মেদ

Posted by Arya ঋষি  |  at  July 24, 2020 No comments

 মেদ-স্থূলতা (Fatness, Corpulence | Med-Sthulota):


চর্বি হচ্ছে সঞ্চিত খাদ্য। চর্বি বা মেদ আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যক, তবে তা পরিমিত মাত্রায়। চর্বি না থাকলে দেহের লাবণ্য, নমনীয়তা, নড়াচড়া, সাবলীল চলাফেরা এবং প্রয়োজনীয় উষ্ণতা ধরে রাখা কিছুতেই সম্ভব হতো না। দেহের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ চর্বি চামড়ার নিচে থেকে এই কাজগুলো করে যায়। বাকি চর্বিগুলো অস্থি-সন্ধি ও মাংশপেশীর সাথে মিশে থাকে। যখনি ক্ষুধার্ত হই আমরা, কোন কারণে খাদ্যগ্রহণে অসমর্থ হলে আমাদের এই সঞ্চিত চর্বি ক্ষয় হয়ে দেহযন্ত্রগুলোকে চালু রাখতে শক্তি সরবরাহ করে দেহের ক্ষতিপূরণ করে থাকে। এজন্যেই আমাদের দেহযন্ত্রগুলো সচল রাখতে কিছু চর্বি সঞ্চিত থাকা প্রয়োজন।

কিন্তু দেহে সঞ্চিত চর্বি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে এবং এই চর্বির সাথে যদি মাংসও বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে তা দেহের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেদবহুল দেহীদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রায়ই এরা উচ্চ-রক্তচাপ তথা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্রসহ নানান রোগের শিকারে পরিণত হয়।

রোগের লক্ষণ:
স্থূলতা বৃদ্ধির প্রাথমিক লক্ষণই হচ্ছে নির্ধারিত মাত্রাসীমার চেয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া। এই ওজন যতই বাড়বে, তা কমানো ততই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই শারীরিক উচ্চতা ও দেহের গড়ন অনুযায়ী মানসম্মত হারের মধ্যেই ওজন সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। এর চেয়ে ওজন ১০% বৃদ্ধি পেলেই তাকে মেদবৃদ্ধি বা স্থূলতা রোগ হিসেবে চিহ্ণিত করা যেতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে ওজনের এই মানসম্মত হার হবে এরকম-

-উচ্চতা = —-ওজন (পুরুষ)- ————-=ওজন (স্ত্রী)
৬০ ইঞ্চি = পুরুষ [৫০ থেকে ৫৬ কেজি]- – স্ত্রী [৪৫ থেকে ৫২ কেজি]
৬৩ ইঞ্চি = পুরুষ [৫৩ থেকে ৫৯ কেজি]- – স্ত্রী [৪৯ থেকে ৫৬ কেজি]
৬৫ ইঞ্চি = পুরুষ [৫৭ থেকে ৬৩ কেজি]- – স্ত্রী [৫২ থেকে ৫৯ কেজি]
৬৮ ইঞ্চি = পুরুষ [৬৩ থেকে ৬৯ কেজি]- – স্ত্রী [৫৯ থেকে ৬৫ কেজি]
৭০ ইঞ্চি = পুরুষ [৬৬ থেকে ৭৩ কেজি]- – স্ত্রী [৬২ থেকে ৬৯ কেজি]

এখানে ওজন দেখানোর ক্ষেত্রে প্রথমটি ছোট গড়নের এবং দ্বিতীয়টি বড় গড়নের পুরুষ ও স্ত্রীর মানসম্মত ওজন দেখানো হয়েছে। মাঝারি গড়নের পুরুষ বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে দুটোর মাঝামাঝি ওজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন ৬০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট পুরুষের দেহের মানসম্মত ওজন হবে ছোট গড়নের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি, এবং বড় গড়নের ক্ষেত্রে ৫৬ কেজি। অতএব মাঝারি গড়নের ক্ষেত্রে ওজন হবে ৫৩ কেজি।

রোগের কারণ:
দেহে নানা কারণে চর্বি জমতে পারে। তবে স্থূল বা মোটা হওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি কারণকে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (১) বংশধারা, (২) পরিপাকযন্ত্র ও গ্রন্থিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বা সঠিকভাবে কাজ না করা এবং (৩) স্বাস্থ্য রক্ষায় সাধারণ নিয়ম না মানা।

পিতৃ ও মাতৃ-কুলে স্থূলত্বের ধারা বজায় থাকলে কারো কারো ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে এই ধারা বাহিত হতে পারে। তবে তা সংখ্যায় কম এবং স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম-বিধি কঠোরভাবে পালন করলে তা পরিমিত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব।

দ্বিতীয়ত আমাদের দেহস্থিত প্রধান গ্রন্থিগুলো যেমন পিটুইটারী গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ না করলে বা নিষ্ক্রিয় হলে স্থূলতা দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হতে যে বিশেষ হরমোন নিসৃত হয় তা অল্পমাত্রায় ক্ষরিত হলে মানুষ স্থূল হতে থাকে এবং অধিকমাত্রার ক্ষরণে কৃশ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় হরমোন পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া গেলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় সুনির্দিষ্ট ঔষধ সেবনের মাধ্যমে এই তারতম্যের নিরসন ঘটিয়ে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা আজকাল অসম্ভব কিছু নয়।

বর্তমানে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই মেদবহুল স্থূল হবার প্রধান কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধির সাধারণ নিয়ম মেনে না চলা। কায়িক শ্রম-বিমুখতা, অতিভোজন, অধিক পরিমাণে আমিষ ও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ, ন্যূনতম ব্যায়ামের অভাব ইত্যাদি কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। স্থূলদেহী বা মেদরোগীরা প্রায়ক্ষেত্রেই ভোজনবিলাসী হয়ে থাকে। আর এই ভোজনবিলাসের কারণে বাছ-বিচারহীন এসব চর্বিজাত, অতিরিক্ত স্নেহ ও শর্করাজাতীয় খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ফাস্টফুডের দিকে আকর্ষণ বাড়তে থাকা এবং সে তুলনায় কায়িক পরিশ্রম না থাকায় রোগটিও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

রোগ নিরাময়:
নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাসের সাথে সাথে মেদ রোগীদের আহারে-বিহারে খুবই সংযমী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। খাওয়া-দাওয়ায় সংযমী হলেই সাধারণতঃ স্থূলতা জয় করা যায়। সকালে অল্প পরিমাণে চিড়া, মুড়ি, খই বা সেঁকা রুটিজাতীয় যেকোন ধরনের খাবার এবং সেই সাথে চিনি ছাড়া এক কাপ পাতলা দুধ এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে ভাত, ডাল, শাকসবজি, তরকারি, মাছ প্রভৃতি এবং শেষ পাতে টক খাওয়া যেতে পারে। খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে হবে। তরকারি ও শাকসবজির পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত। তবে চর্বি বা অধিক মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কাঁচা ঘি, মাখন বা এই জাতীয় কোন খাবার কিছুতেই খাওয়া উচিত হবে না। একান্তই ক্ষুধা পেলে বিকেলে খুব হালকা সহজ নাস্তা খাওয়া যেতে পারে। রাতে দু-একটা আটার রুটি ডাল বা সবজিসহ খাওয়া যেতে পারে। তবে তা বেশি রাত করে নয়।

নিয়মমাফিক উপবাস শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সপ্তাহে এক বেলা কিংবা পনের দিনে একদিন সম্পূর্ণ উপবাস স্থূলতা কমাতে খুব সহায়তা করে থাকে। উপবাসের সময় লেবুর রস মিশিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।

এইসব খাদ্যাভ্যাস পালনের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে লেবুর রস মিশিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে প্রথমে কিছু খালি হাতে ব্যায়াম ও সূর্য-নমস্কার ব্যায়াম করে ২/৩ মিনিট শবাসন করতে হবে। এরপর পবন-মুক্তাসনপদ-হস্তাসনঅর্ধ-চক্রাসন বা অর্ধ-চন্দ্রাসনত্রিকোণাসনউত্থিত-পদাসন অভ্যাস করতে হবে। এতে রোগ একটু প্রশমিত হলে এই সাথে মৎস্যাসন ও সর্বাঙ্গাসন করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এভাবে আরো কিছুদিন অভ্যাসের পর উষ্ট্রাসনধনুরাসনহলাসন প্রভৃতি আসন চর্চা করা যেতে পারে। তবে কখনোই একসাথে ছয় থেকে আটটি আসনের বেশি অভ্যাস করা উচিত নয়।

বিকেলে আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা দ্রুত হাঁটা বা দৌঁড়ানো এবং সুযোগ থাকলে আধঘণ্টাখানেক সাঁতার কাটা গেলে বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হবে। আর রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে পনের মিনিট বজ্রাসন করা আবশ্যক।

তবে নিষিদ্ধ প্রচেষ্টা হিসেবে দিবানিদ্রা কোনভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।

About the Author

Write admin description here..

Get Updates

Subscribe to our e-mail newsletter to receive updates.

Share This Post

Related posts

0 Comments:

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top