কলম্বাস বদলে দিয়েছিলেন ইতিহাসকে

Posted by Arya ঋষি  |  at  June 25, 2020 No comments


কলম্বাস যদি জানতেন তিনি ভারতে পৌঁছাননি, এমনকি জাপানেও না, তাহলে নতুন মহাদেশের নাম আমেরিকা না হয়ে কলাম্বিয়া হতে পারত অনায়াসে। আর আমেরিকা মহাদেশের অধিবাসীরা পরিচিত হতেন কলাম্বিয়ান হিসেবে।

বিভিন্ন ঘটনায় এভাবেই পাল্টে যায় ইতিহাসের ধারা। কলম্বাসও বদলে দিয়েছিলেন ইতিহাসকে। তোমাদের হয়ত জানতে ইচ্ছা করছে, কে এই কলম্বাস? আর কীভাবে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন?

প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, প্রাচীনকাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এশিয়ার-- বিশেষ করে ভারত চীনের ছিল জমজমাট ব্যবসা। চীন থেকে সিল্ক, চীনামাটির চমৎকার সব জিনিসপত্র আর ভারত থেকে মসলা, সুতি কাপড়, সোনারূপার নানারকম গয়না যেত ইউরোপে। মূলত সিল্করুট দিয়ে চলা এই ব্যবসার বেশিরভাগই ছিল মঙ্গোল, অটোমান তুর্ক আরব বণিকদের দখলে। তাদের কাছ থেকে বেশ চড়া দামে এসব সৌখিন সামগ্রী কিনতে হত ইউরোপীয়দের। জন্য ইউরোপীয়রা চেষ্টা করত নিজেরাই যদি জাহাজ নিয়ে ভারত, চীন জাপানে যাওয়া যায় তাহলে ব্যবসায় প্রচুর লাভ হয়। আর যদি সেই দেশগুলো দখল করে ফেলা যায় তাহলে তো আরও ভালো। মধ্যযুগে ইউরোপের নাবিকরা তাই চেষ্টা করত, জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে নতুন নতুন দেশ জলপথ আবিষ্কারের।

কলম্বাস ছিলেন ইতালির জেনোয়া শহরের এক সাহসী নাবিক। তার জন্ম ঠিক কোন সালে সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, ১৪৫১ সালের ৩১ অক্টোবরের আগেই তার জন্ম হয়। তার পুরো নাম ছিল ল্যাটিন ভাষায়-- ক্রিস্টোফোরাস কলোম্বাস। আর জেনোয়ার স্থানীয় ভাষায় তার নাম ছিল ক্রিস্টোফ্ফা করোম্বো। ইংরেজিতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিসেবেই তিনি পরিচিত। তার বাবার নাম ডোমেনিকো কলম্বো আর মায়ের নাম ছিল সুজানা ফনটানারোজা। বাবা ছিলেন মধ্যবিত্ত উল ব্যবসায়ী। তার একটা পনিরের দোকানও ছিল, যেখানে বালক কলম্বাস কাজ করতেন। দশ বছর বয়সে তিনি প্রথম সমুদ্রযাত্রায় যান তার ভাইয়ের সঙ্গে।

১৪৭৩ সালে যোগ দেন এক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানের কাজে বিভিন্ন সময় সমুদ্রযাত্রায় যান তিনি। এর মাধ্যমেই সমুদ্রের নেশায় পড়ে যান তিনি।

সে সময় পৃথিবী গোল না চ্যাপ্টা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল বিজ্ঞানী ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে। তবে পৃথিবী যে গোল সে সম্পর্কে বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে সমর্থন জোরালো হচ্ছিল। বিভিন্ন পণ্ডিতের মতবাদ নিয়ে কলম্বাস নিজে চিন্তাভাবনা করতেন।

তার ধারণা হল যে আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে ক্রমাগত জাহাজ চালিয়ে গেলে ভারতের পশ্চিম উপকূল বা জাপানের কাছাকাছি কোথাও পৌঁছানো যাবে। কোনপথে, কখন, কীভাবে যাত্রা করতে হবে সে সম্পর্কে তিনি একটা নিজস্ব প্রকল্প বা তত্ত্ব দাঁড় করালেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দরকার। অত টাকা তো তার ছিল না। তিনি তাই তার অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন রাজদরবারে আর্জি জানালেন। পর্তুগাল, ইতালি, ইংল্যান্ডের রাজদরবার তার আবেদন নাকচ করে দেয়। স্পেনের রাজদম্পতি আরাগনের দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড এবং ক্যাস্টিলের রানি প্রথম ইসাবেলা তাকে অর্থায়ন করতে রাজি হলেন। বিশেষ করে কলম্বাসের পক্ষে ছিলেন ইসাবেলা। ১৪৮৬ সালের মে তিনি অনুমতি পেলেন। আর ১৪৯২ এর জানুয়ারিতে পেলেন চূড়ান্ত অনুমোদন।

তিনটি জাহাজ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা শুরু করলেন কলম্বাস। মূল জাহাজটির নাম ছিল সান্তা মারিয়া। অন্যদুটি জাহাজের নাম নিনা পিন্টা। ১৪৯২ সালের অগাস্ট কলম্বাস যাত্রা শুরু করেন। 

কিছুদিন চলার পর নাবিকরা আপত্তি জানাতে থাকে। কারণ তারা আর এভাবে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতে রাজি নয়। কলম্বাস সবাইকে ভরসা জোগান যে তার ভুল হয়নি। অচিরেই ডাঙার খোঁজ পাওয়া যাবে। নাবিকরা বিদ্রোহ করার উপক্রম করে। কিন্তু কলম্বাস হতাশ হননি। তিনি জাহাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন। ১২ অক্টোবর গভীর রাতে সমুদ্রের মধ্যে আলো দেখতে পেলেন কলম্বাস। একটু পরই পিন্টা জাহাজের ক্যাপ্টেন বন্দুকের আওয়াজ করে জানান দিলেন যে তিনিও আলো দেখেছেন। ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর কলম্বাস আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেন। কলম্বাস এবং তার সঙ্গীরা ভেবেছিলেন তারা ভারতের কোনো দ্বীপে পৌঁছেছেন। তিনি এর নাম দেন সান সালভাদর। প্রকৃতপক্ষে তিনি পৌঁছেছিলেন বাহামাতে। আজও পর্যন্ত এই অঞ্চলের দ্বীপগুলোকে বলা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং আমেরিকা মহাদেশের আদি অধিবাসীদের বলা হয় ইন্ডিয়ান বা রেড ইন্ডিয়ান। প্রথম অভিযানের পর বাহামাতেইসান্তা মারিয়াজাহাজটি পরিত্যাগ করা হয়। এই বিখ্যাত জাহাজটি সেখানেই কোথাও ডুবে যায়।

কলম্বাস মোট চারবার স্পেন থেকে আমেরিকা মহাদেশে অভিযান চালান। তিনি মহাদেশের মূল ভূখণ্ডেও পৌঁছান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেননি নতুন এক মহাদেশে পৌঁছেছেন। সে কথাটি বের করেন আমেরিগো ভেসপুচি নামে আরেক নাবিক। তার নাম অনুসারেই হয় আমেরিকার নাম।

কলম্বাস সত্যিই ছিলেন দুর্ভাগা। মহাদেশের আবিষ্কারক হয়েও তার নামে এটির নামকরণ হল না। তার শেষজীবনও সুখের হয়নি। দেশের জন্য প্রচুর সম্পদ বয়ে আনার পরও শেষজীবনে রাজরোষে পড়ে জেল খাটতে হয় তাকে। জীবনও কাটে দারিদ্র্যের মধ্যে।

ইতিহাসবিদরা বর্তমানে বলছেন যে আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম ইউরোপীয় কলম্বাস নন। তার আগে একাদশ শতকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার নাবিকরা আমেরিকায় যাওয়ার পথ জানতেন। যাইহোক আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কারের কৃতিত্ব কলম্বাসকেই দেওয়া হয়। এবং তাকে বলা হয় নতুন পৃথিবীর পথপ্রদর্শক।

 


About the Author

Write admin description here..

Get Updates

Subscribe to our e-mail newsletter to receive updates.

Share This Post

Related posts

0 Comments:

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top