ওত্জির
1991, অষ্ট্রিয়া আর ইটালির সীমান্ত এলাকা আল্পস পর্বতে একদল পর্যটক খুঁজে পান ওত্জি কে। না জীবন্ত নয় তাঁর মৃতদেহ। বহুকাল আগেই ওত্জি মারা গেছেন এই বরফের দেশে। তিনি মারা গেছেন সাধারন পূর্বাব্দ ৩৩০০ নাগাদ। অর্থাৎ আজ থেকে ৫৩০০ বৎসর আগে থেকে বরফ চাপা ওত্জি শুয়ে আছেন ওখানে।
বরফের নীচে চাপা থাকাতে প্রাচীন মৃত দেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় ওত্জি কে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ বিখ্যাত মিশরের পিরামিডের মমিগুলোর চেয়ে বহু বহু গুন ভাল অবস্থায়।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ৫০ কেজি ওজনের ২৫-৩৫ বৎসর বয়স্ক ওত্জির নামাকরন হল যেখানে তাঁকে পাওয়া গেছে সেই এলাকার Ötztal Alps, নামের সাথে তাল মিলিয়ে।
কেমন করে মারা গেছেন তা জানা গেছে। তাঁর মাথার পেছন দিকে কেউ খুব জোরে মেরেছিল। আর তার সাথে তার পেছন থেকে একটি পাথরের তীরের ফলা তাঁর পাঁজর ভেদ করে। তাতেই তিনি মারা যান।
তিনি কি যোদ্ধা ছিলেন, না এটা সাধারন খুনোখুনি সেটা বলা কঠিন। তবে মরার আগে তিনি চারজনকে আহত করেছেন। তাঁর হাতের অস্ত্রে চারজন আলাদা আলাদা মানুষের রক্তের অস্তিত্ব জানা গেছে।
পাহাড়ের বাসিন্দা ছিলেন না, তবু কেন তিনি ঐ তিন হাজার ফুট উঁচুতে এসেছিলেন তা জানা সম্ভব না। ছিলেন সমতল এলাকার বাসিন্দা। তবে ৩৫ বৎসর বয়সি ওত্জি দীর্ঘকাল কায়িক পরিশ্রমের দরুণই হয়তো বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুড়োটে ছিলেন। তাঁর হাড়ের ক্ষয় দেখে সেটা সহজেই বলা যায়।
তিনি পাহাড়ের লোক ছিলেন না তা জানা গেল তাঁর পেটে খাবারের কনা থেকে। সেই খাবারের শষ্য উৎপন্ন হয় সমতলেই। মারা যাবার পাঁচ ঘন্টা আগে তিনি হরিনের মাংস আর রুটি খেয়েছেন। ও হ্যাঁ তাঁর পেটের সমস্যা ছিল। পেটে কৃমি ছিল। বেশ বড় কৃমি।
খাবার খেয়ে বেশ প্রস্তুত হয়েই পাহাড়ের পথে রওনা দেন। কারন তাঁর পরনে ছিল অন্তর্বাস হিসাবে ভেড়ার চামড়া। সে ভেড়া আবার অন্য এলাকার। কাজেই এটা তাঁর কেনা পোষাকই ছিল বোঝা যায়। চামড়ার উপরে ছিল ঘাষের তৈরী পোষাকের আস্তরন। পায়ে জুতো। দড়ি দিয়ে বোনা জুতোর সামনের দিকে চামড়া ছিল। আর পায়ের তলার দিকে প্যাডিং-এর জন্য ছিল ঘাস। হাতে ছিল কাঠের হাতল সহ তামার কুড়াল, পাথরের ফলা সহ তীর ধনুক।
ওত্জির দেহের ডি.এন.এ পরীক্ষা করে ইতালীর সার্ডিনিয়া অঞ্চলে তাঁর বহু বংশধরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সেই মৃতদেহ সযত্নে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন। শুরু হয় নানা গবেষনা। সাধারন ব্যাপার তো নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটি দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অমুল্য সম্পদ।
যেহেতু তার জিন ম্যাপিং করা হয়ে গেছে তাই তার চেহারা কম্প্যুটারে তৈরী করতে বিজ্ঞানীদের খুব একটা কষ্ট হয় নি।
ওতজি কে পাওয়ার পঁচিশ বৎসর উপলক্ষে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা জানতে চান ওতজির কন্ঠস্বর কেমন ছিল।
তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে হলে তার স্বরনালী নতুন করে তৈরী করতেই হবে। কিন্তু সে জন্য দরকার ওতজির স্বরনালীর গঠন নিখুঁত ভাবে জানা। তা সেটা তো এক্স-রে করে বা সি.টি স্ক্যান করে করা যেতেই পারে। কিন্তু না ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কারন ওতজির একটা হাত তার গলার উপর ছিল। সেই হাতের জন্য কিছুতেই ঠিকঠাক ভাবে গলার ভেতরের স্বরনালীর সঠিক চেহারা ধরা যাচ্ছিল না।
অবশেষে অত্যাধুনিক ষন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে।
একবার তার স্বরনালীর গঠন জানা হয়ে গেলে বাকী কাজ তো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সহজ।
তাঁরা কৃত্রিম স্বরনালী বানিয়ে ফেললেন। সফট ওয়্যার তৈরী হয়ে গেল। এখন আমরা ওত্জির গলার স্বর শুনতে পারি।
যেহেতু আমরা কেউ জানি না ওতজি কি ভাষায় কথা বলতেন, তাই বিজ্ঞানীরা ওতজির গলায় আমাদের শোনালেন শুধু AEIOU পাঁচ হাজার তিনশ বৎসর আগে মৃত ওতজি এখন আমাদের শোনাচ্ছেন AEIOU
সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য ইউটিউবের লিঙ্ক দেওয়া হল।
তথ্যসুত্রঃ-
Encyclopedia Britannica
https://www.youtube.com/watch?v=_FUH4xpYUMs
Ötzi
Reconstruction of Ötzi based on forensic analysis of the mummy; in the South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano, Italy.
1991, অষ্ট্রিয়া আর ইটালির সীমান্ত এলাকা আল্পস পর্বতে একদল পর্যটক খুঁজে পান ওত্জি কে। না জীবন্ত নয় তাঁর মৃতদেহ। বহুকাল আগেই ওত্জি মারা গেছেন এই বরফের দেশে। তিনি মারা গেছেন সাধারন পূর্বাব্দ ৩৩০০ নাগাদ। অর্থাৎ আজ থেকে ৫৩০০ বৎসর আগে থেকে বরফ চাপা ওত্জি শুয়ে আছেন ওখানে।
বরফের নীচে চাপা থাকাতে প্রাচীন মৃত দেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় ওত্জি কে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ বিখ্যাত মিশরের পিরামিডের মমিগুলোর চেয়ে বহু বহু গুন ভাল অবস্থায়।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ৫০ কেজি ওজনের ২৫-৩৫ বৎসর বয়স্ক ওত্জির নামাকরন হল যেখানে তাঁকে পাওয়া গেছে সেই এলাকার Ötztal Alps, নামের সাথে তাল মিলিয়ে।
কেমন করে মারা গেছেন তা জানা গেছে। তাঁর মাথার পেছন দিকে কেউ খুব জোরে মেরেছিল। আর তার সাথে তার পেছন থেকে একটি পাথরের তীরের ফলা তাঁর পাঁজর ভেদ করে। তাতেই তিনি মারা যান।
তিনি কি যোদ্ধা ছিলেন, না এটা সাধারন খুনোখুনি সেটা বলা কঠিন। তবে মরার আগে তিনি চারজনকে আহত করেছেন। তাঁর হাতের অস্ত্রে চারজন আলাদা আলাদা মানুষের রক্তের অস্তিত্ব জানা গেছে।
পাহাড়ের বাসিন্দা ছিলেন না, তবু কেন তিনি ঐ তিন হাজার ফুট উঁচুতে এসেছিলেন তা জানা সম্ভব না। ছিলেন সমতল এলাকার বাসিন্দা। তবে ৩৫ বৎসর বয়সি ওত্জি দীর্ঘকাল কায়িক পরিশ্রমের দরুণই হয়তো বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুড়োটে ছিলেন। তাঁর হাড়ের ক্ষয় দেখে সেটা সহজেই বলা যায়।
তিনি পাহাড়ের লোক ছিলেন না তা জানা গেল তাঁর পেটে খাবারের কনা থেকে। সেই খাবারের শষ্য উৎপন্ন হয় সমতলেই। মারা যাবার পাঁচ ঘন্টা আগে তিনি হরিনের মাংস আর রুটি খেয়েছেন। ও হ্যাঁ তাঁর পেটের সমস্যা ছিল। পেটে কৃমি ছিল। বেশ বড় কৃমি।
খাবার খেয়ে বেশ প্রস্তুত হয়েই পাহাড়ের পথে রওনা দেন। কারন তাঁর পরনে ছিল অন্তর্বাস হিসাবে ভেড়ার চামড়া। সে ভেড়া আবার অন্য এলাকার। কাজেই এটা তাঁর কেনা পোষাকই ছিল বোঝা যায়। চামড়ার উপরে ছিল ঘাষের তৈরী পোষাকের আস্তরন। পায়ে জুতো। দড়ি দিয়ে বোনা জুতোর সামনের দিকে চামড়া ছিল। আর পায়ের তলার দিকে প্যাডিং-এর জন্য ছিল ঘাস। হাতে ছিল কাঠের হাতল সহ তামার কুড়াল, পাথরের ফলা সহ তীর ধনুক।
ওত্জির দেহের ডি.এন.এ পরীক্ষা করে ইতালীর সার্ডিনিয়া অঞ্চলে তাঁর বহু বংশধরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সেই মৃতদেহ সযত্নে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন। শুরু হয় নানা গবেষনা। সাধারন ব্যাপার তো নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটি দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অমুল্য সম্পদ।
যেহেতু তার জিন ম্যাপিং করা হয়ে গেছে তাই তার চেহারা কম্প্যুটারে তৈরী করতে বিজ্ঞানীদের খুব একটা কষ্ট হয় নি।
ওতজি কে পাওয়ার পঁচিশ বৎসর উপলক্ষে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা জানতে চান ওতজির কন্ঠস্বর কেমন ছিল।
তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে হলে তার স্বরনালী নতুন করে তৈরী করতেই হবে। কিন্তু সে জন্য দরকার ওতজির স্বরনালীর গঠন নিখুঁত ভাবে জানা। তা সেটা তো এক্স-রে করে বা সি.টি স্ক্যান করে করা যেতেই পারে। কিন্তু না ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কারন ওতজির একটা হাত তার গলার উপর ছিল। সেই হাতের জন্য কিছুতেই ঠিকঠাক ভাবে গলার ভেতরের স্বরনালীর সঠিক চেহারা ধরা যাচ্ছিল না।
অবশেষে অত্যাধুনিক ষন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে।
একবার তার স্বরনালীর গঠন জানা হয়ে গেলে বাকী কাজ তো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সহজ।
তাঁরা কৃত্রিম স্বরনালী বানিয়ে ফেললেন। সফট ওয়্যার তৈরী হয়ে গেল। এখন আমরা ওত্জির গলার স্বর শুনতে পারি।
যেহেতু আমরা কেউ জানি না ওতজি কি ভাষায় কথা বলতেন, তাই বিজ্ঞানীরা ওতজির গলায় আমাদের শোনালেন শুধু AEIOU পাঁচ হাজার তিনশ বৎসর আগে মৃত ওতজি এখন আমাদের শোনাচ্ছেন AEIOU
সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য ইউটিউবের লিঙ্ক দেওয়া হল।
তথ্যসুত্রঃ-
Encyclopedia Britannica
https://www.youtube.com/watch?v=_FUH4xpYUMs
Ötzi
Reconstruction of Ötzi based on forensic analysis of the mummy; in the South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano, Italy.
0 Comments: