All Stories
(https://aryarishidot.blogspot.com/2017/11/blog-post.html)দ্বিতীয় পর্বের পরঃ-
পর্ব-৩
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস করা হয়েছিল কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় বসেই হিন্দু নির্যাতনের জন্য আরও কঠোর নীতি ঘোষনা করলেন। তিনি জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করলেন। উদয়পুর ও চিতোর অধিকার করে দুই'শ এর অধিক দেব মন্দির ধ্বংস করলেন। শিখ গুরু তেগ বাহাদুর আওরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোদী নীতি অমান্য করেন এবং কাশ্মীরের ব্রাম্মনদের আওরঙ্গজেব প্রবর্তিত হিন্দু বিরোধী নীতি অমান্য করতে উপদেশ দেন। এ জন্য আওরঙ্গজেবের সম্মূখে উপস্থিত করা হল এবং মৃত্যুভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ধর্ম ত্যাগ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করলেন। সম্রাটের আদেশে ততক্ষনাত তাকে হত্যা করা হল। পাঞ্জাবের বর্তমান পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলে 'সৎনামীহিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। একজন মুসলমান সৈন্য একজন সৎনামী ভক্তকে হত্যা করলে সৎনামীরা বিদ্রহী হয়ফলে আওরঙ্গজেবের বাহিনী সৎনামী হিন্দুদের প্রায় সকলকে হত্যা করেন।

আরঙ্গজেবের সমসাময়িক মুসলমান লিপিকার সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "১০৭৯ হিজরী ১৭ই জিলকদ (১৮এপ্রিল, ১৬৬৯) সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে খবর পৌছালো যে, থাট্টা সুলতান বিশেষ করে বারানসীর মুর্খ ব্রাম্মনরা তাদের মোটা মোটা ছেড়া গ্রন্থ থেক কি সব জংলী তত্ব ছাত্রদের শিক্ষা দিচ্ছে। কাফের হিন্দুদের সঙ্গে কিছু মুসলমান ছাত্র ও সেখানে এসব ছাই ভস্ম শিখতে যাচ্ছে। এমনকি বহু দূর দেশ থেকেও বহু ছাত্র ওসব ডাকিনী বিদ্যা শিখতে বারানসীতে উপস্থিত হচ্ছে। এ খবর শোনা মাত্র ধর্মের দিক নির্দেশকারী সম্রাট এক হুকুম জারী করে বললেন, সমস্ত প্রদেশের শাসনকর্তারা যেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে কাফেরদের মন্দির ও বিদ্যালয়সমূহ ধ্বংস করে দেন। এই মর্মে তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, তারা যেন মূর্তি পূজা এবং এই ধরনের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোকে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দেন। পরবর্তী রবিউল আউয়াল মাসের ১৫ তারিখে সম্রাটের কাছে  খবর এলো যে , সম্রাটের আজ্ঞানুসারে সরকারী কর্ম কর্তারা বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছে।"
[Elliot & Dowson, VII-183-184]

সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন, "১০৮০ হিজরীর রমজান মাসে (ডিসেম্বর, ১৬৬৯ খৃ) সম্রাটের রাজত্বকালের ত্রয়োদশ বছরে অত্যাচারীদের (হিন্দুদের) অবিচল শত্রু ও ন্যায় বিচারের অনুরাগী সম্রাট (আরঙ্গজেব) ডেরা বসুরায় নামে পরিচিত মথুরার হিন্দু মন্দিরট ধ্বংস করতে আদেশ দিলে অনতিবিলম্বে মেকী ধর্মের সুদৃঢ় ঘাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল। ঠিক সেই জায়গাতেই বহু টাকা ব্যয় করে এক বিশাল মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হল।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হল আজও মথুরায় গেলে দেখা যাবে যেসাবেক মন্দিরের ধ্বংস বা ধূলিস্যাত করা হয়নিশুধু তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী বিবরণে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কথা বলা হয়েছেক্কিন্তু আজও কাশীতে গেলে দেখা যায় যেধ্বংস করার নামে তাকে শুধু মসজিদে  রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা ও তার বিবরণ থেকে এই সিন্ধান্তেই আসতে হয় যেএই সব বিবরনে যেখানেই মন্দির ধ্বংস করার কথা আছেসে সমস্ত ক্ষেত্রেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর বুঝতে হবে। এটিই নিয়মকেননা হজরত মোহাম্মদ মক্কার কেবলেস্বর মন্দিরকে ধূলিস্যাত করেননিশুধু মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে এবং ছবিগুলোকে ফেলে দিয়ে কাবা শরীফ নামকরন করেছেন। এটি একটি সুন্নত। এই সুন্নত অনুসরন করা মুসলমান শাসকের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়ড়িয়েছিল। হিন্দু জনসাধারনকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়ে তাদেরই মন্দিরকে ঘসে মেজে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে মসজিদের রূপ দিয়ে নও মুসলমানের সেখানে নামাজ শিক্ষা দেওয়া ও পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। 
৩ টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হত

এক কালে আজকের করাচির নাম ছিল দেবল বা দেবালয়। কারনযেখানে সুমুদ্রের পাড়ে ছিল বিশাল একটি মন্দির । সমুদ্রের অনেক দূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যেত। মহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রষ্টাব্দে সেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তির করে উপমহাদেশে এই বর্বর কাজের  সূত্রপাত করেন। সেই সময়কার মুসলমান ঐতিহাসিকরা এই দানবীয় কাজকে মেকি দেব-দেবীর বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর মহান বিজয় বলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।


ইসলামী চিন্তাবিদের মতে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা খুব সোজা এবং তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব । প্রথমত, মন্দিরের বিগ্রহগুলোকে ভেঙে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত, আজান দেবার জন্য একটি মিনার তৈরী করতে হবে এবং শেষ খুতবা দেবার জন্য মিনার বানাতে হবে। কত কম সময়ের মধ্যে এই কর্ম সমাধান করা সম্ভব আজমীরের 'আড়াই দিন কা ঝোপড়া' তার স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। বিগত  ১০০০ বছরে লক্ষ লক্ষ মন্দির মুসলমানেরা ভেঙে ধূলিসাত করেছে; নয়তো মসজিদে রূপান্তর করেছে এমনি উপায়ে। সুলতান মাহমুদ সোমনাথের সুদ্ৃশ্য মন্দির ধ্বংস করেছে। বাবরের দ্বারা অযোধ্যার রাম মন্দির, আওরঙ্গজেবের দ্বারাকাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরা ও মথুরার কেশব মন্দির ভাঙা ও মসজিদে রূপান্তর করা  এর অন্যতম উদাহারণ। হজরত মহাম্মদই প্রথম এই পথ দেখিয়ছেন। তার আদর্শ অনুসরণে আজ পর্যন্ত এ কাজ চলছে তো চলছেই।
ঢাকার ওয়ারী এলাকার শিব-মন্দির ভেঙে ইসলামী বিদ্যালয়, বানিয়া নগরের সীতানাথ মন্দির, ক্যাপিট্যাল ঈদ্গা ময়দান, টিকাটুলীর শিব মন্দির, রাজধানী মার্কেট ও মসজিদ, টিপু সুলতান রোদের রাধ-কৃষ্ণের মন্দির হয়েছে মানিকগঞ্জ হাউজ।

সাকি মুস্তাইদ খার বিবরণ অনুসারে বুন্দেলখন্ডের রাজা নরসিং দেব যুবরাজ সেলিমকে নানাভাবে সাহায্য করার পুরুষ্কার হিসেবে মথুরায় মন্দির নির্মান করার অনুমতি লাভ করেন এবং ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঐ বিশাল মন্দির নির্মান করেন। আওরঙ্গজেবের আদেশে সেই মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী করা হয়। এই সংবাদে উল্লেসিত মুস্তাইদ খা লিখেছেন,
ইনসাল্লা, ভাগ্যগুনে আমরা ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়েছি। যে কর্ম সমাধা করা নিতান্ত দুঃসাধ্য ছিল, মেকি দেব দেবীর উপাসনালয় ধ্বংসকারী এই সম্রাটের রাজত্বে তাও সম্ভব হল। সত্য ধর্মের প্রতি (সম্রাটের) এই বিপুল সমর্থন উদ্ধত হিন্দু রাজাদের চরম আঘাত হানলো পুতুল দেবতার মত তারাও তাদের ভয়ার্ত মুখ দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখলো।
মন্দির তো ভাঙা হল। কিন্তু মন্দিরের বিগ্রহের কি হবে ? সে ব্যপারে সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "জংলী সেই সব মন্দির থেকে মূল্যবান রত্নখচিত সেই সব বিগ্রহ পাওয়া গেল সেগুলোকে আগ্রায় নিয়ে আসা হল এবং সেখানে নবাব বেগম সাহেবার মসজিদের সিড়ির নীচে ফেলে রাখা হল; যাতে সত্য ধর্মে বিশ্বসীরা (মসজিদে যাওয়ার আসার সময়) সেগুলোকে চিরকাল পায়ের তলায় মাড়িয়ে যেতে পারে।"



সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন- 
"রবিউল আখির মাসের ২৪ তারিখে খাঞ্জাহান বাহাদুর কয়েক গাড়ী হিন্দু বিগ্রহ নিয়ে যোধপুর ফেরলেন। সেখানকার অনেক মন্দির ভেঙে এ সব বিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য মহামান্য সম্রাট তাকে খুবই প্রশংসা করলেন। এই সব বিগ্রহের বেশীর ভাগই মূল্যন সোনা, রূপা, পিতল, তামা বা পাঠরের তৈরী ছিল। সম্রাটের হুকুম হল কিছু বিগ্রহ জঞ্জাল হিসেবে এখানে সেখানে ফেলে রাখতে যাতে বিশ্বাসীরা মসজিদে যাতায়তের সময় সেগুলোকে মাড়াতে পারে।"

পরে পাথরের মূর্তি গুলোকে ভেঙে খোয়া করা হয় এবং সেই খোয়া দিয়ে জাম-ই-মসজিদের চাতাল মোজাইক কয়া হয়; যাতে নামাজীরা এসব বিগ্রহকে মাড়িয়ে নামাজ পড়ে আল্লার নাম রোশন করতে পারে।

কাশীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে মথুরার বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির ধ্বংস করা হল। এই সংবাদ বিদ্যুতবেগে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। উল্লেখিত উভয় মন্দিরের জায়গাতেই বিশাল দুই মসজিদ খাড়া করা হল যা আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং যে কেউ কাশী বা মথুরা ভ্রমনে গেলে অনেক দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন
[R.C.Majumder, BVB. Vol.VII,p-265]

ঐতিহাসিক এ কে মজুমদার লিখেছেন, "মেঘ যেমন পৃথিবীর জল বর্ষণ করে ঔরঙ্গজেব সেই রকম সমস্ত দেশ জুড়ে বর্বরতা বর্ষন করলেন।"

মধ্য যুগে ভারতে হিন্দু প্রজা পীড়নকারী মুসলমান শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইলিয়ট বলেছেন, "আমরা অবাক হব না যদি দেখি যে এই সব অত্যাচারী শাসকদের আমলে ন্যায় বিচার কলুষিত ও পক্ষপাত দুষ্ট অথবা যদি দেখি যে, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে সর্বত্র রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ ভাবে পুরুষের পুরুষাঙ্গ ও মহিলাদের স্তন কেটে ফেলা হচ্ছে অথবা যদি দেখি, যে সব রাজকর্মচারীকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই দূবৃর্ত্ত, ডাকাতের সর্দার বা উচ্ছেদকারী হানাদার রূপে অত্মপ্রকাশ করেছে।"

জালালউদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করে সূবর্ণ গ্রাম থেকে শেখ জহিরকে নিয়ে এসে তার উপদেশ অনুসারে রাজকার্য পরিচালনা শুরু করেন। তিনি পূর্ববঙ্গে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের জন্য ঘোষণা করলেন যে, সকলকে মুসলমান হতে হবে নয়তো প্রাণ দিতে হবে। এই ঘোষনার পরে পূর্ববঙ্গের অনেকে কামরূপ আসাম ও কাছারের জঙ্গলে পালিয়ে যান। কিন্তু তথাকথিত নিন্মবর্ণের অনেক হিন্দুই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। ঐতিহাসিক রজনীকান্ত চক্রবর্তীর মতে, জালালউদ্দিনের ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলেই পূর্ব বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা এত বেশী। (গৌড়ের ইতিহাস, রজনীকান্ত চক্রবর্তী, পৃ-৪৫-৪৬)

কিন্তু আমাদের ঐতিহাসিকরা এইসব বিষয়গুলি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাদের মূল দিক নির্দেশই হল বিদেশীমুসলমান শাসকদের মহান করে দেখাও, মুসলমান শাসনের যুগকে পরাধীনতার যুগ বলে কখনো দেখিও না বরং ভারতের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগ হিসেবে দেখাও। ঐসব মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের উপর যে নারকীয় অত্যাচার করেছে কোটি কোটি হিন্দুর রক্তে ভারতবর্ষের মাটি কর্দমাক্ত করেছে। হিন্দুর ছিন্ন মুন্ড দিয়ে যে পাহাড় তৈরী করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে লোপাট করে দাও। তারা লক্ষ লক্ষ হিন্দু মন্দিরকে ধ্বংস করেছে বা মসজিদে রূপান্তরিত করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে সম্পূর্ণ মুছে দাও। এই নীতি অনুসরণের কারণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগন বলেন এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হবে। বলা বাহুল্য এই নীতি অনুসরণ করে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে না গিয়ে ঐতিহাসিকগণ জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও যে জগন্য অপরাধ করে চলেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
তাজমহল ছিল শিব মন্দির
ঐসব  বিশ্বাষঘাতক ঐতিহাসিকদের কারনেই পৃথিবীর মানুষ আজ তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে একটি কবর বলে জানে। অথচ সম্রাট শাহজাহানের সভাসদ অবদুর হামিদ লাহোরী তার বাদশাহ নামার ৪০৩ ও ৪০৪ পৃষ্ঠায় তাজমহলের প্রকৃত ইতিহাস লিপিদ্ধ করেছেন। 
তাজমহল সম্পর্কে মধ্যযুগের এই একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ খানাকে উপেক্ষা করে আধুনিক লেখকগন এক দৈব বাণী পেয়ে রাজা পরমার্দিদেবের তৈরী শিব মন্দিরটিকে শাহজাহানের স্ত্রীর কবর বলে চালিয়েছেন। 
শুধু তাই নয়সভাসদ যেখানে বলেছেন বিশাল ইমারতটি রাজা জয় সিংহের ছিলসম্রাট শাহাজাহান সেটি তার কাছ থেকে নেন। 
সেখানে আধুনিক ঐতিহাসিকগন দৈবী ক্ষমতা বলে সেটি নির্মানের শ্রমিক থেকে টাকার অংক পর্যন্ত কষে বের করেছেন। অথচ চান্দেলরাজ পরমার্দিদের(পরমল) কর্তৃক ১১৫৬ খৃষ্টাব্দে নির্মিত তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে শাহজাহান মুর্তিশূণ্য করে ইসলামী রূপ দিয়েছিলেন সেকথা তার সভাসদই বর্ণনা করে গিয়েছেন। 
এমনকি শাহজাহানের স্ত্রীর নাম আরজুমান্দ বানু পরিবর্তন করা হয় মন্দিরের নামের সাথে সংগতি রেখে। 
মুলতঃ সম্রাট শাহজাহান মন্দিরটিকে অপবিত্র করার জন্যই এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ আজ মিথ্যা প্রেমের কত কাহিনী প্রচার হয়েছে আমাদের জ্ঞানপাপী ঐতিহাসিকদের কল্যানে।
একটি আমেরিকান ল্যাবরেটরী দ্বারা কার্বন 14 পরীক্ষায় এবং নিউ ইয়র্কের প্র্যাট স্কুল অফ প্রফেসর কর্তৃক প্রবর্তিত তেজের নদী প্রান্তের একটি কাঠের টুকরাটি প্রকাশ করেছে যে শাহজাহানের চেয়ে 300 বছরের পুরনো দরজাটি দাড়িয়েছে। 11 শতকের পর থেকে বারবার মুসলিম আগ্রাসীদের দ্বারা তাজতের দরজাগুলি ভেঙ্গে যায়, সময়-কাল পরিবর্তিত হতে থাকে। তাজ মসজিদটি অনেক পুরানো। এটি 1155 এডি এর অন্তর্গত, যথা, শাহজাহানের প্রায় 500 বছর আগের।

জ্যান্ত কাফের ধরে আনলে ২ টাকা আর মাথা কেটে আনলে ১ টাকা

সুলতান নাসিরুউদ্দিনের সেনাপতি উলুঘ খা হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল অঞ্চলে গিয়ে সৈন্যদের হুকুম দিয়েছিলযে একটা জ্যান্ত কাফের ধরে আনতে পারবে সে দু টাকা আর যে কাফেরের কাটা মুন্ডু আনতে পারবে সে এক টাকা পাবে। ক্ষুদার্ত কুকুরের মত মুসলমান কাফেরের খোকে চুতুর্দিকে বের হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ২০ দিন ধরে সেই হত্যা কান্ড চলতে থাকে। কাটা মানুষের মাথা ও কবন্ধের (মাথা হীন দেহস্তুপ পাহাড়ের সমান উচু হয়ে যায়,- এই ইতিহাস আমাদের ঐতিহাসিকরা কেমন করে ভুলে যেতে বলেন?

এদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস-দাসী হিসেবে কাবুলকান্দাহারগজনীবাগদাদ এমনকি সুদুর দামাস্কাসে নিয়ে গিয়ে সেখানকার ক্রীতদাসের হাটে বিক্রয় হতে থাকলো। সুন্দরী হিন্দু নারীরা মুসলমানদের লালসার শিকারে পরিনত হতে থাকলো। উজির নাজিররা নিজেরা হিন্দু কন্যা জোর করে ধরে আনতে লাগলোকিছু নিজেরা রেখে কিছু সম্রাটের জন্য উপহার পাঠিয়ে কিছু মিনা বাজারে বিক্রী করে ভারতবর্ষে যে হাহাকার স্ৃষ্টি করেছিল তা ঐতিহাসিকরা কি করে ভূলতে বলেন ?

আগে হিন্দু সমাজের মেয়েরা ঘোমটা কাকে বলে জানত না । মুসলমানদের লালসার হাত হতে রক্ষা পাবার জন্যই  হিন্দু নারীদের ঘোমটার প্রচলন শুরু হয়। অনেকেরই জানা নেই যে বাংলা তথা উত্তর ভারতে হিন্দু মেয়েদের কেন রাতের অন্ধকারে বিয়ে দেয়া হয়। কোন বৈদিক যজ্ঞই রাত্রে করার নিয়ম নেই । দিনের আলো থাকতে থাকতেই যজ্ঞ শেষ করার বিধিতা সত্ত্বেও উত্তর ভারতে ও বাংলায় কেন রাতে যজ্ঞ করা হয় এবং বর রাতে কনের বাড়ীতে যাওয়ার নিয়ম  হল। কারন রাতের অন্ধকারে কুমারী কন্যাকে পাত্রস্থ করে মুসলমানদের অগোচরে শ্বশুর বাড়ী পাঠিয়ে দেবার জন্যই এই বিধি প্রচলিত হয়। পক্ষান্তরে দাক্ষিণোত্যে মুসলমানদের অনুপ্রবেশ কম হওয়ায় আজও দিনের আলোতেই সেখানে বিবাহ অনুষ্টান ও যজ্ঞ সম্পুন্ন করা হয়।
মুসলমান শাষকরা তো বটেই, তাদের অনুচররা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমানরা সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে হিন্দুর ঘরের সুন্দুরী মেয়েদের খোজখবর নিত এবং গায়ের জোরে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে লুটের মালে পরিণত করত। এ ব্যপারে ড রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, "দীনেশ চন্দ্র সেন হিন্দু মুসলমানের প্রীতির সম্বন্ধে উচ্ছাসিত ভাষায় প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তিনিও লিখেছেন যে , মুসলমান রাজা  ও শ্রেষ্ট ব্যক্তিগন সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে ক্রমাগত সুন্দরী হিন্দু ললনাদের অপহরণ করেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানগণ এবং শ্রীহট্টের বানিয়াচঙ্গের দেওয়ানগণ এই রূপে শত শত হিন্দু কন্যাকে যে বল পূর্বক বিয়ে করেছিলেন তার অবধি নাই। ঢাকার শাখারী বাজারের গোপন কুঠুরী ঘর তৈরীর পিছনেও এই ট্রাজেডি বিদ্যমান তা আপনারা সবাই জানেন।

"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেনতাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"
                                                                                     চলবে.......

ইসলামি শান্তি ও বিধর্মী সংহার-পর্ব~৩

(https://aryarishidot.blogspot.com/2017/11/blog-post.html)দ্বিতীয় পর্বের পরঃ-
পর্ব-৩
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস করা হয়েছিল কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় বসেই হিন্দু নির্যাতনের জন্য আরও কঠোর নীতি ঘোষনা করলেন। তিনি জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করলেন। উদয়পুর ও চিতোর অধিকার করে দুই'শ এর অধিক দেব মন্দির ধ্বংস করলেন। শিখ গুরু তেগ বাহাদুর আওরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোদী নীতি অমান্য করেন এবং কাশ্মীরের ব্রাম্মনদের আওরঙ্গজেব প্রবর্তিত হিন্দু বিরোধী নীতি অমান্য করতে উপদেশ দেন। এ জন্য আওরঙ্গজেবের সম্মূখে উপস্থিত করা হল এবং মৃত্যুভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ধর্ম ত্যাগ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করলেন। সম্রাটের আদেশে ততক্ষনাত তাকে হত্যা করা হল। পাঞ্জাবের বর্তমান পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলে 'সৎনামীহিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। একজন মুসলমান সৈন্য একজন সৎনামী ভক্তকে হত্যা করলে সৎনামীরা বিদ্রহী হয়ফলে আওরঙ্গজেবের বাহিনী সৎনামী হিন্দুদের প্রায় সকলকে হত্যা করেন।

আরঙ্গজেবের সমসাময়িক মুসলমান লিপিকার সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "১০৭৯ হিজরী ১৭ই জিলকদ (১৮এপ্রিল, ১৬৬৯) সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে খবর পৌছালো যে, থাট্টা সুলতান বিশেষ করে বারানসীর মুর্খ ব্রাম্মনরা তাদের মোটা মোটা ছেড়া গ্রন্থ থেক কি সব জংলী তত্ব ছাত্রদের শিক্ষা দিচ্ছে। কাফের হিন্দুদের সঙ্গে কিছু মুসলমান ছাত্র ও সেখানে এসব ছাই ভস্ম শিখতে যাচ্ছে। এমনকি বহু দূর দেশ থেকেও বহু ছাত্র ওসব ডাকিনী বিদ্যা শিখতে বারানসীতে উপস্থিত হচ্ছে। এ খবর শোনা মাত্র ধর্মের দিক নির্দেশকারী সম্রাট এক হুকুম জারী করে বললেন, সমস্ত প্রদেশের শাসনকর্তারা যেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে কাফেরদের মন্দির ও বিদ্যালয়সমূহ ধ্বংস করে দেন। এই মর্মে তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, তারা যেন মূর্তি পূজা এবং এই ধরনের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোকে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দেন। পরবর্তী রবিউল আউয়াল মাসের ১৫ তারিখে সম্রাটের কাছে  খবর এলো যে , সম্রাটের আজ্ঞানুসারে সরকারী কর্ম কর্তারা বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছে।"
[Elliot & Dowson, VII-183-184]

সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন, "১০৮০ হিজরীর রমজান মাসে (ডিসেম্বর, ১৬৬৯ খৃ) সম্রাটের রাজত্বকালের ত্রয়োদশ বছরে অত্যাচারীদের (হিন্দুদের) অবিচল শত্রু ও ন্যায় বিচারের অনুরাগী সম্রাট (আরঙ্গজেব) ডেরা বসুরায় নামে পরিচিত মথুরার হিন্দু মন্দিরট ধ্বংস করতে আদেশ দিলে অনতিবিলম্বে মেকী ধর্মের সুদৃঢ় ঘাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল। ঠিক সেই জায়গাতেই বহু টাকা ব্যয় করে এক বিশাল মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হল।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হল আজও মথুরায় গেলে দেখা যাবে যেসাবেক মন্দিরের ধ্বংস বা ধূলিস্যাত করা হয়নিশুধু তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী বিবরণে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কথা বলা হয়েছেক্কিন্তু আজও কাশীতে গেলে দেখা যায় যেধ্বংস করার নামে তাকে শুধু মসজিদে  রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা ও তার বিবরণ থেকে এই সিন্ধান্তেই আসতে হয় যেএই সব বিবরনে যেখানেই মন্দির ধ্বংস করার কথা আছেসে সমস্ত ক্ষেত্রেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর বুঝতে হবে। এটিই নিয়মকেননা হজরত মোহাম্মদ মক্কার কেবলেস্বর মন্দিরকে ধূলিস্যাত করেননিশুধু মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে এবং ছবিগুলোকে ফেলে দিয়ে কাবা শরীফ নামকরন করেছেন। এটি একটি সুন্নত। এই সুন্নত অনুসরন করা মুসলমান শাসকের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়ড়িয়েছিল। হিন্দু জনসাধারনকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়ে তাদেরই মন্দিরকে ঘসে মেজে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে মসজিদের রূপ দিয়ে নও মুসলমানের সেখানে নামাজ শিক্ষা দেওয়া ও পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। 
৩ টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হত

এক কালে আজকের করাচির নাম ছিল দেবল বা দেবালয়। কারনযেখানে সুমুদ্রের পাড়ে ছিল বিশাল একটি মন্দির । সমুদ্রের অনেক দূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যেত। মহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রষ্টাব্দে সেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তির করে উপমহাদেশে এই বর্বর কাজের  সূত্রপাত করেন। সেই সময়কার মুসলমান ঐতিহাসিকরা এই দানবীয় কাজকে মেকি দেব-দেবীর বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর মহান বিজয় বলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।


ইসলামী চিন্তাবিদের মতে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা খুব সোজা এবং তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব । প্রথমত, মন্দিরের বিগ্রহগুলোকে ভেঙে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত, আজান দেবার জন্য একটি মিনার তৈরী করতে হবে এবং শেষ খুতবা দেবার জন্য মিনার বানাতে হবে। কত কম সময়ের মধ্যে এই কর্ম সমাধান করা সম্ভব আজমীরের 'আড়াই দিন কা ঝোপড়া' তার স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। বিগত  ১০০০ বছরে লক্ষ লক্ষ মন্দির মুসলমানেরা ভেঙে ধূলিসাত করেছে; নয়তো মসজিদে রূপান্তর করেছে এমনি উপায়ে। সুলতান মাহমুদ সোমনাথের সুদ্ৃশ্য মন্দির ধ্বংস করেছে। বাবরের দ্বারা অযোধ্যার রাম মন্দির, আওরঙ্গজেবের দ্বারাকাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরা ও মথুরার কেশব মন্দির ভাঙা ও মসজিদে রূপান্তর করা  এর অন্যতম উদাহারণ। হজরত মহাম্মদই প্রথম এই পথ দেখিয়ছেন। তার আদর্শ অনুসরণে আজ পর্যন্ত এ কাজ চলছে তো চলছেই।
ঢাকার ওয়ারী এলাকার শিব-মন্দির ভেঙে ইসলামী বিদ্যালয়, বানিয়া নগরের সীতানাথ মন্দির, ক্যাপিট্যাল ঈদ্গা ময়দান, টিকাটুলীর শিব মন্দির, রাজধানী মার্কেট ও মসজিদ, টিপু সুলতান রোদের রাধ-কৃষ্ণের মন্দির হয়েছে মানিকগঞ্জ হাউজ।

সাকি মুস্তাইদ খার বিবরণ অনুসারে বুন্দেলখন্ডের রাজা নরসিং দেব যুবরাজ সেলিমকে নানাভাবে সাহায্য করার পুরুষ্কার হিসেবে মথুরায় মন্দির নির্মান করার অনুমতি লাভ করেন এবং ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঐ বিশাল মন্দির নির্মান করেন। আওরঙ্গজেবের আদেশে সেই মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী করা হয়। এই সংবাদে উল্লেসিত মুস্তাইদ খা লিখেছেন,
ইনসাল্লা, ভাগ্যগুনে আমরা ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়েছি। যে কর্ম সমাধা করা নিতান্ত দুঃসাধ্য ছিল, মেকি দেব দেবীর উপাসনালয় ধ্বংসকারী এই সম্রাটের রাজত্বে তাও সম্ভব হল। সত্য ধর্মের প্রতি (সম্রাটের) এই বিপুল সমর্থন উদ্ধত হিন্দু রাজাদের চরম আঘাত হানলো পুতুল দেবতার মত তারাও তাদের ভয়ার্ত মুখ দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে রাখলো।
মন্দির তো ভাঙা হল। কিন্তু মন্দিরের বিগ্রহের কি হবে ? সে ব্যপারে সাকি মুস্তাইদ খা লিখেছেন, "জংলী সেই সব মন্দির থেকে মূল্যবান রত্নখচিত সেই সব বিগ্রহ পাওয়া গেল সেগুলোকে আগ্রায় নিয়ে আসা হল এবং সেখানে নবাব বেগম সাহেবার মসজিদের সিড়ির নীচে ফেলে রাখা হল; যাতে সত্য ধর্মে বিশ্বসীরা (মসজিদে যাওয়ার আসার সময়) সেগুলোকে চিরকাল পায়ের তলায় মাড়িয়ে যেতে পারে।"



সাকি মুস্তাইদ খা আরও লিখেছেন- 
"রবিউল আখির মাসের ২৪ তারিখে খাঞ্জাহান বাহাদুর কয়েক গাড়ী হিন্দু বিগ্রহ নিয়ে যোধপুর ফেরলেন। সেখানকার অনেক মন্দির ভেঙে এ সব বিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই কাজের জন্য মহামান্য সম্রাট তাকে খুবই প্রশংসা করলেন। এই সব বিগ্রহের বেশীর ভাগই মূল্যন সোনা, রূপা, পিতল, তামা বা পাঠরের তৈরী ছিল। সম্রাটের হুকুম হল কিছু বিগ্রহ জঞ্জাল হিসেবে এখানে সেখানে ফেলে রাখতে যাতে বিশ্বাসীরা মসজিদে যাতায়তের সময় সেগুলোকে মাড়াতে পারে।"

পরে পাথরের মূর্তি গুলোকে ভেঙে খোয়া করা হয় এবং সেই খোয়া দিয়ে জাম-ই-মসজিদের চাতাল মোজাইক কয়া হয়; যাতে নামাজীরা এসব বিগ্রহকে মাড়িয়ে নামাজ পড়ে আল্লার নাম রোশন করতে পারে।

কাশীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে মথুরার বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির ধ্বংস করা হল। এই সংবাদ বিদ্যুতবেগে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। উল্লেখিত উভয় মন্দিরের জায়গাতেই বিশাল দুই মসজিদ খাড়া করা হল যা আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং যে কেউ কাশী বা মথুরা ভ্রমনে গেলে অনেক দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন
[R.C.Majumder, BVB. Vol.VII,p-265]

ঐতিহাসিক এ কে মজুমদার লিখেছেন, "মেঘ যেমন পৃথিবীর জল বর্ষণ করে ঔরঙ্গজেব সেই রকম সমস্ত দেশ জুড়ে বর্বরতা বর্ষন করলেন।"

মধ্য যুগে ভারতে হিন্দু প্রজা পীড়নকারী মুসলমান শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইলিয়ট বলেছেন, "আমরা অবাক হব না যদি দেখি যে এই সব অত্যাচারী শাসকদের আমলে ন্যায় বিচার কলুষিত ও পক্ষপাত দুষ্ট অথবা যদি দেখি যে, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে সর্বত্র রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ ভাবে পুরুষের পুরুষাঙ্গ ও মহিলাদের স্তন কেটে ফেলা হচ্ছে অথবা যদি দেখি, যে সব রাজকর্মচারীকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই দূবৃর্ত্ত, ডাকাতের সর্দার বা উচ্ছেদকারী হানাদার রূপে অত্মপ্রকাশ করেছে।"

জালালউদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করে সূবর্ণ গ্রাম থেকে শেখ জহিরকে নিয়ে এসে তার উপদেশ অনুসারে রাজকার্য পরিচালনা শুরু করেন। তিনি পূর্ববঙ্গে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের জন্য ঘোষণা করলেন যে, সকলকে মুসলমান হতে হবে নয়তো প্রাণ দিতে হবে। এই ঘোষনার পরে পূর্ববঙ্গের অনেকে কামরূপ আসাম ও কাছারের জঙ্গলে পালিয়ে যান। কিন্তু তথাকথিত নিন্মবর্ণের অনেক হিন্দুই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। ঐতিহাসিক রজনীকান্ত চক্রবর্তীর মতে, জালালউদ্দিনের ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলেই পূর্ব বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা এত বেশী। (গৌড়ের ইতিহাস, রজনীকান্ত চক্রবর্তী, পৃ-৪৫-৪৬)

কিন্তু আমাদের ঐতিহাসিকরা এইসব বিষয়গুলি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাদের মূল দিক নির্দেশই হল বিদেশীমুসলমান শাসকদের মহান করে দেখাও, মুসলমান শাসনের যুগকে পরাধীনতার যুগ বলে কখনো দেখিও না বরং ভারতের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগ হিসেবে দেখাও। ঐসব মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের উপর যে নারকীয় অত্যাচার করেছে কোটি কোটি হিন্দুর রক্তে ভারতবর্ষের মাটি কর্দমাক্ত করেছে। হিন্দুর ছিন্ন মুন্ড দিয়ে যে পাহাড় তৈরী করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে লোপাট করে দাও। তারা লক্ষ লক্ষ হিন্দু মন্দিরকে ধ্বংস করেছে বা মসজিদে রূপান্তরিত করেছে তা ইতিহাসের বই থেকে সম্পূর্ণ মুছে দাও। এই নীতি অনুসরণের কারণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগন বলেন এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হবে। বলা বাহুল্য এই নীতি অনুসরণ করে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে না গিয়ে ঐতিহাসিকগণ জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও যে জগন্য অপরাধ করে চলেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
তাজমহল ছিল শিব মন্দির
ঐসব  বিশ্বাষঘাতক ঐতিহাসিকদের কারনেই পৃথিবীর মানুষ আজ তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে একটি কবর বলে জানে। অথচ সম্রাট শাহজাহানের সভাসদ অবদুর হামিদ লাহোরী তার বাদশাহ নামার ৪০৩ ও ৪০৪ পৃষ্ঠায় তাজমহলের প্রকৃত ইতিহাস লিপিদ্ধ করেছেন। 
তাজমহল সম্পর্কে মধ্যযুগের এই একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ খানাকে উপেক্ষা করে আধুনিক লেখকগন এক দৈব বাণী পেয়ে রাজা পরমার্দিদেবের তৈরী শিব মন্দিরটিকে শাহজাহানের স্ত্রীর কবর বলে চালিয়েছেন। 
শুধু তাই নয়সভাসদ যেখানে বলেছেন বিশাল ইমারতটি রাজা জয় সিংহের ছিলসম্রাট শাহাজাহান সেটি তার কাছ থেকে নেন। 
সেখানে আধুনিক ঐতিহাসিকগন দৈবী ক্ষমতা বলে সেটি নির্মানের শ্রমিক থেকে টাকার অংক পর্যন্ত কষে বের করেছেন। অথচ চান্দেলরাজ পরমার্দিদের(পরমল) কর্তৃক ১১৫৬ খৃষ্টাব্দে নির্মিত তেজোমহালয় শিব মন্দিরকে শাহজাহান মুর্তিশূণ্য করে ইসলামী রূপ দিয়েছিলেন সেকথা তার সভাসদই বর্ণনা করে গিয়েছেন। 
এমনকি শাহজাহানের স্ত্রীর নাম আরজুমান্দ বানু পরিবর্তন করা হয় মন্দিরের নামের সাথে সংগতি রেখে। 
মুলতঃ সম্রাট শাহজাহান মন্দিরটিকে অপবিত্র করার জন্যই এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ আজ মিথ্যা প্রেমের কত কাহিনী প্রচার হয়েছে আমাদের জ্ঞানপাপী ঐতিহাসিকদের কল্যানে।
একটি আমেরিকান ল্যাবরেটরী দ্বারা কার্বন 14 পরীক্ষায় এবং নিউ ইয়র্কের প্র্যাট স্কুল অফ প্রফেসর কর্তৃক প্রবর্তিত তেজের নদী প্রান্তের একটি কাঠের টুকরাটি প্রকাশ করেছে যে শাহজাহানের চেয়ে 300 বছরের পুরনো দরজাটি দাড়িয়েছে। 11 শতকের পর থেকে বারবার মুসলিম আগ্রাসীদের দ্বারা তাজতের দরজাগুলি ভেঙ্গে যায়, সময়-কাল পরিবর্তিত হতে থাকে। তাজ মসজিদটি অনেক পুরানো। এটি 1155 এডি এর অন্তর্গত, যথা, শাহজাহানের প্রায় 500 বছর আগের।

জ্যান্ত কাফের ধরে আনলে ২ টাকা আর মাথা কেটে আনলে ১ টাকা

সুলতান নাসিরুউদ্দিনের সেনাপতি উলুঘ খা হিমালয়ের পাদদেশে গাড়োয়াল অঞ্চলে গিয়ে সৈন্যদের হুকুম দিয়েছিলযে একটা জ্যান্ত কাফের ধরে আনতে পারবে সে দু টাকা আর যে কাফেরের কাটা মুন্ডু আনতে পারবে সে এক টাকা পাবে। ক্ষুদার্ত কুকুরের মত মুসলমান কাফেরের খোকে চুতুর্দিকে বের হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ২০ দিন ধরে সেই হত্যা কান্ড চলতে থাকে। কাটা মানুষের মাথা ও কবন্ধের (মাথা হীন দেহস্তুপ পাহাড়ের সমান উচু হয়ে যায়,- এই ইতিহাস আমাদের ঐতিহাসিকরা কেমন করে ভুলে যেতে বলেন?

এদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস-দাসী হিসেবে কাবুলকান্দাহারগজনীবাগদাদ এমনকি সুদুর দামাস্কাসে নিয়ে গিয়ে সেখানকার ক্রীতদাসের হাটে বিক্রয় হতে থাকলো। সুন্দরী হিন্দু নারীরা মুসলমানদের লালসার শিকারে পরিনত হতে থাকলো। উজির নাজিররা নিজেরা হিন্দু কন্যা জোর করে ধরে আনতে লাগলোকিছু নিজেরা রেখে কিছু সম্রাটের জন্য উপহার পাঠিয়ে কিছু মিনা বাজারে বিক্রী করে ভারতবর্ষে যে হাহাকার স্ৃষ্টি করেছিল তা ঐতিহাসিকরা কি করে ভূলতে বলেন ?

আগে হিন্দু সমাজের মেয়েরা ঘোমটা কাকে বলে জানত না । মুসলমানদের লালসার হাত হতে রক্ষা পাবার জন্যই  হিন্দু নারীদের ঘোমটার প্রচলন শুরু হয়। অনেকেরই জানা নেই যে বাংলা তথা উত্তর ভারতে হিন্দু মেয়েদের কেন রাতের অন্ধকারে বিয়ে দেয়া হয়। কোন বৈদিক যজ্ঞই রাত্রে করার নিয়ম নেই । দিনের আলো থাকতে থাকতেই যজ্ঞ শেষ করার বিধিতা সত্ত্বেও উত্তর ভারতে ও বাংলায় কেন রাতে যজ্ঞ করা হয় এবং বর রাতে কনের বাড়ীতে যাওয়ার নিয়ম  হল। কারন রাতের অন্ধকারে কুমারী কন্যাকে পাত্রস্থ করে মুসলমানদের অগোচরে শ্বশুর বাড়ী পাঠিয়ে দেবার জন্যই এই বিধি প্রচলিত হয়। পক্ষান্তরে দাক্ষিণোত্যে মুসলমানদের অনুপ্রবেশ কম হওয়ায় আজও দিনের আলোতেই সেখানে বিবাহ অনুষ্টান ও যজ্ঞ সম্পুন্ন করা হয়।
মুসলমান শাষকরা তো বটেই, তাদের অনুচররা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমানরা সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে হিন্দুর ঘরের সুন্দুরী মেয়েদের খোজখবর নিত এবং গায়ের জোরে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে লুটের মালে পরিণত করত। এ ব্যপারে ড রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, "দীনেশ চন্দ্র সেন হিন্দু মুসলমানের প্রীতির সম্বন্ধে উচ্ছাসিত ভাষায় প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তিনিও লিখেছেন যে , মুসলমান রাজা  ও শ্রেষ্ট ব্যক্তিগন সিন্ধুকী (গুপ্তচর) লাগিয়ে ক্রমাগত সুন্দরী হিন্দু ললনাদের অপহরণ করেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানগণ এবং শ্রীহট্টের বানিয়াচঙ্গের দেওয়ানগণ এই রূপে শত শত হিন্দু কন্যাকে যে বল পূর্বক বিয়ে করেছিলেন তার অবধি নাই। ঢাকার শাখারী বাজারের গোপন কুঠুরী ঘর তৈরীর পিছনেও এই ট্রাজেডি বিদ্যমান তা আপনারা সবাই জানেন।

"যদি কোনো গবেষক উপরোক্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটিও ভূল বলে প্রমান করতে পারেনতাহলে আমরা তার কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।"
                                                                                     চলবে.......

Posted at December 29, 2018 |  by Arya ঋষি

৩ পর্ব
সৌদি বাহিনীর সমস্যা এবং লড়াইয়ের অন্তিম অবস্থা:
একই সাথে জুহাইমানের সঙ্গে থাকা অনেকেই এই মক্কার মসজিদ আল হারাম এ পড়াশোনার এবং জীবনের একটা বড় অংশ কাটানোর কারণে এই ভূগর্ভের বা পুরো জায়গাটি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানতো।এই কারণে ২০ তারিখ থেকে পরের দিন গুলো এই জায়গায় আক্রমন করতে গিয়ে একের পর এক সৌদি সেনা বা বাহিনীর লোক মারা পড়েছিল।সৌদি রাজশক্তি বুঝতে পারলো,এইভাবে হবে না,অন্য কোন উপায় নিতে হবে।
ফরাসী সহায়তা :
সমাধান পেতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য ফরাসি সরকারের সাহায্য চায় তাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি (Valéry Giscard d'Estaing) র কাছে।ফরাসি রাষ্ট্রপতি গোপনে তাদের ওই সময়ে সদ্য তৈরী সন্ত্রাসবাদ দমনের বিভাগ GIGN এর তিনজন বিশেষজ্ঞকে সৌদি আরবে পাঠান।গোপনে পাঠানো হয় যাতে এই অমুসলিম কোনো রাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো খবর বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রতিক্রিয়া না হয় ওই জন্য।
ফরাসি এই দল কাছের একটি হোটেল তাইফ এ অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে।এরা এই লোকগুলোকে উপরে নিয়ে আসার জন্য ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোতে বিশেষ গ্যাস পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাতে শ্বাস নিতে না পেরে এই লোকগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কক্ষগুলোতে মাটির তলা দিয়ে গর্ত করে বিশেষ গ্রেনেড এর মাধ্যমে এই গুলো ভিতরে ফাটানো হয় যাতে কোনো মৃত্যুর বদলে স্রেফ গ্রেনেড দিয়ে ওই গ্যাস কক্ষে ভরে যায়।এই গ্যাস ব্যবহার বা প্রাসঙ্গিক রসায়নিক ব্যবহারের একটা প্রশিক্ষণ তারা দিয়েছিল সৌদি সেনাদের কারণ অমুসলিম কারোর কাবা বা ওই মসজিদ আল হারাম এ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এই বিশেষ গ্যাসের নাম রসায়নিক হিসেবে বিশাল তবে সংক্ষেপে বলা হয় CB,যা দীর্ঘক্ষণ ফুসফুসে ঢুকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে প্রাথমিক পর্বে এতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হয় আর খোলা জায়গায় যেতেই হয়।
সাফল্যের মুখ দর্শন:
অবশেষে ডিসেম্বরের তিন তারিখ সকালে মাটির নিচের ওই কক্ষগুলোর ভিতরে এই গ্যাসের নিক্ষেপ করার জন্য জমির উপরে গর্ত করে এই গ্যাসের ক্যানিস্টার ফেলা হয় যা ভিতরে গিয়ে ফেটে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ রাখছিল না।এতে আংশিক সাফল্য এসেছিল,লড়াই চলে আরো ১৮ ঘন্টা।অবশেষে ডিসেম্বরের চার তারিখ প্রতিপক্ষের গুলির বা বোমার আওয়াজে বিরতি আসে।
একটি ছোট অপরিসর ভূগর্ভস্থ ঘরে জনা কুড়ি বিদ্ধস্ত,ক্লান্ত,যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলে আতঙ্কিত এই জঙ্গিদের একসাথে দেখা গেলো।এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্রিগেডিয়ার আল দাহারি অনুমান করেন এই সংঘর্ষের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনেই তথাকথিত সেই ঈমাম মেহেদির রূপে থাকা আল কাহতানি মারা পড়েছিল।এই খবর জুহাইমান গোপন রেখেছিল বা নিজেই এক পর্যায়ে একে মেরে বিষয়টি গোপন রেখেছিল।যাই হোক,ঈমাম মেহেদী গুলি বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে না এই লোকগুলোর অটল বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল যা সামগ্রিক মনোবলে আঘাত এসেছিল বলে ধরা হয়।এই পরিপূর্ণ দখলের আগে অবশ্য সৌদি বাহিনী জানতেও পারে নি যে তথাকথিত ইমাম মাহদী বা মেহেদী আগেই মারা গিয়েছে।
এই ঘরগুলোর ভিতরে ওই গাদাগাদি করে থাকা লোকেদের ভিতরে সেনাদল পায় সেই জুহাইমানকে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আল দাহরি নিজেই সনাক্ত করে এই লোকটিকে।পূর্ব নির্দেশের কারণে এবং পুরো বিষয়ের বাকি খবর বের করার জন্য একে আলাদা করে নিয়ে যায়।পুরো একটি সেনা স্কোয়াড এই যুহাইমান কে অক্ষত রাখার জন্য প্রহরাতে নিয়োজিত হয়।
কাবা এবং মসজিদ আল হারাম মুক্ত হওয়ার রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং পরবর্তী কার্যক্রম:
অবশেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ আল হারাম মসজিদ এবং কাবা স্থাপনার পুরো জায়গা মুক্ত হয়েছে ঘোষণা করে।গোটা দেশ এবং বিশ্বের কাছে এই জুহাইমান আর তার বাকি জীবিত সঙ্গীদের স্থির এবং ভিডিও ছবি দেখায়।
সব মিলিয়ে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় ঠিক পনেরো দিন পরে ডিসেম্বর ৫ তারিখের ভোর দেড়টার স্থানীয় সময়ে।একই সঙ্গে প্রিন্স নাইফ সরকারী ভাবে জানায় এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সেনাদল সেই মহম্মদ আল কাহতানির মৃত দেহ খুঁজে পেয়েছে।গুলি এবং অন্য ভাবে ক্ষতবিক্ষত এই মৃতদেহ দেখানো হয় টিভিতে।সৌদি ইন্টালিজেন্স এর প্রধান প্রিন্স তুর্কির মতে এই লোকটিকে জুহাইমান নিজেই খুন করেছিল যাতে জীবিত ধরা পড়ে পুরো মিথ্যের বিষয়টি আরো প্রকট না করতে পারে।
দেশের সাংবাদিকদের বা অন্য মানুষদের এই জায়গাটি দেখানো হলে তারা দেখতে পায় এই লোকগুলো আগুন জ্বালানোর জন্য পবিত্র কোরান ছিড়ে তার পাতা ও ব্যবহার করেছে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সঙ্গীদের মৃতদেহের মুখ যাতে না চিনতে পারে তার জন্য মুখের উপরে এই কাগজ জ্বালিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল।আশা করি পুরো বিষয়টি কত বিভৎস্য আর এই লোকগুলো প্রয়োজনে সবই করতে পারে তার একটা ধারণা পেয়েছেন।
এরপরে সেই ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় রাজা খালিদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টি শেষ হওয়া আর এই দখল মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন।এরপরে বুলেটের ক্ষত বাদে বাকি পুরো স্থাপনা কে এক অতি দ্রুততার সাথে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় পরের দুই দিনের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ছয় তারিখে বাদশা খালেদ একদল উচ্ছসিত নামাজির সাথে এই চত্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আসেন।পুরো ধর্মীয় রীতি মেনে হজর আল আসওয়াদ চুম্বন,কাবা গৃহকে সাতবার রীতি মেনে প্রদক্ষিন এবং জমজম এর জল পান করে আবার পুরনো রীতির সূচনা করেন।এরপরের দিন জুম্মার নমাজ হয় এক অন্য পরিবেশে।এতে অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ আগেই এসে জড়ো হয়েছিল আগের রাত থেকেই।পুরো ইসলামী বিশ্বের দেশগুলোতে এই ঘটনা উপগ্রহর মাধ্যমে সমপ্রসার করা হয়।
হতাহতর বিবরণ এবং জুহাইমানের চরিত্রের এক ঝলক :
যে উদার পথের সমাজ রেখে চলার কাজ শুরু করেছিল এই সৌদি রাজবংশ তার মূল্য দিতে হয়েছিল অতীব কঠিন ভাবে আর তা দিয়েছিল মূলত সৌদি নাগরিকরা।এই ঘটনায় হতাহত মানুষের মধ্যে ১২৭জন বিভিন্ন বাহিনীর মানুষ।এছাড়া তাদের ৪৫১ জন আহত হয়েছিল এই সময়ে।অন্যদিকে সরকারী ভাষ্যে জানা যায় সাধারণ পুন্যার্থীর মধ্যে ২৬জন ওই জায়গায় থাকা মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সৌদি ছাড়াও ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,মিশর এবং বার্মার নাগরিক ছিল।এ ছড়া আহত হয়েছিল একশো জন।
অন্যদিকে এই দখলদারি করা জুহাইমানের দলের ২৬০জনের মধ্যে ১১৭ জন নিহত হয়েছিল,সরাসরি লড়াইয়ে ৯০জন আর পরে হাসপাতালে আরো ২৭জন। গ্রেফতার করা জুহাইমান তার কাজের বিষয়ে কোনো অনুতাপ দেখায় নি বলে জানা যায়।সেই সময়ের সৌদি প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল তাকে এই কাজ কেন করেছে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর ছিল "সবই ভাগ্য " ,তার কিছু চাই কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জল খেতে চায়।এই ঘটনার পরে জুহাইমান আর জীবিত সঙ্গীদের ক্যামেরার সামনে আনা হয়।আরো কিছু পরে হাসপাতালে তার সাথে দেখা হয় প্রিন্স তুর্কির,সেই সময়ে জুহাইমান নির্লজ্জের মতো বাদশা খালেদের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে,এই কাজ করে সে অনুতপ্ত এই বলে।উত্তরে তুর্কি তাকে বলে এই কাজের জন্য সে ক্ষমার যোগ্য না।এই ছিল সৌদি রাজশক্তির সাথে তাঁর শেষ বার্তালাপ।
সৌদি বিচার যেখানে রাজাই শেষ কথা :
জুহাইমানের দলের বাকি ১৪৩ জনের মধ্যে ৬৩জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সৌদি আদালতে।১৯৮০ সালের ৯ তারিখে সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আটটি জায়গায় এদের শিরোচ্ছেদে মৃত্যুর ফরমান জারি করে।কেন আটটি জায়গায়?এই বিষয়ে বাখ্যা দিতে আরো এক শীর্ষব্যক্তি প্রিন্স তুর্কি বলে যে এটি ছিল গোটা সৌদি আরবের বিষয় তাই মুখ্য জায়গাগুলোতে এই কাজগুলো করা হয় যাতে সার্বিক ভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।এই ৬৩ জনের মধ্যে ৪১জন সৌদি নাগরিক,১০জন মিশরের,সাতজন ইয়েমেনের,তিনজন কুয়েতের,একজন সুদানের আর একজন ইরাকের ছিল।যেমন বলেছি,আলাদা করে এদের ১৫জন কে মক্কাতে,১০ জন কে রিয়াদে,মদিনা,দাম্মাম,বুরাইদাহ এবং আবহাতে সাত জন করে,হাইল এবং তাবুক এ পাঁচজন করে এই মৃত্যুদন্ড পাওয়া লোকেদের শিরচ্ছেদ করা হয়।প্রথমে মৃত্যুদন্ড পেলেও পরবর্তিতে কারাদন্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে।এ ছাড়া এই দলে থাকা ২৩ জন মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মহিলাদের ২ বছর করে কারাদন্ড আর শিশুদের নির্দিস্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।জুহাইমানকে ওই ১৫ জনের সাথে মক্কাতে শিরচ্ছেদ করা হয় জানুয়ারির নয় তারিখ,১৯৮০তে ।
সরকারী ভাবে সৌদি প্রশাসন ঘোষণা করে যে এই নানান দেশের লোক যুক্ত হলেও কোনো দেশ এই কাজে উস্কানি দেয় নি বা সাহায্য করে নি।পুরো বিষয়টি একটি ধর্মীয় কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে হওয়া কাজ।জনমানসে এই বিষয়ে কোনো ছাপ পড়েনি,অন্তত কোনো জায়গায় এই নিয়ে কোনো আলোড়ন বা বিক্ষোভ দেখা যায় নি।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টা একটা বিশাল মানসিক ধাক্কা ছিল প্রশাসক বা সাধারণ মানুষের কাছে।
বিষ বৃক্ষের সূচনা বা এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন:
এতে সব শেষ হয় না , সৌদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ঘটনা কট্টরপন্থীদের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সৌদি ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী।এই গোড়া মানসিকতার থেকে আর কোনো বিদ্রোহ যাতে তাদের গদিচ্যুত না করে তার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই দেশটি মধ্যযুগীয় একটি ব্যবস্থায় চলে যায়।আজকের পরিচিত লাদেনের প্রচারেও পরবর্তীতে এই ঘটনা এবং এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে না মিটিয়ে গোটা স্থাপনার অপমানকর অবস্থা করার জন্য সৌদি রাজ্ পরিবারের উপর অভিযোগ দেখা যায়।
জুহাইমান সৌদি দূরদর্শনে মহিলাদের দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।এই ঘটনার পরে আর কেউ কোনো মহিলা উপস্থাপিকাকে সৌদি দূরদর্শনে দেখা যায় নি।সম্প্রতি সামাজিক সংস্কারের পরে কিছু হবে কি না জানা গেলেও সেই দিন গুলো এখনো অনুপস্থিত।
পরবর্তিতে বা অন্তিম পর্বে থাকবে বিষবৃক্ষের অবসানের বিষয়ে আশার আলোর বিবরণ।আমার একটি দুর্বলতা আছে আর তা হলো আমি নেতিবাচক বিষয়গুলো একটু এড়িয়ে যাই,হয়তো অনেকেই এটিকে পলায়নী মনোবৃত্তি ভাবতে পারেন তবে আজ পর্যন্ত অনেক এই ধরনের বিষয়ের গভীরে গিয়ে দেখেছি আবার স্ব্দর্থ্ক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে তাই আলাদা করে ওই অন্ধকারের অবসানের বিষয়ে লেখার জন্য রাখলাম চতুর্থ পর্ব।
আমার খুব প্রিয় একটি উদ্ধৃতি আছে ওটা দিয়েই আবার এই পর্ব শেষ করছি, “মাভৈ! রাত যতো অন্ধকার,প্রত্যুষ ততোই নিকটে জানিবেন “ .....হ্যা নির্দিস্ট তথ্যসূত্র আর যুক্তির নিরিখেই এই দাবি আবার রাখলাম।




প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র:
১. দখলমুক্ত করার পরে বাদশার কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দর্শন https://www.youtube.com/watch?v=eCfv0_ee9pw
২. একটু পাকিস্থানের কাগজ থেকে ,আল কায়দার সূচনা হওয়ার বিষয়টি সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এতে https://www.dawn.com/news/503835/thirty-years-on-mecca-mosque-siege-reverberates
৩. একই ভাবে পরবর্তী সন্ত্রাসবাদের যোগ সূত্র নিয়ে সুখপাঠ্য একটি লেখা https://www.thoughtco.com/indispensable-books-on-the-middle-east-2353389
৪. আলোচিত সেই জুহাইমানের সন্তান হয়েছে অন্য রকম একজন সুনাগরিক-প্রমাণিত হয় পরিবেশ একটি বড় ফারাক করে দেয় মানুষের গঠনের https://english.alarabiya.net/en/News/gulf/2018/09/03/Son-of-Juhayman-infamous-Mecca-attacker-promoted-to-be-a-Saudi-Guards-colonel.html
৫. একটু ফিরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা https://www.brookings.edu/events/terrorism-in-saudi-arabia-past-and-present/

কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দখলের কালান্তক ইতিহাসঃ-৩ পর্ব


৩ পর্ব
সৌদি বাহিনীর সমস্যা এবং লড়াইয়ের অন্তিম অবস্থা:
একই সাথে জুহাইমানের সঙ্গে থাকা অনেকেই এই মক্কার মসজিদ আল হারাম এ পড়াশোনার এবং জীবনের একটা বড় অংশ কাটানোর কারণে এই ভূগর্ভের বা পুরো জায়গাটি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানতো।এই কারণে ২০ তারিখ থেকে পরের দিন গুলো এই জায়গায় আক্রমন করতে গিয়ে একের পর এক সৌদি সেনা বা বাহিনীর লোক মারা পড়েছিল।সৌদি রাজশক্তি বুঝতে পারলো,এইভাবে হবে না,অন্য কোন উপায় নিতে হবে।
ফরাসী সহায়তা :
সমাধান পেতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য ফরাসি সরকারের সাহায্য চায় তাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি (Valéry Giscard d'Estaing) র কাছে।ফরাসি রাষ্ট্রপতি গোপনে তাদের ওই সময়ে সদ্য তৈরী সন্ত্রাসবাদ দমনের বিভাগ GIGN এর তিনজন বিশেষজ্ঞকে সৌদি আরবে পাঠান।গোপনে পাঠানো হয় যাতে এই অমুসলিম কোনো রাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো খবর বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রতিক্রিয়া না হয় ওই জন্য।
ফরাসি এই দল কাছের একটি হোটেল তাইফ এ অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে।এরা এই লোকগুলোকে উপরে নিয়ে আসার জন্য ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোতে বিশেষ গ্যাস পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাতে শ্বাস নিতে না পেরে এই লোকগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কক্ষগুলোতে মাটির তলা দিয়ে গর্ত করে বিশেষ গ্রেনেড এর মাধ্যমে এই গুলো ভিতরে ফাটানো হয় যাতে কোনো মৃত্যুর বদলে স্রেফ গ্রেনেড দিয়ে ওই গ্যাস কক্ষে ভরে যায়।এই গ্যাস ব্যবহার বা প্রাসঙ্গিক রসায়নিক ব্যবহারের একটা প্রশিক্ষণ তারা দিয়েছিল সৌদি সেনাদের কারণ অমুসলিম কারোর কাবা বা ওই মসজিদ আল হারাম এ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এই বিশেষ গ্যাসের নাম রসায়নিক হিসেবে বিশাল তবে সংক্ষেপে বলা হয় CB,যা দীর্ঘক্ষণ ফুসফুসে ঢুকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে প্রাথমিক পর্বে এতে শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হয় আর খোলা জায়গায় যেতেই হয়।
সাফল্যের মুখ দর্শন:
অবশেষে ডিসেম্বরের তিন তারিখ সকালে মাটির নিচের ওই কক্ষগুলোর ভিতরে এই গ্যাসের নিক্ষেপ করার জন্য জমির উপরে গর্ত করে এই গ্যাসের ক্যানিস্টার ফেলা হয় যা ভিতরে গিয়ে ফেটে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ রাখছিল না।এতে আংশিক সাফল্য এসেছিল,লড়াই চলে আরো ১৮ ঘন্টা।অবশেষে ডিসেম্বরের চার তারিখ প্রতিপক্ষের গুলির বা বোমার আওয়াজে বিরতি আসে।
একটি ছোট অপরিসর ভূগর্ভস্থ ঘরে জনা কুড়ি বিদ্ধস্ত,ক্লান্ত,যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলে আতঙ্কিত এই জঙ্গিদের একসাথে দেখা গেলো।এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্রিগেডিয়ার আল দাহারি অনুমান করেন এই সংঘর্ষের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনেই তথাকথিত সেই ঈমাম মেহেদির রূপে থাকা আল কাহতানি মারা পড়েছিল।এই খবর জুহাইমান গোপন রেখেছিল বা নিজেই এক পর্যায়ে একে মেরে বিষয়টি গোপন রেখেছিল।যাই হোক,ঈমাম মেহেদী গুলি বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে না এই লোকগুলোর অটল বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল যা সামগ্রিক মনোবলে আঘাত এসেছিল বলে ধরা হয়।এই পরিপূর্ণ দখলের আগে অবশ্য সৌদি বাহিনী জানতেও পারে নি যে তথাকথিত ইমাম মাহদী বা মেহেদী আগেই মারা গিয়েছে।
এই ঘরগুলোর ভিতরে ওই গাদাগাদি করে থাকা লোকেদের ভিতরে সেনাদল পায় সেই জুহাইমানকে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আল দাহরি নিজেই সনাক্ত করে এই লোকটিকে।পূর্ব নির্দেশের কারণে এবং পুরো বিষয়ের বাকি খবর বের করার জন্য একে আলাদা করে নিয়ে যায়।পুরো একটি সেনা স্কোয়াড এই যুহাইমান কে অক্ষত রাখার জন্য প্রহরাতে নিয়োজিত হয়।
কাবা এবং মসজিদ আল হারাম মুক্ত হওয়ার রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং পরবর্তী কার্যক্রম:
অবশেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের প্রধান প্রিন্স নাইফ আল হারাম মসজিদ এবং কাবা স্থাপনার পুরো জায়গা মুক্ত হয়েছে ঘোষণা করে।গোটা দেশ এবং বিশ্বের কাছে এই জুহাইমান আর তার বাকি জীবিত সঙ্গীদের স্থির এবং ভিডিও ছবি দেখায়।
সব মিলিয়ে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় ঠিক পনেরো দিন পরে ডিসেম্বর ৫ তারিখের ভোর দেড়টার স্থানীয় সময়ে।একই সঙ্গে প্রিন্স নাইফ সরকারী ভাবে জানায় এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সেনাদল সেই মহম্মদ আল কাহতানির মৃত দেহ খুঁজে পেয়েছে।গুলি এবং অন্য ভাবে ক্ষতবিক্ষত এই মৃতদেহ দেখানো হয় টিভিতে।সৌদি ইন্টালিজেন্স এর প্রধান প্রিন্স তুর্কির মতে এই লোকটিকে জুহাইমান নিজেই খুন করেছিল যাতে জীবিত ধরা পড়ে পুরো মিথ্যের বিষয়টি আরো প্রকট না করতে পারে।
দেশের সাংবাদিকদের বা অন্য মানুষদের এই জায়গাটি দেখানো হলে তারা দেখতে পায় এই লোকগুলো আগুন জ্বালানোর জন্য পবিত্র কোরান ছিড়ে তার পাতা ও ব্যবহার করেছে।অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সঙ্গীদের মৃতদেহের মুখ যাতে না চিনতে পারে তার জন্য মুখের উপরে এই কাগজ জ্বালিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল।আশা করি পুরো বিষয়টি কত বিভৎস্য আর এই লোকগুলো প্রয়োজনে সবই করতে পারে তার একটা ধারণা পেয়েছেন।
এরপরে সেই ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় রাজা খালিদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টি শেষ হওয়া আর এই দখল মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বলেন।এরপরে বুলেটের ক্ষত বাদে বাকি পুরো স্থাপনা কে এক অতি দ্রুততার সাথে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় পরের দুই দিনের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ছয় তারিখে বাদশা খালেদ একদল উচ্ছসিত নামাজির সাথে এই চত্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আসেন।পুরো ধর্মীয় রীতি মেনে হজর আল আসওয়াদ চুম্বন,কাবা গৃহকে সাতবার রীতি মেনে প্রদক্ষিন এবং জমজম এর জল পান করে আবার পুরনো রীতির সূচনা করেন।এরপরের দিন জুম্মার নমাজ হয় এক অন্য পরিবেশে।এতে অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ আগেই এসে জড়ো হয়েছিল আগের রাত থেকেই।পুরো ইসলামী বিশ্বের দেশগুলোতে এই ঘটনা উপগ্রহর মাধ্যমে সমপ্রসার করা হয়।
হতাহতর বিবরণ এবং জুহাইমানের চরিত্রের এক ঝলক :
যে উদার পথের সমাজ রেখে চলার কাজ শুরু করেছিল এই সৌদি রাজবংশ তার মূল্য দিতে হয়েছিল অতীব কঠিন ভাবে আর তা দিয়েছিল মূলত সৌদি নাগরিকরা।এই ঘটনায় হতাহত মানুষের মধ্যে ১২৭জন বিভিন্ন বাহিনীর মানুষ।এছাড়া তাদের ৪৫১ জন আহত হয়েছিল এই সময়ে।অন্যদিকে সরকারী ভাষ্যে জানা যায় সাধারণ পুন্যার্থীর মধ্যে ২৬জন ওই জায়গায় থাকা মানুষ মারা যায় যার মধ্যে সৌদি ছাড়াও ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,মিশর এবং বার্মার নাগরিক ছিল।এ ছড়া আহত হয়েছিল একশো জন।
অন্যদিকে এই দখলদারি করা জুহাইমানের দলের ২৬০জনের মধ্যে ১১৭ জন নিহত হয়েছিল,সরাসরি লড়াইয়ে ৯০জন আর পরে হাসপাতালে আরো ২৭জন। গ্রেফতার করা জুহাইমান তার কাজের বিষয়ে কোনো অনুতাপ দেখায় নি বলে জানা যায়।সেই সময়ের সৌদি প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল তাকে এই কাজ কেন করেছে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর ছিল "সবই ভাগ্য " ,তার কিছু চাই কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জল খেতে চায়।এই ঘটনার পরে জুহাইমান আর জীবিত সঙ্গীদের ক্যামেরার সামনে আনা হয়।আরো কিছু পরে হাসপাতালে তার সাথে দেখা হয় প্রিন্স তুর্কির,সেই সময়ে জুহাইমান নির্লজ্জের মতো বাদশা খালেদের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে,এই কাজ করে সে অনুতপ্ত এই বলে।উত্তরে তুর্কি তাকে বলে এই কাজের জন্য সে ক্ষমার যোগ্য না।এই ছিল সৌদি রাজশক্তির সাথে তাঁর শেষ বার্তালাপ।
সৌদি বিচার যেখানে রাজাই শেষ কথা :
জুহাইমানের দলের বাকি ১৪৩ জনের মধ্যে ৬৩জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় সৌদি আদালতে।১৯৮০ সালের ৯ তারিখে সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আটটি জায়গায় এদের শিরোচ্ছেদে মৃত্যুর ফরমান জারি করে।কেন আটটি জায়গায়?এই বিষয়ে বাখ্যা দিতে আরো এক শীর্ষব্যক্তি প্রিন্স তুর্কি বলে যে এটি ছিল গোটা সৌদি আরবের বিষয় তাই মুখ্য জায়গাগুলোতে এই কাজগুলো করা হয় যাতে সার্বিক ভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।এই ৬৩ জনের মধ্যে ৪১জন সৌদি নাগরিক,১০জন মিশরের,সাতজন ইয়েমেনের,তিনজন কুয়েতের,একজন সুদানের আর একজন ইরাকের ছিল।যেমন বলেছি,আলাদা করে এদের ১৫জন কে মক্কাতে,১০ জন কে রিয়াদে,মদিনা,দাম্মাম,বুরাইদাহ এবং আবহাতে সাত জন করে,হাইল এবং তাবুক এ পাঁচজন করে এই মৃত্যুদন্ড পাওয়া লোকেদের শিরচ্ছেদ করা হয়।প্রথমে মৃত্যুদন্ড পেলেও পরবর্তিতে কারাদন্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে।এ ছাড়া এই দলে থাকা ২৩ জন মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মহিলাদের ২ বছর করে কারাদন্ড আর শিশুদের নির্দিস্ট আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।জুহাইমানকে ওই ১৫ জনের সাথে মক্কাতে শিরচ্ছেদ করা হয় জানুয়ারির নয় তারিখ,১৯৮০তে ।
সরকারী ভাবে সৌদি প্রশাসন ঘোষণা করে যে এই নানান দেশের লোক যুক্ত হলেও কোনো দেশ এই কাজে উস্কানি দেয় নি বা সাহায্য করে নি।পুরো বিষয়টি একটি ধর্মীয় কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে হওয়া কাজ।জনমানসে এই বিষয়ে কোনো ছাপ পড়েনি,অন্তত কোনো জায়গায় এই নিয়ে কোনো আলোড়ন বা বিক্ষোভ দেখা যায় নি।সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টা একটা বিশাল মানসিক ধাক্কা ছিল প্রশাসক বা সাধারণ মানুষের কাছে।
বিষ বৃক্ষের সূচনা বা এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন:
এতে সব শেষ হয় না , সৌদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ঘটনা কট্টরপন্থীদের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সৌদি ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী।এই গোড়া মানসিকতার থেকে আর কোনো বিদ্রোহ যাতে তাদের গদিচ্যুত না করে তার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই দেশটি মধ্যযুগীয় একটি ব্যবস্থায় চলে যায়।আজকের পরিচিত লাদেনের প্রচারেও পরবর্তীতে এই ঘটনা এবং এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে না মিটিয়ে গোটা স্থাপনার অপমানকর অবস্থা করার জন্য সৌদি রাজ্ পরিবারের উপর অভিযোগ দেখা যায়।
জুহাইমান সৌদি দূরদর্শনে মহিলাদের দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।এই ঘটনার পরে আর কেউ কোনো মহিলা উপস্থাপিকাকে সৌদি দূরদর্শনে দেখা যায় নি।সম্প্রতি সামাজিক সংস্কারের পরে কিছু হবে কি না জানা গেলেও সেই দিন গুলো এখনো অনুপস্থিত।
পরবর্তিতে বা অন্তিম পর্বে থাকবে বিষবৃক্ষের অবসানের বিষয়ে আশার আলোর বিবরণ।আমার একটি দুর্বলতা আছে আর তা হলো আমি নেতিবাচক বিষয়গুলো একটু এড়িয়ে যাই,হয়তো অনেকেই এটিকে পলায়নী মনোবৃত্তি ভাবতে পারেন তবে আজ পর্যন্ত অনেক এই ধরনের বিষয়ের গভীরে গিয়ে দেখেছি আবার স্ব্দর্থ্ক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে তাই আলাদা করে ওই অন্ধকারের অবসানের বিষয়ে লেখার জন্য রাখলাম চতুর্থ পর্ব।
আমার খুব প্রিয় একটি উদ্ধৃতি আছে ওটা দিয়েই আবার এই পর্ব শেষ করছি, “মাভৈ! রাত যতো অন্ধকার,প্রত্যুষ ততোই নিকটে জানিবেন “ .....হ্যা নির্দিস্ট তথ্যসূত্র আর যুক্তির নিরিখেই এই দাবি আবার রাখলাম।




প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র:
১. দখলমুক্ত করার পরে বাদশার কাবা এবং মসজিদ আল হারাম দর্শন https://www.youtube.com/watch?v=eCfv0_ee9pw
২. একটু পাকিস্থানের কাগজ থেকে ,আল কায়দার সূচনা হওয়ার বিষয়টি সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এতে https://www.dawn.com/news/503835/thirty-years-on-mecca-mosque-siege-reverberates
৩. একই ভাবে পরবর্তী সন্ত্রাসবাদের যোগ সূত্র নিয়ে সুখপাঠ্য একটি লেখা https://www.thoughtco.com/indispensable-books-on-the-middle-east-2353389
৪. আলোচিত সেই জুহাইমানের সন্তান হয়েছে অন্য রকম একজন সুনাগরিক-প্রমাণিত হয় পরিবেশ একটি বড় ফারাক করে দেয় মানুষের গঠনের https://english.alarabiya.net/en/News/gulf/2018/09/03/Son-of-Juhayman-infamous-Mecca-attacker-promoted-to-be-a-Saudi-Guards-colonel.html
৫. একটু ফিরে দেখা এবং বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা https://www.brookings.edu/events/terrorism-in-saudi-arabia-past-and-present/

Posted at November 18, 2018 |  by Arya ঋষি

মহাপরিচালকের কথা

আল-হিদায়া হানাফী মাযহাবের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, নির্ভরযােগ্য এবং জনপ্রিয় প্রামাণ্য ফিকাহ গ্রন্থ। এই গ্রন্থের প্রণেতা ইমাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে আবু বকর ৫১১ হিঃ মােতাবেক ১১১৭ খ্রিঃ আফগানিস্তানের মারগীনান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। ৫৯৩ হিঃ মােতাবেক ১১৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। অসাধারণ প্রতিভাধর এই লেখক ছিলেন একাধারে হাফেজে কোরআন, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ এবং নীতি শাস্ত্রবিদ। লেখকের সুদীর্ঘ ১৩ বছরের পরিশ্রমের ফসল এই আল-হিদায়া।
আল-হিদায়া ইসলামী আইন শাস্ত্রের একখানি নির্ভযােগ্য মৌলিক গ্রন্থ। গ্রন্থকার তাঁর এই গ্রন্থখানিতে ইসলামী আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারায় ক্ষেত্র বিশেষে অন্যান্য ইমামদের মতামত দলীল-প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছেন। হানাফী মাযহাবের রায় ও সিদ্ধান্তসমূহ পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করে এসবের সমর্থনে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের এমন সব অকাট্য প্রমাণাদি পেশ করেছেন, যারা হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত এবং রায়সমূহই সঠিক, অধিক গ্রহণযােগ্য ও যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে। গ্রন্থখানিতে কোথাও ইমাম আবু হানীফা (র), কোথাও ইমাম আবু ইউসূফ (র) এবং কোথাও ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর সিদ্ধান্তকে যুক্তি-প্রমাণসহ প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে।
ইতােপূর্বে আমরা এই গ্রন্থখানির প্রথম বণ্ড বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছি। এবার এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করা হলাে। ভবিষ্যতে গ্রন্থখানির অবশিষ্টাংশের অনুবাদ পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে
ইনশাআল্লাহ
সবশেষে আমি বিজ্ঞ অনুবাদক, প্রাজ্ঞ সম্পাদক, অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ গ্রন্থখানি প্রকাশনার ক্ষেত্রে যারা সাহায্য-সহযােগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।

মওলানা আবদুল আউয়াল
মহাপরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের জগতে, বিশেষতঃ হানাফি ফিকাহ্‌র পরিমণ্ডলে আল-হিদায়া একটি মৌলিক ও বুনিয়াদি গ্রন্থ । এক কথায় এ গ্রন্থকে হানাফী ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা যায়।  এই অংশটিতে দাসীর সাথে সহবাস এবং সহবাসের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার ইসলামের বিধান পাঠকের জন্য দেয়া হলো। সেই সাথে, কোন লোকের পুত্রের দাসীর সাথে সে এবং তার পুত্র উভয়ই যৌন সম্পর্ক করলে সন্তান জন্ম নিলে যেই সমস্যাটি দেখা দিবে, সেই সমস্যার সমাধান এখানে দেয়া হয়েছে।






আসিফ মহিউদ্দীন

দাসীর উম্মে ওয়ালাদ হওয়া- আল হিদায়া

মহাপরিচালকের কথা

আল-হিদায়া হানাফী মাযহাবের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, নির্ভরযােগ্য এবং জনপ্রিয় প্রামাণ্য ফিকাহ গ্রন্থ। এই গ্রন্থের প্রণেতা ইমাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে আবু বকর ৫১১ হিঃ মােতাবেক ১১১৭ খ্রিঃ আফগানিস্তানের মারগীনান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। ৫৯৩ হিঃ মােতাবেক ১১৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। অসাধারণ প্রতিভাধর এই লেখক ছিলেন একাধারে হাফেজে কোরআন, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ এবং নীতি শাস্ত্রবিদ। লেখকের সুদীর্ঘ ১৩ বছরের পরিশ্রমের ফসল এই আল-হিদায়া।
আল-হিদায়া ইসলামী আইন শাস্ত্রের একখানি নির্ভযােগ্য মৌলিক গ্রন্থ। গ্রন্থকার তাঁর এই গ্রন্থখানিতে ইসলামী আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারায় ক্ষেত্র বিশেষে অন্যান্য ইমামদের মতামত দলীল-প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছেন। হানাফী মাযহাবের রায় ও সিদ্ধান্তসমূহ পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করে এসবের সমর্থনে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের এমন সব অকাট্য প্রমাণাদি পেশ করেছেন, যারা হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত এবং রায়সমূহই সঠিক, অধিক গ্রহণযােগ্য ও যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে। গ্রন্থখানিতে কোথাও ইমাম আবু হানীফা (র), কোথাও ইমাম আবু ইউসূফ (র) এবং কোথাও ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর সিদ্ধান্তকে যুক্তি-প্রমাণসহ প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে।
ইতােপূর্বে আমরা এই গ্রন্থখানির প্রথম বণ্ড বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছি। এবার এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করা হলাে। ভবিষ্যতে গ্রন্থখানির অবশিষ্টাংশের অনুবাদ পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে
ইনশাআল্লাহ
সবশেষে আমি বিজ্ঞ অনুবাদক, প্রাজ্ঞ সম্পাদক, অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ গ্রন্থখানি প্রকাশনার ক্ষেত্রে যারা সাহায্য-সহযােগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।

মওলানা আবদুল আউয়াল
মহাপরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের জগতে, বিশেষতঃ হানাফি ফিকাহ্‌র পরিমণ্ডলে আল-হিদায়া একটি মৌলিক ও বুনিয়াদি গ্রন্থ । এক কথায় এ গ্রন্থকে হানাফী ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা যায়।  এই অংশটিতে দাসীর সাথে সহবাস এবং সহবাসের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার ইসলামের বিধান পাঠকের জন্য দেয়া হলো। সেই সাথে, কোন লোকের পুত্রের দাসীর সাথে সে এবং তার পুত্র উভয়ই যৌন সম্পর্ক করলে সন্তান জন্ম নিলে যেই সমস্যাটি দেখা দিবে, সেই সমস্যার সমাধান এখানে দেয়া হয়েছে।






আসিফ মহিউদ্দীন

Posted at October 18, 2018 |  by Arya ঋষি

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top