All Stories
ওত্জির

1991, অষ্ট্রিয়া আর ইটালির সীমান্ত এলাকা আল্পস পর্বতে একদল পর্যটক খুঁজে পান ওত্জি কে। না জীবন্ত নয় তাঁর মৃতদেহ। বহুকাল আগেই ওত্জি মারা গেছেন এই বরফের দেশে। তিনি মারা গেছেন সাধারন পূর্বাব্দ ৩৩০০ নাগাদ। অর্থাৎ আজ থেকে ৫৩০০ বৎসর আগে থেকে বরফ চাপা ওত্জি শুয়ে আছেন ওখানে।
বরফের নীচে চাপা থাকাতে প্রাচীন মৃত দেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় ওত্জি কে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ বিখ্যাত মিশরের পিরামিডের মমিগুলোর চেয়ে বহু বহু গুন ভাল অবস্থায়।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ৫০ কেজি ওজনের ২৫-৩৫ বৎসর বয়স্ক ওত্জির নামাকরন হল যেখানে তাঁকে পাওয়া গেছে সেই এলাকার Ötztal Alps, নামের সাথে তাল মিলিয়ে।
কেমন করে মারা গেছেন তা জানা গেছে। তাঁর মাথার পেছন দিকে কেউ খুব জোরে মেরেছিল। আর তার সাথে তার পেছন থেকে একটি পাথরের তীরের ফলা তাঁর পাঁজর ভেদ করে। তাতেই তিনি মারা যান।
তিনি কি যোদ্ধা ছিলেন, না এটা সাধারন খুনোখুনি সেটা বলা কঠিন। তবে মরার আগে তিনি চারজনকে আহত করেছেন। তাঁর হাতের অস্ত্রে চারজন আলাদা আলাদা মানুষের রক্তের অস্তিত্ব জানা গেছে।
পাহাড়ের বাসিন্দা ছিলেন না, তবু কেন তিনি ঐ তিন হাজার ফুট উঁচুতে এসেছিলেন তা জানা সম্ভব না। ছিলেন সমতল এলাকার বাসিন্দা। তবে ৩৫ বৎসর বয়সি ওত্জি দীর্ঘকাল কায়িক পরিশ্রমের দরুণই হয়তো বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুড়োটে ছিলেন। তাঁর হাড়ের ক্ষয় দেখে সেটা সহজেই বলা যায়।
তিনি পাহাড়ের লোক ছিলেন না তা জানা গেল তাঁর পেটে খাবারের কনা থেকে। সেই খাবারের শষ্য উৎপন্ন হয় সমতলেই। মারা যাবার পাঁচ ঘন্টা আগে তিনি হরিনের মাংস আর রুটি খেয়েছেন। ও হ্যাঁ তাঁর পেটের সমস্যা ছিল। পেটে কৃমি ছিল। বেশ বড় কৃমি।
খাবার খেয়ে বেশ প্রস্তুত হয়েই পাহাড়ের পথে রওনা দেন। কারন তাঁর পরনে ছিল অন্তর্বাস হিসাবে ভেড়ার চামড়া। সে ভেড়া আবার অন্য এলাকার। কাজেই এটা তাঁর কেনা পোষাকই ছিল বোঝা যায়। চামড়ার উপরে ছিল ঘাষের তৈরী পোষাকের আস্তরন। পায়ে জুতো। দড়ি দিয়ে বোনা জুতোর সামনের দিকে চামড়া ছিল। আর পায়ের তলার দিকে প্যাডিং-এর জন্য ছিল ঘাস। হাতে ছিল কাঠের হাতল সহ তামার কুড়াল, পাথরের ফলা সহ তীর ধনুক।
ওত্জির দেহের ডি.এন.এ পরীক্ষা করে ইতালীর সার্ডিনিয়া অঞ্চলে তাঁর বহু বংশধরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সেই মৃতদেহ সযত্নে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন। শুরু হয় নানা গবেষনা। সাধারন ব্যাপার তো নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটি দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অমুল্য সম্পদ।
যেহেতু তার জিন ম্যাপিং করা হয়ে গেছে তাই তার চেহারা কম্প্যুটারে তৈরী করতে বিজ্ঞানীদের খুব একটা কষ্ট হয় নি।
ওতজি কে পাওয়ার পঁচিশ বৎসর উপলক্ষে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা জানতে চান ওতজির কন্ঠস্বর কেমন ছিল।
তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে হলে তার স্বরনালী নতুন করে তৈরী করতেই হবে। কিন্তু সে জন্য দরকার ওতজির স্বরনালীর গঠন নিখুঁত ভাবে জানা। তা সেটা তো এক্স-রে করে বা সি.টি স্ক্যান করে করা যেতেই পারে। কিন্তু না ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কারন ওতজির একটা হাত তার গলার উপর ছিল। সেই হাতের জন্য কিছুতেই ঠিকঠাক ভাবে গলার ভেতরের স্বরনালীর সঠিক চেহারা ধরা যাচ্ছিল না।
অবশেষে অত্যাধুনিক ষন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে।
একবার তার স্বরনালীর গঠন জানা হয়ে গেলে বাকী কাজ তো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সহজ।
তাঁরা কৃত্রিম স্বরনালী বানিয়ে ফেললেন। সফট ওয়্যার তৈরী হয়ে গেল। এখন আমরা ওত্জির গলার স্বর শুনতে পারি।
যেহেতু আমরা কেউ জানি না ওতজি কি ভাষায় কথা বলতেন, তাই বিজ্ঞানীরা ওতজির গলায় আমাদের শোনালেন শুধু AEIOU  পাঁচ হাজার তিনশ বৎসর আগে মৃত ওতজি এখন আমাদের শোনাচ্ছেন AEIOU
সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য ইউটিউবের লিঙ্ক দেওয়া হল।
তথ্যসুত্রঃ-
Encyclopedia Britannica
https://www.youtube.com/watch?v=_FUH4xpYUMs

Ötzi
Reconstruction of Ötzi based on forensic analysis of the mummy; in the South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano, Italy.

ওত্জির

ওত্জির

1991, অষ্ট্রিয়া আর ইটালির সীমান্ত এলাকা আল্পস পর্বতে একদল পর্যটক খুঁজে পান ওত্জি কে। না জীবন্ত নয় তাঁর মৃতদেহ। বহুকাল আগেই ওত্জি মারা গেছেন এই বরফের দেশে। তিনি মারা গেছেন সাধারন পূর্বাব্দ ৩৩০০ নাগাদ। অর্থাৎ আজ থেকে ৫৩০০ বৎসর আগে থেকে বরফ চাপা ওত্জি শুয়ে আছেন ওখানে।
বরফের নীচে চাপা থাকাতে প্রাচীন মৃত দেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় ওত্জি কে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ বিখ্যাত মিশরের পিরামিডের মমিগুলোর চেয়ে বহু বহু গুন ভাল অবস্থায়।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ৫০ কেজি ওজনের ২৫-৩৫ বৎসর বয়স্ক ওত্জির নামাকরন হল যেখানে তাঁকে পাওয়া গেছে সেই এলাকার Ötztal Alps, নামের সাথে তাল মিলিয়ে।
কেমন করে মারা গেছেন তা জানা গেছে। তাঁর মাথার পেছন দিকে কেউ খুব জোরে মেরেছিল। আর তার সাথে তার পেছন থেকে একটি পাথরের তীরের ফলা তাঁর পাঁজর ভেদ করে। তাতেই তিনি মারা যান।
তিনি কি যোদ্ধা ছিলেন, না এটা সাধারন খুনোখুনি সেটা বলা কঠিন। তবে মরার আগে তিনি চারজনকে আহত করেছেন। তাঁর হাতের অস্ত্রে চারজন আলাদা আলাদা মানুষের রক্তের অস্তিত্ব জানা গেছে।
পাহাড়ের বাসিন্দা ছিলেন না, তবু কেন তিনি ঐ তিন হাজার ফুট উঁচুতে এসেছিলেন তা জানা সম্ভব না। ছিলেন সমতল এলাকার বাসিন্দা। তবে ৩৫ বৎসর বয়সি ওত্জি দীর্ঘকাল কায়িক পরিশ্রমের দরুণই হয়তো বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুড়োটে ছিলেন। তাঁর হাড়ের ক্ষয় দেখে সেটা সহজেই বলা যায়।
তিনি পাহাড়ের লোক ছিলেন না তা জানা গেল তাঁর পেটে খাবারের কনা থেকে। সেই খাবারের শষ্য উৎপন্ন হয় সমতলেই। মারা যাবার পাঁচ ঘন্টা আগে তিনি হরিনের মাংস আর রুটি খেয়েছেন। ও হ্যাঁ তাঁর পেটের সমস্যা ছিল। পেটে কৃমি ছিল। বেশ বড় কৃমি।
খাবার খেয়ে বেশ প্রস্তুত হয়েই পাহাড়ের পথে রওনা দেন। কারন তাঁর পরনে ছিল অন্তর্বাস হিসাবে ভেড়ার চামড়া। সে ভেড়া আবার অন্য এলাকার। কাজেই এটা তাঁর কেনা পোষাকই ছিল বোঝা যায়। চামড়ার উপরে ছিল ঘাষের তৈরী পোষাকের আস্তরন। পায়ে জুতো। দড়ি দিয়ে বোনা জুতোর সামনের দিকে চামড়া ছিল। আর পায়ের তলার দিকে প্যাডিং-এর জন্য ছিল ঘাস। হাতে ছিল কাঠের হাতল সহ তামার কুড়াল, পাথরের ফলা সহ তীর ধনুক।
ওত্জির দেহের ডি.এন.এ পরীক্ষা করে ইতালীর সার্ডিনিয়া অঞ্চলে তাঁর বহু বংশধরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সেই মৃতদেহ সযত্নে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন। শুরু হয় নানা গবেষনা। সাধারন ব্যাপার তো নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটি দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অমুল্য সম্পদ।
যেহেতু তার জিন ম্যাপিং করা হয়ে গেছে তাই তার চেহারা কম্প্যুটারে তৈরী করতে বিজ্ঞানীদের খুব একটা কষ্ট হয় নি।
ওতজি কে পাওয়ার পঁচিশ বৎসর উপলক্ষে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা জানতে চান ওতজির কন্ঠস্বর কেমন ছিল।
তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে হলে তার স্বরনালী নতুন করে তৈরী করতেই হবে। কিন্তু সে জন্য দরকার ওতজির স্বরনালীর গঠন নিখুঁত ভাবে জানা। তা সেটা তো এক্স-রে করে বা সি.টি স্ক্যান করে করা যেতেই পারে। কিন্তু না ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কারন ওতজির একটা হাত তার গলার উপর ছিল। সেই হাতের জন্য কিছুতেই ঠিকঠাক ভাবে গলার ভেতরের স্বরনালীর সঠিক চেহারা ধরা যাচ্ছিল না।
অবশেষে অত্যাধুনিক ষন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে।
একবার তার স্বরনালীর গঠন জানা হয়ে গেলে বাকী কাজ তো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সহজ।
তাঁরা কৃত্রিম স্বরনালী বানিয়ে ফেললেন। সফট ওয়্যার তৈরী হয়ে গেল। এখন আমরা ওত্জির গলার স্বর শুনতে পারি।
যেহেতু আমরা কেউ জানি না ওতজি কি ভাষায় কথা বলতেন, তাই বিজ্ঞানীরা ওতজির গলায় আমাদের শোনালেন শুধু AEIOU  পাঁচ হাজার তিনশ বৎসর আগে মৃত ওতজি এখন আমাদের শোনাচ্ছেন AEIOU
সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য ইউটিউবের লিঙ্ক দেওয়া হল।
তথ্যসুত্রঃ-
Encyclopedia Britannica
https://www.youtube.com/watch?v=_FUH4xpYUMs

Ötzi
Reconstruction of Ötzi based on forensic analysis of the mummy; in the South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano, Italy.

Posted at June 07, 2019 |  by Arya ঋষি

0 Comments:


প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন তাই তিনি আয়েশা (রা)কে শিশু অবস্থায় বিয়ে করে ? ৬ বছরের বিয়ে অমানবিক ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ "নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন " - এই দাবির পক্ষে বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে সনদ সহ পারলে প্রমান করুন তৎকালীন ইতিহাস থেকে । শিশুকামি বা পিডোফিলিয়া হল মানসিক রোগ , তথা যারা শিশুদের প্রতি যৌন তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে বুঝায় । প্রশ্নকর্তাকে প্রমান করতে বলেছি যে "নবী মুহাম্মদ (সা) আয়েশা (রা) প্রতি যৌন আসক্তি ভুগছিল" তৎকালীন বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে প্রমান করুন ? এখন আমরা বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে জানতে পারি রাসুল (সা) আয়েশা(রা) কে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের সুখের সংসার ছিল সুতরাং এর থেকে প্রমান হয় যে রাসুলের প্রতি প্রশ্ন কর্তার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার ।

রাসুল (সা) নাকি অল্প বয়সে বিয়ে করে অমানবিক কাজ করেছেন - নাস্তিক ধর্মের একটি কমন ফতোয়া হল "সম্মতি থাকলে" সব ! করা যাবে এখানে কেউই ফ্যাক্ট না ! এখানে তাদের আপত্তি নাই অথচ যত চুলকানি পবিত্র বিয়ে নিয়ে । নিজের পরিবার সন্তানের কল্যাণ চেয়ে, কোন ভাল খাটি চরিত্রবান পুরুষের কাছে বিয়ে দিলে এখানে আপত্তি আসার কোন সম্পর্ক নাই যদি সেই সংসার, সুখের হয় ।

দুনিয়ার কোন দেশেই মেয়েদের বিয়ের বয়স পারফেক্ট নির্ধারণ করে দেয়া হয় নাই । একেক দেশে একেক রকম বিয়ের বয়স ।
* যেমনঃ parental kidnapping in america: an historical and cultural analysis- by maureen dabbagh, page 128 এ উল্লেখ আছেঃ

উনবিনশ শতাব্দীতে বেশিরভাগ অ্যামেরিকান রাজ্যে বিয়ের বয়সের সর্ব নিন্ম বয়স ছিল ১০ বছর এবং ডেলাওয়ারে বিয়ের বয়স ছিল মেয়েদের ৭ বছর ।

* নিউইয়র্কে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত বিয়ের বয়স ছিল ১০ বছর । ১৮৮৫ সালের পর থেকে দেশের আইন "সম্মতি আইন" পরিবর্তন হয় ১৮৮৯ সালে । Newyork এ ১৬ বছর এবং ১৮৯৫ সালে হয় ১৮ বয়স । এই পরিবর্তনের আগে সম্মতির বয়স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ স্থানে ১০ বা ১২ বছর ছিল বিয়ের বয়স ।

রেফারেন্স দেখুনঃ prostitution and sex work - by melissa hope ditmore, page: 21 {introduction}
অ্যামেরিকার সংবিধান তৈরিতে যেসব বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে তার মদ্ধে Spirit of laws বইটি অন্যতম । এই বইয়ের ১৬ খণ্ডে ২৬৪ পৃষ্ঠায় ফ্রেঞ্চ দার্শনিক Montesquew উল্লেখ করেন উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েরা ৮,৯,১০ বছর বয়সেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় আর ২০ বছর বয়সে তাদের বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয় ।

আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানো তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসার যখন ৮ বছর হয় তখন বিয়ে করেন । শেখ ফজিলাতুন্নেসার জন্ম ১৯৩০ সালে আর তার বিয়ে ১৯৩৮ সালে । দেখুনঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী, by মুজিবুর রহমান ।

আম্মাজান আয়েশা (রা) নিজেই (তৎকালীন আরবের) মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ তথা উল্লেখ করে দিয়েছিলেন । তিনি বলেন মেয়ে যখন ৯ বছরে উপনীত হয়ে যায় তখন সে মহিলা হয়ে যায় । (তিরমিজি, কিতাবুন নিকাহ) । তাই সে সময়কার আরব মেয়েদের জন্য যে ৯ বছরে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ছিল তার প্রমান স্বয়ং আয়েশা (রা) নিজেই । অল্প বয়সে বিয়ে তখন খুবি নরমাল ব্যাপার ছিল ।

অল্প বয়সে বিয়ে কোন ভাবেই অমানবিক না ।
* হযরত আয়েশা (রা) এর সম্মতিঃ

+ ই,ফা। বুখারি ৮ নং খণ্ড, হাদিস নং: ৪৭০৭- আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন দুবার করে আমাকে সপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে । এক লোক রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল । আমাকে দেখে বলল এ হল তোমার স্ত্রী । তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমিই । তখন আয়েশা (রা) বলেন এ সপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তবে তিনি তা বাস্তবে পরিনত করবেন ।

+ হাকিম, সিলসিলা আহাদিস সহিফা লি আলবানি, হাদিস নং ১১৪২ এবং পিস পাবলিকেশন এর রাসুল (সা) এর স্ত্রীগন কেমন ছিলেন, পৃষ্ঠাঃ ৩৬ । হাদিস সহিহ । আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন হে আয়েশা তুমি কি এতে খুশি নও যে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে ? আয়েশা (রা) বলেন কেন নয় ? তখন রাসুল সা বললেন তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী ।

উদাহরনঃ ধরেন কোন এক বিদ্বেষীরা এক দম্পতির সুখের সংসার নিয়ে আদালতে মামলা করল যে এই মেয়েকে তার স্বামী অল্প বয়সে বিয়ে করেছে এবং মেয়ের পরিবার রাজি ছিল এতে আমাদের সমস্যা ! তো বিচারপতি এই অল্প বয়স্কা মেয়েকে কোর্টে জিজ্ঞাসা করল , তোমার পরিবার তোমাকে ৬ বছরে বিয়ে দিয়েছিল তোমার কি আপত্তি আছে ? তুমি কি তোমার স্বামীর সাথে অসুখী ? মেয়ে জবাব দিলঃ জজসাহেব আমার স্বামী হলেন সত্যবাদি এবং সব থেকে খাটি চরিত্রবান মানুষ তাই আমার এই বিয়ে নিয়ে কোন আপত্তি নাই বিন্দুমাত্র এবং আমার স্বামীর সাথে আমি অনেক আনন্দেই আছি আলহামদুলিল্লাহ । আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দিয়ে ভাল কাজ করেছেন । বিচারপতি রায় দিলেনঃ তুমি তোমার সংসার নিয়ে অনেক সুখেই আছ তাই এখানে অন্যদের আপত্তি গ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক । আশা করি বুঝতে পারছেন ।

আরও মজার বিষয় হচ্ছে নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়েও কোন আপত্তিকর কিছুই নয় । কেন জানেন ? কারন নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডেও আসলে এটি কোন অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না কারন নাস্তিক ধর্মের দেবদ্যূত ড হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ । আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে,এটুকু । নাস্তিক ধর্মের এই ফতোয়ার আলোকে কি প্রমান হয়েছে যে নবী (সা) জোর করে আয়েশা (রা) কে বিয়ে করেছেন ? উত্তর হচ্ছে না । এই বিয়ের ফলে কি কেউ বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং যেহেতু এই বিয়ের ফলে কেউই কোন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি তাই নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডে এই বিয়ে আসলে কোন আপত্তিকর অথবা অভিযোগ হিসেবে গণ্য করার কিছুই নেই এবং নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়ে সম্পূর্ণ জায়েজ প্রমাণিত ।   

প্রশ্নঃ 

* আয়েশা (রা) কি এই বিয়েতে অখুশি ছিলেন ?

* তিনি কি তাঁর স্বামীকে ভালবাসতেন না ?

* অল্প বয়সে বিয়ে করার দরুন তাঁর কি বিন্দুমাত্র কোন ক্ষতি হয়েছে ?

* ফলাফল কি ভাল নাকি খারাপ হয়েছিল এই বিয়েতে ?

* কেউ যদি তাঁর সংসার এবং স্বামী নিয়ে খুশি এবং সুখি হয় এতে আপনার কি অধিকার আছে এখানে আপত্তি করার ?

নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন ইসলামিক বিশ্লেষণঃ


প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন তাই তিনি আয়েশা (রা)কে শিশু অবস্থায় বিয়ে করে ? ৬ বছরের বিয়ে অমানবিক ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ "নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন " - এই দাবির পক্ষে বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে সনদ সহ পারলে প্রমান করুন তৎকালীন ইতিহাস থেকে । শিশুকামি বা পিডোফিলিয়া হল মানসিক রোগ , তথা যারা শিশুদের প্রতি যৌন তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে বুঝায় । প্রশ্নকর্তাকে প্রমান করতে বলেছি যে "নবী মুহাম্মদ (সা) আয়েশা (রা) প্রতি যৌন আসক্তি ভুগছিল" তৎকালীন বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে প্রমান করুন ? এখন আমরা বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে জানতে পারি রাসুল (সা) আয়েশা(রা) কে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের সুখের সংসার ছিল সুতরাং এর থেকে প্রমান হয় যে রাসুলের প্রতি প্রশ্ন কর্তার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার ।

রাসুল (সা) নাকি অল্প বয়সে বিয়ে করে অমানবিক কাজ করেছেন - নাস্তিক ধর্মের একটি কমন ফতোয়া হল "সম্মতি থাকলে" সব ! করা যাবে এখানে কেউই ফ্যাক্ট না ! এখানে তাদের আপত্তি নাই অথচ যত চুলকানি পবিত্র বিয়ে নিয়ে । নিজের পরিবার সন্তানের কল্যাণ চেয়ে, কোন ভাল খাটি চরিত্রবান পুরুষের কাছে বিয়ে দিলে এখানে আপত্তি আসার কোন সম্পর্ক নাই যদি সেই সংসার, সুখের হয় ।

দুনিয়ার কোন দেশেই মেয়েদের বিয়ের বয়স পারফেক্ট নির্ধারণ করে দেয়া হয় নাই । একেক দেশে একেক রকম বিয়ের বয়স ।
* যেমনঃ parental kidnapping in america: an historical and cultural analysis- by maureen dabbagh, page 128 এ উল্লেখ আছেঃ

উনবিনশ শতাব্দীতে বেশিরভাগ অ্যামেরিকান রাজ্যে বিয়ের বয়সের সর্ব নিন্ম বয়স ছিল ১০ বছর এবং ডেলাওয়ারে বিয়ের বয়স ছিল মেয়েদের ৭ বছর ।

* নিউইয়র্কে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত বিয়ের বয়স ছিল ১০ বছর । ১৮৮৫ সালের পর থেকে দেশের আইন "সম্মতি আইন" পরিবর্তন হয় ১৮৮৯ সালে । Newyork এ ১৬ বছর এবং ১৮৯৫ সালে হয় ১৮ বয়স । এই পরিবর্তনের আগে সম্মতির বয়স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ স্থানে ১০ বা ১২ বছর ছিল বিয়ের বয়স ।

রেফারেন্স দেখুনঃ prostitution and sex work - by melissa hope ditmore, page: 21 {introduction}
অ্যামেরিকার সংবিধান তৈরিতে যেসব বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে তার মদ্ধে Spirit of laws বইটি অন্যতম । এই বইয়ের ১৬ খণ্ডে ২৬৪ পৃষ্ঠায় ফ্রেঞ্চ দার্শনিক Montesquew উল্লেখ করেন উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েরা ৮,৯,১০ বছর বয়সেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় আর ২০ বছর বয়সে তাদের বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয় ।

আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানো তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসার যখন ৮ বছর হয় তখন বিয়ে করেন । শেখ ফজিলাতুন্নেসার জন্ম ১৯৩০ সালে আর তার বিয়ে ১৯৩৮ সালে । দেখুনঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী, by মুজিবুর রহমান ।

আম্মাজান আয়েশা (রা) নিজেই (তৎকালীন আরবের) মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ তথা উল্লেখ করে দিয়েছিলেন । তিনি বলেন মেয়ে যখন ৯ বছরে উপনীত হয়ে যায় তখন সে মহিলা হয়ে যায় । (তিরমিজি, কিতাবুন নিকাহ) । তাই সে সময়কার আরব মেয়েদের জন্য যে ৯ বছরে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ছিল তার প্রমান স্বয়ং আয়েশা (রা) নিজেই । অল্প বয়সে বিয়ে তখন খুবি নরমাল ব্যাপার ছিল ।

অল্প বয়সে বিয়ে কোন ভাবেই অমানবিক না ।
* হযরত আয়েশা (রা) এর সম্মতিঃ

+ ই,ফা। বুখারি ৮ নং খণ্ড, হাদিস নং: ৪৭০৭- আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন দুবার করে আমাকে সপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে । এক লোক রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল । আমাকে দেখে বলল এ হল তোমার স্ত্রী । তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমিই । তখন আয়েশা (রা) বলেন এ সপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তবে তিনি তা বাস্তবে পরিনত করবেন ।

+ হাকিম, সিলসিলা আহাদিস সহিফা লি আলবানি, হাদিস নং ১১৪২ এবং পিস পাবলিকেশন এর রাসুল (সা) এর স্ত্রীগন কেমন ছিলেন, পৃষ্ঠাঃ ৩৬ । হাদিস সহিহ । আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন হে আয়েশা তুমি কি এতে খুশি নও যে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে ? আয়েশা (রা) বলেন কেন নয় ? তখন রাসুল সা বললেন তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী ।

উদাহরনঃ ধরেন কোন এক বিদ্বেষীরা এক দম্পতির সুখের সংসার নিয়ে আদালতে মামলা করল যে এই মেয়েকে তার স্বামী অল্প বয়সে বিয়ে করেছে এবং মেয়ের পরিবার রাজি ছিল এতে আমাদের সমস্যা ! তো বিচারপতি এই অল্প বয়স্কা মেয়েকে কোর্টে জিজ্ঞাসা করল , তোমার পরিবার তোমাকে ৬ বছরে বিয়ে দিয়েছিল তোমার কি আপত্তি আছে ? তুমি কি তোমার স্বামীর সাথে অসুখী ? মেয়ে জবাব দিলঃ জজসাহেব আমার স্বামী হলেন সত্যবাদি এবং সব থেকে খাটি চরিত্রবান মানুষ তাই আমার এই বিয়ে নিয়ে কোন আপত্তি নাই বিন্দুমাত্র এবং আমার স্বামীর সাথে আমি অনেক আনন্দেই আছি আলহামদুলিল্লাহ । আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দিয়ে ভাল কাজ করেছেন । বিচারপতি রায় দিলেনঃ তুমি তোমার সংসার নিয়ে অনেক সুখেই আছ তাই এখানে অন্যদের আপত্তি গ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক । আশা করি বুঝতে পারছেন ।

আরও মজার বিষয় হচ্ছে নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়েও কোন আপত্তিকর কিছুই নয় । কেন জানেন ? কারন নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডেও আসলে এটি কোন অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না কারন নাস্তিক ধর্মের দেবদ্যূত ড হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ । আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে,এটুকু । নাস্তিক ধর্মের এই ফতোয়ার আলোকে কি প্রমান হয়েছে যে নবী (সা) জোর করে আয়েশা (রা) কে বিয়ে করেছেন ? উত্তর হচ্ছে না । এই বিয়ের ফলে কি কেউ বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং যেহেতু এই বিয়ের ফলে কেউই কোন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি তাই নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডে এই বিয়ে আসলে কোন আপত্তিকর অথবা অভিযোগ হিসেবে গণ্য করার কিছুই নেই এবং নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়ে সম্পূর্ণ জায়েজ প্রমাণিত ।   

প্রশ্নঃ 

* আয়েশা (রা) কি এই বিয়েতে অখুশি ছিলেন ?

* তিনি কি তাঁর স্বামীকে ভালবাসতেন না ?

* অল্প বয়সে বিয়ে করার দরুন তাঁর কি বিন্দুমাত্র কোন ক্ষতি হয়েছে ?

* ফলাফল কি ভাল নাকি খারাপ হয়েছিল এই বিয়েতে ?

* কেউ যদি তাঁর সংসার এবং স্বামী নিয়ে খুশি এবং সুখি হয় এতে আপনার কি অধিকার আছে এখানে আপত্তি করার ?

Posted at June 04, 2019 |  by Arya ঋষি

0 Comments:


—॰ ইফকের ঘটনা ॰—

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উরওয়া ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব, আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন অপবাদ রটনাকারীগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল রাবী যুহরী রহ. বলেন, তারা প্রত্যেকেই হাদীসটির অংশবিশেষ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি স্মরণ রাখা ও সঠিকভাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ একে অন্যের চেয়ে অধিকতর অগ্রগামী ও নির্ভরযোগ্য। আয়েশা রা. সম্পর্কে তারা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন আমি তাদের প্রত্যেকের কথাই যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছি। তাদের একজনের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষ অপরের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষের সত্যতা প্রমাণ করে। যদিও তাদের একজন অন্যজনের চেয়ে অধিক স্মৃতিশক্তির অধিকারী। রাবীগণ বলেন:

আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (নামের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম আসত তাকেই তিনি সাথে করে সফরে বের হতেন। আয়েশা রা. বলেন, এমনি এক যুদ্ধে (মুরায়সীর যুদ্ধ) তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন, এতে আমার নাম বেরিয়ে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে বের হলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমাকে হাওদাজ সহ সাওয়ারীতে উটানো ও নামানো হত। এমনি করে আমরা চলতে থাকলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ যুদ্ধ থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি (বাড়ির দিকে) ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণার পর আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য) পায়ে হেটে সেনাছাউনী অতিক্রম করে (একটু সামনে) গেলাম। এরপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, (ইয়ামানের অন্তর্গত) যিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরী করা আমার গলার হারটি ছিড়ে কোথায় পড়ে গিয়েছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি তালাশ করতে আরম্ভ করলাম। হার তালাশ করতে করতে আমার আসতে বিলম্ব হয়ে যায়।

আয়েশা রা. বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আরোহণ করতাম। তারা মনে করেছিলেন যে, আমি এর মধ্যে আছি, কারণ খাদ্যভাবে মহিলাগণ তখন খুবই হালকা পাতলা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের দেহ মাংসল ছিলনা। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তখন তা হালকা হওয়ার বিষয়টিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল রওয়ানা হওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজস্ব স্থানে ফিরে এসে দেখি তাদের (সৈন্যদল) কোন আহবায়ক এবং কোন উত্তরদাতা তথায় নেই। ( নিরুপায় হয়ে) তখন আমি পূর্বে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবছিলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেলে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে আসলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল রা. (যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র কুড়িয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন) সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিলেন। তিনি প্রত্যুষে আমার অবস্থানস্থলের কাছে পৌঁছে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকানোর পর আমাকে চিলে ফেললেন। তিনি আমাকে দেখেছিলে পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ পড়লে আমি তা শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহর কসম, আমি কোন কথা বলিনি এবং তাঁর থেকে ইন্না লিল্লাহ……..পাঠ ছাড়া আর কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সাওয়ারী থেকে অবতরণ করলেন এবং সাওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে আরোহণ করলাম। পরে তিনি আমাকেসহ সাওয়ারীকে টেনে আগে আগে চলতে লাগলেন, পরিশেষে ঠিক দ্বিপ্রহরে প্রচণ্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সাথে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করছিলেন।

আয়েশা রা. বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করে) ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের মধ্যে এ অপবাদ আরোপের ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল সে হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে উবায় ইবনে সুলুল। রাবী উরওয়া রা. বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার সামনে অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত, খুব ভালভাবে শ্রবণ করত এবং শোনা কথার ভিত্তিতেই বিষয়টিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত।

উরওয়া রা. আরো বর্ণনা করেছন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হাসসান ইবনে সাবিত, মিসতাহ ইবনে উসাসা এবং হামনা বিনতে জাহাশ রা. ব্যতীত আরো কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা গুটিকয়েক ব্যক্তির একটি দল ছিল, এতটুক ব্যতীত তাদের সম্পর্কে আমার আর কিছু জানা নেই। যেমন (আল কুরআনে) মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বিন সুলুল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী উরওয়া রা. বলেন, আয়েশা রা.-এর এ ব্যাপারে হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, হাসসান ইবনে সাবিত রা. তো ঐ ব্যক্তি যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন, আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত।

আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমরা মদীনায় আসলাম। মদীনায় আগমন করার পর এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকরীদের কথা নিয়ে লোকদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে লাগল। কিন্তু এসবের কিছুই আমি জানি না। তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর পূর্বে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেরূপ স্নেহ-ভালবাসা লাভ করতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল ‘তুমি কেমন আছ’ জিজ্ঞাসা করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে চরম সন্দেহের উদ্রেক করে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদ সম্বন্ধে আমি কিছুই জানতাম না। উম্মে মিসতাহ রা. একদা আমার সাথে পায়খানার দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এ ছিল আমাদের ঘরের পার্শ্বে পায়খানা তৈরী করার পূর্বের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবীয় লোকদের অবস্থার মত ছিল। তাদের মত আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোঁপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি বাড়ির পার্শ্বে পায়খান তৈরী করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। আয়েশা রা. বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ “যিনি ছিলেন আবু রূহম ইবনে মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফের কন্যা, যার মা সাখার ইবনে আমির-এর কন্যা ও আবু বকর রা. সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনে উসাসা ইবনে আব্বাদ ইবনে মুত্তালিব যার” একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জাড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্পর্কে কি বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি। আয়েশা রা. বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে আমার সম্পর্কে কি বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকরীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে জানালেন। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরানো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছ? আয়েশা রা. বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন? আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমকে অনুমতি দিলেন। তখন (বাড়িতে গিয়ে) আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কি আলোচনা করছে? তিনি বললেন, বেটী ও বিষয়টিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহর কসম, সতীন আছে এমন স্বামী সোহাগিনী সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়ে থাকে।

আয়েশা রা. বলেন, আমি বিস্ময়ের সাথে বললাম, সুবহানাল্লাহ । লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাতভর আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার অশ্রুও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। এরপর ভোরবেলাও আমি কাঁদছিলাম। তিনি আরো বলেন যে, এ সময ওহী নাযিল হতে বিলম্ব হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি সম্পর্কে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে আলী ইবনে আবু তালিব এবং উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে ডেকে পাঠালেন। আয়েশা রা. বলেন, উসামা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি (নবীজীর) ভালবাসার কারণে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাদের সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আর আলী রা. বললেন, হে আল্লাহ রাসূল, আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তাকে (আয়েশা) ব্যতীত আরো বহু মহিলা রয়েছে। তবে আপনি এ ব্যাপারে দাসী (বারীরা রা.) কে জিজ্ঞাসা করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। আয়েশা রা. বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরা রা.-কে ডেকে বললেন, হে বারীরা তুমি তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহমূলক আচরণ দেখেছ কি? বারীরা রা. তাকে বললেন, সেই আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর ব্যাপারে শুধু এতটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা যুবতী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বকরী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে।

আয়েশা রা .বলেন, (এ কথা শুনে) সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়, যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ ও বদনাম রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্ত করবে? আল্লাহর কসম, আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। আর তাঁরা (অপবাদ রটনাকারীরা) এমন এক ব্যক্তির (সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল) নাম উল্লেখ করছে যার সম্বন্ধেও আমি ভাল ছাড়া কিছু জানি না। সে তো আমর সাথেই আমার ঘরে যায়। আয়েশা রা. বলেন, (এ কথা শুনে) বনী আবদুল আশহাল গোত্রের সাদ (ইবনে মুআয) রা. উঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তা হলে তার শিরচ্ছেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই পালন করব। আয়েশা রা. বলেন, এ সময় হাসসান ইবনে সাবিত রা.-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের সর্দার সাঈদ ইবনে উবাদা রা. দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করলেন। আয়েশা রা. বলেন, এ ঘটনার পূর্বে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক ছিলেন। কিন্তু (এ সময়) গোত্রীয় অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে তিনি সাদ ইবনে মুআয রা.-কে বললেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহর কসম, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। যদিসে তোমার গোত্রের লোক হত তাহলে তুমি তার হত্যা হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সাদ ইবনে মুআয রা.-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. সাদ ইবনে ওবায়দা রা.-কে বললেন, বরং তুমি মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহর কসম, আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ অবলম্বন করে কথাবার্তা বলছ।

আয়েশা রা. বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে উঠে। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প পর্যন্ত করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামিয়ে শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। অশ্রুঝরা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও আমার আসেনি। তিনি বলেন, আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে বসা ছিলেন। এমনি করে একদিন দুই রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিই। এর মাঝে আমার কোন ঘুম আসেনি। বরং অবারিত ধারায় আমার চোখ থেকে অশ্রুপাত হতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন, কান্নার ফলে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সাথে কাঁদতে আরম্ভ করল। তিনি বলেন, আমরা ক্রন্দনরত ছিলাম ঠিক এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার কাছে এসে এভাবে তিনি আর কখনো বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার বিষয়ে তাঁর নিকট কোন ওহী আসেনি।

আয়েশা রা. বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বললেন, যা হোক, আয়েশা তোমার সম্বন্ধে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে মুক্ত হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবূল করেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা বলে শেষ করলে আমার অশ্রুপাত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক ফোটা অশ্রুও আমি আর অনুভব করলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলছেন আমার পক্ষ হতে আপনি তার জবাব দিন। আমার আব্বা বললেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানিনা। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আপনি তার জবাব দিন। আম্মা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানি না। তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশি পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে সুদৃঢ় হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র এবং আমি নিষ্কলুষ তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যা সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম, আমি ও আপনারা যে অবস্থায় শিকার হয়েছি এর জন্য (নবী) ইউসুফ আ.-এর পিতার কথা উদাহরণ ব্যতীত আমি কোন উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন: “সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল” এরপর আমি মুখ ফিরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তায়ালা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। (একথার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল) তবে আল্লাহর কসম,আমি কখনো ধারণা করিনি যে, আমার ব্যাপারে আল্লাহর ওহী নাযিল করবেন যা পঠিত হবে। আমার ব্যাপারে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতখানি যোগ্য মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অধিক অযোগ্য বলে মনে করতাম। তবে আমি আশা করাতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন স্বপ্ন দেখানো হবে যার দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো তাঁর বসার জায়গা ছাড়েননি এবং ঘরের লোকদের থেকেও কেউ ঘর থেকে বাইরে যাননি। এমতাবস্থায় তাঁর উপর ওহী নাযিল হতে শুরু হল। ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা তাঁর হল। এমনকি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তাঁর দেহ থেকে মোতির দানার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভাবের কারণে, যা তাঁর প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি হাসিমুখে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল, হে আয়েশা ! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জাহির করে দিয়েছেন। আয়েশা রা. বলেন, এ কথা শুনে আমার আম্মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি এখন তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত আমি কারো প্রশংসা করব না। আয়েশা রা বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে) যে দশটি আয়াত নাযিল করেছেন, তা হল এই : “যারা এ অপবাদ রটনা করেছে (তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার জন্য আছ কঠিন শাস্তি। এ কথা শোনার পর মুমিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেনি এবং বলেনি, এটা তো সুষ্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। যখন তোমরা মুখে মুখে এ মিথ্যা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং একে তোমরা তুচ্ছ ব্যাপার বলে ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল খুবই গুরুতর ব্যাপার। আল্লাহ পবিত্র, মহান! এ তো এক গুরুতর অপনাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা মুনিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না। আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (২৪ : ১১-২০) এরপর আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ এ আয়াতগুলো নাযিল করলেন।

আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা. মিসতাহ ইবনে উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করতেন। কিন্তু আয়েশা রা. সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক কোন সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলে, তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (২৪: ২২) (এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর) আবু বকর সিদ্দীক রা. বলে উঠলেন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ রা.-এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুন: দিতে শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তাকে এ অর্থ দেওয়া আর কখনো বন্ধ করব না। আয়েশা রা .বললেন, আমার এ বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-কেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি যায়নাব রা. -কে বলেছিলেন, তুমি আয়েশা রা. সম্পর্কে কি জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার চোখ ও কানকে সংরক্ষণ করেছি। আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আয়েশ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাকে আল্লাহ-ভীতির ফলে রক্ষা করেছেন। আয়েশা রা. বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা রা. তাঁর পক্ষ অবলম্বন করে অপবাদ রটনাকারীদের মত অপবাদ রটনা করে বেড়াচ্ছিলেন। ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব রহ. বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা সম্পর্কে আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হল এই : উরওয়ার রা. বলেন, আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ কসম, যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি কোন স্ত্রীলোকের কাপড় খু্লেও কোনদিন দেখিনি। আয়েশা রা. বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শাহাদত লাভ করেছিলেন।

(সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬)

উৎস: আরবী বাংলা হাদীস বিশ্বকোষ

ইফকের ঘটনা


—॰ ইফকের ঘটনা ॰—

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উরওয়া ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব, আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন অপবাদ রটনাকারীগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল রাবী যুহরী রহ. বলেন, তারা প্রত্যেকেই হাদীসটির অংশবিশেষ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি স্মরণ রাখা ও সঠিকভাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ একে অন্যের চেয়ে অধিকতর অগ্রগামী ও নির্ভরযোগ্য। আয়েশা রা. সম্পর্কে তারা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন আমি তাদের প্রত্যেকের কথাই যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছি। তাদের একজনের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষ অপরের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষের সত্যতা প্রমাণ করে। যদিও তাদের একজন অন্যজনের চেয়ে অধিক স্মৃতিশক্তির অধিকারী। রাবীগণ বলেন:

আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (নামের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম আসত তাকেই তিনি সাথে করে সফরে বের হতেন। আয়েশা রা. বলেন, এমনি এক যুদ্ধে (মুরায়সীর যুদ্ধ) তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন, এতে আমার নাম বেরিয়ে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে বের হলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমাকে হাওদাজ সহ সাওয়ারীতে উটানো ও নামানো হত। এমনি করে আমরা চলতে থাকলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ যুদ্ধ থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি (বাড়ির দিকে) ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণার পর আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য) পায়ে হেটে সেনাছাউনী অতিক্রম করে (একটু সামনে) গেলাম। এরপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, (ইয়ামানের অন্তর্গত) যিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরী করা আমার গলার হারটি ছিড়ে কোথায় পড়ে গিয়েছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি তালাশ করতে আরম্ভ করলাম। হার তালাশ করতে করতে আমার আসতে বিলম্ব হয়ে যায়।

আয়েশা রা. বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আরোহণ করতাম। তারা মনে করেছিলেন যে, আমি এর মধ্যে আছি, কারণ খাদ্যভাবে মহিলাগণ তখন খুবই হালকা পাতলা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের দেহ মাংসল ছিলনা। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তখন তা হালকা হওয়ার বিষয়টিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল রওয়ানা হওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজস্ব স্থানে ফিরে এসে দেখি তাদের (সৈন্যদল) কোন আহবায়ক এবং কোন উত্তরদাতা তথায় নেই। ( নিরুপায় হয়ে) তখন আমি পূর্বে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবছিলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেলে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে আসলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল রা. (যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র কুড়িয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন) সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিলেন। তিনি প্রত্যুষে আমার অবস্থানস্থলের কাছে পৌঁছে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকানোর পর আমাকে চিলে ফেললেন। তিনি আমাকে দেখেছিলে পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ পড়লে আমি তা শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহর কসম, আমি কোন কথা বলিনি এবং তাঁর থেকে ইন্না লিল্লাহ……..পাঠ ছাড়া আর কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সাওয়ারী থেকে অবতরণ করলেন এবং সাওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে আরোহণ করলাম। পরে তিনি আমাকেসহ সাওয়ারীকে টেনে আগে আগে চলতে লাগলেন, পরিশেষে ঠিক দ্বিপ্রহরে প্রচণ্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সাথে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করছিলেন।

আয়েশা রা. বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করে) ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের মধ্যে এ অপবাদ আরোপের ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল সে হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে উবায় ইবনে সুলুল। রাবী উরওয়া রা. বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার সামনে অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত, খুব ভালভাবে শ্রবণ করত এবং শোনা কথার ভিত্তিতেই বিষয়টিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত।

উরওয়া রা. আরো বর্ণনা করেছন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হাসসান ইবনে সাবিত, মিসতাহ ইবনে উসাসা এবং হামনা বিনতে জাহাশ রা. ব্যতীত আরো কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা গুটিকয়েক ব্যক্তির একটি দল ছিল, এতটুক ব্যতীত তাদের সম্পর্কে আমার আর কিছু জানা নেই। যেমন (আল কুরআনে) মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বিন সুলুল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী উরওয়া রা. বলেন, আয়েশা রা.-এর এ ব্যাপারে হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, হাসসান ইবনে সাবিত রা. তো ঐ ব্যক্তি যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন, আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত।

আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমরা মদীনায় আসলাম। মদীনায় আগমন করার পর এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকরীদের কথা নিয়ে লোকদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে লাগল। কিন্তু এসবের কিছুই আমি জানি না। তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর পূর্বে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেরূপ স্নেহ-ভালবাসা লাভ করতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল ‘তুমি কেমন আছ’ জিজ্ঞাসা করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে চরম সন্দেহের উদ্রেক করে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদ সম্বন্ধে আমি কিছুই জানতাম না। উম্মে মিসতাহ রা. একদা আমার সাথে পায়খানার দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এ ছিল আমাদের ঘরের পার্শ্বে পায়খানা তৈরী করার পূর্বের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবীয় লোকদের অবস্থার মত ছিল। তাদের মত আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোঁপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি বাড়ির পার্শ্বে পায়খান তৈরী করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। আয়েশা রা. বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ “যিনি ছিলেন আবু রূহম ইবনে মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফের কন্যা, যার মা সাখার ইবনে আমির-এর কন্যা ও আবু বকর রা. সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনে উসাসা ইবনে আব্বাদ ইবনে মুত্তালিব যার” একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জাড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্পর্কে কি বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি। আয়েশা রা. বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে আমার সম্পর্কে কি বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকরীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে জানালেন। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরানো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছ? আয়েশা রা. বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন? আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমকে অনুমতি দিলেন। তখন (বাড়িতে গিয়ে) আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কি আলোচনা করছে? তিনি বললেন, বেটী ও বিষয়টিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহর কসম, সতীন আছে এমন স্বামী সোহাগিনী সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়ে থাকে।

আয়েশা রা. বলেন, আমি বিস্ময়ের সাথে বললাম, সুবহানাল্লাহ । লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাতভর আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার অশ্রুও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। এরপর ভোরবেলাও আমি কাঁদছিলাম। তিনি আরো বলেন যে, এ সময ওহী নাযিল হতে বিলম্ব হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি সম্পর্কে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে আলী ইবনে আবু তালিব এবং উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে ডেকে পাঠালেন। আয়েশা রা. বলেন, উসামা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি (নবীজীর) ভালবাসার কারণে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাদের সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আর আলী রা. বললেন, হে আল্লাহ রাসূল, আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তাকে (আয়েশা) ব্যতীত আরো বহু মহিলা রয়েছে। তবে আপনি এ ব্যাপারে দাসী (বারীরা রা.) কে জিজ্ঞাসা করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। আয়েশা রা. বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরা রা.-কে ডেকে বললেন, হে বারীরা তুমি তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহমূলক আচরণ দেখেছ কি? বারীরা রা. তাকে বললেন, সেই আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর ব্যাপারে শুধু এতটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা যুবতী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বকরী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে।

আয়েশা রা .বলেন, (এ কথা শুনে) সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়, যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ ও বদনাম রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্ত করবে? আল্লাহর কসম, আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। আর তাঁরা (অপবাদ রটনাকারীরা) এমন এক ব্যক্তির (সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল) নাম উল্লেখ করছে যার সম্বন্ধেও আমি ভাল ছাড়া কিছু জানি না। সে তো আমর সাথেই আমার ঘরে যায়। আয়েশা রা. বলেন, (এ কথা শুনে) বনী আবদুল আশহাল গোত্রের সাদ (ইবনে মুআয) রা. উঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তা হলে তার শিরচ্ছেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই পালন করব। আয়েশা রা. বলেন, এ সময় হাসসান ইবনে সাবিত রা.-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের সর্দার সাঈদ ইবনে উবাদা রা. দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করলেন। আয়েশা রা. বলেন, এ ঘটনার পূর্বে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক ছিলেন। কিন্তু (এ সময়) গোত্রীয় অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে তিনি সাদ ইবনে মুআয রা.-কে বললেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহর কসম, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। যদিসে তোমার গোত্রের লোক হত তাহলে তুমি তার হত্যা হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সাদ ইবনে মুআয রা.-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. সাদ ইবনে ওবায়দা রা.-কে বললেন, বরং তুমি মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহর কসম, আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ অবলম্বন করে কথাবার্তা বলছ।

আয়েশা রা. বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে উঠে। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প পর্যন্ত করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামিয়ে শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। অশ্রুঝরা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও আমার আসেনি। তিনি বলেন, আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে বসা ছিলেন। এমনি করে একদিন দুই রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিই। এর মাঝে আমার কোন ঘুম আসেনি। বরং অবারিত ধারায় আমার চোখ থেকে অশ্রুপাত হতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন, কান্নার ফলে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সাথে কাঁদতে আরম্ভ করল। তিনি বলেন, আমরা ক্রন্দনরত ছিলাম ঠিক এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার কাছে এসে এভাবে তিনি আর কখনো বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার বিষয়ে তাঁর নিকট কোন ওহী আসেনি।

আয়েশা রা. বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বললেন, যা হোক, আয়েশা তোমার সম্বন্ধে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে মুক্ত হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবূল করেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা বলে শেষ করলে আমার অশ্রুপাত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক ফোটা অশ্রুও আমি আর অনুভব করলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলছেন আমার পক্ষ হতে আপনি তার জবাব দিন। আমার আব্বা বললেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানিনা। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আপনি তার জবাব দিন। আম্মা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানি না। তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশি পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে সুদৃঢ় হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র এবং আমি নিষ্কলুষ তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যা সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম, আমি ও আপনারা যে অবস্থায় শিকার হয়েছি এর জন্য (নবী) ইউসুফ আ.-এর পিতার কথা উদাহরণ ব্যতীত আমি কোন উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন: “সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল” এরপর আমি মুখ ফিরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তায়ালা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। (একথার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল) তবে আল্লাহর কসম,আমি কখনো ধারণা করিনি যে, আমার ব্যাপারে আল্লাহর ওহী নাযিল করবেন যা পঠিত হবে। আমার ব্যাপারে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতখানি যোগ্য মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অধিক অযোগ্য বলে মনে করতাম। তবে আমি আশা করাতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন স্বপ্ন দেখানো হবে যার দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো তাঁর বসার জায়গা ছাড়েননি এবং ঘরের লোকদের থেকেও কেউ ঘর থেকে বাইরে যাননি। এমতাবস্থায় তাঁর উপর ওহী নাযিল হতে শুরু হল। ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা তাঁর হল। এমনকি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তাঁর দেহ থেকে মোতির দানার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভাবের কারণে, যা তাঁর প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি হাসিমুখে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল, হে আয়েশা ! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জাহির করে দিয়েছেন। আয়েশা রা. বলেন, এ কথা শুনে আমার আম্মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি এখন তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত আমি কারো প্রশংসা করব না। আয়েশা রা বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে) যে দশটি আয়াত নাযিল করেছেন, তা হল এই : “যারা এ অপবাদ রটনা করেছে (তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার জন্য আছ কঠিন শাস্তি। এ কথা শোনার পর মুমিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেনি এবং বলেনি, এটা তো সুষ্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। যখন তোমরা মুখে মুখে এ মিথ্যা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং একে তোমরা তুচ্ছ ব্যাপার বলে ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল খুবই গুরুতর ব্যাপার। আল্লাহ পবিত্র, মহান! এ তো এক গুরুতর অপনাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা মুনিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না। আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (২৪ : ১১-২০) এরপর আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ এ আয়াতগুলো নাযিল করলেন।

আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা. মিসতাহ ইবনে উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করতেন। কিন্তু আয়েশা রা. সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক কোন সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলে, তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (২৪: ২২) (এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর) আবু বকর সিদ্দীক রা. বলে উঠলেন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ রা.-এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুন: দিতে শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তাকে এ অর্থ দেওয়া আর কখনো বন্ধ করব না। আয়েশা রা .বললেন, আমার এ বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-কেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি যায়নাব রা. -কে বলেছিলেন, তুমি আয়েশা রা. সম্পর্কে কি জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার চোখ ও কানকে সংরক্ষণ করেছি। আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আয়েশ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাকে আল্লাহ-ভীতির ফলে রক্ষা করেছেন। আয়েশা রা. বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা রা. তাঁর পক্ষ অবলম্বন করে অপবাদ রটনাকারীদের মত অপবাদ রটনা করে বেড়াচ্ছিলেন। ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব রহ. বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা সম্পর্কে আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হল এই : উরওয়ার রা. বলেন, আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ কসম, যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি কোন স্ত্রীলোকের কাপড় খু্লেও কোনদিন দেখিনি। আয়েশা রা. বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শাহাদত লাভ করেছিলেন।

(সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬)

উৎস: আরবী বাংলা হাদীস বিশ্বকোষ

Posted at June 03, 2019 |  by Arya ঋষি

0 Comments:

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top