All Stories
১৮৮৩ সাল। ফিলোসফিক্যাল ট্রানজাকশন অব দ্য সোসাইটির পত্রিকায় বৃটিশ জ্যোতির্বিদ জন মিশেল একটি গবেষণাপত্র লেখেন। মিশেল অদ্ভুত এক বস্তুর কথা বলেন সেখানে। ভীষণ ভারী বস্তুটা, আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যদি ঘনত্বও খুব বেশি হয়, মিশেল বলেন, সেই নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় বল হবে অনেক শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী? সেটা ঠিকঠাক গণনা করে বলতে পারেননি মিশেল। বলেছিলেন, এতটাই বেশি সেই মহাকর্ষ টান, সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। আর আলোই যদি বেরোতে না পারে, সেই নক্ষত্রকে আমরা কখনোই দেখতে পাব না। কিন্তু মিশেল এই ধারণা কেন করলেন?
মিশেলের এই ধারণার পেছনে ছিল নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব। নিউটন মনে করতেন, আলোক রশ্মি শুধুই রশ্মি নয়, কণাও। আর আলো যেহেতু কণা, তাই আলো বোধ হয় তাঁর গতিসূত্র মেনে চলে। মেনে চলে মহাকর্ষ তত্ত্বও। নিউটনের আলোর কণা তত্ত্ব বহুদিন পর্যন্ত রাজত্ব করে।
মিশেলও নিউটনের সঙ্গে একমত ছিলেন। মিশেলের পক্ষে ছিল নিউটনের মুক্তিবেগ। নিউটন বলেছিলেন, পৃথবী কিংবা সূর্যের মতো ভারী বস্তুগুলো মহাকর্ষ বল দিয়ে ছোট বস্তুগুলোকে নিজের বুকে আটকে রাখে। ছোট বস্তুকে যদি সেই মহাকর্ষ টান এড়িয়ে মহাশূন্যে ছুটে যেতে হয়, তাহলে তাকে পৃথিবীর মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার (৭ মাইল)। রকেটের বেগ সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেশি। তাই রকেট পৃথিবীর মহাকর্ষ টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে পারে। মিশেল বলেন, সেই ভারী নক্ষত্রটার ভর এতটাই বেশি হবে, তার মুক্তিবেগ হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। তাই সেটার মহাকর্ষক্ষেত্র থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারবে না। মিশেল সেই ভারী আলোখেকো বস্তুটার নাম দিলেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণতারা।

মহাকর্ষের পটভূমি

১৬৬৫ সাল। ব্রিটেনে তখন প্লেগের মহামারী। কাতারে কাতারে লোক মরছে। ভয়ার্ত মানুষগুলো আতঙ্কে দিশেহারা। প্রাণভয়ে পালাচ্ছে শহর ছেড়ে। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজেও লেগেছে মহামারীর বাতাস। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ বিজ্ঞানীও ভীত। ক্যামব্রিজ ছেড়ে চলে গেলেন লিঙ্কনশায়ারের খামারবাড়িতে। সেখানে তাঁর মা আর সৎ বাবা বসবাস করেন। সেই গ্রীষ্মটাই মোড় ঘুরিয়ে দেয় পদার্থবিজ্ঞান ইতিহাসের। এটা নিয়ে প্রায় রূপকথার মতো একটা গল্পও চালু হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। আপেল পড়ার গল্প। নিউটন একদিন আত্মমগ্ন হয়ে বসে ছিলেন একটা আপলে গাছের নিচে। হঠাৎ একটা আপেল গাছ থেকে পড়ে মাটিতে। নিউটনের মাথায় তখন একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। আপেলটা মাটিতে পড়ল কেন? কেন ওপরে উঠে গেল না? তাহলে কি পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে?
নিউটন
রোমান্টিকদের বিশ্বাস সেদিনের সেই আপেল পড়ার ঘটনাই মহাকর্ষ বলের হদিস পাইয়ে দেয় নিউটনকে। এ গল্প সত্যি কি মিথ্যা, নিশ্চিত করে বলার জো নেই। সত্যি হতেও পারে। তবে স্রেফ একটা আপেল পড়ার ঘটনা থেকে মহাকর্ষ বলের জন্ম, একথা বিশ্বাস করা কঠিন। নিউটন অনেক দিন থেকেই মহাকর্ষ বল নিয়ে ভাবছিলেন। হাতড়াচ্ছিলেন কীভাবে এই রহস্য সমাধান করা যায়। লিঙ্কনশায়ারের সেই আপেল পড়ার ঘটনা হয়তো নিউটনের ভাবনার জগতে গতি এনে দিয়েছিল। কিন্তু শুধু সেই ঘটনার কারণেই মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার হয়নি এটা সত্যি। কারণ মহাকর্ষ বল নিয়ে নিউটনের আগে অনেক বিজ্ঞানীই ভেবেছেন। যদিও তাঁরা সমাধান বের করতে পারেননি।
মহাকর্ষ বলটা কী? আমরা যে পৃথিবীর ওপর হাঁটছি, ঘুরছি-ফিরছি পৃথিবীর বুক থেকে অনন্ত মহাশূন্যে পড়ে যাচ্ছি না, সেটা মহাকর্ষ বলের কারণেই। আবার ওই যে পড়ে যাবার কথা বললাম, সেটাই বা কেমন? গাছের আপেল মাটিতে কেন পড়ে? কেন কোনো কিছু ওপরে ছুড়ে মারলে তা আবার নিচে ফিরে আসে, মাটিতে আছাড় খায়? এর পেছনে একটাই বল কাজ করছে। মহাকর্ষ বল। অনন্ত মহাবিশ্বে আমরা পড়ছি না, কারণ পৃথিবী তার আকর্ষণ শক্তি দিয়ে আমাদের ধরে রেখেছে। আবা মহাশূন্যে বিশাল বিশাল অঞ্চল ফাঁকা। একদম কিছুই নেই। কী পরিমাণ ফাঁকা সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। ফাঁকা বলে সেখানে মহকর্ষ বলের কারসাজিও কম। তাই সেখানে পড়াপড়ির বিষয়টা কল্পনাও করা যায় না। তাহলে আমরা পৃথিবীর বুক থেক মহাশূন্যে পড়ছি না একই সাথে দুটো কারণে। পৃথিবী তার মহাকর্ষ টানের সাহায্যে আমাদের ধরে রেখেছে। আর মহাশূন্যের ফাঁকা অঞ্চলে আকর্ষণ করার মতো কিছু নেই যে আমারা মহশূন্যে কোনো এক দিকে ঝাঁপ দিলেই সেদিকে ভীমবেগে পড়ে যাব।
নিউটন মহাশূন্য বলটা একেবারে খাতা-কলমে প্রমাণ করেছেন। তাই বলে কি প্রাচীনকালের মানুষ মহাকর্ষ বলের কোনো হদিস জানত না। জানত এক প্রকার। সেটাকে আসলে মহাকর্ষ বললে মশকরা করা হবে। প্রাচীন গ্রিসেই আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয়। গ্রিক পণ্ডিত মনে করতেন বস্তুর মাটিতে পড়ার পেছনে স্বর্গীয় ব্যাপার-স্যাপার জড়িয়ে আছে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয়, সেসব বস্তু ওপরে নিক্ষেপ করলে আবার মাটিতে ফিরে আসবে। যেসব বিষয়গুলো মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারত না, সেখানেই হাজির হতো দেবতা, শয়তান, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি অলৌকিক বিষয়। গ্রিক দার্শনিকদের কাছে বস্তু কেন মাটিতে পড়ে তার ব্যখ্যা ছিল না। তেমনি যেসব বস্তু ওপরে উঠে যায়, তার কারণও তাঁদের জানা ছিল না। আদিম যুগে মানুষ আগুন দেখে ভয় পেত। দিশেহারা হয়ে পড়ত বনের দাবানলে। আগুনের কাছে একদম অসহায় ছিল সেই মানুষগুলো। তাই আগুনকে পুজো করত আদিম যুগের মানুষেরা। অনেক পরে মানুষ আগুনের ব্যবহার শেখে। তখন দেবতার আসন হারায় আগুন। অবশ্য এই আধুনিক যুগেও কোনো কোনো সমাজে আগ্নিপুজো করা হয়ে। তবে তাদের সংখ্যা নগন্য, তারা ব্যতিক্রম।
গ্রিক যুগেও এমন বহু বহু বিষয়কে অলৌকিক মনে করা হত। যেমন আগুন ওপরে উঠে যায় কেন? ওপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প, ধোঁয়া, বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ইত্যাদি। এর ব্যাখ্যা গ্রিক দার্শনিকদের কাছে ছিল না। তাই এগুলোর সাথে স্বর্গের যোগ আছে বলে মনে করতেন। তাই এরা স্বর্গের টানে ওপরে উঠে যায়।
আকাশের জ্যোতিষ্কমণ্ডলি দেখা যায় খোলা চোখেই। কত কত তারা আকাশে। একই তারা নিয়ে একেক দেশে একেক গল্প চালু আছে। তারাদেরও নামও আলাদা। একই তারা কোনো দেশে দয়াময় দেবতা, কোনো দেশে আবার ভয়ঙ্কর দানব। কেন এমন হলো? এর পেছনরে কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। কালপুরুষ যখন আকাশের গায়ে ঝলমল করে তখন হয়তো কোনো দেশে সবুজ ফসলে ভরে ওঠে। আবার একই সময়ে কোনো দেশ হয়তো তলিয়ে যায় বানের জলে, কোনো দেশ হয়তো ভয়ঙ্কর খরায় পুড়ে ছারখার। যে দেশ সবুজ ফসলে ভরে ওঠে, সেই দেশ হয়তো কালপুরুষ দয়াময় দেবতা হিসেবে গণ্য হয়। বন্যা কিংবা খরা কবলিত দেশগুলোতে কালপুরুষকে দেখা হয় ভয়ঙ্কর দানবরূপে। এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠে পৌরণিক কাহিনিগুলো। সেসব কাহিনির নায়ক-নায়িকা, ভিলেন, দানব, রাক্ষস, দেব-দেবী সব চরিত্রগুলোই গড়ে উঠেছে কোনো না কোনো তারাকে ঘিরে। সমাজের সুখ-দুঃথ, হাসি-কান্না, বন্যা, মহামারি জড়িয়ে আছে সেসব কাহিনির আড়ালে। মানুষ নিজে যা করতে পারে না, সেই অসম্ভব কাজগুলো করিয়ে নেই কল্পকাহিনির চরিত্রগুলো দিয়ে। এভাবেই সেসব চরিত্র মিশে যায় মানুষের দৈননন্দিন জীবনে। আর সেই কল্প কাহিনির চরিত্রগুলো খুঁজে নেয় রাতের আকাশে, কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের ভিড় থেকে।

প্রাচীন যুগেই জন্ম পুরাণ কাহিনিগুলো। তখনই সুত্রপাত জ্যোতির্বিদ্যার। মানুষ আকাশের তারা দেখে পথ চিনতে, চাষ-বাসের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে শেখে। সেকালে তাঁরা দেখে কিছু মানুষ ভবিষ্যৎ বলতে পারত। তাদের বলা হত গণক ঠাকুর কিংবা জ্যোতিষ। এর বেশিরভাগ বুজরুকি। তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো ফলে যেত। তবে সেটা মোটেও ভাগ্য গণনা করে নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ বিশ্লেষণ করে কিছু মানুষ পেয়ে যেত আবহাওয়ার আগাম সংবাদ। কৃষিনির্ভর সেই সমাজে আগাম আবহাওয়ার সংবাদ জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নিউটনের মহাকর্ষে

সেকালে গ্রিসে পৃথিবীকে সমতল মনে করত মানুষ। তখন স্বাভাবিকভাবেই উপর-নিচ-এর ধারণাটা ছিল পরম। তখন মনে করা হতো যেসব বস্তু বা প্রাণী স্বর্গীয় তাদের অবস্থান উপরে, স্বর্গপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় তাদের অবস্থান মাটিতে কিংবা পাতালপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় সেগুলোকে ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে একটা সময় আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। তারপর এক সময় প্রমাণ হলো পৃথিবী সমতল নয়, গোলাকার। তখন উপর-নিচের অগের তত্ত্ব ভেঙে পড়ল। তাই পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে আগের ধারণা আর টিকল না। বস্তু কেন ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে তা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে তার নতুন সমাধান দরকার হয়ে পড়ল।
 টলেমি
তখন অ্যারিস্টোটল জোড়াতালি দিয়ে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন। সেটা হলো,পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। আকাশের সব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সকল বস্তুর গতি তাই পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে। এজন্য বস্তুকে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলেও তা পৃথিবীতে ফিরে আসে। সে সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অ্যারিস্টোটলের প্রভাব ব্যাপক। সবাই চোখ বুঁজে অ্যারিস্টোটলের থিওরি মেনে নিলেন। পরে খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে টলেমি নামে এক দার্শনিক মহাবিশ্বের একটা মডেল দাঁড় করালেন। সেটা অ্যারিস্টোলের মতের সাথে মিল রেখেই। টলেমির মডেল মহাবিশ্ব বেশ কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর কেন্দ্রে আছে পৃথিবী। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে যথাক্রমে চাঁদ, শুক্র, সূর্য ও মঙ্গল। এর সবাই আছে একই সরল রেখায়। অন্যগহগুলো তখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সেগুলোর স্থান হয়নি টলেমির মডেলে। একবারে বাইরের স্তরে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে আছে আকাশের অন্য তারাগুলো। টলেমির সেই মডেল দেখে এখনকার প্রথম শেণি পড়ুয়া একটা বাচ্চাও হাসবে। কিন্তু সেকালে গোটা পৃথিবীর লোক সেই মডেল মেনে নিয়েছিল।
টলেমির মডেল
ষোড়শ শতাব্দীতে এসে বাঁধল গোল। পোলিশ জৌতির্বিদ নিকোলাস কোপর্নিকাস বললেন, অ্যারিস্টোটলের মতবাদ ভুল। বললেন, সূর্য নয়, বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে একটা বইও লিখলেন কোপার্নিকাস। বইটি ছাপা হলো তাঁর মৃত্যুর আগমুহূর্তে। কিন্তু কোপার্নিকাসের কথা কেউ বিশ্বাস করল না।
টাইকো ব্রাহে ছিলেন প্রাগের সম্রাট দ্বিতীয় রোদলফের গণিতজ্ঞ। সম্রাটের রাজ জ্যোতিষিও। তিনি মহাকাশের তারাদের নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। টাইকোর সহকারী ছিলেন জোহান কেপালার। টাইকোর মৃত্যুর পরে তাঁকেই বসানো হয় স¤্রাটের গণিতজ্ঞ ও প্রধান রাজ জ্যোতিষির পদে। সেকালে রাজ জ্যোতিষির প্রধান কাজই হলো সম্রাটের ভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করা, তারাদের গতিপথ দেখে রাজ্যের ভালোমন্দের আগাম খবর জানানো। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে দেশে এসব রাজ জ্যোতিষিরাই ছিল রাজা-বাদশাহদের প্রধান মন্ত্রণাদাতা। তাঁরা বুজরুকি করে রাজাদের ভুল পথে চালাতেন। প্রজাদের ওপর অবর্ণনীয় নীপিড়ন নেমে আসত এসব রাজ জ্যোতিষিদের বুজুরুকির কারণে।
কেপলার ছিলেন একদম আলাদা। ভবিষ্যৎ গণনায় মোটেও আগ্রহ ছিল না তাঁর। তবুও সম্রাটের অনুরোধে কিছু কিছু গণানা করতেন। তবে তিনি স্বীকার করতেন এসবে কোনো অলৌকিকতা নেই। আবহাওয়ার মেজাজ-মর্জি বুঝেই করতেন কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী। রাজাকে বলতেন এরজন্য জ্যোতিষ হওয়ার দরকার নেই। একটু জ্ঞান থাকলে যে কেউই এ কাজ করতে পারে। রাজা রোদলফও কেপলারকে পীড়াপিড়ি করতেন না। কেপলার তাঁর শিক্ষক ছিলেন। যথেষ্ঠ সম্মান করতেন তিনি কেপলারকে। কেপলার কোপার্নিকাসের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। সেটা ক্যাথোলিক ধর্মমতের বিরোধি। তবু রাজা রোদালফ তাঁকে বাঁধা দেননি গবেষণায়। রোদলফ অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না। রাজ গণিতজ্ঞের পদে বসিয়ে কেপলারকে তিনি জ্ঞানচর্চার প্রসারেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কেপলারের স্বাধীনতা ছিল, তিনি জ্যোর্তিবদ্যার চর্চা করতেন। গ্রহ-নক্ষত্রদের চলার পথ নিয়েও করেছিলেন গবেষণা। কিন্তু তাঁর হাতে ভালো কোনো টেলিস্কোপ ছিল না।
সেই সময় ইতালিতে গ্যালিলিওর ব্যাপক নামডাক। নানা রকম যন্ত্রপাতি তৈরি করে তিনি সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল টেলিস্কোপ। এর আগেও টেলিস্কোপ ছিল না তা নয়। তবে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপের ধারেকাছেও ছিল না আর কারও টেলিস্কোপ। গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আকাশ দেখেন। তারপর ঘোষণা করেন কোপার্নিকাসই ঠিক। কেপলারের মতো অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না গ্যালিলিও। প্রাগের সম্রাটের মতো রোমান সম্রাট অতটা মহানুভব ছিলেন না। তাছাড়া রোমের ভেতরেই তো পোপোর ভ্যাটিকান। তাঁদের কথাই ইতালি তথা ইউরোপে দৈব বাণী। ভ্যাটিক্যানের বিরোধিতা করে এমন বুকের পাটা ইতালিতে কারও ছিল না। খ্রিস্টান ধর্ম আসলে অ্যারিস্টোটলের মতের বাইরে যেতে পারেনি। এজন্য তাঁকে অবর্নণীয় নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। এরপর কেপলার দেখালেন কীভাবে, কোন পথে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে। তিনি গ্রহগুলোর চলার পথের জন্য গাণিতিক সূত্রও আবিষ্কার করলেন।
কেনই বা সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলো ঘুরছে। কেন ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে না অনন্ত মহাকাশের দিকে? এ প্রশ্নের সমাধান তিনি দিতে পারলেন না। সমাধান এলো সপ্তদশ শতাব্দীতে। নিউটনের হাত ধরে।

নিউটন দেখালেন, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী এমনি এমনি ঘোরে না। এদের ভেতরে এক ধরনের অদৃশ্য আকর্ষণ বল আছে। সেই আকর্ষণ বলের নাম মধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বল শুধু সূর্য আর গ্রহগুলোর মধ্যেই নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুর ভেতর ক্রিয়া করে।
নিউটন মহাকর্ষ বলের জন্য একটা সূত্র দিলেন। সেটা হলো, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের মান তত বেশি হবে যত বস্তুদুটোর ভর বেশি হবে। যেকোনো একটার ভর বাড়লেও মহাকর্ষ বলের মান বাড়ে। কিন্তু বস্তু দুটোর মধ্যে দূত্ব যত বাড়ে তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় টান তত কমে। এই কমা আবার সহজ-সরল ভাবে কমা নয়, বর্গাকারে। অর্থাৎ দূরত্ব যদি বেড়ে দ্বিগুণ হয় তবে মহকর্ষ বলের মান কমে আগের মানের এক চতুর্থাংশে নেমে আসবে।
পৃথিবীতে আমরা হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছি, কোনও বস্তু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ছিটকে মূহশূন্যে চলে যাচ্ছ না, এর কারণও ওই মহাকর্ষ বল। নিউটন দেখালেন মহাকর্ষ বল শুধু আকর্ষণই করে, বিকর্ষণ করে না কখনও।
ভারী বস্তুর মহাকর্ষীয় প্রভাব কতদূর পর্যন্ত কাজ করে?
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলে এর প্রভাব অসীম পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু এটাও ঠিক এই বল খুবই দুর্বল। মহাবিশ্বে, পৃথিবীতে মহাকর্ষ বল ছাড়াও আরও তিন রকম বলের হদিস বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল আর দুর্বল নিউক্লিয় বল।
মহাকর্ষ বল কতটা দুর্বল তার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। শুকনো তেলহীন মাথার চুলে একটা চিরুনি ঘষুন। আর মাটিতে ছড়িয়ে দিন কিছু কাগজের টুকরো। এবার ঘষা চিরুনিটা নিয়ে যান কাগজের টুকরোগুলোর কাছাকাছি। চিরুনি কাগজের টুকরোগুলোর কাছে পৌঁছনোর আগেই সেগুলো লাফ দিয়ে উয়ে আসবে চিরুনির গায়ে। এটা কেন হলো? চিরুনি মাথার চুলে ঘষা হয়েছিল। তাই ওতে তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎচ্চুম্বকীয় বলের একটা ক্ষেত্র। সেই বিদ্যুৎচুম্বক ক্ষেত্রই আকর্ষণ করেছে কাগজের টুকরোগুলোকে। কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছিল পৃথিবী তার সমস্ত মহাকর্ষ বল দিয়ে, সমস্ত ভর ভর ব্যবহার করে- নিউটনের সূত্র আমাদের তা-ই শেখায়। অন্যদিকে চিরুনিতে তৈরি হয়েছে খুব সামান্য বিদ্যুৎশক্তি। এইটুকুন বিদ্যুৎচ্চম্বকীয় শক্তির কাছে হার মেনেছে গোটা পৃথিবীরর মহাকর্ষ বল। সামান্য বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল পৃথিবীর বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কাগজের টুকরোগুলোকে মহাকর্ষীয় বলকে কাঁচকলা দেখিয়ে।
চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরো তোলা হলো। তারমানে এই নয়, টুকুরোগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবমুক্ত হলো। চিরুনি, আপনি, কাগজ-সবই তো পৃথিবীর মহাকর্ষেও ক্ষেত্রের মধ্যেই রয়েছে। পৃথিবীর আকর্ষণ বল সবার ওপরই কাজ করছে। পৃথিবীর মহাকর্ষক্ষেত্রের ভেতর দাঁড়িয়ে অনেক হম্বিতম্বি করা যায়। পৃথিবীর কথাই ধরা যাক। এর মহাকর্ষ বলের সীমা অসীম। কিন্তু বস্তুকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে হলে সেই বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের থাকতে হবে। এই দূরত্বের বাইরের বস্তুকে পৃথিবী তাঁর নিজের বুকে টেনে নিতে পারবে না। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সেই দূরত্ব পর্যন্ত পৃথিবীর চারপাশের এলাকাকে মহাকর্ষ ক্ষেত্র বলে।
বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে তাঁর মহাকর্ষ ক্ষেত্র কত দূর পর্যন্তর বিস্তার করে থাকবে। যেমন সূর্যের এই মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সীমা পৃথিবী থেকে অনেক বেশি। আবার বুধ গ্রহের মহাকর্ষ সীমা পৃথিবীর থেকে অনেক কম।
আবার আরেকটা কথাও সত্যি। এই মহকর্ষ ক্ষেত্রের ভেতর থেকে কোনো হালকা বা গতিশীল বস্তুও বেরিয়ে যেতে পারে না। যেমন পারে না বায়ুমণ্ডলও।
বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় পদার্থগুলো পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। কারণ, গ্যাসের প্রতিটা পরমাণুকে পৃথিবী মহাকর্ষ বল দ্বারা নিজের দিকে টানছে। অনেকে হয়তো পালটা যুক্তি দেখাবেন। বলবেন, মহাকর্ষ বলই যদি গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু বা অণুগুলোকে আকর্ষণ করে রাখে তবে তাদের কেন এত ওপরে ওঠার প্রবণতা?
একটা কথা বোধহয় কারো অজনা নয়, কঠিন পদার্থের ভেতর অণু-পরামণুগুলো বেশ শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধনের কারণে গায়ে গায়ে লেগে থাকে।  এদের অণু-পরমাণুগুলো তাই মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না। নিতান্ত ভঙ্গুর না হলে একটা হালকা কঠিন পদার্থের ওপর তুলানামুলক ভারী কোনো কঠিন পদার্থ রাখলেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু তরল পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো অনেকটা মুক্তভাবে থাকে। অনেকগুলো তরল পদার্থ একটা পাত্রে যখন রাখা হবে, তখন একটা হিসাব নিশ্চিতভাবে এসে যাবে- কে ওপরে থাকবে আর কে নিচে থাকবে। এখানেও এদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় মহাকর্ষ বল। যে তরলের ঘণত্ব বেশি তার ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব বেশি থাকবে। তাই তুলনামূলক ভারী তরলটা মাহাকর্ষ টানের ফলে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকতে চাইবে। অন্যদিকে হালকা তরলের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব তুলনামূলক কম হওয়ায় সে ভারী তরলকে নিচের দিকে জায়গা ছেড়ে দেবে। আর নিজে উঠে যাবে ওপরে। এক বালতি পানির ভেতর কিছু মধু ঢেলে দেখলেই এ ব্যাপারটার সত্যতা মিলবে।
ঠিক ওপরের মতোই ঘটনা ঘটে গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থে। গ্যাসীয় পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো বলতে গেলে প্রায় মুক্তভাবে থাকে। সুতরাং এদের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাবও থাকে অনে কম। তবুও তো থাকে। আমাদের গোটা বায়ুমণ্ডলটাকে বলা যায় গ্যাসীয় পদার্থের সমুদ্র। সব গ্যাসের ঘনত্ব যেমন সমান নয়, তেমনি সব গ্যাসের পরমাণু সমান ভারী নয়। স্বাভাবিকভাবেই ভারী ও বেশি ঘনত্বের গ্যাসগুলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে। হালকা গ্যাসগুলো উঠে যায় ওপরের দিকে।
এখানে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে, বায়ুমণ্ডলের স্তর যেখানে শেষ, অন্যবস্তুকে নিজের বুকে টেনে আনার ক্ষমতার সীমাও কি সেখানে শেষ ?
না, সেখানে নয়। আমাদের পৃথিবীতে মোট যে গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ তা দিয়ে মহাকর্ষ সীমার পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বায়ুমণ্ডলীয় সীমার বাইরেও মহাকর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে। বায়ুর ছড়িয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্যের কথা ভাবলে এই প্রশ্নটা মাথায় এসে যেতে পারে। এ কথা ঠিক, গ্যাসের পরিমাণ যাই হোক, তাকে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তার সবটুকু আয়তন ওই গ্যাস দখল করে। কিন্তু মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে এমন গ্যাস পাত্র হিসেবে ধরলে চলবে না, কারণ গ্যাস পুরো ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যেতে চাইলেও মহাকর্ষ বলের টান তা হতে দেয় না।
চাইলেই কি মহাকর্ষ অগ্রাহ্য করা যায়?
অনেক পুরোনো প্রশ্ন। চাইলেই সব কিছু সম্ভব। তবে এজন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। নিউটনের মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সাতে বস্তুর গতি জড়িয়ে। একমাত্র গতিই পারে বস্তুকে মহাকর্ষক্ষেত্রকে উপেক্ষা করে বস্তু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে। সেটা কীরকম গতি? এর ব্যাখ্যায় নিউটন টেনেছিলেন একটা কামানের উদাহরণ। তাঁর প্রিন্স্রিপিয়া অব ম্যাথমেটিকা বইটির ৩ নং ভলিউমের ৬ নং পৃষ্ঠায় ছিল বিস্তারতি ব্যাখ্য। সাথে একটা ছবিও ছিল। সেই ছবিটাই এখানে দেওয়া হলো।

ধরাযাক, খুব উঁচু একটা পাহাড়। সেই পাহাড়ের ওপর একটা কামান রাখা হলো। কামান থেকে একটা গোলাটা কিছুদূর গিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। নিউটনের প্রথম সূত্র বলে, বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ নাক করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির। আর গতিশীল বস্তু সুষম বেগে চলতে থাকবে অনন্তকাল। নিউটনের এই সূত্রটা কাজ করে যেখানে বাহ্যিক বলের প্রভাব নেই, শুধু সেখানেই। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে মহাকর্ষ বলের প্রভাব রয়েছে। তাই পাহাড় থেকে ছোড়া কামানের গোলা কামান থেকে সোজা পথে চলতে পারবে না একটানা। পৃথিবরে আকর্ষণে গোলার অভিমূখ ক্রমেই নিচের দিকে বেঁকে যাবে। এবং বাঁকানো পথে মাটিতে আঘাত করবে। এতো প্রথমবার ।
এবার কামানের শক্তি একটু বাড়িয়ে দিন। সেই শক্তি গোলার ওপর বাড়তি বল প্রয়োগ করবে। ফলে গোলাটার গতি প্রথমবারের চেয়ে বেশি হবে। তাই আগের বারের একটু বেশিদূর যেতে পারবে গোলাটি। অর্থাৎ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রথমবারের তুলনায় বেশিক্ষণ লড়তে পেরেছে দ্বিতীয় গোলাটি। এভাবে আরেকটি বেশি গতি বাড়ালে গোলা আরো বেশি দূর যেতে পারবে। পর্যায়ক্রমে কামানের শক্তি যদি বাড়তেই থাকে, ফলে যদি গোলার ওপর ধ্বাক্কা বলও পর্যায়ক্রমে বাড়ে, তাহলে প্রতিবারই একটু একটু বেশি দূরত্বে গিয়ে পড়বে কামানের গোলা।
পৃথিবী গোলককার। কামানের গোলায় বাঁকানো পথে গিয়ে পড়ছে মাটিতে। ধরা যাক, কামানের শক্তি এতটাই বাড়ানো হলো কামানটি পেরিয়ে গেল হাজার কিলোমিটার। হ্যাঁ, এটা ঠিক কামানের গোলার অত শক্তি নেই। তবে এ যুগের মিসাইলগুলো কিন্তু অতদূর যেতে পারে। নিউটনের পরক্ষীটা ছিল পুরোটাই কাল্পনিক। কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে তা অসম্ভব নয়। তাই আমরাও কামানের গোলা দিয়েই পরীক্ষাটাকে আরেকটু এগিয়ে নিই।
ধরা যাক, এবার আরও বেশি ভল প্রয়োগ করে কামানের গোলাটা ছোড়া হলো। এবার সে গিয়ে পড়ল ২০৫০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর পরীধির অর্ধেক পথ সে পাড়ি দিয়ে ফেলল বাঁকানো পথে। এবার ধাক্কা বল দ্বিগুন করে ফেলি। তাহলে গোলাটা নিশ্চয়ই আর দ্বিগুন দূরে গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ কামান থেকে ৪১ হাজার কিলোমিটিার পথ দূরে গিয়ে পড়বে। কিন্তু পৃথিবী গোল। সর্বোচ্চ পরিধি ৪০০৭৫ কিলোমিটার। সূতরাং কামানের গোলাটা এবার বাঁকানো গোলাকার পথে গোটা পৃথিবীকেই পদক্ষিণ করে ফেলবে।
কিন্তু কামান দাঁড়িয়ে আছে তার চলার পথে। গোলাটা পুরো পৃথিবী ঘুরে কামানের পেছনে এসে ধাক্কা মারবে। পৃথিবী ঘুরে আসতে লাগবে অনেক সময়। ততক্ষণে যদি আমরা কামানটাকে সরিয়ে নিই পাহাড় থেকে, তাহলে কি হবে?
সাদা চোখে দেখলে মনে হবে, কামানের সামনের দিক থেকে ছোড়া গোলা পুরো পৃথিবী ঘুরে এসে কামানের পেছন বারাবর আসতে ৪০০৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু গোলার ওপর যে বল প্রয়োগ করা হয়েছে তাতে কামান সেই পাহাড় পেরিয়ে আরও ৯২৫ কিলোমিটার সামনে এগিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ার কথা। কিন্তু কামানের গোলো সেখানেও পড়বে না।  নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র মেনে ঘুরতেই থাকবে বার বার। ঠিক যেভাবে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। তেমনিভাবে কামানের গোলাটিরও একটি কক্ষপথ তৈরি হবে পৃথিবীর চারপাশে। অবিরাম সে ঘুরতেই থাকবে, যদি বাতাসের বাধা না থাকে।
বাতাসের বাঁধা নেই। কিন্তু মহাকর্ষের প্রভাব আছে। তাই কামানের গোলাটা ভূপৃষ্ঠে পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে গোলার গতিশক্তি। আসলে তখন গোলাটার গতিশক্তির কারণে একটা একটা বল তৈরি হচ্ছে। সেই বলটা চাইছে গোলাটাকে পৃথিবীর আকর্ষণ কাটিয়ে একটা সোজা পথে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পৃতিবীর মহাকর্ষ বল। মহকর্ষ বল গোলটাকে টেনে পৃথিবীতে নামাতে চাইছে। সেটাতে সে আগে সফলও হয়েছে, নামাতে পেরেছে কামানের গোলাকে। তখন অবশ্য গোলার গতিশক্তি কম ছিল। কিন্তু এখন আর গোলার গতিশক্তি মহাকর্ষীয় বলকে ছেড়ে কথা কইবে না। শুরু হবে দুই বলের লড়াই। এ লড়াইয়ে দুই বলের শক্তিই সমান। তাই কেউ কাউকে হারাতে পারবে না। কামানের গোলা গতিশক্তি নিয়ে সোজা চলতে চায়, পৃথিবীর মহাকর্ষ তাকে সেই চলায় বাধা দেয়। যেহেতু দুটোরই শক্তি সমান, তাই গোলাও মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে না। আবার মহাকর্ষ বলও গোলাকে টেনে মাটিতে নামাতে পারে না। তখন গোলাটা পৃথিবীর কক্ষপথে অবিরাম ঘুরবে।
ধীরে ধীরে কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। মহাকর্ষ বল অজেয় নয়। যত বেশি বলে কামান গোলা ছুড়ছে, গোলার গতি তত বাড়ছে, পৃথিবীর মহাকর্ষ বলকে তত বেশি পরাস্ত করে গোলা দূরে সরে যেতে পারছে। তারপর গোলা যখন একটা নির্দিষ্ট গতি লাভ করছে তখন মহাকর্ষ আর গোলার শক্তি সমান হচ্ছে।
কিন্তু এমন কি হতে পারে না, এই যুদ্ধে গোলা জিতে যাবে!
নিশ্চয়ই পারে। পাঠকদের বুঝতে বাকি নেই, সেটা পারে একমাত্র গতি বাড়িয়েই। হ্যাঁ, গোলার গতি একটা সময় এমন হতে পারে যখন পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের আর সাধ্য নেই গোলাকে আটকে রাখে। তখন গোলাটা সোজা সেই গতিতে ছিটকে চলে যাবে মহাশূন্যের গহীনে।
নূন্যতম যে বেগে চললে গোলাটা মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে, সেটাই হলো পৃথিবীর মুক্তিবেগ। গোলার বেগ যদি সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার হয়, তাহলে সেটা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু কামানের সাধ্য নেই অত বেগে গোলা ছোড়ার। নিউটনের সময় কামানই ছিল গোলা নিক্ষেপের মোক্ষম হাতিয়ার। এরচেয়ে ভালো নিক্ষেপক আর ছিল না। কিন্তু মানুষ থেমে থাকে না, বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তিকেও এগিয়ে নেয় সমান তালে। বিংশ শতাব্দীতেই রকেট এসেছে। এই রকেটের কতই না ব্যবহার। যুদ্ধক্ষেত্রে ছোট্ট গোলা ছুঁড়তে কিংবা দূরদেশে মিসাইল দিয়ে আঘাত হানতে যেমন রকেট করিৎকর্মা, মহাশূন্যযানগুলো পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রকেটের সাহায্যে। মানুষ যেদিন চাঁদে মহাকাশযান পাঠালো, সেদিনই নিউটনের সেই কামানগোলা পরীক্ষার সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া গেল। পৃথিবীর মুক্তবেগের চেয়ে বেশি বেগে রকেট উৎক্ষেণ করা হলো। সেই রকেট মহাকাশযানকে বয়ে নিয়ে গেল পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তিকে হারিয়ে দিয়ে।
মুক্তিবেগের ব্যাপার-স্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বস্তুর ভরের। যে বস্তুর ভর যত বেশি তার মুক্তি বেগও ততবেশি। সূর্যের কথাই ধরা যাক, সূর্যের মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ৬১৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীখে যদি সূর্যের আকর্ষণ বল কাটিয়ে মহাশূন্যে ছিটকে যেতে হয়, তাহলে এর বেগ হতে ৬১৭ কিলোমিটারের বেশি।
ব্ল্যাকহোলের ব্যাখ্যায় নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বেশি কাজের নয়। তবু মুক্তিবেগটা দরকার হবে। তাই এটাকে ভালো করে মনে রাখুন। সময়মতো মুক্তিবেগের ক্যারিশমা জানাব।

পরের পর্ব>>

কৃষ্ণগহ্বর

১৮৮৩ সাল। ফিলোসফিক্যাল ট্রানজাকশন অব দ্য সোসাইটির পত্রিকায় বৃটিশ জ্যোতির্বিদ জন মিশেল একটি গবেষণাপত্র লেখেন। মিশেল অদ্ভুত এক বস্তুর কথা বলেন সেখানে। ভীষণ ভারী বস্তুটা, আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যদি ঘনত্বও খুব বেশি হয়, মিশেল বলেন, সেই নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় বল হবে অনেক শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী? সেটা ঠিকঠাক গণনা করে বলতে পারেননি মিশেল। বলেছিলেন, এতটাই বেশি সেই মহাকর্ষ টান, সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। আর আলোই যদি বেরোতে না পারে, সেই নক্ষত্রকে আমরা কখনোই দেখতে পাব না। কিন্তু মিশেল এই ধারণা কেন করলেন?
মিশেলের এই ধারণার পেছনে ছিল নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব। নিউটন মনে করতেন, আলোক রশ্মি শুধুই রশ্মি নয়, কণাও। আর আলো যেহেতু কণা, তাই আলো বোধ হয় তাঁর গতিসূত্র মেনে চলে। মেনে চলে মহাকর্ষ তত্ত্বও। নিউটনের আলোর কণা তত্ত্ব বহুদিন পর্যন্ত রাজত্ব করে।
মিশেলও নিউটনের সঙ্গে একমত ছিলেন। মিশেলের পক্ষে ছিল নিউটনের মুক্তিবেগ। নিউটন বলেছিলেন, পৃথবী কিংবা সূর্যের মতো ভারী বস্তুগুলো মহাকর্ষ বল দিয়ে ছোট বস্তুগুলোকে নিজের বুকে আটকে রাখে। ছোট বস্তুকে যদি সেই মহাকর্ষ টান এড়িয়ে মহাশূন্যে ছুটে যেতে হয়, তাহলে তাকে পৃথিবীর মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার (৭ মাইল)। রকেটের বেগ সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেশি। তাই রকেট পৃথিবীর মহাকর্ষ টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে পারে। মিশেল বলেন, সেই ভারী নক্ষত্রটার ভর এতটাই বেশি হবে, তার মুক্তিবেগ হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। তাই সেটার মহাকর্ষক্ষেত্র থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারবে না। মিশেল সেই ভারী আলোখেকো বস্তুটার নাম দিলেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণতারা।

মহাকর্ষের পটভূমি

১৬৬৫ সাল। ব্রিটেনে তখন প্লেগের মহামারী। কাতারে কাতারে লোক মরছে। ভয়ার্ত মানুষগুলো আতঙ্কে দিশেহারা। প্রাণভয়ে পালাচ্ছে শহর ছেড়ে। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজেও লেগেছে মহামারীর বাতাস। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ বিজ্ঞানীও ভীত। ক্যামব্রিজ ছেড়ে চলে গেলেন লিঙ্কনশায়ারের খামারবাড়িতে। সেখানে তাঁর মা আর সৎ বাবা বসবাস করেন। সেই গ্রীষ্মটাই মোড় ঘুরিয়ে দেয় পদার্থবিজ্ঞান ইতিহাসের। এটা নিয়ে প্রায় রূপকথার মতো একটা গল্পও চালু হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। আপেল পড়ার গল্প। নিউটন একদিন আত্মমগ্ন হয়ে বসে ছিলেন একটা আপলে গাছের নিচে। হঠাৎ একটা আপেল গাছ থেকে পড়ে মাটিতে। নিউটনের মাথায় তখন একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। আপেলটা মাটিতে পড়ল কেন? কেন ওপরে উঠে গেল না? তাহলে কি পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে?
নিউটন
রোমান্টিকদের বিশ্বাস সেদিনের সেই আপেল পড়ার ঘটনাই মহাকর্ষ বলের হদিস পাইয়ে দেয় নিউটনকে। এ গল্প সত্যি কি মিথ্যা, নিশ্চিত করে বলার জো নেই। সত্যি হতেও পারে। তবে স্রেফ একটা আপেল পড়ার ঘটনা থেকে মহাকর্ষ বলের জন্ম, একথা বিশ্বাস করা কঠিন। নিউটন অনেক দিন থেকেই মহাকর্ষ বল নিয়ে ভাবছিলেন। হাতড়াচ্ছিলেন কীভাবে এই রহস্য সমাধান করা যায়। লিঙ্কনশায়ারের সেই আপেল পড়ার ঘটনা হয়তো নিউটনের ভাবনার জগতে গতি এনে দিয়েছিল। কিন্তু শুধু সেই ঘটনার কারণেই মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার হয়নি এটা সত্যি। কারণ মহাকর্ষ বল নিয়ে নিউটনের আগে অনেক বিজ্ঞানীই ভেবেছেন। যদিও তাঁরা সমাধান বের করতে পারেননি।
মহাকর্ষ বলটা কী? আমরা যে পৃথিবীর ওপর হাঁটছি, ঘুরছি-ফিরছি পৃথিবীর বুক থেকে অনন্ত মহাশূন্যে পড়ে যাচ্ছি না, সেটা মহাকর্ষ বলের কারণেই। আবার ওই যে পড়ে যাবার কথা বললাম, সেটাই বা কেমন? গাছের আপেল মাটিতে কেন পড়ে? কেন কোনো কিছু ওপরে ছুড়ে মারলে তা আবার নিচে ফিরে আসে, মাটিতে আছাড় খায়? এর পেছনে একটাই বল কাজ করছে। মহাকর্ষ বল। অনন্ত মহাবিশ্বে আমরা পড়ছি না, কারণ পৃথিবী তার আকর্ষণ শক্তি দিয়ে আমাদের ধরে রেখেছে। আবা মহাশূন্যে বিশাল বিশাল অঞ্চল ফাঁকা। একদম কিছুই নেই। কী পরিমাণ ফাঁকা সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। ফাঁকা বলে সেখানে মহকর্ষ বলের কারসাজিও কম। তাই সেখানে পড়াপড়ির বিষয়টা কল্পনাও করা যায় না। তাহলে আমরা পৃথিবীর বুক থেক মহাশূন্যে পড়ছি না একই সাথে দুটো কারণে। পৃথিবী তার মহাকর্ষ টানের সাহায্যে আমাদের ধরে রেখেছে। আর মহাশূন্যের ফাঁকা অঞ্চলে আকর্ষণ করার মতো কিছু নেই যে আমারা মহশূন্যে কোনো এক দিকে ঝাঁপ দিলেই সেদিকে ভীমবেগে পড়ে যাব।
নিউটন মহাশূন্য বলটা একেবারে খাতা-কলমে প্রমাণ করেছেন। তাই বলে কি প্রাচীনকালের মানুষ মহাকর্ষ বলের কোনো হদিস জানত না। জানত এক প্রকার। সেটাকে আসলে মহাকর্ষ বললে মশকরা করা হবে। প্রাচীন গ্রিসেই আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয়। গ্রিক পণ্ডিত মনে করতেন বস্তুর মাটিতে পড়ার পেছনে স্বর্গীয় ব্যাপার-স্যাপার জড়িয়ে আছে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয়, সেসব বস্তু ওপরে নিক্ষেপ করলে আবার মাটিতে ফিরে আসবে। যেসব বিষয়গুলো মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারত না, সেখানেই হাজির হতো দেবতা, শয়তান, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি অলৌকিক বিষয়। গ্রিক দার্শনিকদের কাছে বস্তু কেন মাটিতে পড়ে তার ব্যখ্যা ছিল না। তেমনি যেসব বস্তু ওপরে উঠে যায়, তার কারণও তাঁদের জানা ছিল না। আদিম যুগে মানুষ আগুন দেখে ভয় পেত। দিশেহারা হয়ে পড়ত বনের দাবানলে। আগুনের কাছে একদম অসহায় ছিল সেই মানুষগুলো। তাই আগুনকে পুজো করত আদিম যুগের মানুষেরা। অনেক পরে মানুষ আগুনের ব্যবহার শেখে। তখন দেবতার আসন হারায় আগুন। অবশ্য এই আধুনিক যুগেও কোনো কোনো সমাজে আগ্নিপুজো করা হয়ে। তবে তাদের সংখ্যা নগন্য, তারা ব্যতিক্রম।
গ্রিক যুগেও এমন বহু বহু বিষয়কে অলৌকিক মনে করা হত। যেমন আগুন ওপরে উঠে যায় কেন? ওপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প, ধোঁয়া, বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ইত্যাদি। এর ব্যাখ্যা গ্রিক দার্শনিকদের কাছে ছিল না। তাই এগুলোর সাথে স্বর্গের যোগ আছে বলে মনে করতেন। তাই এরা স্বর্গের টানে ওপরে উঠে যায়।
আকাশের জ্যোতিষ্কমণ্ডলি দেখা যায় খোলা চোখেই। কত কত তারা আকাশে। একই তারা নিয়ে একেক দেশে একেক গল্প চালু আছে। তারাদেরও নামও আলাদা। একই তারা কোনো দেশে দয়াময় দেবতা, কোনো দেশে আবার ভয়ঙ্কর দানব। কেন এমন হলো? এর পেছনরে কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। কালপুরুষ যখন আকাশের গায়ে ঝলমল করে তখন হয়তো কোনো দেশে সবুজ ফসলে ভরে ওঠে। আবার একই সময়ে কোনো দেশ হয়তো তলিয়ে যায় বানের জলে, কোনো দেশ হয়তো ভয়ঙ্কর খরায় পুড়ে ছারখার। যে দেশ সবুজ ফসলে ভরে ওঠে, সেই দেশ হয়তো কালপুরুষ দয়াময় দেবতা হিসেবে গণ্য হয়। বন্যা কিংবা খরা কবলিত দেশগুলোতে কালপুরুষকে দেখা হয় ভয়ঙ্কর দানবরূপে। এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠে পৌরণিক কাহিনিগুলো। সেসব কাহিনির নায়ক-নায়িকা, ভিলেন, দানব, রাক্ষস, দেব-দেবী সব চরিত্রগুলোই গড়ে উঠেছে কোনো না কোনো তারাকে ঘিরে। সমাজের সুখ-দুঃথ, হাসি-কান্না, বন্যা, মহামারি জড়িয়ে আছে সেসব কাহিনির আড়ালে। মানুষ নিজে যা করতে পারে না, সেই অসম্ভব কাজগুলো করিয়ে নেই কল্পকাহিনির চরিত্রগুলো দিয়ে। এভাবেই সেসব চরিত্র মিশে যায় মানুষের দৈননন্দিন জীবনে। আর সেই কল্প কাহিনির চরিত্রগুলো খুঁজে নেয় রাতের আকাশে, কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের ভিড় থেকে।

প্রাচীন যুগেই জন্ম পুরাণ কাহিনিগুলো। তখনই সুত্রপাত জ্যোতির্বিদ্যার। মানুষ আকাশের তারা দেখে পথ চিনতে, চাষ-বাসের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে শেখে। সেকালে তাঁরা দেখে কিছু মানুষ ভবিষ্যৎ বলতে পারত। তাদের বলা হত গণক ঠাকুর কিংবা জ্যোতিষ। এর বেশিরভাগ বুজরুকি। তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো ফলে যেত। তবে সেটা মোটেও ভাগ্য গণনা করে নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ বিশ্লেষণ করে কিছু মানুষ পেয়ে যেত আবহাওয়ার আগাম সংবাদ। কৃষিনির্ভর সেই সমাজে আগাম আবহাওয়ার সংবাদ জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নিউটনের মহাকর্ষে

সেকালে গ্রিসে পৃথিবীকে সমতল মনে করত মানুষ। তখন স্বাভাবিকভাবেই উপর-নিচ-এর ধারণাটা ছিল পরম। তখন মনে করা হতো যেসব বস্তু বা প্রাণী স্বর্গীয় তাদের অবস্থান উপরে, স্বর্গপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় তাদের অবস্থান মাটিতে কিংবা পাতালপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় সেগুলোকে ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে একটা সময় আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। তারপর এক সময় প্রমাণ হলো পৃথিবী সমতল নয়, গোলাকার। তখন উপর-নিচের অগের তত্ত্ব ভেঙে পড়ল। তাই পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে আগের ধারণা আর টিকল না। বস্তু কেন ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে তা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে তার নতুন সমাধান দরকার হয়ে পড়ল।
 টলেমি
তখন অ্যারিস্টোটল জোড়াতালি দিয়ে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন। সেটা হলো,পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। আকাশের সব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সকল বস্তুর গতি তাই পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে। এজন্য বস্তুকে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলেও তা পৃথিবীতে ফিরে আসে। সে সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অ্যারিস্টোটলের প্রভাব ব্যাপক। সবাই চোখ বুঁজে অ্যারিস্টোটলের থিওরি মেনে নিলেন। পরে খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে টলেমি নামে এক দার্শনিক মহাবিশ্বের একটা মডেল দাঁড় করালেন। সেটা অ্যারিস্টোলের মতের সাথে মিল রেখেই। টলেমির মডেল মহাবিশ্ব বেশ কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর কেন্দ্রে আছে পৃথিবী। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে যথাক্রমে চাঁদ, শুক্র, সূর্য ও মঙ্গল। এর সবাই আছে একই সরল রেখায়। অন্যগহগুলো তখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সেগুলোর স্থান হয়নি টলেমির মডেলে। একবারে বাইরের স্তরে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে আছে আকাশের অন্য তারাগুলো। টলেমির সেই মডেল দেখে এখনকার প্রথম শেণি পড়ুয়া একটা বাচ্চাও হাসবে। কিন্তু সেকালে গোটা পৃথিবীর লোক সেই মডেল মেনে নিয়েছিল।
টলেমির মডেল
ষোড়শ শতাব্দীতে এসে বাঁধল গোল। পোলিশ জৌতির্বিদ নিকোলাস কোপর্নিকাস বললেন, অ্যারিস্টোটলের মতবাদ ভুল। বললেন, সূর্য নয়, বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে একটা বইও লিখলেন কোপার্নিকাস। বইটি ছাপা হলো তাঁর মৃত্যুর আগমুহূর্তে। কিন্তু কোপার্নিকাসের কথা কেউ বিশ্বাস করল না।
টাইকো ব্রাহে ছিলেন প্রাগের সম্রাট দ্বিতীয় রোদলফের গণিতজ্ঞ। সম্রাটের রাজ জ্যোতিষিও। তিনি মহাকাশের তারাদের নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। টাইকোর সহকারী ছিলেন জোহান কেপালার। টাইকোর মৃত্যুর পরে তাঁকেই বসানো হয় স¤্রাটের গণিতজ্ঞ ও প্রধান রাজ জ্যোতিষির পদে। সেকালে রাজ জ্যোতিষির প্রধান কাজই হলো সম্রাটের ভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করা, তারাদের গতিপথ দেখে রাজ্যের ভালোমন্দের আগাম খবর জানানো। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে দেশে এসব রাজ জ্যোতিষিরাই ছিল রাজা-বাদশাহদের প্রধান মন্ত্রণাদাতা। তাঁরা বুজরুকি করে রাজাদের ভুল পথে চালাতেন। প্রজাদের ওপর অবর্ণনীয় নীপিড়ন নেমে আসত এসব রাজ জ্যোতিষিদের বুজুরুকির কারণে।
কেপলার ছিলেন একদম আলাদা। ভবিষ্যৎ গণনায় মোটেও আগ্রহ ছিল না তাঁর। তবুও সম্রাটের অনুরোধে কিছু কিছু গণানা করতেন। তবে তিনি স্বীকার করতেন এসবে কোনো অলৌকিকতা নেই। আবহাওয়ার মেজাজ-মর্জি বুঝেই করতেন কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী। রাজাকে বলতেন এরজন্য জ্যোতিষ হওয়ার দরকার নেই। একটু জ্ঞান থাকলে যে কেউই এ কাজ করতে পারে। রাজা রোদলফও কেপলারকে পীড়াপিড়ি করতেন না। কেপলার তাঁর শিক্ষক ছিলেন। যথেষ্ঠ সম্মান করতেন তিনি কেপলারকে। কেপলার কোপার্নিকাসের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। সেটা ক্যাথোলিক ধর্মমতের বিরোধি। তবু রাজা রোদালফ তাঁকে বাঁধা দেননি গবেষণায়। রোদলফ অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না। রাজ গণিতজ্ঞের পদে বসিয়ে কেপলারকে তিনি জ্ঞানচর্চার প্রসারেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কেপলারের স্বাধীনতা ছিল, তিনি জ্যোর্তিবদ্যার চর্চা করতেন। গ্রহ-নক্ষত্রদের চলার পথ নিয়েও করেছিলেন গবেষণা। কিন্তু তাঁর হাতে ভালো কোনো টেলিস্কোপ ছিল না।
সেই সময় ইতালিতে গ্যালিলিওর ব্যাপক নামডাক। নানা রকম যন্ত্রপাতি তৈরি করে তিনি সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল টেলিস্কোপ। এর আগেও টেলিস্কোপ ছিল না তা নয়। তবে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপের ধারেকাছেও ছিল না আর কারও টেলিস্কোপ। গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আকাশ দেখেন। তারপর ঘোষণা করেন কোপার্নিকাসই ঠিক। কেপলারের মতো অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না গ্যালিলিও। প্রাগের সম্রাটের মতো রোমান সম্রাট অতটা মহানুভব ছিলেন না। তাছাড়া রোমের ভেতরেই তো পোপোর ভ্যাটিকান। তাঁদের কথাই ইতালি তথা ইউরোপে দৈব বাণী। ভ্যাটিক্যানের বিরোধিতা করে এমন বুকের পাটা ইতালিতে কারও ছিল না। খ্রিস্টান ধর্ম আসলে অ্যারিস্টোটলের মতের বাইরে যেতে পারেনি। এজন্য তাঁকে অবর্নণীয় নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। এরপর কেপলার দেখালেন কীভাবে, কোন পথে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে। তিনি গ্রহগুলোর চলার পথের জন্য গাণিতিক সূত্রও আবিষ্কার করলেন।
কেনই বা সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলো ঘুরছে। কেন ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে না অনন্ত মহাকাশের দিকে? এ প্রশ্নের সমাধান তিনি দিতে পারলেন না। সমাধান এলো সপ্তদশ শতাব্দীতে। নিউটনের হাত ধরে।

নিউটন দেখালেন, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী এমনি এমনি ঘোরে না। এদের ভেতরে এক ধরনের অদৃশ্য আকর্ষণ বল আছে। সেই আকর্ষণ বলের নাম মধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বল শুধু সূর্য আর গ্রহগুলোর মধ্যেই নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুর ভেতর ক্রিয়া করে।
নিউটন মহাকর্ষ বলের জন্য একটা সূত্র দিলেন। সেটা হলো, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের মান তত বেশি হবে যত বস্তুদুটোর ভর বেশি হবে। যেকোনো একটার ভর বাড়লেও মহাকর্ষ বলের মান বাড়ে। কিন্তু বস্তু দুটোর মধ্যে দূত্ব যত বাড়ে তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় টান তত কমে। এই কমা আবার সহজ-সরল ভাবে কমা নয়, বর্গাকারে। অর্থাৎ দূরত্ব যদি বেড়ে দ্বিগুণ হয় তবে মহকর্ষ বলের মান কমে আগের মানের এক চতুর্থাংশে নেমে আসবে।
পৃথিবীতে আমরা হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছি, কোনও বস্তু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ছিটকে মূহশূন্যে চলে যাচ্ছ না, এর কারণও ওই মহাকর্ষ বল। নিউটন দেখালেন মহাকর্ষ বল শুধু আকর্ষণই করে, বিকর্ষণ করে না কখনও।
ভারী বস্তুর মহাকর্ষীয় প্রভাব কতদূর পর্যন্ত কাজ করে?
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলে এর প্রভাব অসীম পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু এটাও ঠিক এই বল খুবই দুর্বল। মহাবিশ্বে, পৃথিবীতে মহাকর্ষ বল ছাড়াও আরও তিন রকম বলের হদিস বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল আর দুর্বল নিউক্লিয় বল।
মহাকর্ষ বল কতটা দুর্বল তার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। শুকনো তেলহীন মাথার চুলে একটা চিরুনি ঘষুন। আর মাটিতে ছড়িয়ে দিন কিছু কাগজের টুকরো। এবার ঘষা চিরুনিটা নিয়ে যান কাগজের টুকরোগুলোর কাছাকাছি। চিরুনি কাগজের টুকরোগুলোর কাছে পৌঁছনোর আগেই সেগুলো লাফ দিয়ে উয়ে আসবে চিরুনির গায়ে। এটা কেন হলো? চিরুনি মাথার চুলে ঘষা হয়েছিল। তাই ওতে তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎচ্চুম্বকীয় বলের একটা ক্ষেত্র। সেই বিদ্যুৎচুম্বক ক্ষেত্রই আকর্ষণ করেছে কাগজের টুকরোগুলোকে। কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছিল পৃথিবী তার সমস্ত মহাকর্ষ বল দিয়ে, সমস্ত ভর ভর ব্যবহার করে- নিউটনের সূত্র আমাদের তা-ই শেখায়। অন্যদিকে চিরুনিতে তৈরি হয়েছে খুব সামান্য বিদ্যুৎশক্তি। এইটুকুন বিদ্যুৎচ্চম্বকীয় শক্তির কাছে হার মেনেছে গোটা পৃথিবীরর মহাকর্ষ বল। সামান্য বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল পৃথিবীর বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কাগজের টুকরোগুলোকে মহাকর্ষীয় বলকে কাঁচকলা দেখিয়ে।
চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরো তোলা হলো। তারমানে এই নয়, টুকুরোগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবমুক্ত হলো। চিরুনি, আপনি, কাগজ-সবই তো পৃথিবীর মহাকর্ষেও ক্ষেত্রের মধ্যেই রয়েছে। পৃথিবীর আকর্ষণ বল সবার ওপরই কাজ করছে। পৃথিবীর মহাকর্ষক্ষেত্রের ভেতর দাঁড়িয়ে অনেক হম্বিতম্বি করা যায়। পৃথিবীর কথাই ধরা যাক। এর মহাকর্ষ বলের সীমা অসীম। কিন্তু বস্তুকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে হলে সেই বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের থাকতে হবে। এই দূরত্বের বাইরের বস্তুকে পৃথিবী তাঁর নিজের বুকে টেনে নিতে পারবে না। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সেই দূরত্ব পর্যন্ত পৃথিবীর চারপাশের এলাকাকে মহাকর্ষ ক্ষেত্র বলে।
বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে তাঁর মহাকর্ষ ক্ষেত্র কত দূর পর্যন্তর বিস্তার করে থাকবে। যেমন সূর্যের এই মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সীমা পৃথিবী থেকে অনেক বেশি। আবার বুধ গ্রহের মহাকর্ষ সীমা পৃথিবীর থেকে অনেক কম।
আবার আরেকটা কথাও সত্যি। এই মহকর্ষ ক্ষেত্রের ভেতর থেকে কোনো হালকা বা গতিশীল বস্তুও বেরিয়ে যেতে পারে না। যেমন পারে না বায়ুমণ্ডলও।
বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় পদার্থগুলো পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। কারণ, গ্যাসের প্রতিটা পরমাণুকে পৃথিবী মহাকর্ষ বল দ্বারা নিজের দিকে টানছে। অনেকে হয়তো পালটা যুক্তি দেখাবেন। বলবেন, মহাকর্ষ বলই যদি গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু বা অণুগুলোকে আকর্ষণ করে রাখে তবে তাদের কেন এত ওপরে ওঠার প্রবণতা?
একটা কথা বোধহয় কারো অজনা নয়, কঠিন পদার্থের ভেতর অণু-পরামণুগুলো বেশ শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধনের কারণে গায়ে গায়ে লেগে থাকে।  এদের অণু-পরমাণুগুলো তাই মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না। নিতান্ত ভঙ্গুর না হলে একটা হালকা কঠিন পদার্থের ওপর তুলানামুলক ভারী কোনো কঠিন পদার্থ রাখলেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু তরল পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো অনেকটা মুক্তভাবে থাকে। অনেকগুলো তরল পদার্থ একটা পাত্রে যখন রাখা হবে, তখন একটা হিসাব নিশ্চিতভাবে এসে যাবে- কে ওপরে থাকবে আর কে নিচে থাকবে। এখানেও এদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় মহাকর্ষ বল। যে তরলের ঘণত্ব বেশি তার ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব বেশি থাকবে। তাই তুলনামূলক ভারী তরলটা মাহাকর্ষ টানের ফলে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকতে চাইবে। অন্যদিকে হালকা তরলের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব তুলনামূলক কম হওয়ায় সে ভারী তরলকে নিচের দিকে জায়গা ছেড়ে দেবে। আর নিজে উঠে যাবে ওপরে। এক বালতি পানির ভেতর কিছু মধু ঢেলে দেখলেই এ ব্যাপারটার সত্যতা মিলবে।
ঠিক ওপরের মতোই ঘটনা ঘটে গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থে। গ্যাসীয় পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো বলতে গেলে প্রায় মুক্তভাবে থাকে। সুতরাং এদের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাবও থাকে অনে কম। তবুও তো থাকে। আমাদের গোটা বায়ুমণ্ডলটাকে বলা যায় গ্যাসীয় পদার্থের সমুদ্র। সব গ্যাসের ঘনত্ব যেমন সমান নয়, তেমনি সব গ্যাসের পরমাণু সমান ভারী নয়। স্বাভাবিকভাবেই ভারী ও বেশি ঘনত্বের গ্যাসগুলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে। হালকা গ্যাসগুলো উঠে যায় ওপরের দিকে।
এখানে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে, বায়ুমণ্ডলের স্তর যেখানে শেষ, অন্যবস্তুকে নিজের বুকে টেনে আনার ক্ষমতার সীমাও কি সেখানে শেষ ?
না, সেখানে নয়। আমাদের পৃথিবীতে মোট যে গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ তা দিয়ে মহাকর্ষ সীমার পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বায়ুমণ্ডলীয় সীমার বাইরেও মহাকর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে। বায়ুর ছড়িয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্যের কথা ভাবলে এই প্রশ্নটা মাথায় এসে যেতে পারে। এ কথা ঠিক, গ্যাসের পরিমাণ যাই হোক, তাকে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তার সবটুকু আয়তন ওই গ্যাস দখল করে। কিন্তু মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে এমন গ্যাস পাত্র হিসেবে ধরলে চলবে না, কারণ গ্যাস পুরো ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যেতে চাইলেও মহাকর্ষ বলের টান তা হতে দেয় না।
চাইলেই কি মহাকর্ষ অগ্রাহ্য করা যায়?
অনেক পুরোনো প্রশ্ন। চাইলেই সব কিছু সম্ভব। তবে এজন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। নিউটনের মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সাতে বস্তুর গতি জড়িয়ে। একমাত্র গতিই পারে বস্তুকে মহাকর্ষক্ষেত্রকে উপেক্ষা করে বস্তু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে। সেটা কীরকম গতি? এর ব্যাখ্যায় নিউটন টেনেছিলেন একটা কামানের উদাহরণ। তাঁর প্রিন্স্রিপিয়া অব ম্যাথমেটিকা বইটির ৩ নং ভলিউমের ৬ নং পৃষ্ঠায় ছিল বিস্তারতি ব্যাখ্য। সাথে একটা ছবিও ছিল। সেই ছবিটাই এখানে দেওয়া হলো।

ধরাযাক, খুব উঁচু একটা পাহাড়। সেই পাহাড়ের ওপর একটা কামান রাখা হলো। কামান থেকে একটা গোলাটা কিছুদূর গিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। নিউটনের প্রথম সূত্র বলে, বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ নাক করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির। আর গতিশীল বস্তু সুষম বেগে চলতে থাকবে অনন্তকাল। নিউটনের এই সূত্রটা কাজ করে যেখানে বাহ্যিক বলের প্রভাব নেই, শুধু সেখানেই। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে মহাকর্ষ বলের প্রভাব রয়েছে। তাই পাহাড় থেকে ছোড়া কামানের গোলা কামান থেকে সোজা পথে চলতে পারবে না একটানা। পৃথিবরে আকর্ষণে গোলার অভিমূখ ক্রমেই নিচের দিকে বেঁকে যাবে। এবং বাঁকানো পথে মাটিতে আঘাত করবে। এতো প্রথমবার ।
এবার কামানের শক্তি একটু বাড়িয়ে দিন। সেই শক্তি গোলার ওপর বাড়তি বল প্রয়োগ করবে। ফলে গোলাটার গতি প্রথমবারের চেয়ে বেশি হবে। তাই আগের বারের একটু বেশিদূর যেতে পারবে গোলাটি। অর্থাৎ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রথমবারের তুলনায় বেশিক্ষণ লড়তে পেরেছে দ্বিতীয় গোলাটি। এভাবে আরেকটি বেশি গতি বাড়ালে গোলা আরো বেশি দূর যেতে পারবে। পর্যায়ক্রমে কামানের শক্তি যদি বাড়তেই থাকে, ফলে যদি গোলার ওপর ধ্বাক্কা বলও পর্যায়ক্রমে বাড়ে, তাহলে প্রতিবারই একটু একটু বেশি দূরত্বে গিয়ে পড়বে কামানের গোলা।
পৃথিবী গোলককার। কামানের গোলায় বাঁকানো পথে গিয়ে পড়ছে মাটিতে। ধরা যাক, কামানের শক্তি এতটাই বাড়ানো হলো কামানটি পেরিয়ে গেল হাজার কিলোমিটার। হ্যাঁ, এটা ঠিক কামানের গোলার অত শক্তি নেই। তবে এ যুগের মিসাইলগুলো কিন্তু অতদূর যেতে পারে। নিউটনের পরক্ষীটা ছিল পুরোটাই কাল্পনিক। কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে তা অসম্ভব নয়। তাই আমরাও কামানের গোলা দিয়েই পরীক্ষাটাকে আরেকটু এগিয়ে নিই।
ধরা যাক, এবার আরও বেশি ভল প্রয়োগ করে কামানের গোলাটা ছোড়া হলো। এবার সে গিয়ে পড়ল ২০৫০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর পরীধির অর্ধেক পথ সে পাড়ি দিয়ে ফেলল বাঁকানো পথে। এবার ধাক্কা বল দ্বিগুন করে ফেলি। তাহলে গোলাটা নিশ্চয়ই আর দ্বিগুন দূরে গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ কামান থেকে ৪১ হাজার কিলোমিটিার পথ দূরে গিয়ে পড়বে। কিন্তু পৃথিবী গোল। সর্বোচ্চ পরিধি ৪০০৭৫ কিলোমিটার। সূতরাং কামানের গোলাটা এবার বাঁকানো গোলাকার পথে গোটা পৃথিবীকেই পদক্ষিণ করে ফেলবে।
কিন্তু কামান দাঁড়িয়ে আছে তার চলার পথে। গোলাটা পুরো পৃথিবী ঘুরে কামানের পেছনে এসে ধাক্কা মারবে। পৃথিবী ঘুরে আসতে লাগবে অনেক সময়। ততক্ষণে যদি আমরা কামানটাকে সরিয়ে নিই পাহাড় থেকে, তাহলে কি হবে?
সাদা চোখে দেখলে মনে হবে, কামানের সামনের দিক থেকে ছোড়া গোলা পুরো পৃথিবী ঘুরে এসে কামানের পেছন বারাবর আসতে ৪০০৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু গোলার ওপর যে বল প্রয়োগ করা হয়েছে তাতে কামান সেই পাহাড় পেরিয়ে আরও ৯২৫ কিলোমিটার সামনে এগিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ার কথা। কিন্তু কামানের গোলো সেখানেও পড়বে না।  নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র মেনে ঘুরতেই থাকবে বার বার। ঠিক যেভাবে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। তেমনিভাবে কামানের গোলাটিরও একটি কক্ষপথ তৈরি হবে পৃথিবীর চারপাশে। অবিরাম সে ঘুরতেই থাকবে, যদি বাতাসের বাধা না থাকে।
বাতাসের বাঁধা নেই। কিন্তু মহাকর্ষের প্রভাব আছে। তাই কামানের গোলাটা ভূপৃষ্ঠে পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে গোলার গতিশক্তি। আসলে তখন গোলাটার গতিশক্তির কারণে একটা একটা বল তৈরি হচ্ছে। সেই বলটা চাইছে গোলাটাকে পৃথিবীর আকর্ষণ কাটিয়ে একটা সোজা পথে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পৃতিবীর মহাকর্ষ বল। মহকর্ষ বল গোলটাকে টেনে পৃথিবীতে নামাতে চাইছে। সেটাতে সে আগে সফলও হয়েছে, নামাতে পেরেছে কামানের গোলাকে। তখন অবশ্য গোলার গতিশক্তি কম ছিল। কিন্তু এখন আর গোলার গতিশক্তি মহাকর্ষীয় বলকে ছেড়ে কথা কইবে না। শুরু হবে দুই বলের লড়াই। এ লড়াইয়ে দুই বলের শক্তিই সমান। তাই কেউ কাউকে হারাতে পারবে না। কামানের গোলা গতিশক্তি নিয়ে সোজা চলতে চায়, পৃথিবীর মহাকর্ষ তাকে সেই চলায় বাধা দেয়। যেহেতু দুটোরই শক্তি সমান, তাই গোলাও মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে না। আবার মহাকর্ষ বলও গোলাকে টেনে মাটিতে নামাতে পারে না। তখন গোলাটা পৃথিবীর কক্ষপথে অবিরাম ঘুরবে।
ধীরে ধীরে কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। মহাকর্ষ বল অজেয় নয়। যত বেশি বলে কামান গোলা ছুড়ছে, গোলার গতি তত বাড়ছে, পৃথিবীর মহাকর্ষ বলকে তত বেশি পরাস্ত করে গোলা দূরে সরে যেতে পারছে। তারপর গোলা যখন একটা নির্দিষ্ট গতি লাভ করছে তখন মহাকর্ষ আর গোলার শক্তি সমান হচ্ছে।
কিন্তু এমন কি হতে পারে না, এই যুদ্ধে গোলা জিতে যাবে!
নিশ্চয়ই পারে। পাঠকদের বুঝতে বাকি নেই, সেটা পারে একমাত্র গতি বাড়িয়েই। হ্যাঁ, গোলার গতি একটা সময় এমন হতে পারে যখন পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের আর সাধ্য নেই গোলাকে আটকে রাখে। তখন গোলাটা সোজা সেই গতিতে ছিটকে চলে যাবে মহাশূন্যের গহীনে।
নূন্যতম যে বেগে চললে গোলাটা মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে, সেটাই হলো পৃথিবীর মুক্তিবেগ। গোলার বেগ যদি সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার হয়, তাহলে সেটা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু কামানের সাধ্য নেই অত বেগে গোলা ছোড়ার। নিউটনের সময় কামানই ছিল গোলা নিক্ষেপের মোক্ষম হাতিয়ার। এরচেয়ে ভালো নিক্ষেপক আর ছিল না। কিন্তু মানুষ থেমে থাকে না, বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তিকেও এগিয়ে নেয় সমান তালে। বিংশ শতাব্দীতেই রকেট এসেছে। এই রকেটের কতই না ব্যবহার। যুদ্ধক্ষেত্রে ছোট্ট গোলা ছুঁড়তে কিংবা দূরদেশে মিসাইল দিয়ে আঘাত হানতে যেমন রকেট করিৎকর্মা, মহাশূন্যযানগুলো পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রকেটের সাহায্যে। মানুষ যেদিন চাঁদে মহাকাশযান পাঠালো, সেদিনই নিউটনের সেই কামানগোলা পরীক্ষার সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া গেল। পৃথিবীর মুক্তবেগের চেয়ে বেশি বেগে রকেট উৎক্ষেণ করা হলো। সেই রকেট মহাকাশযানকে বয়ে নিয়ে গেল পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তিকে হারিয়ে দিয়ে।
মুক্তিবেগের ব্যাপার-স্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বস্তুর ভরের। যে বস্তুর ভর যত বেশি তার মুক্তি বেগও ততবেশি। সূর্যের কথাই ধরা যাক, সূর্যের মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ৬১৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীখে যদি সূর্যের আকর্ষণ বল কাটিয়ে মহাশূন্যে ছিটকে যেতে হয়, তাহলে এর বেগ হতে ৬১৭ কিলোমিটারের বেশি।
ব্ল্যাকহোলের ব্যাখ্যায় নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বেশি কাজের নয়। তবু মুক্তিবেগটা দরকার হবে। তাই এটাকে ভালো করে মনে রাখুন। সময়মতো মুক্তিবেগের ক্যারিশমা জানাব।

পরের পর্ব>>

Posted at July 15, 2020 |  by Arya ঋষি

বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানী মহলের সব চেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ঈশ্বর কনা(GOD particle) তথা হিগস বোসন (higgs boson) কণা । আমরা মাঝে মধ্যেই এই হিগস বা বোসন কনার কথা TV বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি যে , কোন এক বিজ্ঞানী গোষ্ঠী হিগস বোসন এর সন্ধান পেয়েছেন তো অন্য কোন গোষ্টী এইটার খুব কাছে ।কিন্তু কি এই হিগস বোসন ? কেনই বা বিজ্ঞানীদের এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথা? এবার এটা সম্পর্কে কিছু জানা যাক 

আমরা জানি স্পিনের ভিত্তিতে মৌলিক কণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
-বোসন(স্পিন সংখ্যা পূর্ণ সাংখ্যিক)
-ফার্মিয়ন(স্পিন সংখ্যা ১/২ এর গুনিতক)

বোসন কণা কি টা জানেন তো? যে সব অতিপারমানবিক কণারা বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন মেনে চলে তাদের বোসন কণা বলা হয় । তবে এই বোসনের বোস শব্দ এসেছে একজন বাঙালী বিজ্ঞানীর নাম হতে । আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু হচ্ছেন সেই মহান বিজ্ঞানী যার নামানুসারেই এই কণাদের নাম বোসন বলা হয় । সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯২১ সালের মে মাসের কোন এক সময় ঢাকায় আসেন এবং একই বছরের জুনের ১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রীডার পদে যোগদান করেন । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্ক যে সমীকরণ দিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কিন্তু এই তত্ত্বের মধ্যে একটি ত্রুটি ছিল । আর এই ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আইনস্টাইন ,পল ডিরাক এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের আর বড় বড় বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কোন একটি কক্ষে বসে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক থাকা অবস্থায় এই ত্রুটির সমাধান করে বসেন মেধাবি সত্যেন্দ্রনাথ বসু ।

ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্কের সমীকরণের জন্য প্রয়োজন ছিল কোয়ান্টাম অবস্থার তাপবলবিদ্যাগত সম্ভাবনা(Probability ) নির্ধারণ করা । আর এই কাজটি সমাহারতত্ত্ব ব্যবহার করে সত্যেন্দ্রনাথ বসু করেছিলেন । বসু তাঁর এই কাজের প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের কাছে পাঠান , আইনস্টাইন এ প্রবন্ধের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং তা নিজেই জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সাইট Zeitschrift für Physik পত্রিকায় ১৯২৪ সালে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন । অধ্যাপক বসুকে তাই কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয় । তাঁর এই অবদানের জন্য কণাদের নাম দেয়া হয়েছে বোসন কণা ।বোসন কণারা আবার প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের –
ক) মৌলিক বোসন কণা এবং
খ ) যৌগিক বোসন কণা বা মেসন ।

বোসন কণারা হচ্ছে যৌগিক তবে প্রমিত মডেল বা Standard Model অনুযায়ী মৌলিক বোসন কণা হচ্ছে ৫ ধরনের –
- ৩ ধরনের গেজ বোসন (Gauge Bosons)
- ১ টি হিগস্ বোসন (Higgs Boson)
- ১ টি গ্রাভিটন (Graviton)

আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হল হিগস-বোসন। এই কণার হিগস নামকরন করা হয়েছে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিগস বোসনের এর নাম অনুসারে । তবে এটা নিয়া আলোচনা করতে গেলে যে দুটি বিষয় মাথায় আসে তার একটি সার্ণ(CERN-European Organization for Nuclear Research) এর LHC(LARGE HADRON COLLIDER) ।সার্ন এর LHC সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ,লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার হল পৃথিবীর বৃহত্তম কণা ত্বরক বা কনা পিষণকারী যন্ত্র ! এটি পৃথিবীর যন্ত্রও বটে ! এটি ভুঅভ্যন্তরে অবস্থিত ২৭ কিলোমিটারের একটি রিং আকৃতির যন্ত্র । এটিকে একটি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার দ্বারা কন্ট্রোল করা হয় ! ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটনসমৃদ্ধ বিপরীত গামী রশ্মির কনাগুলো প্রায় আলোর গতিতে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে নিযুক্ত হয় ! এর অভ্যন্তর ভাগ একদম বায়ুশূন্য এবং তাপমাত্রা -২৭১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা , মহাশূন্যের তাপমাত্রার চাইতেও কম ! তবে এর রশ্মি নির্গমনকারী দুই টিউবের চারেপাশে তরল হিলিয়ামের প্রবাহ থাকে যা এর চৌম্বকক্ষেত্রসহ পুরো ব্যবস্থাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে !

বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী পিটার হিগস এর নামানুসারে এর নামকরন করা হয়। এটা এমন একটা উপাদান যার সাহায্যে ভরের উৎপত্তি জানা যাবে। ধারনা করা হয়ে থাকে বিগ ব্যাং এর সাথে সাথে কিছু কনার উৎপত্তি ঘটেছিল যারা ছিল ভরবিহীন। কিন্তু পরবর্তীতে এরা ভর লাভ করে।আপনি নিশ্চয় হাসছেন, এ আবার কোন পাগলের প্রলাপ। ভর কি হুদায় উইড়া আসে নি? প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে আলোচনায় আমরা জেনেছিলাম যে কোয়ার্কদের আপেক্ষিক গতিবেগের জন্য নিউট্রন, প্রোটনের ভরের সৃষ্টি হয় । আর মহাবিশ্বের সুচনালগ্নের এই ভরহিন কণার জন্য হিগস ফিল্ড নামক আরেকটা তত্ত্ব আছে। এর নাম করন করা হয় হিগস ফিল্ড নামে । অর্থাৎ কনাগুলো যখন এই হিগস ফিল্ডের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে তখন এরা ভর লাভ করবে।

এলএইচসি তে দুটি প্রোটন কনার সংঘর্ষের ফলে কিছু কনার সৃষ্টি হয় যার একটার ভর অনেকটা হিগসের তাত্ত্বিক কনার কাছাকাছি, যা হিগস কনা নামে পরিচিত।LHC এর টিউবের ভিতর কনারা আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তবে কণাদের এমন ১ বিলিয়ন সংঘর্ষে মাত্র ১ বারই হিগস বোসন কণা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।হিগস বোসন কণা উৎপাদনের চারটি প্রক্রিয়া আছে।
-হিগস স্ট্রালং
-গ্লুউন ফিউশন
-উইক বোসন ফিউশন
-টপ ফিউশন

সংক্ষেপে, হিগস বোসন হচ্ছে এমন একটা অনুমিত বা প্রেডিক্টেড কনা, যার ভর স্টান্ডার্ড এলিমেন্টে আগে থেকেই অনুমিত ছিলো এবং যা হিগস ফিল্ডের বোসন কনা নামে পরিচিত ।এই মৌলিক কনা গুলো অশূন্য হিগস ফিল্ডের সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করে থাকে। ফোটন ও সেই জাতীয় শক্তি আদানপ্রদানকারী গেজ কণার সাথে যুক্ত হয়ে এটি W+ W-, Z0 নামে ভারী মেসন তৈরী করে যেগুলি সবই ফোটন বা হিগস কণার মত বোসন। এটা সালাম, ওয়াইনবার্গ, গ্ল্যাশোর স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস কণা ও হিগসের প্রতিসাম্য ভঙ্গ ব্যবহারের ফল।ইলেক্ট্রন, নিউট্রিনো, কোয়ার্ক এসব কণার সাথে যুক্ত হয়েও হিগস কণা তাদের ভর দেয়।

আরেক ভাবে বলা যায় হিগস বোসন কনা হচ্ছে এমন একটা কনা যেটা এতোদিনের অসম্পূর্ণ স্টান্ডার্ড এলিমেন্টাল ফিজিক্সের তত্ত্ব কে সম্পূর্ন করে।


হিগস ফিল্ড কি?
এক ধরণের ফিল্ডের মধ্য দিয়ে চলার সময় মৌলিক কণাগুলো ঐ ফিল্ডের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় সংঘর্ষ বা ইন্টার‍্যাকশন করছে, আর সেই ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রাই বলে দিচ্ছে যে সেই কণার ভর কত হবে।বিগ ব্যাংয়ের পরে যখন মহাবিশ্ব কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে তখন হিগস ফিল্ড তৈরী হয়। আর হিগস ফিল্ড তৈরী হবার আগে সমস্ত কণাই ছিল ভরহীন। এই হিগস ফিল্ড তৈরী হলে – ফিল্ডের সাথে ভরহীন কণাগুলো নানাভাবে ইন্টার‍্যাকশন করতে থাকে ও কণাগুলো ভরযুক্ত হতে থাকে। ভরযুক্ত হবাব সাথে সাথে আবার কণাগুলোর বেগও কমে আসে। হিগস ফিল্ডের সাথে ইন্ট্যারেকশণের মাত্রাই বলে দেয় কণার ভর কতো হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নিউট্রিনোগুলোর ভর খুব কম, কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এদের ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা কম। অন্যদিকে, ইলেক্ট্রন কিংবা কোয়ার্ক, নিউট্রিনোর তূলনায় বেশী ভারী – কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এই কণাগুলোর ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা নিউট্রিনোর চাইতে বেশী।
হিগস ফিল্ড এমন একটা তাত্ত্বিক ক্ষেত্র যা অদৃশ্যমান এবং চুম্বক শক্তি এর মতো । এটা মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে । মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে মৌলিক কনা ছড়িয়ে থাকুক না কেনো, এর মধ্যে দিয়ে পাস করলে , সে তখন বাকী কনাগুলোকে ডেকে আনবে , একটা আরেকটার সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করবে। ফোটন এখানে বাহক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং বলা যায় পার্টিকেল গুলোর কোন অস্তিত্বই ছিলোনা কিন্তু যখন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় তখন তা ভর লাভ করে।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী লিউ লেডারম্যান হচ্ছেন একজন আজ্ঞেয়বাদী(যিনি ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে সন্ধিহান,কখনো বলেন না যে ঈশ্বর নেই আবার অস্বীকারও করেন না) পদার্থবিদ। তিনি ই সর্বপ্রথম এর নাম দেন গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কনা। কিন্তু বিজ্ঞানী হিগস এর বিরোধিতা করে বলেন তিনি নিজেই ঈশ্বরে বিশাসী না, তাছাড়া এই কনার আবিষ্কারের জন্য তার অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন goddam particle। কিন্তু প্রকাশক বইতে এ নামটা পরিবর্তন করে গডস পার্টিক্যাল করে দেন।... আর তখন থেকেই তা গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কণা নামে পরিচিত হওয়া শুরু করে ! আজ আমাদের পাশের গ্রামে এক হুজুর এই ঈশ্বর কণা নিয়ে ওয়াজে বয়ান দিয়ে বলছিলেন , "নাউজুবিল্লাহ, জাহান্নামি নাস্তিকেরা নাকি ইসরাইলের ষড়যন্ত্রে ঈমান ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বর কণা বের করেছে । " কথা গুলো শোনার পরে আমার বাবা ঈমান হারানোর বিচলিত হয়ে এই কথাগুলো আমাকে বলছিলেন । যাই হোক ধর্ম নিয়ে টানব না ... আমার অনেক বন্ধুও এই ঈশ্বর কণা নিয়ে চিন্তিত । তাই বলছি ঈশ্বর কণা কেবল পদার্থবিজ্ঞানের একটি টার্ম । 
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস অণু আবিষ্কার করার পর মনে করলেন এই অণুকে আর ভাঙ্গা যায় না এবং অণুই হচ্ছে পরম ক্ষুদ্র কণা। কিন্তু এখন আমরা জানি যে অণু কোন পরম ক্ষুদ্র কণা নয় এবং কোন মৌলিক কণা ও নয়। আমাদের এই মহাবিশ্বের সব কণাকে একটি মৌলিক কাঠামোতে বিভক্ত করা যায়। যে তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা ভাগ করতে পারি তাকে The Standard Model of Particle Physics বলে। এই তথ্য অনুসারে মহাবিশ্বের ব্যারিওনিক ম্যাটার অর্থ্যাত যাদের প্রোটন এবং নিউট্রন রয়েছে কিন্তু ইলেকট্রন বা নিউট্রিনো নেই, তাদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফার্মিওন যেখানে কণাগুলোর ভর আছে এবং ইলেকট্রিক চার্জ আছে। অন্যদিকে, আরেকটি ভাগ হল বোসন যেখানে কণাগুলো প্রকৃতির বল ধারণ করে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে আরেকটি অভিনব কণার সন্ধান মিলতে পারে বলে 1960 সাল থেকে আশাবাদী ছিলেন পদার্থবিদেরা। অবশেষে 4 জুলাই, 2012 সালে CERN এ অবস্থিত Large Hadron Collider(LHC) দিয়ে সেই অভিনব কণার সন্ধান মেলে। বিজ্ঞানী পীটার হিগস এবং আমাদের বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বোস এর নামানুসারে এই নতুন কণার নাম দেওয়া হয় হিগস-বোসন কণা। এই হিগস-বোসন এর চিহ্ন  হলো H0।
 এই হিগস-বোসন মহাবিশ্বের একটি অনেক বড় রহস্য ছিল একসময়। তবে আমরা এখন এই হিগস-বোসন এর ব্যাপারে অল্প কিছু হলেও জেনেছি। হিগস হল একটি বোসন কণা এবং একটি মৌলিক কণা।  প্রথমে ধারণা করা হয় যে এই কণার ভর আণবিক নিউক্লিয়াস এর এক হাজার ভাগের এক ভাগ। তবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ  করে দেখা যায় যে এই কণার ভর হলো 125 Gev যেটি প্রোটনের ভর এর চেয়ে 130 গুন বেশি। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো হিগস-বোসন এর কোন প্রকার স্পিন নেই, ইলেকট্রিক চার্জ নেই এবং কোন সাধারন বলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে না। অন্যদিকে, কোন সব বোসন কণার যেমন ক্ষেত্র আছে: যেমন ফোটন এর রয়েছে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তেমনি হিগস-বোরন এরও আছে হিগস ফিল্ড। ধারণা করা হচ্ছে যে এই মহাবিশ্বের যেকোনো কিছুর ভর আছে এই হিগস ফীল্ড এর জন্য। কোন বস্তু জড়তায় থাকতে পারে এই হিগস ফীল্ড এর কারণেই। যে বস্তুর যত ভর বেশি রয়েছে সেই বস্তু হিগস ফীল্ড এর সাথে ততবেশি মিথস্ক্রিয়া করে। অন্যদিকে, হিগস-বোসন শুধু বেশি ভর বস্তু দের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বলে ফোটন আলোর গতিতে ছুটতে পারে অর্থাৎ এই হিগস ফীল্ড এর কারণে সব বস্তু আলোর গতিতে ছুটতে পারে না।
এই হিগস-বোসন আবার অনেক আনস্টেবল। এর জীবনকাল সময় মাত্র 1.56*10^-22 সেকেন্ড এবং এই সময়ের পরে হিগস কণা রূপান্তরিত হয় Bottom-Antibottom pair, দুটি w-বোসন, দুটি Gluon, Tau-Tntitau Pair, দুটি z-বোসন এবং দুটি   ফোটন এ। মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার 10^-12 সেকেন্ড পরেই এই হিগস ফীল্ড তৈরি হয়।
বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যায় যে এই হিগস কণার ভর একটি ক্রিটিকাল মাত্রায় আছে। হিগস কণার ভর যদি এই মাত্রার থেকে আর একটু বেশি হয় তবে পুরো মহাবিশ্ব কলাপ্স করতে পারে একটি বিন্দুতে। হিগস এর এই ভরের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে বলা হয় Phase Transition। তবে এই কোলাপস আর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মিলে মহাবিশ্বের কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন যে Dark Matter এর সাথে এই হিগস কণার সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে আমাদের জানার এখনো অনেক কিছু বাকি। হয়তো এই হিগস-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে পারলে আমরা মহাবিশ্বের সকল রহস্যের সমাধান খুঁজে পাব, না হয় Quantum Theory of Gravity পাবো। তাই আমাদের এখন এই Hìggs-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
Source1-https://atlas.cern/updates/atlas-feature/higgs-বোসন
source2-https://phys.org/news/2013-12-collapse-universe-closer.html

তথ্যঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Higgs_boson
https://en.wikipedia.org/wiki/Photon
https://en.wikipedia.org/wiki/Electromagnetism
https://home.cern/topics/large-hadron-collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Large_Hadron_Collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Satyendra_Nath_Bose

হিগস বোসন

বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানী মহলের সব চেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ঈশ্বর কনা(GOD particle) তথা হিগস বোসন (higgs boson) কণা । আমরা মাঝে মধ্যেই এই হিগস বা বোসন কনার কথা TV বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি যে , কোন এক বিজ্ঞানী গোষ্ঠী হিগস বোসন এর সন্ধান পেয়েছেন তো অন্য কোন গোষ্টী এইটার খুব কাছে ।কিন্তু কি এই হিগস বোসন ? কেনই বা বিজ্ঞানীদের এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথা? এবার এটা সম্পর্কে কিছু জানা যাক 

আমরা জানি স্পিনের ভিত্তিতে মৌলিক কণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
-বোসন(স্পিন সংখ্যা পূর্ণ সাংখ্যিক)
-ফার্মিয়ন(স্পিন সংখ্যা ১/২ এর গুনিতক)

বোসন কণা কি টা জানেন তো? যে সব অতিপারমানবিক কণারা বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন মেনে চলে তাদের বোসন কণা বলা হয় । তবে এই বোসনের বোস শব্দ এসেছে একজন বাঙালী বিজ্ঞানীর নাম হতে । আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু হচ্ছেন সেই মহান বিজ্ঞানী যার নামানুসারেই এই কণাদের নাম বোসন বলা হয় । সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯২১ সালের মে মাসের কোন এক সময় ঢাকায় আসেন এবং একই বছরের জুনের ১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রীডার পদে যোগদান করেন । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্ক যে সমীকরণ দিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কিন্তু এই তত্ত্বের মধ্যে একটি ত্রুটি ছিল । আর এই ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আইনস্টাইন ,পল ডিরাক এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের আর বড় বড় বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কোন একটি কক্ষে বসে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক থাকা অবস্থায় এই ত্রুটির সমাধান করে বসেন মেধাবি সত্যেন্দ্রনাথ বসু ।

ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্কের সমীকরণের জন্য প্রয়োজন ছিল কোয়ান্টাম অবস্থার তাপবলবিদ্যাগত সম্ভাবনা(Probability ) নির্ধারণ করা । আর এই কাজটি সমাহারতত্ত্ব ব্যবহার করে সত্যেন্দ্রনাথ বসু করেছিলেন । বসু তাঁর এই কাজের প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের কাছে পাঠান , আইনস্টাইন এ প্রবন্ধের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং তা নিজেই জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সাইট Zeitschrift für Physik পত্রিকায় ১৯২৪ সালে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন । অধ্যাপক বসুকে তাই কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয় । তাঁর এই অবদানের জন্য কণাদের নাম দেয়া হয়েছে বোসন কণা ।বোসন কণারা আবার প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের –
ক) মৌলিক বোসন কণা এবং
খ ) যৌগিক বোসন কণা বা মেসন ।

বোসন কণারা হচ্ছে যৌগিক তবে প্রমিত মডেল বা Standard Model অনুযায়ী মৌলিক বোসন কণা হচ্ছে ৫ ধরনের –
- ৩ ধরনের গেজ বোসন (Gauge Bosons)
- ১ টি হিগস্ বোসন (Higgs Boson)
- ১ টি গ্রাভিটন (Graviton)

আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হল হিগস-বোসন। এই কণার হিগস নামকরন করা হয়েছে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিগস বোসনের এর নাম অনুসারে । তবে এটা নিয়া আলোচনা করতে গেলে যে দুটি বিষয় মাথায় আসে তার একটি সার্ণ(CERN-European Organization for Nuclear Research) এর LHC(LARGE HADRON COLLIDER) ।সার্ন এর LHC সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ,লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার হল পৃথিবীর বৃহত্তম কণা ত্বরক বা কনা পিষণকারী যন্ত্র ! এটি পৃথিবীর যন্ত্রও বটে ! এটি ভুঅভ্যন্তরে অবস্থিত ২৭ কিলোমিটারের একটি রিং আকৃতির যন্ত্র । এটিকে একটি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার দ্বারা কন্ট্রোল করা হয় ! ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটনসমৃদ্ধ বিপরীত গামী রশ্মির কনাগুলো প্রায় আলোর গতিতে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে নিযুক্ত হয় ! এর অভ্যন্তর ভাগ একদম বায়ুশূন্য এবং তাপমাত্রা -২৭১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা , মহাশূন্যের তাপমাত্রার চাইতেও কম ! তবে এর রশ্মি নির্গমনকারী দুই টিউবের চারেপাশে তরল হিলিয়ামের প্রবাহ থাকে যা এর চৌম্বকক্ষেত্রসহ পুরো ব্যবস্থাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে !

বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী পিটার হিগস এর নামানুসারে এর নামকরন করা হয়। এটা এমন একটা উপাদান যার সাহায্যে ভরের উৎপত্তি জানা যাবে। ধারনা করা হয়ে থাকে বিগ ব্যাং এর সাথে সাথে কিছু কনার উৎপত্তি ঘটেছিল যারা ছিল ভরবিহীন। কিন্তু পরবর্তীতে এরা ভর লাভ করে।আপনি নিশ্চয় হাসছেন, এ আবার কোন পাগলের প্রলাপ। ভর কি হুদায় উইড়া আসে নি? প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে আলোচনায় আমরা জেনেছিলাম যে কোয়ার্কদের আপেক্ষিক গতিবেগের জন্য নিউট্রন, প্রোটনের ভরের সৃষ্টি হয় । আর মহাবিশ্বের সুচনালগ্নের এই ভরহিন কণার জন্য হিগস ফিল্ড নামক আরেকটা তত্ত্ব আছে। এর নাম করন করা হয় হিগস ফিল্ড নামে । অর্থাৎ কনাগুলো যখন এই হিগস ফিল্ডের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে তখন এরা ভর লাভ করবে।

এলএইচসি তে দুটি প্রোটন কনার সংঘর্ষের ফলে কিছু কনার সৃষ্টি হয় যার একটার ভর অনেকটা হিগসের তাত্ত্বিক কনার কাছাকাছি, যা হিগস কনা নামে পরিচিত।LHC এর টিউবের ভিতর কনারা আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তবে কণাদের এমন ১ বিলিয়ন সংঘর্ষে মাত্র ১ বারই হিগস বোসন কণা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।হিগস বোসন কণা উৎপাদনের চারটি প্রক্রিয়া আছে।
-হিগস স্ট্রালং
-গ্লুউন ফিউশন
-উইক বোসন ফিউশন
-টপ ফিউশন

সংক্ষেপে, হিগস বোসন হচ্ছে এমন একটা অনুমিত বা প্রেডিক্টেড কনা, যার ভর স্টান্ডার্ড এলিমেন্টে আগে থেকেই অনুমিত ছিলো এবং যা হিগস ফিল্ডের বোসন কনা নামে পরিচিত ।এই মৌলিক কনা গুলো অশূন্য হিগস ফিল্ডের সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করে থাকে। ফোটন ও সেই জাতীয় শক্তি আদানপ্রদানকারী গেজ কণার সাথে যুক্ত হয়ে এটি W+ W-, Z0 নামে ভারী মেসন তৈরী করে যেগুলি সবই ফোটন বা হিগস কণার মত বোসন। এটা সালাম, ওয়াইনবার্গ, গ্ল্যাশোর স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস কণা ও হিগসের প্রতিসাম্য ভঙ্গ ব্যবহারের ফল।ইলেক্ট্রন, নিউট্রিনো, কোয়ার্ক এসব কণার সাথে যুক্ত হয়েও হিগস কণা তাদের ভর দেয়।

আরেক ভাবে বলা যায় হিগস বোসন কনা হচ্ছে এমন একটা কনা যেটা এতোদিনের অসম্পূর্ণ স্টান্ডার্ড এলিমেন্টাল ফিজিক্সের তত্ত্ব কে সম্পূর্ন করে।


হিগস ফিল্ড কি?
এক ধরণের ফিল্ডের মধ্য দিয়ে চলার সময় মৌলিক কণাগুলো ঐ ফিল্ডের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় সংঘর্ষ বা ইন্টার‍্যাকশন করছে, আর সেই ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রাই বলে দিচ্ছে যে সেই কণার ভর কত হবে।বিগ ব্যাংয়ের পরে যখন মহাবিশ্ব কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে তখন হিগস ফিল্ড তৈরী হয়। আর হিগস ফিল্ড তৈরী হবার আগে সমস্ত কণাই ছিল ভরহীন। এই হিগস ফিল্ড তৈরী হলে – ফিল্ডের সাথে ভরহীন কণাগুলো নানাভাবে ইন্টার‍্যাকশন করতে থাকে ও কণাগুলো ভরযুক্ত হতে থাকে। ভরযুক্ত হবাব সাথে সাথে আবার কণাগুলোর বেগও কমে আসে। হিগস ফিল্ডের সাথে ইন্ট্যারেকশণের মাত্রাই বলে দেয় কণার ভর কতো হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নিউট্রিনোগুলোর ভর খুব কম, কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এদের ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা কম। অন্যদিকে, ইলেক্ট্রন কিংবা কোয়ার্ক, নিউট্রিনোর তূলনায় বেশী ভারী – কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এই কণাগুলোর ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা নিউট্রিনোর চাইতে বেশী।
হিগস ফিল্ড এমন একটা তাত্ত্বিক ক্ষেত্র যা অদৃশ্যমান এবং চুম্বক শক্তি এর মতো । এটা মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে । মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে মৌলিক কনা ছড়িয়ে থাকুক না কেনো, এর মধ্যে দিয়ে পাস করলে , সে তখন বাকী কনাগুলোকে ডেকে আনবে , একটা আরেকটার সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করবে। ফোটন এখানে বাহক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং বলা যায় পার্টিকেল গুলোর কোন অস্তিত্বই ছিলোনা কিন্তু যখন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় তখন তা ভর লাভ করে।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী লিউ লেডারম্যান হচ্ছেন একজন আজ্ঞেয়বাদী(যিনি ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে সন্ধিহান,কখনো বলেন না যে ঈশ্বর নেই আবার অস্বীকারও করেন না) পদার্থবিদ। তিনি ই সর্বপ্রথম এর নাম দেন গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কনা। কিন্তু বিজ্ঞানী হিগস এর বিরোধিতা করে বলেন তিনি নিজেই ঈশ্বরে বিশাসী না, তাছাড়া এই কনার আবিষ্কারের জন্য তার অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন goddam particle। কিন্তু প্রকাশক বইতে এ নামটা পরিবর্তন করে গডস পার্টিক্যাল করে দেন।... আর তখন থেকেই তা গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কণা নামে পরিচিত হওয়া শুরু করে ! আজ আমাদের পাশের গ্রামে এক হুজুর এই ঈশ্বর কণা নিয়ে ওয়াজে বয়ান দিয়ে বলছিলেন , "নাউজুবিল্লাহ, জাহান্নামি নাস্তিকেরা নাকি ইসরাইলের ষড়যন্ত্রে ঈমান ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বর কণা বের করেছে । " কথা গুলো শোনার পরে আমার বাবা ঈমান হারানোর বিচলিত হয়ে এই কথাগুলো আমাকে বলছিলেন । যাই হোক ধর্ম নিয়ে টানব না ... আমার অনেক বন্ধুও এই ঈশ্বর কণা নিয়ে চিন্তিত । তাই বলছি ঈশ্বর কণা কেবল পদার্থবিজ্ঞানের একটি টার্ম । 
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস অণু আবিষ্কার করার পর মনে করলেন এই অণুকে আর ভাঙ্গা যায় না এবং অণুই হচ্ছে পরম ক্ষুদ্র কণা। কিন্তু এখন আমরা জানি যে অণু কোন পরম ক্ষুদ্র কণা নয় এবং কোন মৌলিক কণা ও নয়। আমাদের এই মহাবিশ্বের সব কণাকে একটি মৌলিক কাঠামোতে বিভক্ত করা যায়। যে তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা ভাগ করতে পারি তাকে The Standard Model of Particle Physics বলে। এই তথ্য অনুসারে মহাবিশ্বের ব্যারিওনিক ম্যাটার অর্থ্যাত যাদের প্রোটন এবং নিউট্রন রয়েছে কিন্তু ইলেকট্রন বা নিউট্রিনো নেই, তাদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফার্মিওন যেখানে কণাগুলোর ভর আছে এবং ইলেকট্রিক চার্জ আছে। অন্যদিকে, আরেকটি ভাগ হল বোসন যেখানে কণাগুলো প্রকৃতির বল ধারণ করে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে আরেকটি অভিনব কণার সন্ধান মিলতে পারে বলে 1960 সাল থেকে আশাবাদী ছিলেন পদার্থবিদেরা। অবশেষে 4 জুলাই, 2012 সালে CERN এ অবস্থিত Large Hadron Collider(LHC) দিয়ে সেই অভিনব কণার সন্ধান মেলে। বিজ্ঞানী পীটার হিগস এবং আমাদের বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বোস এর নামানুসারে এই নতুন কণার নাম দেওয়া হয় হিগস-বোসন কণা। এই হিগস-বোসন এর চিহ্ন  হলো H0।
 এই হিগস-বোসন মহাবিশ্বের একটি অনেক বড় রহস্য ছিল একসময়। তবে আমরা এখন এই হিগস-বোসন এর ব্যাপারে অল্প কিছু হলেও জেনেছি। হিগস হল একটি বোসন কণা এবং একটি মৌলিক কণা।  প্রথমে ধারণা করা হয় যে এই কণার ভর আণবিক নিউক্লিয়াস এর এক হাজার ভাগের এক ভাগ। তবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ  করে দেখা যায় যে এই কণার ভর হলো 125 Gev যেটি প্রোটনের ভর এর চেয়ে 130 গুন বেশি। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো হিগস-বোসন এর কোন প্রকার স্পিন নেই, ইলেকট্রিক চার্জ নেই এবং কোন সাধারন বলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে না। অন্যদিকে, কোন সব বোসন কণার যেমন ক্ষেত্র আছে: যেমন ফোটন এর রয়েছে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তেমনি হিগস-বোরন এরও আছে হিগস ফিল্ড। ধারণা করা হচ্ছে যে এই মহাবিশ্বের যেকোনো কিছুর ভর আছে এই হিগস ফীল্ড এর জন্য। কোন বস্তু জড়তায় থাকতে পারে এই হিগস ফীল্ড এর কারণেই। যে বস্তুর যত ভর বেশি রয়েছে সেই বস্তু হিগস ফীল্ড এর সাথে ততবেশি মিথস্ক্রিয়া করে। অন্যদিকে, হিগস-বোসন শুধু বেশি ভর বস্তু দের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বলে ফোটন আলোর গতিতে ছুটতে পারে অর্থাৎ এই হিগস ফীল্ড এর কারণে সব বস্তু আলোর গতিতে ছুটতে পারে না।
এই হিগস-বোসন আবার অনেক আনস্টেবল। এর জীবনকাল সময় মাত্র 1.56*10^-22 সেকেন্ড এবং এই সময়ের পরে হিগস কণা রূপান্তরিত হয় Bottom-Antibottom pair, দুটি w-বোসন, দুটি Gluon, Tau-Tntitau Pair, দুটি z-বোসন এবং দুটি   ফোটন এ। মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার 10^-12 সেকেন্ড পরেই এই হিগস ফীল্ড তৈরি হয়।
বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যায় যে এই হিগস কণার ভর একটি ক্রিটিকাল মাত্রায় আছে। হিগস কণার ভর যদি এই মাত্রার থেকে আর একটু বেশি হয় তবে পুরো মহাবিশ্ব কলাপ্স করতে পারে একটি বিন্দুতে। হিগস এর এই ভরের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে বলা হয় Phase Transition। তবে এই কোলাপস আর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মিলে মহাবিশ্বের কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন যে Dark Matter এর সাথে এই হিগস কণার সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে আমাদের জানার এখনো অনেক কিছু বাকি। হয়তো এই হিগস-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে পারলে আমরা মহাবিশ্বের সকল রহস্যের সমাধান খুঁজে পাব, না হয় Quantum Theory of Gravity পাবো। তাই আমাদের এখন এই Hìggs-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
Source1-https://atlas.cern/updates/atlas-feature/higgs-বোসন
source2-https://phys.org/news/2013-12-collapse-universe-closer.html

তথ্যঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Higgs_boson
https://en.wikipedia.org/wiki/Photon
https://en.wikipedia.org/wiki/Electromagnetism
https://home.cern/topics/large-hadron-collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Large_Hadron_Collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Satyendra_Nath_Bose

Posted at July 08, 2020 |  by Arya ঋষি
রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
সংস্কৃতে “রাম” শব্দের অর্থ যে ঘুরে বেড়ায়, এবং এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল রোমিং (Roaming)। তাই রাম আর রোমিং সমান!
এটি, এবং হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে আরও অনেক অন্যান্য কুৎসিত, হাস্যকর এবং গভীরভাবে মর্যাদাহানিকর উল্লেখ ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বারা প্রকাশিত পাঠ্যবইতে পড়ানো হচ্ছে।
২০১১ সালে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।
অতীত এবং ঐতিহ্য শিরোনামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যেখানে ভগবান রামের বিষয়ে অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং অপমানকর উল্লেখ রয়েছে, যা ক্রোধ আর যাতনা উদ্রেক করছে। বইটির চতুর্থ অধ্যায় হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস ধারা এবং এটি বিশেষভাবে অবমাননাকর।
অধ্যায়টিতে বলা হয়েছে যে সংস্কৃতে *রাম” শব্দের অর্থ যাযাবর, অথবা একজন ব্যক্তি যে ঘুরে বেড়ায়। এবং “রাম” শব্দের সাথে “রোমিং” শব্দের বেশ মিল আছে। সংস্কৃত এবং ইংরেজির এই “মিল” পরে এই অধ্যায়ে ভিত্তি গঠন করেছে  অত্যন্ত অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা রচিত জঘন্য এবং নিন্দিত “আর্য আক্রমণ তত্ত্বের”।
অধ্যায়ে বলা হচ্ছে যে বহু পূর্বে, একদল যাযাবর মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি থেকে খাদ্য আর চারণভূমির খোঁজে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারপর এই যাযাবরেরা “আদি নিবাসীদের” সাথে মিশে যায় এবং তাদের সাথে যুদ্ধও করেছিল।
মধ্য এশিয়ার এই যাযাবরেরা আদি নিবাসীদের সাথে অধিকাংশ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং উপমহাদেশের উত্তর ভাগে বসবাস শুরু করার পর ভারতীয় উপদ্বীপেও বাস করা আরম্ভ করে। অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
“দক্ষিণ ভারতে এই যাযাবরদের বসবাস শুরু করার কাহিনীই হল রামায়ণ।” তাই “রাম” বলতে রামায়ণের একজন যাযাবরকে বোঝায়, পাঠ্যবই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে!
বইতে লেখা আছে,
“আদি নিবাসীদের ওপর বিজয়লাভের কাহিনীগুলি মুখের কথায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করল এবং তার থেকে গল্প উদ্ভুত হতে লাগল। সেই গল্পগুলিতে পরাজিতদের কাহিনীর খলনায়ক হিসেবে পেশ করা হতে লাগল এবং রাক্ষস, অসুর, অসভ্য এবং ডাকাত রূপে বর্ণনা করা হতে থাকল। বিজয়ীদের লেখা এরূপই একটি গল্প হল রামায়ণ, এবং তাই রাবণকে শয়তান আর বিপজ্জনক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।”

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিলকিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।


অধ্যায়ে আরো বলে যাওয়া হয়েছে যে “ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর” অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি এবং ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষাগুলিতে বেশ মিল রয়েছে। মধ্য এশিয়ার কৃষিজীবীরা খাদ্যের অভাবের কারণে ইউরোপ, ইরান এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচরণ করা শুরু করেছিল।
অধ্যায়ে এই ভুয়ো দাবী করা হয়েছে যে সংস্কৃতের এবং অন্যান্য যে ভাষাগুলিতে আমরা আজ কথা বলে থাকি সেগুলির জন্ম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠী থেকে হয়েছে। অধ্যায়ে ঋকবেদ এবং জেন্দ আবেস্তার (পার্সিদের পবিত্র গ্রন্থ) মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
“এই কারণেই মিল রয়েছে, কিন্তু দুটি গ্রন্থের মধ্যে মিল আছে।”, অধ্যায়ে বলা হয়েছে। এর অভূতপূর্ব উদাহরণ পেশ করা হয়েছে: ঋক বেদে দেব হলেন ঈশ্বর এবং অত্যন্ত সন্মানীয় যেখানে জেন্ড আবেস্তায় দায়েভ বলতে শয়তানদের বোঝায়। জেন্দ আবেস্তায় উচ্চতম দেব হলেন আহুর যেখানে অসুর বলতে তাদের বোঝায় যাদের মধ্যে কিছু ঋণাত্মক গুণাবলী বর্তমান।”
অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, ”
ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষাগুলিতে যারা কথা বলত তাদের মধ্যে সম্ভবত কোন বিবাদের কারণে সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘাতের ফলে সেই ভাষা উপগোষ্ঠীর একটি ভাষায় কথা বলা একই দল উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ভারতীর উপমহাদেশে প্রবেশ করে। এবং যে ভাষা তাদের সাথে বিবর্তিত হয়ে ওঠে সেটি পরবর্তীতে ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী নামে পরিচিত। ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রাচীনতম লেখ হল ঋক বেদ।”
অধ্যায়ে এই ভুল দাবীও করা হয়েছে যে বৈদিক গ্রন্থগুলিতে “ইন্দো-আর্য”দের প্রচরণ এবং উপমহাদেশে তাদের বসতি স্থাপনের কাহিনী পাওয়া যায়, এবং এই যাযাবরেরা এখানে যে সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিল তা বৈদিক সভ্যতা নামে পরিচিত।
“আর্য আক্রমণ তত্ত্ব” নামক ধারণাটি ভুয়ো এবং এখন তা পুরোপুরি নিন্দিত, ইউরোপীয়দের এবং পরে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা এটি একটি হানিকর উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছিল। ঐতিহাসিক সমীর দাস বলেছেন, “প্রতারণা, অসততা, এবং ছলনার ভিত্তিতে বানানো এই তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম আক্রমণকারীদের দ্বারা লুটতরাজ, লুণ্ঠন, এবং অকহতব্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রোধের উদ্রেকের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করা।”
“এই ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে ঐতিহাসিকেরা এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে উত্তর এবং পূর্বে বসবাসকারী ভারতীয়রা আসলে আক্রমণকারীদের উত্তরসূরী এবং ভারতীয় উপদ্বীপের বর্তমান বসবাসকারীদের পূর্বপুরুষদের তারা দখলচ্যুত করেছিল। এখানে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে পরবর্তীতে মুসলিম আক্রমণও একই উদাহরণ অনুসরণ করে এবং তাই রেগে যাওয়ার কিছুই নেই। এই উদ্দেশ্যে মাথায় রেখেই এই গল্প ফাঁদা হয়েছিল।” বসু বলেছেন।  অধিকাংশ জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই ব্যাখ্যা সমর্থন করেন।
অনেকে এই কথাও তুলে ধরেছেন যে তৃণমূলের সাথে যুক্ত থাকা পণ্ডিত এবং এই দলের বেশ কিছু নেতার দ্বারা প্রচারিত এই মিথ্যা আখ্যান যে ভগবান রাম মূলত উত্তর ভারতীয়দের আরাধ্য দেবতা এবং বাংলায় তাঁর কোন স্থান নেই, তার সাথে এই অধ্যায়ের পাঠগুলি বেশ খাপ খায়।  গত বছরের লোকসভা ভোটের পর অমর্ত্য সেনও একই সুরে কথা বলেছিলেন, যে ভোটে বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টি অভূতপূর্ব ফলাফল লাভ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমাজবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মতামত রেখেছেন যে, “উদ্দেশ্য হল বাংলা আর বাঙালিকে একটি পৃথক সত্ত্বা হিসাবে দর্শানো যার কিছুই উত্তর  ভারতীয়দের সাথে মেলে না, যে উত্তর ভারতীয়দের পূর্বপুরুষেরা বহিরাগত আক্রমণকারী। এই ভুয়ো এবং ধূর্ত তত্ত্বের একটি লুক্কায়িত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে: বিজেপিকে বহিরাগতদের পার্টি হিসাবে বর্ণনা করা।”
ইতিহাসের পাঠ্যবইটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক শিরীন মাসুদ দ্বারা সম্পাদিত, যিনি বইটির “বিজ্ঞানসম্মত অনুমান”ও (পরিকল্পনা) তৈরি করেছেন। কাউন্সিলের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা এই বইটি প্রস্তাবিত ও গৃহীত হয় তার সভাপতি হলেন জনৈক অভীক মজুমদার (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক) এবং কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দে এর একজন সদস্য।
২০১১ সালের জুলাইতে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তক যাচাই করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও মাসুদ, মজুমদার এবং দে ছিলেন। এই বিষয়ে গত বছর গঠিত হওয়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও তাঁরা আছেন।
বর্তমান রাজ্য সরকারের শাসনকালীন প্রকাশিত হওয়া পাঠ্যবই অতীতেও জনরোষের কারণ হয়েছে যখন রামধনুর মত শব্দ পাল্টে রংধনু করে দেওয়া হয়, যা অনেকের মত মুসলিম তোষণের জন্যই করা।
অভিভাবক এবং কিছু পণ্ডিতদের কাছ থেকে প্রতিবাদ আসা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এই ভুলভাল ইতিহাস সম্বলিত পাঠ্যবইগুলি পড়িয়ে যাচ্ছে, এবং হিন্দুধর্মকে ঠাট্টা করা জারী আছে।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়দীপ মজুমদারের লেখা মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন শুভম ক্ষত্রী।

রাম মানে রোম ব্যাখ্যা

রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
সংস্কৃতে “রাম” শব্দের অর্থ যে ঘুরে বেড়ায়, এবং এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল রোমিং (Roaming)। তাই রাম আর রোমিং সমান!
এটি, এবং হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে আরও অনেক অন্যান্য কুৎসিত, হাস্যকর এবং গভীরভাবে মর্যাদাহানিকর উল্লেখ ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বারা প্রকাশিত পাঠ্যবইতে পড়ানো হচ্ছে।
২০১১ সালে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।
অতীত এবং ঐতিহ্য শিরোনামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যেখানে ভগবান রামের বিষয়ে অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং অপমানকর উল্লেখ রয়েছে, যা ক্রোধ আর যাতনা উদ্রেক করছে। বইটির চতুর্থ অধ্যায় হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস ধারা এবং এটি বিশেষভাবে অবমাননাকর।
অধ্যায়টিতে বলা হয়েছে যে সংস্কৃতে *রাম” শব্দের অর্থ যাযাবর, অথবা একজন ব্যক্তি যে ঘুরে বেড়ায়। এবং “রাম” শব্দের সাথে “রোমিং” শব্দের বেশ মিল আছে। সংস্কৃত এবং ইংরেজির এই “মিল” পরে এই অধ্যায়ে ভিত্তি গঠন করেছে  অত্যন্ত অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা রচিত জঘন্য এবং নিন্দিত “আর্য আক্রমণ তত্ত্বের”।
অধ্যায়ে বলা হচ্ছে যে বহু পূর্বে, একদল যাযাবর মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি থেকে খাদ্য আর চারণভূমির খোঁজে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারপর এই যাযাবরেরা “আদি নিবাসীদের” সাথে মিশে যায় এবং তাদের সাথে যুদ্ধও করেছিল।
মধ্য এশিয়ার এই যাযাবরেরা আদি নিবাসীদের সাথে অধিকাংশ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং উপমহাদেশের উত্তর ভাগে বসবাস শুরু করার পর ভারতীয় উপদ্বীপেও বাস করা আরম্ভ করে। অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
“দক্ষিণ ভারতে এই যাযাবরদের বসবাস শুরু করার কাহিনীই হল রামায়ণ।” তাই “রাম” বলতে রামায়ণের একজন যাযাবরকে বোঝায়, পাঠ্যবই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে!
বইতে লেখা আছে,
“আদি নিবাসীদের ওপর বিজয়লাভের কাহিনীগুলি মুখের কথায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করল এবং তার থেকে গল্প উদ্ভুত হতে লাগল। সেই গল্পগুলিতে পরাজিতদের কাহিনীর খলনায়ক হিসেবে পেশ করা হতে লাগল এবং রাক্ষস, অসুর, অসভ্য এবং ডাকাত রূপে বর্ণনা করা হতে থাকল। বিজয়ীদের লেখা এরূপই একটি গল্প হল রামায়ণ, এবং তাই রাবণকে শয়তান আর বিপজ্জনক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।”

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিলকিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।


অধ্যায়ে আরো বলে যাওয়া হয়েছে যে “ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর” অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি এবং ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষাগুলিতে বেশ মিল রয়েছে। মধ্য এশিয়ার কৃষিজীবীরা খাদ্যের অভাবের কারণে ইউরোপ, ইরান এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচরণ করা শুরু করেছিল।
অধ্যায়ে এই ভুয়ো দাবী করা হয়েছে যে সংস্কৃতের এবং অন্যান্য যে ভাষাগুলিতে আমরা আজ কথা বলে থাকি সেগুলির জন্ম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠী থেকে হয়েছে। অধ্যায়ে ঋকবেদ এবং জেন্দ আবেস্তার (পার্সিদের পবিত্র গ্রন্থ) মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
“এই কারণেই মিল রয়েছে, কিন্তু দুটি গ্রন্থের মধ্যে মিল আছে।”, অধ্যায়ে বলা হয়েছে। এর অভূতপূর্ব উদাহরণ পেশ করা হয়েছে: ঋক বেদে দেব হলেন ঈশ্বর এবং অত্যন্ত সন্মানীয় যেখানে জেন্ড আবেস্তায় দায়েভ বলতে শয়তানদের বোঝায়। জেন্দ আবেস্তায় উচ্চতম দেব হলেন আহুর যেখানে অসুর বলতে তাদের বোঝায় যাদের মধ্যে কিছু ঋণাত্মক গুণাবলী বর্তমান।”
অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, ”
ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষাগুলিতে যারা কথা বলত তাদের মধ্যে সম্ভবত কোন বিবাদের কারণে সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘাতের ফলে সেই ভাষা উপগোষ্ঠীর একটি ভাষায় কথা বলা একই দল উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ভারতীর উপমহাদেশে প্রবেশ করে। এবং যে ভাষা তাদের সাথে বিবর্তিত হয়ে ওঠে সেটি পরবর্তীতে ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী নামে পরিচিত। ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রাচীনতম লেখ হল ঋক বেদ।”
অধ্যায়ে এই ভুল দাবীও করা হয়েছে যে বৈদিক গ্রন্থগুলিতে “ইন্দো-আর্য”দের প্রচরণ এবং উপমহাদেশে তাদের বসতি স্থাপনের কাহিনী পাওয়া যায়, এবং এই যাযাবরেরা এখানে যে সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিল তা বৈদিক সভ্যতা নামে পরিচিত।
“আর্য আক্রমণ তত্ত্ব” নামক ধারণাটি ভুয়ো এবং এখন তা পুরোপুরি নিন্দিত, ইউরোপীয়দের এবং পরে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা এটি একটি হানিকর উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছিল। ঐতিহাসিক সমীর দাস বলেছেন, “প্রতারণা, অসততা, এবং ছলনার ভিত্তিতে বানানো এই তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম আক্রমণকারীদের দ্বারা লুটতরাজ, লুণ্ঠন, এবং অকহতব্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রোধের উদ্রেকের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করা।”
“এই ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে ঐতিহাসিকেরা এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে উত্তর এবং পূর্বে বসবাসকারী ভারতীয়রা আসলে আক্রমণকারীদের উত্তরসূরী এবং ভারতীয় উপদ্বীপের বর্তমান বসবাসকারীদের পূর্বপুরুষদের তারা দখলচ্যুত করেছিল। এখানে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে পরবর্তীতে মুসলিম আক্রমণও একই উদাহরণ অনুসরণ করে এবং তাই রেগে যাওয়ার কিছুই নেই। এই উদ্দেশ্যে মাথায় রেখেই এই গল্প ফাঁদা হয়েছিল।” বসু বলেছেন।  অধিকাংশ জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই ব্যাখ্যা সমর্থন করেন।
অনেকে এই কথাও তুলে ধরেছেন যে তৃণমূলের সাথে যুক্ত থাকা পণ্ডিত এবং এই দলের বেশ কিছু নেতার দ্বারা প্রচারিত এই মিথ্যা আখ্যান যে ভগবান রাম মূলত উত্তর ভারতীয়দের আরাধ্য দেবতা এবং বাংলায় তাঁর কোন স্থান নেই, তার সাথে এই অধ্যায়ের পাঠগুলি বেশ খাপ খায়।  গত বছরের লোকসভা ভোটের পর অমর্ত্য সেনও একই সুরে কথা বলেছিলেন, যে ভোটে বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টি অভূতপূর্ব ফলাফল লাভ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমাজবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মতামত রেখেছেন যে, “উদ্দেশ্য হল বাংলা আর বাঙালিকে একটি পৃথক সত্ত্বা হিসাবে দর্শানো যার কিছুই উত্তর  ভারতীয়দের সাথে মেলে না, যে উত্তর ভারতীয়দের পূর্বপুরুষেরা বহিরাগত আক্রমণকারী। এই ভুয়ো এবং ধূর্ত তত্ত্বের একটি লুক্কায়িত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে: বিজেপিকে বহিরাগতদের পার্টি হিসাবে বর্ণনা করা।”
ইতিহাসের পাঠ্যবইটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক শিরীন মাসুদ দ্বারা সম্পাদিত, যিনি বইটির “বিজ্ঞানসম্মত অনুমান”ও (পরিকল্পনা) তৈরি করেছেন। কাউন্সিলের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা এই বইটি প্রস্তাবিত ও গৃহীত হয় তার সভাপতি হলেন জনৈক অভীক মজুমদার (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক) এবং কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দে এর একজন সদস্য।
২০১১ সালের জুলাইতে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তক যাচাই করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও মাসুদ, মজুমদার এবং দে ছিলেন। এই বিষয়ে গত বছর গঠিত হওয়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও তাঁরা আছেন।
বর্তমান রাজ্য সরকারের শাসনকালীন প্রকাশিত হওয়া পাঠ্যবই অতীতেও জনরোষের কারণ হয়েছে যখন রামধনুর মত শব্দ পাল্টে রংধনু করে দেওয়া হয়, যা অনেকের মত মুসলিম তোষণের জন্যই করা।
অভিভাবক এবং কিছু পণ্ডিতদের কাছ থেকে প্রতিবাদ আসা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এই ভুলভাল ইতিহাস সম্বলিত পাঠ্যবইগুলি পড়িয়ে যাচ্ছে, এবং হিন্দুধর্মকে ঠাট্টা করা জারী আছে।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়দীপ মজুমদারের লেখা মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন শুভম ক্ষত্রী।

Posted at July 06, 2020 |  by Arya ঋষি
How Britain stole $45 trillion from India and lied about it

by Jason Hickel

There is a story that is commonly told in Britain that the colonisation of India - as horrible as it may have been - was not of any major economic benefit to Britain itself. If anything, the administration of India was a cost to Britain. So the fact that the empire was sustained for so long - the story goes - was a gesture of Britain's benevolence.
New research by the renowned economist Utsa Patnaik - just published by Columbia University Press - deals a crushing blow to this narrative. Drawing on nearly two centuries of detailed data on tax and trade, Patnaik calculated that Britain drained a total of nearly $45 trillion from India during the period 1765 to 1938.
It's a staggering sum. For perspective, $45 trillion is 17 times more than the total annual gross domestic product of the United Kingdom today.
How did this come about?
It happened through the trade system. Prior to the colonial period, Britain bought goods like textiles and rice from Indian producers and paid for them in the normal way - mostly with silver - as they did with any other country. But something changed in 1765, shortly after the East India Company took control of the subcontinent and established a monopoly over Indian trade.
Here's how it worked. The East India Company began collecting taxes in India, and then cleverly used a portion of those revenues (about a third) to fund the purchase of Indian goods for British use. In other words, instead of paying for Indian goods out of their own pocket, British traders acquired them for free, "buying" from peasants and weavers using money that had just been taken from them.
It was a scam - theft on a grand scale. Yet most Indians were unaware of what was going on because the agent who collected the taxes was not the same as the one who showed up to buy their goods. Had it been the same person, they surely would have smelled a rat.
Some of the stolen goods were consumed in Britain, and the rest were re-exported elsewhere. The re-export system allowed Britain to finance a flow of imports from Europe, including strategic materials like iron, tar and timber, which were essential to Britain's industrialisation. Indeed, the Industrial Revolution depended in large part on this systematic theft from India.
On top of this, the British were able to sell the stolen goods to other countries for much more than they "bought" them for in the first place, pocketing not only 100 percent of the original value of the goods but also the markup.
After the British Raj took over in 1858, colonisers added a special new twist to the tax-and-buy system. As the East India Company's monopoly broke down, Indian producers were allowed to export their goods directly to other countries. But Britain made sure that the payments for those goods nonetheless ended up in London.
How did this work? Basically, anyone who wanted to buy goods from India would do so using special Council Bills - a unique paper currency issued only by the British Crown. And the only way to get those bills was to buy them from London with gold or silver. So traders would pay London in gold to get the bills, and then use the bills to pay Indian producers. When Indians cashed the bills in at the local colonial office, they were "paid" in rupees out of tax revenues - money that had just been collected from them. So, once again, they were not in fact paid at all; they were defrauded.
Meanwhile, London ended up with all of the gold and silver that should have gone directly to the Indians in exchange for their exports.
This corrupt system meant that even while India was running an impressive trade surplus with the rest of the world - a surplus that lasted for three decades in the early 20th century - it showed up as a deficit in the national accounts because the real income from India's exports was appropriated in its entirety by Britain.
Some point to this fictional "deficit" as evidence that India was a liability to Britain. But exactly the opposite is true. Britain intercepted enormous quantities of income that rightly belonged to Indian producers. India was the goose that laid the golden egg. Meanwhile, the "deficit" meant that India had no option but to borrow from Britain to finance its imports. So the entire Indian population was forced into completely unnecessary debt to their colonial overlords, further cementing British control.
Britain used the windfall from this fraudulent system to fuel the engines of imperial violence - funding the invasion of China in the 1840s and the suppression of the Indian Rebellion in 1857. And this was on top of what the Crown took directly from Indian taxpayers to pay for its wars. As Patnaik points out, "the cost of all Britain's wars of conquest outside Indian borders were charged always wholly or mainly to Indian revenues."
And that's not all. Britain used this flow of tribute from India to finance the expansion of capitalism in Europe and regions of European settlement, like Canada and Australia. So not only the industrialisation of Britain but also the industrialisation of much of the Western world was facilitated by extraction from the colonies.
Patnaik identifies four distinct economic periods in colonial India from 1765 to 1938, calculates the extraction for each, and then compounds at a modest rate of interest (about 5 percent, which is lower than the market rate) from the middle of each period to the present. Adding it all up, she finds that the total drain amounts to $44.6 trillion. This figure is conservative, she says, and does not include the debts that Britain imposed on India during the Raj.
These are eye-watering sums. But the true costs of this drain cannot be calculated. If India had been able to invest its own tax revenues and foreign exchange earnings in development - as Japan did - there's no telling how history might have turned out differently. India could very well have become an economic powerhouse. Centuries of poverty and suffering could have been prevented.
All of this is a sobering antidote to the rosy narrative promoted by certain powerful voices in Britain. The conservative historian Niall Ferguson has claimed that British rule helped "develop" India. While he was prime minister, David Cameron asserted that British rule was a net help to India.
This narrative has found considerable traction in the popular imagination: according to a 2014 YouGov poll, 50 percent of people in Britain believe that colonialism was beneficial to the colonies.
Yet during the entire 200-year history of British rule in India, there was almost no increase in per capita income. In fact, during the last half of the 19th century - the heyday of British intervention - income in India collapsed by half. The average life expectancy of Indians dropped by a fifth from 1870 to 1920. Tens of millions died needlessly of policy-induced famine.
Britain didn't develop India. Quite the contrary - as Patnaik's work makes clear - India developed Britain.
What does this require of Britain today? An apology? Absolutely. Reparations? Perhaps - although there is not enough money in all of Britain to cover the sums that Patnaik identifies. In the meantime, we can start by setting the story straight. We need to recognise that Britain retained control of India not out of benevolence but for the sake of plunder and that Britain's industrial rise didn't emerge sui generis from the steam engine and strong institutions, as our schoolbooks would have it, but depended on violent theft from other lands and other peoples.

How Britain stole $45 trillion from India

How Britain stole $45 trillion from India and lied about it

by Jason Hickel

There is a story that is commonly told in Britain that the colonisation of India - as horrible as it may have been - was not of any major economic benefit to Britain itself. If anything, the administration of India was a cost to Britain. So the fact that the empire was sustained for so long - the story goes - was a gesture of Britain's benevolence.
New research by the renowned economist Utsa Patnaik - just published by Columbia University Press - deals a crushing blow to this narrative. Drawing on nearly two centuries of detailed data on tax and trade, Patnaik calculated that Britain drained a total of nearly $45 trillion from India during the period 1765 to 1938.
It's a staggering sum. For perspective, $45 trillion is 17 times more than the total annual gross domestic product of the United Kingdom today.
How did this come about?
It happened through the trade system. Prior to the colonial period, Britain bought goods like textiles and rice from Indian producers and paid for them in the normal way - mostly with silver - as they did with any other country. But something changed in 1765, shortly after the East India Company took control of the subcontinent and established a monopoly over Indian trade.
Here's how it worked. The East India Company began collecting taxes in India, and then cleverly used a portion of those revenues (about a third) to fund the purchase of Indian goods for British use. In other words, instead of paying for Indian goods out of their own pocket, British traders acquired them for free, "buying" from peasants and weavers using money that had just been taken from them.
It was a scam - theft on a grand scale. Yet most Indians were unaware of what was going on because the agent who collected the taxes was not the same as the one who showed up to buy their goods. Had it been the same person, they surely would have smelled a rat.
Some of the stolen goods were consumed in Britain, and the rest were re-exported elsewhere. The re-export system allowed Britain to finance a flow of imports from Europe, including strategic materials like iron, tar and timber, which were essential to Britain's industrialisation. Indeed, the Industrial Revolution depended in large part on this systematic theft from India.
On top of this, the British were able to sell the stolen goods to other countries for much more than they "bought" them for in the first place, pocketing not only 100 percent of the original value of the goods but also the markup.
After the British Raj took over in 1858, colonisers added a special new twist to the tax-and-buy system. As the East India Company's monopoly broke down, Indian producers were allowed to export their goods directly to other countries. But Britain made sure that the payments for those goods nonetheless ended up in London.
How did this work? Basically, anyone who wanted to buy goods from India would do so using special Council Bills - a unique paper currency issued only by the British Crown. And the only way to get those bills was to buy them from London with gold or silver. So traders would pay London in gold to get the bills, and then use the bills to pay Indian producers. When Indians cashed the bills in at the local colonial office, they were "paid" in rupees out of tax revenues - money that had just been collected from them. So, once again, they were not in fact paid at all; they were defrauded.
Meanwhile, London ended up with all of the gold and silver that should have gone directly to the Indians in exchange for their exports.
This corrupt system meant that even while India was running an impressive trade surplus with the rest of the world - a surplus that lasted for three decades in the early 20th century - it showed up as a deficit in the national accounts because the real income from India's exports was appropriated in its entirety by Britain.
Some point to this fictional "deficit" as evidence that India was a liability to Britain. But exactly the opposite is true. Britain intercepted enormous quantities of income that rightly belonged to Indian producers. India was the goose that laid the golden egg. Meanwhile, the "deficit" meant that India had no option but to borrow from Britain to finance its imports. So the entire Indian population was forced into completely unnecessary debt to their colonial overlords, further cementing British control.
Britain used the windfall from this fraudulent system to fuel the engines of imperial violence - funding the invasion of China in the 1840s and the suppression of the Indian Rebellion in 1857. And this was on top of what the Crown took directly from Indian taxpayers to pay for its wars. As Patnaik points out, "the cost of all Britain's wars of conquest outside Indian borders were charged always wholly or mainly to Indian revenues."
And that's not all. Britain used this flow of tribute from India to finance the expansion of capitalism in Europe and regions of European settlement, like Canada and Australia. So not only the industrialisation of Britain but also the industrialisation of much of the Western world was facilitated by extraction from the colonies.
Patnaik identifies four distinct economic periods in colonial India from 1765 to 1938, calculates the extraction for each, and then compounds at a modest rate of interest (about 5 percent, which is lower than the market rate) from the middle of each period to the present. Adding it all up, she finds that the total drain amounts to $44.6 trillion. This figure is conservative, she says, and does not include the debts that Britain imposed on India during the Raj.
These are eye-watering sums. But the true costs of this drain cannot be calculated. If India had been able to invest its own tax revenues and foreign exchange earnings in development - as Japan did - there's no telling how history might have turned out differently. India could very well have become an economic powerhouse. Centuries of poverty and suffering could have been prevented.
All of this is a sobering antidote to the rosy narrative promoted by certain powerful voices in Britain. The conservative historian Niall Ferguson has claimed that British rule helped "develop" India. While he was prime minister, David Cameron asserted that British rule was a net help to India.
This narrative has found considerable traction in the popular imagination: according to a 2014 YouGov poll, 50 percent of people in Britain believe that colonialism was beneficial to the colonies.
Yet during the entire 200-year history of British rule in India, there was almost no increase in per capita income. In fact, during the last half of the 19th century - the heyday of British intervention - income in India collapsed by half. The average life expectancy of Indians dropped by a fifth from 1870 to 1920. Tens of millions died needlessly of policy-induced famine.
Britain didn't develop India. Quite the contrary - as Patnaik's work makes clear - India developed Britain.
What does this require of Britain today? An apology? Absolutely. Reparations? Perhaps - although there is not enough money in all of Britain to cover the sums that Patnaik identifies. In the meantime, we can start by setting the story straight. We need to recognise that Britain retained control of India not out of benevolence but for the sake of plunder and that Britain's industrial rise didn't emerge sui generis from the steam engine and strong institutions, as our schoolbooks would have it, but depended on violent theft from other lands and other peoples.

Posted at June 29, 2020 |  by Arya ঋষি

“গজনীর বর্বর মাহমুদ” 
পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউএটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী' এটা করেছে। সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের  সুপুত্র'মাহমুদ', যে ভারতের ইতিহাসে 'গজনীর মাহমুদ' বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাসকরা দুরুহ মনে হয়।
অনেক বর্বর সাম্রাজ্যবাদী এবং লুটেরাদের কাহিনী ইতিহাসে লেখা আছে। সেইলুটের ধরন বর্তমানে একটু পালটেছে, কিন্তু যুদ্ধবাজদের মনের আসল উদ্দেশ্যএকই আছে। কোনো রাজনৈতিক মতের কথা বলুন বা ধর্মীয় মতের কথা বলুন,আসল উদ্দেশ্য নিরীহ মানুষের ওপরে অত্যাচার করে নিজে ভালো থাকবো।মোদ্দা কথা এটাই। একমাত্র সনাতনি দর্শন এবং তার ধারক ও বাহকদের বাদদিয়ে এই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক, সামাজিক মতকে আশ্রয়করে যুগে যুগে যা হয়েছে সেটা বিরুদ্ধবাদী নিরীহ মানুষের অপর অত্যাচার।আজ এই গন্তান্ত্রিক যুগেও সেই কাজ চলছে, সারা পৃথিবীতে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠারনামে
অর্থনৈতিক শোষনের পরিকল্পনা।
বর্তমান বাদ দেই। ঐতিহাসিক আমলে, পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার (মহান???), এটিলা দি হুন, রোম সম্রাটেরা, আরবী তুর্কি জিহাদীরা, চেংগিজ খান, হুন রাজ মিহিরকুল, রক্ত পিপাসু তৈমুর লং, কুষান সম্রাটেরা , মোঘল সম্রাটেরাবিশেষ করে আকবর আর ঔরংজেব, ক্যমুনিষ্ট রা, নাৎসী বাহিনী, এরা সবাই এই কাজ করেছে। অন্যের দেশ দখল করে,তাদের সর্বাস্ব লুট করে নিজে আরাম আয়েষ করেছে। এরা এই সব করেছে, কোনো বিশেষ একটি ধর্মীয় মোড়কেরাজনৈতিক মতবাদকে আশ্রয় করে। আক্রমন করো, ধ্বংস করো ,লুট করো, লুটের মাল নিজে রাখো আর উচ্ছিষ্ট যারা লুটকরতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যে বিলি করে তাদের খুশী রাখো ( রানা মানসিংহের সংগে আকবরের অলিখিত চুক্তিইছিলো, তুমি জায়গা দখল করো- জায়গা আমার,লুটের মাল তোমার। বর্তমান অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীহাবার জন্য ওই একই কাজ করেন—“ সাধারন মানুষকে লুট করো, নিজে রাখো কিন্তু আমাকে ক্ষমতাশালী করো। আমারক্ষমতা থাকলে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। এই তো চলছে মানুষের ইতিহাস।
যে জন্য এতো কথা বলার, সেটা হলো, ইতিহাস ঘাটলে এমন নজির পাওয়া যাবে না যে মাত্র একটি প্রাচীন দেশের শান্তিপ্রিয়মানুষকে লুট তরাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থান কলুষিত করে, অসংখ্য সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে , কোনো একটিবিশেষ ধর্মীয় মতকে আশ্রয় করে এবং সেই মতের প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ব্যাক্তি ৩০ বছর ধরে ১৭ বার সেই দেশ আক্রমনকরেছে। পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউ এটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী’ এটা করেছে।সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের (যার কথা আমরা আগেই জেনেছি) সুপুত্র ‘মাহমুদ’, যে ভারতের ইতিহাসে‘গজনীর মাহমুদ’ বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাস করা দুরুহ মনেহয়। সেই বর্বরের হাত থেকে নিজ রাজ্য এবং প্রজা কুলকে রক্ষা না করতে পেরে শাহী রাজ জয়াপাল আগুনে আত্মাহুতিদিয়েছিলেন। (এই বিষয়ে আর বিস্তারিত প্রশ্ন করবেন না কারন আমি আমার টাইমলাইনে আগেই বেশ কয়েকবার পোষ্টকরেছি।)
আমাদের শেখা ইতিহাসে এই “মহান জিহাদী” র কথা কি আছে?? শুধু এই লেখা আছে ‘মাহমুদ’ ১৭ বার ভারত আক্রমনকরেছিলো। কিন্তু কোথাও পাবেন না, ওই ১৭ বারে সে কি করেছিলো? শান্তির বানী প্রচার করেছিলো না ‘অশান্তির দাবানল’ জালিয়েছিলো, সারা উওর-পশ্চিম ভারতে। সেই থেকে ভারত বাসীর সার্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশা , রাজনৈতিক, সামাজিক,ধর্মীয় এবং সাংষ্কৃতিক অবক্ষয়ের শুরু।
এই ইতিহাস অতি করুন এবং কঠিন বাস্তব, যা আমরা জানি না, আমাদের আজো জানানো হয়নি। পরবর্তি কিছুআলোচনায় আমরা দেখবো সেই ‘ আশান্তির দাবানল’ এর বিধ্বংসী তান্ডবতা, লুটের বহর এবং তার ফলশ্রুতি।



অনেক বর্বর সাম্রাজ্যবাদী এবং লুটেরাদের কাহিনী ইতিহাসে লেখা আছে। সেই লুটের ধরন বর্তমানে একটু পালটেছে, কিন্তুযুদ্ধবাজদের মনের আসল উদ্দেশ্য একই আছে। কোনো রাজনৈতিক মতের কথা বলুন বা ধর্মীয় মতের কথা বলুন, আসলউদ্দেশ্য নিরীহ মানুষের ওপরে অত্যাচার করে নিজে ভালো থাকবো। মোদ্দা কথা এটাই। একমাত্র সনাতনি দর্শন এবং তারধারক ও বাহকদের বাদ দিয়ে এই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক, সামাজিক মতকে আশ্রয় করে যুগে যুগে যাহয়েছে সেটা বিরুদ্ধবাদী নিরীহ মানুষের অপর অত্যাচার। আজ এই গন্তান্ত্রিক যুগেও সেই কাজ চলছে, সারা পৃথিবীতেগনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে
অর্থনৈতিক শোষনের পরিকল্পনা।
বর্তমান বাদ দেই। ঐতিহাসিক আমলে, পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার (মহান???), এটিলা দি হুন, রোম সম্রাটেরা, আরবী তুর্কি জিহাদীরা, চেংগিজ খান, হুন রাজ মিহিরকুল, রক্ত পিপাসু তৈমুর লং, কুষান সম্রাটেরা , মোঘল সম্রাটেরাবিশেষ করে আকবর আর ঔরংজেব, ক্যমুনিষ্ট রা, নাৎসী বাহিনী, এরা সবাই এই কাজ করেছে। অন্যের দেশ দখল করে,তাদের সর্বাস্ব লুট করে নিজে আরাম আয়েষ করেছে। এরা এই সব করেছে, কোনো বিশেষ একটি ধর্মীয় মোড়কেরাজনৈতিক মতবাদকে আশ্রয় করে। আক্রমন করো, ধ্বংস করো ,লুট করো, লুটের মাল নিজে রাখো আর উচ্ছিষ্ট যারা লুটকরতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যে বিলি করে তাদের খুশী রাখো ( রানা মানসিংহের সংগে আকবরের অলিখিত চুক্তিইছিলো, তুমি জায়গা দখল করো- জায়গা আমার,লুটের মাল তোমার। বর্তমান অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীহাবার জন্য ওই একই কাজ করেন—“ সাধারন মানুষকে লুট করো, নিজে রাখো কিন্তু আমাকে ক্ষমতাশালী করো। আমারক্ষমতা থাকলে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। এই তো চলছে মানুষের ইতিহাস।
যে জন্য এতো কথা বলার, সেটা হলো, ইতিহাস ঘাটলে এমন নজির পাওয়া যাবে না যে মাত্র একটি প্রাচীন দেশের শান্তিপ্রিয়মানুষকে লুট তরাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থান কলুষিত করে, অসংখ্য সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে , কোনো একটিবিশেষ ধর্মীয় মতকে আশ্রয় করে এবং সেই মতের প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ব্যাক্তি ৩০ বছর ধরে ১৭ বার সেই দেশ আক্রমনকরেছে। পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউ এটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী’ এটা করেছে।সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের (যার কথা আমরা আগেই জেনেছি) সুপুত্র ‘মাহমুদ’, যে ভারতের ইতিহাসে‘গজনীর মাহমুদ’ বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাস করা দুরুহ মনেহয়। সেই বর্বরের হাত থেকে নিজ রাজ্য এবং প্রজা কুলকে রক্ষা না করতে পেরে শাহী রাজ জয়াপাল আগুনে আত্মাহুতিদিয়েছিলেন।
আমাদের শেখা ইতিহাসে এই “মহান জিহাদী” র কথা কি আছে?? শুধু এই লেখা আছে ‘মাহমুদ’ ১৭ বার ভারত আক্রমনকরেছিলো। কিন্তু কোথাও পাবেন না, ওই ১৭ বারে সে কি করেছিলো? শান্তির বানী প্রচার করেছিলো না ‘অশান্তির দাবানল’ জালিয়েছিলো, সারা উওর-পশ্চিম ভারতে। সেই থেকে ভারত বাসীর সার্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশা , রাজনৈতিক, সামাজিক,ধর্মীয় এবং সাংষ্কৃতিক অবক্ষয়ের শুরু।
এই ইতিহাস অতি করুন এবং কঠিন বাস্তব, যা আমরা জানি না, আমাদের আজো জানানো হয়নি। পরবর্তি কিছুআলোচনায় আমরা দেখবো সেই ‘ আশান্তির দাবানল’ এর বিধ্বংসী তান্ডবতা, লুটের বহর এবং তার ফলশ্রুতি।
********
তুর্কী দাস সুবিক্তিগীনের সুপুত্র মাহমুদ। তার ঠাকুরদা, আলাপ্তিগীন ছিলো ‘তুর্কী দাস’, যাদের মুল কাজ ছিলো, খলিফারদেহ রক্ষী হিসাবে। সিন্ধু বিজয়ের পর প্রায় ৩০০ বছর খলিফারা ব্যাস্ত থাকে ইউরোপ, আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তার করানিয়ে। সিন্ধু বিজয় করতে যে খেসারত দিতে হয়েছিলো, সেই ঘা শুকাতে অনেক সময় লাগে। তাই আরবীরা অন্য দিকে দৃষ্টিদিয়েছিলো। ভারতের হিন্দু রাজাদের শক্তির কিছু পরিচয় ওরা নিজেরাই পেয়েছিলো। আর আলেকজান্ডারের কি পরিনতিহয়েছিলো সেটাও জানতে ওদের বাকী ছিলো না। তাই ওদের দৃষ্টি গেলো অন্য দিকে।
সেই সুযোগে, খলিফার ই বিজিত দেশ উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানের ক্রীত দাসদের একজন আলপ্তীগীন খলিফাররাজত্বের থেকে আফগানিস্তানের একটি অংশ দখল করে নেয়। খলিফাকে সন্তুষ্ট রাখতে তার অধীনে সামন্ত শাসকহিসাবে,কর দিয়ে খলিফার আশীর্বাদ নিয়ে গজনী কেন্দ্রিক সেই রাজত্ব স্তাপন করে। আলপ্তীগীনের ছেলে সুবুক্তিগীন সিন্ধুরউত্তর থেকে শুরু করে ,পাঞ্জাব,প্রাচীন গান্ধার রাজ্য এবং কাশ্মীরের অধীশ্বর ‘শাহী রাজ জয়াপালা’র সংগে সংগ্রামে লিপ্তহয়। সেই প্রচেষ্টা সফল হয় নি (বিস্তারিত পড়ুন আমার আগের লেখা তে)।।
সুবুক্তিগীনের মৃত্যুর পর তার সুপুত্র মাহমুদ গজনীর সুলতান হয় ৯৯৮ সালে। তার ঠিক দু বছর পর মাহমুদ তার শ্যেন দৃষ্টিনিয়ে তাকায় ভারতের দিকে। তার কারন মুলত দুটি---- এক, জয়াপালার হাতে তার বাবার হেনস্তা এবং খলিফাকে খুশীকরতে ভারতে ‘জিহাদী তান্ডব চালিয়ে’ ৩০০ বছর আগে সিন্ধু বিজয়ী মোহাম্মদ বিন কাসিমের অপঘাতে মৃত্যুর (সিন্ধুরাজদাহিরের দুই কন্যার অকুতোভয় কুট বুদ্ধির ফলে) বদলা নিতে।
৩০০ বছরে ইসলামের শিকড় সিন্ধুতে খুব শক্ত ভাবেই গ্রোথিত হয়ে গিয়েছিলো। কোরান,হাদিস এবং শরিয়ত সিন্ধুর জনজীবন নিয়ন্ত্রিত করছে তখন। মুহাম্মদ (গজনী) সেই ‘জিহাদী মন্ত্রে’ সুশিক্ষিত। সে খলিফাকে প্রতিজ্ঞা করলো ‘আমিযতোদিন বাঁচবো, প্রতি বছর হিন্দুস্তানের পুতুল পুজোকারীদের জীবন অতিষ্ট করে দেবো, তাদের সর্বস্ব লুট তরাজ করেকেড়ে নেবো, তাদের মন্দিরের সব মুর্তি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবো,তাদের জমি জায়গার দখল নেবো, ইসলামী শাসন কায়েমকরবো”। খলিফা জানতো লুটের মালের (গনিমতের মাল) অর্থ , দাস দাসীর (যৌন দাসী) আর অভাব হবে না।
মাহমুদ তার কথা রেখেছিলো। ১০০০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছরে সে ১৭ বার ভারতে আসে লুট তরাজ করতেআর মন্দির ধ্বংস করতে। তার এই মহান ‘জিহাদী’ কৃত কর্মের জন্য ইসলামিক ঐতিহাসিকরা তাকে অকুন্ঠ প্রশংষাকরেছে। ‘ফতে-নামা’ তে মাহমুদ নিজের সম্বন্ধে লিখেছে “ ধর্ম যুদ্ধ’ র নায়ক হিসাবে। খলিফা ‘আল কাদির বিল্লা’ তারপাঠানো উপঢৌকনের বন্যায় ভেসে তাকে ‘আমিন –উল- মিল্লা’ এবং ‘ইয়ামিন-উদ-দৌলা’ (দক্ষিন হস্ত) বলে উপাধী দিলো।সেই থেকে মাহমুদের বংশ “ইয়ামিনি বংশ’ বলে খ্যাত হলো।
খলিফার আশীর্বাদ ধন্য এবং তারদক্ষিন হস্ত ( ইয়ামিন-উদ দৌলা)খেতাব প্রাপ্ত মাহমুদের ‘জিহাদী’মানসিকতা’ দশ গুন বেড়েগেলো খলিফার কাছের মানুষহবার পর। একের পর একচললো তার ‘ধ্বংসের রথ’-----
১০০০ সালে মাহমুদ কিছু সীমান্তঅঞ্চল দখল করে সেখানেনিজের প্রশাসক নিযুক্ত করে।ওই অঞ্চলে বসবাসকারিহিন্দুদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্যকরা হোলো, যারা করলো না, তারা মরলো। তাদের উপাসনালয় মাটিতে গুড়িয়ে দেওয়া হলো।
১০০১ থেকে ১০০৩ সাল অবধি তার কেটে গেলো, ওয়াইহিন্দ (প্রাচীন পুরুষপুর =পেশোয়ার) দখলকরতে। রাজা
জয়াপালা বন্ধী হন। তার ১৫ জন সেনাপতি এবং আত্মীয় বন্ধী হলেন। এদের একজন ‘সুখপাল’মুসলমান হয়ে, নওয়াশা শাহ নাম নিয়ে, মাহমুদের অধীনে প্রসাশনের দ্বায়িত্ব পান। এটা ছিলো তারএকটি চাল, রাজা জয়াপালের জীবন বাচানোর জন্য। কিছু দিন পর যখন রাজা জয়াপাল নিজেরপ্রজা এবং রাজ্য রক্ষা না করতে পারার জন্য এবং চারিদিকে ‘জিহাদী তান্ডব’ দেখে আর সহ্য নাকরতে পেরে রাগে, দুঃখে, হতাশায় আগুনে আত্মাহুতি দেন। ঠিক তার পরেই সুখপাল বিদ্রোহ করেএবং হিন্দু হন। মাহমুদ তাকে পরাজিত করে, হত্যা করে। রাজা জায়াপাল ২৫০০০০ (আড়াই লক্ষ---একট স্বর্ন মুদ্রা ,যার নাম দিনার= ১২০ গ্রাম সোনা) স্বর্ন মুদ্রা মুক্তিপন দিয়ে তার এবং সুখপাল বাদেবাকী ১৪ জনের মুক্তি আদায় করেন। জয়াপালের পুত্র আনন্দপাল কাশ্মীরে চলে যান এবং তারস্বাধীনতা সংগ্রাম চালু রাখেন। তিনি, তার ছেলে ত্রিলোচন পাল এবং নাতি ভীম পাল, মাহমুদের সংগেযুদ্ধ করে শহীদ হন। বাকি বংশধরেরা, আত্মীয় স্বজন রা ধর্ম পরিবর্তন করে বেচে যায়। অনেকেইমাহমুদের অধীনে বেতনভুক ছোট বড়ো সৈনাপত্য নিয়ে বেচে থাকে। এই ভাবে একটি শক্তিশালীএবং ঐশ্বর্য্যশালী হিন্দু রাজ্য চিরতরে মুসলমানী শাসনে চলে গেলো। আজ সেই রাজ্যে চলছে ভারতভুমি থেকে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন (কাশ্মীর), সেই শাহী সাম্রাজ্যের বর্তমান বাসিন্দা, যারা এক সময়সনাতনি ছিলো, (পাকিস্তান, আফগানিস্তান) তাদের বংশধরেরাই তাদের পুর্ব পুরুষদের সংষ্কৃতিরধারক বাহকদের সর্বনাশ করতে ঊঠে পড়ে লেগেছে।
মাহমুদের সেক্রেটারী ছিলো আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী। সেই ‘ঊথবী’ বলছেন, ভেরা, মুলতান,যেখানে একটিও মুসলমান ছিলো না, সে গুলো সব সম্পুর্ন ভাবে মুসলিম হয়ে গেলো, কোনো পুতুলপুজা কারী আর রইলো না। তাদের মন্দির ধুলায় মিশে গেলো অনেক মসজিদ তৈরী হলো”।
এই উথবী একজন নামী লোক। এর লেখা দিয়েই শেষ করবো ৩০ বছরের ধ্বংসের বিবরন। পুরোবিবরন লিখতে গেলে প্রায় একটি বই হয়ে যাবে। একের পর এক শহরের পর শহর, গঞ্জের পর গঞ্জমাহমুদের লুটের আর ধ্বংসের সামিল হলো। জন জীবনে সৃষ্টি হলো এক নিদারুন ত্রাসের।মহিলাদের মান সম্মান ধুলায় লুটিয়ে গেলো, মন্দিরের পর মন্দির ধুলায় মিশে গেলো। এটাই হচ্ছে মুলকথা। ১০১৫ সালে কাশ্মীর, এবং এর আগে পরে ১৯৩০ সালের মধ্যে ভেরা, মুলতানের দখল শক্তপোক্ত করে, মথুরা,বারান (বুলন্দসর), কনৌজ (কানপুর) সব জায়গার একই দশা হলো। সারা উত্তরপশ্চিম ভারত তখন এই মাহমুদের ‘জিহাদী তান্ডব’ থেকে থর থর করে কাঁপতে থাকে, কখন মাহমুদআসবে ( কব গব্বর আ জাঁয়েগা) । ১০২৩ সালের চৌদ্দতম তান্ডবে কিরাত,নুর,লোকাট আর লাহোরধ্বংস এবং পরিবর্তিত হয়ে গেলো ্সব প্রাচীন ঐতিহ্য।
মন্দির লুট করা এবং সেটাকে অপবিত্র করা মাহমুদের একটি খেলা ছিলো। কতো মন্দির তার তান্ডবেশেষ হয়ে গেছে সেই তালিকা আজ আর দিয়ে লাভ নেই। কেউ বিশ্বাস করবে না, বলবে প্রমান কি?যে মন্দির আর দাঁড়িয়ে নেই, বেশীর ভাগ স্থানে অন্য প্রার্থনা স্থল তৈরি হয়েছে, তা বলতে গেলেবিরোধীরা চীৎকার শুরু করবে। ছোট গুলো বাদ দিয়ে শুধু মাত্র বড়ো দুটির কথা এখানে লিখবো। ---
থানেশ্বরের ‘চক্রস্বামীর’ মন্দির লুট এবং ধ্বংস করে মন্দিরের ‘বিষ্ণু মুর্তি’ নিয়ে গিয়ে গজনী শহরেতৈরী ‘হিপোড্রোমে’ ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। মাহমুদ নিজে মথুরা নগরী এবং সেখানকার মন্দিরেরসৌন্দর্য্যের প্রশংষা করেছে। সেই মথুরা নগরীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিখ্যাত ‘কৃষ্ণ মন্দির’ লুট করেসে অগাধ ঐশ্বর্য্য হাসিল করে, আর মন্দিরের সব মুর্তি গুড়িয়ে দেয়। উথবীর কথায় (মাহমুদেরসেক্রেটারী আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী) একমাত্র কনৌজে প্রায় ১০০০০ হাজার মন্দির ধ্বংস হয় (আমি বাড়া বাড়ি বলে মনে করছি—কারন এতো মন্দির থাকা এবং তা ধ্বংস করা কি সহজ ব্যাপার? )যারা এই সব অঞ্চলে বাস করতো, তাদের মধ্যে যারা ধর্ম পরিবর্তনে রাজী ছিলো না তারা হয় পালিয়েঅন্যত্র্ গেলো (আমার বাবা এবং আমার মতো উদবাস্তু হলো), নইলে মরলো (ল্যাটা চুকে গেলো)।
চক্রস্বামী মন্দিরের মতো দশ হলো গুজরাটের ‘সোমনাথ’ মন্দিরের। সেখানকার শিব মুর্তি নিয়েগেলো গজনীতে। তার ভাংগা টুকরো দিয়ে তৈরী হলো গজনীর জামা মসজিদের সিড়ি। সেই গজনী ওনেই ,মসজিদ আর নেই। সব পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে মাহমুদেরই এক শত্রু যাদের ওপরেমাহমুদ অত্যাচার করেছিলো। তারাও ছিলো আফগানিস্তানের এক উপজাতি। সোমনাথের শিবমন্দিরের কিছু ভগ্ন অংশ পাঠানো হয়েছিলো খলিফার কাছে। সেই টুকরো শেষ মেশ পৌছায় তুরষ্কে।তাই দিয়ে তৈরী হয় ইস্তানবুলের বিখ্যাত “তোপকাপি” মসজিদের সিড়ি। (আমার কোনোদিন বিশ্বাসহয়নি, যতোদিন না আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি ২০১২ সালে সেই সিড়ি, যেখানে পরম গর্বেরসংগে এই ইতিহাস লেখা আছে। ছবি তোলা নিষেধ না হলে দেখাতাম সেই স্ক্রিপ্ট পাথরে খোদাইকরা।)
সোমনাথ মন্দির ধ্বংস এবং লুট মাহমুদের কাছে এক পবিত্র কাজ ছিলো সেটা সে নিজেও লিখেরেখে গেছে ‘ফতে নামা’ তে। এই পবিত্রতা এই জন্য যে, ঠিক একই ভাবে মক্কার কাবা শরীফে , যারনাম ছিলো ‘আল-মান্নাত’ সেখানকার মুর্তি ভেঙ্গেছিলেন নবী নিজে। সোমনাথ লুট এবং ধ্বংসের সালটা ছিলো ১০২৬। তার এই কাজের জন্য পরবর্তি সময়ে সুফী, দরবেশ রা মাহমুদের অতি উচ্চ প্রশংষাকরে গেছে। সমসাময়িক ঐতিহাসিক, কুয়াজ্জিনি, ফার-হিস্তা এবং মাহমুদের সেক্রেটারী আবুনাসের মুহাম্মদ উথবী, সবাই মাহমুদের ৩০ বছর ব্যাপি বর্বরতার বিবরন লিখে গেছেন নিখুত ভাবে।সেই লিপিতে তার অতি উচ্চ প্রশংষা করতে গিয়ে আসল সত্য চেপে রাখতে পারেন নি। আসল সত্যচেপে রাখলে মহিমা কম হয়ে যায়। এই মুসলিম ঐতিহাসিকরা সেই সময় মাহমুদের বর্বরতাকেবর্বরতা না বলে ধর্মীয় কাজ বলেছেন। তাই আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে।
সোমনাথ লুটের খবর খলিফার কাছে পৌছালে, খলিফা আল কাদির বিল্লা খুশীতে বিশাল জাক জমককরে উৎসব পালন করে। মাহমুদকে তিনি এবারে দেন নতুন এক উপাধী—‘খাপ-উদ-দৌলা ওয়াআল ইসলাম”। সেই সংগে তাকে হিন্দুস্তানের সম্রাট বলে ঘোষনা করে দিলো। সম্রাট মাহমুদ এইপ্রথম লাহোর থেকে নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করলো।
মাহমুদ যে বিপুল ধন দৌলত ভারত থেকে লুট করে নিয়ে যায় ৩০ বছর ধরে তার হিসাব কষতেচার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিম সিম খেয়ে যাবে। আমাদের ঐতিহাসিকেরা বেমালুম চেপে গেলেও,মাহমুদের সেক্রেটারী সেই আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী সেই লুটের বহর স্পষ্ট করে লিখে রেখে গেছে,কারন সেক্রেটারী হিসাবে সেই কাজ তাকে করতে হতো। আমাদের ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপারএবং অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহাসিকেরা এই সত্য ভারতবাসীর থেকে চেপে গেলেও ঐতিহাসিক ‘কেএস লাল’ এর মতো কিছু ঐতিহাসিক আজো তাদের বিবেক বিদেশীদের (আরবী /তুর্কি) কাছে বেচেদেন নাই। সেই কে এস লালের লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত করে ঐতিহাসিক Andrew G Bostom তৈরীকরেছেন এক প্রামান্য দলিল, যার নাম “The legacy Of Jihad—Islamic Holy war and the fate of the Non-Muslims”, Published by ‘ Prometheus Books’, 59 John Glenn Drive, Amherst,New York- 14228 -2119. ( এই লেখা সেই কে এস লাল এবং Andrew G Bostom এর লেখাকে ভিত্তি করে। প্রমানযারা চাইবেন তারা ঐ ঠিকানায় যোগা যোগ করবেন)
(১)ভারতে বিদেশী শাসন শুরু হয়েছে ৭১২ সাল থেকে শে্যহয়েছ ১৯৪৭ সালে। প্রায় ১২০০ বছর। আরব এবং তুর্কি শাসনচলেছে ১৭৫৭ সাল অবধি প্রায় ১০০০ বছর। ইংরেজ শাসনকরেছে ১৯০ বছর।৭১২ সালে, ইরাকের শাসন কর্তা ‘হেজাজ’ এরভাইপো ‘মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করেআফগানিস্তানের ‘ঘুর’ রাজ্যে থেকে আসা ‘মোহাম্মদ ঘোরী’ কেউভারতে বসবাস করেনি। এরা সবাই ভারতীয় হিন্দুদের ধনসম্মপত্তি লুট করে নিয়ে নিজের দেশে গিয়ে তাদের আরামদায়কপ্রাসাদ বিলাস বৈভবের মধ্যে বাস করেছ। নিজেদের দেশে চলে

যাবার সময়, নিজের বশংবদ কাউকে শাসন কর্তা হিসাবে রেখে গেছে যারা নিয়মিত ভাবে সেই লুটেরা বিদেশীর বিলাসিতারযোগান দিয়ে গেছে। মুহাম্মদ বিন কাসিম থেকে শুরু করে সুলতানী আমাল এমনকি মোঘল আমলেও তুরষ্কের বিলাসবহুলপ্রাসাদে বাস করা খলিফার খেদমতগারী করা এই আরবী এবং তুর্কি দের একমাত্র কাজ ছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরইংরাজরা এই পরজীবী খলিফা প্রথা বন্ধ করে দেয়। সেই দুঃখে আমাদের গান্ধী মুহাম্মদ আলী নামে দুই ভাইকে নিয়ে ব্রিটিশবিরোধী “খিলাফত আন্দোলন” শুরু করে। আমরা ইতিহাসে গান্ধীর সেই “মড়াকান্না” পড়ে তাকে জাতির জনক এবং‘মহাত্মা’ বলে পুজো করে চলেছি।




‘মাহমুদের লুট করা হিন্দু সম্পত্তির খতিয়ান’
আমাদের কাছে ব্রিটিশ শাসনে ই ভারতীয় হিন্দু দের সর্বনাশ হয়েছে , ১৯০ বছরে লন্ডন সমৃদ্ধিশালী হয়েছে ভারতীয় অর্থে,আর আমরা দরিদ্র হয়ে গেছি। আমরা তাই নিয়ে আজো বিশদ ভাবে তর্ক বিতর্ক ইতিহাস ঘাটা ঘাটি করে চলেছি। কিন্তু, ১০০০ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে যে বিপুল ধন সম্পদ আরব, ইরাক,ইরান, বাগদাদ, ব্যাবিলন, সিরিয়া,দামাস্কাস, তুরষ্ক,ইস্তানবুল, কাবুল, গজনী (যদিও সেটা আজ আর নেই, আছে শুধু একটি গ্রাম) শহর গুলোকে এবং আমাদের ঘরের কাছে, বুখারা (বুখারীরা ওখান থেকে এসেই কলকাতায় আমাদের ঘাড়ের ওপরে জাকিয়ে বসে আমাদের ওপর ফতোয়া দিয়েযাচ্ছে), সমরখন্দ, তাসখন্দ ইত্যাদি শহর গড়ে ঊঠেছে তা নিয়ে মোটাই চিন্তা ভাবনা করি না। আমাদের স্বাধীনতারসংগ্রামের ইতিহাস শুরু হয় গান্ধীকে নিয়ে। কিন্তু আমাদের পরাধীনতার ইতিহাস, যা আমরা প্রকারান্তরে আজো আছি এবংভবিষ্যতে হতে চলেছি (যদি না হিন্দুরা তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজ ভুমি এবং সংষ্কৃতি পুনরায় ফিরে পাবার চেষ্টাকরে, যার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন) । যে মোঘলদের নিয়ে আমরা আজ গর্ব করি, সেই মোঘল শাসনের সুত্রপাত যাকে দিয়ে, সেই বাবুর তার লেখা ‘বাবুর নামা’য় সারা জীবন তার সাধের ‘কাবুল’ এ বাস না করতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গেছে।এই সব বিদেশীদের বংশ ধর আজো তাকিয়ে থাকে পশ্চিমের দিকে,পুবের দিক তাদের না পছন্দ। অথচ তারাই আমদেরকাছে মহান এবং তাদের আজো আমরা আমাদের পোষ্য পুত্র করে রেখে দিয়েছি।, একের পর এক নিজ ভুমি তাদের হাতেতুলে দেবার সব ব্যাবস্থা, আন্দোলন করে চলেছি।

 
অতীতে হিন্দুরাই তাদের নিজেদের দেশটা বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়েছে, সেই সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে মোঘলদেরশাসন অবধি। আজ সেই খলিফাতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে উগ্র পন্থীরা সিরিয়া ইরাক থেকে এসে কাশ্মীর ,পাকিস্তান, বাংলাদেশ, পশ্চিমবংগে এসে ঘাটি গাড়ছে আমরাই তাদের এখানে পুষে রাখতে সাহায্য করছি। সত্যিই, কি বিচিত্র এইদেশ!!!!!!
১০০০ বছর ধরে কতো হিন্দু সম্পত্তি লুন্ঠিত হয়ে বিদেশে গেছে??? তার পরিমান কতো????
এখানে শধু গজনীর মাহমুদ ৩০ বছরে ১৭ বার ভারত আক্রমন করে যে ধন সম্পত্তি তার দেশে নিয়ে গেছে সেই খতিয়ানদেওয়া হচ্ছে। হিন্দুর অর্থে গজনীর শহর তৈরী হয়েছিলো। শুধূমাত্র মাহমুদের প্রাসাদ (যা তার আততায়ীরা পুড়িয়েদিয়েছিলো) তৈরীতে খরচ হয়েছিলো ৭০ লক্ষ স্বর্ন মুদ্রা, যার একটির ওজন ছিলো ১২০ গ্রাম। কতো সেই অংক টা????? হিসাব করুন। ১৯০ বছরে ব্রিটিশ তার ১০০ ভাগের এক ভাগ ও নিতে পারেনি, কারন নিয়ে যাবার মতো বিশেষ কিছু আরবাকি ছিলো না। ঝড়তি পড়তি যা স্থানীয় মুসলিম শাসক দের কাছে পড়েছিলো বা জিহাদীদের নজরে পড়েনি, তাই নিয়েগেছে ,যেমন “কোহিনুর”, আর বেশী কি???? নীলের (ইন্ডিগো) কথা বলছেন??? তার থেকেও অনেক বেশী ‘নীল” এইদেশে চাষ হতো এবং তা গেছে ঐ সব আরবী, তুর্কি দুনিয়ায়। ভারতের সব মসলিন দিয়েই তৈরী হতো খালিফা,সুলতান,আমীর উমরাহ দের পোষাক আসাক, দরজা জানালার পর্দা। (নীলের সেই হিসাব ও পাবেন আমার কাছে।)
এই হিসাব, কারো কষ্ট কল্পিত কাহিনী নয়। মাহমুদের সচিব ‘আবু নাসের মোহাম্মদ উথবী’, যে সেই হিসাব স্বযত্নে লিখেরেখেছিলো তার মনিবের জন্য এবং তার কাছে হিসাব দেবার জন্য, সেই হিসাব আজ আমাদের সামনে এসেছে। তারভিত্তিতে লেখা ঐতিহাসিক কে এস লাল’এর লেখা ভারতে ইসলামিক আগ্রাসনের তিন অধ্যায় ( সিন্ধু বিজয়, গজনীরমাহমুদ এবং ঘোরী –পৃথ্বীরাজ)। সেই থেকে সংকলিত হয়েছে, “THe legacy Of Jihad Edited by Andrew G Bostom”.Published by Prometheus Books, New York.Page-440-446. আমি শধু বাংলা ভাষায় তার সার সংক্ষেপকরেছি আপনাদের জন্য (বিশেষ করে আমার এক ফেসবুক ভাই এর অনুরোধে। ) দেখুন সেই হিসাব, যে হিসাব আমাদেরকাছ থেকে আজ অবধি লুকিয়ে রাখা হয়েছে আমাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার জন্য।।
(২)
লেখাটা আমার স্বাভাবিক লেখার মতো বেশ বড়ো, কারন ৩০ বছরের লুট অল্পেতে লেখা যায় না।
*** হিসাব কষার আগে এটা জানতে হবে ‘দিনার’ এবং ‘দিরহাম’কাকে বলে। দিনার হচ্ছে এক একটি স্বর্ন মুদ্রা যা সেই সময়প্রচলিত ছিলো আরবে। ভারতে সেটা স্বর্ন মুদ্রা নামেই প্রচলিত ছিলো। একটি স্বর্ন মুদ্রায় থাকতো ১২০ গ্রাম খাটি সোনা।বর্তমান বাজার মুল্যে সেটা দাঁড়ায় ৩০০০০ টাকা করে এক গ্রামের দাম ধরলে প্রায় ৩৬০০০০ (তিন লক্ষ ষাট হাজার)একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম। সেই সময় ১ টাকায় ৪০ মন চাল বাজারে পাওয়া যেতো। (অনেক বার হিসাব করার চেষ্টা করেপারিনি, যদিও স্কুল ফাইনালে অংকের দুটি বিষয়ে একশোর মধ্যে একশো ই পেয়েছিলাম। মাইরি বলছি একদম টোকাটুকিকরিনি। তোমাদের মধ্যে যে বা যারা হিসাব পারদর্শী আমাকে একটূ বলো Inflation ইত্যাদি ধরে একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম কতোহয়???)*******
১) মাহমুদ ‘হিন্দু শাহী রাজ’ রাজা জয়াপাল এবং তার ১৫ জন আত্মীয়, সৈন্যাধক্ষ্য কে আটক রেখে ২৫০,০০০ (আড়াইলক্ষ দিনার ) এর মুক্তিপন আদায় করে।
২) রাজা জয়াপালার গলার নেকলেস টির সেই সময়কার দাম ছিলো ২০০,০০০ (দুই লক্ষ দিনার)। সেটি মাহমুদ নিয়ে যায়।
৩) রাজা জয়াপালার আত্মীয় স্বজন দের গায়ের গহনা ইত্যাদির মোট মুল্য ৪০০, ০০০ (চার লক্ষ ) দিনার
৪) ‘ভেরা’ শহর, যাকে মাহমুদের সেক্রেটারী ‘উথবী’ উল্লেখ করেছে, ‘ মানুষ যতোটা কল্পনা করতে পারে তেমনিসম্পদশালী’ ছিলো। সেই ভেরা লুট করতে প্রায় ২ বছরে ২ বার মাহমুদকে আসতে হয়। (১০০৪ সালের প্রথম থেকে ১০০৫সালএর শেষ) সমস্ত ধন দৌলত নিয়ে যেতে কয়েক হাজার ঊঠ নিয়ে আসতে হয় ।
৫) ১০০৫ থেকে ১০০৬ সাল লেগে যায় ‘মুলতান’ লুট করতে । সেখান থেকে যে সম্পত্তি নিয়ে যায় তার মোট মুল্য২০,০০০,০০০ (কুড়ি লক্ষ) ‘দিরহাম’ (রৌপ্য মুদ্রা)
৬) রাজা জয়াপালের এক সেনাপতি যাকে মাহমুদ মুসলমান বানিয়ে নাম দিয়েছিলো ‘নওয়াশা শাহ’, সে রাজা জয়াপালেরআগুনে আত্মাহুতি দেবার পর পুনরায় হিন্দু হয়। মাহমুদ তাকে পরাজিত এবং আটক করে তাকে শুধু হত্যা করে তাই নয়তার সব সম্পত্তি যার মোট মুল্য ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা)
৭) মাহমুদ “ভীম নগর” দুর্গ দখল করে সেখানকার ‘হিন্দু শাহী মুদ্রা’ র ৭০,০০,০০০ (সত্তর লক্ষ) লুট করে নিয়ে যায়।
8) ‘ভীম নগর’ দুর্গে ছিলো একটি পুজা মন্ডপ। সেটি ছিলো ১৫ গজ (৪৫ ফুট) চওড়া, ৩০ গজ (৯০ ফুট) লম্বা। তার দুটি খুটিছিলো সোনার,দূটি রুপোর, ওপরের ছাঊনি (গম্বুজ) রুপোর । মন্ডপটি খুলে রাখা যেতো। সেটির নিয়ে যায়। তার মুল্য‘উথবী’ উল্লেখ করে নি।
৯) ‘বারান’ (বুলন্দসর) থেকে মাহমুদ লুট করে ১০,০০০,০০০ (দশ লক্ষ) রৌপ্য মুদ্রা।
১০) ‘মথুরা’ মন্দির লুট করে ৫ টি সোনার ‘রাধা –কৃষ্ণ’ মুর্তি নিয়ে যায়, যার মোট ওজন ৯৮৩০০ মিসকাল (দশ মন) ।(আমি ব্যাংককে ৫ টনের বুদ্ধ মুর্তি দেখে এসেছি,সুতরাং ২ মনের রাধা-কৃষ্ণ মুর্তি অসম্ভব নয়)। তাছাড়া মোট ২০০ টিরৌপ্য নির্মিত নানা দেব দেবীর মুর্তি নিয়ে যায়।
১১) কনৌজ, মুঞ্জ,আশনি, সার্বা ইত্যাদি লুট করে অপরিমিত ঐশ্বর্য্য নিয়ে যায়।
১২) ‘সোমনাথ’ মন্দির থেকে মাহমুদ নিয়ে যায় এক বিপুল ঐশ্বর্য্য। তার পরিমান শুনলে পরম বিশ্বাসীর ও অবিশ্বাস হবে।কিন্তু ‘উথবী’ র লেখা বিশ্বাস না করে কার কথা বিশ্বাস করবো? সেই লুটের মোট অংক উথবী করেছে ২০,০০০, ০০০ স্বর্নমুদ্রা বা ‘দিনার’।
১৩) লুটের বহর ৩০ বছরে এতো বিশাল ছিলো যে মাহমুদ, সেই অপর্য্যাপ্ত সম্পদ দেখভাল করা এবং সুষ্ঠ ভাবে গজনীতেনিয়ে যাবার জন্য দু জন হিসাব রক্ষক এবং ব্যাবস্থাপক নিযুক্ত করে। সেই দুজনের নাম ও উথবী বার বার উল্লেখ করেছে।সেই দুই মহাপুরুষ হচ্ছেন ‘আলতুন্টাস’ এবং ‘আশীক্তিন’।
১৪) শুধু মাত্র সুলতান নয়। তার সৈণ্য সামন্ত হিন্দু রাজাদের মৃত হিন্দু সৈন্যদের দেহ তল্লাশী করে তাদের গয়না পত্র, সাধারন হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুট করে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যায়। লুটের এই ‘মহা সুযোগ’ নিতে স্থানীয় হিন্দু লোকের মধ্যেওমাহমুদের সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য কাড়া কাড়ি পড়ে যায়। (অবিশ্বাস্য হলেও একেবারে খাটি কথা ‘উথবী’লিখেছে।। দেশী গব্বরের অভাব কোনো কালেই ভারতে ছিলো না। মুসলমান ‘জিহাদী’দের আরবী /তুর্কি সৈন্যের সংখ্যাথেকেও দেশী হিন্দু লুটেরার সংখ্যা খুব কম ছিলো বলে আমার মনে হয় না। ইতিহাসে সে কথা, ফা-রিস্তা, আলবেরুনী লিখেরেখে গেছেন। ভুলে যাবেন না, আকবরের হয়ে রানা মানসিং ৭৭ টি যুদ্ধ করে যার মধ্যে ৫৭ টি যুদ্ধ সে জেতে এবং বিজিতরাজ্য আকবর কে দেয়,নিজে রাখে লুটের মাল। রানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর কেউ করেনি ওই মানসিং। আমাদেরবাংলাদেশ দখল আর কেউ করেনি,করেছিলো ওই শয়তান মানসিং এবং সে তিন তিন বার বাংলা,বিহার ,উড়িষ্যার প্রসাশকহয় আকবরের অধীনে। যশোরের বিখ্যাত ‘মা কালী’ র মুর্তি এখন শোভা পাচ্ছে মানসিং এর “অম্বর” দুর্গে। পা চাটা কুকুরেরকোনো অভাব সেই রামায়নের যুগ থেকে আজ অবধি ভারতে কম পড়ে যায় নি।)
১৫) শাহী সাম্রাজ্য থেকে লুটের বহ্র এমনই ছিলো যে, রাজা জয়াপাল, আনন্দপাল, ত্রিলোচন পাল, কারো মুদ্রা আজো খুজেপাওয়া যায়নি। (তাই আমাদের ঐতিহাসিকেরা ধরেই নিয়েছেন ওই বংশ ছিলোই না। তাহলে সুবিক্তিগীন এবং মাহমুদ ভুতেরসংগে যুদ্ধ করেছিলো)।
১৬) অর্থনিতী বিদেরা বলেন “ মাহমুদের লুটের পর অর্থের বন্যা ভারত থেকে চলে গেলো সিন্ধুর পশ্চিম পারে। গজনীরএবং আরবী দুনিয়ার মুদ্রা (দিনার এবং দিরহাম) শক্ত পোক্ত হয়ে শুধু স্থীরতা পেলো তাই নয়,হয়ে গেলো বিশেষ দামী।ভারতীয় স্বর্ন মুদ্রার সোনার পরিমান ১২০ গ্রামের জায়গায় নেমে এলো ৬০ গ্রামে আর রৌপ্য মুদ্রার দাম আর প্রায় রইলোনা ব্যাবাসার জন্য। সারা দুনিয়ার কাছে ভারতীয় মুদ্রা আর খুব বেশী আকর্ষনীয় রইলো না”।
“মাহমুদের বর্বরতার সুদুর প্রসারী ফল”
পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার, কুষান, আরবী এবং পরবর্তীতে তুর্কি দাসদের দ্বারা একের পর এক আগ্রাসী আক্রমনের যে সমুহ ফল বৈদিক সনাতনিভারতবর্ষের জন জীবনে পড়লো তার ফলে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবংসাংষ্কৃতিক পরিবর্তন হলো তার সঠিক মুল্যায়ন আজ অবধি হয়নি।
কি করে বৈদিক আফগানিস্তান (কেকয়, কম্বোজ এবং গান্ধার) আজ এক সম্পুর্নভিন্ন নিম্ন মানের সংষ্কৃতির এবং ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদীদের বিচরনস্থল হয়েছে তারইতিহাস আমরা জেনেছি। আজ যে পাকিস্তান ঝড়তি পড়তি ভারতকে শেষ
করার খেলায় মেতেছে, নিউক্লিয়ার বোম দিয়ে উড়িয়ে দেবার কথা বলছে (আজইআমেরিকান সামরিক প্রধানের বক্তব্য পড়ুন) ওই অঞ্চল তো সিন্ধু এবং হিন্দু শাহীসাম্রাজ্যের অংশ ছিলো। যে বাংলাদেশে আজ উগ্রপন্থীরা সমবেত হচ্ছে সেটাইতো বৈদিক সনাতনী ছিলো। সে সব কোথায় হারিয়ে গেলো??? যেসামাজিক,অর্থনৈতিক এবং সাংষ্কৃতিক পরিবর্তন এই বৈদিক সনাতনী সভ্যতার জন্ম ভুমিতে হয়েছে সেই সার্বিক পরিবর্তনচীরস্থায়ী এবং মানব সভ্যতার ইতিহাসে অশ্রুতপুর্ব এবং অন্য কোনো উদাহরন নেই।
উত্তর পশ্চিম ভারতবর্ষ তো অনেক আগেই চলে গেছে। পশ্চিম ভারত পাকিস্তান হয়ে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে তো সমস্যারশেষ নেই। পুর্ব ভারতের এক বিশাল ভুমি বাংলাদেশ। পশ্চিমবাংলা ধুকছে।
সনাতনি দর্শন হিংসায় বিশ্বাসী নয়। সনাতনি সভ্যতা শান্তি সম্প্রতির কথা বলে। মানবিকতা সেখানেই, সমৃদ্ধি শান্তিতেধ্বংসে নয়। এই চরম ঐশ্বরিক কথা ওই অঞ্চলে আজ আর কেউ শুনতে পাবেন না কোনো দিন। নীল চাষীদের অপরেব্রিটিশের অত্যচারের কথা আমরা “নীল দর্পন” জেনেছি। তার লেখক উত্তর ২৪ পরগনার নিমতলাতে (বনগাঁর কাছে ) জন্মেছিলেন। তিনি যদি জানতেন, নীল চাষ আগেও হতো, তাহলে হয়তো আর একটি নাটক লিখতেন। মাহমুদ প্রতি বছর যেপরিমানে নীল নিজের জন্য নিয়ে যেতো এবং তার প্রভু খলিফার কাছে পাঠাতো তার হিসাব আছে “উথবী” র লেখাতে। সেইকথা লিখে এই ইতিহাস আর দীর্ঘায়িত করবো না। বেশী লিখলে কল্প কষ্টিত এবং অসত্য বলে অনেকে সমালোচনার ঝড়বইয়ে দেবেন জানি।
আসুন আমরা দেখি, মাহমুদের উত্তর পশ্চিম ভারতকে শ্মশান ভুমি করে দেবার পর, কি করে ‘জিহাদী তান্ডব’এসেপৌছালো খোদ দিল্লীতে। একেবারে সনাতনি ভারতের হৃদস্থলে। সেই কাহিনীও অতি করুন।। বুকে পাথর দিয়ে সেই কথাশুনুন। সেই ইতিহাসকেও আমাদের থেকে গোপন করে রাখা হয়েছে।ইতিহাস যুগে যুগে শাসকদের কথা মতোই লেখাহয়েছে বেশীর ভাগ সময়। খুব কম ঐতিহাসিক আছেন যারা সত্যবাদী। আমাদের দেশে রমেশ চন্দ্র মজুমদার, যদুনাথসরকার, কে এস লাল ,শ্রী বাস্তবের লেখা কে পড়ে???
এখন তো রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবের দিন, এই দুজনেই বামপন্থী মতের প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু সভ্যতার ইতিহাসএকেবারে চেপে গেছে ।শুধু তাই নয় বিকৃত করেছে। কারন আর কিছু নয়। চানক্য ই বলেছেন আর ইংরেজ ম্যাকুলেবলেছে, কোনো জাতিকে শেষ করতে হলে, পদানত রাখতে হলে বা নিজের মত চাপিয়ে দিতে চাইলে, প্রথম এবং অকৃত্রিমকাজ সেই জাতির ইতিহাস , সংষ্কৃতি, ধর্ম বিকৃত করা, গালাগালি দেওয়া, তাদের উপাসনা স্থল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া। যুগেযুগে অনেক মহামানব এই কাজ করেছেন। ভারতের হিন্দুদের ওপরে এই অভব্য কাজ করা হয়েছে সব থেকে বেশী।।
ইরফান হাবিব ই বলেছে "হিন্দুরা জামা কাপড় পরতে শিখেছে বিদেশীদের থেকে যারা ভারত শাসন করেছে"। আমাদের পুর্বপুরুষরা সব তাহলে ল্যাংটো থাকতো, তাই না???


লেখক-
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
কোলকাতা- ভারত।

গজনীর মাহমুদ


“গজনীর বর্বর মাহমুদ” 
পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউএটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী' এটা করেছে। সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের  সুপুত্র'মাহমুদ', যে ভারতের ইতিহাসে 'গজনীর মাহমুদ' বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাসকরা দুরুহ মনে হয়।
অনেক বর্বর সাম্রাজ্যবাদী এবং লুটেরাদের কাহিনী ইতিহাসে লেখা আছে। সেইলুটের ধরন বর্তমানে একটু পালটেছে, কিন্তু যুদ্ধবাজদের মনের আসল উদ্দেশ্যএকই আছে। কোনো রাজনৈতিক মতের কথা বলুন বা ধর্মীয় মতের কথা বলুন,আসল উদ্দেশ্য নিরীহ মানুষের ওপরে অত্যাচার করে নিজে ভালো থাকবো।মোদ্দা কথা এটাই। একমাত্র সনাতনি দর্শন এবং তার ধারক ও বাহকদের বাদদিয়ে এই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক, সামাজিক মতকে আশ্রয়করে যুগে যুগে যা হয়েছে সেটা বিরুদ্ধবাদী নিরীহ মানুষের অপর অত্যাচার।আজ এই গন্তান্ত্রিক যুগেও সেই কাজ চলছে, সারা পৃথিবীতে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠারনামে
অর্থনৈতিক শোষনের পরিকল্পনা।
বর্তমান বাদ দেই। ঐতিহাসিক আমলে, পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার (মহান???), এটিলা দি হুন, রোম সম্রাটেরা, আরবী তুর্কি জিহাদীরা, চেংগিজ খান, হুন রাজ মিহিরকুল, রক্ত পিপাসু তৈমুর লং, কুষান সম্রাটেরা , মোঘল সম্রাটেরাবিশেষ করে আকবর আর ঔরংজেব, ক্যমুনিষ্ট রা, নাৎসী বাহিনী, এরা সবাই এই কাজ করেছে। অন্যের দেশ দখল করে,তাদের সর্বাস্ব লুট করে নিজে আরাম আয়েষ করেছে। এরা এই সব করেছে, কোনো বিশেষ একটি ধর্মীয় মোড়কেরাজনৈতিক মতবাদকে আশ্রয় করে। আক্রমন করো, ধ্বংস করো ,লুট করো, লুটের মাল নিজে রাখো আর উচ্ছিষ্ট যারা লুটকরতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যে বিলি করে তাদের খুশী রাখো ( রানা মানসিংহের সংগে আকবরের অলিখিত চুক্তিইছিলো, তুমি জায়গা দখল করো- জায়গা আমার,লুটের মাল তোমার। বর্তমান অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীহাবার জন্য ওই একই কাজ করেন—“ সাধারন মানুষকে লুট করো, নিজে রাখো কিন্তু আমাকে ক্ষমতাশালী করো। আমারক্ষমতা থাকলে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। এই তো চলছে মানুষের ইতিহাস।
যে জন্য এতো কথা বলার, সেটা হলো, ইতিহাস ঘাটলে এমন নজির পাওয়া যাবে না যে মাত্র একটি প্রাচীন দেশের শান্তিপ্রিয়মানুষকে লুট তরাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থান কলুষিত করে, অসংখ্য সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে , কোনো একটিবিশেষ ধর্মীয় মতকে আশ্রয় করে এবং সেই মতের প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ব্যাক্তি ৩০ বছর ধরে ১৭ বার সেই দেশ আক্রমনকরেছে। পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউ এটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী’ এটা করেছে।সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের (যার কথা আমরা আগেই জেনেছি) সুপুত্র ‘মাহমুদ’, যে ভারতের ইতিহাসে‘গজনীর মাহমুদ’ বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাস করা দুরুহ মনেহয়। সেই বর্বরের হাত থেকে নিজ রাজ্য এবং প্রজা কুলকে রক্ষা না করতে পেরে শাহী রাজ জয়াপাল আগুনে আত্মাহুতিদিয়েছিলেন। (এই বিষয়ে আর বিস্তারিত প্রশ্ন করবেন না কারন আমি আমার টাইমলাইনে আগেই বেশ কয়েকবার পোষ্টকরেছি।)
আমাদের শেখা ইতিহাসে এই “মহান জিহাদী” র কথা কি আছে?? শুধু এই লেখা আছে ‘মাহমুদ’ ১৭ বার ভারত আক্রমনকরেছিলো। কিন্তু কোথাও পাবেন না, ওই ১৭ বারে সে কি করেছিলো? শান্তির বানী প্রচার করেছিলো না ‘অশান্তির দাবানল’ জালিয়েছিলো, সারা উওর-পশ্চিম ভারতে। সেই থেকে ভারত বাসীর সার্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশা , রাজনৈতিক, সামাজিক,ধর্মীয় এবং সাংষ্কৃতিক অবক্ষয়ের শুরু।
এই ইতিহাস অতি করুন এবং কঠিন বাস্তব, যা আমরা জানি না, আমাদের আজো জানানো হয়নি। পরবর্তি কিছুআলোচনায় আমরা দেখবো সেই ‘ আশান্তির দাবানল’ এর বিধ্বংসী তান্ডবতা, লুটের বহর এবং তার ফলশ্রুতি।



অনেক বর্বর সাম্রাজ্যবাদী এবং লুটেরাদের কাহিনী ইতিহাসে লেখা আছে। সেই লুটের ধরন বর্তমানে একটু পালটেছে, কিন্তুযুদ্ধবাজদের মনের আসল উদ্দেশ্য একই আছে। কোনো রাজনৈতিক মতের কথা বলুন বা ধর্মীয় মতের কথা বলুন, আসলউদ্দেশ্য নিরীহ মানুষের ওপরে অত্যাচার করে নিজে ভালো থাকবো। মোদ্দা কথা এটাই। একমাত্র সনাতনি দর্শন এবং তারধারক ও বাহকদের বাদ দিয়ে এই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক, সামাজিক মতকে আশ্রয় করে যুগে যুগে যাহয়েছে সেটা বিরুদ্ধবাদী নিরীহ মানুষের অপর অত্যাচার। আজ এই গন্তান্ত্রিক যুগেও সেই কাজ চলছে, সারা পৃথিবীতেগনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে
অর্থনৈতিক শোষনের পরিকল্পনা।
বর্তমান বাদ দেই। ঐতিহাসিক আমলে, পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার (মহান???), এটিলা দি হুন, রোম সম্রাটেরা, আরবী তুর্কি জিহাদীরা, চেংগিজ খান, হুন রাজ মিহিরকুল, রক্ত পিপাসু তৈমুর লং, কুষান সম্রাটেরা , মোঘল সম্রাটেরাবিশেষ করে আকবর আর ঔরংজেব, ক্যমুনিষ্ট রা, নাৎসী বাহিনী, এরা সবাই এই কাজ করেছে। অন্যের দেশ দখল করে,তাদের সর্বাস্ব লুট করে নিজে আরাম আয়েষ করেছে। এরা এই সব করেছে, কোনো বিশেষ একটি ধর্মীয় মোড়কেরাজনৈতিক মতবাদকে আশ্রয় করে। আক্রমন করো, ধ্বংস করো ,লুট করো, লুটের মাল নিজে রাখো আর উচ্ছিষ্ট যারা লুটকরতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যে বিলি করে তাদের খুশী রাখো ( রানা মানসিংহের সংগে আকবরের অলিখিত চুক্তিইছিলো, তুমি জায়গা দখল করো- জায়গা আমার,লুটের মাল তোমার। বর্তমান অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীহাবার জন্য ওই একই কাজ করেন—“ সাধারন মানুষকে লুট করো, নিজে রাখো কিন্তু আমাকে ক্ষমতাশালী করো। আমারক্ষমতা থাকলে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। এই তো চলছে মানুষের ইতিহাস।
যে জন্য এতো কথা বলার, সেটা হলো, ইতিহাস ঘাটলে এমন নজির পাওয়া যাবে না যে মাত্র একটি প্রাচীন দেশের শান্তিপ্রিয়মানুষকে লুট তরাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থান কলুষিত করে, অসংখ্য সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে , কোনো একটিবিশেষ ধর্মীয় মতকে আশ্রয় করে এবং সেই মতের প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ব্যাক্তি ৩০ বছর ধরে ১৭ বার সেই দেশ আক্রমনকরেছে। পারস্য সম্রাট সাইরাস থেকে শুরু করে তৈমুর , কেউ এটা করেনি। কিন্তু, একজন “মহান জিহাদী’ এটা করেছে।সেই বর্বর টা হচ্ছে তুর্কী দাস সুবুক্তিগীনের (যার কথা আমরা আগেই জেনেছি) সুপুত্র ‘মাহমুদ’, যে ভারতের ইতিহাসে‘গজনীর মাহমুদ’ বলে বিখ্যাত। তার কীর্তি কলাপ, ধংস লীলা, লুটের বহর জানলে বিস্মিত হতে হয়, বিশ্বাস করা দুরুহ মনেহয়। সেই বর্বরের হাত থেকে নিজ রাজ্য এবং প্রজা কুলকে রক্ষা না করতে পেরে শাহী রাজ জয়াপাল আগুনে আত্মাহুতিদিয়েছিলেন।
আমাদের শেখা ইতিহাসে এই “মহান জিহাদী” র কথা কি আছে?? শুধু এই লেখা আছে ‘মাহমুদ’ ১৭ বার ভারত আক্রমনকরেছিলো। কিন্তু কোথাও পাবেন না, ওই ১৭ বারে সে কি করেছিলো? শান্তির বানী প্রচার করেছিলো না ‘অশান্তির দাবানল’ জালিয়েছিলো, সারা উওর-পশ্চিম ভারতে। সেই থেকে ভারত বাসীর সার্বিক অর্থনৈতিক দুর্দশা , রাজনৈতিক, সামাজিক,ধর্মীয় এবং সাংষ্কৃতিক অবক্ষয়ের শুরু।
এই ইতিহাস অতি করুন এবং কঠিন বাস্তব, যা আমরা জানি না, আমাদের আজো জানানো হয়নি। পরবর্তি কিছুআলোচনায় আমরা দেখবো সেই ‘ আশান্তির দাবানল’ এর বিধ্বংসী তান্ডবতা, লুটের বহর এবং তার ফলশ্রুতি।
********
তুর্কী দাস সুবিক্তিগীনের সুপুত্র মাহমুদ। তার ঠাকুরদা, আলাপ্তিগীন ছিলো ‘তুর্কী দাস’, যাদের মুল কাজ ছিলো, খলিফারদেহ রক্ষী হিসাবে। সিন্ধু বিজয়ের পর প্রায় ৩০০ বছর খলিফারা ব্যাস্ত থাকে ইউরোপ, আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তার করানিয়ে। সিন্ধু বিজয় করতে যে খেসারত দিতে হয়েছিলো, সেই ঘা শুকাতে অনেক সময় লাগে। তাই আরবীরা অন্য দিকে দৃষ্টিদিয়েছিলো। ভারতের হিন্দু রাজাদের শক্তির কিছু পরিচয় ওরা নিজেরাই পেয়েছিলো। আর আলেকজান্ডারের কি পরিনতিহয়েছিলো সেটাও জানতে ওদের বাকী ছিলো না। তাই ওদের দৃষ্টি গেলো অন্য দিকে।
সেই সুযোগে, খলিফার ই বিজিত দেশ উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানের ক্রীত দাসদের একজন আলপ্তীগীন খলিফাররাজত্বের থেকে আফগানিস্তানের একটি অংশ দখল করে নেয়। খলিফাকে সন্তুষ্ট রাখতে তার অধীনে সামন্ত শাসকহিসাবে,কর দিয়ে খলিফার আশীর্বাদ নিয়ে গজনী কেন্দ্রিক সেই রাজত্ব স্তাপন করে। আলপ্তীগীনের ছেলে সুবুক্তিগীন সিন্ধুরউত্তর থেকে শুরু করে ,পাঞ্জাব,প্রাচীন গান্ধার রাজ্য এবং কাশ্মীরের অধীশ্বর ‘শাহী রাজ জয়াপালা’র সংগে সংগ্রামে লিপ্তহয়। সেই প্রচেষ্টা সফল হয় নি (বিস্তারিত পড়ুন আমার আগের লেখা তে)।।
সুবুক্তিগীনের মৃত্যুর পর তার সুপুত্র মাহমুদ গজনীর সুলতান হয় ৯৯৮ সালে। তার ঠিক দু বছর পর মাহমুদ তার শ্যেন দৃষ্টিনিয়ে তাকায় ভারতের দিকে। তার কারন মুলত দুটি---- এক, জয়াপালার হাতে তার বাবার হেনস্তা এবং খলিফাকে খুশীকরতে ভারতে ‘জিহাদী তান্ডব চালিয়ে’ ৩০০ বছর আগে সিন্ধু বিজয়ী মোহাম্মদ বিন কাসিমের অপঘাতে মৃত্যুর (সিন্ধুরাজদাহিরের দুই কন্যার অকুতোভয় কুট বুদ্ধির ফলে) বদলা নিতে।
৩০০ বছরে ইসলামের শিকড় সিন্ধুতে খুব শক্ত ভাবেই গ্রোথিত হয়ে গিয়েছিলো। কোরান,হাদিস এবং শরিয়ত সিন্ধুর জনজীবন নিয়ন্ত্রিত করছে তখন। মুহাম্মদ (গজনী) সেই ‘জিহাদী মন্ত্রে’ সুশিক্ষিত। সে খলিফাকে প্রতিজ্ঞা করলো ‘আমিযতোদিন বাঁচবো, প্রতি বছর হিন্দুস্তানের পুতুল পুজোকারীদের জীবন অতিষ্ট করে দেবো, তাদের সর্বস্ব লুট তরাজ করেকেড়ে নেবো, তাদের মন্দিরের সব মুর্তি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবো,তাদের জমি জায়গার দখল নেবো, ইসলামী শাসন কায়েমকরবো”। খলিফা জানতো লুটের মালের (গনিমতের মাল) অর্থ , দাস দাসীর (যৌন দাসী) আর অভাব হবে না।
মাহমুদ তার কথা রেখেছিলো। ১০০০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছরে সে ১৭ বার ভারতে আসে লুট তরাজ করতেআর মন্দির ধ্বংস করতে। তার এই মহান ‘জিহাদী’ কৃত কর্মের জন্য ইসলামিক ঐতিহাসিকরা তাকে অকুন্ঠ প্রশংষাকরেছে। ‘ফতে-নামা’ তে মাহমুদ নিজের সম্বন্ধে লিখেছে “ ধর্ম যুদ্ধ’ র নায়ক হিসাবে। খলিফা ‘আল কাদির বিল্লা’ তারপাঠানো উপঢৌকনের বন্যায় ভেসে তাকে ‘আমিন –উল- মিল্লা’ এবং ‘ইয়ামিন-উদ-দৌলা’ (দক্ষিন হস্ত) বলে উপাধী দিলো।সেই থেকে মাহমুদের বংশ “ইয়ামিনি বংশ’ বলে খ্যাত হলো।
খলিফার আশীর্বাদ ধন্য এবং তারদক্ষিন হস্ত ( ইয়ামিন-উদ দৌলা)খেতাব প্রাপ্ত মাহমুদের ‘জিহাদী’মানসিকতা’ দশ গুন বেড়েগেলো খলিফার কাছের মানুষহবার পর। একের পর একচললো তার ‘ধ্বংসের রথ’-----
১০০০ সালে মাহমুদ কিছু সীমান্তঅঞ্চল দখল করে সেখানেনিজের প্রশাসক নিযুক্ত করে।ওই অঞ্চলে বসবাসকারিহিন্দুদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্যকরা হোলো, যারা করলো না, তারা মরলো। তাদের উপাসনালয় মাটিতে গুড়িয়ে দেওয়া হলো।
১০০১ থেকে ১০০৩ সাল অবধি তার কেটে গেলো, ওয়াইহিন্দ (প্রাচীন পুরুষপুর =পেশোয়ার) দখলকরতে। রাজা
জয়াপালা বন্ধী হন। তার ১৫ জন সেনাপতি এবং আত্মীয় বন্ধী হলেন। এদের একজন ‘সুখপাল’মুসলমান হয়ে, নওয়াশা শাহ নাম নিয়ে, মাহমুদের অধীনে প্রসাশনের দ্বায়িত্ব পান। এটা ছিলো তারএকটি চাল, রাজা জয়াপালের জীবন বাচানোর জন্য। কিছু দিন পর যখন রাজা জয়াপাল নিজেরপ্রজা এবং রাজ্য রক্ষা না করতে পারার জন্য এবং চারিদিকে ‘জিহাদী তান্ডব’ দেখে আর সহ্য নাকরতে পেরে রাগে, দুঃখে, হতাশায় আগুনে আত্মাহুতি দেন। ঠিক তার পরেই সুখপাল বিদ্রোহ করেএবং হিন্দু হন। মাহমুদ তাকে পরাজিত করে, হত্যা করে। রাজা জায়াপাল ২৫০০০০ (আড়াই লক্ষ---একট স্বর্ন মুদ্রা ,যার নাম দিনার= ১২০ গ্রাম সোনা) স্বর্ন মুদ্রা মুক্তিপন দিয়ে তার এবং সুখপাল বাদেবাকী ১৪ জনের মুক্তি আদায় করেন। জয়াপালের পুত্র আনন্দপাল কাশ্মীরে চলে যান এবং তারস্বাধীনতা সংগ্রাম চালু রাখেন। তিনি, তার ছেলে ত্রিলোচন পাল এবং নাতি ভীম পাল, মাহমুদের সংগেযুদ্ধ করে শহীদ হন। বাকি বংশধরেরা, আত্মীয় স্বজন রা ধর্ম পরিবর্তন করে বেচে যায়। অনেকেইমাহমুদের অধীনে বেতনভুক ছোট বড়ো সৈনাপত্য নিয়ে বেচে থাকে। এই ভাবে একটি শক্তিশালীএবং ঐশ্বর্য্যশালী হিন্দু রাজ্য চিরতরে মুসলমানী শাসনে চলে গেলো। আজ সেই রাজ্যে চলছে ভারতভুমি থেকে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন (কাশ্মীর), সেই শাহী সাম্রাজ্যের বর্তমান বাসিন্দা, যারা এক সময়সনাতনি ছিলো, (পাকিস্তান, আফগানিস্তান) তাদের বংশধরেরাই তাদের পুর্ব পুরুষদের সংষ্কৃতিরধারক বাহকদের সর্বনাশ করতে ঊঠে পড়ে লেগেছে।
মাহমুদের সেক্রেটারী ছিলো আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী। সেই ‘ঊথবী’ বলছেন, ভেরা, মুলতান,যেখানে একটিও মুসলমান ছিলো না, সে গুলো সব সম্পুর্ন ভাবে মুসলিম হয়ে গেলো, কোনো পুতুলপুজা কারী আর রইলো না। তাদের মন্দির ধুলায় মিশে গেলো অনেক মসজিদ তৈরী হলো”।
এই উথবী একজন নামী লোক। এর লেখা দিয়েই শেষ করবো ৩০ বছরের ধ্বংসের বিবরন। পুরোবিবরন লিখতে গেলে প্রায় একটি বই হয়ে যাবে। একের পর এক শহরের পর শহর, গঞ্জের পর গঞ্জমাহমুদের লুটের আর ধ্বংসের সামিল হলো। জন জীবনে সৃষ্টি হলো এক নিদারুন ত্রাসের।মহিলাদের মান সম্মান ধুলায় লুটিয়ে গেলো, মন্দিরের পর মন্দির ধুলায় মিশে গেলো। এটাই হচ্ছে মুলকথা। ১০১৫ সালে কাশ্মীর, এবং এর আগে পরে ১৯৩০ সালের মধ্যে ভেরা, মুলতানের দখল শক্তপোক্ত করে, মথুরা,বারান (বুলন্দসর), কনৌজ (কানপুর) সব জায়গার একই দশা হলো। সারা উত্তরপশ্চিম ভারত তখন এই মাহমুদের ‘জিহাদী তান্ডব’ থেকে থর থর করে কাঁপতে থাকে, কখন মাহমুদআসবে ( কব গব্বর আ জাঁয়েগা) । ১০২৩ সালের চৌদ্দতম তান্ডবে কিরাত,নুর,লোকাট আর লাহোরধ্বংস এবং পরিবর্তিত হয়ে গেলো ্সব প্রাচীন ঐতিহ্য।
মন্দির লুট করা এবং সেটাকে অপবিত্র করা মাহমুদের একটি খেলা ছিলো। কতো মন্দির তার তান্ডবেশেষ হয়ে গেছে সেই তালিকা আজ আর দিয়ে লাভ নেই। কেউ বিশ্বাস করবে না, বলবে প্রমান কি?যে মন্দির আর দাঁড়িয়ে নেই, বেশীর ভাগ স্থানে অন্য প্রার্থনা স্থল তৈরি হয়েছে, তা বলতে গেলেবিরোধীরা চীৎকার শুরু করবে। ছোট গুলো বাদ দিয়ে শুধু মাত্র বড়ো দুটির কথা এখানে লিখবো। ---
থানেশ্বরের ‘চক্রস্বামীর’ মন্দির লুট এবং ধ্বংস করে মন্দিরের ‘বিষ্ণু মুর্তি’ নিয়ে গিয়ে গজনী শহরেতৈরী ‘হিপোড্রোমে’ ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। মাহমুদ নিজে মথুরা নগরী এবং সেখানকার মন্দিরেরসৌন্দর্য্যের প্রশংষা করেছে। সেই মথুরা নগরীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিখ্যাত ‘কৃষ্ণ মন্দির’ লুট করেসে অগাধ ঐশ্বর্য্য হাসিল করে, আর মন্দিরের সব মুর্তি গুড়িয়ে দেয়। উথবীর কথায় (মাহমুদেরসেক্রেটারী আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী) একমাত্র কনৌজে প্রায় ১০০০০ হাজার মন্দির ধ্বংস হয় (আমি বাড়া বাড়ি বলে মনে করছি—কারন এতো মন্দির থাকা এবং তা ধ্বংস করা কি সহজ ব্যাপার? )যারা এই সব অঞ্চলে বাস করতো, তাদের মধ্যে যারা ধর্ম পরিবর্তনে রাজী ছিলো না তারা হয় পালিয়েঅন্যত্র্ গেলো (আমার বাবা এবং আমার মতো উদবাস্তু হলো), নইলে মরলো (ল্যাটা চুকে গেলো)।
চক্রস্বামী মন্দিরের মতো দশ হলো গুজরাটের ‘সোমনাথ’ মন্দিরের। সেখানকার শিব মুর্তি নিয়েগেলো গজনীতে। তার ভাংগা টুকরো দিয়ে তৈরী হলো গজনীর জামা মসজিদের সিড়ি। সেই গজনী ওনেই ,মসজিদ আর নেই। সব পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে মাহমুদেরই এক শত্রু যাদের ওপরেমাহমুদ অত্যাচার করেছিলো। তারাও ছিলো আফগানিস্তানের এক উপজাতি। সোমনাথের শিবমন্দিরের কিছু ভগ্ন অংশ পাঠানো হয়েছিলো খলিফার কাছে। সেই টুকরো শেষ মেশ পৌছায় তুরষ্কে।তাই দিয়ে তৈরী হয় ইস্তানবুলের বিখ্যাত “তোপকাপি” মসজিদের সিড়ি। (আমার কোনোদিন বিশ্বাসহয়নি, যতোদিন না আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি ২০১২ সালে সেই সিড়ি, যেখানে পরম গর্বেরসংগে এই ইতিহাস লেখা আছে। ছবি তোলা নিষেধ না হলে দেখাতাম সেই স্ক্রিপ্ট পাথরে খোদাইকরা।)
সোমনাথ মন্দির ধ্বংস এবং লুট মাহমুদের কাছে এক পবিত্র কাজ ছিলো সেটা সে নিজেও লিখেরেখে গেছে ‘ফতে নামা’ তে। এই পবিত্রতা এই জন্য যে, ঠিক একই ভাবে মক্কার কাবা শরীফে , যারনাম ছিলো ‘আল-মান্নাত’ সেখানকার মুর্তি ভেঙ্গেছিলেন নবী নিজে। সোমনাথ লুট এবং ধ্বংসের সালটা ছিলো ১০২৬। তার এই কাজের জন্য পরবর্তি সময়ে সুফী, দরবেশ রা মাহমুদের অতি উচ্চ প্রশংষাকরে গেছে। সমসাময়িক ঐতিহাসিক, কুয়াজ্জিনি, ফার-হিস্তা এবং মাহমুদের সেক্রেটারী আবুনাসের মুহাম্মদ উথবী, সবাই মাহমুদের ৩০ বছর ব্যাপি বর্বরতার বিবরন লিখে গেছেন নিখুত ভাবে।সেই লিপিতে তার অতি উচ্চ প্রশংষা করতে গিয়ে আসল সত্য চেপে রাখতে পারেন নি। আসল সত্যচেপে রাখলে মহিমা কম হয়ে যায়। এই মুসলিম ঐতিহাসিকরা সেই সময় মাহমুদের বর্বরতাকেবর্বরতা না বলে ধর্মীয় কাজ বলেছেন। তাই আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে।
সোমনাথ লুটের খবর খলিফার কাছে পৌছালে, খলিফা আল কাদির বিল্লা খুশীতে বিশাল জাক জমককরে উৎসব পালন করে। মাহমুদকে তিনি এবারে দেন নতুন এক উপাধী—‘খাপ-উদ-দৌলা ওয়াআল ইসলাম”। সেই সংগে তাকে হিন্দুস্তানের সম্রাট বলে ঘোষনা করে দিলো। সম্রাট মাহমুদ এইপ্রথম লাহোর থেকে নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করলো।
মাহমুদ যে বিপুল ধন দৌলত ভারত থেকে লুট করে নিয়ে যায় ৩০ বছর ধরে তার হিসাব কষতেচার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিম সিম খেয়ে যাবে। আমাদের ঐতিহাসিকেরা বেমালুম চেপে গেলেও,মাহমুদের সেক্রেটারী সেই আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী সেই লুটের বহর স্পষ্ট করে লিখে রেখে গেছে,কারন সেক্রেটারী হিসাবে সেই কাজ তাকে করতে হতো। আমাদের ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপারএবং অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহাসিকেরা এই সত্য ভারতবাসীর থেকে চেপে গেলেও ঐতিহাসিক ‘কেএস লাল’ এর মতো কিছু ঐতিহাসিক আজো তাদের বিবেক বিদেশীদের (আরবী /তুর্কি) কাছে বেচেদেন নাই। সেই কে এস লালের লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত করে ঐতিহাসিক Andrew G Bostom তৈরীকরেছেন এক প্রামান্য দলিল, যার নাম “The legacy Of Jihad—Islamic Holy war and the fate of the Non-Muslims”, Published by ‘ Prometheus Books’, 59 John Glenn Drive, Amherst,New York- 14228 -2119. ( এই লেখা সেই কে এস লাল এবং Andrew G Bostom এর লেখাকে ভিত্তি করে। প্রমানযারা চাইবেন তারা ঐ ঠিকানায় যোগা যোগ করবেন)
(১)ভারতে বিদেশী শাসন শুরু হয়েছে ৭১২ সাল থেকে শে্যহয়েছ ১৯৪৭ সালে। প্রায় ১২০০ বছর। আরব এবং তুর্কি শাসনচলেছে ১৭৫৭ সাল অবধি প্রায় ১০০০ বছর। ইংরেজ শাসনকরেছে ১৯০ বছর।৭১২ সালে, ইরাকের শাসন কর্তা ‘হেজাজ’ এরভাইপো ‘মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করেআফগানিস্তানের ‘ঘুর’ রাজ্যে থেকে আসা ‘মোহাম্মদ ঘোরী’ কেউভারতে বসবাস করেনি। এরা সবাই ভারতীয় হিন্দুদের ধনসম্মপত্তি লুট করে নিয়ে নিজের দেশে গিয়ে তাদের আরামদায়কপ্রাসাদ বিলাস বৈভবের মধ্যে বাস করেছ। নিজেদের দেশে চলে

যাবার সময়, নিজের বশংবদ কাউকে শাসন কর্তা হিসাবে রেখে গেছে যারা নিয়মিত ভাবে সেই লুটেরা বিদেশীর বিলাসিতারযোগান দিয়ে গেছে। মুহাম্মদ বিন কাসিম থেকে শুরু করে সুলতানী আমাল এমনকি মোঘল আমলেও তুরষ্কের বিলাসবহুলপ্রাসাদে বাস করা খলিফার খেদমতগারী করা এই আরবী এবং তুর্কি দের একমাত্র কাজ ছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরইংরাজরা এই পরজীবী খলিফা প্রথা বন্ধ করে দেয়। সেই দুঃখে আমাদের গান্ধী মুহাম্মদ আলী নামে দুই ভাইকে নিয়ে ব্রিটিশবিরোধী “খিলাফত আন্দোলন” শুরু করে। আমরা ইতিহাসে গান্ধীর সেই “মড়াকান্না” পড়ে তাকে জাতির জনক এবং‘মহাত্মা’ বলে পুজো করে চলেছি।




‘মাহমুদের লুট করা হিন্দু সম্পত্তির খতিয়ান’
আমাদের কাছে ব্রিটিশ শাসনে ই ভারতীয় হিন্দু দের সর্বনাশ হয়েছে , ১৯০ বছরে লন্ডন সমৃদ্ধিশালী হয়েছে ভারতীয় অর্থে,আর আমরা দরিদ্র হয়ে গেছি। আমরা তাই নিয়ে আজো বিশদ ভাবে তর্ক বিতর্ক ইতিহাস ঘাটা ঘাটি করে চলেছি। কিন্তু, ১০০০ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে যে বিপুল ধন সম্পদ আরব, ইরাক,ইরান, বাগদাদ, ব্যাবিলন, সিরিয়া,দামাস্কাস, তুরষ্ক,ইস্তানবুল, কাবুল, গজনী (যদিও সেটা আজ আর নেই, আছে শুধু একটি গ্রাম) শহর গুলোকে এবং আমাদের ঘরের কাছে, বুখারা (বুখারীরা ওখান থেকে এসেই কলকাতায় আমাদের ঘাড়ের ওপরে জাকিয়ে বসে আমাদের ওপর ফতোয়া দিয়েযাচ্ছে), সমরখন্দ, তাসখন্দ ইত্যাদি শহর গড়ে ঊঠেছে তা নিয়ে মোটাই চিন্তা ভাবনা করি না। আমাদের স্বাধীনতারসংগ্রামের ইতিহাস শুরু হয় গান্ধীকে নিয়ে। কিন্তু আমাদের পরাধীনতার ইতিহাস, যা আমরা প্রকারান্তরে আজো আছি এবংভবিষ্যতে হতে চলেছি (যদি না হিন্দুরা তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজ ভুমি এবং সংষ্কৃতি পুনরায় ফিরে পাবার চেষ্টাকরে, যার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন) । যে মোঘলদের নিয়ে আমরা আজ গর্ব করি, সেই মোঘল শাসনের সুত্রপাত যাকে দিয়ে, সেই বাবুর তার লেখা ‘বাবুর নামা’য় সারা জীবন তার সাধের ‘কাবুল’ এ বাস না করতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গেছে।এই সব বিদেশীদের বংশ ধর আজো তাকিয়ে থাকে পশ্চিমের দিকে,পুবের দিক তাদের না পছন্দ। অথচ তারাই আমদেরকাছে মহান এবং তাদের আজো আমরা আমাদের পোষ্য পুত্র করে রেখে দিয়েছি।, একের পর এক নিজ ভুমি তাদের হাতেতুলে দেবার সব ব্যাবস্থা, আন্দোলন করে চলেছি।

 
অতীতে হিন্দুরাই তাদের নিজেদের দেশটা বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়েছে, সেই সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে মোঘলদেরশাসন অবধি। আজ সেই খলিফাতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে উগ্র পন্থীরা সিরিয়া ইরাক থেকে এসে কাশ্মীর ,পাকিস্তান, বাংলাদেশ, পশ্চিমবংগে এসে ঘাটি গাড়ছে আমরাই তাদের এখানে পুষে রাখতে সাহায্য করছি। সত্যিই, কি বিচিত্র এইদেশ!!!!!!
১০০০ বছর ধরে কতো হিন্দু সম্পত্তি লুন্ঠিত হয়ে বিদেশে গেছে??? তার পরিমান কতো????
এখানে শধু গজনীর মাহমুদ ৩০ বছরে ১৭ বার ভারত আক্রমন করে যে ধন সম্পত্তি তার দেশে নিয়ে গেছে সেই খতিয়ানদেওয়া হচ্ছে। হিন্দুর অর্থে গজনীর শহর তৈরী হয়েছিলো। শুধূমাত্র মাহমুদের প্রাসাদ (যা তার আততায়ীরা পুড়িয়েদিয়েছিলো) তৈরীতে খরচ হয়েছিলো ৭০ লক্ষ স্বর্ন মুদ্রা, যার একটির ওজন ছিলো ১২০ গ্রাম। কতো সেই অংক টা????? হিসাব করুন। ১৯০ বছরে ব্রিটিশ তার ১০০ ভাগের এক ভাগ ও নিতে পারেনি, কারন নিয়ে যাবার মতো বিশেষ কিছু আরবাকি ছিলো না। ঝড়তি পড়তি যা স্থানীয় মুসলিম শাসক দের কাছে পড়েছিলো বা জিহাদীদের নজরে পড়েনি, তাই নিয়েগেছে ,যেমন “কোহিনুর”, আর বেশী কি???? নীলের (ইন্ডিগো) কথা বলছেন??? তার থেকেও অনেক বেশী ‘নীল” এইদেশে চাষ হতো এবং তা গেছে ঐ সব আরবী, তুর্কি দুনিয়ায়। ভারতের সব মসলিন দিয়েই তৈরী হতো খালিফা,সুলতান,আমীর উমরাহ দের পোষাক আসাক, দরজা জানালার পর্দা। (নীলের সেই হিসাব ও পাবেন আমার কাছে।)
এই হিসাব, কারো কষ্ট কল্পিত কাহিনী নয়। মাহমুদের সচিব ‘আবু নাসের মোহাম্মদ উথবী’, যে সেই হিসাব স্বযত্নে লিখেরেখেছিলো তার মনিবের জন্য এবং তার কাছে হিসাব দেবার জন্য, সেই হিসাব আজ আমাদের সামনে এসেছে। তারভিত্তিতে লেখা ঐতিহাসিক কে এস লাল’এর লেখা ভারতে ইসলামিক আগ্রাসনের তিন অধ্যায় ( সিন্ধু বিজয়, গজনীরমাহমুদ এবং ঘোরী –পৃথ্বীরাজ)। সেই থেকে সংকলিত হয়েছে, “THe legacy Of Jihad Edited by Andrew G Bostom”.Published by Prometheus Books, New York.Page-440-446. আমি শধু বাংলা ভাষায় তার সার সংক্ষেপকরেছি আপনাদের জন্য (বিশেষ করে আমার এক ফেসবুক ভাই এর অনুরোধে। ) দেখুন সেই হিসাব, যে হিসাব আমাদেরকাছ থেকে আজ অবধি লুকিয়ে রাখা হয়েছে আমাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার জন্য।।
(২)
লেখাটা আমার স্বাভাবিক লেখার মতো বেশ বড়ো, কারন ৩০ বছরের লুট অল্পেতে লেখা যায় না।
*** হিসাব কষার আগে এটা জানতে হবে ‘দিনার’ এবং ‘দিরহাম’কাকে বলে। দিনার হচ্ছে এক একটি স্বর্ন মুদ্রা যা সেই সময়প্রচলিত ছিলো আরবে। ভারতে সেটা স্বর্ন মুদ্রা নামেই প্রচলিত ছিলো। একটি স্বর্ন মুদ্রায় থাকতো ১২০ গ্রাম খাটি সোনা।বর্তমান বাজার মুল্যে সেটা দাঁড়ায় ৩০০০০ টাকা করে এক গ্রামের দাম ধরলে প্রায় ৩৬০০০০ (তিন লক্ষ ষাট হাজার)একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম। সেই সময় ১ টাকায় ৪০ মন চাল বাজারে পাওয়া যেতো। (অনেক বার হিসাব করার চেষ্টা করেপারিনি, যদিও স্কুল ফাইনালে অংকের দুটি বিষয়ে একশোর মধ্যে একশো ই পেয়েছিলাম। মাইরি বলছি একদম টোকাটুকিকরিনি। তোমাদের মধ্যে যে বা যারা হিসাব পারদর্শী আমাকে একটূ বলো Inflation ইত্যাদি ধরে একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম কতোহয়???)*******
১) মাহমুদ ‘হিন্দু শাহী রাজ’ রাজা জয়াপাল এবং তার ১৫ জন আত্মীয়, সৈন্যাধক্ষ্য কে আটক রেখে ২৫০,০০০ (আড়াইলক্ষ দিনার ) এর মুক্তিপন আদায় করে।
২) রাজা জয়াপালার গলার নেকলেস টির সেই সময়কার দাম ছিলো ২০০,০০০ (দুই লক্ষ দিনার)। সেটি মাহমুদ নিয়ে যায়।
৩) রাজা জয়াপালার আত্মীয় স্বজন দের গায়ের গহনা ইত্যাদির মোট মুল্য ৪০০, ০০০ (চার লক্ষ ) দিনার
৪) ‘ভেরা’ শহর, যাকে মাহমুদের সেক্রেটারী ‘উথবী’ উল্লেখ করেছে, ‘ মানুষ যতোটা কল্পনা করতে পারে তেমনিসম্পদশালী’ ছিলো। সেই ভেরা লুট করতে প্রায় ২ বছরে ২ বার মাহমুদকে আসতে হয়। (১০০৪ সালের প্রথম থেকে ১০০৫সালএর শেষ) সমস্ত ধন দৌলত নিয়ে যেতে কয়েক হাজার ঊঠ নিয়ে আসতে হয় ।
৫) ১০০৫ থেকে ১০০৬ সাল লেগে যায় ‘মুলতান’ লুট করতে । সেখান থেকে যে সম্পত্তি নিয়ে যায় তার মোট মুল্য২০,০০০,০০০ (কুড়ি লক্ষ) ‘দিরহাম’ (রৌপ্য মুদ্রা)
৬) রাজা জয়াপালের এক সেনাপতি যাকে মাহমুদ মুসলমান বানিয়ে নাম দিয়েছিলো ‘নওয়াশা শাহ’, সে রাজা জয়াপালেরআগুনে আত্মাহুতি দেবার পর পুনরায় হিন্দু হয়। মাহমুদ তাকে পরাজিত এবং আটক করে তাকে শুধু হত্যা করে তাই নয়তার সব সম্পত্তি যার মোট মুল্য ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা)
৭) মাহমুদ “ভীম নগর” দুর্গ দখল করে সেখানকার ‘হিন্দু শাহী মুদ্রা’ র ৭০,০০,০০০ (সত্তর লক্ষ) লুট করে নিয়ে যায়।
8) ‘ভীম নগর’ দুর্গে ছিলো একটি পুজা মন্ডপ। সেটি ছিলো ১৫ গজ (৪৫ ফুট) চওড়া, ৩০ গজ (৯০ ফুট) লম্বা। তার দুটি খুটিছিলো সোনার,দূটি রুপোর, ওপরের ছাঊনি (গম্বুজ) রুপোর । মন্ডপটি খুলে রাখা যেতো। সেটির নিয়ে যায়। তার মুল্য‘উথবী’ উল্লেখ করে নি।
৯) ‘বারান’ (বুলন্দসর) থেকে মাহমুদ লুট করে ১০,০০০,০০০ (দশ লক্ষ) রৌপ্য মুদ্রা।
১০) ‘মথুরা’ মন্দির লুট করে ৫ টি সোনার ‘রাধা –কৃষ্ণ’ মুর্তি নিয়ে যায়, যার মোট ওজন ৯৮৩০০ মিসকাল (দশ মন) ।(আমি ব্যাংককে ৫ টনের বুদ্ধ মুর্তি দেখে এসেছি,সুতরাং ২ মনের রাধা-কৃষ্ণ মুর্তি অসম্ভব নয়)। তাছাড়া মোট ২০০ টিরৌপ্য নির্মিত নানা দেব দেবীর মুর্তি নিয়ে যায়।
১১) কনৌজ, মুঞ্জ,আশনি, সার্বা ইত্যাদি লুট করে অপরিমিত ঐশ্বর্য্য নিয়ে যায়।
১২) ‘সোমনাথ’ মন্দির থেকে মাহমুদ নিয়ে যায় এক বিপুল ঐশ্বর্য্য। তার পরিমান শুনলে পরম বিশ্বাসীর ও অবিশ্বাস হবে।কিন্তু ‘উথবী’ র লেখা বিশ্বাস না করে কার কথা বিশ্বাস করবো? সেই লুটের মোট অংক উথবী করেছে ২০,০০০, ০০০ স্বর্নমুদ্রা বা ‘দিনার’।
১৩) লুটের বহর ৩০ বছরে এতো বিশাল ছিলো যে মাহমুদ, সেই অপর্য্যাপ্ত সম্পদ দেখভাল করা এবং সুষ্ঠ ভাবে গজনীতেনিয়ে যাবার জন্য দু জন হিসাব রক্ষক এবং ব্যাবস্থাপক নিযুক্ত করে। সেই দুজনের নাম ও উথবী বার বার উল্লেখ করেছে।সেই দুই মহাপুরুষ হচ্ছেন ‘আলতুন্টাস’ এবং ‘আশীক্তিন’।
১৪) শুধু মাত্র সুলতান নয়। তার সৈণ্য সামন্ত হিন্দু রাজাদের মৃত হিন্দু সৈন্যদের দেহ তল্লাশী করে তাদের গয়না পত্র, সাধারন হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুট করে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যায়। লুটের এই ‘মহা সুযোগ’ নিতে স্থানীয় হিন্দু লোকের মধ্যেওমাহমুদের সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য কাড়া কাড়ি পড়ে যায়। (অবিশ্বাস্য হলেও একেবারে খাটি কথা ‘উথবী’লিখেছে।। দেশী গব্বরের অভাব কোনো কালেই ভারতে ছিলো না। মুসলমান ‘জিহাদী’দের আরবী /তুর্কি সৈন্যের সংখ্যাথেকেও দেশী হিন্দু লুটেরার সংখ্যা খুব কম ছিলো বলে আমার মনে হয় না। ইতিহাসে সে কথা, ফা-রিস্তা, আলবেরুনী লিখেরেখে গেছেন। ভুলে যাবেন না, আকবরের হয়ে রানা মানসিং ৭৭ টি যুদ্ধ করে যার মধ্যে ৫৭ টি যুদ্ধ সে জেতে এবং বিজিতরাজ্য আকবর কে দেয়,নিজে রাখে লুটের মাল। রানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর কেউ করেনি ওই মানসিং। আমাদেরবাংলাদেশ দখল আর কেউ করেনি,করেছিলো ওই শয়তান মানসিং এবং সে তিন তিন বার বাংলা,বিহার ,উড়িষ্যার প্রসাশকহয় আকবরের অধীনে। যশোরের বিখ্যাত ‘মা কালী’ র মুর্তি এখন শোভা পাচ্ছে মানসিং এর “অম্বর” দুর্গে। পা চাটা কুকুরেরকোনো অভাব সেই রামায়নের যুগ থেকে আজ অবধি ভারতে কম পড়ে যায় নি।)
১৫) শাহী সাম্রাজ্য থেকে লুটের বহ্র এমনই ছিলো যে, রাজা জয়াপাল, আনন্দপাল, ত্রিলোচন পাল, কারো মুদ্রা আজো খুজেপাওয়া যায়নি। (তাই আমাদের ঐতিহাসিকেরা ধরেই নিয়েছেন ওই বংশ ছিলোই না। তাহলে সুবিক্তিগীন এবং মাহমুদ ভুতেরসংগে যুদ্ধ করেছিলো)।
১৬) অর্থনিতী বিদেরা বলেন “ মাহমুদের লুটের পর অর্থের বন্যা ভারত থেকে চলে গেলো সিন্ধুর পশ্চিম পারে। গজনীরএবং আরবী দুনিয়ার মুদ্রা (দিনার এবং দিরহাম) শক্ত পোক্ত হয়ে শুধু স্থীরতা পেলো তাই নয়,হয়ে গেলো বিশেষ দামী।ভারতীয় স্বর্ন মুদ্রার সোনার পরিমান ১২০ গ্রামের জায়গায় নেমে এলো ৬০ গ্রামে আর রৌপ্য মুদ্রার দাম আর প্রায় রইলোনা ব্যাবাসার জন্য। সারা দুনিয়ার কাছে ভারতীয় মুদ্রা আর খুব বেশী আকর্ষনীয় রইলো না”।
“মাহমুদের বর্বরতার সুদুর প্রসারী ফল”
পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার, কুষান, আরবী এবং পরবর্তীতে তুর্কি দাসদের দ্বারা একের পর এক আগ্রাসী আক্রমনের যে সমুহ ফল বৈদিক সনাতনিভারতবর্ষের জন জীবনে পড়লো তার ফলে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবংসাংষ্কৃতিক পরিবর্তন হলো তার সঠিক মুল্যায়ন আজ অবধি হয়নি।
কি করে বৈদিক আফগানিস্তান (কেকয়, কম্বোজ এবং গান্ধার) আজ এক সম্পুর্নভিন্ন নিম্ন মানের সংষ্কৃতির এবং ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদীদের বিচরনস্থল হয়েছে তারইতিহাস আমরা জেনেছি। আজ যে পাকিস্তান ঝড়তি পড়তি ভারতকে শেষ
করার খেলায় মেতেছে, নিউক্লিয়ার বোম দিয়ে উড়িয়ে দেবার কথা বলছে (আজইআমেরিকান সামরিক প্রধানের বক্তব্য পড়ুন) ওই অঞ্চল তো সিন্ধু এবং হিন্দু শাহীসাম্রাজ্যের অংশ ছিলো। যে বাংলাদেশে আজ উগ্রপন্থীরা সমবেত হচ্ছে সেটাইতো বৈদিক সনাতনী ছিলো। সে সব কোথায় হারিয়ে গেলো??? যেসামাজিক,অর্থনৈতিক এবং সাংষ্কৃতিক পরিবর্তন এই বৈদিক সনাতনী সভ্যতার জন্ম ভুমিতে হয়েছে সেই সার্বিক পরিবর্তনচীরস্থায়ী এবং মানব সভ্যতার ইতিহাসে অশ্রুতপুর্ব এবং অন্য কোনো উদাহরন নেই।
উত্তর পশ্চিম ভারতবর্ষ তো অনেক আগেই চলে গেছে। পশ্চিম ভারত পাকিস্তান হয়ে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে তো সমস্যারশেষ নেই। পুর্ব ভারতের এক বিশাল ভুমি বাংলাদেশ। পশ্চিমবাংলা ধুকছে।
সনাতনি দর্শন হিংসায় বিশ্বাসী নয়। সনাতনি সভ্যতা শান্তি সম্প্রতির কথা বলে। মানবিকতা সেখানেই, সমৃদ্ধি শান্তিতেধ্বংসে নয়। এই চরম ঐশ্বরিক কথা ওই অঞ্চলে আজ আর কেউ শুনতে পাবেন না কোনো দিন। নীল চাষীদের অপরেব্রিটিশের অত্যচারের কথা আমরা “নীল দর্পন” জেনেছি। তার লেখক উত্তর ২৪ পরগনার নিমতলাতে (বনগাঁর কাছে ) জন্মেছিলেন। তিনি যদি জানতেন, নীল চাষ আগেও হতো, তাহলে হয়তো আর একটি নাটক লিখতেন। মাহমুদ প্রতি বছর যেপরিমানে নীল নিজের জন্য নিয়ে যেতো এবং তার প্রভু খলিফার কাছে পাঠাতো তার হিসাব আছে “উথবী” র লেখাতে। সেইকথা লিখে এই ইতিহাস আর দীর্ঘায়িত করবো না। বেশী লিখলে কল্প কষ্টিত এবং অসত্য বলে অনেকে সমালোচনার ঝড়বইয়ে দেবেন জানি।
আসুন আমরা দেখি, মাহমুদের উত্তর পশ্চিম ভারতকে শ্মশান ভুমি করে দেবার পর, কি করে ‘জিহাদী তান্ডব’এসেপৌছালো খোদ দিল্লীতে। একেবারে সনাতনি ভারতের হৃদস্থলে। সেই কাহিনীও অতি করুন।। বুকে পাথর দিয়ে সেই কথাশুনুন। সেই ইতিহাসকেও আমাদের থেকে গোপন করে রাখা হয়েছে।ইতিহাস যুগে যুগে শাসকদের কথা মতোই লেখাহয়েছে বেশীর ভাগ সময়। খুব কম ঐতিহাসিক আছেন যারা সত্যবাদী। আমাদের দেশে রমেশ চন্দ্র মজুমদার, যদুনাথসরকার, কে এস লাল ,শ্রী বাস্তবের লেখা কে পড়ে???
এখন তো রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবের দিন, এই দুজনেই বামপন্থী মতের প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু সভ্যতার ইতিহাসএকেবারে চেপে গেছে ।শুধু তাই নয় বিকৃত করেছে। কারন আর কিছু নয়। চানক্য ই বলেছেন আর ইংরেজ ম্যাকুলেবলেছে, কোনো জাতিকে শেষ করতে হলে, পদানত রাখতে হলে বা নিজের মত চাপিয়ে দিতে চাইলে, প্রথম এবং অকৃত্রিমকাজ সেই জাতির ইতিহাস , সংষ্কৃতি, ধর্ম বিকৃত করা, গালাগালি দেওয়া, তাদের উপাসনা স্থল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া। যুগেযুগে অনেক মহামানব এই কাজ করেছেন। ভারতের হিন্দুদের ওপরে এই অভব্য কাজ করা হয়েছে সব থেকে বেশী।।
ইরফান হাবিব ই বলেছে "হিন্দুরা জামা কাপড় পরতে শিখেছে বিদেশীদের থেকে যারা ভারত শাসন করেছে"। আমাদের পুর্বপুরুষরা সব তাহলে ল্যাংটো থাকতো, তাই না???


লেখক-
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
কোলকাতা- ভারত।

Posted at June 28, 2020 |  by Arya ঋষি

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top