All Stories

এক বিষ বৃক্ষের সূচনা -অন্তিম পর্ব



মুখবন্ধ বা নিজের কিছু কথা : এই লেখার শেষ পর্বে দাঁড়িয়ে কোনো একটি পর্বে এক পাঠকের কথা মনে পড়ছে। তিনি সৌদি সংস্কার বা ধর্মীয় মৌলবাদের রাস্তা ত্যাগ করে অন্য পথে যেতে পারে তা নস্যাৎ করেছিলেন কোনো যুক্তি না দিয়েই। আংশিক বিরক্ত হলেও পরবর্তীতে বিষয়টি ভাবলাম , দেখলাম ,এই ধরণের নীতি নির্ধারকরা নানান দেশে অতীব সফল হয় এই কারণেই। আমরা মূল উদ্দেশ্য দেখি না তাই অতীব সহজে একটা বিভাজন নিয়ে এসে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা অতি সহজ হয়। কোনো রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মের ধ্বজা ধরে নিজেদের স্বার্থ পূরণের জন্য যা আমরা ভুলে যাই। একই ভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে সরব নানান স্বঘোষিত পক্ষ আবার এর উল্টো স্রোতের সুযোগ নেয় সেই একই কারণে। নীরবে কাজ করে মানুষের একমুখী অগ্রগতি।আমরা অনেকেই জানি না যে ওই সময়ে মানে এই ঘটনার আগে পর্যন্ত ওই দেশে বাকি আর পাঁচটা মধ্য প্রাচ্যের তুলনামূলক সংস্কার পন্থী দেশের মতো ওই সময় মেয়েরা গাড়ি চালাতেন বা সিনেমা হল ইত্যাদি চালু ছিল।এই ঘটনার পরেই সব শেষ হয়ে যায়।যাইহোক,ইতিহাস স্বাক্ষী,কিছু সময়ের জন্য মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে তবে সামগ্রিক মানব উত্তরণ আটকে দেওয়া কারোর সাধ্যে নেই।নিজের কথা রাখি,আসুন দেখি বিষবৃক্ষের রোপন এবং কালের নিয়মে এর অপসারণ কি ভাবে হচ্ছে।
বিষবৃক্ষের রোপন এবং তাঁর বৃদ্ধি:
সৌদি রাজতন্ত্রর কাছে গদি বড় দায় তাই কোনো ঝুকি না নিয়ে একদম মোল্লাতন্ত্র চালুর পথে যেতে পুরো একটা উল্টো দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা।পাশের ইরানের মোল্লাতন্ত্র সৌদি রাজাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল,ইসলামের মূল ধারকের গদি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় এবং নিজেদের টিকে থাকার একটা কারণ একেবারে ঘড়ির কাটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করলো।শুধু নিজের দেশেই না,গোটা পৃথিবীতেই এই গোড়া মানসিকতা এবং নিজেদের মতে চলার মতো করে একটি ভাবনা বা আজকের পরিচিত ওয়াহাবী মতের প্রসার শুরু করলো পেট্রো ডলার এর অনুদান দিয়ে।এক কথায়, নিজেদের মনমতো ইসলামের রপ্তানি একটি মূল লক্ষ্য হয়ে উঠলো।
শুনলে অবাক হবেন এই জুহাইমান এবং এদের দলের নানান দাবি মেনে নেওয়া হয়।এর মধ্যে ফুটবল খেলা ,টিভিতে বিনোদনের নানান অনুষ্ঠান বা মেয়েদের দেখানো ইত্যাদি যা কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেছিল সব বন্ধ হয়ে গেলো।পশ্চিমের সভ্যতার পথে চলা সৌদি আরব মধ্যযুগের মোল্লাতন্ত্রের পথে চলা শুরু করলো। ইতিহাসের কি পরিহাস, একই ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল কয়েক মাস আগে এদের প্রবল বৈরী শিয়া পথের ইরানেও।একই সঙ্গে মেয়েদের চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা,এমনকি মেয়েদের ছবি পত্রিকা ইত্যাদিতে ছাপানো সবই নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।
যে জেদ্দা শহরে মেয়েরা স্বচ্ছন্দে সিনেমায় যেতে পারতো তা নিষিদ্ধ হলো। বিশেষ বস্তার বোরখা সার্বিক হলো।আজকে অবাক লাগতে পারে , ওই সময়ে সৌদি টিভি তে বা রেডিওতে পুরুষ এবং নারী উভয়েই অংশ গ্রহণ করতো।এরপরে ? সব বন্ধ হয়ে গেলো।শুধু দেশের না , আশেপাশের বিখ্যাত গায়ক গায়িকা যেমন লেবাননের ফাইরুজ বা সামিরা আগে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিল ওই দেশের টিভিতে।যে দেশ সংগীতপ্রেমী ছিল তাঁদের জন্য এরপরের দশকগুলো কেবল অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছিল।
এতেই শেষ না , এসে গেলো ধর্মীয় এক ষাঁড়ের দল মানে নীতি পুলিশ।নাগরিকের জীবনের সর্বত্র এদের হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেলো।এই অন্ধকারের দিনের জন্য দায়ী সৌদি রাজ্ পরিবার আর তাদের গোষ্ঠী।সোজা কথায়, অপরিণত এই অশিক্ষিত মৌলবাদী শ্রেণীকে তোষণ এবং এদের নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসতে পুরো ভোল পাল্টে ফেলার কাজ করেছিল সৌদি রাজতন্ত্র।
প্রিন্স তুর্কির ভাষায়, তাঁরা ইসলাম যে একটি রাজনৈতিক দর্শন ওটা উপলব্ধি করে এর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র সাজিয়ে ফেলেছিল যাতে আর এই ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাজ না হয়। ঈমাম এবং বশংবদ উলেমাদের সামনে রেখে একটি আবরণ তৈরী করলেই যে রাজত্ব অনেক সহজ হয় ওই উপলব্ধি হয়েছিল তা পরিষ্কার।আধুনিক চিন্তার বদলে এই ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার দোকান খুলে বরং এই ভাবধারা আরো প্রসার করা হয়ে উঠলো মুখ্য লক্ষ্য। রপ্তানি করা শুরু করলো নিজেদের ওয়াহাবি তত্বের পথ যতদিন না বুঝতে পারলো বোতলের দৈত্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
বোধদয়ের পালা:
আইসিস এবং আল কায়দার উত্থান এদের আবার ভাবতে বাধ্য করেছে যে এই ভাবে কিছু হবে না। একই সাথে তেলের বিকল্প নিয়ে গোটা পৃথিবী রাস্তা খুঁজে বের করছে।সোজা কথায় এই ২০৩০ এর সময়ের কিছু আগে বা পরে এই তেলের মুফতে খাওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।তাই এরপরে ওই গোড়া মনঃবৃত্তি নিয়ে চললে দেশের আয়ের তিন ভাগের এক ভাগের রোজগার যা আসে এই হ্বজ বা ওমরা থেকে তাতে ভাটা আসতে পারে।
মহম্মদ বিন সালমান মানে আজকের মূল ক্ষমতার অধিকারীর কথা এক অর্থে আশার বাণী মনে হয় ,তিনি আগামী তিরিশ বছরের এই ধ্বংসের যন্ত্রনা না বহন করে এখনই এই ভাবনা চিন্তা গুলো শেষ করতে চাইছেন।অন্ততঃ রিয়াদে তিন বছর আগের একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে তাই বলেছেন।একই ভাবে পরের বছর সেই কালান্তক সময়ের থেকে দেশে যে অসহ এক লৌহ বর্মের অবস্থান আর মধ্যযুগের আইন চলছে তার অবসান ও চেয়েছেন তিনি।বাস্তবিক দিক থেকে খুব ভুল বলেন নি।ষাটের বা সত্তরের দশকের সৌদি আরব কিন্তু এক ভিন্ন পরিবেশ বহন করে চলতো। এই বিষয়ে বিবিধ সূত্র ধরে যা দেখছি তাতে এই ধর্মান্ধের কারবার যে কি পরিমান ক্ষতি করেছে তার প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন ,সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
অনেক গুলো কাজ ইতিমধ্যেই করেও ফেলেছেন।যা সংস্কার হয়েছে এই পর্যন্ত,তার প্রধান কিছু নিচে দিলাম:
১.একদম শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বাধীন মত প্রকাশ করা ব্লগার বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে শাস্তির বিশেষতঃ অতীব গুরুতর অপরাধ ছাড়া প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের ফরমান তুলে নেওয়া হয়েছে।
২.সৌদি মহিলাদের কাজের পরিধিতে আগে শতকরা ২২ ভাগ অংশগ্রহণের ধার্যকৃত অংশের বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে অর্থাৎ মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার পথে চলছে দেশটি।
৩.সবচেয়ে আলোচতি যে বিষয়টি আমরা সবাই জেনেছি তা হলো মেয়েদের এই অভিশপ্ত সময়ের আগে রাস্তায় গাড়ি চালানোর যে স্বাধীনতা ছিল তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০১৮ তে।
৪.আগের মতো চাকরি করতে যাওয়ার সময়ে কোনো মহিলাকে তার তথাকথিত পুরুষ অভিভাবকের থেকে অনুমতি নিতে হতো।কোনো ক্ষেত্রে তার স্বামী,কখনো বাবা বা ভাই ইত্যাদি।এই বিষয়টি রদ করা হয়েছে ,আর এর দরকার হবে না।একই ভাবে কোনো উচ্চশিক্ষার জন্য এমনকি কোনো শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একেই কুৎসিত এই আইনের রদ হয়েছে।আজ এই সব ক্ষেত্রে মেয়েরা একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৫. পরিবর্তিত আইনে এখন মেয়েরা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করা , বিয়ে/ বিবাহ বিচ্ছিন্নতা সংক্রান্ত নিবন্ধন করা এমনকি কোনো নাবালক /নাবালিকার অভিভাবিকা হতে পারবেন।আগে এর একটিও অধিকার তাঁদের ছিল না।
৬. আগের কালা কানুন বিদেশ গমন বা পাসপোর্ট তৈরির আগে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির আইন ও বাতিল হয়েছে।
৭. সিনেমা বা আগের সেই সংগীত ইত্যাদির কনসার্ট আবার চালু হয়েছে।একই সাথে দোকান বা ব্যবসার অনেক ক্ষেত্র এখন ২৪ঘন্টা খুলে রাখার অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে আর পাঁচটি আধুনিক সমাজের মতো।
৮. ফৌজে মেয়েদের যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং ফুটবল ইত্যাদি খেলার পুনরায় প্রচলন আর মাঠে দর্শক হিসেবে মেয়েদের প্রবেশের অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে।
৯. নীতি পুলিশ নামের কুৎসিত এক চাপিয়ে দেওয়ার বাহিনী কে প্রত্যাহার করা হয়েছে।এরা মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তুলছিল এই কয়েক দশক ধরে।
১০. স্রেফ ধর্মীয় দু একটি জায়গা বাদে দেশের অন্য সর্বত্র অমুসলিম এবং বিদেশী পর্যটকের জন্য অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা হয়েছে।
১১. শিক্ষা ব্যবস্থা কে আধুনিক করে সৌদি নতুন প্রজন্ম কে মূল ধারার বাকি পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
আজকে বিদেশী মেয়েরা সৌদির রাস্তায় বোরখা ইত্যাদি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারে এবং একই সুযোগ নিচ্ছে সৌদি মেয়েরাও,অন্তত যারা একটু সাহসী।প্রসঙ্গত এই নানান কাজ গুলো আগে পর্দার আড়ালে হতো যা আজ বৈধতা প্রাপ্ত হয়েছে।রেস্তেরা বা অন্য সামাজিক জায়গায় নারী পুরুষের এক সাথে থাকা বা এই মুক্ত হওয়ার কারণে অবশ্যই প্রবীন বা ধর্মীয় ভাবধারায় চলা এক দল লোকের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে।ভয় একটাই,এদের নিয়ন্ত্রন যেন গুরুত্ব সহকারে করা হয়।এর কারণ,যে কোনো পরিবর্তন কেই প্রতিরোধ করা মানুষের একটি স্বাভাবিক ধর্ম বিশেষত মনন যদি একটি ধাঁচে আগেই তৈরী হয়ে যায়।একটু ধীরে ধীরে সংস্কার গুলো করে যাওয়া আর তাকে আরো কিছু দশক বহাল রাখার কাজ হলেই আবার দেশটি আধুনিক পথে চালিত হবে।
এই চমক লাগানো সংস্কারের জন্য আলোচ্য মোহাম্মদ বিন সালমান এর মূল শক্তির একটি জায়গা হলো বর্তমান সৌদি আরবের জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ ৩৪ বছরের কম বয়েসী বলে। এক অর্থে রাজতন্ত্রের এই শাসকের এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে ভাবতে পারেন।
না,আমি মোটেই বলছি না যে এই লোকটি একটি সজ্জন।তবু , যদি বড় অংশের সংস্কার হয় আর তাতে যদি পৃথিবীর চেহারা একটু অন্য হয় তবে ক্ষতি কি ? মূল বইটির লেখক এবং বাকি আরো অনেকেই যা বলেছে তার প্রতিধ্বনি করে বলা যায় জুহাইমান ওই লড়াইয়ে হেরে গেলেও বৃহৎ রণাঙ্গনে কিন্তু জিতেছিল।আজ সঙ্গত কারণে,দুর্জন হলেও সলমান স্বাগত তার এই কাজগুলোর জন্য অন্তত আমার কাছে।
আশার আরো কথা আছে , রাহা মোহার্রাক বলে এক প্রথম সৌদি মহিলা পর্বতারোহী উঠেছেন মাউন্ট এভারেস্ট এ ২০১৩ তে আরো অনেক চূড়াতে উঠবে এই আরব নারীকুল।আমরা সবাই তা দেখবো , কোনো অলীক কল্পনা না ,এটি আমার যুক্তিভিত্তিক চিন্তা।
শেষ করছি,আবার অশেষ রবীন্দ্রনাথ কে স্মরন করে,তিনি এক দল স্বঘোষিত আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অস্বস্থি বাড়িয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সেই সময়ের তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’ নিবন্ধে,একটু ওই জায়গাটি তুলে ধরার সাধ হলো,তিনি বলেছিলেন “এর মধ্যে যে গলদ কিছুই নেই তা বলি নে; গুরুতর গলদ আছে। সেজন্যে একদিন এদের বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে--কিন্তু ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না--সজীব মনের তত্ত্বের সঙ্গে বিদ্যার তত্ত্ব যদি না মেলে তা হলে হয় একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে।“ –অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছিল,সেই সময়ের সেভিয়েত ইউনিয়নে,একই ফলাফল হবে অন্য দেশেও যদি বাকি রাষ্ট্রনায়করা তা না বুঝতে পারে।অমিত শক্তির মানুষ ছাঁচে ফেলার প্রাণী না।





কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাসঃ– পর্ব ৪


এক বিষ বৃক্ষের সূচনা -অন্তিম পর্ব



মুখবন্ধ বা নিজের কিছু কথা : এই লেখার শেষ পর্বে দাঁড়িয়ে কোনো একটি পর্বে এক পাঠকের কথা মনে পড়ছে। তিনি সৌদি সংস্কার বা ধর্মীয় মৌলবাদের রাস্তা ত্যাগ করে অন্য পথে যেতে পারে তা নস্যাৎ করেছিলেন কোনো যুক্তি না দিয়েই। আংশিক বিরক্ত হলেও পরবর্তীতে বিষয়টি ভাবলাম , দেখলাম ,এই ধরণের নীতি নির্ধারকরা নানান দেশে অতীব সফল হয় এই কারণেই। আমরা মূল উদ্দেশ্য দেখি না তাই অতীব সহজে একটা বিভাজন নিয়ে এসে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা অতি সহজ হয়। কোনো রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মের ধ্বজা ধরে নিজেদের স্বার্থ পূরণের জন্য যা আমরা ভুলে যাই। একই ভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে সরব নানান স্বঘোষিত পক্ষ আবার এর উল্টো স্রোতের সুযোগ নেয় সেই একই কারণে। নীরবে কাজ করে মানুষের একমুখী অগ্রগতি।আমরা অনেকেই জানি না যে ওই সময়ে মানে এই ঘটনার আগে পর্যন্ত ওই দেশে বাকি আর পাঁচটা মধ্য প্রাচ্যের তুলনামূলক সংস্কার পন্থী দেশের মতো ওই সময় মেয়েরা গাড়ি চালাতেন বা সিনেমা হল ইত্যাদি চালু ছিল।এই ঘটনার পরেই সব শেষ হয়ে যায়।যাইহোক,ইতিহাস স্বাক্ষী,কিছু সময়ের জন্য মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে তবে সামগ্রিক মানব উত্তরণ আটকে দেওয়া কারোর সাধ্যে নেই।নিজের কথা রাখি,আসুন দেখি বিষবৃক্ষের রোপন এবং কালের নিয়মে এর অপসারণ কি ভাবে হচ্ছে।
বিষবৃক্ষের রোপন এবং তাঁর বৃদ্ধি:
সৌদি রাজতন্ত্রর কাছে গদি বড় দায় তাই কোনো ঝুকি না নিয়ে একদম মোল্লাতন্ত্র চালুর পথে যেতে পুরো একটা উল্টো দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা।পাশের ইরানের মোল্লাতন্ত্র সৌদি রাজাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল,ইসলামের মূল ধারকের গদি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় এবং নিজেদের টিকে থাকার একটা কারণ একেবারে ঘড়ির কাটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করলো।শুধু নিজের দেশেই না,গোটা পৃথিবীতেই এই গোড়া মানসিকতা এবং নিজেদের মতে চলার মতো করে একটি ভাবনা বা আজকের পরিচিত ওয়াহাবী মতের প্রসার শুরু করলো পেট্রো ডলার এর অনুদান দিয়ে।এক কথায়, নিজেদের মনমতো ইসলামের রপ্তানি একটি মূল লক্ষ্য হয়ে উঠলো।
শুনলে অবাক হবেন এই জুহাইমান এবং এদের দলের নানান দাবি মেনে নেওয়া হয়।এর মধ্যে ফুটবল খেলা ,টিভিতে বিনোদনের নানান অনুষ্ঠান বা মেয়েদের দেখানো ইত্যাদি যা কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেছিল সব বন্ধ হয়ে গেলো।পশ্চিমের সভ্যতার পথে চলা সৌদি আরব মধ্যযুগের মোল্লাতন্ত্রের পথে চলা শুরু করলো। ইতিহাসের কি পরিহাস, একই ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল কয়েক মাস আগে এদের প্রবল বৈরী শিয়া পথের ইরানেও।একই সঙ্গে মেয়েদের চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা,এমনকি মেয়েদের ছবি পত্রিকা ইত্যাদিতে ছাপানো সবই নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।
যে জেদ্দা শহরে মেয়েরা স্বচ্ছন্দে সিনেমায় যেতে পারতো তা নিষিদ্ধ হলো। বিশেষ বস্তার বোরখা সার্বিক হলো।আজকে অবাক লাগতে পারে , ওই সময়ে সৌদি টিভি তে বা রেডিওতে পুরুষ এবং নারী উভয়েই অংশ গ্রহণ করতো।এরপরে ? সব বন্ধ হয়ে গেলো।শুধু দেশের না , আশেপাশের বিখ্যাত গায়ক গায়িকা যেমন লেবাননের ফাইরুজ বা সামিরা আগে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিল ওই দেশের টিভিতে।যে দেশ সংগীতপ্রেমী ছিল তাঁদের জন্য এরপরের দশকগুলো কেবল অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছিল।
এতেই শেষ না , এসে গেলো ধর্মীয় এক ষাঁড়ের দল মানে নীতি পুলিশ।নাগরিকের জীবনের সর্বত্র এদের হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেলো।এই অন্ধকারের দিনের জন্য দায়ী সৌদি রাজ্ পরিবার আর তাদের গোষ্ঠী।সোজা কথায়, অপরিণত এই অশিক্ষিত মৌলবাদী শ্রেণীকে তোষণ এবং এদের নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসতে পুরো ভোল পাল্টে ফেলার কাজ করেছিল সৌদি রাজতন্ত্র।
প্রিন্স তুর্কির ভাষায়, তাঁরা ইসলাম যে একটি রাজনৈতিক দর্শন ওটা উপলব্ধি করে এর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র সাজিয়ে ফেলেছিল যাতে আর এই ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাজ না হয়। ঈমাম এবং বশংবদ উলেমাদের সামনে রেখে একটি আবরণ তৈরী করলেই যে রাজত্ব অনেক সহজ হয় ওই উপলব্ধি হয়েছিল তা পরিষ্কার।আধুনিক চিন্তার বদলে এই ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার দোকান খুলে বরং এই ভাবধারা আরো প্রসার করা হয়ে উঠলো মুখ্য লক্ষ্য। রপ্তানি করা শুরু করলো নিজেদের ওয়াহাবি তত্বের পথ যতদিন না বুঝতে পারলো বোতলের দৈত্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
বোধদয়ের পালা:
আইসিস এবং আল কায়দার উত্থান এদের আবার ভাবতে বাধ্য করেছে যে এই ভাবে কিছু হবে না। একই সাথে তেলের বিকল্প নিয়ে গোটা পৃথিবী রাস্তা খুঁজে বের করছে।সোজা কথায় এই ২০৩০ এর সময়ের কিছু আগে বা পরে এই তেলের মুফতে খাওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।তাই এরপরে ওই গোড়া মনঃবৃত্তি নিয়ে চললে দেশের আয়ের তিন ভাগের এক ভাগের রোজগার যা আসে এই হ্বজ বা ওমরা থেকে তাতে ভাটা আসতে পারে।
মহম্মদ বিন সালমান মানে আজকের মূল ক্ষমতার অধিকারীর কথা এক অর্থে আশার বাণী মনে হয় ,তিনি আগামী তিরিশ বছরের এই ধ্বংসের যন্ত্রনা না বহন করে এখনই এই ভাবনা চিন্তা গুলো শেষ করতে চাইছেন।অন্ততঃ রিয়াদে তিন বছর আগের একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে তাই বলেছেন।একই ভাবে পরের বছর সেই কালান্তক সময়ের থেকে দেশে যে অসহ এক লৌহ বর্মের অবস্থান আর মধ্যযুগের আইন চলছে তার অবসান ও চেয়েছেন তিনি।বাস্তবিক দিক থেকে খুব ভুল বলেন নি।ষাটের বা সত্তরের দশকের সৌদি আরব কিন্তু এক ভিন্ন পরিবেশ বহন করে চলতো। এই বিষয়ে বিবিধ সূত্র ধরে যা দেখছি তাতে এই ধর্মান্ধের কারবার যে কি পরিমান ক্ষতি করেছে তার প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন ,সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
অনেক গুলো কাজ ইতিমধ্যেই করেও ফেলেছেন।যা সংস্কার হয়েছে এই পর্যন্ত,তার প্রধান কিছু নিচে দিলাম:
১.একদম শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বাধীন মত প্রকাশ করা ব্লগার বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে শাস্তির বিশেষতঃ অতীব গুরুতর অপরাধ ছাড়া প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের ফরমান তুলে নেওয়া হয়েছে।
২.সৌদি মহিলাদের কাজের পরিধিতে আগে শতকরা ২২ ভাগ অংশগ্রহণের ধার্যকৃত অংশের বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে অর্থাৎ মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার পথে চলছে দেশটি।
৩.সবচেয়ে আলোচতি যে বিষয়টি আমরা সবাই জেনেছি তা হলো মেয়েদের এই অভিশপ্ত সময়ের আগে রাস্তায় গাড়ি চালানোর যে স্বাধীনতা ছিল তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০১৮ তে।
৪.আগের মতো চাকরি করতে যাওয়ার সময়ে কোনো মহিলাকে তার তথাকথিত পুরুষ অভিভাবকের থেকে অনুমতি নিতে হতো।কোনো ক্ষেত্রে তার স্বামী,কখনো বাবা বা ভাই ইত্যাদি।এই বিষয়টি রদ করা হয়েছে ,আর এর দরকার হবে না।একই ভাবে কোনো উচ্চশিক্ষার জন্য এমনকি কোনো শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একেই কুৎসিত এই আইনের রদ হয়েছে।আজ এই সব ক্ষেত্রে মেয়েরা একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৫. পরিবর্তিত আইনে এখন মেয়েরা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করা , বিয়ে/ বিবাহ বিচ্ছিন্নতা সংক্রান্ত নিবন্ধন করা এমনকি কোনো নাবালক /নাবালিকার অভিভাবিকা হতে পারবেন।আগে এর একটিও অধিকার তাঁদের ছিল না।
৬. আগের কালা কানুন বিদেশ গমন বা পাসপোর্ট তৈরির আগে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির আইন ও বাতিল হয়েছে।
৭. সিনেমা বা আগের সেই সংগীত ইত্যাদির কনসার্ট আবার চালু হয়েছে।একই সাথে দোকান বা ব্যবসার অনেক ক্ষেত্র এখন ২৪ঘন্টা খুলে রাখার অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে আর পাঁচটি আধুনিক সমাজের মতো।
৮. ফৌজে মেয়েদের যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং ফুটবল ইত্যাদি খেলার পুনরায় প্রচলন আর মাঠে দর্শক হিসেবে মেয়েদের প্রবেশের অনুমতি ও দেওয়া হয়েছে।
৯. নীতি পুলিশ নামের কুৎসিত এক চাপিয়ে দেওয়ার বাহিনী কে প্রত্যাহার করা হয়েছে।এরা মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তুলছিল এই কয়েক দশক ধরে।
১০. স্রেফ ধর্মীয় দু একটি জায়গা বাদে দেশের অন্য সর্বত্র অমুসলিম এবং বিদেশী পর্যটকের জন্য অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা হয়েছে।
১১. শিক্ষা ব্যবস্থা কে আধুনিক করে সৌদি নতুন প্রজন্ম কে মূল ধারার বাকি পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
আজকে বিদেশী মেয়েরা সৌদির রাস্তায় বোরখা ইত্যাদি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারে এবং একই সুযোগ নিচ্ছে সৌদি মেয়েরাও,অন্তত যারা একটু সাহসী।প্রসঙ্গত এই নানান কাজ গুলো আগে পর্দার আড়ালে হতো যা আজ বৈধতা প্রাপ্ত হয়েছে।রেস্তেরা বা অন্য সামাজিক জায়গায় নারী পুরুষের এক সাথে থাকা বা এই মুক্ত হওয়ার কারণে অবশ্যই প্রবীন বা ধর্মীয় ভাবধারায় চলা এক দল লোকের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে।ভয় একটাই,এদের নিয়ন্ত্রন যেন গুরুত্ব সহকারে করা হয়।এর কারণ,যে কোনো পরিবর্তন কেই প্রতিরোধ করা মানুষের একটি স্বাভাবিক ধর্ম বিশেষত মনন যদি একটি ধাঁচে আগেই তৈরী হয়ে যায়।একটু ধীরে ধীরে সংস্কার গুলো করে যাওয়া আর তাকে আরো কিছু দশক বহাল রাখার কাজ হলেই আবার দেশটি আধুনিক পথে চালিত হবে।
এই চমক লাগানো সংস্কারের জন্য আলোচ্য মোহাম্মদ বিন সালমান এর মূল শক্তির একটি জায়গা হলো বর্তমান সৌদি আরবের জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ ৩৪ বছরের কম বয়েসী বলে। এক অর্থে রাজতন্ত্রের এই শাসকের এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে ভাবতে পারেন।
না,আমি মোটেই বলছি না যে এই লোকটি একটি সজ্জন।তবু , যদি বড় অংশের সংস্কার হয় আর তাতে যদি পৃথিবীর চেহারা একটু অন্য হয় তবে ক্ষতি কি ? মূল বইটির লেখক এবং বাকি আরো অনেকেই যা বলেছে তার প্রতিধ্বনি করে বলা যায় জুহাইমান ওই লড়াইয়ে হেরে গেলেও বৃহৎ রণাঙ্গনে কিন্তু জিতেছিল।আজ সঙ্গত কারণে,দুর্জন হলেও সলমান স্বাগত তার এই কাজগুলোর জন্য অন্তত আমার কাছে।
আশার আরো কথা আছে , রাহা মোহার্রাক বলে এক প্রথম সৌদি মহিলা পর্বতারোহী উঠেছেন মাউন্ট এভারেস্ট এ ২০১৩ তে আরো অনেক চূড়াতে উঠবে এই আরব নারীকুল।আমরা সবাই তা দেখবো , কোনো অলীক কল্পনা না ,এটি আমার যুক্তিভিত্তিক চিন্তা।
শেষ করছি,আবার অশেষ রবীন্দ্রনাথ কে স্মরন করে,তিনি এক দল স্বঘোষিত আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অস্বস্থি বাড়িয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সেই সময়ের তাঁর ‘রাশিয়ার চিঠি’ নিবন্ধে,একটু ওই জায়গাটি তুলে ধরার সাধ হলো,তিনি বলেছিলেন “এর মধ্যে যে গলদ কিছুই নেই তা বলি নে; গুরুতর গলদ আছে। সেজন্যে একদিন এদের বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে--কিন্তু ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না--সজীব মনের তত্ত্বের সঙ্গে বিদ্যার তত্ত্ব যদি না মেলে তা হলে হয় একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে।“ –অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছিল,সেই সময়ের সেভিয়েত ইউনিয়নে,একই ফলাফল হবে অন্য দেশেও যদি বাকি রাষ্ট্রনায়করা তা না বুঝতে পারে।অমিত শক্তির মানুষ ছাঁচে ফেলার প্রাণী না।





Posted at February 21, 2019 |  by Arya ঋষি

0 Comments:

আল্লাহ তালাহ- একটি অশুভ বদরাগী অসুখী চরিত্র


সেইদিন হোম পেইজে কীভাবে জানি ঘুরে ঘুরে একটা পোস্ট আমার নজরে পড়ে গেল। বিষয়বস্তু হচ্ছে, পোস্টের লেখক সবাইকে জানাচ্ছেন, ক্রিকেট খেলা দেখে জিতে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে খুশী প্রকাশ করা ইসলামের দৃষ্টিতে উচিত কাজ নয়। ফেইসবুকে এরকম খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা গর্হিত কাজ। মুসলমানদের উচিত মৃত্যুর পরে কী হবে তা ভেবে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা। খেলায় জিতে তা নিয়ে আনন্দ করা, খুশি হওয়া, তা আবার প্রকাশ করে ফেলাতে আল্লাহ নাখোশ হতে পারেন। মুসলমানদের সব সময়ই মৃত্যু ভয়ে ভীত এবং দোজখের ভয়ে আতঙ্কিত থাকা উচিত!
আমি মন দিয়েই লেখাটি পড়লাম। মুমিন মুসলমানদের লেখা আমার কাজের জন্যেই মন দিয়ে পড়তে হয়। তাদের মনের গঠন বোঝার জন্য। তাদের বুদ্ধিমত্তা বোঝার জন্য। আপনি কী এই ধরণের লেখা আগে পড়েছেন? আমি নিশ্চিত, আপনার চোখেও হয়তো পড়েছে।

আল্লাহ চরিত্রটি নিয়ে একটু ভেবে দেখুন। খুবই অসুখী, হীনমন্য, ছোটলোক এবং পাছায় লেগে থাকা একটি চরিত্র। আপনি খাচ্ছেন নাকি ঘুমাচ্ছেন, ঘুম থেকে উঠলেন কিংবা প্রশাব করতে গেলেন, আপনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন নাকি বাসায় ফিরছেন, প্রতিটা পদক্ষেপে আপনার ওপর তার কড়া নজরদারি। আপনি ডানদিকে কাত হয়ে শুচ্ছেন নাকি বা দিকে, আপনার প্যান্ট টাখনুর কতটুকু ওপরে রয়েছে, আপনি প্রশাব করার পরে ঢিলা কুলুপ করেছেন কিনা, আপনি স্ত্রীর সাথে প্রেম করার পরে ফরজ গোছল করেছেন কিনা, মানুষের জীবনে এমন কোন সময় নেই যেই সময়ে সে খবরদারি করতে আসবে না। সে চাইবে আপনি তাকে সর্বক্ষণ ভয় পান, ভীত আতঙ্কিত হয়ে জীবন কাটান। কান্নাকাটি করেন। আপনি যদি মনের সুখে হাসেন, বা কাঁদেন, সব জায়গাতেই তার অনেক সমস্যা। সেই চায় একদম গৃহপালিত দাস, যে সর্বক্ষণ তার তোষামোদ করতে ব্যস্ত থাকবে।

ভাবুন তো, আপনার সন্তানের কথা। আপনি কেমন মানুষ তা জানি না। তবে আমি আমার সন্তানকে চাইবো সবসময় হাসিখুশী। আনন্দ করা একজন সুখী মানুষ হিসেবে। সে আমার ভয়ে সারাক্ষণ ভীত হয়ে থরথর করে কাঁপবে, আমার পিটানির ভয় আতঙ্কিত থাকবে, এরকম হলে তাতে তার মানসিক বৃদ্ধি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সে হয়তো ছোটখাটো ভুল করে ফেলবে, কিন্তু আমি তাকে আদর করে বোঝাবো। ভুল তো হবেই, কিন্তু সে তো আমার সন্তানই। তাকে মানুষের অধিকারের কথা বোঝাবো, মানবতাবাদ শেখাবো। সব মানুষের সমান অধিকার এবং সমান মর্যাদা, এরকম তাকে ছোট বেলা থেকেই শিক্ষা দেবো। তাকে বলবো না, সে দুষ্টুমি করলে তাকে আমি মাইক্রো ওয়েভে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পোড়াবো। এইসব বর্বর কায়দায় অত্যাচারের কথা বললে কেউ কোনদিন উন্নত চরিত্রের মানুষ হতে পারে না। আজকে আমি যদি তাকে এরকম বর্বর ভয় দেখাই, তার মাথায় এগুলো ঢুকে যাবে। এই বর্বরতা পরবর্তী জীবনে সে চর্চা করবে।

উন্নত বিশ্বে নানা মানসিক গবেষনায় দেখা গেছে, ছোটবেলা যেই সব শিশুদের ওপর অত্যাচার বেশি হয়, বা ভয় দেখানো হয়, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা তুলনামূলক বেশি হয়। তাদের মধ্যে এক ধরণের জেদ কাজ করে। আপনি ছোটখাটো ভুলের জন্য আপনার সন্তানকে মারধোর করলে বা ভয়ঙ্কর রকমের ভয় দেখালে সে ক্রমশ জেদি হয়ে উঠবে। তখন জেদ করেই সেই নিষিদ্ধ কাজটি সে বারবার করতে চাইবে। তার মনের মধ্যে থাকবে সেই কাজটি করার আগ্রহ। কিন্তু ভয়ের কারণে সে হয়তো কিছুদিনের জন্য তা করবে না, তবে তার মনে সেটা চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যাবে।

আল্লাহ পাক কোরআনে বলছেন, আল্লাহ হচ্ছেন প্রতিশোধ গ্রহণকারী। এর মানে কী? তুচ্ছ মানুষের ওপর আল্লাহ প্রতিশোধ নেন? কী হাস্যকর!

■ আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী
কুরআন ৩ঃ৪

■ আল্লাহ বলছেন, তিনি ভীতি প্রদর্শক, ভয় প্রদর্শক। এর মানে কী? আল্লাহ ভয় দেখান? আল্লাহ কী ভুত?
আর বলুনঃ আমি প্রকাশ্য ভয় প্রদর্শক।
কোরআন  ১৫ঃ৮৯

আল্লাহ কী ক্ষেপে গেলে হুমকিধামকি দেয়া শুরু করেন? সামান্য মানুষের চুল ধরে টেনে হিচড়ে নেয়ার হুমকি দেন?

■ কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই
কোরআন ৯৬/১৫-১৬

■ আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।
কোরআন ৩৫ঃ৩৬

■ সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।
কোরআন ৯ঃ৩৫

■ আমি তার নাসিকা দাগিয়ে দিব।
কোরআন ৬৮ঃ১৬

■ …তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।
কোরআন ৬ঃ৭০

আল্লাহ পাক তোষামোদ এর ভালবাসেন কেন? নিজেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ?

■ হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়
কোরআন ২৭:৯

■ হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
কোরআন ৩৫ঃ১৫

■ আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান
কোরআন ১২ঃ৫৫

■  আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
কোরআন ১১২ঃ২-৪

■ অতএব সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদ আল্লাহর উপরে বর্ষিত হোক, কারণ তিনিই জগতের প্রভু।
কোরআন ৪৫ঃ৩৬

■ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
কোরআন ৫ঃ১২০

কোরআন আরো ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ে দেখুন। আল্লাহ এখানে একে অভিশাপ দিচ্ছে তো সেখানে তাকে হুমকি দিচ্ছে! কী অদ্ভুত রকমের হিংস্রতা তার মধ্যে। কাফের মারো অমুককে জোড়ায় জোড়ায় কাটো তমুকের গলায় রশি বাধো অপমান করে জিজিয়া কর আরোপ কর তাদের দাস বানাও, কত্ত কিছু। আর হচ্ছে মুহাম্মদকে বলতে থাকবে, বিয়ে কর বিয়ে কর। যেন মুহাম্মদের একের পর এক বিয়ে ছাড়া দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। আল্লাহ চরিত্রটি আমাদের দেশের মাদ্রাসার শিক্ষকদের মতই, প্রাগৌতিহাসিক একটি অশুভ চরিত্র। আমি এমন কোন হাদিস বা আয়াত পড়ি নি, যেখানে আল্লাহকে কেউ হাসতে শুনেছে। তার মনে কোন আনন্দ নেই। যার মনে আনন্দ নেই, সে একটি অশুভ চরিত্রই বটে। মনে হয় যেন, সরকারী অফিসের কর্মচারী, যে বৌয়ের সাথে সারারাত ঝগড়া করে অফিসে এসেছে। নাক মুখ কুচকে বসে আছে। কোন আনন্দ নেই, কোন খুশি নেই যার মনে। বা বাসার কমবয়সী বাচ্চা ছেলেটি, যাকে তার পছন্দের খেলনাটি কিনে দেয়া হয় নি। তাই রাগ করে বসে আছে। আর তাকে কেন কেউ পাত্তা দিচ্ছে না, তা নিয়ে অভিযোগ করছে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা এক অশুভ সত্ত্বা যেন, যে সবচাইতে বেশি এটেনশোন সিকার। সকলের এটেনশনের জন্য সে মুখিয়ে থাকে। বদমেজাজি, ছোট খাট ভুল নিয়ে হাউমাউ করা একটি ছোটলোক টাইপ চরিত্র। একটি বদরাগী চরিত্র। সারাক্ষণ নিজের প্রশংসা শুনতে চাওয়া নিজের তোষামোদ পছন্দ করা বিশ্রী চরিত্র। যে আমার ফেইসবুকের কোন একটি খুশির পোস্ট দেখে আমাকে কয়েক লক্ষ বছর আগুণে ফ্রাই করবেন। আমি কোনদিকে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছি, আমার বউকে চুমু দেয়ার সময় তার নাম নিচ্ছি কিনা, এইসব কারণে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রাগে জ্বলতে থাকে! সিরিয়াসলি? কাম অন, গেট এ লাইফ অ্যাসহোল!

অশুভ বদরাগী

যেমন ধরুন মা কালী চরিত্রটি। এই দেবীর ছবি দেখলেই আমার ঘেন্না পায়। কিরকম বিশ্রী এবং অশুভ একজন দেবী চরিত্র! এরকম দেবীর পুজা কেউ কীভাবে করে, তা আমার মাথায় আসে না। জিহবা বের করে অস্ত্র হাতে একটা কাটা মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কী মারাত্মক ব্যাপার।

ঢাকায় থাকার সময় বাসে ট্রেনে উঠলেই এরকম অসুখী চরিত্রগুলো চোখে পড়তো। মুখে কখনো হাসি নেই। চোখে চোখ পড়লেই কেমন ভয়াবহ আগুন দৃষ্টিতে তাকাতো। মনে হতো এই মারবে বুঝি। গায়ে অল্প ধাক্কা লাগলেই মারতে আসতো। বাসের হেলপার ড্রাইভারকে সারাক্ষণ গালাগালি করতো। এক টাকা বেশি ভাড়া চাইলেই চড় মেরে বসতো। অসুখি এবং মানসিকভাবে অপরিণত! ইউরোপে দেখেছি, বাসে ট্রেনে বেশিরভাগ মানুষ হাসি মুখে উঠবে। চোখে চোখ পড়লেই মিস্টি করে একটা হাসি দেবে। ছেলে হোক বা মেয়ে, বেশিরভাগ সময়ই এরকম হবে। মাঝে মাঝে এরকম অসুখি চেহারাও চোখে পড়ে। তারা হাসে না। কেমন কড়া দৃষ্টিতে তাকায়। তখন আমরা ভাবি, হয়তো মানুষটার বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে। বা বৌ বা স্বামী বা পার্টনারের সাথে ঝগড়া করেছে। আমরা অবাক হই। আল্লাহ চরিত্রটি তার চাইতেও অনেক ভয়াবহ মাত্রার মানসিক অসুস্থতার শিকার। ওল্ড টেস্টামেন্টের বদমাজাজী ঈশ্বরের মতই ইসলামের আল্লাহও একজন অসুখী মানুষের অশুভ চিন্তার ফসল।

আপনি ভাবতে পারেন, মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্র স্পেস টাইম অসংখ্য বড় বড় ধুমকেতু জানা অজানা কতকিছু যে সৃষ্টি করেছে, সে মুসলমানদের ফেইসবুক পোস্ট পড়ে দেখছে যে কেউ ক্রিকেট খেলার আনন্দে খুশি প্রকাশ করছে নাকি মৃত্যুর ভয়ে কান্নাকাটি করছে? খুশী প্রকাশ করলে সে ক্ষেপে যাচ্ছে, আর কান্নাকাটি করলে খুশী হচ্ছে?

কাম অন, গেট এ লাইফ! অ্যাসহোল!

আসিফ মহিউদ্দীন 

আল্লাহ

আল্লাহ তালাহ- একটি অশুভ বদরাগী অসুখী চরিত্র


সেইদিন হোম পেইজে কীভাবে জানি ঘুরে ঘুরে একটা পোস্ট আমার নজরে পড়ে গেল। বিষয়বস্তু হচ্ছে, পোস্টের লেখক সবাইকে জানাচ্ছেন, ক্রিকেট খেলা দেখে জিতে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে খুশী প্রকাশ করা ইসলামের দৃষ্টিতে উচিত কাজ নয়। ফেইসবুকে এরকম খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা গর্হিত কাজ। মুসলমানদের উচিত মৃত্যুর পরে কী হবে তা ভেবে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা। খেলায় জিতে তা নিয়ে আনন্দ করা, খুশি হওয়া, তা আবার প্রকাশ করে ফেলাতে আল্লাহ নাখোশ হতে পারেন। মুসলমানদের সব সময়ই মৃত্যু ভয়ে ভীত এবং দোজখের ভয়ে আতঙ্কিত থাকা উচিত!
আমি মন দিয়েই লেখাটি পড়লাম। মুমিন মুসলমানদের লেখা আমার কাজের জন্যেই মন দিয়ে পড়তে হয়। তাদের মনের গঠন বোঝার জন্য। তাদের বুদ্ধিমত্তা বোঝার জন্য। আপনি কী এই ধরণের লেখা আগে পড়েছেন? আমি নিশ্চিত, আপনার চোখেও হয়তো পড়েছে।

আল্লাহ চরিত্রটি নিয়ে একটু ভেবে দেখুন। খুবই অসুখী, হীনমন্য, ছোটলোক এবং পাছায় লেগে থাকা একটি চরিত্র। আপনি খাচ্ছেন নাকি ঘুমাচ্ছেন, ঘুম থেকে উঠলেন কিংবা প্রশাব করতে গেলেন, আপনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন নাকি বাসায় ফিরছেন, প্রতিটা পদক্ষেপে আপনার ওপর তার কড়া নজরদারি। আপনি ডানদিকে কাত হয়ে শুচ্ছেন নাকি বা দিকে, আপনার প্যান্ট টাখনুর কতটুকু ওপরে রয়েছে, আপনি প্রশাব করার পরে ঢিলা কুলুপ করেছেন কিনা, আপনি স্ত্রীর সাথে প্রেম করার পরে ফরজ গোছল করেছেন কিনা, মানুষের জীবনে এমন কোন সময় নেই যেই সময়ে সে খবরদারি করতে আসবে না। সে চাইবে আপনি তাকে সর্বক্ষণ ভয় পান, ভীত আতঙ্কিত হয়ে জীবন কাটান। কান্নাকাটি করেন। আপনি যদি মনের সুখে হাসেন, বা কাঁদেন, সব জায়গাতেই তার অনেক সমস্যা। সেই চায় একদম গৃহপালিত দাস, যে সর্বক্ষণ তার তোষামোদ করতে ব্যস্ত থাকবে।

ভাবুন তো, আপনার সন্তানের কথা। আপনি কেমন মানুষ তা জানি না। তবে আমি আমার সন্তানকে চাইবো সবসময় হাসিখুশী। আনন্দ করা একজন সুখী মানুষ হিসেবে। সে আমার ভয়ে সারাক্ষণ ভীত হয়ে থরথর করে কাঁপবে, আমার পিটানির ভয় আতঙ্কিত থাকবে, এরকম হলে তাতে তার মানসিক বৃদ্ধি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সে হয়তো ছোটখাটো ভুল করে ফেলবে, কিন্তু আমি তাকে আদর করে বোঝাবো। ভুল তো হবেই, কিন্তু সে তো আমার সন্তানই। তাকে মানুষের অধিকারের কথা বোঝাবো, মানবতাবাদ শেখাবো। সব মানুষের সমান অধিকার এবং সমান মর্যাদা, এরকম তাকে ছোট বেলা থেকেই শিক্ষা দেবো। তাকে বলবো না, সে দুষ্টুমি করলে তাকে আমি মাইক্রো ওয়েভে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পোড়াবো। এইসব বর্বর কায়দায় অত্যাচারের কথা বললে কেউ কোনদিন উন্নত চরিত্রের মানুষ হতে পারে না। আজকে আমি যদি তাকে এরকম বর্বর ভয় দেখাই, তার মাথায় এগুলো ঢুকে যাবে। এই বর্বরতা পরবর্তী জীবনে সে চর্চা করবে।

উন্নত বিশ্বে নানা মানসিক গবেষনায় দেখা গেছে, ছোটবেলা যেই সব শিশুদের ওপর অত্যাচার বেশি হয়, বা ভয় দেখানো হয়, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা তুলনামূলক বেশি হয়। তাদের মধ্যে এক ধরণের জেদ কাজ করে। আপনি ছোটখাটো ভুলের জন্য আপনার সন্তানকে মারধোর করলে বা ভয়ঙ্কর রকমের ভয় দেখালে সে ক্রমশ জেদি হয়ে উঠবে। তখন জেদ করেই সেই নিষিদ্ধ কাজটি সে বারবার করতে চাইবে। তার মনের মধ্যে থাকবে সেই কাজটি করার আগ্রহ। কিন্তু ভয়ের কারণে সে হয়তো কিছুদিনের জন্য তা করবে না, তবে তার মনে সেটা চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যাবে।

আল্লাহ পাক কোরআনে বলছেন, আল্লাহ হচ্ছেন প্রতিশোধ গ্রহণকারী। এর মানে কী? তুচ্ছ মানুষের ওপর আল্লাহ প্রতিশোধ নেন? কী হাস্যকর!

■ আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী
কুরআন ৩ঃ৪

■ আল্লাহ বলছেন, তিনি ভীতি প্রদর্শক, ভয় প্রদর্শক। এর মানে কী? আল্লাহ ভয় দেখান? আল্লাহ কী ভুত?
আর বলুনঃ আমি প্রকাশ্য ভয় প্রদর্শক।
কোরআন  ১৫ঃ৮৯

আল্লাহ কী ক্ষেপে গেলে হুমকিধামকি দেয়া শুরু করেন? সামান্য মানুষের চুল ধরে টেনে হিচড়ে নেয়ার হুমকি দেন?

■ কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই
কোরআন ৯৬/১৫-১৬

■ আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।
কোরআন ৩৫ঃ৩৬

■ সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।
কোরআন ৯ঃ৩৫

■ আমি তার নাসিকা দাগিয়ে দিব।
কোরআন ৬৮ঃ১৬

■ …তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।
কোরআন ৬ঃ৭০

আল্লাহ পাক তোষামোদ এর ভালবাসেন কেন? নিজেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ?

■ হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়
কোরআন ২৭:৯

■ হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
কোরআন ৩৫ঃ১৫

■ আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান
কোরআন ১২ঃ৫৫

■  আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
কোরআন ১১২ঃ২-৪

■ অতএব সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদ আল্লাহর উপরে বর্ষিত হোক, কারণ তিনিই জগতের প্রভু।
কোরআন ৪৫ঃ৩৬

■ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
কোরআন ৫ঃ১২০

কোরআন আরো ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ে দেখুন। আল্লাহ এখানে একে অভিশাপ দিচ্ছে তো সেখানে তাকে হুমকি দিচ্ছে! কী অদ্ভুত রকমের হিংস্রতা তার মধ্যে। কাফের মারো অমুককে জোড়ায় জোড়ায় কাটো তমুকের গলায় রশি বাধো অপমান করে জিজিয়া কর আরোপ কর তাদের দাস বানাও, কত্ত কিছু। আর হচ্ছে মুহাম্মদকে বলতে থাকবে, বিয়ে কর বিয়ে কর। যেন মুহাম্মদের একের পর এক বিয়ে ছাড়া দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। আল্লাহ চরিত্রটি আমাদের দেশের মাদ্রাসার শিক্ষকদের মতই, প্রাগৌতিহাসিক একটি অশুভ চরিত্র। আমি এমন কোন হাদিস বা আয়াত পড়ি নি, যেখানে আল্লাহকে কেউ হাসতে শুনেছে। তার মনে কোন আনন্দ নেই। যার মনে আনন্দ নেই, সে একটি অশুভ চরিত্রই বটে। মনে হয় যেন, সরকারী অফিসের কর্মচারী, যে বৌয়ের সাথে সারারাত ঝগড়া করে অফিসে এসেছে। নাক মুখ কুচকে বসে আছে। কোন আনন্দ নেই, কোন খুশি নেই যার মনে। বা বাসার কমবয়সী বাচ্চা ছেলেটি, যাকে তার পছন্দের খেলনাটি কিনে দেয়া হয় নি। তাই রাগ করে বসে আছে। আর তাকে কেন কেউ পাত্তা দিচ্ছে না, তা নিয়ে অভিযোগ করছে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা এক অশুভ সত্ত্বা যেন, যে সবচাইতে বেশি এটেনশোন সিকার। সকলের এটেনশনের জন্য সে মুখিয়ে থাকে। বদমেজাজি, ছোট খাট ভুল নিয়ে হাউমাউ করা একটি ছোটলোক টাইপ চরিত্র। একটি বদরাগী চরিত্র। সারাক্ষণ নিজের প্রশংসা শুনতে চাওয়া নিজের তোষামোদ পছন্দ করা বিশ্রী চরিত্র। যে আমার ফেইসবুকের কোন একটি খুশির পোস্ট দেখে আমাকে কয়েক লক্ষ বছর আগুণে ফ্রাই করবেন। আমি কোনদিকে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছি, আমার বউকে চুমু দেয়ার সময় তার নাম নিচ্ছি কিনা, এইসব কারণে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রাগে জ্বলতে থাকে! সিরিয়াসলি? কাম অন, গেট এ লাইফ অ্যাসহোল!

অশুভ বদরাগী

যেমন ধরুন মা কালী চরিত্রটি। এই দেবীর ছবি দেখলেই আমার ঘেন্না পায়। কিরকম বিশ্রী এবং অশুভ একজন দেবী চরিত্র! এরকম দেবীর পুজা কেউ কীভাবে করে, তা আমার মাথায় আসে না। জিহবা বের করে অস্ত্র হাতে একটা কাটা মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কী মারাত্মক ব্যাপার।

ঢাকায় থাকার সময় বাসে ট্রেনে উঠলেই এরকম অসুখী চরিত্রগুলো চোখে পড়তো। মুখে কখনো হাসি নেই। চোখে চোখ পড়লেই কেমন ভয়াবহ আগুন দৃষ্টিতে তাকাতো। মনে হতো এই মারবে বুঝি। গায়ে অল্প ধাক্কা লাগলেই মারতে আসতো। বাসের হেলপার ড্রাইভারকে সারাক্ষণ গালাগালি করতো। এক টাকা বেশি ভাড়া চাইলেই চড় মেরে বসতো। অসুখি এবং মানসিকভাবে অপরিণত! ইউরোপে দেখেছি, বাসে ট্রেনে বেশিরভাগ মানুষ হাসি মুখে উঠবে। চোখে চোখ পড়লেই মিস্টি করে একটা হাসি দেবে। ছেলে হোক বা মেয়ে, বেশিরভাগ সময়ই এরকম হবে। মাঝে মাঝে এরকম অসুখি চেহারাও চোখে পড়ে। তারা হাসে না। কেমন কড়া দৃষ্টিতে তাকায়। তখন আমরা ভাবি, হয়তো মানুষটার বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে। বা বৌ বা স্বামী বা পার্টনারের সাথে ঝগড়া করেছে। আমরা অবাক হই। আল্লাহ চরিত্রটি তার চাইতেও অনেক ভয়াবহ মাত্রার মানসিক অসুস্থতার শিকার। ওল্ড টেস্টামেন্টের বদমাজাজী ঈশ্বরের মতই ইসলামের আল্লাহও একজন অসুখী মানুষের অশুভ চিন্তার ফসল।

আপনি ভাবতে পারেন, মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্র স্পেস টাইম অসংখ্য বড় বড় ধুমকেতু জানা অজানা কতকিছু যে সৃষ্টি করেছে, সে মুসলমানদের ফেইসবুক পোস্ট পড়ে দেখছে যে কেউ ক্রিকেট খেলার আনন্দে খুশি প্রকাশ করছে নাকি মৃত্যুর ভয়ে কান্নাকাটি করছে? খুশী প্রকাশ করলে সে ক্ষেপে যাচ্ছে, আর কান্নাকাটি করলে খুশী হচ্ছে?

কাম অন, গেট এ লাইফ! অ্যাসহোল!

আসিফ মহিউদ্দীন 

Posted at February 06, 2019 |  by Arya ঋষি

0 Comments:

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top