাঠামোর মধ্যে। তবে প্রাণ গবেষণার এই পর্যায়ে এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের জটিল যৌগের কাদা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত কিন্তু হঠাৎ করে নেয়া হয়নি। বিগত কয়েক দশক ধরে চলমান গবেষণার পরম্পরা গবেষকদলকে এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং তারা অনুমান করেছিলেন প্রাণ সৃষ্টিতে এই যৌগ হয়ত খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কোষের জন্ম
This lump of clay is mostly montmorillonite (Credit: Susan E. Degginger/Alamy)

এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ খুব সহজলভ্য। এখনকার সময়ে আমাদের ব্যবহার্য নিত্যদিনের জিনিসপত্রে এটা হরহামেশা ব্যবহৃত হয় এমনকি বিড়ালের বিছানা বানাতেও এটার ব্যবহার দেখা যায়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত ছাইয়ের ধুলো পৃথিবীর আবহাওয়াতে মিশে এই যৌগ সৃষ্টি হয়। যেহেতু পৃথিবীর শৈশবে অনেক আগ্নেয়গিরি ছিল সেহেতু এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ ছিল পরিমাণে বিপুল।

ফিরে যাই ১৯৮৬ সালে, তখন আমেরিকান রসায়নবিদ জেমস ফেরিস দেখালেন এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ আসলে অণুঘটক যা জৈব-কণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আরও পরে তিনি আবিষ্কার করেন এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ আরএনএ সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে। এই দুইটি কাজের উপর ভিত্তি করে জেমস ফেরিস ধারণা করেন গড়পড়তা দেখতে কাদার মত এই যৌগটি আসলে প্রাণ সৃষ্টির উপাদান। জ্যাক সোসটাক ফেরিসের ধারণাকে গ্রহণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন এবং এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ ব্যবহার করে প্রথম কোষ সৃষ্টি করলেন। সোসটাক যুক্তি দেখালেন, আদি-কোষ যদি বেড়ে উঠতে পারে তাহলে সেটা বিভাজিতও হতে পারে। এক বছর পরে সোসটাকের গবেষক-দল প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, প্রথমদিকের কোষ নিজেদের মত করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। এমনকি আদি-কোষে আরএনএ সংরক্ষিত থাকে এবং সময়ের হাত ধরে কোষের দেয়ালের বাইরের পাশ অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। মনে হয় যেন আদি-কোষ একটা ফুলে ওঠা পাকস্থলী এবং যেকোনো সময় সশব্দে ফেটে পড়বে। ফেটে পড়া রোধ করতে গিয়ে কোষ অধিকমাত্রায় ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করে এবং তাদের সমন্বয়ে নিজের দেয়ালকে আরও মজবুত করে তোলে ফলে কোষ ফুলে আকারে আর একটু বড় হয় এবং ফেটে পড়ার আশংকা দূর হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আদি-কোষ যে কোষের আরএনএ কম তার থেকে ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করছে ফলে সেই কোষগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। তার মানে এ থেকে বোঝা যায় আদি-কোষ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল এবং যে কোষের আরএনএ বেশী স্বাভাবিকভাবে সে কোষ জিতে যায়। এই অনুসিদ্ধান্ত আমাদের মনে আরও বিস্ময় জাগায়। যদি আদি-কোষ বেড়ে ওঠতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের অনুরূপ কোষ সৃষ্টি করতে পারে তবে কি সোসটাকের গবেষণালব্ধ প্রাথমিক কোষ নিজের প্রতিলিপি বানাতে পারবে?

কোষের জন্ম
Cells reproduce by dividing into two (Credit: Science Photo Library/Alamy)


সোসটাকের প্রথম পরীক্ষায় দেখানো হয়েছে কীভাবে আদি-কোষ বিভাজিত হয়। আদি-কোষকে দুমড়ে মুচড়ে যদি ছোট ছিদ্র পথের সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে সেখান থেকে আদি-কোষ ভেঙে ছড়িয়ে পড়বে। আদি-কোষ বেড়ে ওঠে, তাদের আকার পরিবর্তিত হয়, আয়তনে প্রসারিত হয় এবং তাদের শরীরে রশির মত লম্বা পাতলা প্রান্ত দেখা যায়।

এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া একেবারে নির্ভেজাল কারণ এখানে কোষের কোন যান্ত্রিক ক্রিয়াকর্ম জড়িত নাই। এখানে শুধু চাপ প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু এটা কোন সমাধান নয় কারণ নিজেই নিজের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় আদি-কোষ তার নিজস্ব কিছু উপাদান হারায়। এছাড়াও আদি-কোষ তখনই বিভাজিত হতে পারে যখন ছোট ছিদ্রপথে বল প্রয়োগে প্রবেশ করানো হয়।

ভেসিকলকে বিভাজিত করার বিভিন্ন উপায় আছে যেমন কোষকে পানির প্রবল স্রোত যুক্ত করতে পারলে কোষে নতুন শক্তির সৃষ্টি হয়। আদি-কোষের অভ্যন্তরীণ উপাদান বের হতে না দিয়ে কোষকে বিভাজন করার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করা হয়।

অবশেষে ২০০৯ সালে জ্যাক সোসটাক এবং তার সহযোগী ছাত্র টিং ঝু একটা সমাধান বের করতে সক্ষম হন। তারা সামান্য একটু জটিল আদি-কোষ সৃষ্টি করলেন যার চতুর্দিকে একাধিক দেয়াল যেন অনেকটা পেয়াজের মত। সরল আদি-কোষের গঠনে জটিলতা থাকলেও সহজেই তাদেরকে সৃষ্টি করা সম্ভব। টিং ঝু যখন আদি-কোষের সাথে আরও বেশী ফ্যাটি এসিড যোগ করলেন তখন আদি-কোষের আকার পরিবর্তিত হয়ে গেল, সুতার মত দেখতে প্রান্তগুলো আরও লম্বা হয়ে গেল। আদি-কোষের আকার যথেষ্ট বড় হয়ে গেলে অল্প চাপে আদি-কোষ ভেঙে বেশকিছু ছোট ছোট আদি-কোষে রূপান্তরিত হল। পিতৃ-কোষের কোন আরএনএ কিন্তু হারিয়ে গেল না বরং প্রতিটি ক্ষুদ্র আদি-কোষ তার পিতৃ-কোষের আরএনএ বহন করতে লাগল। তাছাড়া, আদি-কোষ নতুন কোষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া পৌনঃপুনিক ভাবে চালিয়ে যেতে পারে। নতুন আদি-কোষ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে নিজেই আবার নতুন কোষে বিভাজিত হতে শুরু করে।

পরবর্তী পরীক্ষায় ঝু এবং সোসটাক আদি-কোষ ভেঙে নতুন কোষ জন্ম দেয়ার ভিন্ন ভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে পেরেছিলেন। গবেষণার এই পর্যায়ে মনে হচ্ছিল অবশেষে সমস্যার বুঝি সমাধান পাওয়া গেল।

যাইহোক আদি-কোষ কিন্তু তখন যথেষ্ট কার্যকরী ছিল না। লুইজি ভেবেছিলেন, আদি-কোষ আরএনএ প্রতিলিপি সৃষ্টির ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করবে কিন্তু যতদূর বোঝা যায় আদি-কোষে আরএনএ শুধু অলস বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ করে না।

সত্যিকার অর্থেই যদি আদি-কোষ থেকে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের বিকাশ প্রমাণ করতে হয় তাহলে সোসটাকের দেখাতে হবে আরএনএ কীভাবে কোষের অভ্যন্তরে নিজেই নিজের প্রতিলিপি জন্ম দেয়। কিন্তু এই তথ্যকে তত্ত্ব হিসেবে প্রমাণ করে দেখানো এত সহজ নয় কারণ দশকব্যাপী পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পরেও কোন বিজ্ঞানী আরএনএ উৎপাদন করে দেখাতে পারেন নি যা নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা বিশদ আলোচনা করে ফেলেছি। এই সমস্যার কারণেই প্রাণ বিকাশে আরএনএ তত্ত্ব ঘরানার গবেষণার কাজ প্রথমদিকে ব্যাহত হচ্ছিল এবং তখন পর্যন্ত কেউ এই সমস্যার সমাধান বের করতে পারেনি। সুতরাং সোসটাক লেসলি ওরগেলের গবেষণার ফলাফল ও লিখিত কাগজ পুনরায় পড়তে শুরু করেন। আমরা জানি লেসলি ওরগেল দীর্ঘদিন আরএনএ তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। পুরনো ধুলো পড়া কাগজের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল প্রাণের উৎস গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র।

কোষের জন্ম
So The first cells had to host the chemistry of life (Credit: Science Photo Library/Alamy)

ওরগেল ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আরএনএ’র সুতোর মত প্রান্তগুলো কীভাবে নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করে সেই গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ওরগেলের গবেষণার সারাংশ ছিল খুবই সহজ সরল এবং সাধারণ। আরএনএ’র সুতোর মত একপ্রান্ত থেকে আলগা নিউক্লিওটাইড তুলে নেয়া হল এবং তখন নিউক্লিওটাইড জড়ো করে আরএনএ’র প্রথম সুতোর মত অবিকল আর একটা প্রান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরি আরএনএ’র একটা সুতোর মত প্রান্তে CGC লিখিত আছে এবং সেখানেই উৎপাদিত হয়েছে অনুরূপ আরেকটা সুতোর মত প্রান্ত যেটা পড়তে GCG এর মত মনে হয়। সম্ভবত কেউ যদি এই প্রক্রিয়া দুইবার করে তবে প্রকৃত CGC পাওয়া যাবে।

ওরগেল বুঝতে পারলেন যে, কোন অনুকূল পরিবেশে আরএনএ’র সুতোর মত প্রান্ত একই প্রক্রিয়ায় এনজাইমের সাহায্য ছাড়াই আরএনএ’র প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে। সম্ভবত এভাবেই প্রথম প্রাণ আরএনএ থেকে জীন সংগ্রহ করত। ১৯৮৭ সালে ওরগেল আবিষ্কার করলেন, আরএনএ’র ১৪ লম্বা নিউক্লিওটাইড সুতোর প্রান্ত অনুরূপ ১৪ নিউক্লিওটাইড লম্বা প্রান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম। তিনি এর থেকে বেশী লম্বা আরএনএ’র প্রান্ত বানাতে পারেন নি কিন্তু সোসটাকের চিন্তার সলতেই আগুন উস্কে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সোসটাকের ছাত্রী ক্যাটারজিনা অ্যাডামালা আদি-কোষ সৃষ্টির জন্য পুনরায় প্রবৃত্ত হলেন। তারা যে আদি-কোষ সৃষ্টি করলেন সেগুলো আগের কোষের গায়ের বাইরের সংলগ্ন মলিকিউল থেকে জীন বহন করে।

তারা বুঝতে পারলেন, এই বিক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা এখানেই যে, ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি আদি-কোষকে ধ্বংস করে। সব সমস্যারই সমাধান আছে এবং এই সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হল সাইট্রিক এসিড। লেবু, কমলা জাতীয় ফলে প্রচুর সাইট্রিক এসিড পাওয়া যায় এবং প্রতিটি জীবন্ত কোষে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সাইট্রিক এসিডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটা গবেষণায় গবেষক-দল উল্লেখ করেন তারা বিক্রিয়ার সময় সাইট্রেট যুক্ত করে দেন ফলে বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ থেকে ম্যাগনেসিয়ামকে বিরত রাখা সম্ভব হয়। এতে আদি-কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং কোষের প্রতিলিপি সৃষ্টির প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চলতে থাকে। সরলভাবে বলতে গেলে গবেষক-দল ১৯৯৪ সালে ইটালিয়ান বিজ্ঞানী পিয়ের লুইগি লুইজির প্রস্তাবিত তত্ত্বকে বাস্তবায়ন করলেন। জ্যাক সোসটাক বলেন, “আমরা কোষের ফ্যাটি এসিডে ভেসিকলের অভ্যন্তরে আরএনএ’র অবিকল প্রতিলিপি সৃষ্টির রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করলাম।”

কোষের জন্ম
Szostak’s protocells can survive extreme heat (Credit: Jon Sullivan, PDPhoto.org)

মাত্র এক দশকের বেশী কিছু সময়ের গবেষণায় জ্যাক সোসটাকের গবেষক-দল প্রাণের উৎস সন্ধানে যুগান্তকারী অর্জন সম্পন্ন করে ফেললেন। তারা আদি-কোষ বানাতে সক্ষম হলেন যারা পূর্বের কোষের জীন বহন করে এবং কোষের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় মলিকিউল সংগ্রহ করতে পারে। এই আদি-কোষ নিজেরাই নিজেদের বৃদ্ধি এবং বিভাজন করতে পারে এমনকি নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা পর্যন্ত করতে পারে। আর কোষের অভ্যন্তরে চলতে থাকে আরএনএ’র অবিকল প্রতিলিপি সৃষ্টির অবিরাম কর্মযজ্ঞ। যেকোনো বিচারেই এই প্রক্রিয়া নতুন জীবন সৃষ্টির সূচনা বলা যেতে পারে।

এতকিছু স্বত্বেও সোসটাকের গবেষণার ফলাফল প্রায় ৪০ বছর ধরে চলমান প্রাণের উৎস গবেষণার বিপরীতে চলে গেল। কোষের নিজেই নিজেকে জন্ম দিয়েছিল প্রথমে এই মতবাদকে প্রাধান্য না দিয়ে অথবা কোষের বিভাজন প্রক্রিয়াকে অধিক গুরুত্ব না দিয়ে সোসটাক এই দুই মতবাদের সমন্বয় সাধন করে বলতে চেয়েছিলেন এই দুই প্রক্রিয়া সমান-তালে একসাথে চলছিল। কিন্তু সোসটাকের গবেষক-দল যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। ২০০৮ সালে সোসটাকের গবেষক-দল বুঝতে জানতে পারলেন, আদি-কোষ প্রায় ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও দিব্যি টিকে থাকতে পারে অথচ এই পরিমাণ উচ্চ তাপমাত্রায় বর্তমান সময়ের পরিণত বেশীরভাগ কোষেরই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা। ফলে সোসটাকের ধারণা আরও জোরালো হয় যে আদি-কোষের সাথে প্রথম প্রাণের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। এর থেকে আরও প্রমাণিত হয় অবিরাম চলতে থাকা উল্কা পতনের প্রভাবে সৃষ্ট গরমেও আদি-কোষ বহাল তবিয়তে টিকে ছিল।

জার্মানির ওসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শিক্ষক আরমেন মালকিদজানিয়ান সোসটাকের গবেষণাকে অতুলনীয় হিসেবে অভিহিত করেন। সোসটাকে তত্ত্বাবধানে ইতিপূর্বে বর্ণিত দুই মতবাদের সমন্বয় করার প্রচেষ্টা প্রাণের উৎস গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় যার কারণে শুরু হয় প্রাণ কীভাবে কাজ করে তার আলোচনা। এই “সবকিছু প্রথমে” ধারণা ইতিমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছে তথ্য প্রমাণের আকরিক সম্পদ এবং প্রাণের উৎস গবেষণার চলমান বিতর্কের সম্ভাব্য সমাধান।

কোষের জন্ম
The molecules of life behave in incredibly complex ways (Credit: Equinox Graphics Ltd)

কোষের জন্ম

২০০০ সালের প্রথমদিকে জীবনের প্রথম পথ চলা কীভাবে শুরু হয় এই গবেষণার প্রধান দুইটা তত্ত্ব প্রচলিত ছিল। আরএনএ ঘরানার বিজ্ঞানীগণ মনে করতেন প্রাণের বিকাশ হয়েছিল নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এমন অণুজীব থেকে। ইতিমধ্যে যেসব বিজ্ঞানীগণ “বিপাক ক্রিয়া” প্রথম শুরু হয়েছিল বলে মনে করতেন তারা গভীর সমুদ্রের আগ্নেয়গিরির গরম তরল প্রবাহের জ্বালামুখে কীভাবে প্রাণের বিকাশ হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ হাজির করলেন। যাইহোক চলমান এই বিতর্কের মধ্যেই আমাদের সামনে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে প্রাণের উৎস গবেষণার তৃতীয় আর একটা মতবাদ।

আমরা জানি পৃথিবীতে জীবিত সব প্রাণই কোষ দ্বারা গঠিত। প্রতিটি কোষই মূলত নরম তুলতুলে ছিদ্রযুক্ত গোলাকার সদৃশ বস্তু যার চারিধার অমসৃণ পর্দার আবরণে ঘেরা। কোষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল কোষ জীবনের সব প্রয়োজনীয় উপাদান একত্রে ধরে রাখে। যদি কোষের দেয়াল কোন কারণে জীর্ণ হয়ে ধ্বসে যায় তাহলে কোষের মূল উপাদান বেরিয়ে পড়ে এবং কোষের মৃত্যু ঘটে। ঠিক যেমন যদি কোন মানুষের উদর থেকে নাড়ীভুঁড়ি কেটে ফেলে দিই তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সে আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না।

পৃথিবীর আদিতে প্রচণ্ড তাপ আর ঘূর্ণিপাকে কিছু রাসায়নিক উপাদান একত্রিত হয়ে অবিকশিত কোষ গঠিত হয়। কোষের বাইরের পর্দার আবরণ এতই প্রয়োজনীয় যে প্রাণের উৎস সন্ধানী কিছু গবেষক যুক্তি দেখালেন যে, কোষ সৃষ্টির আগেই কোষের আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করতেন ‘যেভাবে জীবনের শুরু’ বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচিত “জীনতত্ত্ব প্রথম” এবং চতুর্থ অধ্যায়ের “বিপাক ক্রিয়া প্রথম” ধারণাগুলো বিভ্রান্তিকর। তাদের বিকল্প মতবাদটি ছিল “কোষের কাঠামো পৃথকীকরণ প্রথম” ঘটেছিল। এই মতবাদের পুরোধা ব্যক্তি হলেন ইটালির রোমে অবস্থিত রোমা ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ের লুইগি লুইজি।

লুইজির মতবাদের স্বপক্ষে কারণ যথেষ্ট সহজ সরল হলেও ব্যাখ্যা করার জন্য এত সহজ ছিল না। কীভাবে আপনি প্রমাণ করবেন “বিপাক ক্রিয়া” বা “স্বয়ম্ভূ আরএনএ” মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব যদি একটা বিশেষ স্থানে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো যায়। অন্যথায় অণুজীব থেকে প্রাণ সঞ্চার হবে কোথায়?

যদি আপনি উপরের যুক্তি স্বীকার করে নেন তাহলে প্রাণ সৃষ্টির একটাই উপায় আছে সেটা হল, যেকোনভাবে আদি পৃথিবীর উত্তপ্ত ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেও প্রাণ সৃষ্টির কিছু কাঁচামাল একত্রিত হয়ে অবিকশিত কোষ বা প্রাথমিক কোষের জন্ম নেয়া। প্রতিকূলতা পেরিয়ে গবেষণাগারে এই তত্ত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণাগারেই একটা সরল এককোষী জীবন্ত কোষ বানানো সম্ভব করেছেন।

কোষের জন্ম
All living things are made up of cells (Credit: Cultura Creative RF/Alamy)

লুইজি যেন তার সব চিন্তার সাথে যোগসূত্র স্থাপনে ফিরে গেলেন অ্যালেক্সান্ডার ওপারিনের কাছে এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রাণের সৃষ্টি রহস্য গবেষণার ঊষালগ্নে। অ্যালেক্সান্ডার ওপারিনের গবেষণার বিষয় ইতিমধ্যে প্রথম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। ওপারিন গুরুত্বের সাথে দেখালেন কোয়াসারভেট থেকে উৎসারিত কিছু উষ্ণ রাসায়নিক তরলের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে যার কেন্দ্রে আছে কিছু অবিকশিত কোষের মত বস্তু। তিনি দাবী করেন কোয়াসারভেটগুলোই আসলে কোষের প্রথম নমুনা।

সঠিক উপাদান থাকার পরেও গবেষণাগারে কোষের প্রাথমিক নমুনা সৃষ্টি খুব কঠিন কাজ। যেকোনো চর্বিযুক্ত বা তৈলাক্ত বস্তু আছে এমন পানিতে ব্লব বা ফিল্ম সৃষ্টি হয় আর এইসব রাসায়নিক উপাদান একসাথে লিপিড নামে পরিচিত। আলোচনার এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীগণ ধারণা পোষণ করতে থাকেন লিপিড থেকেই জীবনের প্রথম সূচনা। আমরা প্রাণের সৃষ্টি গবেষণায় বিজ্ঞানের এই মতবাদকে ‘লিপিড ঘরানা’ বলতে পারি।

কিন্তু শুধুই রাসায়নিক উষ্ণ ঘন তরলের ধারা সৃষ্টি করলেই সব সমাধা হয়ে গেল এমন নয় বিষয়টা। বিগত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করেও লুইজি এমনকিছু বানাতে পারলেন না যা দিয়ে তিনি বিজ্ঞানীদের সম্মতি অর্জনের জন্য জীবন-সদৃশ কিছু উপস্থাপন করা যায়। এখানে উল্লেখ্য উষ্ণ রাসায়নিক পানির প্রবাহের স্থিতিশীলতা থাকতে হবে এবং সেই প্রবাহ থেকে বিভাজিত হয়ে আর একটা ধারা সৃষ্টি করার সক্ষমতা থাকতে হবে। সেই ধারার মধ্যে কী কী উপাদান পরিবাহিত হচ্ছে তার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এতকিছু করতে হবে কিন্তু আধুনিক একটা কোষের পরিণত প্রোটিন ব্যবহার না করেই।

কোষের জন্ম
Somehow cells formed (Credit: Christian Jegou/Publiphoto Diffusion/Science Photo Library)

এরপরে ১৯৯৪ সালে লুইজি এক সাহসী প্রস্তাবনা রাখলেন। তিনি বলেন প্রাথমিক পর্যায়ের কোষে অবশ্যই আরএনএ থাকতে হবে। তিনি আরও দাবী করেন এই আরএনএ অবশ্যই নিজের আর একটা প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে সম্ভব। লুইজির প্রস্তাবনা বিজ্ঞানের নতুন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিলো। তার মানে হল, প্রাণ বিকাশের প্রথম প্রস্তাবনায় আমরা আসলে প্রাণের সৃষ্টি রহস্য গবেষণার বিভিন্ন তত্ত্বের মিলন মেলায় মিলিত হয়েছি এবং দীর্ঘ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি। লুইজির প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি আমলে নিলে, প্রাণ বিকাশের প্রথম প্রস্তাবনা কম্পার্টমেন্টালাইজেশন তত্ত্ব বা কোষের বিভাজন তত্ত্বকে বাতিল করে দিতে হয়। কিন্তু লুইজির কাছেও উপযুক্ত কারণ ছিল।

ভিতরে জীন বিহীন চারপাশে আবৃত কোষ খুব বেশী কিছু করতে পারে না। হয়ত কোষ বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তারা নিজের বংশগতির কোন তথ্য, উপাত্ত পরবর্তী কোষের মাঝে সঞ্চার করতে পারবে না। কোষ কেবল তখনি বিবর্তিত হতে শুরু করবে এবং ক্রমাগত জটিলতর হয়ে উঠতে পারবে যদি কোষের অভ্যন্তরে জীন থাকে।

এই তত্ত্ব খুব দ্রুত জ্যাক সোসটাকের সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। আমরা ইতিমধ্যে তৃতীয় অধ্যায়ে সোসটাকের আরএনএ নিয়ে গবেষণা আলোচনা তুলে ধরেছি। যখন লুইজি ছিলেন কম্পার্টমেন্টালাইজেশন তত্ত্বের প্রথম দিকের সমর্থক ঠিক তখন সোসটাক সমর্থন করতেন জীনতত্ত্বকে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন কোন মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত ছিল না। আমরা প্রাণের সৃষ্টি রহস্য গবেষণার বিভিন্ন তত্ত্বের মিলন মেলায় মিলিত হয়েছি এবং দীর্ঘ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি এবং সোসটাকের গবেষণার সূত্র ধরে নির্ধারণ করছে চাচ্ছি কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মোটের উপর আমরা বুঝতে পারলাম দুই গবেষণাতেই কোষের উপস্থিতি আছে। আমরা একটা সম্মতিতে এলাম যে প্রাণের উৎস সন্ধানে কম্পার্টমেন্টালাইজেশন বা বিভাজন তত্ত্ব এবং জীনতত্ত্ব উভয় গবেষণাতেই কোষ খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

কোষের জন্ম
Almost all life is single-celled (Credit: Science Photo Library/Alamy)

সোসটাকের তত্ত্ব প্রাণের উৎস গবেষণার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী এবং সোসটাক অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন তার গবেষণা তত্ত্বে অর্থ বিনিয়োগ করবেন যেখানে তার আগ্রহ। কারণ হিসেবে বললেন, “এমন একটা তত্ত্বের সমর্থনে তত্ত্বকে গবেষণার বাইরে রাখতে পারি না।” তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন প্রাথমিক কোষ দিয়ে গবেষণা শুরু করবেন।

দুই বছর পরে সোসটাক এবং তার দুইজন সহকর্মী ২০০১ সালে বড় ধরণের সাফল্যের সুসংবাদ দিলেন। বিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত ‘নেচার’ জার্নালে তারা যুক্তি দেখিয়ে লিখলেন প্রকৃতিতে প্রাপ্ত আপাত বিচ্ছিন্ন উপাদান থেকে সহজেই প্রাথমিক কোষ সৃষ্টি করা সম্ভব। চর্বিযুক্ত তেলতেলে বস্তুর সংস্পর্শে আরএনএ নিজের নিজের প্রতিলিপি জন্ম দিতে পারে।

কোষের জন্ম
Vesicles are simple containers made of lipids (Credit: Alfred Pasieka/Science Photo Library)

সোসটাক এবং তার গবেষক-দল কোষের ভেসিকল (কোষের তরল পূর্ণধারক) নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ভেসিকল দেখতে অনেকটা সর্পিল ঘন তরলের আকার যার গভীরে এবং বাইরের আবরণে দুইটা ফ্যাটি এসিডের স্তর আছে। ভেসিকলের উৎপাদন ত্বরান্বিত করার উপায় খুঁজতে গিয়ে সোসটাকের গবেষক-দল এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের জটিল যৌগের কাদার মত দেখতে থকথকে একটা বস্তুকে বিক্রিয়ার কাজে লাগিয়ে দিলেন এবং মনে করলেন এই নিরীক্ষা প্রাণ গবেষণার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এই যৌগের মিশ্রণ গবেষণা কাজে যোগ করার পরেই ভেসিকলের উৎপাদন ১০০ গুণ ত্বরান্বিত হয়ে গেল। কাদার মত বস্তুর পৃষ্ঠতল ভেসিকল উৎপাদনে অনুঘটকের কাজ করে যে কাজটা সচারচার এনজাইম করে থাকে।

তদুপরি, ভেসিকল এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের জটিল যৌগের কাদার কণা এবং কাদার পৃষ্ঠতল থেকে আরএনএ গ্রহণ করতে পারে। প্রথমদিকের এইসব কোষ এখন বহন করছে জীন এবং অনুঘটক আর এতকিছু ঘটে যাচ্ছে একটা সরল কাঠামোর মধ্যে। তবে প্রাণ গবেষণার এই পর্যায়ে এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের জটিল যৌগের কাদা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত কিন্তু হঠাৎ করে নেয়া হয়নি। বিগত কয়েক দশক ধরে চলমান গবেষণার পরম্পরা গবেষকদলকে এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং তারা অনুমান করেছিলেন প্রাণ সৃষ্টিতে এই যৌগ হয়ত খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কোষের জন্ম
This lump of clay is mostly montmorillonite (Credit: Susan E. Degginger/Alamy)

এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ খুব সহজলভ্য। এখনকার সময়ে আমাদের ব্যবহার্য নিত্যদিনের জিনিসপত্রে এটা হরহামেশা ব্যবহৃত হয় এমনকি বিড়ালের বিছানা বানাতেও এটার ব্যবহার দেখা যায়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত ছাইয়ের ধুলো পৃথিবীর আবহাওয়াতে মিশে এই যৌগ সৃষ্টি হয়। যেহেতু পৃথিবীর শৈশবে অনেক আগ্নেয়গিরি ছিল সেহেতু এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ ছিল পরিমাণে বিপুল।

ফিরে যাই ১৯৮৬ সালে, তখন আমেরিকান রসায়নবিদ জেমস ফেরিস দেখালেন এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ আসলে অণুঘটক যা জৈব-কণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আরও পরে তিনি আবিষ্কার করেন এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ আরএনএ সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে। এই দুইটি কাজের উপর ভিত্তি করে জেমস ফেরিস ধারণা করেন গড়পড়তা দেখতে কাদার মত এই যৌগটি আসলে প্রাণ সৃষ্টির উপাদান। জ্যাক সোসটাক ফেরিসের ধারণাকে গ্রহণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন এবং এলুমিনিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের যৌগ ব্যবহার করে প্রথম কোষ সৃষ্টি করলেন। সোসটাক যুক্তি দেখালেন, আদি-কোষ যদি বেড়ে উঠতে পারে তাহলে সেটা বিভাজিতও হতে পারে। এক বছর পরে সোসটাকের গবেষক-দল প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, প্রথমদিকের কোষ নিজেদের মত করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। এমনকি আদি-কোষে আরএনএ সংরক্ষিত থাকে এবং সময়ের হাত ধরে কোষের দেয়ালের বাইরের পাশ অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। মনে হয় যেন আদি-কোষ একটা ফুলে ওঠা পাকস্থলী এবং যেকোনো সময় সশব্দে ফেটে পড়বে। ফেটে পড়া রোধ করতে গিয়ে কোষ অধিকমাত্রায় ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করে এবং তাদের সমন্বয়ে নিজের দেয়ালকে আরও মজবুত করে তোলে ফলে কোষ ফুলে আকারে আর একটু বড় হয় এবং ফেটে পড়ার আশংকা দূর হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আদি-কোষ যে কোষের আরএনএ কম তার থেকে ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করছে ফলে সেই কোষগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। তার মানে এ থেকে বোঝা যায় আদি-কোষ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল এবং যে কোষের আরএনএ বেশী স্বাভাবিকভাবে সে কোষ জিতে যায়। এই অনুসিদ্ধান্ত আমাদের মনে আরও বিস্ময় জাগায়। যদি আদি-কোষ বেড়ে ওঠতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের অনুরূপ কোষ সৃষ্টি করতে পারে তবে কি সোসটাকের গবেষণালব্ধ প্রাথমিক কোষ নিজের প্রতিলিপি বানাতে পারবে?

কোষের জন্ম
Cells reproduce by dividing into two (Credit: Science Photo Library/Alamy)


সোসটাকের প্রথম পরীক্ষায় দেখানো হয়েছে কীভাবে আদি-কোষ বিভাজিত হয়। আদি-কোষকে দুমড়ে মুচড়ে যদি ছোট ছিদ্র পথের সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে সেখান থেকে আদি-কোষ ভেঙে ছড়িয়ে পড়বে। আদি-কোষ বেড়ে ওঠে, তাদের আকার পরিবর্তিত হয়, আয়তনে প্রসারিত হয় এবং তাদের শরীরে রশির মত লম্বা পাতলা প্রান্ত দেখা যায়।

এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া একেবারে নির্ভেজাল কারণ এখানে কোষের কোন যান্ত্রিক ক্রিয়াকর্ম জড়িত নাই। এখানে শুধু চাপ প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু এটা কোন সমাধান নয় কারণ নিজেই নিজের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় আদি-কোষ তার নিজস্ব কিছু উপাদান হারায়। এছাড়াও আদি-কোষ তখনই বিভাজিত হতে পারে যখন ছোট ছিদ্রপথে বল প্রয়োগে প্রবেশ করানো হয়।

ভেসিকলকে বিভাজিত করার বিভিন্ন উপায় আছে যেমন কোষকে পানির প্রবল স্রোত যুক্ত করতে পারলে কোষে নতুন শক্তির সৃষ্টি হয়। আদি-কোষের অভ্যন্তরীণ উপাদান বের হতে না দিয়ে কোষকে বিভাজন করার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করা হয়।

অবশেষে ২০০৯ সালে জ্যাক সোসটাক এবং তার সহযোগী ছাত্র টিং ঝু একটা সমাধান বের করতে সক্ষম হন। তারা সামান্য একটু জটিল আদি-কোষ সৃষ্টি করলেন যার চতুর্দিকে একাধিক দেয়াল যেন অনেকটা পেয়াজের মত। সরল আদি-কোষের গঠনে জটিলতা থাকলেও সহজেই তাদেরকে সৃষ্টি করা সম্ভব। টিং ঝু যখন আদি-কোষের সাথে আরও বেশী ফ্যাটি এসিড যোগ করলেন তখন আদি-কোষের আকার পরিবর্তিত হয়ে গেল, সুতার মত দেখতে প্রান্তগুলো আরও লম্বা হয়ে গেল। আদি-কোষের আকার যথেষ্ট বড় হয়ে গেলে অল্প চাপে আদি-কোষ ভেঙে বেশকিছু ছোট ছোট আদি-কোষে রূপান্তরিত হল। পিতৃ-কোষের কোন আরএনএ কিন্তু হারিয়ে গেল না বরং প্রতিটি ক্ষুদ্র আদি-কোষ তার পিতৃ-কোষের আরএনএ বহন করতে লাগল। তাছাড়া, আদি-কোষ নতুন কোষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া পৌনঃপুনিক ভাবে চালিয়ে যেতে পারে। নতুন আদি-কোষ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে নিজেই আবার নতুন কোষে বিভাজিত হতে শুরু করে।

পরবর্তী পরীক্ষায় ঝু এবং সোসটাক আদি-কোষ ভেঙে নতুন কোষ জন্ম দেয়ার ভিন্ন ভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে পেরেছিলেন। গবেষণার এই পর্যায়ে মনে হচ্ছিল অবশেষে সমস্যার বুঝি সমাধান পাওয়া গেল।

যাইহোক আদি-কোষ কিন্তু তখন যথেষ্ট কার্যকরী ছিল না। লুইজি ভেবেছিলেন, আদি-কোষ আরএনএ প্রতিলিপি সৃষ্টির ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করবে কিন্তু যতদূর বোঝা যায় আদি-কোষে আরএনএ শুধু অলস বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ করে না।

সত্যিকার অর্থেই যদি আদি-কোষ থেকে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের বিকাশ প্রমাণ করতে হয় তাহলে সোসটাকের দেখাতে হবে আরএনএ কীভাবে কোষের অভ্যন্তরে নিজেই নিজের প্রতিলিপি জন্ম দেয়। কিন্তু এই তথ্যকে তত্ত্ব হিসেবে প্রমাণ করে দেখানো এত সহজ নয় কারণ দশকব্যাপী পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পরেও কোন বিজ্ঞানী আরএনএ উৎপাদন করে দেখাতে পারেন নি যা নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা বিশদ আলোচনা করে ফেলেছি। এই সমস্যার কারণেই প্রাণ বিকাশে আরএনএ তত্ত্ব ঘরানার গবেষণার কাজ প্রথমদিকে ব্যাহত হচ্ছিল এবং তখন পর্যন্ত কেউ এই সমস্যার সমাধান বের করতে পারেনি। সুতরাং সোসটাক লেসলি ওরগেলের গবেষণার ফলাফল ও লিখিত কাগজ পুনরায় পড়তে শুরু করেন। আমরা জানি লেসলি ওরগেল দীর্ঘদিন আরএনএ তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। পুরনো ধুলো পড়া কাগজের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল প্রাণের উৎস গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র।

কোষের জন্ম
So The first cells had to host the chemistry of life (Credit: Science Photo Library/Alamy)

ওরগেল ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আরএনএ’র সুতোর মত প্রান্তগুলো কীভাবে নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করে সেই গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ওরগেলের গবেষণার সারাংশ ছিল খুবই সহজ সরল এবং সাধারণ। আরএনএ’র সুতোর মত একপ্রান্ত থেকে আলগা নিউক্লিওটাইড তুলে নেয়া হল এবং তখন নিউক্লিওটাইড জড়ো করে আরএনএ’র প্রথম সুতোর মত অবিকল আর একটা প্রান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরি আরএনএ’র একটা সুতোর মত প্রান্তে CGC লিখিত আছে এবং সেখানেই উৎপাদিত হয়েছে অনুরূপ আরেকটা সুতোর মত প্রান্ত যেটা পড়তে GCG এর মত মনে হয়। সম্ভবত কেউ যদি এই প্রক্রিয়া দুইবার করে তবে প্রকৃত CGC পাওয়া যাবে।

ওরগেল বুঝতে পারলেন যে, কোন অনুকূল পরিবেশে আরএনএ’র সুতোর মত প্রান্ত একই প্রক্রিয়ায় এনজাইমের সাহায্য ছাড়াই আরএনএ’র প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে। সম্ভবত এভাবেই প্রথম প্রাণ আরএনএ থেকে জীন সংগ্রহ করত। ১৯৮৭ সালে ওরগেল আবিষ্কার করলেন, আরএনএ’র ১৪ লম্বা নিউক্লিওটাইড সুতোর প্রান্ত অনুরূপ ১৪ নিউক্লিওটাইড লম্বা প্রান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম। তিনি এর থেকে বেশী লম্বা আরএনএ’র প্রান্ত বানাতে পারেন নি কিন্তু সোসটাকের চিন্তার সলতেই আগুন উস্কে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সোসটাকের ছাত্রী ক্যাটারজিনা অ্যাডামালা আদি-কোষ সৃষ্টির জন্য পুনরায় প্রবৃত্ত হলেন। তারা যে আদি-কোষ সৃষ্টি করলেন সেগুলো আগের কোষের গায়ের বাইরের সংলগ্ন মলিকিউল থেকে জীন বহন করে।

তারা বুঝতে পারলেন, এই বিক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা এখানেই যে, ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি আদি-কোষকে ধ্বংস করে। সব সমস্যারই সমাধান আছে এবং এই সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হল সাইট্রিক এসিড। লেবু, কমলা জাতীয় ফলে প্রচুর সাইট্রিক এসিড পাওয়া যায় এবং প্রতিটি জীবন্ত কোষে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সাইট্রিক এসিডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটা গবেষণায় গবেষক-দল উল্লেখ করেন তারা বিক্রিয়ার সময় সাইট্রেট যুক্ত করে দেন ফলে বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ থেকে ম্যাগনেসিয়ামকে বিরত রাখা সম্ভব হয়। এতে আদি-কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং কোষের প্রতিলিপি সৃষ্টির প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চলতে থাকে। সরলভাবে বলতে গেলে গবেষক-দল ১৯৯৪ সালে ইটালিয়ান বিজ্ঞানী পিয়ের লুইগি লুইজির প্রস্তাবিত তত্ত্বকে বাস্তবায়ন করলেন। জ্যাক সোসটাক বলেন, “আমরা কোষের ফ্যাটি এসিডে ভেসিকলের অভ্যন্তরে আরএনএ’র অবিকল প্রতিলিপি সৃষ্টির রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করলাম।”

কোষের জন্ম
Szostak’s protocells can survive extreme heat (Credit: Jon Sullivan, PDPhoto.org)

মাত্র এক দশকের বেশী কিছু সময়ের গবেষণায় জ্যাক সোসটাকের গবেষক-দল প্রাণের উৎস সন্ধানে যুগান্তকারী অর্জন সম্পন্ন করে ফেললেন। তারা আদি-কোষ বানাতে সক্ষম হলেন যারা পূর্বের কোষের জীন বহন করে এবং কোষের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় মলিকিউল সংগ্রহ করতে পারে। এই আদি-কোষ নিজেরাই নিজেদের বৃদ্ধি এবং বিভাজন করতে পারে এমনকি নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা পর্যন্ত করতে পারে। আর কোষের অভ্যন্তরে চলতে থাকে আরএনএ’র অবিকল প্রতিলিপি সৃষ্টির অবিরাম কর্মযজ্ঞ। যেকোনো বিচারেই এই প্রক্রিয়া নতুন জীবন সৃষ্টির সূচনা বলা যেতে পারে।

এতকিছু স্বত্বেও সোসটাকের গবেষণার ফলাফল প্রায় ৪০ বছর ধরে চলমান প্রাণের উৎস গবেষণার বিপরীতে চলে গেল। কোষের নিজেই নিজেকে জন্ম দিয়েছিল প্রথমে এই মতবাদকে প্রাধান্য না দিয়ে অথবা কোষের বিভাজন প্রক্রিয়াকে অধিক গুরুত্ব না দিয়ে সোসটাক এই দুই মতবাদের সমন্বয় সাধন করে বলতে চেয়েছিলেন এই দুই প্রক্রিয়া সমান-তালে একসাথে চলছিল। কিন্তু সোসটাকের গবেষক-দল যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। ২০০৮ সালে সোসটাকের গবেষক-দল বুঝতে জানতে পারলেন, আদি-কোষ প্রায় ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও দিব্যি টিকে থাকতে পারে অথচ এই পরিমাণ উচ্চ তাপমাত্রায় বর্তমান সময়ের পরিণত বেশীরভাগ কোষেরই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা। ফলে সোসটাকের ধারণা আরও জোরালো হয় যে আদি-কোষের সাথে প্রথম প্রাণের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। এর থেকে আরও প্রমাণিত হয় অবিরাম চলতে থাকা উল্কা পতনের প্রভাবে সৃষ্ট গরমেও আদি-কোষ বহাল তবিয়তে টিকে ছিল।

জার্মানির ওসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শিক্ষক আরমেন মালকিদজানিয়ান সোসটাকের গবেষণাকে অতুলনীয় হিসেবে অভিহিত করেন। সোসটাকে তত্ত্বাবধানে ইতিপূর্বে বর্ণিত দুই মতবাদের সমন্বয় করার প্রচেষ্টা প্রাণের উৎস গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় যার কারণে শুরু হয় প্রাণ কীভাবে কাজ করে তার আলোচনা। এই “সবকিছু প্রথমে” ধারণা ইতিমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছে তথ্য প্রমাণের আকরিক সম্পদ এবং প্রাণের উৎস গবেষণার চলমান বিতর্কের সম্ভাব্য সমাধান।

কোষের জন্ম
The molecules of life behave in incredibly complex ways (Credit: Equinox Graphics Ltd)

Posted at January 04, 2019 |  by Arya ঋষি
(https://aryarishidot.blogspot.com/2017/11/blog-post.html)দ্বিতীয় পর্বের পরঃ-
পর্ব-৩
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস করা হয়েছিল কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় বসেই হিন্দু নির্যাতনের জন্য আরও কঠোর নীতি ঘোষনা করলেন। তিনি জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করলেন। উদয়পুর ও চিতোর অধিকার করে দুই'শ এর অধিক দেব মন্দির ধ্বংস করলেন। শিখ গুরু তেগ বাহাদুর আওরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোদী নীতি অমান্য করেন এবং কাশ্মীরের ব্রাম্মনদের আওরঙ্গজেব প্রবর্তিত হিন্দু বিরোধী নীতি অমান্য করতে উপদেশ দেন। এ জন্য আওরঙ্গজেবের সম্মূখে উপস্থিত করা হল এবং মৃত্যুভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ধর্ম ত্যাগ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করলেন। সম্রাটের আদেশে ততক্ষনাত তাকে হত্যা করা হল। পাঞ্জাবের বর্তমান পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলে 'সৎনামীহিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। একজন মুসলমান সৈন্য একজন সৎনামী ভক্তকে হত্যা করলে সৎনামীরা বিদ্রহী হয়ফলে আওরঙ্গজেবের বাহিনী সৎনামী হিন্দুদের প্রায় সকলকে হত্যা করেন।

আরঙ্গজেবের সমসাময়িক মুসলমান লিপিকার সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "১০৭৯ হিজরী ১৭ই জিলকদ (১৮এপ্রিল, ১৬৬৯) সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে খবর পৌছালো যে, থাট্টা সুলতান বিশেষ করে বারানসীর মুর্খ ব্রাম্মনরা তাদের মোটা মোটা ছেড়া গ্রন্থ থেক কি সব জংলী তত্ব ছাত্রদের শিক্ষা দিচ্ছে। কাফের হিন্দুদের সঙ্গে কিছু মুসলমান ছাত্র ও সেখানে এসব ছাই ভস্ম শিখতে যাচ্ছে। এমনকি বহু দূর দেশ থেকেও বহু ছাত্র ওসব ডাকিনী বিদ্যা শিখতে বারানসীতে উপস্থিত হচ্ছে। এ খবর শোনা মাত্র ধর্মের দিক নির্দেশকারী সম্রাট এক হুকুম জারী করে বললেন, সমস্ত প্রদেশের শাসনকর্তারা যেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে কাফেরদের মন্দির ও বিদ্যালয়সমূহ ধ্বংস করে দেন। এই মর্মে তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, তারা যেন মূর্তি পূজা এবং এই ধরনের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোকে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দেন। পরবর্তী রবিউল আউয়াল মাসের ১৫ তারিখে সম্রাটের কাছে  খবর এলো যে , সম্রাটের আজ্ঞানুসারে সরকারী কর্ম কর্তারা বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছে।"
[Elliot & Dowson, VII-183-184]

সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন, "১০৮০ হিজরীর রমজান মাসে (ডিসেম্বর, ১৬৬৯ খৃ) সম্রাটের রাজত্বকালের ত্রয়োদশ বছরে অত্যাচারীদের (হিন্দুদের) অবিচল শত্রু ও ন্যায় বিচারের অনুরাগী সম্রাট (আরঙ্গজেব) ডেরা বসুরায় নামে পরিচিত মথুরার হিন্দু মন্দিরট ধ্বংস করতে আদেশ দিলে অনতিবিলম্বে মেকী ধর্মের সুদৃঢ় ঘাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল। ঠিক সেই জায়গাতেই বহু টাকা ব্যয় করে এক বিশাল মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হল।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হল আজও মথুরায় গেলে দেখা যাবে যেসাবেক মন্দিরের ধ্বংস বা ধূলিস্যাত করা হয়নিশুধু তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী বিবরণে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কথা বলা হয়েছেক্কিন্তু আজও কাশীতে গেলে দেখা যায় যেধ্বংস করার নামে তাকে শুধু মসজিদে  রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা ও তার বিবরণ থেকে এই সিন্ধান্তেই আসতে হয় যেএই সব বিবরনে যেখানেই মন্দির ধ্বংস করার কথা আছেসে সমস্ত ক্ষেত্রেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর বুঝতে হবে। এটিই নিয়মকেননা হজরত মোহাম্মদ মক্কার কেবলেস্বর মন্দিরকে ধূলিস্যাত করেননিশুধু মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে এবং ছবিগুলোকে ফেলে দিয়ে কাবা শরীফ নামকরন করেছেন। এটি একটি সুন্নত। এই সুন্নত অনুসরন করা মুসলমান শাসকের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়ড়িয়েছিল। হিন্দু জনসাধারনকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়ে তাদেরই মন্দিরকে ঘসে মেজে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে মসজিদের রূপ দিয়ে নও মুসলমানের সেখানে নামাজ শিক্ষা দেওয়া ও পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। 
৩ টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হত

এক কালে আজকের করাচির নাম ছিল দেবল বা দেবালয়। কারনযেখানে সুমুদ্রের পাড়ে ছিল বিশাল একটি মন্দির । সমুদ্রের অনেক দূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যেত। মহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রষ্টাব্দে সেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তির করে উপমহাদেশে এই বর্বর কাজের  সূত্রপাত করেন। সেই সময়কার মুসলমান ঐতিহাসিকরা এই দানবীয় কাজকে মেকি দেব-দেবীর বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর মহান বিজয় বলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।


ইসলামী চিন্তাবিদের মতে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা খুব সোজা এবং তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব । প্রথমত, মন্দিরের বিগ্রহগুলোকে ভেঙে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত, আজান দেবার জন্য একটি মিনার তৈরী করতে হবে এবং শেষ খুতবা দেবার জন্য মিনার বানাতে হবে। কত কম সময়ের মধ্যে এই কর্ম সমাধান করা সম্ভব আজমীরের 'আড়াই দিন কা ঝোপড়া' তার স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। বিগত  ১০০০ বছরে লক্ষ লক্ষ মন্দির মুসলমানেরা ভেঙে ধূলিসাত করেছে; নয়তো মসজিদে রূপান্তর করেছে এমনি উপায়ে। সুলতান মাহমুদ সোমনাথের সুদ্ৃশ্য মন্দির ধ্বংস করেছে। বাবরের দ্বারা অযোধ্যার রাম মন্দির, আওরঙ্গজেবের দ্বারাকাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরা ও মথুরার কেশব মন্দির ভাঙা ও মসজিদে রূপান্তর করা  এর অন্যতম উদাহারণ। হজরত মহাম্মদই প্রথম এই পথ দেখিয়ছেন। তার আদর্শ অনুসরণে আজ পর্যন্ত এ কাজ চলছে তো চলছেই।
ঢাকার ওয়ারী এলাকার শিব-মন্দির ভেঙে ইসলামী বিদ্যালয়, বানিয়া নগরের সীতানাথ মন্দির, ক্যাপিট্যাল ঈদ্গা ময়দান, টিকাটুলীর শিব মন্দির, রাজধানী মার্কেট ও মসজিদ, টিপু সুলতান রোদের রাধ-কৃষ্ণের মন্দির হয়েছে মানিকগঞ্জ হাউজ।

সাকি মুস্তাইদ খার বিবরণ অনুসারে বুন্দেলখন্ডের রাজা নরসিং দেব যুবরাজ সেলিমকে নানাভাবে সাহায্য করার পুরুষ্কার হিসেবে মথুরায় মন্দির নির্মান করার অনুমতি লাভ করেন এবং ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঐ বিশাল মন্দির নির্মান করেন। আওরঙ্গজেবের আদেশে সেই মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী করা হয়। এই সংবাদে উল্লেসিত মুস্তাইদ খা লিখেছেন,
ইনসাল্লা, ভাগ্যগুনে আমরা ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়েছি। যে কর্ম সমাধা করা নিতান্ত দুঃসাধ্য ছিল, মেকি দেব দেবীর উপাসনালয় ধ্বংসকারী এই সম্রাটের রাজত্বে তাও সম্ভব হল। সত্য ধর্মের প্রতি (সম্রাটের) এই বিপুল সমর্থন উদ্ধত হিন্দু রাজাদের চরম আঘাত হানলো পুতুল দেবতার মত তারাও তাদের ভয়ার্ত মুখ দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখলো।
মন্দির তো ভাঙা হল। কিন্তু মন্দিরের বিগ্রহের কি হবে ? সে ব্যপারে সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "জংলী সেই সব মন্দির থেকে মূল্যবান রত্নখচিত সেই সব বিগ্রহ পাওয়া গেল সেগুলোকে আগ্রায় নিয়ে আসা হল এবং সেখানে নবাব বেগম সাহেবার মসজিদের সিড়ির নীচে ফেলে রাখা হল; যাতে সত্য ধর্মে বিশ্বসীরা (মসজিদে যাওয়ার আসার সময়) সেগুলোকে চিরকাল পায়ের তলায় মাড়িয়ে যেতে পারে।"



সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন- 
"রবিউল আখির মাসের ২৪ তারিখে খাঞ্জাহান বাহাদুর কয়েক গাড়ী হিন্দু বিগ্রহ নিয়ে যোধপুর ফেরলেন। সেখানকার অনেক মন্দির ভেঙে এ সব বিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য মহামান্য সম্রাট তাকে খুবই প্রশংসা করলেন। এই সব বিগ্রহের বেশীর ভাগই মূল্যন সোনা, রূপা, পিতল, তামা বা পাঠরের তৈরী ছিল। সম্রাটের হুকুম হল কিছু বিগ্রহ জঞ্জাল হিসেবে এখানে সেখানে ফেলে রাখতে যাতে বিশ্বাসীরা মসজিদে যাতায়তের সময় সেগুলোকে মাড়াতে পারে।"

পরে পাথরের মূর্তি গুলোকে ভেঙে খোয়া করা হয় এবং সেই খোয়া দিয়ে জাম-ই-মসজিদের চাতাল মোজাইক কয়া হয়; যাতে নামাজীরা এসব বিগ্রহকে মাড়িয়ে নামাজ পড়ে আল্লার নাম রোশন করতে পারে।

কাশীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে মথুরার বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির ধ্বংস করা হল। এই সংবাদ বিদ্যুতবেগে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। উল্লেখিত উভয় মন্দিরের জায়গাতেই বিশাল দুই মসজিদ খাড়া করা হল যা আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং যে কেউ কাশী বা মথুরা ভ্রমনে গেলে অনেক দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন
[R.C.Majumder, BVB. Vol.VII,p-265]

ঐতিহাসিক এ কে মজুমদার লিখেছেন, "মেঘ যেমন পৃথিবীর জল বর্ষণ করে ঔরঙ্গজেব সেই রকম সমস্ত দেশ জুড়ে বর্বরতা বর্ষন করলেন।"

মধ্য যুগে ভারতে হিন্দু প্রজা পীড়নকারী মুসলমান শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইলিয়ট বলেছেন, "আমরা অবাক হব না যদি দেখি যে এই সব অত্যাচারী শাসকদের আমলে ন্যায় বিচার কলুষিত ও পক্ষপাত দুষ্ট অথবা যদি দেখি যে, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে সর্বত্র রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ ভাবে পুরুষের পুরুষাঙ্গ ও মহিলাদের স্তন কেটে ফেলা হচ্ছে অথবা যদি দেখি, যে সব রাজকর্মচারীকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই দূবৃর্ত্ত, ডাকাতের সর্দার বা উচ্ছেদকারী হানাদার রূপে অত্মপ্রকাশ করেছে।"

জালালউদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করে সূবর্ণ গ্রাম থেকে শেখ জহিরকে নিয়ে এসে তার উপদেশ অনুসারে রাজকার্য পরিচালনা শুরু করেন। তিনি পূর্ববঙ্গে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের জন্য ঘোষণা করলেন যে, সকলকে মুসলমান হতে হবে নয়তো প্রাণ দিতে হবে। এই ঘোষনার পরে পূর্ববঙ্গের অনেকে কামরূপ আসাম ও কাছারের জঙ্গলে পালিয়ে যান। কিন্তু তথাকথিত নিন্মবর্ণের অনেক হিন্দুই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। ঐতিহাসিক রজনীকান্ত চক্রবর্তীর মতে, জালালউদ্দিনের ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলেই পূর্ব বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা এত বেশী। (গৌড়ের ইতিহাস, রজনীকান্ত চক্রবর্তী, পৃ-৪৫-৪৬)

কিন্তু আমাদের ঐতিহাসিকরা এইসব বিষয়গুলি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাদের মূল দিক নির্দেশই হল বিদেশীমুসলমান শাসকদের মহান করে দেখাও, মুসলমান শাসনের যুগকে পরাধীনতার যুগ বলে কখনো দেখিও না বরং ভারতের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগ হিসেবে দেখাও। ঐসব মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের উপর যে নারকীয় অত্যাচার করেছে কোটি কোটি হিন্দুর রক্তে ভারতবর্ষের মাটি কর্দমাক্ত করেছে। হিন্দুর ছিন্ন মুন্ড দিয়ে যে পাহাড় তৈরী করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে লোপাট করে দাও। তারা লক্ষ লক্ষ হিন্দু মন্দিরকে ধ্বংস করেছে বা মসজিদে রূপান্তরিত করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে সম্পূর্ণ মুছে দাও। এই নীতি অনুসরণের কারণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগন বলেন এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হবে। বলা বাহুল্য এই নীতি অনুসরণ করে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে না গিয়ে ঐতিহাসিকগণ জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও যে জগন্য অপরাধ করে চলেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
তাজমহল ছিল শিব মন্দির
ঐসব  বিশ্বাষঘাতক ঐতিহাসিকদের কারনেই পৃথিবীর মানুষ আজ তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে একটি কবর বলে জানে। অথচ সম্রাট শাহজাহানের সভাসদ অবদুর হামিদ লাহোরী তার বাদশাহ নামার ৪০৩ ও ৪০৪ পৃষ্ঠায় তাজমহলের প্রকৃত ইতিহাস লিপিদ্ধ করেছেন। 
তাজমহল সম্পর্কে মধ্যযুগের এই একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ খানাকে উপেক্ষা করে আধুনিক লেখকগন এক দৈব বাণী পেয়ে রাজা পরমার্দিদেবের তৈরী শিব মন্দিরটিকে শাহজাহানের স্ত্রীর কবর বলে চালিয়েছেন। 
শুধু তাই নয়সভাসদ যেখানে বলেছেন বিশাল ইমারতটি রাজা জয় সিংহের ছিলসম্রাট শাহাজাহান সেটি তার কাছ থেকে নেন। 
সেখানে আধুনিক ঐতিহাসিকগন দৈবী ক্ষমতা বলে সেটি নির্মানের শ্রমিক থেকে টাকার অংক পর্যন্ত কষে বের করেছেন। অথচ চান্দেলরাজ পরমার্দিদের(পরমল) কর্তৃক ১১৫৬ খৃষ্টাব্দে নির্মিত তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে শাহজাহান মুর্তিশূণ্য করে ইসলামী রূপ দিয়েছিলেন সেকথা তার সভাসদই বর্ণনা করে গিয়েছেন। 
এমনকি শাহজাহানের স্ত্রীর নাম আরজুমান্দ বানু পরিবর্তন করা হয় মন্দিরের নামের সাথে সংগতি রেখে। 
মুলতঃ সম্রাট শাহজাহান মন্দিরটিকে অপবিত্র করার জন্যই এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ আজ মিথ্যা প্রেমের কত কাহিনী প্রচার হয়েছে আমাদের জ্ঞানপাপী ঐতিহাসিকদের কল্যানে।
একটি আমেরিকান ল্যাবরেটরী দ্বারা কার্বন 14 পরীক্ষায় এবং নিউ ইয়র্কের প্র্যাট স্কুল অফ প্রফেসর কর্তৃক প্রবর্তিত তেজের নদী প্রান্তের একটি কাঠের টুকরাটি প্রকাশ করেছে যে শাহজাহানের চেয়ে 300 বছরের পুরনো দরজাটি দাড়িয়েছে। 11 শতকের পর থেকে বারবার মুসলিম আগ্রাসীদের দ্বারা তাজতের দরজাগুলি ভেঙ্গে যায়, সময়-কাল পরিবর্তিত হতে থাকে। তাজ মসজিদটি অনেক পুরানো। এটি 1155 এডি এর অন্তর্গত, যথা, শাহজাহানের প্রায় 500 বছর আগের।

জ্যান্ত কাফের ধরে আনলে ২ টাকা আর মাথা কেটে আনলে ১ টাকা

সুলতান নাসিরুউদ্দিনের সেনাপতি উলুঘ খা হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল অঞ্চলে গিয়ে সৈন্যদের হুকুম দিয়েছিলযে একটা জ্যান্ত কাফের ধরে আনতে পারবে সে দু টাকা আর যে কাফেরের কাটা মুন্ডু আনতে পারবে সে এক টাকা পাবে। ক্ষুদার্ত কুকুরের মত মুসলমান কাফেরের খোকে চুতুর্দিকে বের হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ২০ দিন ধরে সেই হত্যা কান্ড চলতে থাকে। কাটা মানুষের মাথা ও কবন্ধের (মাথা হীন দেহস্তুপ পাহাড়ের সমান উচু হয়ে যায়,- এই ইতিহাস আমাদের ঐতিহাসিকরা কেমন করে ভুলে যেতে বলেন?

এদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস-দাসী হিসেবে কাবুলকান্দাহারগজনীবাগদাদ এমনকি সুদুর দামাস্কাসে নিয়ে গিয়ে সেখানকার ক্রীতদাসের হাটে বিক্রয় হতে থাকলো। সুন্দরী হিন্দু নারীরা মুসলমানদের লালসার শিকারে পরিনত হতে থাকলো। উজির নাজিররা নিজেরা হিন্দু কন্যা জোর করে ধরে আনতে লাগলোকিছু নিজেরা রেখে কিছু সম্রাটের জন্য উপহার পাঠিয়ে কিছু মিনা বাজারে বিক্রী করে ভারতবর্ষে যে হাহাকার স্ৃষ্টি করেছিল তা ঐতিহাসিকরা কি করে ভূলতে বলেন ?

আগে হিন্দু সমাজের মেয়েরা ঘোমটা কাকে বলে জানত না । মুসলমানদের লালসার হাত হতে রক্ষা পাবার জন্যই  হিন্দু নারীদের ঘোমটার প্রচলন শুরু হয়। অনেকেরই জানা নেই যে বাংলা তথা উত্তর ভারতে হিন্দু মেয়েদের কেন রাতের অন্ধকারে বিয়ে দেয়া হয়। কোন বৈদিক যজ্ঞই রাত্রে করার নিয়ম নেই । দিনের আলো থাকতে থাকতেই যজ্ঞ শেষ করার বিধিতা সত্ত্বেও উত্তর ভারতে ও বাংলায় কেন রাতে যজ্ঞ করা হয় এবং বর রাতে কনের বাড়ীতে যাওয়ার নিয়ম  হল। কারন রাতের অন্ধকারে কুমারী কন্যাকে পাত্রস্থ করে মুসলমানদের অগোচরে শ্বশুর বাড়ী পাঠিয়ে দেবার জন্যই এই বিধি প্রচলিত হয়। পক্ষান্তরে দাক্ষিণোত্যে মুসলমানদের অনুপ্রবেশ কম হওয়ায় আজও দিনের আলোতেই সেখানে বিবাহ অনুষ্টান ও যজ্ঞ সম্পুন্ন করা হয়।
মুসলমান শাষকরা তো বটেই, তাদের অনুচররা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমানরা সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে হিন্দুর ঘরের সুন্দুরী মেয়েদের খোজখবর নিত এবং গায়ের জোরে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে লুটের মালে পরিণত করত। এ ব্যপারে ড রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, "দীনেশ চন্দ্র সেন হিন্দু মুসলমানের প্রীতির সম্বন্ধে উচ্ছাসিত ভাষায় প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তিনিও লিখেছেন যে , মুসলমান রাজা  ও শ্রেষ্ট ব্যক্তিগন সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে ক্রমাগত সুন্দরী হিন্দু ললনাদের অপহরণ করেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানগণ এবং শ্রীহট্টের বানিয়াচঙ্গের দেওয়ানগণ এই রূপে শত শত হিন্দু কন্যাকে যে বল পূর্বক বিয়ে করেছিলেন তার অবধি নাই। ঢাকার শাখারী বাজারের গোপন কুঠুরী ঘর তৈরীর পিছনেও এই ট্রাজেডি বিদ্যমান তা আপনারা সবাই জানেন।

"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেনতাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"
                                                                                     চলবে.......

ইসলামি শান্তি ও বিধর্মী সংহার-পর্ব~৩

(https://aryarishidot.blogspot.com/2017/11/blog-post.html)দ্বিতীয় পর্বের পরঃ-
পর্ব-৩
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস করা হয়েছিল কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় বসেই হিন্দু নির্যাতনের জন্য আরও কঠোর নীতি ঘোষনা করলেন। তিনি জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করলেন। উদয়পুর ও চিতোর অধিকার করে দুই'শ এর অধিক দেব মন্দির ধ্বংস করলেন। শিখ গুরু তেগ বাহাদুর আওরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোদী নীতি অমান্য করেন এবং কাশ্মীরের ব্রাম্মনদের আওরঙ্গজেব প্রবর্তিত হিন্দু বিরোধী নীতি অমান্য করতে উপদেশ দেন। এ জন্য আওরঙ্গজেবের সম্মূখে উপস্থিত করা হল এবং মৃত্যুভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ধর্ম ত্যাগ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করলেন। সম্রাটের আদেশে ততক্ষনাত তাকে হত্যা করা হল। পাঞ্জাবের বর্তমান পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলে 'সৎনামীহিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। একজন মুসলমান সৈন্য একজন সৎনামী ভক্তকে হত্যা করলে সৎনামীরা বিদ্রহী হয়ফলে আওরঙ্গজেবের বাহিনী সৎনামী হিন্দুদের প্রায় সকলকে হত্যা করেন।

আরঙ্গজেবের সমসাময়িক মুসলমান লিপিকার সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "১০৭৯ হিজরী ১৭ই জিলকদ (১৮এপ্রিল, ১৬৬৯) সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে খবর পৌছালো যে, থাট্টা সুলতান বিশেষ করে বারানসীর মুর্খ ব্রাম্মনরা তাদের মোটা মোটা ছেড়া গ্রন্থ থেক কি সব জংলী তত্ব ছাত্রদের শিক্ষা দিচ্ছে। কাফের হিন্দুদের সঙ্গে কিছু মুসলমান ছাত্র ও সেখানে এসব ছাই ভস্ম শিখতে যাচ্ছে। এমনকি বহু দূর দেশ থেকেও বহু ছাত্র ওসব ডাকিনী বিদ্যা শিখতে বারানসীতে উপস্থিত হচ্ছে। এ খবর শোনা মাত্র ধর্মের দিক নির্দেশকারী সম্রাট এক হুকুম জারী করে বললেন, সমস্ত প্রদেশের শাসনকর্তারা যেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে কাফেরদের মন্দির ও বিদ্যালয়সমূহ ধ্বংস করে দেন। এই মর্মে তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, তারা যেন মূর্তি পূজা এবং এই ধরনের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোকে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দেন। পরবর্তী রবিউল আউয়াল মাসের ১৫ তারিখে সম্রাটের কাছে  খবর এলো যে , সম্রাটের আজ্ঞানুসারে সরকারী কর্ম কর্তারা বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছে।"
[Elliot & Dowson, VII-183-184]

সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন, "১০৮০ হিজরীর রমজান মাসে (ডিসেম্বর, ১৬৬৯ খৃ) সম্রাটের রাজত্বকালের ত্রয়োদশ বছরে অত্যাচারীদের (হিন্দুদের) অবিচল শত্রু ও ন্যায় বিচারের অনুরাগী সম্রাট (আরঙ্গজেব) ডেরা বসুরায় নামে পরিচিত মথুরার হিন্দু মন্দিরট ধ্বংস করতে আদেশ দিলে অনতিবিলম্বে মেকী ধর্মের সুদৃঢ় ঘাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল। ঠিক সেই জায়গাতেই বহু টাকা ব্যয় করে এক বিশাল মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হল।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হল আজও মথুরায় গেলে দেখা যাবে যেসাবেক মন্দিরের ধ্বংস বা ধূলিস্যাত করা হয়নিশুধু তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী বিবরণে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কথা বলা হয়েছেক্কিন্তু আজও কাশীতে গেলে দেখা যায় যেধ্বংস করার নামে তাকে শুধু মসজিদে  রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা ও তার বিবরণ থেকে এই সিন্ধান্তেই আসতে হয় যেএই সব বিবরনে যেখানেই মন্দির ধ্বংস করার কথা আছেসে সমস্ত ক্ষেত্রেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর বুঝতে হবে। এটিই নিয়মকেননা হজরত মোহাম্মদ মক্কার কেবলেস্বর মন্দিরকে ধূলিস্যাত করেননিশুধু মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে এবং ছবিগুলোকে ফেলে দিয়ে কাবা শরীফ নামকরন করেছেন। এটি একটি সুন্নত। এই সুন্নত অনুসরন করা মুসলমান শাসকের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়ড়িয়েছিল। হিন্দু জনসাধারনকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়ে তাদেরই মন্দিরকে ঘসে মেজে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে মসজিদের রূপ দিয়ে নও মুসলমানের সেখানে নামাজ শিক্ষা দেওয়া ও পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। 
৩ টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হত

এক কালে আজকের করাচির নাম ছিল দেবল বা দেবালয়। কারনযেখানে সুমুদ্রের পাড়ে ছিল বিশাল একটি মন্দির । সমুদ্রের অনেক দূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যেত। মহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রষ্টাব্দে সেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তির করে উপমহাদেশে এই বর্বর কাজের  সূত্রপাত করেন। সেই সময়কার মুসলমান ঐতিহাসিকরা এই দানবীয় কাজকে মেকি দেব-দেবীর বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর মহান বিজয় বলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।


ইসলামী চিন্তাবিদের মতে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা খুব সোজা এবং তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব । প্রথমত, মন্দিরের বিগ্রহগুলোকে ভেঙে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত, আজান দেবার জন্য একটি মিনার তৈরী করতে হবে এবং শেষ খুতবা দেবার জন্য মিনার বানাতে হবে। কত কম সময়ের মধ্যে এই কর্ম সমাধান করা সম্ভব আজমীরের 'আড়াই দিন কা ঝোপড়া' তার স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। বিগত  ১০০০ বছরে লক্ষ লক্ষ মন্দির মুসলমানেরা ভেঙে ধূলিসাত করেছে; নয়তো মসজিদে রূপান্তর করেছে এমনি উপায়ে। সুলতান মাহমুদ সোমনাথের সুদ্ৃশ্য মন্দির ধ্বংস করেছে। বাবরের দ্বারা অযোধ্যার রাম মন্দির, আওরঙ্গজেবের দ্বারাকাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরা ও মথুরার কেশব মন্দির ভাঙা ও মসজিদে রূপান্তর করা  এর অন্যতম উদাহারণ। হজরত মহাম্মদই প্রথম এই পথ দেখিয়ছেন। তার আদর্শ অনুসরণে আজ পর্যন্ত এ কাজ চলছে তো চলছেই।
ঢাকার ওয়ারী এলাকার শিব-মন্দির ভেঙে ইসলামী বিদ্যালয়, বানিয়া নগরের সীতানাথ মন্দির, ক্যাপিট্যাল ঈদ্গা ময়দান, টিকাটুলীর শিব মন্দির, রাজধানী মার্কেট ও মসজিদ, টিপু সুলতান রোদের রাধ-কৃষ্ণের মন্দির হয়েছে মানিকগঞ্জ হাউজ।

সাকি মুস্তাইদ খার বিবরণ অনুসারে বুন্দেলখন্ডের রাজা নরসিং দেব যুবরাজ সেলিমকে নানাভাবে সাহায্য করার পুরুষ্কার হিসেবে মথুরায় মন্দির নির্মান করার অনুমতি লাভ করেন এবং ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঐ বিশাল মন্দির নির্মান করেন। আওরঙ্গজেবের আদেশে সেই মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী করা হয়। এই সংবাদে উল্লেসিত মুস্তাইদ খা লিখেছেন,
ইনসাল্লা, ভাগ্যগুনে আমরা ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়েছি। যে কর্ম সমাধা করা নিতান্ত দুঃসাধ্য ছিল, মেকি দেব দেবীর উপাসনালয় ধ্বংসকারী এই সম্রাটের রাজত্বে তাও সম্ভব হল। সত্য ধর্মের প্রতি (সম্রাটের) এই বিপুল সমর্থন উদ্ধত হিন্দু রাজাদের চরম আঘাত হানলো পুতুল দেবতার মত তারাও তাদের ভয়ার্ত মুখ দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখলো।
মন্দির তো ভাঙা হল। কিন্তু মন্দিরের বিগ্রহের কি হবে ? সে ব্যপারে সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "জংলী সেই সব মন্দির থেকে মূল্যবান রত্নখচিত সেই সব বিগ্রহ পাওয়া গেল সেগুলোকে আগ্রায় নিয়ে আসা হল এবং সেখানে নবাব বেগম সাহেবার মসজিদের সিড়ির নীচে ফেলে রাখা হল; যাতে সত্য ধর্মে বিশ্বসীরা (মসজিদে যাওয়ার আসার সময়) সেগুলোকে চিরকাল পায়ের তলায় মাড়িয়ে যেতে পারে।"



সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন- 
"রবিউল আখির মাসের ২৪ তারিখে খাঞ্জাহান বাহাদুর কয়েক গাড়ী হিন্দু বিগ্রহ নিয়ে যোধপুর ফেরলেন। সেখানকার অনেক মন্দির ভেঙে এ সব বিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য মহামান্য সম্রাট তাকে খুবই প্রশংসা করলেন। এই সব বিগ্রহের বেশীর ভাগই মূল্যন সোনা, রূপা, পিতল, তামা বা পাঠরের তৈরী ছিল। সম্রাটের হুকুম হল কিছু বিগ্রহ জঞ্জাল হিসেবে এখানে সেখানে ফেলে রাখতে যাতে বিশ্বাসীরা মসজিদে যাতায়তের সময় সেগুলোকে মাড়াতে পারে।"

পরে পাথরের মূর্তি গুলোকে ভেঙে খোয়া করা হয় এবং সেই খোয়া দিয়ে জাম-ই-মসজিদের চাতাল মোজাইক কয়া হয়; যাতে নামাজীরা এসব বিগ্রহকে মাড়িয়ে নামাজ পড়ে আল্লার নাম রোশন করতে পারে।

কাশীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে মথুরার বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির ধ্বংস করা হল। এই সংবাদ বিদ্যুতবেগে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। উল্লেখিত উভয় মন্দিরের জায়গাতেই বিশাল দুই মসজিদ খাড়া করা হল যা আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং যে কেউ কাশী বা মথুরা ভ্রমনে গেলে অনেক দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন
[R.C.Majumder, BVB. Vol.VII,p-265]

ঐতিহাসিক এ কে মজুমদার লিখেছেন, "মেঘ যেমন পৃথিবীর জল বর্ষণ করে ঔরঙ্গজেব সেই রকম সমস্ত দেশ জুড়ে বর্বরতা বর্ষন করলেন।"

মধ্য যুগে ভারতে হিন্দু প্রজা পীড়নকারী মুসলমান শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইলিয়ট বলেছেন, "আমরা অবাক হব না যদি দেখি যে এই সব অত্যাচারী শাসকদের আমলে ন্যায় বিচার কলুষিত ও পক্ষপাত দুষ্ট অথবা যদি দেখি যে, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে সর্বত্র রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ ভাবে পুরুষের পুরুষাঙ্গ ও মহিলাদের স্তন কেটে ফেলা হচ্ছে অথবা যদি দেখি, যে সব রাজকর্মচারীকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই দূবৃর্ত্ত, ডাকাতের সর্দার বা উচ্ছেদকারী হানাদার রূপে অত্মপ্রকাশ করেছে।"

জালালউদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করে সূবর্ণ গ্রাম থেকে শেখ জহিরকে নিয়ে এসে তার উপদেশ অনুসারে রাজকার্য পরিচালনা শুরু করেন। তিনি পূর্ববঙ্গে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের জন্য ঘোষণা করলেন যে, সকলকে মুসলমান হতে হবে নয়তো প্রাণ দিতে হবে। এই ঘোষনার পরে পূর্ববঙ্গের অনেকে কামরূপ আসাম ও কাছারের জঙ্গলে পালিয়ে যান। কিন্তু তথাকথিত নিন্মবর্ণের অনেক হিন্দুই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। ঐতিহাসিক রজনীকান্ত চক্রবর্তীর মতে, জালালউদ্দিনের ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলেই পূর্ব বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা এত বেশী। (গৌড়ের ইতিহাস, রজনীকান্ত চক্রবর্তী, পৃ-৪৫-৪৬)

কিন্তু আমাদের ঐতিহাসিকরা এইসব বিষয়গুলি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাদের মূল দিক নির্দেশই হল বিদেশীমুসলমান শাসকদের মহান করে দেখাও, মুসলমান শাসনের যুগকে পরাধীনতার যুগ বলে কখনো দেখিও না বরং ভারতের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগ হিসেবে দেখাও। ঐসব মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের উপর যে নারকীয় অত্যাচার করেছে কোটি কোটি হিন্দুর রক্তে ভারতবর্ষের মাটি কর্দমাক্ত করেছে। হিন্দুর ছিন্ন মুন্ড দিয়ে যে পাহাড় তৈরী করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে লোপাট করে দাও। তারা লক্ষ লক্ষ হিন্দু মন্দিরকে ধ্বংস করেছে বা মসজিদে রূপান্তরিত করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে সম্পূর্ণ মুছে দাও। এই নীতি অনুসরণের কারণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগন বলেন এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হবে। বলা বাহুল্য এই নীতি অনুসরণ করে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে না গিয়ে ঐতিহাসিকগণ জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও যে জগন্য অপরাধ করে চলেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
তাজমহল ছিল শিব মন্দির
ঐসব  বিশ্বাষঘাতক ঐতিহাসিকদের কারনেই পৃথিবীর মানুষ আজ তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে একটি কবর বলে জানে। অথচ সম্রাট শাহজাহানের সভাসদ অবদুর হামিদ লাহোরী তার বাদশাহ নামার ৪০৩ ও ৪০৪ পৃষ্ঠায় তাজমহলের প্রকৃত ইতিহাস লিপিদ্ধ করেছেন। 
তাজমহল সম্পর্কে মধ্যযুগের এই একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ খানাকে উপেক্ষা করে আধুনিক লেখকগন এক দৈব বাণী পেয়ে রাজা পরমার্দিদেবের তৈরী শিব মন্দিরটিকে শাহজাহানের স্ত্রীর কবর বলে চালিয়েছেন। 
শুধু তাই নয়সভাসদ যেখানে বলেছেন বিশাল ইমারতটি রাজা জয় সিংহের ছিলসম্রাট শাহাজাহান সেটি তার কাছ থেকে নেন। 
সেখানে আধুনিক ঐতিহাসিকগন দৈবী ক্ষমতা বলে সেটি নির্মানের শ্রমিক থেকে টাকার অংক পর্যন্ত কষে বের করেছেন। অথচ চান্দেলরাজ পরমার্দিদের(পরমল) কর্তৃক ১১৫৬ খৃষ্টাব্দে নির্মিত তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে শাহজাহান মুর্তিশূণ্য করে ইসলামী রূপ দিয়েছিলেন সেকথা তার সভাসদই বর্ণনা করে গিয়েছেন। 
এমনকি শাহজাহানের স্ত্রীর নাম আরজুমান্দ বানু পরিবর্তন করা হয় মন্দিরের নামের সাথে সংগতি রেখে। 
মুলতঃ সম্রাট শাহজাহান মন্দিরটিকে অপবিত্র করার জন্যই এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ আজ মিথ্যা প্রেমের কত কাহিনী প্রচার হয়েছে আমাদের জ্ঞানপাপী ঐতিহাসিকদের কল্যানে।
একটি আমেরিকান ল্যাবরেটরী দ্বারা কার্বন 14 পরীক্ষায় এবং নিউ ইয়র্কের প্র্যাট স্কুল অফ প্রফেসর কর্তৃক প্রবর্তিত তেজের নদী প্রান্তের একটি কাঠের টুকরাটি প্রকাশ করেছে যে শাহজাহানের চেয়ে 300 বছরের পুরনো দরজাটি দাড়িয়েছে। 11 শতকের পর থেকে বারবার মুসলিম আগ্রাসীদের দ্বারা তাজতের দরজাগুলি ভেঙ্গে যায়, সময়-কাল পরিবর্তিত হতে থাকে। তাজ মসজিদটি অনেক পুরানো। এটি 1155 এডি এর অন্তর্গত, যথা, শাহজাহানের প্রায় 500 বছর আগের।

জ্যান্ত কাফের ধরে আনলে ২ টাকা আর মাথা কেটে আনলে ১ টাকা

সুলতান নাসিরুউদ্দিনের সেনাপতি উলুঘ খা হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল অঞ্চলে গিয়ে সৈন্যদের হুকুম দিয়েছিলযে একটা জ্যান্ত কাফের ধরে আনতে পারবে সে দু টাকা আর যে কাফেরের কাটা মুন্ডু আনতে পারবে সে এক টাকা পাবে। ক্ষুদার্ত কুকুরের মত মুসলমান কাফেরের খোকে চুতুর্দিকে বের হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ২০ দিন ধরে সেই হত্যা কান্ড চলতে থাকে। কাটা মানুষের মাথা ও কবন্ধের (মাথা হীন দেহস্তুপ পাহাড়ের সমান উচু হয়ে যায়,- এই ইতিহাস আমাদের ঐতিহাসিকরা কেমন করে ভুলে যেতে বলেন?

এদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস-দাসী হিসেবে কাবুলকান্দাহারগজনীবাগদাদ এমনকি সুদুর দামাস্কাসে নিয়ে গিয়ে সেখানকার ক্রীতদাসের হাটে বিক্রয় হতে থাকলো। সুন্দরী হিন্দু নারীরা মুসলমানদের লালসার শিকারে পরিনত হতে থাকলো। উজির নাজিররা নিজেরা হিন্দু কন্যা জোর করে ধরে আনতে লাগলোকিছু নিজেরা রেখে কিছু সম্রাটের জন্য উপহার পাঠিয়ে কিছু মিনা বাজারে বিক্রী করে ভারতবর্ষে যে হাহাকার স্ৃষ্টি করেছিল তা ঐতিহাসিকরা কি করে ভূলতে বলেন ?

আগে হিন্দু সমাজের মেয়েরা ঘোমটা কাকে বলে জানত না । মুসলমানদের লালসার হাত হতে রক্ষা পাবার জন্যই  হিন্দু নারীদের ঘোমটার প্রচলন শুরু হয়। অনেকেরই জানা নেই যে বাংলা তথা উত্তর ভারতে হিন্দু মেয়েদের কেন রাতের অন্ধকারে বিয়ে দেয়া হয়। কোন বৈদিক যজ্ঞই রাত্রে করার নিয়ম নেই । দিনের আলো থাকতে থাকতেই যজ্ঞ শেষ করার বিধিতা সত্ত্বেও উত্তর ভারতে ও বাংলায় কেন রাতে যজ্ঞ করা হয় এবং বর রাতে কনের বাড়ীতে যাওয়ার নিয়ম  হল। কারন রাতের অন্ধকারে কুমারী কন্যাকে পাত্রস্থ করে মুসলমানদের অগোচরে শ্বশুর বাড়ী পাঠিয়ে দেবার জন্যই এই বিধি প্রচলিত হয়। পক্ষান্তরে দাক্ষিণোত্যে মুসলমানদের অনুপ্রবেশ কম হওয়ায় আজও দিনের আলোতেই সেখানে বিবাহ অনুষ্টান ও যজ্ঞ সম্পুন্ন করা হয়।
মুসলমান শাষকরা তো বটেই, তাদের অনুচররা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমানরা সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে হিন্দুর ঘরের সুন্দুরী মেয়েদের খোজখবর নিত এবং গায়ের জোরে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে লুটের মালে পরিণত করত। এ ব্যপারে ড রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, "দীনেশ চন্দ্র সেন হিন্দু মুসলমানের প্রীতির সম্বন্ধে উচ্ছাসিত ভাষায় প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তিনিও লিখেছেন যে , মুসলমান রাজা  ও শ্রেষ্ট ব্যক্তিগন সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে ক্রমাগত সুন্দরী হিন্দু ললনাদের অপহরণ করেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানগণ এবং শ্রীহট্টের বানিয়াচঙ্গের দেওয়ানগণ এই রূপে শত শত হিন্দু কন্যাকে যে বল পূর্বক বিয়ে করেছিলেন তার অবধি নাই। ঢাকার শাখারী বাজারের গোপন কুঠুরী ঘর তৈরীর পিছনেও এই ট্রাজেডি বিদ্যমান তা আপনারা সবাই জানেন।

"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেনতাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"
                                                                                     চলবে.......

Posted at December 29, 2018 |  by Arya ঋষি

৩ পর্ব
সৌদি বাহিনীর সমস্যা এবং লড়াইয়ের অন্তিম অবস্থা:
একই সাথে জুহাইমানের সঙ্গে থাকা অনেকেই এই মক্কার মসজিদ আল হারাম এ পড়াশোনার এবং জীবনের একটা বড় অংশ কাটানোর কারণে এই ভূগর্ভের বা পুরো জায়গাটি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানতো।এই কারণে ২০ তারিখ থেকে পরের দিন গুলো এই জায়গায় আক্রমন করতে গিয়ে একের পর এক সৌদি সেনা বা বাহিনীর লোক মারা পড়েছিল।সৌদি রাজশক্তি বুঝতে পারলো,এইভাবে হবে না,অন্য কোন উপায় নিতে হবে।
ফরাসী সহায়তা :
সমাধান পেতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য ফরাসি সরকারের সাহায্য চায় তাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি (Valéry Giscard d'Estaing) র কাছে।ফরাসি রাষ্ট্রপতি গোপনে তাদের ওই সময়ে সদ্য তৈরী সন্ত্রাসবাদ দমনের বিভাগ GIGN এর তিনজন বিশেষজ্ঞকে সৌদি আরবে পাঠান।গোপনে পাঠানো হয় যাতে এই অমুসলিম কোনো রাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো খবর বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রতিক্রিয়া না হয় ওই জন্য।
ফরাসি এই দল কাছের একটি হোটেল তাইফ এ অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে।এরা এই লোকগুলোকে উপরে নিয়ে আসার জন্য ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোতে বিশেষ গ্যাস পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাতে শ্বাস নিতে না পেরে এই লোকগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কক্ষগুলোতে মাটির তলা দিয়ে গর্ত করে বিশেষ গ্রেনেড এর মাধ্যমে এই গুলো ভিতরে ফাটানো হয় যাতে কোনো মৃত্যুর বদলে স্রেফ গ্রেনেড দিয়ে ওই গ্যাস কক্ষে ভরে যায়।এই গ্যাস ব্যবহার বা প্রাসঙ্গিক রসায়নিক ব্যবহারের একটা প্রশিক্ষণ তারা দিয়েছিল সৌদি সেনাদের কারণ অমুসলিম কারোর কাবা বা ওই মসজিদ আল হারাম এ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এই বিশেষ গ্যাসের নাম রসায়নিক হিসেবে বিশাল তবে সংক্ষেপে বলা হয় CB,যা দীর্ঘক্ষণ ফুসফুসে ঢুকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে প্রাথমিক পর্বে এতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হয় আর খোলা জায়গায় যেতেই হয়।
সাফল্যের মুখ দর্শন:
অবশেষে ডিসেম্বরের তিন তারিখ সকালে মাটির নিচের ওই কক্ষগুলোর ভিতরে এই গ্যাসের নিক্ষেপ করার জন্য জমির উপরে গর্ত করে এই গ্যাসের ক্যানিস্টার ফেলা হয় যা ভিতরে গিয়ে ফেটে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ রাখছিল না।এতে আংশিক সাফল্য এসেছিল,লড়াই চলে আরো ১৮ ঘন্টা।অবশেষে ডিসেম্বরের চার তারিখ প্রতিপক্ষের গুলির বা বোমার আওয়াজে বিরতি আসে।
একটি ছোট অপরিসর ভূগর্ভস্থ ঘরে জনা কুড়ি বিদ্ধস্ত,ক্লান্ত,যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলে আতঙ্কিত এই জঙ্গিদের একসাথে দেখা গেলো।এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্রিগেডিয়ার আল দাহারি অনুমান করেন এই সংঘর্ষের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনেই তথাকথিত সেই ঈমাম মেহেদির রূপে থাকা আল কাহতানি মারা পড়েছিল।এই খবর জুহাইমান গোপন রেখেছিল বা নিজেই এক পর্যায়ে একে মেরে বিষয়টি গোপন রেখেছিল।যাই হোক,ঈমাম মেহেদী গুলি বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে না এই লোকগুলোর অটল বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল যা সামগ্রিক মনোবলে আঘাত এসেছিল বলে ধরা হয়।এই পরিপূর্ণ দখলের আগে অবশ্য সৌদি বাহিনী জানতেও পারে নি যে তথাকথিত ইমাম মাহদী বা মেহেদী আগেই মারা গিয়েছে।
এই ঘরগুলোর ভিতরে ওই গাদাগাদি করে থাকা লোকেদের ভিতরে সেনাদল পায় সেই জুহাইমানকে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আল দাহরি নিজেই সনাক্ত করে এই লোকটিকে।পূর্ব নির্দেশের কারণে এবং পুরো বিষয়ের বাকি খবর বের করার জন্য একে আলাদা করে নিয়ে যায়।পুরো একটি সেনা স্কোয়াড এই যুহাইমান কে অক্ষত রাখার জন্য প্রহরাতে নিয়োজিত হয়।
কাবা এবং মসজিদ আল হারাম মুক্ত হওয়ার রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং পরবর্তী কার্যক্রম:
অবশেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ আল হারাম মসজিদ এবং কাবা স্থাপনার পুরো জায়গা মুক্ত হয়েছে ঘোষণা করে।গোটা দেশ এবং বিশ্বের কাছে এই জুহাইমান আর তার বাকি জীবিত সঙ্গীদের স্থির এবং ভিডিও ছবি দেখায়।
সব মিলিয়ে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় ঠিক পনেরো দিন পরে ডিসেম্বর ৫ তারিখের ভোর দেড়টার স্থানীয় সময়ে।একই সঙ্গে প্রিন্স নাইফ সরকারী ভাবে জানায় এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সেনাদল সেই মহম্মদ আল কাহতানির মৃত দেহ খুঁজে পেয়েছে।গুলি এবং অন্য ভাবে ক্ষতবিক্ষত এই মৃতদেহ দেখানো হয় টিভিতে।সৌদি ইন্টালিজেন্স এর প্রধান প্রিন্স তুর্কির মতে এই লোকটিকে জুহাইমান নিজেই খুন করেছিল যাতে জীবিত ধরা পড়ে পুরো মিথ্যের বিষয়টি আরো প্রকট না করতে পারে।
দেশের সাংবাদিকদের বা অন্য মানুষদের এই জায়গাটি দেখানো হলে তারা দেখতে পায় এই লোকগুলো আগুন জ্বালানোর জন্য পবিত্র কোরান ছিড়ে তার পাতা ও ব্যবহার করেছে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সঙ্গীদের মৃতদেহের মুখ যাতে না চিনতে পারে তার জন্য মুখের উপরে এই কাগজ জ্বালিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল।আশা করি পুরো বিষয়টি কত বিভৎস্য আর এই লোকগুলো প্রয়োজনে সবই করতে পারে তার একটা ধারণা পেয়েছেন।
এরপরে সেই ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় রাজা খালিদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টি শেষ হওয়া আর এই দখল মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন।এরপরে বুলেটের ক্ষত বাদে বাকি পুরো স্থাপনা কে এক অতি দ্রুততার সাথে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় পরের দুই দিনের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ছয় তারিখে বাদশা খালেদ একদল উচ্ছসিত নামাজির সাথে এই চত্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আসেন।পুরো ধর্মীয় রীতি মেনে হজর আল আসওয়াদ চুম্বন,কাবা গৃহকে সাতবার রীতি মেনে প্রদক্ষিন এবং জমজম এর জল পান করে আবার পুরনো রীতির সূচনা করেন।এরপরের দিন জুম্মার নমাজ হয় এক অন্য পরিবেশে।এতে অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ আগেই এসে জড়ো হয়েছিল আগের রাত থেকেই।পুরো ইসলামী বিশ্বের দেশগুলোতে এই ঘটনা উপগ্রহর মাধ্যমে সমপ্রসার করা হয়।
হতাহতর বিবরণ এবং জুহাইমানের চরিত্রের এক ঝলক :
যে উদার পথের সমাজ রেখে চলার কাজ শুরু করেছিল এই সৌদি রাজবংশ তার মূল্য দিতে হয়েছিল অতীব কঠিন ভাবে আর তা দিয়েছিল মূলত সৌদি নাগরিকরা।এই ঘটনায় হতাহত মানুষের মধ্যে ১২৭জন বিভিন্ন বাহিনীর মানুষ।এছাড়া তাদের ৪৫১ জন আহত হয়েছিল এই সময়ে।অন্যদিকে সরকারী ভাষ্যে জানা যায় সাধারণ পুন্যার্থীর মধ্যে ২৬জন ওই জায়গায় থাকা মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সৌদি ছাড়াও ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,মিশর এবং বার্মার নাগরিক ছিল।এ ছড়া আহত হয়েছিল একশো জন।
অন্যদিকে এই দখলদারি করা জুহাইমানের দলের ২৬০জনের মধ্যে ১১৭ জন নিহত হয়েছিল,সরাসরি লড়াইয়ে ৯০জন আর পরে হাসপাতালে আরো ২৭জন। গ্রেফতার করা জুহাইমান তার কাজের বিষয়ে কোনো অনুতাপ দেখায় নি বলে জানা যায়।সেই সময়ের সৌদি প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল তাকে এই কাজ কেন করেছে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর ছিল "সবই ভাগ্য " ,তার কিছু চাই কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জল খেতে চায়।এই ঘটনার পরে জুহাইমান আর জীবিত সঙ্গীদের ক্যামেরার সামনে আনা হয়।আরো কিছু পরে হাসপাতালে তার সাথে দেখা হয় প্রিন্স তুর্কির,সেই সময়ে জুহাইমান নির্লজ্জের মতো বাদশা খালেদের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে,এই কাজ করে সে অনুতপ্ত এই বলে।উত্তরে তুর্কি তাকে বলে এই কাজের জন্য সে ক্ষমার যোগ্য না।এই ছিল সৌদি রাজশক্তির সাথে তাঁর শেষ বার্তালাপ।
সৌদি বিচার যেখানে রাজাই শেষ কথা :
জুহাইমানের দলের বাকি ১৪৩ জনের মধ্যে ৬৩জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সৌদি আদালতে।১৯৮০ সালের ৯ তারিখে সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আটটি জায়গায় এদের শিরোচ্ছেদে মৃত্যুর ফরমান জারি করে।কেন আটটি জায়গায়?এই বিষয়ে বাখ্যা দিতে আরো এক শীর্ষব্যক্তি প্রিন্স তুর্কি বলে যে এটি ছিল গোটা সৌদি আরবের বিষয় তাই মুখ্য জায়গাগুলোতে এই কাজগুলো করা হয় যাতে সার্বিক ভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।এই ৬৩ জনের মধ্যে ৪১জন সৌদি নাগরিক,১০জন মিশরের,সাতজন ইয়েমেনের,তিনজন কুয়েতের,একজন সুদানের আর একজন ইরাকের ছিল।যেমন বলেছি,আলাদা করে এদের ১৫জন কে মক্কাতে,১০ জন কে রিয়াদে,মদিনা,দাম্মাম,বুরাইদাহ এবং আবহাতে সাত জন করে,হাইল এবং তাবুক এ পাঁচজন করে এই মৃত্যুদন্ড পাওয়া লোকেদের শিরচ্ছেদ করা হয়।প্রথমে মৃত্যুদন্ড পেলেও পরবর্তিতে কারাদন্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে।এ ছাড়া এই দলে থাকা ২৩ জন মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মহিলাদের ২ বছর করে কারাদন্ড আর শিশুদের নির্দিস্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।জুহাইমানকে ওই ১৫ জনের সাথে মক্কাতে শিরচ্ছেদ করা হয় জানুয়ারির নয় তারিখ,১৯৮০তে ।
সরকারী ভাবে সৌদি প্রশাসন ঘোষণা করে যে এই নানান দেশের লোক যুক্ত হলেও কোনো দেশ এই কাজে উস্কানি দেয় নি বা সাহায্য করে নি।পুরো বিষয়টি একটি ধর্মীয় কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে হওয়া কাজ।জনমানসে এই বিষয়ে কোনো ছাপ পড়েনি,অন্তত কোনো জায়গায় এই নিয়ে কোনো আলোড়ন বা বিক্ষোভ দেখা যায় নি।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টা একটা বিশাল মানসিক ধাক্কা ছিল প্রশাসক বা সাধারণ মানুষের কাছে।
বিষ বৃক্ষের সূচনা বা এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন:
এতে সব শেষ হয় না , সৌদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ঘটনা কট্টরপন্থীদের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সৌদি ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী।এই গোড়া মানসিকতার থেকে আর কোনো বিদ্রোহ যাতে তাদের গদিচ্যুত না করে তার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই দেশটি মধ্যযুগীয় একটি ব্যবস্থায় চলে যায়।আজকের পরিচিত লাদেনের প্রচারেও পরবর্তীতে এই ঘটনা এবং এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে না মিটিয়ে গোটা স্থাপনার অপমানকর অবস্থা করার জন্য সৌদি রাজ্ পরিবারের উপর অভিযোগ দেখা যায়।
জুহাইমান সৌদি দূরদর্শনে মহিলাদের দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।এই ঘটনার পরে আর কেউ কোনো মহিলা উপস্থাপিকাকে সৌদি দূরদর্শনে দেখা যায় নি।সম্প্রতি সামাজিক সংস্কারের পরে কিছু হবে কি না জানা গেলেও সেই দিন গুলো এখনো অনুপস্থিত।
পরবর্তিতে বা অন্তিম পর্বে থাকবে বিষবৃক্ষের অবসানের বিষয়ে আশার আলোর বিবরণ।আমার একটি দুর্বলতা আছে আর তা হলো আমি নেতিবাচক বিষয়গুলো একটু এড়িয়ে যাই,হয়তো অনেকেই এটিকে পলায়নী মনোবৃত্তি ভাবতে পারেন তবে আজ পর্যন্ত অনেক এই ধরনের বিষয়ের গভীরে গিয়ে দেখেছি আবার স্ব্দর্থ্ক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে তাই আলাদা করে ওই অন্ধকারের অবসানের বিষয়ে লেখার জন্য রাখলাম চতুর্থ পর্ব।
আমার খুব প্রিয় একটি উদ্ধৃতি আছে ওটা দিয়েই আবার এই পর্ব শেষ করছি, “মাভৈ! রাত যতো অন্ধকার,প্রত্যুষ ততোই নিকটে জানিবেন “ .....হ্যা নির্দিস্ট তথ্যসূত্র আর যুক্তির নিরিখেই এই দাবি আবার রাখলাম।




প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র:
১. দখলমুক্ত করার পরে বাদশার কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দর্শন https://www.youtube.com/watch?v=eCfv0_ee9pw
২. একটু পাকিস্থানের কাগজ থেকে ,আল কায়দার সূচনা হওয়ার বিষয়টি সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এতে https://www.dawn.com/news/503835/thirty-years-on-mecca-mosque-siege-reverberates
৩. একই ভাবে পরবর্তী সন্ত্রাসবাদের যোগ সূত্র নিয়ে সুখপাঠ্য একটি লেখা https://www.thoughtco.com/indispensable-books-on-the-middle-east-2353389
৪. আলোচিত সেই জুহাইমানের সন্তান হয়েছে অন্য রকম একজন সুনাগরিক-প্রমাণিত হয় পরিবেশ একটি বড় ফারাক করে দেয় মানুষের গঠনের https://english.alarabiya.net/en/News/gulf/2018/09/03/Son-of-Juhayman-infamous-Mecca-attacker-promoted-to-be-a-Saudi-Guards-colonel.html
৫. একটু ফিরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা https://www.brookings.edu/events/terrorism-in-saudi-arabia-past-and-present/

কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাসঃ-৩ পর্ব


৩ পর্ব
সৌদি বাহিনীর সমস্যা এবং লড়াইয়ের অন্তিম অবস্থা:
একই সাথে জুহাইমানের সঙ্গে থাকা অনেকেই এই মক্কার মসজিদ আল হারাম এ পড়াশোনার এবং জীবনের একটা বড় অংশ কাটানোর কারণে এই ভূগর্ভের বা পুরো জায়গাটি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানতো।এই কারণে ২০ তারিখ থেকে পরের দিন গুলো এই জায়গায় আক্রমন করতে গিয়ে একের পর এক সৌদি সেনা বা বাহিনীর লোক মারা পড়েছিল।সৌদি রাজশক্তি বুঝতে পারলো,এইভাবে হবে না,অন্য কোন উপায় নিতে হবে।
ফরাসী সহায়তা :
সমাধান পেতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য ফরাসি সরকারের সাহায্য চায় তাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি (Valéry Giscard d'Estaing) র কাছে।ফরাসি রাষ্ট্রপতি গোপনে তাদের ওই সময়ে সদ্য তৈরী সন্ত্রাসবাদ দমনের বিভাগ GIGN এর তিনজন বিশেষজ্ঞকে সৌদি আরবে পাঠান।গোপনে পাঠানো হয় যাতে এই অমুসলিম কোনো রাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো খবর বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রতিক্রিয়া না হয় ওই জন্য।
ফরাসি এই দল কাছের একটি হোটেল তাইফ এ অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে।এরা এই লোকগুলোকে উপরে নিয়ে আসার জন্য ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোতে বিশেষ গ্যাস পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাতে শ্বাস নিতে না পেরে এই লোকগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কক্ষগুলোতে মাটির তলা দিয়ে গর্ত করে বিশেষ গ্রেনেড এর মাধ্যমে এই গুলো ভিতরে ফাটানো হয় যাতে কোনো মৃত্যুর বদলে স্রেফ গ্রেনেড দিয়ে ওই গ্যাস কক্ষে ভরে যায়।এই গ্যাস ব্যবহার বা প্রাসঙ্গিক রসায়নিক ব্যবহারের একটা প্রশিক্ষণ তারা দিয়েছিল সৌদি সেনাদের কারণ অমুসলিম কারোর কাবা বা ওই মসজিদ আল হারাম এ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এই বিশেষ গ্যাসের নাম রসায়নিক হিসেবে বিশাল তবে সংক্ষেপে বলা হয় CB,যা দীর্ঘক্ষণ ফুসফুসে ঢুকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে প্রাথমিক পর্বে এতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হয় আর খোলা জায়গায় যেতেই হয়।
সাফল্যের মুখ দর্শন:
অবশেষে ডিসেম্বরের তিন তারিখ সকালে মাটির নিচের ওই কক্ষগুলোর ভিতরে এই গ্যাসের নিক্ষেপ করার জন্য জমির উপরে গর্ত করে এই গ্যাসের ক্যানিস্টার ফেলা হয় যা ভিতরে গিয়ে ফেটে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ রাখছিল না।এতে আংশিক সাফল্য এসেছিল,লড়াই চলে আরো ১৮ ঘন্টা।অবশেষে ডিসেম্বরের চার তারিখ প্রতিপক্ষের গুলির বা বোমার আওয়াজে বিরতি আসে।
একটি ছোট অপরিসর ভূগর্ভস্থ ঘরে জনা কুড়ি বিদ্ধস্ত,ক্লান্ত,যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলে আতঙ্কিত এই জঙ্গিদের একসাথে দেখা গেলো।এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্রিগেডিয়ার আল দাহারি অনুমান করেন এই সংঘর্ষের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনেই তথাকথিত সেই ঈমাম মেহেদির রূপে থাকা আল কাহতানি মারা পড়েছিল।এই খবর জুহাইমান গোপন রেখেছিল বা নিজেই এক পর্যায়ে একে মেরে বিষয়টি গোপন রেখেছিল।যাই হোক,ঈমাম মেহেদী গুলি বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে না এই লোকগুলোর অটল বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল যা সামগ্রিক মনোবলে আঘাত এসেছিল বলে ধরা হয়।এই পরিপূর্ণ দখলের আগে অবশ্য সৌদি বাহিনী জানতেও পারে নি যে তথাকথিত ইমাম মাহদী বা মেহেদী আগেই মারা গিয়েছে।
এই ঘরগুলোর ভিতরে ওই গাদাগাদি করে থাকা লোকেদের ভিতরে সেনাদল পায় সেই জুহাইমানকে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আল দাহরি নিজেই সনাক্ত করে এই লোকটিকে।পূর্ব নির্দেশের কারণে এবং পুরো বিষয়ের বাকি খবর বের করার জন্য একে আলাদা করে নিয়ে যায়।পুরো একটি সেনা স্কোয়াড এই যুহাইমান কে অক্ষত রাখার জন্য প্রহরাতে নিয়োজিত হয়।
কাবা এবং মসজিদ আল হারাম মুক্ত হওয়ার রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং পরবর্তী কার্যক্রম:
অবশেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ আল হারাম মসজিদ এবং কাবা স্থাপনার পুরো জায়গা মুক্ত হয়েছে ঘোষণা করে।গোটা দেশ এবং বিশ্বের কাছে এই জুহাইমান আর তার বাকি জীবিত সঙ্গীদের স্থির এবং ভিডিও ছবি দেখায়।
সব মিলিয়ে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় ঠিক পনেরো দিন পরে ডিসেম্বর ৫ তারিখের ভোর দেড়টার স্থানীয় সময়ে।একই সঙ্গে প্রিন্স নাইফ সরকারী ভাবে জানায় এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সেনাদল সেই মহম্মদ আল কাহতানির মৃত দেহ খুঁজে পেয়েছে।গুলি এবং অন্য ভাবে ক্ষতবিক্ষত এই মৃতদেহ দেখানো হয় টিভিতে।সৌদি ইন্টালিজেন্স এর প্রধান প্রিন্স তুর্কির মতে এই লোকটিকে জুহাইমান নিজেই খুন করেছিল যাতে জীবিত ধরা পড়ে পুরো মিথ্যের বিষয়টি আরো প্রকট না করতে পারে।
দেশের সাংবাদিকদের বা অন্য মানুষদের এই জায়গাটি দেখানো হলে তারা দেখতে পায় এই লোকগুলো আগুন জ্বালানোর জন্য পবিত্র কোরান ছিড়ে তার পাতা ও ব্যবহার করেছে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সঙ্গীদের মৃতদেহের মুখ যাতে না চিনতে পারে তার জন্য মুখের উপরে এই কাগজ জ্বালিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল।আশা করি পুরো বিষয়টি কত বিভৎস্য আর এই লোকগুলো প্রয়োজনে সবই করতে পারে তার একটা ধারণা পেয়েছেন।
এরপরে সেই ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় রাজা খালিদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টি শেষ হওয়া আর এই দখল মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন।এরপরে বুলেটের ক্ষত বাদে বাকি পুরো স্থাপনা কে এক অতি দ্রুততার সাথে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় পরের দুই দিনের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ছয় তারিখে বাদশা খালেদ একদল উচ্ছসিত নামাজির সাথে এই চত্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আসেন।পুরো ধর্মীয় রীতি মেনে হজর আল আসওয়াদ চুম্বন,কাবা গৃহকে সাতবার রীতি মেনে প্রদক্ষিন এবং জমজম এর জল পান করে আবার পুরনো রীতির সূচনা করেন।এরপরের দিন জুম্মার নমাজ হয় এক অন্য পরিবেশে।এতে অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ আগেই এসে জড়ো হয়েছিল আগের রাত থেকেই।পুরো ইসলামী বিশ্বের দেশগুলোতে এই ঘটনা উপগ্রহর মাধ্যমে সমপ্রসার করা হয়।
হতাহতর বিবরণ এবং জুহাইমানের চরিত্রের এক ঝলক :
যে উদার পথের সমাজ রেখে চলার কাজ শুরু করেছিল এই সৌদি রাজবংশ তার মূল্য দিতে হয়েছিল অতীব কঠিন ভাবে আর তা দিয়েছিল মূলত সৌদি নাগরিকরা।এই ঘটনায় হতাহত মানুষের মধ্যে ১২৭জন বিভিন্ন বাহিনীর মানুষ।এছাড়া তাদের ৪৫১ জন আহত হয়েছিল এই সময়ে।অন্যদিকে সরকারী ভাষ্যে জানা যায় সাধারণ পুন্যার্থীর মধ্যে ২৬জন ওই জায়গায় থাকা মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সৌদি ছাড়াও ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,মিশর এবং বার্মার নাগরিক ছিল।এ ছড়া আহত হয়েছিল একশো জন।
অন্যদিকে এই দখলদারি করা জুহাইমানের দলের ২৬০জনের মধ্যে ১১৭ জন নিহত হয়েছিল,সরাসরি লড়াইয়ে ৯০জন আর পরে হাসপাতালে আরো ২৭জন। গ্রেফতার করা জুহাইমান তার কাজের বিষয়ে কোনো অনুতাপ দেখায় নি বলে জানা যায়।সেই সময়ের সৌদি প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল তাকে এই কাজ কেন করেছে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর ছিল "সবই ভাগ্য " ,তার কিছু চাই কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জল খেতে চায়।এই ঘটনার পরে জুহাইমান আর জীবিত সঙ্গীদের ক্যামেরার সামনে আনা হয়।আরো কিছু পরে হাসপাতালে তার সাথে দেখা হয় প্রিন্স তুর্কির,সেই সময়ে জুহাইমান নির্লজ্জের মতো বাদশা খালেদের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে,এই কাজ করে সে অনুতপ্ত এই বলে।উত্তরে তুর্কি তাকে বলে এই কাজের জন্য সে ক্ষমার যোগ্য না।এই ছিল সৌদি রাজশক্তির সাথে তাঁর শেষ বার্তালাপ।
সৌদি বিচার যেখানে রাজাই শেষ কথা :
জুহাইমানের দলের বাকি ১৪৩ জনের মধ্যে ৬৩জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সৌদি আদালতে।১৯৮০ সালের ৯ তারিখে সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আটটি জায়গায় এদের শিরোচ্ছেদে মৃত্যুর ফরমান জারি করে।কেন আটটি জায়গায়?এই বিষয়ে বাখ্যা দিতে আরো এক শীর্ষব্যক্তি প্রিন্স তুর্কি বলে যে এটি ছিল গোটা সৌদি আরবের বিষয় তাই মুখ্য জায়গাগুলোতে এই কাজগুলো করা হয় যাতে সার্বিক ভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।এই ৬৩ জনের মধ্যে ৪১জন সৌদি নাগরিক,১০জন মিশরের,সাতজন ইয়েমেনের,তিনজন কুয়েতের,একজন সুদানের আর একজন ইরাকের ছিল।যেমন বলেছি,আলাদা করে এদের ১৫জন কে মক্কাতে,১০ জন কে রিয়াদে,মদিনা,দাম্মাম,বুরাইদাহ এবং আবহাতে সাত জন করে,হাইল এবং তাবুক এ পাঁচজন করে এই মৃত্যুদন্ড পাওয়া লোকেদের শিরচ্ছেদ করা হয়।প্রথমে মৃত্যুদন্ড পেলেও পরবর্তিতে কারাদন্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে।এ ছাড়া এই দলে থাকা ২৩ জন মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মহিলাদের ২ বছর করে কারাদন্ড আর শিশুদের নির্দিস্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।জুহাইমানকে ওই ১৫ জনের সাথে মক্কাতে শিরচ্ছেদ করা হয় জানুয়ারির নয় তারিখ,১৯৮০তে ।
সরকারী ভাবে সৌদি প্রশাসন ঘোষণা করে যে এই নানান দেশের লোক যুক্ত হলেও কোনো দেশ এই কাজে উস্কানি দেয় নি বা সাহায্য করে নি।পুরো বিষয়টি একটি ধর্মীয় কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে হওয়া কাজ।জনমানসে এই বিষয়ে কোনো ছাপ পড়েনি,অন্তত কোনো জায়গায় এই নিয়ে কোনো আলোড়ন বা বিক্ষোভ দেখা যায় নি।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টা একটা বিশাল মানসিক ধাক্কা ছিল প্রশাসক বা সাধারণ মানুষের কাছে।
বিষ বৃক্ষের সূচনা বা এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন:
এতে সব শেষ হয় না , সৌদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ঘটনা কট্টরপন্থীদের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সৌদি ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী।এই গোড়া মানসিকতার থেকে আর কোনো বিদ্রোহ যাতে তাদের গদিচ্যুত না করে তার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই দেশটি মধ্যযুগীয় একটি ব্যবস্থায় চলে যায়।আজকের পরিচিত লাদেনের প্রচারেও পরবর্তীতে এই ঘটনা এবং এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে না মিটিয়ে গোটা স্থাপনার অপমানকর অবস্থা করার জন্য সৌদি রাজ্ পরিবারের উপর অভিযোগ দেখা যায়।
জুহাইমান সৌদি দূরদর্শনে মহিলাদের দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।এই ঘটনার পরে আর কেউ কোনো মহিলা উপস্থাপিকাকে সৌদি দূরদর্শনে দেখা যায় নি।সম্প্রতি সামাজিক সংস্কারের পরে কিছু হবে কি না জানা গেলেও সেই দিন গুলো এখনো অনুপস্থিত।
পরবর্তিতে বা অন্তিম পর্বে থাকবে বিষবৃক্ষের অবসানের বিষয়ে আশার আলোর বিবরণ।আমার একটি দুর্বলতা আছে আর তা হলো আমি নেতিবাচক বিষয়গুলো একটু এড়িয়ে যাই,হয়তো অনেকেই এটিকে পলায়নী মনোবৃত্তি ভাবতে পারেন তবে আজ পর্যন্ত অনেক এই ধরনের বিষয়ের গভীরে গিয়ে দেখেছি আবার স্ব্দর্থ্ক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে তাই আলাদা করে ওই অন্ধকারের অবসানের বিষয়ে লেখার জন্য রাখলাম চতুর্থ পর্ব।
আমার খুব প্রিয় একটি উদ্ধৃতি আছে ওটা দিয়েই আবার এই পর্ব শেষ করছি, “মাভৈ! রাত যতো অন্ধকার,প্রত্যুষ ততোই নিকটে জানিবেন “ .....হ্যা নির্দিস্ট তথ্যসূত্র আর যুক্তির নিরিখেই এই দাবি আবার রাখলাম।




প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র:
১. দখলমুক্ত করার পরে বাদশার কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দর্শন https://www.youtube.com/watch?v=eCfv0_ee9pw
২. একটু পাকিস্থানের কাগজ থেকে ,আল কায়দার সূচনা হওয়ার বিষয়টি সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এতে https://www.dawn.com/news/503835/thirty-years-on-mecca-mosque-siege-reverberates
৩. একই ভাবে পরবর্তী সন্ত্রাসবাদের যোগ সূত্র নিয়ে সুখপাঠ্য একটি লেখা https://www.thoughtco.com/indispensable-books-on-the-middle-east-2353389
৪. আলোচিত সেই জুহাইমানের সন্তান হয়েছে অন্য রকম একজন সুনাগরিক-প্রমাণিত হয় পরিবেশ একটি বড় ফারাক করে দেয় মানুষের গঠনের https://english.alarabiya.net/en/News/gulf/2018/09/03/Son-of-Juhayman-infamous-Mecca-attacker-promoted-to-be-a-Saudi-Guards-colonel.html
৫. একটু ফিরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা https://www.brookings.edu/events/terrorism-in-saudi-arabia-past-and-present/

Posted at November 18, 2018 |  by Arya ঋষি

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top