All Stories

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

প্রশ্নঃ আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯২২, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১) । এই হাদিস হতে পরিস্কার বলা হচ্ছে ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে হত্যা করতে হবে এটা কি অন্যায় না ? ধরেন আমি কি মানব কি মানবো না এটা আমার ইচ্ছা , অবশ্য কারো ক্ষতি করবো না তাহলে এখানে আমাকে কেন ইসলাম মৃত্যু দণ্ড এর আদেশ দিল ?

উত্তরঃ খুব ভাল একটি প্রশ্ন । আশা করি শেষ পর্যন্ত পড়বেন!

মুরতাদের ব্যাপারে কুরআনে কোথাও কোন পার্থিব দণ্ড বা শাস্তির কথা নেই । আসুন দেখি এই ব্যাপারে কোরানের কি বলেনঃ
* আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ কিরুপে সৎপথে পরিচালিত করবেন সেই সম্প্রদায়কে যারা ইমান আনয়নের পর ও রাসুলকে সত্য বলিয়া সাক্ষ্যদান করার পর এবং তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর কুফুরি করে ? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না । (সুরা আল ইমরান আয়াত ৮৬)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা তাদের মত হইয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে । তাদের জন্য মহাশাস্তি আছে । (সুরা আল ইমরান আয়াত ১০৫)

* আল্লাহ বলেনঃ সেদিন কিছু মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কিছু মুখ কাল হবে । যাদের মুখ কাল হবে তাদের বলা হবে ইমান আনার পর কি তোমরা কুফুরি করেছিলে ?সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ করো যেহেতু তোমরা কুফুরি করিতে । (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৬)
* আল্লাহ বলেনঃ কেউ তার ইমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করিলে এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখিলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি তবে তার জন্য না , যাকে কুফুরির জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ইমানে অবিচলিত । ( সুরা নাহল, ১০৬ আয়াত)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা দোষ স্থালনের চেষ্টা করো না । তোমরা তো ইমান আনার পর কুফুরি করিয়াছ । তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করিলেও অন্য দলকে শাস্তি দিব কারন তারা অপরাধী । (সুরা তওবা, ৬৬)

* আল্লাহ বলেনঃ উহারা আল্লাহর শপথ করে যে , উহারা কিছু বলে নাই, কিন্তু উহারা তো কুফুরির কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহনের পর তারা কাফের হয়েছে উহারা যা সংকল্প করেছে তা পায় নাই । আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিজ কৃপায় তাদের অভাবমুক্ত করেছেন বলেই তারা বিরোধিতা করিয়াছিল । তারা তওবা করলে তাদের জন্য ভাল হবে কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য মরমন্তু শাস্তি দিবেন । দুনিয়াতে তাদের কোন অভিভাবক নাই এবং কোন সাহায্যকারী নাই । (সুরা তওবা, ৭৪)

* আল্লাহ বলেনঃ যারা ইমান আনে ও পরে কুফুরি করে এবং আবার ইমান আনে , আবার কুফুরি করে , অতপর তাদের কুফুরি প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না । (সুরা নিসা, ১৩৭ আয়াত)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে দুনিয়াতে যারা আছে তারা সকলেই অবশ্যই ইমান আনত , তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে ? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ইমান আনা কারো সাদ্ধে না এবং যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদেরকে কুলসলিপ্ত করেন । (সুরা ইউনুস, আয়াত ৯৯ - ১০০)

* আল্লাহ বলেনঃ বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক । (সুরা কাহফ, আয়াত ২৯)

* আল্লাহ বলেনঃ কেউ রাসুলের অনুগত করলে সে তো আল্লাহরই অনুগত্ত করিল এবং মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমাকে তাদের উপর তত্থাবধায়ক প্রেরন করি নাই । (সুরা নিসা, ৮০ আয়াত) ।

* আল্লাহ বলেনঃ ধর্মে জোর জবরদস্তী নাই । (সুরা বাকারা, ২৫৬) ।

উপরের আয়াতে ইমান তথা ইসলাম গ্রহনের পরে আবার কুফুরি (ইসলাম ত্যাগ ) করলে সাথে সাথে হত্যা করতে হবে এমন কিছু বলা নাই অথবা তাকে মেরে ফেল এরকম কিছুই বলা নাই । অর্থাৎ কুরআন মুরতাদকে ইসলামে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে। তাকে সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ড দিলে ‘আবার মুসলমান’ হবার সুযোগ সে পাবে না, কুরআন তাকে সুযোগ দিচ্ছে ইসলামে ফিরে আশার।

ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য বিশ্ব-বিখ্যাত শরিয়া সমর্থক ডঃ জামাল বাদাওয়ি পর্যন্ত এটা স্বীকার করেছেন এবং বলেছেনঃ 

কোরানের কোন আয়াতেই মুরতাদের দুনিয়ার শাস্তির বিধান নাই । কোরআন বলে এই শাস্তি শুদুমাত্র পরকালেই হবে । (ফতোয়া কাউন্সিলের ওয়েবসাইট)

++++++++++ এখন আসুন এমন হাদিস সম্পর্কে জানব যেখানে রাসুল (সা) কোন মুরতাদদের শাস্তি প্রদান করেননিঃ

* নবীজীর ওহি-লেখক আবদুলা বিন সা’আদ-ও মুরতাদ হয়ে মদিনা থেকে মক্কায় পালিয়ে গিয়েছিল। এ হেন মহা-মুরতাদকেও নবীজী মৃত্যুদণ্ড দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৫৫০) বরং ইসলাম গ্রহন করার পরে, হজরত ওসমান (রা) পরে তাকে মিশরের গভর্নর করেছিলেন । কি বুঝলেন! এখানে একটি প্রশ্ন আসে কেন নবীজি (সা) তাকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড এর হুকুম দিলেন না ?

* মুরতাদ-হত্যার বিরুদ্ধে কুরআনের সবচেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে সুরা ইমরান- এর ৮৬ নম্বর আয়াতে । হারিথ নামে এক মুসলমান মুরতাদ হলে তার ব্যাপারে নাজিল হয়েছিল এই আয়াত : “কেমন করে আল্লাহ্‌ এমন জাতিকে হেদায়েত দেবেন যারা ইমান আনার পর ও রসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেবার পর ও তাদের কাছে প্রমাণ আসার পর কাফের হয়েছে ?” নবীজী তাকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোন শাস্তিই দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৩৮৪)।

ihadis.com সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৫৩৬ , হাসান হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ্‌ তার কোন আমলই গ্রহণ করবেন না । যাবত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে । - এখানে মুশরিক ব্যাক্তিকে সুযোগ দেয়া না হয় তাহলে সে আমার ইসলামে আসবে কিভাবে ?

ihadis.com সহিহ বুখারি হাদিস নং ১৮৮৩, হাদিস সহিহঃ জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুইন নবী (সা) এর নিকট এসে ইসলামের উপর তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করলো । পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নবী (সা) এর কাছে এসে বলল, আমার বায়াত ফিরিয়ে নিন । নবী (সা) তা প্রত্যাখ্যান করলেন । এভাবে তিনবার হল । অতপর বললেন, মদিনা কামারের হাপরের মত, যা তার আবর্জনা ও মরীচিকাকে দূরীভূত করে এবং খাটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে । (ঐ লোক পরে মদিনা ছেড়ে চলে যান) ।

ihadis.com সুনানে আন নাসাই, হাদিস নং ৪০৬৮, সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহনের পর মুরতাদ হয়ে গেল এবং মুশরিকদের সাথে মিলিত হল । পরে সে লজ্জিত হয়ে হয়ে নিজের কওমকে বলে পাঠালো, তোমরা নবী (সা) কে জিজ্ঞাসা করো, আমার কি তওবা করার সুযোগ আছে ? তার কওমের লোক নবী (সা) কে বললেন। অমুক ব্যাক্তি লজ্জিত হয়েছে । এখন কি তার তওবা কবুল হয়েছে ? তখন এই আয়াত নাযিল হয় অর্থঃ ইমান আনার পর ও রাসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্যদানের পর যারা কুফরি করে আল্লাহ্‌ তাদের কিভাবে হিদায়েত দিবেন ? (৩:৮৬ -৮৯)

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৭০০, সহিহ হাদিসঃ বারা ইবনু আযিয (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) হুদায়বিয়ার দিন মুশরিকদের সঙ্গে তিনটি বিষয় সন্ধি করেছিলেন । তা হলঃ মুশরিকরা কেউ মুসলিম হয়ে তার নিকট এলে তিনি তাকে তাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন । মুসলিমদের কেউ মুরতাদ হয়ে তাদের নিকট গেলে তারা তাকে ফিরিয়ে দিবেন না । আর তিনি আগামি বছর মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করবেন । কোষাবদ্ধ তরবারি, ধনুক ও এরকম কিছু বেতিত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না । ইতোমধ্যে আবু জান্দাল (রা) শিকল পরা অবস্থায় লাফিয়ে লাফিয়ে তার নিকট এলে, তাকে তিনি তাদের নিকট ফিরিয়ে দিলেন । - এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হচ্ছে রাসুল (সা) চুক্তি করেছেন যে কেউ মুসলিম থেকে মুরতাদ হলে তাকে ফিরিয়ে দিবে কোন রুপ শাস্তি বেতিত । এখানে মুরতাদদের মৃত্যু দন্ধ দেয়া হয়নি ।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২৯০, সহিহ হাদিসঃ আবু যিনার (রহ) মুহাম্মদ ইবনু হামযা আমর আসলামি (রহ) এর মাধ্যমে তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ উমার (সা) তাঁকে সাদকা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান । সেখানে এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যাভিচার করে বসল। তখন হামজা (রহ) কিছু লোককে তার পক্ষ হতে যামিন স্থির করলেন । পরে তিনি উমার (রা) এর নিকট ফিরে আসলেন । উমার (রা) উক্ত লোকটিকে একশত বেত্রাঘাত করলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করলেন । তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রীর দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন।জরির ও আশআস (রহ) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যাক্তিদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন, তাদেরকে তওবা করতে বলুন এবং গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন(দার) হয়ে গেল । হাম্মাদ (রহ) বলেন,যদি কোন ব্যাক্তি যামিন হবার পর মৃত্যুবরন করে তবে সে দায়মুক্ত থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে) - এখানে মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় নি বরং তাদের তওবার সাথে যামিনদার হয়ে গিয়েছিল ।

ihadis.com সুনানে সবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫৮ , হাসান হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনু আসুস সারহ রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওহী লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল । শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায় । মক্কাহ বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে হত্যার আদেশ দেন । কিন্তু উসমান ইবনে আফফান (রা) তার জন্য নিরাপত্তার জন্য আবেদন পেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন । - এই হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসুল (সা) এই মুরতাদকে শাস্তি দেন নি এবং কোন ভাল ব্যাক্তি মুরতাদের বিষয় সুপারিশ করতে পারবে ।

* নবীজী (সা) বলিয়াছেন যে ব্যক্তি ধর্মত্যাগ করে তাহাকে হত্যা কর” (বোখারী ২৮৫৪ নং হাদিস- মওলানা আবদুল জলিলের অনুবাদ) নিয়ে মওলানাদের মধ্যেই মহা-বিতর্ক আছে কারণ তাহলে যারা তাদের ধর্ম ত্যাগ ক’রে ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকেও খুন করতে হয়। নবীজীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জীবনী “সিরাত”-এ (ইবনে হিশাম/ইশাক,পৃষ্ঠা ৩৮৪, ৫২৭ ও ৫৫০) উবায়রাক ছাড়াও আমরা নবীজীর সময়ে তিনজন মুরতাদের দলিল পাই। তারা হল হারিথ, নবীজীর ওহি লেখক ইবনে সা’দ, এবং উবায়দুলাহ − ।- এ তিনজনের কাউকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোনো শাস্তিই দেননি নবী মুহাম্মদ (সা) । তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন, তবু সর্বদা মেনে চলেছেন লা-ইকরাহা ফিদ্দিন, − ধর্মে জবরদস্তি নাই − বাকারা ২৫৬।

দলিল প্রমানে এ-সব ঘটনা আছে নামধাম, তারিখ, ঘটনার বিবরণ সহ। দেখুন সহি বুখারি ৯ম খণ্ড হাদিস ৩১৮: জাবির বিন আব্দুল্লাহ বলেন, এক বেদুইন আল্লাহর রসুলের কাছে বায়াত গ্রহণ করিল। পরে মদিনায় তাহার জ্বর হইলে সে আল্লাহ্‌র রসুলের নিকট আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহ্‌র রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহর রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহর রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে মদিনা ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ইহাতে আল্লাহর রসুল বলিলেন− “মদিনা একটি উনুনের মতো, − ইহা ভেজালকে বাহির করিয়া দেয় এবং ভালোকে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।”

এই যে স্বয়ং নবীজীর সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগ − মৃত্যুদণ্ড তো দূরের কথা, কোথায় হুঙ্কার বা কোথায় শাস্তি ?

++++++++ যেসব মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলঃ

*ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২২, সহিহ হাদিসঃ ইকরিমাহ (রহ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আলী (রা) এর কাছে একদল যিন্দিককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীদের) আনা হল । তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন । এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রা) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না । কেননা রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিষেধ আছে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম । কারন রাসুলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশ আছে যে, কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা করো ।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২৩, সহিহ হাদিসঃ আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (সা) এর কাছে এলাম । আমার সঙে আশআরি গোত্রের দুজন লোক ছিল । একজন আমার ডানদিকে অপরজন আমার বামদিকে । আর রাসুল (সা) তখন মিসওয়াক করছিলেন । উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল । তখন তিনি বললেন, হে আবু মুসা ! অথবা বললেন হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স ! রাবি বলেন, আমি বললাম ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কি আছে তা আমাদের জানায়নি এবং তারা যে চাকরি পার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি । আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নিচে মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ করছিলাম যে তা এক কোনে সরে গেছে । তখন তিনি বললেন আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিযুক্ত করব না বা করি না যে নিজেই তা চায় । বরং হে আবু মুসা তুমি ইয়ামানে যাও , এরপর তিনি তার পেছনে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) কে পাঠালেন ।যখন তিনি সেখানে পৌঁছলেন, তখন আবু মুসা (রা) তার জন্য একটি গদি বিছালেন আর বললেন নেমে আসুন । ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শিকলে বাধা ছিল । তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঐ লোকটি কে ? আবু মুসা (রা) বললেন, সে প্রথমে ইহুদি ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল । কিন্তু আবার সে ইহুদি হয়ে গেছে । আবু মুসা (রা) বললেন, বসুন । মুয়াজ (রা) বললেন, না বসব না । যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে । এটাই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের ফয়সালা । কথাটি তিনি তিনবার বলেন । এরপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল ।

* ই,ফাঃ আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩০৫, সহিহ হাদিসঃ একদিন আবু মুসা (রা) এর নিকট এক মুরতাদ ব্যাক্তিকে হাযির করা হয় । তিনি তাকে প্রায় ২০ দিন যাবত পুনরায় মুসলমান হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । পরে মুয়াজ (রা) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে দ্বীনের দাওয়াত দেন । কিন্তু সে অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হয় ।

*************মুরতাদদের কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়ঃ

*আবু মুসা আশআরি (রা) এর পক্ষ থেকে এক লোক উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর কাছে এলো । তিনি তাঁর কাছে ওখানকার লোকদের হাল-অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন । সে এ সম্পর্কে তাকে জানালো । উমর (রা) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন , তোমাদের কাছে কি নতুন কোন খবর আছে ? সে বলল হ্যাঁ । এক লোক ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়েছে । তিনি বলেন , তোমরা তার সাথে কি ব্যাবহার করেছ ? সে বলল , আমরা তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করেছি । তিনি বলেন, কেন তোমরা তাকে তিন দিন একটি ঘরে বন্দী করে রাখলে না ? প্রতিদিন তাকে খাবার খাওয়াতে । তাকে তওবা করতে বলতে । হয়ত সে তওবা করতো এবং পুনরায় আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসত ? (এরপর তিনি বলেন) হে আল্লাহ! আমি (তাদের) এই নির্দেশ দেইনি । আমি উপস্থিত ছিলাম না এবং আমার কাছে খবর পৌঁছালে তাতে আনন্দিতও হই নি । (মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (রহ), পৃষ্ঠা ৬১৪-৬১৫)।

* আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন অবস্থা ব্যতীত মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ (১ম) যদি কোন মুসলমান বিবাহ করার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, (২য়) ঐ ব্যক্তি যে কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তাকে হত্যা করা যাবে এবং (৩য়) ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হল, তাকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা দেশান্তর করা হবে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪০৪৮, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস , Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ)

* উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হবে বা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশান্তর করা হবে। ( সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৭৪৩, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস , Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ)

* মুহাম্মাদ ইব্‌ন সিনান (রহঃ) —- আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, “আল্লাহ্‌ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল, তবে তিনটি মধ্যে যে কোন একটি কারণে তার রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কেউ বিবাহ করার পর যিনা করে, তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে; (২) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবে, তাকে হত্যা করা হবে, অথবা শুলী দণ্ড দেওয়া হবে, অথবা দেশ থেকে বের করা হবে এবং (৩) যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করবে, তার জীবনের বিনিময়ে তাকে হত্যা করা হবে।(হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) ,সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) , অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান, হাদিস নাম্বার: ৪৩০২ )

ihadis.com বুলগুল মারাম, হাদিস নং ১১৯৭, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, তোমাদের সংঘবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ আসে আর সে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইচ্ছা, চেষ্টা করে তবে তোমরা তাকে হত্যা করো ।

ihadis.com সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫২, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নাই আর আমি আল্লাহর রাসুল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় , যদি না সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে থাকে। ১/ বিবাহিত ব্যাক্তি যিনা করলে । ২/ কেউ কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে হত্যা এবং ৩/সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী মুরতাদ ।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩০১৮, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) উকল নামের এক দল যারা পরে মুরতাদ হয়, এবং এক রাখালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে রাসুল (সা) তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেন । আবু কিলাবা (রা) বলেন তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সা) এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯১৯ , সহিহ হাদিসঃ আবু বাকরাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিন বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ সব থেকে কঠিন কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। মিথ্যা সাক্ষ্য কথাটি তিনবার বললেন । অথবা বলেছেন মিথ্যা বক্তব্য । কথাটি বারবার বলতে থাকলেন এমন কি আমরা আকাঙ্ক্ষা করতে লাগলাম হায় যদি তিনি নীরব হয়ে যেতেন । - নিজে আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সা) কে সত্য সাক্ষ্য দেয়ার পরেও আবার ফিতনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য পলটি নিবেন এটা ইসলাম কখনো বরদাশত করবে না ।

*ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯৩০, সহিহ হাদিসঃ সুয়ারদ ইবনে গাফালা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আলী (রা) বলেছেনঃ আমি যখন তমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা) এর কোন হাদিস বয়ান করি আল্লাহ্‌র শপথ তখন তার উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটাই আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি তাহলে মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধ একটি কৌশল । আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্প বয়স্কা যুবক, নির্বোধ, তারা সৃষ্টির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে অথচ ইমান তাদের গলা অতিক্রম করবে না । তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায় । তাদেরকে যেখানে পাও তোমরা হত্যা করবে । কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতের দিন প্রতিদান আছে ।- এই হাদিস থেকে বুঝা যায় এম্ন কিছু মানুষ থাকবে যারা নিজেরা মুসলিম না কিন্তু ইসলামের কথাগুলা ভুলভাবে মানুষদের সাথে বলে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে । অনেকেই আছে যারা ইসলাম গ্রহন না আবার পরে ইচ্ছা করেই মুরতাদ হয়ে যায় যাতে মানুষদের ভ্রান্ত করতে পারে এমন ভয়ংকর মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে রাষ্ট্রীয় ভাবে ।

একটি যৌক্তিক উদাহরণঃ

দেখুন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকা জান তাহলে কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকায় যাওয়ার পরে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক কথা,লিখা লিখি,সাম্প্রদায়িক উস্কানি তথা এক কথায় দেশদ্রোহী করেন তাইলে কিন্তু আপনাকে বাংলাদেশের সরকার মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে কারন আপনি দেশদ্রোহী এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ অপরাধী ।একই ভাবে আপনি যদি ইসলাম ত্যাগ করেন তাইলে আমাদের কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি উস্কানি মূলক কথা, লিখা লিখি, সাম্প্রদায়িক উস্কানির দাঙ্গা তথা এক কথায় ধর্মদ্রোহী হন তাইলেই ইসলামই রাষ্ট্র আপনাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে এটি স্বাভাবিক বরং আম্মাজান আয়েশা থেকে যে হাদিস আমরা পাচ্ছি সেখানেই পরিষ্কার জেনে যাচ্ছি যে যদি ইসলাম ত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে হত্যা অথবা শূলে চড়ানো অথবা দেশান্তর করা হবে ।

দ্বিতীয় যৌক্তিক উদাহরণঃ

* আমর ইব্‌ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্‌(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্‌ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়। (হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih), সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান,হাদিস নাম্বার: ৪৩০১)‏

খেয়াল করুন হাদিসের শেষের লাইন "যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়" জামাত অর্থ দল । ধরেন এক দেশের গোয়েন্দা তার দেশের সব কিছুই জানে গোপন সব কিছু এখন যদি এই লোক অন্যের টাকা খেয়ে অন্য দেশে চলে যায় যেয়ে যদি সব ফাঁশ করে দেয় গোপন তথ্য, সেটি হতে পারে আর্মি বাহিনীর গোপন ছক হতে পারে দেশের গোপন সম্পদ ইত্যাদি !!! এখন কেউ যদি এই ধরণের লোকদের টার্গেট করে বলে যারা নিজেদের দল ত্যাগ করেছে তাদের হত্যা করো এটা কি অন্যায় নাকি এটাই সুবিচার ? অবশ্যই এটাই ন্যায় বিচার কারন তুমি নিজের দেশের সাথে গাদ্দারি করেছ । একই ভাবে কেউ যদি ইসলাম গ্রহন করে এবং সাহাবীদের সাথে কিছু দিন চলে তাদের হতে পারে গোপন রহস্য অথবা হতে পারে যুদ্ধের কিছু গোপন তথ্য, বের করে ইসলাম ত্যাগ করে , এখন তাদেরকে টার্গেট করে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) এটা বলে যে যে ইসলাম ত্যাগ করে তাকে হত্যা করো , এটা অবশ্যই ভাল একটি হুকুম কারন দেশের জন্য গাদ্দারি করা কেউ সাপোর্ট করবে না, যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে ।

তৃতীয় যৌক্তিক বিশ্লেষণঃ

আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ আহলে কিতাবের এক দল এটাই বলে যে, বিশ্বাস স্থাপনকারীদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তারপ্রতি আগে বিশ্বাস স্থাপন করো এবং পরে তা অস্বীকার করো - যেন তারা ফিরে আসে । (সুরা আল ইমরান, অধ্যায় ৩, আয়াত ৭২ )
আসুন এই আয়াতের তাফসীর থেকে ঘুরে আসি তাহলে বুঝতে পারবেন আসল রহস্য কি এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের জালিয়াতির রহস্য ফাঁশ করা হয়েছে এই আয়াতে । কারন এই আয়াত দ্বারা বুঝান হয়েছে যে, ইহুদিরা পূর্ণ সত্য জানার পরেও ইসলাম নিয়ে তারা তামাসা করত এবং শুদু এটাই না বরং মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যে সব পন্থা তারা বের করেছে তার মধ্যে একটি কথা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, তারা পরামর্শ করে - তোমরা দিনের প্রথমাংশে ইমান আনবে এবং মুসলমানদের সাথে নামায পড়বে এবং শেষাংশে কাফির হয়ে যাবে। তাহলে মূর্খদেরও এ ধারনা হবে যে এরা এ ধর্মের ভিতরে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পেয়েছে বলেই এটা গ্রহন করার পরেও তা হতে ফিরে গেল, কাজেই তারাও এ ধর্ম ত্যাগ করবে এতে বিস্ময়ের কিছু নাই । মোটকথা তাদের এটা একটা কৌশল ছিল যে দুর্বল ঈমানের লোকেরা ইসলাম হতে ফিরে যাবে এই জেনে যে এ বিদ্বান! লোকগুলো যখন ইসলাম গ্রহনের পরেও তা হতে ফিরে গেল তাহলে অবশ্যই এ ধর্মের মধ্যে কিছু দোষত্রুটি রয়েছে । (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ ৯২, সুরা আল ইমরান এর ৭২ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন । অনুবাদ ডঃ মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

আসলে এটা পুরাতন কিছুই না । বর্তমানেও এই বাজে কাজ খৃষ্টানরা তো করেই নাস্তিক ধার্মিকরাও এটাই করছে । এমন কিছু মানুষদের তৈরি করে যারা কিছু বছর ইসলামের পক্ষে খুব দাওয়াতি কাজ করে যখন দেখে তার অনুসারি অনেক , সে যদি এখন ইসলাম ত্যাগ করে তাইলে অনেকেই বিভ্রান্ত হবে সহজে । ভাববে যে এই লোক যেহেতু এত দিন দাওয়াত দিয়েছে হটাত এখন ইসলাম ত্যাগ করে ফেলল তাই হয়ত ইসলাম ভাল না (নাউজুবিল্লাহ) । আচ্ছা এই সব ধান্দাবাজদের টার্গেট করে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন যারা ইসলাম ত্যাগ করে তাদের হত্যা করো এটা কি অন্যায় ? যাদের বিবেক আছে , যারা সুস্থ তারা অবশ্যই বলবে হুম এটা অবশ্যই মানবিক রাষ্ট্রীয় হুকুম ।

মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড যৌক্তিকতা বিষয়ে ইবনুল কায়িম আল জাওজিয়া (রহ) লিখেনঃ

মৃত্যুদণ্ড হল সর্বউচ্চ অপরাধের সর্বউচ্ছ শাস্তি । সর্বউচ্ছ অপরাধ যেমনঃ মানুষ হত্যা , দ্বীনের বিষয়ে কটূক্তি করা বা দ্বীন ত্যাগ করার মাধ্যমে দ্বীনের উপর আঘাত হানা ইত্যাদি । মুরতাদ এর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া খুবই যুক্তিসংগত কারন সমাজে মুরতাদ এর অবস্থান সংঘাত - সহিংসতা ও আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারন হয়ে থাকে । এমন লোক বেঁচে থাকার মাঝে কোন মঙ্গলের আশা করা যায় না । একে বাচিয়ে রাখা বরং অনেক নির্বুদ্ধিতা । (ইলামুল মুয়াক্কিয়িন ২/৮৪)

উপরের সমস্ত বিশুদ্ধ যৌক্তিক তথ্য প্রমান হাতে রেখেই আমরা খুব দৃঢ়তার সাথে দাবি করছিঃ

১/ কুরআনে কোথাও মুরতাদকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আদেশ নেই । বরং কুরআন মুরতাদদের সুযোগ দিচ্ছে ফেরত সত্য জীবন বিধান ইসলামে ফেরত আসার । এর পক্ষে ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্যদের ফতোয়া পেশ করা হয়েছে।

২/ যেসব মুরতাদরা মুসলিমদের সমাজের ঐক্য নষ্ট করেনি, অথবা ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কানি মুলক ষড়যন্ত্র করেনি, ইসলামকে নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করেনি অথবা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেননি এমন মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি । উপরের এর পক্ষে প্রচুর সহিহ হাদিস দেখানো হয়েছে । যেখানে নবী মুহাম্মদ (সা) এসব মুরতাদদের শাস্তি দেন নি ।

৩/ পক্ষান্তরে যেসব মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল তারা ছিল ইসলামের শত্রু তথা ইচ্ছা করেই মুসলিম হত আবার ইচ্ছা করেই ইসলাম থেকে বের হত যাতে সাধারন মুসলিমরা তাদের দেখে মনে করে ইসলামে হয়ত সমস্যা আছে ! (নাউজুবিল্লাহ) । যেসব মুরতাদ মুসলিম সমাজের মধ্যে একতা নষ্ট করতে চেয়েছে, চুরি করেছে, নবী মুহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ল্যান করেছে , পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়েছে এসব সমাজ বিরোধী, দেশ বিরোধী , মানবতা বিরোধী মুরতাদদের মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়েছে । বরং এদের মৃত্যুদণ্ড দেয়াই যৌক্তিক।

৪/ মুরতাদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ দেয়া হবে যাতে সে ইসলামে ফিরে আসে । এখন ইসলামি রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিবে তাকে বেশি সময় দিবে নাকি কম ।

৫/ আপনি এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাবেন এখানে কোন প্রব্লেম নাই কিন্তু এক দেশে যেয়ে যদি আরেক দেশের বিরদ্ধে উস্কানি দেন এখানে আপত্তি আছে ঠিক একই যুক্তিতে আপনার জ্ঞানের স্বল্পতার জন্য যদি ইসলাম আপনার ভাল না লাগে আপনি ইসলাম না মানতেই পারেন কিন্তু আপনি ইসলাম ত্যাগ করে উস্কানি দিবেন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাবেন এটা ইসলাম কখনো মেনে নিবে না । সোজা হিসাব ।

৬/ মুরতাদের অবস্থা ইসলামি রাষ্ট্র ভাল ভাবে যাচাই করবে তার মতলব আসলে কি ! যদি ভাল হয় তাইলে তো ভালই আর যদি কোন নোংরা মতলব থাকে এই ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্র সেই মুরতাদকে মৃত্যুদণ্ড দিবে ।

৭/ ইসলামী রাষ্ট্রের কোন সাধারন মানুষ কোন মুরতাদকে শাস্তি দিতে পারবে না । করলে তারই শাস্তি হবে তবে সেটা ইসলামী সরকার নির্ধারণ করবেন । (বিস্তারিত দেখুনঃ বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য (ই'ফা),খণ্ড ১, ধারা ৭২, পৃষ্ঠা ২৭৮,)

মুরতাদের শাস্তি সম্পর্কে ইসলামিক বিশ্লেষণঃ


লিখেছেনঃ এম ডি আলী

প্রশ্নঃ আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯২২, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১) । এই হাদিস হতে পরিস্কার বলা হচ্ছে ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে হত্যা করতে হবে এটা কি অন্যায় না ? ধরেন আমি কি মানব কি মানবো না এটা আমার ইচ্ছা , অবশ্য কারো ক্ষতি করবো না তাহলে এখানে আমাকে কেন ইসলাম মৃত্যু দণ্ড এর আদেশ দিল ?

উত্তরঃ খুব ভাল একটি প্রশ্ন । আশা করি শেষ পর্যন্ত পড়বেন!

মুরতাদের ব্যাপারে কুরআনে কোথাও কোন পার্থিব দণ্ড বা শাস্তির কথা নেই । আসুন দেখি এই ব্যাপারে কোরানের কি বলেনঃ
* আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ কিরুপে সৎপথে পরিচালিত করবেন সেই সম্প্রদায়কে যারা ইমান আনয়নের পর ও রাসুলকে সত্য বলিয়া সাক্ষ্যদান করার পর এবং তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর কুফুরি করে ? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না । (সুরা আল ইমরান আয়াত ৮৬)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা তাদের মত হইয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে । তাদের জন্য মহাশাস্তি আছে । (সুরা আল ইমরান আয়াত ১০৫)

* আল্লাহ বলেনঃ সেদিন কিছু মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কিছু মুখ কাল হবে । যাদের মুখ কাল হবে তাদের বলা হবে ইমান আনার পর কি তোমরা কুফুরি করেছিলে ?সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ করো যেহেতু তোমরা কুফুরি করিতে । (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৬)
* আল্লাহ বলেনঃ কেউ তার ইমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করিলে এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখিলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি তবে তার জন্য না , যাকে কুফুরির জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ইমানে অবিচলিত । ( সুরা নাহল, ১০৬ আয়াত)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমরা দোষ স্থালনের চেষ্টা করো না । তোমরা তো ইমান আনার পর কুফুরি করিয়াছ । তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করিলেও অন্য দলকে শাস্তি দিব কারন তারা অপরাধী । (সুরা তওবা, ৬৬)

* আল্লাহ বলেনঃ উহারা আল্লাহর শপথ করে যে , উহারা কিছু বলে নাই, কিন্তু উহারা তো কুফুরির কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহনের পর তারা কাফের হয়েছে উহারা যা সংকল্প করেছে তা পায় নাই । আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিজ কৃপায় তাদের অভাবমুক্ত করেছেন বলেই তারা বিরোধিতা করিয়াছিল । তারা তওবা করলে তাদের জন্য ভাল হবে কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য মরমন্তু শাস্তি দিবেন । দুনিয়াতে তাদের কোন অভিভাবক নাই এবং কোন সাহায্যকারী নাই । (সুরা তওবা, ৭৪)

* আল্লাহ বলেনঃ যারা ইমান আনে ও পরে কুফুরি করে এবং আবার ইমান আনে , আবার কুফুরি করে , অতপর তাদের কুফুরি প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না । (সুরা নিসা, ১৩৭ আয়াত)

* আল্লাহ বলেনঃ তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে দুনিয়াতে যারা আছে তারা সকলেই অবশ্যই ইমান আনত , তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে ? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ইমান আনা কারো সাদ্ধে না এবং যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদেরকে কুলসলিপ্ত করেন । (সুরা ইউনুস, আয়াত ৯৯ - ১০০)

* আল্লাহ বলেনঃ বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক । (সুরা কাহফ, আয়াত ২৯)

* আল্লাহ বলেনঃ কেউ রাসুলের অনুগত করলে সে তো আল্লাহরই অনুগত্ত করিল এবং মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমাকে তাদের উপর তত্থাবধায়ক প্রেরন করি নাই । (সুরা নিসা, ৮০ আয়াত) ।

* আল্লাহ বলেনঃ ধর্মে জোর জবরদস্তী নাই । (সুরা বাকারা, ২৫৬) ।

উপরের আয়াতে ইমান তথা ইসলাম গ্রহনের পরে আবার কুফুরি (ইসলাম ত্যাগ ) করলে সাথে সাথে হত্যা করতে হবে এমন কিছু বলা নাই অথবা তাকে মেরে ফেল এরকম কিছুই বলা নাই । অর্থাৎ কুরআন মুরতাদকে ইসলামে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে। তাকে সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ড দিলে ‘আবার মুসলমান’ হবার সুযোগ সে পাবে না, কুরআন তাকে সুযোগ দিচ্ছে ইসলামে ফিরে আশার।

ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য বিশ্ব-বিখ্যাত শরিয়া সমর্থক ডঃ জামাল বাদাওয়ি পর্যন্ত এটা স্বীকার করেছেন এবং বলেছেনঃ 

কোরানের কোন আয়াতেই মুরতাদের দুনিয়ার শাস্তির বিধান নাই । কোরআন বলে এই শাস্তি শুদুমাত্র পরকালেই হবে । (ফতোয়া কাউন্সিলের ওয়েবসাইট)

++++++++++ এখন আসুন এমন হাদিস সম্পর্কে জানব যেখানে রাসুল (সা) কোন মুরতাদদের শাস্তি প্রদান করেননিঃ

* নবীজীর ওহি-লেখক আবদুলা বিন সা’আদ-ও মুরতাদ হয়ে মদিনা থেকে মক্কায় পালিয়ে গিয়েছিল। এ হেন মহা-মুরতাদকেও নবীজী মৃত্যুদণ্ড দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৫৫০) বরং ইসলাম গ্রহন করার পরে, হজরত ওসমান (রা) পরে তাকে মিশরের গভর্নর করেছিলেন । কি বুঝলেন! এখানে একটি প্রশ্ন আসে কেন নবীজি (সা) তাকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড এর হুকুম দিলেন না ?

* মুরতাদ-হত্যার বিরুদ্ধে কুরআনের সবচেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে সুরা ইমরান- এর ৮৬ নম্বর আয়াতে । হারিথ নামে এক মুসলমান মুরতাদ হলে তার ব্যাপারে নাজিল হয়েছিল এই আয়াত : “কেমন করে আল্লাহ্‌ এমন জাতিকে হেদায়েত দেবেন যারা ইমান আনার পর ও রসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেবার পর ও তাদের কাছে প্রমাণ আসার পর কাফের হয়েছে ?” নবীজী তাকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোন শাস্তিই দেননি (ইবনে হিশাম-ইশাক পৃঃ ৩৮৪)।

ihadis.com সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৫৩৬ , হাসান হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ্‌ তার কোন আমলই গ্রহণ করবেন না । যাবত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে । - এখানে মুশরিক ব্যাক্তিকে সুযোগ দেয়া না হয় তাহলে সে আমার ইসলামে আসবে কিভাবে ?

ihadis.com সহিহ বুখারি হাদিস নং ১৮৮৩, হাদিস সহিহঃ জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুইন নবী (সা) এর নিকট এসে ইসলামের উপর তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করলো । পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নবী (সা) এর কাছে এসে বলল, আমার বায়াত ফিরিয়ে নিন । নবী (সা) তা প্রত্যাখ্যান করলেন । এভাবে তিনবার হল । অতপর বললেন, মদিনা কামারের হাপরের মত, যা তার আবর্জনা ও মরীচিকাকে দূরীভূত করে এবং খাটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে । (ঐ লোক পরে মদিনা ছেড়ে চলে যান) ।

ihadis.com সুনানে আন নাসাই, হাদিস নং ৪০৬৮, সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহনের পর মুরতাদ হয়ে গেল এবং মুশরিকদের সাথে মিলিত হল । পরে সে লজ্জিত হয়ে হয়ে নিজের কওমকে বলে পাঠালো, তোমরা নবী (সা) কে জিজ্ঞাসা করো, আমার কি তওবা করার সুযোগ আছে ? তার কওমের লোক নবী (সা) কে বললেন। অমুক ব্যাক্তি লজ্জিত হয়েছে । এখন কি তার তওবা কবুল হয়েছে ? তখন এই আয়াত নাযিল হয় অর্থঃ ইমান আনার পর ও রাসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্যদানের পর যারা কুফরি করে আল্লাহ্‌ তাদের কিভাবে হিদায়েত দিবেন ? (৩:৮৬ -৮৯)

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৭০০, সহিহ হাদিসঃ বারা ইবনু আযিয (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) হুদায়বিয়ার দিন মুশরিকদের সঙ্গে তিনটি বিষয় সন্ধি করেছিলেন । তা হলঃ মুশরিকরা কেউ মুসলিম হয়ে তার নিকট এলে তিনি তাকে তাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন । মুসলিমদের কেউ মুরতাদ হয়ে তাদের নিকট গেলে তারা তাকে ফিরিয়ে দিবেন না । আর তিনি আগামি বছর মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করবেন । কোষাবদ্ধ তরবারি, ধনুক ও এরকম কিছু বেতিত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না । ইতোমধ্যে আবু জান্দাল (রা) শিকল পরা অবস্থায় লাফিয়ে লাফিয়ে তার নিকট এলে, তাকে তিনি তাদের নিকট ফিরিয়ে দিলেন । - এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হচ্ছে রাসুল (সা) চুক্তি করেছেন যে কেউ মুসলিম থেকে মুরতাদ হলে তাকে ফিরিয়ে দিবে কোন রুপ শাস্তি বেতিত । এখানে মুরতাদদের মৃত্যু দন্ধ দেয়া হয়নি ।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২৯০, সহিহ হাদিসঃ আবু যিনার (রহ) মুহাম্মদ ইবনু হামযা আমর আসলামি (রহ) এর মাধ্যমে তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ উমার (সা) তাঁকে সাদকা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান । সেখানে এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যাভিচার করে বসল। তখন হামজা (রহ) কিছু লোককে তার পক্ষ হতে যামিন স্থির করলেন । পরে তিনি উমার (রা) এর নিকট ফিরে আসলেন । উমার (রা) উক্ত লোকটিকে একশত বেত্রাঘাত করলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করলেন । তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রীর দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন।জরির ও আশআস (রহ) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যাক্তিদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন, তাদেরকে তওবা করতে বলুন এবং গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন(দার) হয়ে গেল । হাম্মাদ (রহ) বলেন,যদি কোন ব্যাক্তি যামিন হবার পর মৃত্যুবরন করে তবে সে দায়মুক্ত থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে) - এখানে মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় নি বরং তাদের তওবার সাথে যামিনদার হয়ে গিয়েছিল ।

ihadis.com সুনানে সবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫৮ , হাসান হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনু আসুস সারহ রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওহী লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল । শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায় । মক্কাহ বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে হত্যার আদেশ দেন । কিন্তু উসমান ইবনে আফফান (রা) তার জন্য নিরাপত্তার জন্য আবেদন পেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন । - এই হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসুল (সা) এই মুরতাদকে শাস্তি দেন নি এবং কোন ভাল ব্যাক্তি মুরতাদের বিষয় সুপারিশ করতে পারবে ।

* নবীজী (সা) বলিয়াছেন যে ব্যক্তি ধর্মত্যাগ করে তাহাকে হত্যা কর” (বোখারী ২৮৫৪ নং হাদিস- মওলানা আবদুল জলিলের অনুবাদ) নিয়ে মওলানাদের মধ্যেই মহা-বিতর্ক আছে কারণ তাহলে যারা তাদের ধর্ম ত্যাগ ক’রে ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকেও খুন করতে হয়। নবীজীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জীবনী “সিরাত”-এ (ইবনে হিশাম/ইশাক,পৃষ্ঠা ৩৮৪, ৫২৭ ও ৫৫০) উবায়রাক ছাড়াও আমরা নবীজীর সময়ে তিনজন মুরতাদের দলিল পাই। তারা হল হারিথ, নবীজীর ওহি লেখক ইবনে সা’দ, এবং উবায়দুলাহ − ।- এ তিনজনের কাউকে মৃত্যুদণ্ড কেন, কোনো শাস্তিই দেননি নবী মুহাম্মদ (সা) । তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন, তবু সর্বদা মেনে চলেছেন লা-ইকরাহা ফিদ্দিন, − ধর্মে জবরদস্তি নাই − বাকারা ২৫৬।

দলিল প্রমানে এ-সব ঘটনা আছে নামধাম, তারিখ, ঘটনার বিবরণ সহ। দেখুন সহি বুখারি ৯ম খণ্ড হাদিস ৩১৮: জাবির বিন আব্দুল্লাহ বলেন, এক বেদুইন আল্লাহর রসুলের কাছে বায়াত গ্রহণ করিল। পরে মদিনায় তাহার জ্বর হইলে সে আল্লাহ্‌র রসুলের নিকট আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহ্‌র রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহর রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে আবার আসিয়া বলিল ‘হে আল্লাহর রসুল, আমার বায়াত ফিরাইয়া দিন।’ রসুল সম্মত হইলেন না। তারপর সে মদিনা ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ইহাতে আল্লাহর রসুল বলিলেন− “মদিনা একটি উনুনের মতো, − ইহা ভেজালকে বাহির করিয়া দেয় এবং ভালোকে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।”

এই যে স্বয়ং নবীজীর সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগ − মৃত্যুদণ্ড তো দূরের কথা, কোথায় হুঙ্কার বা কোথায় শাস্তি ?

++++++++ যেসব মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলঃ

*ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২২, সহিহ হাদিসঃ ইকরিমাহ (রহ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আলী (রা) এর কাছে একদল যিন্দিককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীদের) আনা হল । তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন । এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রা) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না । কেননা রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিষেধ আছে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম । কারন রাসুলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশ আছে যে, কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা করো ।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২৩, সহিহ হাদিসঃ আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (সা) এর কাছে এলাম । আমার সঙে আশআরি গোত্রের দুজন লোক ছিল । একজন আমার ডানদিকে অপরজন আমার বামদিকে । আর রাসুল (সা) তখন মিসওয়াক করছিলেন । উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল । তখন তিনি বললেন, হে আবু মুসা ! অথবা বললেন হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স ! রাবি বলেন, আমি বললাম ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কি আছে তা আমাদের জানায়নি এবং তারা যে চাকরি পার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি । আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নিচে মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ করছিলাম যে তা এক কোনে সরে গেছে । তখন তিনি বললেন আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিযুক্ত করব না বা করি না যে নিজেই তা চায় । বরং হে আবু মুসা তুমি ইয়ামানে যাও , এরপর তিনি তার পেছনে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) কে পাঠালেন ।যখন তিনি সেখানে পৌঁছলেন, তখন আবু মুসা (রা) তার জন্য একটি গদি বিছালেন আর বললেন নেমে আসুন । ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শিকলে বাধা ছিল । তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঐ লোকটি কে ? আবু মুসা (রা) বললেন, সে প্রথমে ইহুদি ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল । কিন্তু আবার সে ইহুদি হয়ে গেছে । আবু মুসা (রা) বললেন, বসুন । মুয়াজ (রা) বললেন, না বসব না । যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে । এটাই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের ফয়সালা । কথাটি তিনি তিনবার বলেন । এরপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল ।

* ই,ফাঃ আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩০৫, সহিহ হাদিসঃ একদিন আবু মুসা (রা) এর নিকট এক মুরতাদ ব্যাক্তিকে হাযির করা হয় । তিনি তাকে প্রায় ২০ দিন যাবত পুনরায় মুসলমান হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । পরে মুয়াজ (রা) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে দ্বীনের দাওয়াত দেন । কিন্তু সে অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হয় ।

*************মুরতাদদের কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়ঃ

*আবু মুসা আশআরি (রা) এর পক্ষ থেকে এক লোক উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর কাছে এলো । তিনি তাঁর কাছে ওখানকার লোকদের হাল-অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন । সে এ সম্পর্কে তাকে জানালো । উমর (রা) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন , তোমাদের কাছে কি নতুন কোন খবর আছে ? সে বলল হ্যাঁ । এক লোক ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়েছে । তিনি বলেন , তোমরা তার সাথে কি ব্যাবহার করেছ ? সে বলল , আমরা তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করেছি । তিনি বলেন, কেন তোমরা তাকে তিন দিন একটি ঘরে বন্দী করে রাখলে না ? প্রতিদিন তাকে খাবার খাওয়াতে । তাকে তওবা করতে বলতে । হয়ত সে তওবা করতো এবং পুনরায় আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসত ? (এরপর তিনি বলেন) হে আল্লাহ! আমি (তাদের) এই নির্দেশ দেইনি । আমি উপস্থিত ছিলাম না এবং আমার কাছে খবর পৌঁছালে তাতে আনন্দিতও হই নি । (মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (রহ), পৃষ্ঠা ৬১৪-৬১৫)।

* আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন অবস্থা ব্যতীত মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ (১ম) যদি কোন মুসলমান বিবাহ করার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, (২য়) ঐ ব্যক্তি যে কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তাকে হত্যা করা যাবে এবং (৩য়) ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হল, তাকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা দেশান্তর করা হবে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪০৪৮, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস , Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ)

* উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হবে বা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশান্তর করা হবে। ( সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৭৪৩, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস , Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ)

* মুহাম্মাদ ইব্‌ন সিনান (রহঃ) —- আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, “আল্লাহ্‌ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল, তবে তিনটি মধ্যে যে কোন একটি কারণে তার রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কেউ বিবাহ করার পর যিনা করে, তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে; (২) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবে, তাকে হত্যা করা হবে, অথবা শুলী দণ্ড দেওয়া হবে, অথবা দেশ থেকে বের করা হবে এবং (৩) যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করবে, তার জীবনের বিনিময়ে তাকে হত্যা করা হবে।(হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) ,সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) , অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান, হাদিস নাম্বার: ৪৩০২ )

ihadis.com বুলগুল মারাম, হাদিস নং ১১৯৭, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, তোমাদের সংঘবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ আসে আর সে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইচ্ছা, চেষ্টা করে তবে তোমরা তাকে হত্যা করো ।

ihadis.com সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫২, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নাই আর আমি আল্লাহর রাসুল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় , যদি না সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে থাকে। ১/ বিবাহিত ব্যাক্তি যিনা করলে । ২/ কেউ কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে হত্যা এবং ৩/সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী মুরতাদ ।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩০১৮, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) উকল নামের এক দল যারা পরে মুরতাদ হয়, এবং এক রাখালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে রাসুল (সা) তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেন । আবু কিলাবা (রা) বলেন তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সা) এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।

ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯১৯ , সহিহ হাদিসঃ আবু বাকরাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিন বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ সব থেকে কঠিন কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। মিথ্যা সাক্ষ্য কথাটি তিনবার বললেন । অথবা বলেছেন মিথ্যা বক্তব্য । কথাটি বারবার বলতে থাকলেন এমন কি আমরা আকাঙ্ক্ষা করতে লাগলাম হায় যদি তিনি নীরব হয়ে যেতেন । - নিজে আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সা) কে সত্য সাক্ষ্য দেয়ার পরেও আবার ফিতনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য পলটি নিবেন এটা ইসলাম কখনো বরদাশত করবে না ।

*ihadis.com সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯৩০, সহিহ হাদিসঃ সুয়ারদ ইবনে গাফালা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আলী (রা) বলেছেনঃ আমি যখন তমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা) এর কোন হাদিস বয়ান করি আল্লাহ্‌র শপথ তখন তার উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটাই আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি তাহলে মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধ একটি কৌশল । আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্প বয়স্কা যুবক, নির্বোধ, তারা সৃষ্টির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে অথচ ইমান তাদের গলা অতিক্রম করবে না । তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায় । তাদেরকে যেখানে পাও তোমরা হত্যা করবে । কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতের দিন প্রতিদান আছে ।- এই হাদিস থেকে বুঝা যায় এম্ন কিছু মানুষ থাকবে যারা নিজেরা মুসলিম না কিন্তু ইসলামের কথাগুলা ভুলভাবে মানুষদের সাথে বলে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে । অনেকেই আছে যারা ইসলাম গ্রহন না আবার পরে ইচ্ছা করেই মুরতাদ হয়ে যায় যাতে মানুষদের ভ্রান্ত করতে পারে এমন ভয়ংকর মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে রাষ্ট্রীয় ভাবে ।

একটি যৌক্তিক উদাহরণঃ

দেখুন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকা জান তাহলে কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি বাংলাদেশ থেকে অ্যামেরিকায় যাওয়ার পরে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক কথা,লিখা লিখি,সাম্প্রদায়িক উস্কানি তথা এক কথায় দেশদ্রোহী করেন তাইলে কিন্তু আপনাকে বাংলাদেশের সরকার মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে কারন আপনি দেশদ্রোহী এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ অপরাধী ।একই ভাবে আপনি যদি ইসলাম ত্যাগ করেন তাইলে আমাদের কারো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি উস্কানি মূলক কথা, লিখা লিখি, সাম্প্রদায়িক উস্কানির দাঙ্গা তথা এক কথায় ধর্মদ্রোহী হন তাইলেই ইসলামই রাষ্ট্র আপনাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারে এটি স্বাভাবিক বরং আম্মাজান আয়েশা থেকে যে হাদিস আমরা পাচ্ছি সেখানেই পরিষ্কার জেনে যাচ্ছি যে যদি ইসলাম ত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে হত্যা অথবা শূলে চড়ানো অথবা দেশান্তর করা হবে ।

দ্বিতীয় যৌক্তিক উদাহরণঃ

* আমর ইব্‌ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্‌(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্‌ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়। (হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih), সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান,হাদিস নাম্বার: ৪৩০১)‏

খেয়াল করুন হাদিসের শেষের লাইন "যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়" জামাত অর্থ দল । ধরেন এক দেশের গোয়েন্দা তার দেশের সব কিছুই জানে গোপন সব কিছু এখন যদি এই লোক অন্যের টাকা খেয়ে অন্য দেশে চলে যায় যেয়ে যদি সব ফাঁশ করে দেয় গোপন তথ্য, সেটি হতে পারে আর্মি বাহিনীর গোপন ছক হতে পারে দেশের গোপন সম্পদ ইত্যাদি !!! এখন কেউ যদি এই ধরণের লোকদের টার্গেট করে বলে যারা নিজেদের দল ত্যাগ করেছে তাদের হত্যা করো এটা কি অন্যায় নাকি এটাই সুবিচার ? অবশ্যই এটাই ন্যায় বিচার কারন তুমি নিজের দেশের সাথে গাদ্দারি করেছ । একই ভাবে কেউ যদি ইসলাম গ্রহন করে এবং সাহাবীদের সাথে কিছু দিন চলে তাদের হতে পারে গোপন রহস্য অথবা হতে পারে যুদ্ধের কিছু গোপন তথ্য, বের করে ইসলাম ত্যাগ করে , এখন তাদেরকে টার্গেট করে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) এটা বলে যে যে ইসলাম ত্যাগ করে তাকে হত্যা করো , এটা অবশ্যই ভাল একটি হুকুম কারন দেশের জন্য গাদ্দারি করা কেউ সাপোর্ট করবে না, যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে ।

তৃতীয় যৌক্তিক বিশ্লেষণঃ

আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ আহলে কিতাবের এক দল এটাই বলে যে, বিশ্বাস স্থাপনকারীদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তারপ্রতি আগে বিশ্বাস স্থাপন করো এবং পরে তা অস্বীকার করো - যেন তারা ফিরে আসে । (সুরা আল ইমরান, অধ্যায় ৩, আয়াত ৭২ )
আসুন এই আয়াতের তাফসীর থেকে ঘুরে আসি তাহলে বুঝতে পারবেন আসল রহস্য কি এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের জালিয়াতির রহস্য ফাঁশ করা হয়েছে এই আয়াতে । কারন এই আয়াত দ্বারা বুঝান হয়েছে যে, ইহুদিরা পূর্ণ সত্য জানার পরেও ইসলাম নিয়ে তারা তামাসা করত এবং শুদু এটাই না বরং মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যে সব পন্থা তারা বের করেছে তার মধ্যে একটি কথা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, তারা পরামর্শ করে - তোমরা দিনের প্রথমাংশে ইমান আনবে এবং মুসলমানদের সাথে নামায পড়বে এবং শেষাংশে কাফির হয়ে যাবে। তাহলে মূর্খদেরও এ ধারনা হবে যে এরা এ ধর্মের ভিতরে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পেয়েছে বলেই এটা গ্রহন করার পরেও তা হতে ফিরে গেল, কাজেই তারাও এ ধর্ম ত্যাগ করবে এতে বিস্ময়ের কিছু নাই । মোটকথা তাদের এটা একটা কৌশল ছিল যে দুর্বল ঈমানের লোকেরা ইসলাম হতে ফিরে যাবে এই জেনে যে এ বিদ্বান! লোকগুলো যখন ইসলাম গ্রহনের পরেও তা হতে ফিরে গেল তাহলে অবশ্যই এ ধর্মের মধ্যে কিছু দোষত্রুটি রয়েছে । (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ ৯২, সুরা আল ইমরান এর ৭২ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন । অনুবাদ ডঃ মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান)

আসলে এটা পুরাতন কিছুই না । বর্তমানেও এই বাজে কাজ খৃষ্টানরা তো করেই নাস্তিক ধার্মিকরাও এটাই করছে । এমন কিছু মানুষদের তৈরি করে যারা কিছু বছর ইসলামের পক্ষে খুব দাওয়াতি কাজ করে যখন দেখে তার অনুসারি অনেক , সে যদি এখন ইসলাম ত্যাগ করে তাইলে অনেকেই বিভ্রান্ত হবে সহজে । ভাববে যে এই লোক যেহেতু এত দিন দাওয়াত দিয়েছে হটাত এখন ইসলাম ত্যাগ করে ফেলল তাই হয়ত ইসলাম ভাল না (নাউজুবিল্লাহ) । আচ্ছা এই সব ধান্দাবাজদের টার্গেট করে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন যারা ইসলাম ত্যাগ করে তাদের হত্যা করো এটা কি অন্যায় ? যাদের বিবেক আছে , যারা সুস্থ তারা অবশ্যই বলবে হুম এটা অবশ্যই মানবিক রাষ্ট্রীয় হুকুম ।

মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড যৌক্তিকতা বিষয়ে ইবনুল কায়িম আল জাওজিয়া (রহ) লিখেনঃ

মৃত্যুদণ্ড হল সর্বউচ্চ অপরাধের সর্বউচ্ছ শাস্তি । সর্বউচ্ছ অপরাধ যেমনঃ মানুষ হত্যা , দ্বীনের বিষয়ে কটূক্তি করা বা দ্বীন ত্যাগ করার মাধ্যমে দ্বীনের উপর আঘাত হানা ইত্যাদি । মুরতাদ এর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া খুবই যুক্তিসংগত কারন সমাজে মুরতাদ এর অবস্থান সংঘাত - সহিংসতা ও আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারন হয়ে থাকে । এমন লোক বেঁচে থাকার মাঝে কোন মঙ্গলের আশা করা যায় না । একে বাচিয়ে রাখা বরং অনেক নির্বুদ্ধিতা । (ইলামুল মুয়াক্কিয়িন ২/৮৪)

উপরের সমস্ত বিশুদ্ধ যৌক্তিক তথ্য প্রমান হাতে রেখেই আমরা খুব দৃঢ়তার সাথে দাবি করছিঃ

১/ কুরআনে কোথাও মুরতাদকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আদেশ নেই । বরং কুরআন মুরতাদদের সুযোগ দিচ্ছে ফেরত সত্য জীবন বিধান ইসলামে ফেরত আসার । এর পক্ষে ইউরোপিয়ান ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের সদস্যদের ফতোয়া পেশ করা হয়েছে।

২/ যেসব মুরতাদরা মুসলিমদের সমাজের ঐক্য নষ্ট করেনি, অথবা ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কানি মুলক ষড়যন্ত্র করেনি, ইসলামকে নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করেনি অথবা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেননি এমন মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি । উপরের এর পক্ষে প্রচুর সহিহ হাদিস দেখানো হয়েছে । যেখানে নবী মুহাম্মদ (সা) এসব মুরতাদদের শাস্তি দেন নি ।

৩/ পক্ষান্তরে যেসব মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল তারা ছিল ইসলামের শত্রু তথা ইচ্ছা করেই মুসলিম হত আবার ইচ্ছা করেই ইসলাম থেকে বের হত যাতে সাধারন মুসলিমরা তাদের দেখে মনে করে ইসলামে হয়ত সমস্যা আছে ! (নাউজুবিল্লাহ) । যেসব মুরতাদ মুসলিম সমাজের মধ্যে একতা নষ্ট করতে চেয়েছে, চুরি করেছে, নবী মুহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ল্যান করেছে , পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়েছে এসব সমাজ বিরোধী, দেশ বিরোধী , মানবতা বিরোধী মুরতাদদের মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়েছে । বরং এদের মৃত্যুদণ্ড দেয়াই যৌক্তিক।

৪/ মুরতাদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ দেয়া হবে যাতে সে ইসলামে ফিরে আসে । এখন ইসলামি রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিবে তাকে বেশি সময় দিবে নাকি কম ।

৫/ আপনি এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাবেন এখানে কোন প্রব্লেম নাই কিন্তু এক দেশে যেয়ে যদি আরেক দেশের বিরদ্ধে উস্কানি দেন এখানে আপত্তি আছে ঠিক একই যুক্তিতে আপনার জ্ঞানের স্বল্পতার জন্য যদি ইসলাম আপনার ভাল না লাগে আপনি ইসলাম না মানতেই পারেন কিন্তু আপনি ইসলাম ত্যাগ করে উস্কানি দিবেন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাবেন এটা ইসলাম কখনো মেনে নিবে না । সোজা হিসাব ।

৬/ মুরতাদের অবস্থা ইসলামি রাষ্ট্র ভাল ভাবে যাচাই করবে তার মতলব আসলে কি ! যদি ভাল হয় তাইলে তো ভালই আর যদি কোন নোংরা মতলব থাকে এই ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্র সেই মুরতাদকে মৃত্যুদণ্ড দিবে ।

৭/ ইসলামী রাষ্ট্রের কোন সাধারন মানুষ কোন মুরতাদকে শাস্তি দিতে পারবে না । করলে তারই শাস্তি হবে তবে সেটা ইসলামী সরকার নির্ধারণ করবেন । (বিস্তারিত দেখুনঃ বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য (ই'ফা),খণ্ড ১, ধারা ৭২, পৃষ্ঠা ২৭৮,)

Posted at June 02, 2020 |  by Arya ঋষি
 বিজ্ঞান ও ধর্মঃ  আলবার্ট আইনস্টাইন

 প্রবন্ধটি অনুবাদ করেছেন দিগন্ত সরকার।

upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/1/14/Alb...









বিজ্ঞান ও ধর্ম-প্রবন্ধ

 বিজ্ঞান ও ধর্মঃ  আলবার্ট আইনস্টাইন

 প্রবন্ধটি অনুবাদ করেছেন দিগন্ত সরকার।

upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/1/14/Alb...









Posted at June 01, 2020 |  by Arya ঋষি
প্রথম স্বয়ম্ভূর খোঁজে
প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বের পর....মূল প্রবন্ধ: The secret of how life on earth বেগান

১৯৬০ সালের পরে বিজ্ঞানীগণ প্রাণের উৎস অনুসন্ধানে তিনটি মতবাদে বিভক্ত হয়ে গেলেন। কারো ধারণা জীবন শুরু হয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ের জৈবিক কোষ গঠনের মাধ্যমে। অন্য একদল বিজ্ঞানী মনে করেন জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল রাসায়নিক বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু আরেক দল বিজ্ঞানী বংশগতি এবং আপন কোষের প্রতিলিপি সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শেষ দলের বিজ্ঞানীগণ, যে কোষটি নিজেই নিজের অনুরূপ সৃষ্টি করতে পারে তাদের স্বরূপ কেমন ছিল সেটা অন্বেষণের চেষ্টা করেন। এই বিজ্ঞানীগণ প্রথম থেকেই জোর দিয়ে প্রচার করেন জীব-কোষ আরএনএ দিয়ে তৈরি।

১৯৬০ দশকের বিজ্ঞানীগণের চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ ছিল যে আরএনএ হল সকল প্রাণের উৎস। বিশেষত আরএনএ এমনকিছু করতে পারে যেটা ডিএনএ করতে পারে না। আরএনএ হল একটা নমনীয় সুতো সদৃশ মলিকিউল। অন্যদিকে ডিএনএ হল দুইটা সুতো যারা নিজেরা পেঁচিয়ে স্তরে স্তরে বিভিন্ন আকারে সাজানো থাকে। আপনি এনজাইম ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। আরএনএ এর ভিতরে কাগজের মত ভাজ করা একটা বস্তু দেখা গেল যেটা প্রোটিনের মত আচরণ করে। প্রোটিন দেখতে সাধারণত অনেকটা লম্বা সুতোর মত। প্রোটিন নিউক্লিওটাইড নয় বরং অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি এবং তারা বিশদ জটিল অবয়ব সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আরএনএ হল প্রোটিন উৎপাদনের সবচেয়ে আশ্চর্য দক্ষতা। কিছু আরএনএ রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে অনুঘটকের কাজ করে। এই সমস্ত প্রোটিনকেই এনজাইম বলে।

আপনার মেরুদণ্ডের হাড়ের মজ্জায় বিপুল পরিমাণ এনজাইম বিদ্যমান। এনজাইম খাদ্যের জটিল মলিকিউলকে ভেঙে শর্করা বা চিনিজাতীয় সাধারণ সরল খাদ্য উপাদানে পরিণত করে যাতে প্রাণীর দেহকোষ সহজে গ্রহণ করতে পারে।

লেজলি ওরগেল এবং ফ্রান্সিস ক্রিক’র মনে হচ্ছিল যদি আরএনএ প্রোটিনের মত ভাজে ভাজে থাকে তাহলে আরএনএ এর মধ্যে জীবন্ত মলিকিউল থাকার সম্ভাবনা আছে এবং সেখানে তথ্যগুলো ডিএনএ আকারে সংরক্ষিত থাকে আর কিছু প্রোটিন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। লেজলি ওরগেল এবং ফ্রান্সিস ক্রিক’র সন্দেহ ছিল নিছক ধারণা কিন্তু দশক ধরে সেই ধারণার কোন সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

Thomas Cech in 2007
Thomas Cech in 2007 (Credit: Douglas A. Lockard, CC by 3.0)

টমাস রবার্ট চেক জন্মগ্রহণ করেন আমেরিকার আইওয়া শহরে এবং সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। শিশুকাল থেকেই চেক পাথর এবং খনিজ উপাদানের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ অনুভব করেন। তিনি যখন নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তখনই সে স্থানীয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের গবেষণাগারের দরজায় উঁকি দিয়ে শিক্ষকদের কাছে খনিজ উপাদানের গঠন প্রণালী দেখতে চেয়েছিলেন। টমাস রবার্ট চেক জৈব রসায়নবিদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন এবং তার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আরএনএ। এখন দেখা যাচ্ছে জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল আরএনএ দিয়ে এবং এতদিনের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর প্রায় দ্বারপ্রান্তে।

১৯৮০ সালের শুরুর দিকে টমাস রবার্ট চেক এবং তার কিছু সহকর্মী কোলারাডো বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এককোষী প্রাণ ‘Tetrahymena thermophila’ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এককোষী প্রাণের অনুষঙ্গের সুতা সদৃশ বস্তুটি আরএনএ দিয়ে গঠিত। চেক আবিষ্কার করলেন আরএনএ’র একটা বিশেষ অংশ কখনো কখনো মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে যেন তাকে কাঁচি দিয়ে কেটে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। চেকের গবেষকদল যখন সব এনজাইমকে পৃথক করে ফেললেন তখন অন্যান্য মলিকিউল কাঁচির মত কাটাকুটির কাজ করছিল। এই কাজটি চালিয়ে নিচ্ছিল আরএনএ। তারা খুঁজে পেলেন প্রথম আরএনএ এনজাইম। আরএনএ’র ক্ষুদ্র অংশ যারা নিজেদেরকে বৃহৎ অংশ থেকে দ্বিখণ্ডিত করতে সক্ষম।

চেক তার গবেষণামূলক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করলেন ১৯৮২ সালে। পরের বছর অন্য একটি বিজ্ঞানীদল রাইবোজম নামের দ্বিতীয় আরেকটি আরএনএ এনজাইমের সন্ধান পেলেন। দুইটি আরএনএ পাওয়ার সফলতার দ্রুত ইঙ্গিত দিলো সেখানে আরও অনেক কিছুর অস্তিত্ব আছে। এই আবিষ্কারের ফলে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল জীবন সৃষ্টি হয়েছিল আরএনএ থেকে।

ম্যাসাচুচেটস প্রদেশের কেমব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওয়াল্টার গিলবার্ট প্রথম মানুষের বংশগতি ধারণার গোড়াপত্তন করেন। পদার্থবিজ্ঞানী হলেও গিলবার্ট মলিকিউলার বায়োলজিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মানুষের জীনের ক্রমবিবর্তনের ধারা প্রমাণ করতে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা। বিচ্ছিন্ন বস্তুকণা থেকে আরএনএ জগতে উত্তরণ হল প্রাণের বিকাশে রাজকীয় যাত্রার শুরু। ১৯৮৬ সালে ‘নেচার’ বিজ্ঞান সাময়িকীতে গিলবার্ট প্রস্তাব করেন প্রাণের উৎপত্তি হয়ে আরএনএ’র হাত ধরে।

গিলবার্ট যুক্তি দেখান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে নিউক্লিওটাইড ঘনতরল থেকে বস্তুকণা থেকে নিজেই নিজের প্রাণ সৃষ্টির কাজকে ত্বরান্বিত করে আরএনএ মলিকিউল। আরএনএ সম্মিলিতভাবে দ্বিভাজিত হয় এবং নিজের স্বরূপ সৃষ্টি করে। আরএনএ মলিকিউল ক্রমান্বয়ে অনেক প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্ম দিল। আরএনএ খুঁজে পেল প্রোটিন এবং প্রোটিন এনজাইম সৃষ্টির উপায় এবং প্রমাণিত হল তাদের গুরুত্ব এবং তারা যাত্রা শুরু করলো জীবনের পথে যে জীবন আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রাণের বিকাশ প্রথমদিকের নিউক্লিওটাইড আদিম ঘনতরল স্যুপ থেকে একাধিক জৈবরাসায়নিক অণুজীবের গঠনের উপর যুগপৎ নির্ভর করেনি বরং একটা বিশেষ অণুজীব প্রাণ সৃষ্টির সর্বকাজের কাজি। ২০০০ সালে আরএনএ তত্ত্বের সমর্থনে এক নাটকীয় প্রমাণ পাওয়া গেল।

রাইবোজম প্রোটিন সৃষ্টি করছে
রাইবোজম প্রোটিন সৃষ্টি করছে (কৃতজ্ঞতা: লেগুনা ডিজাইন/ বিজ্ঞান চিত্রশালা)

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবরসায়নের অধ্যাপক টমাস আর্থার স্টিৎজ সুদীর্ঘ ৩০ বছর ধরে জীবন্ত কোষে অণুজীবের গঠন নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। ১৯৯০ সালে তিনি রাইবোজোমের গঠনপ্রণালী খুঁজে দেখার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করলেন। প্রকৃত ঘটনা হলো প্রাণের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম আরএনএ নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এবং আরএনএ কেন্দ্রিক প্রাণের বিকাশ বেশি গ্রহণযোগ্য।

প্রতিটি জীবন্ত কোষে রাইবোজোম আছে। রাইবোজোম আরএনএ থেকে সংকেত গ্রহণ করতে পারে এবং আরএনএ’র অভ্যন্তরীণ সুতোর-মত জালিকা অ্যামাইনো এসিড একত্রিত করে প্রোটিন সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণীদেহের বেশিরভাগ কোষ রাইবোজোম দ্বারা গঠিত। রাইবোজোম কোষের আরএনএ বহনকারী হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সালে অধ্যাপক স্টিৎজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল রাইবোজোমের গঠনের বিশদ চিত্র খুঁজে পেলেন এবং আবিষ্কার করলেন রাইবোজোমের অন্তঃস্থলে অনুঘটকের কাজ করছে আরএনএ।

ভাবতেই কেমন জটিল লাগছে, তাই না? কারণ রাইবোজোম হলো জীবনের ভিত্তিমূল এবং একই সাথে প্রাচীন। যেসব বিজ্ঞানীগণ সমর্থন করতেন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএন থেকে তাদের আনন্দের আর সীমা নাই। এই অসামান্য আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ সালে অধ্যাপক টমাস আর্থার স্টিৎজ রসায়নে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। কিন্তু সমস্যা ঘটে যায় অন্যত্র। এই আবিষ্কারের ফলে প্রাণ সৃষ্টির রহস্য আবার পিছনের দিকের সেই তিনটি ধারণার মধ্যে সন্দেহ ঘনীভূত হলো। আসলেই কী দিয়ে প্রাণ সৃষ্টি, কীভাবে সৃষ্টি? আরএনএ থেকে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল এই মতবাদের শুরুতেই দুইটা সমস্যা বিদ্যমান ছিল। আরএনএ কী প্রকৃতপক্ষে নিজে নিজেই প্রাণের সবধরনের ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম? পৃথিবীর প্রথম-যুগে কী প্রথমেই আরএনএ সৃষ্টি হয়েছিল?

বিজ্ঞানীগণ তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে গবেষণাগারে নিজেই নিজের সৃষ্টিকর্তা আরএনএ সৃষ্টির কাজ শুরু করলেন। ৩০ বছরের দীর্ঘ গবেষণার পরেও গিলবার্ট প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ দিয়ে এই মতবাদের সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলেন না। গিলবার্ট পেলেন অণুজীব কিন্তু সেটা প্রাণের সৃষ্টি রহস্য সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল। যদি প্রাণ সৃষ্টি হয় আরএনএ অণুজীব দিয়ে তাহলে আরএনএ অবশ্যই নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারবে। আরএনএ’কে হতে হবে স্বয়ম্ভূ।

কিন্তু আরএনএ নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে না। ডিএনএ’র দ্বারাও একাজ সম্ভব নয়। আরএনএ বা ডিএনএ যাকিছুই বলি না কেন নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে হলে তাদের দরকার বিপুল পরিমাণ এনজাইম এবং অন্যান্য অণুজীব। ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে কিছু জীববিজ্ঞানী প্রাণ বিকাশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কিছু অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের সমাধান করতে গবেষণা শুরু করেন। তাদের মতবাদের সমর্থনে তারা নেমে পড়লেন নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এমন আরএনএ’র সন্ধানে।

জ্যাক সোসটাক
জ্যাক সোসটাক (কৃতজ্ঞতাঃ ডেটলেভ ভ্যান র‍্যাভেনসায়ে/ বিজ্ঞান চিত্রশালা)

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের জীনতত্ত্বের প্রফেসর জ্যাক ইউলিয়াম সোসটাক প্রাণের উৎস সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। শিশুকাল থেকেই তিনি রসায়নের প্রতি এত মুগ্ধ ছিলেন যে তার বাড়ির বেইজমেন্টে তার নিজস্ব একটা গবেষণাগার ছিল। তার নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লেও তিনি একবার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটান। ফলাফলে যা ঘটেছিল তা ছিল বিস্ময়কর। বিস্ফোরণের ফলে একটা গ্লাসের টিউব তীব্র-বেগে ছুটে গিয়ে ছাদের দেয়ালে গেঁথে গিয়েছিল।
১৯৮০ দশকের শুরুতে সোসটাক প্রমাণ করে দেখাতে সক্ষম হন কীভাবে জীন বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তার এই গবেষণার ফলাফল তার জন্য নোবেল পুরষ্কার এনে দিয়েছিল। তিনি দেখান আরএনএ এনজাইম কতটা শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু তিনি অতি দ্রুতই টমাস রবার্ট চেক’র আরএনএ এনজাইমের গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। সোসটাক বলেন, “আমি মনে করেছিলাম এনজাইম নিয়ে গবেষণা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। মোটের উপর সম্ভবত আরএনএ নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে।”

১৯৮৮ সালে চেক এক বিশেষ ধরণের আরএনএ ইনজাইমের সন্ধান পেলেন যারা ক্ষুদ্র আরএনএ মলিকিউল বানাতে পারে এবং এই আরএনএ ১০ নিউক্লিওটাইডের সমান দীর্ঘ। সোসটাক গবেষণাগারে নতুন ধরণের আরএনএ ইনজাইম সৃষ্টি করে তার আবিষ্কারকে সমৃদ্ধ করতে গবেষণা শুরু করলেন। সোসটাকের গবেষকদল বিপুল পরিমাণ গবেষণার ফলাফল দৈব-চয়ন পদ্ধতিতে আবার পরীক্ষা করে দেখতে লাগলেন কোন ধরণের এনজাইম অনুঘটকের কাজ করে। সেই পরীক্ষাগুলো থেকে আবার পরীক্ষা করলেন। একই পদ্ধতিতে ১০ বার পরীক্ষার পর সোসটাক এমন এক আরএনএ এনজাইম সৃষ্টি করলেন যার বিক্রিয়ার অনুঘটক ক্ষমতা সাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের তুলনায় ৭০লক্ষ গুণ বেশি গতিশীল। তারা দেখালেন আরএনএ এনজাইম প্রকৃত অর্থেই প্রভূত শক্তিশালী কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদের আরেকটি অনুরূপ সৃষ্টি করতে পারে না। এমনকি অনুরূপ সৃষ্টির ধারে কাছেও যায় না। সোসটাক যেন অসম্ভবের দেয়ালে আঘাত করলেন।

প্রথম স্বয়ম্ভূর খোঁজে
মনে হয় না আরএনএ জীবনের যাত্রাপথের সূচনা করেছিল। (কৃতজ্ঞতা: বিজ্ঞান চিত্রশালা/আলামি)

তারপরে সবচেয়ে বড় সাফল্য এলো ২০০১ সালে অধ্যাপক সোসটাক’র সাবেক শিক্ষার্থী কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড বারটেল’র হাত ধরে। বারটেল আর১৮ নামে আরএনএ এনজাইম সৃষ্টি করলেন যা বিদ্যমান আরএনএ জালের সাথে নতুন নিউক্লিওটাইড যোগ করতে পারে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে এই সাফল্য শুধু আরএনএ’র সাথে যথেচ্ছ নিউক্লিওটাইড সংযুক্তিই নয় বরং পূর্বের পরীক্ষার ফলাফলের যথাযথ প্রতিফলন।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের যা কিছু অর্জন তার কিছুই নিজেই নিজের অবিকল কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু অগ্রগতি প্রায় উদ্দেশ্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। আর১৮ ১৮৯টি নিউক্লিওটাইড সুতোর জাল দিয়ে গঠিত এবং এটা নির্ভরযোগ্য-ভাবে আরও ১১টি নিউক্লিওটাইড আগের আরএনএ সুতোর জালের সাথে যুক্ত করতে পারে যা নিজের দৈর্ঘ্যের প্রায় ৬ শতাংশ। নতুন গবেষণা আশা জাগালো জালের কিছু সুতোর প্রান্ত ১৮৯টি নিউক্লিওটাইডের সমান দীর্ঘ। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেল প্রাণের সৃষ্টি আরএনএ থেকে সূত্রপাত হয়নি।

২০১১ সালে কেমব্রিজের মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগে গবেষণাগারে সবচেয়ে সফল পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন ফিলিপ হোলিগার। তার গবেষকদল আর১৮ আরএনএ’র উন্নতি সাধন করেন তার নাম দিলেন টিসি১৯জেড। এই নতুন আরএনএ যেটা নিজেদের ফলাফলের নিউক্লিওটাইড ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিলিপি করতে পারে। তাদের ৪৮ শতাংশ নিজেদের দৈর্ঘ্য যা আর১৮ আরএনএ থেকেও বড় কিন্তু ১০০ শতাংশ সেখানে অত্যাবশ্যকীয় নয়। ক্যালিফোর্নিয়াতে লা জোলা’তে অবস্থিত ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ইন্সটিটিউটে’ বিকল্প আর একটা গবেষণা তখন চলছিল জেরাল্ড ফ্রান্সিস জয়েস এবং ট্রেসি লিংকন’র নেতৃত্বে। ২০০৯ সালে তারা আর একধরণের এনজাইমের সন্ধান পেলেন যারা নিজেদের অগোচরেই নিজেদেরকে অবিকল প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। নতুন সৃষ্ট এনজাইম দুইটা ক্ষুদ্র আরএনএ’র সাথে যুক্ত হয়ে দ্বিতীয় আরেকটা এনজাইমের জন্ম দেয়। এই এনজাইম আর দুইটা আরএনএ’র সাথে যুক্ত হয়ে আবার নতুন এনজাইম সৃষ্টি করে। প্রয়োজনীয় উপাদান এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এনজাইম সৃষ্টির এই সরল চক্র অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতেই থাকে। কিন্তু এনজাইম শুধু তখনই সফলভাবে কাজ করতে পারে যখন তাদেরকে সঠিক আরএনএ সূত্র দেয়া হয়। ঠিক এই পরীক্ষাটাই জেরাল্ড ফ্রান্সিস জয়েস এবং ট্রেসি লিংকন গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করেন।

অনেক বিজ্ঞানী প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ থেকে এমন তত্ত্বে সম্বন্ধে সন্দিহান ছিলেন কারণ আরএনএ নিজেই নিজের আর একটা অবিকল প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে না এবং এটাই এই তত্ত্বের প্রধান দুর্বলতা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আরএনএ থেকে জীবনের সূচনা হয়নি। সম্ভবত নবগঠিত পৃথিবীতে অন্যকোন ধরণের জৈব-কণার উপস্থিতি ছিল সেখান থেকেই প্রাণের সৃষ্টি। প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ থেকে তত্ত্বটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে যখন রসায়নবিজ্ঞানগণ পারস্পারিক সম্পর্কহীন বিচ্ছিন্ন কোন বস্তু থেকে আরএনএ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়। ডিএনএ’র তুলনায় অণুজীবকে মনে হল অনেক সাধারণ কিন্তু আরএনএ সৃষ্টি করা ভীষণ কঠিন এবং শ্রমসাধ্য কাজ। সমস্যা দেখা দিলো কোষের শর্করা উৎপাদন করতে গিয়ে এবং যার উপর ভিত্তি করে নিউক্লিওটাইড সৃষ্টি হয় সেখানে বিস্তর ঝামেলা। কোষের এই দুইটা অপরিহার্য উপাদান আলাদা আলাদা উৎপাদন করা সম্ভব কিন্তু এই দুইটা উপাদানের মাঝে কোনভাবেই সংযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই সমস্যা ১৯৯০ দশকের শুরুতেই পরিষ্কার জানা গিয়েছিল সুতরাং অনেক বিজ্ঞানীই নাকসিটকিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ থেকে এই তত্ত্ব শুধুই নিরেট ধারণা মাত্র, বাস্তবের সাথে লেশমাত্র সম্পর্ক নাই। তত্ত্বটা মোটেও সঠিক নয়।

সম্ভবত নবগঠিত পৃথিবীতে অন্যকোন ধরণের জৈব-কণার উপস্থিতি ছিল যারা আরএনএ থেকে সরল এবং যারা পৃথিবীর আদিম জৈব-কণা ভর্তি ঘন তরল থেকে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে পারে এবং নিজেদের অবিকল প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে শুরু করে এবং আরএনএ, ডিএনএ এবং অন্যান্য উপাদান সৃষ্টির দিকে ধাবিত করে।

[ সম্ভবত ডিএনএ পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা করতে প্রথম সংগ্রাম শুরু করে। (কৃতজ্ঞতা: বিজ্ঞান চিত্রশালা/ আলামি) ]
[ সম্ভবত ডিএনএ পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা করতে প্রথম সংগ্রাম শুরু করে। (কৃতজ্ঞতা: বিজ্ঞান চিত্রশালা/ আলামি) ]

ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিটার নিলসেন ১৯৯১ সালে দাবী করলেন জীবনের সূচনা সেই আদিম পুকুরের ঘন তরল থেকে। যেখানে অণুজীব নিজের প্রতিলিপি নিজেই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এটা ছিল বিস্তর বিবর্তিত ডিএনএ। পিটার নিলসেন পূর্বের বিজ্ঞানীদের গবেষণার উপর ভিত্তি করেই এগিয়ে গেলেন নতুন উদ্যমে এবং স্থির থাকলেন ডিএনএ’র মধ্যে প্রাপ্ত এ, টি, সি এবং জি এনজাইমে। নিলসেন অণুজীব গবেষণার মূল ভিত্তি গড়ে দিলেন এবং ডিএনএ’র ভিতরে শর্করার পরিবর্তে পলিএমাইডস অ্যামাইনো এসিডের সন্ধান পেলেন। তিনি নতুন প্রাপ্ত অণুজীবের নাম দিলেন পলিএমাইডস নিউক্লিক এসিড সংক্ষেপে পিএনএ। যদিও বিভ্রান্তিকরভাবে আমরা এখনো পিএনএ’কে জানি পেপটাইড নিউক্লিক এসিড নামে। আরএনএ’র পিএনএ গঠন এত দুঃসাধ্য নয়, সম্ভবত পৃথিবীর আদিম অবস্থায় পিএনএ গঠিত হয়েছিল।

পিএনএ প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, একে সৃষ্টি করতে হয় এবং আচরণ অনেকাংশে ডিএনএ’র মত। পিএনএ’র সুতার মতো একটা প্রান্ত ডিএনএ’র একটা প্রান্ত দখল করে নিতে পারে। অণুজীবের এই মিলে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তদুপরি পিএনএ, ডিএনএ’র মত দুইটা প্রান্ত পেঁচিয়ে মইয়ের আকার ধারণ করতে পারে। স্ট্যানলি মিলার এখানেই আমাদেরকে মুগ্ধ করে এবং প্রাণ সৃষ্টির রহস্য জগতে কৌতূহলী করে তোলে। তিনি প্রাণের বিকাশ হয়ে আরএনএ থেকে এই তত্ত্বের ঘোরতর অবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন প্রথম প্রাণের উপাদান সৃষ্টিতে পিএনএ বরং অনেক বেশী বিশ্বাসযোগ্য এবং যুক্তিপূর্ণ দাবীদার।

২০০০ সালে স্ট্যানলি মিলার আরও শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করলেন। ইতিমধ্যে তিনি ৭০ বছরের অভিজ্ঞতায় পৌঁছে গেছেন। কিন্তু বিধি বাম, সেই সময়ে তিনি পরপর কয়েকটি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ফলে তাকে গবেষণা ছেড়ে নার্সিং হোমে চলে যেতে হয়। তার কাজ আর সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। মিলার তার সেই ক্লাসিকাল ‘স্ট্যানলি মিলার-হ্যারল্ড উরে পরীক্ষা’ পুনরায় করে দেখেন যে পরীক্ষার কথা আমরা ইতিমধ্যেই প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। এবারের পরীক্ষায় মিলার মিথেন, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া, পানির সাথে পিএনএ যুক্ত করে দিলেন।

A molecule of threose nucleic acid (TNA)
A molecule of threose nucleic acid (TNA) (Credit: Alfred Pasieka/Science Photo Library)

অন্যান্য রসায়নবিদগণ প্রাণ গবেষণায় এগিয়ে এলেন তাদের নিজস্ব বিকল্প নিউক্লিক এসিড এবং তাদের তত্ত্ব ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিয়ে। প্রতিটি বিকল্প নিউক্লিক এসিড ব্যবহারের পিছনে ভিন্ন ভিন্ন সমর্থক বিজ্ঞানীদলের বিশেষ করে যারা এই এসিডের উদ্ভাবন করেছেন তাদের পৃথক যুক্তি আছে। ২০০০ সালে আলবার্ট ইসেনমসার কৃত্রিম জেনেটিক পলিমার ‘থ্রেওস নিউক্লিক এসিড’ উদ্ভাবন করেন। থ্রেওস নিউক্লিক এসিড বা টিএনএ মূলত ডিএনএ কিন্তু এর রাইবোজোমে ভিন্ন ধরণের শর্করা আছে। টিএনএ রাইবোজোমের সুতোর প্রান্ত দুইটা দ্বিমুখী কুণ্ডলী বানাতে পারে এবং আরএনএ এবং টিএনএ’র মাঝে পূর্বাপর তথ্যের অবিকল প্রতিলিপি আদান প্রদান করতে পারে। এছাড়াও টিএনএ জটিলতর ভাজে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারে এবং প্রোটিন সংরক্ষণ করতে পারে। এথেকেই বোঝা যায় টিএনএ আরএনএ’র মতই এনজাইমের কাজ করতে পারে। একইভাবে ২০০৫ সালে এরিক মেগারস গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে গ্লাইকল নিউক্লিক এসিড উৎপাদন করলেন যেগুলো প্যাঁচানো কাঠামো তৈরি করতে পারে। এতক্ষণ যতগুলো নিউক্লিক এসিড নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের কোনটিই প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, সৃষ্টি হয়েছে গবেষণাগারে। সুতরাং যদি প্রথম প্রাণ এইসব নিউক্লিক এসিডের মধ্য থেকে কোন একটিকে ব্যবহার করে থাকে তাহলে বলতেই হবে এতদিনের চলমান বিতর্ক চলে যাবে আরএনএ এবং ডিএনএ’র পক্ষে অর্থাৎ প্রাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল আরএনএ এবং ডিএনএ দিয়ে। এই মতবাদ হয়ত সত্য, কিন্তু বিজ্ঞানীদের হাতে এই দাবীর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই।

আর এইসব কিছুর অর্থ দাঁড়ালো, ২০০০ শতকের মাঝামাঝি উপনীত হয়ে আরএনএ মতবাদের বিজ্ঞানীগণ প্রচণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন। আরএনএ মতবাদের বিজ্ঞানীগণের চিন্তা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ খুব যৌক্তিক এবং গোছানো পরিপাটি কিন্তু প্রাণের উৎস সম্পর্কে পুরোপুরি সত্যের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

A molecule of threose nucleic acid (TNA)
A molecule of threose nucleic acid (TNA) (Credit: Alfred Pasieka/Science Photo Library)

অন্যদিকে আরএনএ এনজাইম প্রকৃতিতেই বিদ্যমান ছিল এবং সুসংবাদ হলো সেই এনজাইমে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক উপাদান রাইবোজোমের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এমন কোন আরএনএ’র সন্ধান পাওয়া গেল না যে নিজেই নিজের অনুরূপ প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এবং কোন বিজ্ঞানীই প্রমাণ করতে পারলেন না যে আদিম ঘন তরল স্যুপ থেকে কীভাবে আরএনএ সৃষ্টি হয়েছিল। বিকল্প নিউক্লিক এসিড হয়ত পরবর্তী প্রশ্নের সমাধান দিতে সক্ষম কিন্তু হতাশার খবর এই যে, প্রাণের এইসব প্রাথমিক উপাদানগুলো প্রকৃতিতে আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল তার কোন নির্ভুল প্রমাণ বিজ্ঞানীগণের হাতে নেই। ঠিক সেই সময়ে ১৯৮০ দশক থেকে আরএনএ মদবাদের বিরোধী আর একটি মতবাদ ধীরেধীরে তাদের যুক্তির স্বপক্ষে প্রমাণ যোগার করতে ব্যস্ত ছিল। নতুন মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীগণ যুক্তি দেখাতে লাগলেন জীবন আরএনএ বা ডিএনএ বা অন্যকোন বংশগতির বস্তু থেকেও নয় বরং জীবন সৃষ্টি হয়েছিল শক্তির যান্ত্রিক কৌশল ত্বরান্বিত করে। কারণ জীবনকে বেঁচে থাকতে হলে দরকার শক্তি।

Life needs energy to stay alive (Credit: Equinox Graphics Ltd)
Life needs energy to stay alive (Credit: Equinox Graphics Ltd)

পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি পর্ব-৩

প্রথম স্বয়ম্ভূর খোঁজে
প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বের পর....মূল প্রবন্ধ: The secret of how life on earth বেগান

১৯৬০ সালের পরে বিজ্ঞানীগণ প্রাণের উৎস অনুসন্ধানে তিনটি মতবাদে বিভক্ত হয়ে গেলেন। কারো ধারণা জীবন শুরু হয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ের জৈবিক কোষ গঠনের মাধ্যমে। অন্য একদল বিজ্ঞানী মনে করেন জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল রাসায়নিক বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু আরেক দল বিজ্ঞানী বংশগতি এবং আপন কোষের প্রতিলিপি সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শেষ দলের বিজ্ঞানীগণ, যে কোষটি নিজেই নিজের অনুরূপ সৃষ্টি করতে পারে তাদের স্বরূপ কেমন ছিল সেটা অন্বেষণের চেষ্টা করেন। এই বিজ্ঞানীগণ প্রথম থেকেই জোর দিয়ে প্রচার করেন জীব-কোষ আরএনএ দিয়ে তৈরি।

১৯৬০ দশকের বিজ্ঞানীগণের চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ ছিল যে আরএনএ হল সকল প্রাণের উৎস। বিশেষত আরএনএ এমনকিছু করতে পারে যেটা ডিএনএ করতে পারে না। আরএনএ হল একটা নমনীয় সুতো সদৃশ মলিকিউল। অন্যদিকে ডিএনএ হল দুইটা সুতো যারা নিজেরা পেঁচিয়ে স্তরে স্তরে বিভিন্ন আকারে সাজানো থাকে। আপনি এনজাইম ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। আরএনএ এর ভিতরে কাগজের মত ভাজ করা একটা বস্তু দেখা গেল যেটা প্রোটিনের মত আচরণ করে। প্রোটিন দেখতে সাধারণত অনেকটা লম্বা সুতোর মত। প্রোটিন নিউক্লিওটাইড নয় বরং অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি এবং তারা বিশদ জটিল অবয়ব সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আরএনএ হল প্রোটিন উৎপাদনের সবচেয়ে আশ্চর্য দক্ষতা। কিছু আরএনএ রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে অনুঘটকের কাজ করে। এই সমস্ত প্রোটিনকেই এনজাইম বলে।

আপনার মেরুদণ্ডের হাড়ের মজ্জায় বিপুল পরিমাণ এনজাইম বিদ্যমান। এনজাইম খাদ্যের জটিল মলিকিউলকে ভেঙে শর্করা বা চিনিজাতীয় সাধারণ সরল খাদ্য উপাদানে পরিণত করে যাতে প্রাণীর দেহকোষ সহজে গ্রহণ করতে পারে।

লেজলি ওরগেল এবং ফ্রান্সিস ক্রিক’র মনে হচ্ছিল যদি আরএনএ প্রোটিনের মত ভাজে ভাজে থাকে তাহলে আরএনএ এর মধ্যে জীবন্ত মলিকিউল থাকার সম্ভাবনা আছে এবং সেখানে তথ্যগুলো ডিএনএ আকারে সংরক্ষিত থাকে আর কিছু প্রোটিন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। লেজলি ওরগেল এবং ফ্রান্সিস ক্রিক’র সন্দেহ ছিল নিছক ধারণা কিন্তু দশক ধরে সেই ধারণার কোন সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

Thomas Cech in 2007
Thomas Cech in 2007 (Credit: Douglas A. Lockard, CC by 3.0)

টমাস রবার্ট চেক জন্মগ্রহণ করেন আমেরিকার আইওয়া শহরে এবং সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। শিশুকাল থেকেই চেক পাথর এবং খনিজ উপাদানের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ অনুভব করেন। তিনি যখন নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তখনই সে স্থানীয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের গবেষণাগারের দরজায় উঁকি দিয়ে শিক্ষকদের কাছে খনিজ উপাদানের গঠন প্রণালী দেখতে চেয়েছিলেন। টমাস রবার্ট চেক জৈব রসায়নবিদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন এবং তার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আরএনএ। এখন দেখা যাচ্ছে জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল আরএনএ দিয়ে এবং এতদিনের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর প্রায় দ্বারপ্রান্তে।

১৯৮০ সালের শুরুর দিকে টমাস রবার্ট চেক এবং তার কিছু সহকর্মী কোলারাডো বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এককোষী প্রাণ ‘Tetrahymena thermophila’ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এককোষী প্রাণের অনুষঙ্গের সুতা সদৃশ বস্তুটি আরএনএ দিয়ে গঠিত। চেক আবিষ্কার করলেন আরএনএ’র একটা বিশেষ অংশ কখনো কখনো মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে যেন তাকে কাঁচি দিয়ে কেটে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। চেকের গবেষকদল যখন সব এনজাইমকে পৃথক করে ফেললেন তখন অন্যান্য মলিকিউল কাঁচির মত কাটাকুটির কাজ করছিল। এই কাজটি চালিয়ে নিচ্ছিল আরএনএ। তারা খুঁজে পেলেন প্রথম আরএনএ এনজাইম। আরএনএ’র ক্ষুদ্র অংশ যারা নিজেদেরকে বৃহৎ অংশ থেকে দ্বিখণ্ডিত করতে সক্ষম।

চেক তার গবেষণামূলক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করলেন ১৯৮২ সালে। পরের বছর অন্য একটি বিজ্ঞানীদল রাইবোজম নামের দ্বিতীয় আরেকটি আরএনএ এনজাইমের সন্ধান পেলেন। দুইটি আরএনএ পাওয়ার সফলতার দ্রুত ইঙ্গিত দিলো সেখানে আরও অনেক কিছুর অস্তিত্ব আছে। এই আবিষ্কারের ফলে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল জীবন সৃষ্টি হয়েছিল আরএনএ থেকে।

ম্যাসাচুচেটস প্রদেশের কেমব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওয়াল্টার গিলবার্ট প্রথম মানুষের বংশগতি ধারণার গোড়াপত্তন করেন। পদার্থবিজ্ঞানী হলেও গিলবার্ট মলিকিউলার বায়োলজিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মানুষের জীনের ক্রমবিবর্তনের ধারা প্রমাণ করতে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা। বিচ্ছিন্ন বস্তুকণা থেকে আরএনএ জগতে উত্তরণ হল প্রাণের বিকাশে রাজকীয় যাত্রার শুরু। ১৯৮৬ সালে ‘নেচার’ বিজ্ঞান সাময়িকীতে গিলবার্ট প্রস্তাব করেন প্রাণের উৎপত্তি হয়ে আরএনএ’র হাত ধরে।

গিলবার্ট যুক্তি দেখান বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে নিউক্লিওটাইড ঘনতরল থেকে বস্তুকণা থেকে নিজেই নিজের প্রাণ সৃষ্টির কাজকে ত্বরান্বিত করে আরএনএ মলিকিউল। আরএনএ সম্মিলিতভাবে দ্বিভাজিত হয় এবং নিজের স্বরূপ সৃষ্টি করে। আরএনএ মলিকিউল ক্রমান্বয়ে অনেক প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্ম দিল। আরএনএ খুঁজে পেল প্রোটিন এবং প্রোটিন এনজাইম সৃষ্টির উপায় এবং প্রমাণিত হল তাদের গুরুত্ব এবং তারা যাত্রা শুরু করলো জীবনের পথে যে জীবন আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রাণের বিকাশ প্রথমদিকের নিউক্লিওটাইড আদিম ঘনতরল স্যুপ থেকে একাধিক জৈবরাসায়নিক অণুজীবের গঠনের উপর যুগপৎ নির্ভর করেনি বরং একটা বিশেষ অণুজীব প্রাণ সৃষ্টির সর্বকাজের কাজি। ২০০০ সালে আরএনএ তত্ত্বের সমর্থনে এক নাটকীয় প্রমাণ পাওয়া গেল।

রাইবোজম প্রোটিন সৃষ্টি করছে
রাইবোজম প্রোটিন সৃষ্টি করছে (কৃতজ্ঞতা: লেগুনা ডিজাইন/ বিজ্ঞান চিত্রশালা)

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবরসায়নের অধ্যাপক টমাস আর্থার স্টিৎজ সুদীর্ঘ ৩০ বছর ধরে জীবন্ত কোষে অণুজীবের গঠন নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। ১৯৯০ সালে তিনি রাইবোজোমের গঠনপ্রণালী খুঁজে দেখার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করলেন। প্রকৃত ঘটনা হলো প্রাণের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম আরএনএ নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এবং আরএনএ কেন্দ্রিক প্রাণের বিকাশ বেশি গ্রহণযোগ্য।

প্রতিটি জীবন্ত কোষে রাইবোজোম আছে। রাইবোজোম আরএনএ থেকে সংকেত গ্রহণ করতে পারে এবং আরএনএ’র অভ্যন্তরীণ সুতোর-মত জালিকা অ্যামাইনো এসিড একত্রিত করে প্রোটিন সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণীদেহের বেশিরভাগ কোষ রাইবোজোম দ্বারা গঠিত। রাইবোজোম কোষের আরএনএ বহনকারী হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সালে অধ্যাপক স্টিৎজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল রাইবোজোমের গঠনের বিশদ চিত্র খুঁজে পেলেন এবং আবিষ্কার করলেন রাইবোজোমের অন্তঃস্থলে অনুঘটকের কাজ করছে আরএনএ।

ভাবতেই কেমন জটিল লাগছে, তাই না? কারণ রাইবোজোম হলো জীবনের ভিত্তিমূল এবং একই সাথে প্রাচীন। যেসব বিজ্ঞানীগণ সমর্থন করতেন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএন থেকে তাদের আনন্দের আর সীমা নাই। এই অসামান্য আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ সালে অধ্যাপক টমাস আর্থার স্টিৎজ রসায়নে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। কিন্তু সমস্যা ঘটে যায় অন্যত্র। এই আবিষ্কারের ফলে প্রাণ সৃষ্টির রহস্য আবার পিছনের দিকের সেই তিনটি ধারণার মধ্যে সন্দেহ ঘনীভূত হলো। আসলেই কী দিয়ে প্রাণ সৃষ্টি, কীভাবে সৃষ্টি? আরএনএ থেকে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল এই মতবাদের শুরুতেই দুইটা সমস্যা বিদ্যমান ছিল। আরএনএ কী প্রকৃতপক্ষে নিজে নিজেই প্রাণের সবধরনের ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম? পৃথিবীর প্রথম-যুগে কী প্রথমেই আরএনএ সৃষ্টি হয়েছিল?

বিজ্ঞানীগণ তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে গবেষণাগারে নিজেই নিজের সৃষ্টিকর্তা আরএনএ সৃষ্টির কাজ শুরু করলেন। ৩০ বছরের দীর্ঘ গবেষণার পরেও গিলবার্ট প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ দিয়ে এই মতবাদের সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলেন না। গিলবার্ট পেলেন অণুজীব কিন্তু সেটা প্রাণের সৃষ্টি রহস্য সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল। যদি প্রাণ সৃষ্টি হয় আরএনএ অণুজীব দিয়ে তাহলে আরএনএ অবশ্যই নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারবে। আরএনএ’কে হতে হবে স্বয়ম্ভূ।

কিন্তু আরএনএ নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে না। ডিএনএ’র দ্বারাও একাজ সম্ভব নয়। আরএনএ বা ডিএনএ যাকিছুই বলি না কেন নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে হলে তাদের দরকার বিপুল পরিমাণ এনজাইম এবং অন্যান্য অণুজীব। ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে কিছু জীববিজ্ঞানী প্রাণ বিকাশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কিছু অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের সমাধান করতে গবেষণা শুরু করেন। তাদের মতবাদের সমর্থনে তারা নেমে পড়লেন নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এমন আরএনএ’র সন্ধানে।

জ্যাক সোসটাক
জ্যাক সোসটাক (কৃতজ্ঞতাঃ ডেটলেভ ভ্যান র‍্যাভেনসায়ে/ বিজ্ঞান চিত্রশালা)

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের জীনতত্ত্বের প্রফেসর জ্যাক ইউলিয়াম সোসটাক প্রাণের উৎস সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। শিশুকাল থেকেই তিনি রসায়নের প্রতি এত মুগ্ধ ছিলেন যে তার বাড়ির বেইজমেন্টে তার নিজস্ব একটা গবেষণাগার ছিল। তার নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লেও তিনি একবার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটান। ফলাফলে যা ঘটেছিল তা ছিল বিস্ময়কর। বিস্ফোরণের ফলে একটা গ্লাসের টিউব তীব্র-বেগে ছুটে গিয়ে ছাদের দেয়ালে গেঁথে গিয়েছিল।
১৯৮০ দশকের শুরুতে সোসটাক প্রমাণ করে দেখাতে সক্ষম হন কীভাবে জীন বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তার এই গবেষণার ফলাফল তার জন্য নোবেল পুরষ্কার এনে দিয়েছিল। তিনি দেখান আরএনএ এনজাইম কতটা শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু তিনি অতি দ্রুতই টমাস রবার্ট চেক’র আরএনএ এনজাইমের গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। সোসটাক বলেন, “আমি মনে করেছিলাম এনজাইম নিয়ে গবেষণা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। মোটের উপর সম্ভবত আরএনএ নিজেই নিজের প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে।”

১৯৮৮ সালে চেক এক বিশেষ ধরণের আরএনএ ইনজাইমের সন্ধান পেলেন যারা ক্ষুদ্র আরএনএ মলিকিউল বানাতে পারে এবং এই আরএনএ ১০ নিউক্লিওটাইডের সমান দীর্ঘ। সোসটাক গবেষণাগারে নতুন ধরণের আরএনএ ইনজাইম সৃষ্টি করে তার আবিষ্কারকে সমৃদ্ধ করতে গবেষণা শুরু করলেন। সোসটাকের গবেষকদল বিপুল পরিমাণ গবেষণার ফলাফল দৈব-চয়ন পদ্ধতিতে আবার পরীক্ষা করে দেখতে লাগলেন কোন ধরণের এনজাইম অনুঘটকের কাজ করে। সেই পরীক্ষাগুলো থেকে আবার পরীক্ষা করলেন। একই পদ্ধতিতে ১০ বার পরীক্ষার পর সোসটাক এমন এক আরএনএ এনজাইম সৃষ্টি করলেন যার বিক্রিয়ার অনুঘটক ক্ষমতা সাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের তুলনায় ৭০লক্ষ গুণ বেশি গতিশীল। তারা দেখালেন আরএনএ এনজাইম প্রকৃত অর্থেই প্রভূত শক্তিশালী কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদের আরেকটি অনুরূপ সৃষ্টি করতে পারে না। এমনকি অনুরূপ সৃষ্টির ধারে কাছেও যায় না। সোসটাক যেন অসম্ভবের দেয়ালে আঘাত করলেন।

প্রথম স্বয়ম্ভূর খোঁজে
মনে হয় না আরএনএ জীবনের যাত্রাপথের সূচনা করেছিল। (কৃতজ্ঞতা: বিজ্ঞান চিত্রশালা/আলামি)

তারপরে সবচেয়ে বড় সাফল্য এলো ২০০১ সালে অধ্যাপক সোসটাক’র সাবেক শিক্ষার্থী কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড বারটেল’র হাত ধরে। বারটেল আর১৮ নামে আরএনএ এনজাইম সৃষ্টি করলেন যা বিদ্যমান আরএনএ জালের সাথে নতুন নিউক্লিওটাইড যোগ করতে পারে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে এই সাফল্য শুধু আরএনএ’র সাথে যথেচ্ছ নিউক্লিওটাইড সংযুক্তিই নয় বরং পূর্বের পরীক্ষার ফলাফলের যথাযথ প্রতিফলন।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের যা কিছু অর্জন তার কিছুই নিজেই নিজের অবিকল কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু অগ্রগতি প্রায় উদ্দেশ্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। আর১৮ ১৮৯টি নিউক্লিওটাইড সুতোর জাল দিয়ে গঠিত এবং এটা নির্ভরযোগ্য-ভাবে আরও ১১টি নিউক্লিওটাইড আগের আরএনএ সুতোর জালের সাথে যুক্ত করতে পারে যা নিজের দৈর্ঘ্যের প্রায় ৬ শতাংশ। নতুন গবেষণা আশা জাগালো জালের কিছু সুতোর প্রান্ত ১৮৯টি নিউক্লিওটাইডের সমান দীর্ঘ। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেল প্রাণের সৃষ্টি আরএনএ থেকে সূত্রপাত হয়নি।

২০১১ সালে কেমব্রিজের মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগে গবেষণাগারে সবচেয়ে সফল পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন ফিলিপ হোলিগার। তার গবেষকদল আর১৮ আরএনএ’র উন্নতি সাধন করেন তার নাম দিলেন টিসি১৯জেড। এই নতুন আরএনএ যেটা নিজেদের ফলাফলের নিউক্লিওটাইড ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিলিপি করতে পারে। তাদের ৪৮ শতাংশ নিজেদের দৈর্ঘ্য যা আর১৮ আরএনএ থেকেও বড় কিন্তু ১০০ শতাংশ সেখানে অত্যাবশ্যকীয় নয়। ক্যালিফোর্নিয়াতে লা জোলা’তে অবস্থিত ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ইন্সটিটিউটে’ বিকল্প আর একটা গবেষণা তখন চলছিল জেরাল্ড ফ্রান্সিস জয়েস এবং ট্রেসি লিংকন’র নেতৃত্বে। ২০০৯ সালে তারা আর একধরণের এনজাইমের সন্ধান পেলেন যারা নিজেদের অগোচরেই নিজেদেরকে অবিকল প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। নতুন সৃষ্ট এনজাইম দুইটা ক্ষুদ্র আরএনএ’র সাথে যুক্ত হয়ে দ্বিতীয় আরেকটা এনজাইমের জন্ম দেয়। এই এনজাইম আর দুইটা আরএনএ’র সাথে যুক্ত হয়ে আবার নতুন এনজাইম সৃষ্টি করে। প্রয়োজনীয় উপাদান এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এনজাইম সৃষ্টির এই সরল চক্র অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতেই থাকে। কিন্তু এনজাইম শুধু তখনই সফলভাবে কাজ করতে পারে যখন তাদেরকে সঠিক আরএনএ সূত্র দেয়া হয়। ঠিক এই পরীক্ষাটাই জেরাল্ড ফ্রান্সিস জয়েস এবং ট্রেসি লিংকন গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করেন।

অনেক বিজ্ঞানী প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ থেকে এমন তত্ত্বে সম্বন্ধে সন্দিহান ছিলেন কারণ আরএনএ নিজেই নিজের আর একটা অবিকল প্রতিলিপি সৃষ্টি করতে পারে না এবং এটাই এই তত্ত্বের প্রধান দুর্বলতা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আরএনএ থেকে জীবনের সূচনা হয়নি। সম্ভবত নবগঠিত পৃথিবীতে অন্যকোন ধরণের জৈব-কণার উপস্থিতি ছিল সেখান থেকেই প্রাণের সৃষ্টি। প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ থেকে তত্ত্বটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে যখন রসায়নবিজ্ঞানগণ পারস্পারিক সম্পর্কহীন বিচ্ছিন্ন কোন বস্তু থেকে আরএনএ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়। ডিএনএ’র তুলনায় অণুজীবকে মনে হল অনেক সাধারণ কিন্তু আরএনএ সৃষ্টি করা ভীষণ কঠিন এবং শ্রমসাধ্য কাজ। সমস্যা দেখা দিলো কোষের শর্করা উৎপাদন করতে গিয়ে এবং যার উপর ভিত্তি করে নিউক্লিওটাইড সৃষ্টি হয় সেখানে বিস্তর ঝামেলা। কোষের এই দুইটা অপরিহার্য উপাদান আলাদা আলাদা উৎপাদন করা সম্ভব কিন্তু এই দুইটা উপাদানের মাঝে কোনভাবেই সংযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই সমস্যা ১৯৯০ দশকের শুরুতেই পরিষ্কার জানা গিয়েছিল সুতরাং অনেক বিজ্ঞানীই নাকসিটকিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরএনএ থেকে এই তত্ত্ব শুধুই নিরেট ধারণা মাত্র, বাস্তবের সাথে লেশমাত্র সম্পর্ক নাই। তত্ত্বটা মোটেও সঠিক নয়।

সম্ভবত নবগঠিত পৃথিবীতে অন্যকোন ধরণের জৈব-কণার উপস্থিতি ছিল যারা আরএনএ থেকে সরল এবং যারা পৃথিবীর আদিম জৈব-কণা ভর্তি ঘন তরল থেকে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে পারে এবং নিজেদের অবিকল প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে শুরু করে এবং আরএনএ, ডিএনএ এবং অন্যান্য উপাদান সৃষ্টির দিকে ধাবিত করে।

[ সম্ভবত ডিএনএ পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা করতে প্রথম সংগ্রাম শুরু করে। (কৃতজ্ঞতা: বিজ্ঞান চিত্রশালা/ আলামি) ]
[ সম্ভবত ডিএনএ পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা করতে প্রথম সংগ্রাম শুরু করে। (কৃতজ্ঞতা: বিজ্ঞান চিত্রশালা/ আলামি) ]

ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিটার নিলসেন ১৯৯১ সালে দাবী করলেন জীবনের সূচনা সেই আদিম পুকুরের ঘন তরল থেকে। যেখানে অণুজীব নিজের প্রতিলিপি নিজেই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এটা ছিল বিস্তর বিবর্তিত ডিএনএ। পিটার নিলসেন পূর্বের বিজ্ঞানীদের গবেষণার উপর ভিত্তি করেই এগিয়ে গেলেন নতুন উদ্যমে এবং স্থির থাকলেন ডিএনএ’র মধ্যে প্রাপ্ত এ, টি, সি এবং জি এনজাইমে। নিলসেন অণুজীব গবেষণার মূল ভিত্তি গড়ে দিলেন এবং ডিএনএ’র ভিতরে শর্করার পরিবর্তে পলিএমাইডস অ্যামাইনো এসিডের সন্ধান পেলেন। তিনি নতুন প্রাপ্ত অণুজীবের নাম দিলেন পলিএমাইডস নিউক্লিক এসিড সংক্ষেপে পিএনএ। যদিও বিভ্রান্তিকরভাবে আমরা এখনো পিএনএ’কে জানি পেপটাইড নিউক্লিক এসিড নামে। আরএনএ’র পিএনএ গঠন এত দুঃসাধ্য নয়, সম্ভবত পৃথিবীর আদিম অবস্থায় পিএনএ গঠিত হয়েছিল।

পিএনএ প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, একে সৃষ্টি করতে হয় এবং আচরণ অনেকাংশে ডিএনএ’র মত। পিএনএ’র সুতার মতো একটা প্রান্ত ডিএনএ’র একটা প্রান্ত দখল করে নিতে পারে। অণুজীবের এই মিলে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তদুপরি পিএনএ, ডিএনএ’র মত দুইটা প্রান্ত পেঁচিয়ে মইয়ের আকার ধারণ করতে পারে। স্ট্যানলি মিলার এখানেই আমাদেরকে মুগ্ধ করে এবং প্রাণ সৃষ্টির রহস্য জগতে কৌতূহলী করে তোলে। তিনি প্রাণের বিকাশ হয়ে আরএনএ থেকে এই তত্ত্বের ঘোরতর অবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন প্রথম প্রাণের উপাদান সৃষ্টিতে পিএনএ বরং অনেক বেশী বিশ্বাসযোগ্য এবং যুক্তিপূর্ণ দাবীদার।

২০০০ সালে স্ট্যানলি মিলার আরও শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করলেন। ইতিমধ্যে তিনি ৭০ বছরের অভিজ্ঞতায় পৌঁছে গেছেন। কিন্তু বিধি বাম, সেই সময়ে তিনি পরপর কয়েকটি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ফলে তাকে গবেষণা ছেড়ে নার্সিং হোমে চলে যেতে হয়। তার কাজ আর সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। মিলার তার সেই ক্লাসিকাল ‘স্ট্যানলি মিলার-হ্যারল্ড উরে পরীক্ষা’ পুনরায় করে দেখেন যে পরীক্ষার কথা আমরা ইতিমধ্যেই প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। এবারের পরীক্ষায় মিলার মিথেন, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া, পানির সাথে পিএনএ যুক্ত করে দিলেন।

A molecule of threose nucleic acid (TNA)
A molecule of threose nucleic acid (TNA) (Credit: Alfred Pasieka/Science Photo Library)

অন্যান্য রসায়নবিদগণ প্রাণ গবেষণায় এগিয়ে এলেন তাদের নিজস্ব বিকল্প নিউক্লিক এসিড এবং তাদের তত্ত্ব ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিয়ে। প্রতিটি বিকল্প নিউক্লিক এসিড ব্যবহারের পিছনে ভিন্ন ভিন্ন সমর্থক বিজ্ঞানীদলের বিশেষ করে যারা এই এসিডের উদ্ভাবন করেছেন তাদের পৃথক যুক্তি আছে। ২০০০ সালে আলবার্ট ইসেনমসার কৃত্রিম জেনেটিক পলিমার ‘থ্রেওস নিউক্লিক এসিড’ উদ্ভাবন করেন। থ্রেওস নিউক্লিক এসিড বা টিএনএ মূলত ডিএনএ কিন্তু এর রাইবোজোমে ভিন্ন ধরণের শর্করা আছে। টিএনএ রাইবোজোমের সুতোর প্রান্ত দুইটা দ্বিমুখী কুণ্ডলী বানাতে পারে এবং আরএনএ এবং টিএনএ’র মাঝে পূর্বাপর তথ্যের অবিকল প্রতিলিপি আদান প্রদান করতে পারে। এছাড়াও টিএনএ জটিলতর ভাজে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারে এবং প্রোটিন সংরক্ষণ করতে পারে। এথেকেই বোঝা যায় টিএনএ আরএনএ’র মতই এনজাইমের কাজ করতে পারে। একইভাবে ২০০৫ সালে এরিক মেগারস গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে গ্লাইকল নিউক্লিক এসিড উৎপাদন করলেন যেগুলো প্যাঁচানো কাঠামো তৈরি করতে পারে। এতক্ষণ যতগুলো নিউক্লিক এসিড নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের কোনটিই প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, সৃষ্টি হয়েছে গবেষণাগারে। সুতরাং যদি প্রথম প্রাণ এইসব নিউক্লিক এসিডের মধ্য থেকে কোন একটিকে ব্যবহার করে থাকে তাহলে বলতেই হবে এতদিনের চলমান বিতর্ক চলে যাবে আরএনএ এবং ডিএনএ’র পক্ষে অর্থাৎ প্রাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল আরএনএ এবং ডিএনএ দিয়ে। এই মতবাদ হয়ত সত্য, কিন্তু বিজ্ঞানীদের হাতে এই দাবীর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই।

আর এইসব কিছুর অর্থ দাঁড়ালো, ২০০০ শতকের মাঝামাঝি উপনীত হয়ে আরএনএ মতবাদের বিজ্ঞানীগণ প্রচণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন। আরএনএ মতবাদের বিজ্ঞানীগণের চিন্তা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ খুব যৌক্তিক এবং গোছানো পরিপাটি কিন্তু প্রাণের উৎস সম্পর্কে পুরোপুরি সত্যের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

A molecule of threose nucleic acid (TNA)
A molecule of threose nucleic acid (TNA) (Credit: Alfred Pasieka/Science Photo Library)

অন্যদিকে আরএনএ এনজাইম প্রকৃতিতেই বিদ্যমান ছিল এবং সুসংবাদ হলো সেই এনজাইমে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক উপাদান রাইবোজোমের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এমন কোন আরএনএ’র সন্ধান পাওয়া গেল না যে নিজেই নিজের অনুরূপ প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এবং কোন বিজ্ঞানীই প্রমাণ করতে পারলেন না যে আদিম ঘন তরল স্যুপ থেকে কীভাবে আরএনএ সৃষ্টি হয়েছিল। বিকল্প নিউক্লিক এসিড হয়ত পরবর্তী প্রশ্নের সমাধান দিতে সক্ষম কিন্তু হতাশার খবর এই যে, প্রাণের এইসব প্রাথমিক উপাদানগুলো প্রকৃতিতে আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল তার কোন নির্ভুল প্রমাণ বিজ্ঞানীগণের হাতে নেই। ঠিক সেই সময়ে ১৯৮০ দশক থেকে আরএনএ মদবাদের বিরোধী আর একটি মতবাদ ধীরেধীরে তাদের যুক্তির স্বপক্ষে প্রমাণ যোগার করতে ব্যস্ত ছিল। নতুন মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীগণ যুক্তি দেখাতে লাগলেন জীবন আরএনএ বা ডিএনএ বা অন্যকোন বংশগতির বস্তু থেকেও নয় বরং জীবন সৃষ্টি হয়েছিল শক্তির যান্ত্রিক কৌশল ত্বরান্বিত করে। কারণ জীবনকে বেঁচে থাকতে হলে দরকার শক্তি।

Life needs energy to stay alive (Credit: Equinox Graphics Ltd)
Life needs energy to stay alive (Credit: Equinox Graphics Ltd)

Posted at August 10, 2019 |  by Arya ঋষি
ওত্জির

1991, অষ্ট্রিয়া আর ইটালির সীমান্ত এলাকা আল্পস পর্বতে একদল পর্যটক খুঁজে পান ওত্জি কে। না জীবন্ত নয় তাঁর মৃতদেহ। বহুকাল আগেই ওত্জি মারা গেছেন এই বরফের দেশে। তিনি মারা গেছেন সাধারন পূর্বাব্দ ৩৩০০ নাগাদ। অর্থাৎ আজ থেকে ৫৩০০ বৎসর আগে থেকে বরফ চাপা ওত্জি শুয়ে আছেন ওখানে।
বরফের নীচে চাপা থাকাতে প্রাচীন মৃত দেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় ওত্জি কে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ বিখ্যাত মিশরের পিরামিডের মমিগুলোর চেয়ে বহু বহু গুন ভাল অবস্থায়।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ৫০ কেজি ওজনের ২৫-৩৫ বৎসর বয়স্ক ওত্জির নামাকরন হল যেখানে তাঁকে পাওয়া গেছে সেই এলাকার Ötztal Alps, নামের সাথে তাল মিলিয়ে।
কেমন করে মারা গেছেন তা জানা গেছে। তাঁর মাথার পেছন দিকে কেউ খুব জোরে মেরেছিল। আর তার সাথে তার পেছন থেকে একটি পাথরের তীরের ফলা তাঁর পাঁজর ভেদ করে। তাতেই তিনি মারা যান।
তিনি কি যোদ্ধা ছিলেন, না এটা সাধারন খুনোখুনি সেটা বলা কঠিন। তবে মরার আগে তিনি চারজনকে আহত করেছেন। তাঁর হাতের অস্ত্রে চারজন আলাদা আলাদা মানুষের রক্তের অস্তিত্ব জানা গেছে।
পাহাড়ের বাসিন্দা ছিলেন না, তবু কেন তিনি ঐ তিন হাজার ফুট উঁচুতে এসেছিলেন তা জানা সম্ভব না। ছিলেন সমতল এলাকার বাসিন্দা। তবে ৩৫ বৎসর বয়সি ওত্জি দীর্ঘকাল কায়িক পরিশ্রমের দরুণই হয়তো বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুড়োটে ছিলেন। তাঁর হাড়ের ক্ষয় দেখে সেটা সহজেই বলা যায়।
তিনি পাহাড়ের লোক ছিলেন না তা জানা গেল তাঁর পেটে খাবারের কনা থেকে। সেই খাবারের শষ্য উৎপন্ন হয় সমতলেই। মারা যাবার পাঁচ ঘন্টা আগে তিনি হরিনের মাংস আর রুটি খেয়েছেন। ও হ্যাঁ তাঁর পেটের সমস্যা ছিল। পেটে কৃমি ছিল। বেশ বড় কৃমি।
খাবার খেয়ে বেশ প্রস্তুত হয়েই পাহাড়ের পথে রওনা দেন। কারন তাঁর পরনে ছিল অন্তর্বাস হিসাবে ভেড়ার চামড়া। সে ভেড়া আবার অন্য এলাকার। কাজেই এটা তাঁর কেনা পোষাকই ছিল বোঝা যায়। চামড়ার উপরে ছিল ঘাষের তৈরী পোষাকের আস্তরন। পায়ে জুতো। দড়ি দিয়ে বোনা জুতোর সামনের দিকে চামড়া ছিল। আর পায়ের তলার দিকে প্যাডিং-এর জন্য ছিল ঘাস। হাতে ছিল কাঠের হাতল সহ তামার কুড়াল, পাথরের ফলা সহ তীর ধনুক।
ওত্জির দেহের ডি.এন.এ পরীক্ষা করে ইতালীর সার্ডিনিয়া অঞ্চলে তাঁর বহু বংশধরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সেই মৃতদেহ সযত্নে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন। শুরু হয় নানা গবেষনা। সাধারন ব্যাপার তো নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটি দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অমুল্য সম্পদ।
যেহেতু তার জিন ম্যাপিং করা হয়ে গেছে তাই তার চেহারা কম্প্যুটারে তৈরী করতে বিজ্ঞানীদের খুব একটা কষ্ট হয় নি।
ওতজি কে পাওয়ার পঁচিশ বৎসর উপলক্ষে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা জানতে চান ওতজির কন্ঠস্বর কেমন ছিল।
তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে হলে তার স্বরনালী নতুন করে তৈরী করতেই হবে। কিন্তু সে জন্য দরকার ওতজির স্বরনালীর গঠন নিখুঁত ভাবে জানা। তা সেটা তো এক্স-রে করে বা সি.টি স্ক্যান করে করা যেতেই পারে। কিন্তু না ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কারন ওতজির একটা হাত তার গলার উপর ছিল। সেই হাতের জন্য কিছুতেই ঠিকঠাক ভাবে গলার ভেতরের স্বরনালীর সঠিক চেহারা ধরা যাচ্ছিল না।
অবশেষে অত্যাধুনিক ষন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে।
একবার তার স্বরনালীর গঠন জানা হয়ে গেলে বাকী কাজ তো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সহজ।
তাঁরা কৃত্রিম স্বরনালী বানিয়ে ফেললেন। সফট ওয়্যার তৈরী হয়ে গেল। এখন আমরা ওত্জির গলার স্বর শুনতে পারি।
যেহেতু আমরা কেউ জানি না ওতজি কি ভাষায় কথা বলতেন, তাই বিজ্ঞানীরা ওতজির গলায় আমাদের শোনালেন শুধু AEIOU  পাঁচ হাজার তিনশ বৎসর আগে মৃত ওতজি এখন আমাদের শোনাচ্ছেন AEIOU
সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য ইউটিউবের লিঙ্ক দেওয়া হল।
তথ্যসুত্রঃ-
Encyclopedia Britannica
https://www.youtube.com/watch?v=_FUH4xpYUMs

Ötzi
Reconstruction of Ötzi based on forensic analysis of the mummy; in the South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano, Italy.

ওত্জির

ওত্জির

1991, অষ্ট্রিয়া আর ইটালির সীমান্ত এলাকা আল্পস পর্বতে একদল পর্যটক খুঁজে পান ওত্জি কে। না জীবন্ত নয় তাঁর মৃতদেহ। বহুকাল আগেই ওত্জি মারা গেছেন এই বরফের দেশে। তিনি মারা গেছেন সাধারন পূর্বাব্দ ৩৩০০ নাগাদ। অর্থাৎ আজ থেকে ৫৩০০ বৎসর আগে থেকে বরফ চাপা ওত্জি শুয়ে আছেন ওখানে।
বরফের নীচে চাপা থাকাতে প্রাচীন মৃত দেহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় ওত্জি কে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ বিখ্যাত মিশরের পিরামিডের মমিগুলোর চেয়ে বহু বহু গুন ভাল অবস্থায়।
৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ৫০ কেজি ওজনের ২৫-৩৫ বৎসর বয়স্ক ওত্জির নামাকরন হল যেখানে তাঁকে পাওয়া গেছে সেই এলাকার Ötztal Alps, নামের সাথে তাল মিলিয়ে।
কেমন করে মারা গেছেন তা জানা গেছে। তাঁর মাথার পেছন দিকে কেউ খুব জোরে মেরেছিল। আর তার সাথে তার পেছন থেকে একটি পাথরের তীরের ফলা তাঁর পাঁজর ভেদ করে। তাতেই তিনি মারা যান।
তিনি কি যোদ্ধা ছিলেন, না এটা সাধারন খুনোখুনি সেটা বলা কঠিন। তবে মরার আগে তিনি চারজনকে আহত করেছেন। তাঁর হাতের অস্ত্রে চারজন আলাদা আলাদা মানুষের রক্তের অস্তিত্ব জানা গেছে।
পাহাড়ের বাসিন্দা ছিলেন না, তবু কেন তিনি ঐ তিন হাজার ফুট উঁচুতে এসেছিলেন তা জানা সম্ভব না। ছিলেন সমতল এলাকার বাসিন্দা। তবে ৩৫ বৎসর বয়সি ওত্জি দীর্ঘকাল কায়িক পরিশ্রমের দরুণই হয়তো বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুড়োটে ছিলেন। তাঁর হাড়ের ক্ষয় দেখে সেটা সহজেই বলা যায়।
তিনি পাহাড়ের লোক ছিলেন না তা জানা গেল তাঁর পেটে খাবারের কনা থেকে। সেই খাবারের শষ্য উৎপন্ন হয় সমতলেই। মারা যাবার পাঁচ ঘন্টা আগে তিনি হরিনের মাংস আর রুটি খেয়েছেন। ও হ্যাঁ তাঁর পেটের সমস্যা ছিল। পেটে কৃমি ছিল। বেশ বড় কৃমি।
খাবার খেয়ে বেশ প্রস্তুত হয়েই পাহাড়ের পথে রওনা দেন। কারন তাঁর পরনে ছিল অন্তর্বাস হিসাবে ভেড়ার চামড়া। সে ভেড়া আবার অন্য এলাকার। কাজেই এটা তাঁর কেনা পোষাকই ছিল বোঝা যায়। চামড়ার উপরে ছিল ঘাষের তৈরী পোষাকের আস্তরন। পায়ে জুতো। দড়ি দিয়ে বোনা জুতোর সামনের দিকে চামড়া ছিল। আর পায়ের তলার দিকে প্যাডিং-এর জন্য ছিল ঘাস। হাতে ছিল কাঠের হাতল সহ তামার কুড়াল, পাথরের ফলা সহ তীর ধনুক।
ওত্জির দেহের ডি.এন.এ পরীক্ষা করে ইতালীর সার্ডিনিয়া অঞ্চলে তাঁর বহু বংশধরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সেই মৃতদেহ সযত্নে বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন। শুরু হয় নানা গবেষনা। সাধারন ব্যাপার তো নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার একটি দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায়। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অমুল্য সম্পদ।
যেহেতু তার জিন ম্যাপিং করা হয়ে গেছে তাই তার চেহারা কম্প্যুটারে তৈরী করতে বিজ্ঞানীদের খুব একটা কষ্ট হয় নি।
ওতজি কে পাওয়ার পঁচিশ বৎসর উপলক্ষে বিজ্ঞানীরা একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা জানতে চান ওতজির কন্ঠস্বর কেমন ছিল।
তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে হলে তার স্বরনালী নতুন করে তৈরী করতেই হবে। কিন্তু সে জন্য দরকার ওতজির স্বরনালীর গঠন নিখুঁত ভাবে জানা। তা সেটা তো এক্স-রে করে বা সি.টি স্ক্যান করে করা যেতেই পারে। কিন্তু না ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কারন ওতজির একটা হাত তার গলার উপর ছিল। সেই হাতের জন্য কিছুতেই ঠিকঠাক ভাবে গলার ভেতরের স্বরনালীর সঠিক চেহারা ধরা যাচ্ছিল না।
অবশেষে অত্যাধুনিক ষন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে।
একবার তার স্বরনালীর গঠন জানা হয়ে গেলে বাকী কাজ তো বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সহজ।
তাঁরা কৃত্রিম স্বরনালী বানিয়ে ফেললেন। সফট ওয়্যার তৈরী হয়ে গেল। এখন আমরা ওত্জির গলার স্বর শুনতে পারি।
যেহেতু আমরা কেউ জানি না ওতজি কি ভাষায় কথা বলতেন, তাই বিজ্ঞানীরা ওতজির গলায় আমাদের শোনালেন শুধু AEIOU  পাঁচ হাজার তিনশ বৎসর আগে মৃত ওতজি এখন আমাদের শোনাচ্ছেন AEIOU
সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য ইউটিউবের লিঙ্ক দেওয়া হল।
তথ্যসুত্রঃ-
Encyclopedia Britannica
https://www.youtube.com/watch?v=_FUH4xpYUMs

Ötzi
Reconstruction of Ötzi based on forensic analysis of the mummy; in the South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano, Italy.

Posted at June 07, 2019 |  by Arya ঋষি

প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন তাই তিনি আয়েশা (রা)কে শিশু অবস্থায় বিয়ে করে ? ৬ বছরের বিয়ে অমানবিক ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ "নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন " - এই দাবির পক্ষে বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে সনদ সহ পারলে প্রমান করুন তৎকালীন ইতিহাস থেকে । শিশুকামি বা পিডোফিলিয়া হল মানসিক রোগ , তথা যারা শিশুদের প্রতি যৌন তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে বুঝায় । প্রশ্নকর্তাকে প্রমান করতে বলেছি যে "নবী মুহাম্মদ (সা) আয়েশা (রা) প্রতি যৌন আসক্তি ভুগছিল" তৎকালীন বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে প্রমান করুন ? এখন আমরা বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে জানতে পারি রাসুল (সা) আয়েশা(রা) কে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের সুখের সংসার ছিল সুতরাং এর থেকে প্রমান হয় যে রাসুলের প্রতি প্রশ্ন কর্তার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার ।

রাসুল (সা) নাকি অল্প বয়সে বিয়ে করে অমানবিক কাজ করেছেন - নাস্তিক ধর্মের একটি কমন ফতোয়া হল "সম্মতি থাকলে" সব ! করা যাবে এখানে কেউই ফ্যাক্ট না ! এখানে তাদের আপত্তি নাই অথচ যত চুলকানি পবিত্র বিয়ে নিয়ে । নিজের পরিবার সন্তানের কল্যাণ চেয়ে, কোন ভাল খাটি চরিত্রবান পুরুষের কাছে বিয়ে দিলে এখানে আপত্তি আসার কোন সম্পর্ক নাই যদি সেই সংসার, সুখের হয় ।

দুনিয়ার কোন দেশেই মেয়েদের বিয়ের বয়স পারফেক্ট নির্ধারণ করে দেয়া হয় নাই । একেক দেশে একেক রকম বিয়ের বয়স ।
* যেমনঃ parental kidnapping in america: an historical and cultural analysis- by maureen dabbagh, page 128 এ উল্লেখ আছেঃ

উনবিনশ শতাব্দীতে বেশিরভাগ অ্যামেরিকান রাজ্যে বিয়ের বয়সের সর্ব নিন্ম বয়স ছিল ১০ বছর এবং ডেলাওয়ারে বিয়ের বয়স ছিল মেয়েদের ৭ বছর ।

* নিউইয়র্কে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত বিয়ের বয়স ছিল ১০ বছর । ১৮৮৫ সালের পর থেকে দেশের আইন "সম্মতি আইন" পরিবর্তন হয় ১৮৮৯ সালে । Newyork এ ১৬ বছর এবং ১৮৯৫ সালে হয় ১৮ বয়স । এই পরিবর্তনের আগে সম্মতির বয়স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ স্থানে ১০ বা ১২ বছর ছিল বিয়ের বয়স ।

রেফারেন্স দেখুনঃ prostitution and sex work - by melissa hope ditmore, page: 21 {introduction}
অ্যামেরিকার সংবিধান তৈরিতে যেসব বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে তার মদ্ধে Spirit of laws বইটি অন্যতম । এই বইয়ের ১৬ খণ্ডে ২৬৪ পৃষ্ঠায় ফ্রেঞ্চ দার্শনিক Montesquew উল্লেখ করেন উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েরা ৮,৯,১০ বছর বয়সেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় আর ২০ বছর বয়সে তাদের বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয় ।

আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানো তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসার যখন ৮ বছর হয় তখন বিয়ে করেন । শেখ ফজিলাতুন্নেসার জন্ম ১৯৩০ সালে আর তার বিয়ে ১৯৩৮ সালে । দেখুনঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী, by মুজিবুর রহমান ।

আম্মাজান আয়েশা (রা) নিজেই (তৎকালীন আরবের) মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ তথা উল্লেখ করে দিয়েছিলেন । তিনি বলেন মেয়ে যখন ৯ বছরে উপনীত হয়ে যায় তখন সে মহিলা হয়ে যায় । (তিরমিজি, কিতাবুন নিকাহ) । তাই সে সময়কার আরব মেয়েদের জন্য যে ৯ বছরে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ছিল তার প্রমান স্বয়ং আয়েশা (রা) নিজেই । অল্প বয়সে বিয়ে তখন খুবি নরমাল ব্যাপার ছিল ।

অল্প বয়সে বিয়ে কোন ভাবেই অমানবিক না ।
* হযরত আয়েশা (রা) এর সম্মতিঃ

+ ই,ফা। বুখারি ৮ নং খণ্ড, হাদিস নং: ৪৭০৭- আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন দুবার করে আমাকে সপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে । এক লোক রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল । আমাকে দেখে বলল এ হল তোমার স্ত্রী । তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমিই । তখন আয়েশা (রা) বলেন এ সপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তবে তিনি তা বাস্তবে পরিনত করবেন ।

+ হাকিম, সিলসিলা আহাদিস সহিফা লি আলবানি, হাদিস নং ১১৪২ এবং পিস পাবলিকেশন এর রাসুল (সা) এর স্ত্রীগন কেমন ছিলেন, পৃষ্ঠাঃ ৩৬ । হাদিস সহিহ । আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন হে আয়েশা তুমি কি এতে খুশি নও যে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে ? আয়েশা (রা) বলেন কেন নয় ? তখন রাসুল সা বললেন তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী ।

উদাহরনঃ ধরেন কোন এক বিদ্বেষীরা এক দম্পতির সুখের সংসার নিয়ে আদালতে মামলা করল যে এই মেয়েকে তার স্বামী অল্প বয়সে বিয়ে করেছে এবং মেয়ের পরিবার রাজি ছিল এতে আমাদের সমস্যা ! তো বিচারপতি এই অল্প বয়স্কা মেয়েকে কোর্টে জিজ্ঞাসা করল , তোমার পরিবার তোমাকে ৬ বছরে বিয়ে দিয়েছিল তোমার কি আপত্তি আছে ? তুমি কি তোমার স্বামীর সাথে অসুখী ? মেয়ে জবাব দিলঃ জজসাহেব আমার স্বামী হলেন সত্যবাদি এবং সব থেকে খাটি চরিত্রবান মানুষ তাই আমার এই বিয়ে নিয়ে কোন আপত্তি নাই বিন্দুমাত্র এবং আমার স্বামীর সাথে আমি অনেক আনন্দেই আছি আলহামদুলিল্লাহ । আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দিয়ে ভাল কাজ করেছেন । বিচারপতি রায় দিলেনঃ তুমি তোমার সংসার নিয়ে অনেক সুখেই আছ তাই এখানে অন্যদের আপত্তি গ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক । আশা করি বুঝতে পারছেন ।

আরও মজার বিষয় হচ্ছে নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়েও কোন আপত্তিকর কিছুই নয় । কেন জানেন ? কারন নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডেও আসলে এটি কোন অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না কারন নাস্তিক ধর্মের দেবদ্যূত ড হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ । আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে,এটুকু । নাস্তিক ধর্মের এই ফতোয়ার আলোকে কি প্রমান হয়েছে যে নবী (সা) জোর করে আয়েশা (রা) কে বিয়ে করেছেন ? উত্তর হচ্ছে না । এই বিয়ের ফলে কি কেউ বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং যেহেতু এই বিয়ের ফলে কেউই কোন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি তাই নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডে এই বিয়ে আসলে কোন আপত্তিকর অথবা অভিযোগ হিসেবে গণ্য করার কিছুই নেই এবং নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়ে সম্পূর্ণ জায়েজ প্রমাণিত ।   

প্রশ্নঃ 

* আয়েশা (রা) কি এই বিয়েতে অখুশি ছিলেন ?

* তিনি কি তাঁর স্বামীকে ভালবাসতেন না ?

* অল্প বয়সে বিয়ে করার দরুন তাঁর কি বিন্দুমাত্র কোন ক্ষতি হয়েছে ?

* ফলাফল কি ভাল নাকি খারাপ হয়েছিল এই বিয়েতে ?

* কেউ যদি তাঁর সংসার এবং স্বামী নিয়ে খুশি এবং সুখি হয় এতে আপনার কি অধিকার আছে এখানে আপত্তি করার ?

নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন ইসলামিক বিশ্লেষণঃ


প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন তাই তিনি আয়েশা (রা)কে শিশু অবস্থায় বিয়ে করে ? ৬ বছরের বিয়ে অমানবিক ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ "নবী মুহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন " - এই দাবির পক্ষে বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে সনদ সহ পারলে প্রমান করুন তৎকালীন ইতিহাস থেকে । শিশুকামি বা পিডোফিলিয়া হল মানসিক রোগ , তথা যারা শিশুদের প্রতি যৌন তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে বুঝায় । প্রশ্নকর্তাকে প্রমান করতে বলেছি যে "নবী মুহাম্মদ (সা) আয়েশা (রা) প্রতি যৌন আসক্তি ভুগছিল" তৎকালীন বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে প্রমান করুন ? এখন আমরা বিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে জানতে পারি রাসুল (সা) আয়েশা(রা) কে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের সুখের সংসার ছিল সুতরাং এর থেকে প্রমান হয় যে রাসুলের প্রতি প্রশ্ন কর্তার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার ।

রাসুল (সা) নাকি অল্প বয়সে বিয়ে করে অমানবিক কাজ করেছেন - নাস্তিক ধর্মের একটি কমন ফতোয়া হল "সম্মতি থাকলে" সব ! করা যাবে এখানে কেউই ফ্যাক্ট না ! এখানে তাদের আপত্তি নাই অথচ যত চুলকানি পবিত্র বিয়ে নিয়ে । নিজের পরিবার সন্তানের কল্যাণ চেয়ে, কোন ভাল খাটি চরিত্রবান পুরুষের কাছে বিয়ে দিলে এখানে আপত্তি আসার কোন সম্পর্ক নাই যদি সেই সংসার, সুখের হয় ।

দুনিয়ার কোন দেশেই মেয়েদের বিয়ের বয়স পারফেক্ট নির্ধারণ করে দেয়া হয় নাই । একেক দেশে একেক রকম বিয়ের বয়স ।
* যেমনঃ parental kidnapping in america: an historical and cultural analysis- by maureen dabbagh, page 128 এ উল্লেখ আছেঃ

উনবিনশ শতাব্দীতে বেশিরভাগ অ্যামেরিকান রাজ্যে বিয়ের বয়সের সর্ব নিন্ম বয়স ছিল ১০ বছর এবং ডেলাওয়ারে বিয়ের বয়স ছিল মেয়েদের ৭ বছর ।

* নিউইয়র্কে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত বিয়ের বয়স ছিল ১০ বছর । ১৮৮৫ সালের পর থেকে দেশের আইন "সম্মতি আইন" পরিবর্তন হয় ১৮৮৯ সালে । Newyork এ ১৬ বছর এবং ১৮৯৫ সালে হয় ১৮ বয়স । এই পরিবর্তনের আগে সম্মতির বয়স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ স্থানে ১০ বা ১২ বছর ছিল বিয়ের বয়স ।

রেফারেন্স দেখুনঃ prostitution and sex work - by melissa hope ditmore, page: 21 {introduction}
অ্যামেরিকার সংবিধান তৈরিতে যেসব বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে তার মদ্ধে Spirit of laws বইটি অন্যতম । এই বইয়ের ১৬ খণ্ডে ২৬৪ পৃষ্ঠায় ফ্রেঞ্চ দার্শনিক Montesquew উল্লেখ করেন উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েরা ৮,৯,১০ বছর বয়সেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় আর ২০ বছর বয়সে তাদের বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয় ।

আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানো তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসার যখন ৮ বছর হয় তখন বিয়ে করেন । শেখ ফজিলাতুন্নেসার জন্ম ১৯৩০ সালে আর তার বিয়ে ১৯৩৮ সালে । দেখুনঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী, by মুজিবুর রহমান ।

আম্মাজান আয়েশা (রা) নিজেই (তৎকালীন আরবের) মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ তথা উল্লেখ করে দিয়েছিলেন । তিনি বলেন মেয়ে যখন ৯ বছরে উপনীত হয়ে যায় তখন সে মহিলা হয়ে যায় । (তিরমিজি, কিতাবুন নিকাহ) । তাই সে সময়কার আরব মেয়েদের জন্য যে ৯ বছরে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ছিল তার প্রমান স্বয়ং আয়েশা (রা) নিজেই । অল্প বয়সে বিয়ে তখন খুবি নরমাল ব্যাপার ছিল ।

অল্প বয়সে বিয়ে কোন ভাবেই অমানবিক না ।
* হযরত আয়েশা (রা) এর সম্মতিঃ

+ ই,ফা। বুখারি ৮ নং খণ্ড, হাদিস নং: ৪৭০৭- আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন দুবার করে আমাকে সপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে । এক লোক রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল । আমাকে দেখে বলল এ হল তোমার স্ত্রী । তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমিই । তখন আয়েশা (রা) বলেন এ সপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তবে তিনি তা বাস্তবে পরিনত করবেন ।

+ হাকিম, সিলসিলা আহাদিস সহিফা লি আলবানি, হাদিস নং ১১৪২ এবং পিস পাবলিকেশন এর রাসুল (সা) এর স্ত্রীগন কেমন ছিলেন, পৃষ্ঠাঃ ৩৬ । হাদিস সহিহ । আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন হে আয়েশা তুমি কি এতে খুশি নও যে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে ? আয়েশা (রা) বলেন কেন নয় ? তখন রাসুল সা বললেন তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী ।

উদাহরনঃ ধরেন কোন এক বিদ্বেষীরা এক দম্পতির সুখের সংসার নিয়ে আদালতে মামলা করল যে এই মেয়েকে তার স্বামী অল্প বয়সে বিয়ে করেছে এবং মেয়ের পরিবার রাজি ছিল এতে আমাদের সমস্যা ! তো বিচারপতি এই অল্প বয়স্কা মেয়েকে কোর্টে জিজ্ঞাসা করল , তোমার পরিবার তোমাকে ৬ বছরে বিয়ে দিয়েছিল তোমার কি আপত্তি আছে ? তুমি কি তোমার স্বামীর সাথে অসুখী ? মেয়ে জবাব দিলঃ জজসাহেব আমার স্বামী হলেন সত্যবাদি এবং সব থেকে খাটি চরিত্রবান মানুষ তাই আমার এই বিয়ে নিয়ে কোন আপত্তি নাই বিন্দুমাত্র এবং আমার স্বামীর সাথে আমি অনেক আনন্দেই আছি আলহামদুলিল্লাহ । আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দিয়ে ভাল কাজ করেছেন । বিচারপতি রায় দিলেনঃ তুমি তোমার সংসার নিয়ে অনেক সুখেই আছ তাই এখানে অন্যদের আপত্তি গ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক । আশা করি বুঝতে পারছেন ।

আরও মজার বিষয় হচ্ছে নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়েও কোন আপত্তিকর কিছুই নয় । কেন জানেন ? কারন নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডেও আসলে এটি কোন অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না কারন নাস্তিক ধর্মের দেবদ্যূত ড হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ । আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে,এটুকু । নাস্তিক ধর্মের এই ফতোয়ার আলোকে কি প্রমান হয়েছে যে নবী (সা) জোর করে আয়েশা (রা) কে বিয়ে করেছেন ? উত্তর হচ্ছে না । এই বিয়ের ফলে কি কেউ বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং যেহেতু এই বিয়ের ফলে কেউই কোন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি তাই নাস্তিক ধর্মের নৈতিকতার মানদণ্ডে এই বিয়ে আসলে কোন আপত্তিকর অথবা অভিযোগ হিসেবে গণ্য করার কিছুই নেই এবং নাস্তিক ধর্মের আলোকেও এই বিয়ে সম্পূর্ণ জায়েজ প্রমাণিত ।   

প্রশ্নঃ 

* আয়েশা (রা) কি এই বিয়েতে অখুশি ছিলেন ?

* তিনি কি তাঁর স্বামীকে ভালবাসতেন না ?

* অল্প বয়সে বিয়ে করার দরুন তাঁর কি বিন্দুমাত্র কোন ক্ষতি হয়েছে ?

* ফলাফল কি ভাল নাকি খারাপ হয়েছিল এই বিয়েতে ?

* কেউ যদি তাঁর সংসার এবং স্বামী নিয়ে খুশি এবং সুখি হয় এতে আপনার কি অধিকার আছে এখানে আপত্তি করার ?

Posted at June 04, 2019 |  by Arya ঋষি

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top