All Stories
 মেদ-স্থূলতা (Fatness, Corpulence | Med-Sthulota):


চর্বি হচ্ছে সঞ্চিত খাদ্য। চর্বি বা মেদ আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যক, তবে তা পরিমিত মাত্রায়। চর্বি না থাকলে দেহের লাবণ্য, নমনীয়তা, নড়াচড়া, সাবলীল চলাফেরা এবং প্রয়োজনীয় উষ্ণতা ধরে রাখা কিছুতেই সম্ভব হতো না। দেহের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ চর্বি চামড়ার নিচে থেকে এই কাজগুলো করে যায়। বাকি চর্বিগুলো অস্থি-সন্ধি ও মাংশপেশীর সাথে মিশে থাকে। যখনি ক্ষুধার্ত হই আমরা, কোন কারণে খাদ্যগ্রহণে অসমর্থ হলে আমাদের এই সঞ্চিত চর্বি ক্ষয় হয়ে দেহযন্ত্রগুলোকে চালু রাখতে শক্তি সরবরাহ করে দেহের ক্ষতিপূরণ করে থাকে। এজন্যেই আমাদের দেহযন্ত্রগুলো সচল রাখতে কিছু চর্বি সঞ্চিত থাকা প্রয়োজন।

কিন্তু দেহে সঞ্চিত চর্বি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে এবং এই চর্বির সাথে যদি মাংসও বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে তা দেহের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেদবহুল দেহীদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রায়ই এরা উচ্চ-রক্তচাপ তথা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্রসহ নানান রোগের শিকারে পরিণত হয়।

রোগের লক্ষণ:
স্থূলতা বৃদ্ধির প্রাথমিক লক্ষণই হচ্ছে নির্ধারিত মাত্রাসীমার চেয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া। এই ওজন যতই বাড়বে, তা কমানো ততই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই শারীরিক উচ্চতা ও দেহের গড়ন অনুযায়ী মানসম্মত হারের মধ্যেই ওজন সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। এর চেয়ে ওজন ১০% বৃদ্ধি পেলেই তাকে মেদবৃদ্ধি বা স্থূলতা রোগ হিসেবে চিহ্ণিত করা যেতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে ওজনের এই মানসম্মত হার হবে এরকম-

-উচ্চতা = —-ওজন (পুরুষ)- ————-=ওজন (স্ত্রী)
৬০ ইঞ্চি = পুরুষ [৫০ থেকে ৫৬ কেজি]- – স্ত্রী [৪৫ থেকে ৫২ কেজি]
৬৩ ইঞ্চি = পুরুষ [৫৩ থেকে ৫৯ কেজি]- – স্ত্রী [৪৯ থেকে ৫৬ কেজি]
৬৫ ইঞ্চি = পুরুষ [৫৭ থেকে ৬৩ কেজি]- – স্ত্রী [৫২ থেকে ৫৯ কেজি]
৬৮ ইঞ্চি = পুরুষ [৬৩ থেকে ৬৯ কেজি]- – স্ত্রী [৫৯ থেকে ৬৫ কেজি]
৭০ ইঞ্চি = পুরুষ [৬৬ থেকে ৭৩ কেজি]- – স্ত্রী [৬২ থেকে ৬৯ কেজি]

এখানে ওজন দেখানোর ক্ষেত্রে প্রথমটি ছোট গড়নের এবং দ্বিতীয়টি বড় গড়নের পুরুষ ও স্ত্রীর মানসম্মত ওজন দেখানো হয়েছে। মাঝারি গড়নের পুরুষ বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে দুটোর মাঝামাঝি ওজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন ৬০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট পুরুষের দেহের মানসম্মত ওজন হবে ছোট গড়নের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি, এবং বড় গড়নের ক্ষেত্রে ৫৬ কেজি। অতএব মাঝারি গড়নের ক্ষেত্রে ওজন হবে ৫৩ কেজি।

রোগের কারণ:
দেহে নানা কারণে চর্বি জমতে পারে। তবে স্থূল বা মোটা হওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি কারণকে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (১) বংশধারা, (২) পরিপাকযন্ত্র ও গ্রন্থিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বা সঠিকভাবে কাজ না করা এবং (৩) স্বাস্থ্য রক্ষায় সাধারণ নিয়ম না মানা।

পিতৃ ও মাতৃ-কুলে স্থূলত্বের ধারা বজায় থাকলে কারো কারো ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে এই ধারা বাহিত হতে পারে। তবে তা সংখ্যায় কম এবং স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম-বিধি কঠোরভাবে পালন করলে তা পরিমিত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব।

দ্বিতীয়ত আমাদের দেহস্থিত প্রধান গ্রন্থিগুলো যেমন পিটুইটারী গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ না করলে বা নিষ্ক্রিয় হলে স্থূলতা দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হতে যে বিশেষ হরমোন নিসৃত হয় তা অল্পমাত্রায় ক্ষরিত হলে মানুষ স্থূল হতে থাকে এবং অধিকমাত্রার ক্ষরণে কৃশ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় হরমোন পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া গেলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় সুনির্দিষ্ট ঔষধ সেবনের মাধ্যমে এই তারতম্যের নিরসন ঘটিয়ে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা আজকাল অসম্ভব কিছু নয়।

বর্তমানে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই মেদবহুল স্থূল হবার প্রধান কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধির সাধারণ নিয়ম মেনে না চলা। কায়িক শ্রম-বিমুখতা, অতিভোজন, অধিক পরিমাণে আমিষ ও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ, ন্যূনতম ব্যায়ামের অভাব ইত্যাদি কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। স্থূলদেহী বা মেদরোগীরা প্রায়ক্ষেত্রেই ভোজনবিলাসী হয়ে থাকে। আর এই ভোজনবিলাসের কারণে বাছ-বিচারহীন এসব চর্বিজাত, অতিরিক্ত স্নেহ ও শর্করাজাতীয় খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ফাস্টফুডের দিকে আকর্ষণ বাড়তে থাকা এবং সে তুলনায় কায়িক পরিশ্রম না থাকায় রোগটিও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

রোগ নিরাময়:
নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাসের সাথে সাথে মেদ রোগীদের আহারে-বিহারে খুবই সংযমী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। খাওয়া-দাওয়ায় সংযমী হলেই সাধারণতঃ স্থূলতা জয় করা যায়। সকালে অল্প পরিমাণে চিড়া, মুড়ি, খই বা সেঁকা রুটিজাতীয় যেকোন ধরনের খাবার এবং সেই সাথে চিনি ছাড়া এক কাপ পাতলা দুধ এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে ভাত, ডাল, শাকসবজি, তরকারি, মাছ প্রভৃতি এবং শেষ পাতে টক খাওয়া যেতে পারে। খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে হবে। তরকারি ও শাকসবজির পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত। তবে চর্বি বা অধিক মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কাঁচা ঘি, মাখন বা এই জাতীয় কোন খাবার কিছুতেই খাওয়া উচিত হবে না। একান্তই ক্ষুধা পেলে বিকেলে খুব হালকা সহজ নাস্তা খাওয়া যেতে পারে। রাতে দু-একটা আটার রুটি ডাল বা সবজিসহ খাওয়া যেতে পারে। তবে তা বেশি রাত করে নয়।

নিয়মমাফিক উপবাস শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সপ্তাহে এক বেলা কিংবা পনের দিনে একদিন সম্পূর্ণ উপবাস স্থূলতা কমাতে খুব সহায়তা করে থাকে। উপবাসের সময় লেবুর রস মিশিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।

এইসব খাদ্যাভ্যাস পালনের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে লেবুর রস মিশিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে প্রথমে কিছু খালি হাতে ব্যায়াম ও সূর্য-নমস্কার ব্যায়াম করে ২/৩ মিনিট শবাসন করতে হবে। এরপর পবন-মুক্তাসনপদ-হস্তাসনঅর্ধ-চক্রাসন বা অর্ধ-চন্দ্রাসনত্রিকোণাসনউত্থিত-পদাসন অভ্যাস করতে হবে। এতে রোগ একটু প্রশমিত হলে এই সাথে মৎস্যাসন ও সর্বাঙ্গাসন করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এভাবে আরো কিছুদিন অভ্যাসের পর উষ্ট্রাসনধনুরাসনহলাসন প্রভৃতি আসন চর্চা করা যেতে পারে। তবে কখনোই একসাথে ছয় থেকে আটটি আসনের বেশি অভ্যাস করা উচিত নয়।

বিকেলে আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা দ্রুত হাঁটা বা দৌঁড়ানো এবং সুযোগ থাকলে আধঘণ্টাখানেক সাঁতার কাটা গেলে বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হবে। আর রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে পনের মিনিট বজ্রাসন করা আবশ্যক।

তবে নিষিদ্ধ প্রচেষ্টা হিসেবে দিবানিদ্রা কোনভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।

মেদ

 মেদ-স্থূলতা (Fatness, Corpulence | Med-Sthulota):


চর্বি হচ্ছে সঞ্চিত খাদ্য। চর্বি বা মেদ আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যক, তবে তা পরিমিত মাত্রায়। চর্বি না থাকলে দেহের লাবণ্য, নমনীয়তা, নড়াচড়া, সাবলীল চলাফেরা এবং প্রয়োজনীয় উষ্ণতা ধরে রাখা কিছুতেই সম্ভব হতো না। দেহের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ চর্বি চামড়ার নিচে থেকে এই কাজগুলো করে যায়। বাকি চর্বিগুলো অস্থি-সন্ধি ও মাংশপেশীর সাথে মিশে থাকে। যখনি ক্ষুধার্ত হই আমরা, কোন কারণে খাদ্যগ্রহণে অসমর্থ হলে আমাদের এই সঞ্চিত চর্বি ক্ষয় হয়ে দেহযন্ত্রগুলোকে চালু রাখতে শক্তি সরবরাহ করে দেহের ক্ষতিপূরণ করে থাকে। এজন্যেই আমাদের দেহযন্ত্রগুলো সচল রাখতে কিছু চর্বি সঞ্চিত থাকা প্রয়োজন।

কিন্তু দেহে সঞ্চিত চর্বি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে এবং এই চর্বির সাথে যদি মাংসও বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে তা দেহের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেদবহুল দেহীদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রায়ই এরা উচ্চ-রক্তচাপ তথা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্রসহ নানান রোগের শিকারে পরিণত হয়।

রোগের লক্ষণ:
স্থূলতা বৃদ্ধির প্রাথমিক লক্ষণই হচ্ছে নির্ধারিত মাত্রাসীমার চেয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া। এই ওজন যতই বাড়বে, তা কমানো ততই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই শারীরিক উচ্চতা ও দেহের গড়ন অনুযায়ী মানসম্মত হারের মধ্যেই ওজন সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। এর চেয়ে ওজন ১০% বৃদ্ধি পেলেই তাকে মেদবৃদ্ধি বা স্থূলতা রোগ হিসেবে চিহ্ণিত করা যেতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে ওজনের এই মানসম্মত হার হবে এরকম-

-উচ্চতা = —-ওজন (পুরুষ)- ————-=ওজন (স্ত্রী)
৬০ ইঞ্চি = পুরুষ [৫০ থেকে ৫৬ কেজি]- – স্ত্রী [৪৫ থেকে ৫২ কেজি]
৬৩ ইঞ্চি = পুরুষ [৫৩ থেকে ৫৯ কেজি]- – স্ত্রী [৪৯ থেকে ৫৬ কেজি]
৬৫ ইঞ্চি = পুরুষ [৫৭ থেকে ৬৩ কেজি]- – স্ত্রী [৫২ থেকে ৫৯ কেজি]
৬৮ ইঞ্চি = পুরুষ [৬৩ থেকে ৬৯ কেজি]- – স্ত্রী [৫৯ থেকে ৬৫ কেজি]
৭০ ইঞ্চি = পুরুষ [৬৬ থেকে ৭৩ কেজি]- – স্ত্রী [৬২ থেকে ৬৯ কেজি]

এখানে ওজন দেখানোর ক্ষেত্রে প্রথমটি ছোট গড়নের এবং দ্বিতীয়টি বড় গড়নের পুরুষ ও স্ত্রীর মানসম্মত ওজন দেখানো হয়েছে। মাঝারি গড়নের পুরুষ বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে দুটোর মাঝামাঝি ওজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন ৬০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট পুরুষের দেহের মানসম্মত ওজন হবে ছোট গড়নের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি, এবং বড় গড়নের ক্ষেত্রে ৫৬ কেজি। অতএব মাঝারি গড়নের ক্ষেত্রে ওজন হবে ৫৩ কেজি।

রোগের কারণ:
দেহে নানা কারণে চর্বি জমতে পারে। তবে স্থূল বা মোটা হওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি কারণকে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (১) বংশধারা, (২) পরিপাকযন্ত্র ও গ্রন্থিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বা সঠিকভাবে কাজ না করা এবং (৩) স্বাস্থ্য রক্ষায় সাধারণ নিয়ম না মানা।

পিতৃ ও মাতৃ-কুলে স্থূলত্বের ধারা বজায় থাকলে কারো কারো ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে এই ধারা বাহিত হতে পারে। তবে তা সংখ্যায় কম এবং স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম-বিধি কঠোরভাবে পালন করলে তা পরিমিত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব।

দ্বিতীয়ত আমাদের দেহস্থিত প্রধান গ্রন্থিগুলো যেমন পিটুইটারী গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ না করলে বা নিষ্ক্রিয় হলে স্থূলতা দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হতে যে বিশেষ হরমোন নিসৃত হয় তা অল্পমাত্রায় ক্ষরিত হলে মানুষ স্থূল হতে থাকে এবং অধিকমাত্রার ক্ষরণে কৃশ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় হরমোন পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া গেলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় সুনির্দিষ্ট ঔষধ সেবনের মাধ্যমে এই তারতম্যের নিরসন ঘটিয়ে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা আজকাল অসম্ভব কিছু নয়।

বর্তমানে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই মেদবহুল স্থূল হবার প্রধান কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধির সাধারণ নিয়ম মেনে না চলা। কায়িক শ্রম-বিমুখতা, অতিভোজন, অধিক পরিমাণে আমিষ ও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ, ন্যূনতম ব্যায়ামের অভাব ইত্যাদি কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। স্থূলদেহী বা মেদরোগীরা প্রায়ক্ষেত্রেই ভোজনবিলাসী হয়ে থাকে। আর এই ভোজনবিলাসের কারণে বাছ-বিচারহীন এসব চর্বিজাত, অতিরিক্ত স্নেহ ও শর্করাজাতীয় খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ফাস্টফুডের দিকে আকর্ষণ বাড়তে থাকা এবং সে তুলনায় কায়িক পরিশ্রম না থাকায় রোগটিও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

রোগ নিরাময়:
নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাসের সাথে সাথে মেদ রোগীদের আহারে-বিহারে খুবই সংযমী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। খাওয়া-দাওয়ায় সংযমী হলেই সাধারণতঃ স্থূলতা জয় করা যায়। সকালে অল্প পরিমাণে চিড়া, মুড়ি, খই বা সেঁকা রুটিজাতীয় যেকোন ধরনের খাবার এবং সেই সাথে চিনি ছাড়া এক কাপ পাতলা দুধ এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে ভাত, ডাল, শাকসবজি, তরকারি, মাছ প্রভৃতি এবং শেষ পাতে টক খাওয়া যেতে পারে। খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে হবে। তরকারি ও শাকসবজির পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত। তবে চর্বি বা অধিক মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কাঁচা ঘি, মাখন বা এই জাতীয় কোন খাবার কিছুতেই খাওয়া উচিত হবে না। একান্তই ক্ষুধা পেলে বিকেলে খুব হালকা সহজ নাস্তা খাওয়া যেতে পারে। রাতে দু-একটা আটার রুটি ডাল বা সবজিসহ খাওয়া যেতে পারে। তবে তা বেশি রাত করে নয়।

নিয়মমাফিক উপবাস শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সপ্তাহে এক বেলা কিংবা পনের দিনে একদিন সম্পূর্ণ উপবাস স্থূলতা কমাতে খুব সহায়তা করে থাকে। উপবাসের সময় লেবুর রস মিশিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।

এইসব খাদ্যাভ্যাস পালনের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে লেবুর রস মিশিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে প্রথমে কিছু খালি হাতে ব্যায়াম ও সূর্য-নমস্কার ব্যায়াম করে ২/৩ মিনিট শবাসন করতে হবে। এরপর পবন-মুক্তাসনপদ-হস্তাসনঅর্ধ-চক্রাসন বা অর্ধ-চন্দ্রাসনত্রিকোণাসনউত্থিত-পদাসন অভ্যাস করতে হবে। এতে রোগ একটু প্রশমিত হলে এই সাথে মৎস্যাসন ও সর্বাঙ্গাসন করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এভাবে আরো কিছুদিন অভ্যাসের পর উষ্ট্রাসনধনুরাসনহলাসন প্রভৃতি আসন চর্চা করা যেতে পারে। তবে কখনোই একসাথে ছয় থেকে আটটি আসনের বেশি অভ্যাস করা উচিত নয়।

বিকেলে আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা দ্রুত হাঁটা বা দৌঁড়ানো এবং সুযোগ থাকলে আধঘণ্টাখানেক সাঁতার কাটা গেলে বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হবে। আর রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে পনের মিনিট বজ্রাসন করা আবশ্যক।

তবে নিষিদ্ধ প্রচেষ্টা হিসেবে দিবানিদ্রা কোনভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।

Posted at July 24, 2020 |  by Arya ঋষি
সূর্যের ভর কিভাবে মাপা  হয়েছে?

নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র বিশ্লেষনের মাধ্যমে সূর্যের ভর নির্ণয় করা যায়।
নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রটি হচ্ছে, F=Gm1m2/r^2
মানে, মহাকর্ষীয় বল=(মহাকর্ষীয় ধ্রুবক × ভর ১ × ভর ২)÷ (দূরত্ব স্কোয়ার)
এখানে আমরা ভর ১ (m1)কে সূর্য এবং ভর ২(m2) কে পৃথিবীর ভর ধরবো।
তাছাড়াও সূত্রটিকে বিশ্লেষণ করে সূর্যের ভর বের করার জন্য আমাদের আরো তিনটি সূত্র জানতে হবে।
১. F=ma
২. a= Omega square×r =w^2×r
৩. Omega(w)= 2π÷T
এরপর আমাদেরকে আরো দুটি মান জানতে হবে।
১. মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G= 6.67×10^(-11) Nm^2Kg^(-2)
২. পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, r= 1.4959×10^11 m
আরেকটি মান আমাদেরকে ক্যালকুলেশন করে বের করে নিতে হবে। সেটি হচ্ছে একবছরকে সেকেন্ডে হিসাব করা।
এখানে, T= 365.256Days = 365.256×(8.64×10^4) = 3.16×10^7 sec
হয়ে গেছে প্রায়।
এবার আসি মূল ক্যালকুলেশানে।
F=Gm1m2/r^2
m1= Fr^2/Gm2
m1=a(earth)r^2/G
m1=(2π/T)^2 × r^3/G
এবার মান বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। 😊
উল্লেখ্য যে, ^ এটা দিয়ে পাওয়ার বুঝানো হয়েছে।
যেমন, r^2 মানে হচ্ছে r square.
আর / (স্ল্যাশ) দিয়ে ভাগ বুঝানো হয়।
যেমন, 2π/2 অর্থাৎ 2π÷2
সূর্যের ভর হবে, 1.98×10^(-36) Kg

সূর্যের ভর

সূর্যের ভর কিভাবে মাপা  হয়েছে?

নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র বিশ্লেষনের মাধ্যমে সূর্যের ভর নির্ণয় করা যায়।
নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রটি হচ্ছে, F=Gm1m2/r^2
মানে, মহাকর্ষীয় বল=(মহাকর্ষীয় ধ্রুবক × ভর ১ × ভর ২)÷ (দূরত্ব স্কোয়ার)
এখানে আমরা ভর ১ (m1)কে সূর্য এবং ভর ২(m2) কে পৃথিবীর ভর ধরবো।
তাছাড়াও সূত্রটিকে বিশ্লেষণ করে সূর্যের ভর বের করার জন্য আমাদের আরো তিনটি সূত্র জানতে হবে।
১. F=ma
২. a= Omega square×r =w^2×r
৩. Omega(w)= 2π÷T
এরপর আমাদেরকে আরো দুটি মান জানতে হবে।
১. মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G= 6.67×10^(-11) Nm^2Kg^(-2)
২. পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, r= 1.4959×10^11 m
আরেকটি মান আমাদেরকে ক্যালকুলেশন করে বের করে নিতে হবে। সেটি হচ্ছে একবছরকে সেকেন্ডে হিসাব করা।
এখানে, T= 365.256Days = 365.256×(8.64×10^4) = 3.16×10^7 sec
হয়ে গেছে প্রায়।
এবার আসি মূল ক্যালকুলেশানে।
F=Gm1m2/r^2
m1= Fr^2/Gm2
m1=a(earth)r^2/G
m1=(2π/T)^2 × r^3/G
এবার মান বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। 😊
উল্লেখ্য যে, ^ এটা দিয়ে পাওয়ার বুঝানো হয়েছে।
যেমন, r^2 মানে হচ্ছে r square.
আর / (স্ল্যাশ) দিয়ে ভাগ বুঝানো হয়।
যেমন, 2π/2 অর্থাৎ 2π÷2
সূর্যের ভর হবে, 1.98×10^(-36) Kg

Posted at July 15, 2020 |  by Arya ঋষি
১৮৮৩ সাল। ফিলোসফিক্যাল ট্রানজাকশন অব দ্য সোসাইটির পত্রিকায় বৃটিশ জ্যোতির্বিদ জন মিশেল একটি গবেষণাপত্র লেখেন। মিশেল অদ্ভুত এক বস্তুর কথা বলেন সেখানে। ভীষণ ভারী বস্তুটা, আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যদি ঘনত্বও খুব বেশি হয়, মিশেল বলেন, সেই নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় বল হবে অনেক শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী? সেটা ঠিকঠাক গণনা করে বলতে পারেননি মিশেল। বলেছিলেন, এতটাই বেশি সেই মহাকর্ষ টান, সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। আর আলোই যদি বেরোতে না পারে, সেই নক্ষত্রকে আমরা কখনোই দেখতে পাব না। কিন্তু মিশেল এই ধারণা কেন করলেন?
মিশেলের এই ধারণার পেছনে ছিল নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব। নিউটন মনে করতেন, আলোক রশ্মি শুধুই রশ্মি নয়, কণাও। আর আলো যেহেতু কণা, তাই আলো বোধ হয় তাঁর গতিসূত্র মেনে চলে। মেনে চলে মহাকর্ষ তত্ত্বও। নিউটনের আলোর কণা তত্ত্ব বহুদিন পর্যন্ত রাজত্ব করে।
মিশেলও নিউটনের সঙ্গে একমত ছিলেন। মিশেলের পক্ষে ছিল নিউটনের মুক্তিবেগ। নিউটন বলেছিলেন, পৃথবী কিংবা সূর্যের মতো ভারী বস্তুগুলো মহাকর্ষ বল দিয়ে ছোট বস্তুগুলোকে নিজের বুকে আটকে রাখে। ছোট বস্তুকে যদি সেই মহাকর্ষ টান এড়িয়ে মহাশূন্যে ছুটে যেতে হয়, তাহলে তাকে পৃথিবীর মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার (৭ মাইল)। রকেটের বেগ সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেশি। তাই রকেট পৃথিবীর মহাকর্ষ টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে পারে। মিশেল বলেন, সেই ভারী নক্ষত্রটার ভর এতটাই বেশি হবে, তার মুক্তিবেগ হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। তাই সেটার মহাকর্ষক্ষেত্র থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারবে না। মিশেল সেই ভারী আলোখেকো বস্তুটার নাম দিলেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণতারা।

মহাকর্ষের পটভূমি

১৬৬৫ সাল। ব্রিটেনে তখন প্লেগের মহামারী। কাতারে কাতারে লোক মরছে। ভয়ার্ত মানুষগুলো আতঙ্কে দিশেহারা। প্রাণভয়ে পালাচ্ছে শহর ছেড়ে। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজেও লেগেছে মহামারীর বাতাস। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ বিজ্ঞানীও ভীত। ক্যামব্রিজ ছেড়ে চলে গেলেন লিঙ্কনশায়ারের খামারবাড়িতে। সেখানে তাঁর মা আর সৎ বাবা বসবাস করেন। সেই গ্রীষ্মটাই মোড় ঘুরিয়ে দেয় পদার্থবিজ্ঞান ইতিহাসের। এটা নিয়ে প্রায় রূপকথার মতো একটা গল্পও চালু হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। আপেল পড়ার গল্প। নিউটন একদিন আত্মমগ্ন হয়ে বসে ছিলেন একটা আপলে গাছের নিচে। হঠাৎ একটা আপেল গাছ থেকে পড়ে মাটিতে। নিউটনের মাথায় তখন একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। আপেলটা মাটিতে পড়ল কেন? কেন ওপরে উঠে গেল না? তাহলে কি পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে?
নিউটন
রোমান্টিকদের বিশ্বাস সেদিনের সেই আপেল পড়ার ঘটনাই মহাকর্ষ বলের হদিস পাইয়ে দেয় নিউটনকে। এ গল্প সত্যি কি মিথ্যা, নিশ্চিত করে বলার জো নেই। সত্যি হতেও পারে। তবে স্রেফ একটা আপেল পড়ার ঘটনা থেকে মহাকর্ষ বলের জন্ম, একথা বিশ্বাস করা কঠিন। নিউটন অনেক দিন থেকেই মহাকর্ষ বল নিয়ে ভাবছিলেন। হাতড়াচ্ছিলেন কীভাবে এই রহস্য সমাধান করা যায়। লিঙ্কনশায়ারের সেই আপেল পড়ার ঘটনা হয়তো নিউটনের ভাবনার জগতে গতি এনে দিয়েছিল। কিন্তু শুধু সেই ঘটনার কারণেই মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার হয়নি এটা সত্যি। কারণ মহাকর্ষ বল নিয়ে নিউটনের আগে অনেক বিজ্ঞানীই ভেবেছেন। যদিও তাঁরা সমাধান বের করতে পারেননি।
মহাকর্ষ বলটা কী? আমরা যে পৃথিবীর ওপর হাঁটছি, ঘুরছি-ফিরছি পৃথিবীর বুক থেকে অনন্ত মহাশূন্যে পড়ে যাচ্ছি না, সেটা মহাকর্ষ বলের কারণেই। আবার ওই যে পড়ে যাবার কথা বললাম, সেটাই বা কেমন? গাছের আপেল মাটিতে কেন পড়ে? কেন কোনো কিছু ওপরে ছুড়ে মারলে তা আবার নিচে ফিরে আসে, মাটিতে আছাড় খায়? এর পেছনে একটাই বল কাজ করছে। মহাকর্ষ বল। অনন্ত মহাবিশ্বে আমরা পড়ছি না, কারণ পৃথিবী তার আকর্ষণ শক্তি দিয়ে আমাদের ধরে রেখেছে। আবা মহাশূন্যে বিশাল বিশাল অঞ্চল ফাঁকা। একদম কিছুই নেই। কী পরিমাণ ফাঁকা সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। ফাঁকা বলে সেখানে মহকর্ষ বলের কারসাজিও কম। তাই সেখানে পড়াপড়ির বিষয়টা কল্পনাও করা যায় না। তাহলে আমরা পৃথিবীর বুক থেক মহাশূন্যে পড়ছি না একই সাথে দুটো কারণে। পৃথিবী তার মহাকর্ষ টানের সাহায্যে আমাদের ধরে রেখেছে। আর মহাশূন্যের ফাঁকা অঞ্চলে আকর্ষণ করার মতো কিছু নেই যে আমারা মহশূন্যে কোনো এক দিকে ঝাঁপ দিলেই সেদিকে ভীমবেগে পড়ে যাব।
নিউটন মহাশূন্য বলটা একেবারে খাতা-কলমে প্রমাণ করেছেন। তাই বলে কি প্রাচীনকালের মানুষ মহাকর্ষ বলের কোনো হদিস জানত না। জানত এক প্রকার। সেটাকে আসলে মহাকর্ষ বললে মশকরা করা হবে। প্রাচীন গ্রিসেই আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয়। গ্রিক পণ্ডিত মনে করতেন বস্তুর মাটিতে পড়ার পেছনে স্বর্গীয় ব্যাপার-স্যাপার জড়িয়ে আছে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয়, সেসব বস্তু ওপরে নিক্ষেপ করলে আবার মাটিতে ফিরে আসবে। যেসব বিষয়গুলো মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারত না, সেখানেই হাজির হতো দেবতা, শয়তান, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি অলৌকিক বিষয়। গ্রিক দার্শনিকদের কাছে বস্তু কেন মাটিতে পড়ে তার ব্যখ্যা ছিল না। তেমনি যেসব বস্তু ওপরে উঠে যায়, তার কারণও তাঁদের জানা ছিল না। আদিম যুগে মানুষ আগুন দেখে ভয় পেত। দিশেহারা হয়ে পড়ত বনের দাবানলে। আগুনের কাছে একদম অসহায় ছিল সেই মানুষগুলো। তাই আগুনকে পুজো করত আদিম যুগের মানুষেরা। অনেক পরে মানুষ আগুনের ব্যবহার শেখে। তখন দেবতার আসন হারায় আগুন। অবশ্য এই আধুনিক যুগেও কোনো কোনো সমাজে আগ্নিপুজো করা হয়ে। তবে তাদের সংখ্যা নগন্য, তারা ব্যতিক্রম।
গ্রিক যুগেও এমন বহু বহু বিষয়কে অলৌকিক মনে করা হত। যেমন আগুন ওপরে উঠে যায় কেন? ওপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প, ধোঁয়া, বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ইত্যাদি। এর ব্যাখ্যা গ্রিক দার্শনিকদের কাছে ছিল না। তাই এগুলোর সাথে স্বর্গের যোগ আছে বলে মনে করতেন। তাই এরা স্বর্গের টানে ওপরে উঠে যায়।
আকাশের জ্যোতিষ্কমণ্ডলি দেখা যায় খোলা চোখেই। কত কত তারা আকাশে। একই তারা নিয়ে একেক দেশে একেক গল্প চালু আছে। তারাদেরও নামও আলাদা। একই তারা কোনো দেশে দয়াময় দেবতা, কোনো দেশে আবার ভয়ঙ্কর দানব। কেন এমন হলো? এর পেছনরে কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। কালপুরুষ যখন আকাশের গায়ে ঝলমল করে তখন হয়তো কোনো দেশে সবুজ ফসলে ভরে ওঠে। আবার একই সময়ে কোনো দেশ হয়তো তলিয়ে যায় বানের জলে, কোনো দেশ হয়তো ভয়ঙ্কর খরায় পুড়ে ছারখার। যে দেশ সবুজ ফসলে ভরে ওঠে, সেই দেশ হয়তো কালপুরুষ দয়াময় দেবতা হিসেবে গণ্য হয়। বন্যা কিংবা খরা কবলিত দেশগুলোতে কালপুরুষকে দেখা হয় ভয়ঙ্কর দানবরূপে। এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠে পৌরণিক কাহিনিগুলো। সেসব কাহিনির নায়ক-নায়িকা, ভিলেন, দানব, রাক্ষস, দেব-দেবী সব চরিত্রগুলোই গড়ে উঠেছে কোনো না কোনো তারাকে ঘিরে। সমাজের সুখ-দুঃথ, হাসি-কান্না, বন্যা, মহামারি জড়িয়ে আছে সেসব কাহিনির আড়ালে। মানুষ নিজে যা করতে পারে না, সেই অসম্ভব কাজগুলো করিয়ে নেই কল্পকাহিনির চরিত্রগুলো দিয়ে। এভাবেই সেসব চরিত্র মিশে যায় মানুষের দৈননন্দিন জীবনে। আর সেই কল্প কাহিনির চরিত্রগুলো খুঁজে নেয় রাতের আকাশে, কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের ভিড় থেকে।

প্রাচীন যুগেই জন্ম পুরাণ কাহিনিগুলো। তখনই সুত্রপাত জ্যোতির্বিদ্যার। মানুষ আকাশের তারা দেখে পথ চিনতে, চাষ-বাসের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে শেখে। সেকালে তাঁরা দেখে কিছু মানুষ ভবিষ্যৎ বলতে পারত। তাদের বলা হত গণক ঠাকুর কিংবা জ্যোতিষ। এর বেশিরভাগ বুজরুকি। তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো ফলে যেত। তবে সেটা মোটেও ভাগ্য গণনা করে নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ বিশ্লেষণ করে কিছু মানুষ পেয়ে যেত আবহাওয়ার আগাম সংবাদ। কৃষিনির্ভর সেই সমাজে আগাম আবহাওয়ার সংবাদ জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নিউটনের মহাকর্ষে

সেকালে গ্রিসে পৃথিবীকে সমতল মনে করত মানুষ। তখন স্বাভাবিকভাবেই উপর-নিচ-এর ধারণাটা ছিল পরম। তখন মনে করা হতো যেসব বস্তু বা প্রাণী স্বর্গীয় তাদের অবস্থান উপরে, স্বর্গপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় তাদের অবস্থান মাটিতে কিংবা পাতালপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় সেগুলোকে ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে একটা সময় আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। তারপর এক সময় প্রমাণ হলো পৃথিবী সমতল নয়, গোলাকার। তখন উপর-নিচের অগের তত্ত্ব ভেঙে পড়ল। তাই পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে আগের ধারণা আর টিকল না। বস্তু কেন ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে তা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে তার নতুন সমাধান দরকার হয়ে পড়ল।
 টলেমি
তখন অ্যারিস্টোটল জোড়াতালি দিয়ে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন। সেটা হলো,পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। আকাশের সব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সকল বস্তুর গতি তাই পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে। এজন্য বস্তুকে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলেও তা পৃথিবীতে ফিরে আসে। সে সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অ্যারিস্টোটলের প্রভাব ব্যাপক। সবাই চোখ বুঁজে অ্যারিস্টোটলের থিওরি মেনে নিলেন। পরে খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে টলেমি নামে এক দার্শনিক মহাবিশ্বের একটা মডেল দাঁড় করালেন। সেটা অ্যারিস্টোলের মতের সাথে মিল রেখেই। টলেমির মডেল মহাবিশ্ব বেশ কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর কেন্দ্রে আছে পৃথিবী। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে যথাক্রমে চাঁদ, শুক্র, সূর্য ও মঙ্গল। এর সবাই আছে একই সরল রেখায়। অন্যগহগুলো তখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সেগুলোর স্থান হয়নি টলেমির মডেলে। একবারে বাইরের স্তরে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে আছে আকাশের অন্য তারাগুলো। টলেমির সেই মডেল দেখে এখনকার প্রথম শেণি পড়ুয়া একটা বাচ্চাও হাসবে। কিন্তু সেকালে গোটা পৃথিবীর লোক সেই মডেল মেনে নিয়েছিল।
টলেমির মডেল
ষোড়শ শতাব্দীতে এসে বাঁধল গোল। পোলিশ জৌতির্বিদ নিকোলাস কোপর্নিকাস বললেন, অ্যারিস্টোটলের মতবাদ ভুল। বললেন, সূর্য নয়, বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে একটা বইও লিখলেন কোপার্নিকাস। বইটি ছাপা হলো তাঁর মৃত্যুর আগমুহূর্তে। কিন্তু কোপার্নিকাসের কথা কেউ বিশ্বাস করল না।
টাইকো ব্রাহে ছিলেন প্রাগের সম্রাট দ্বিতীয় রোদলফের গণিতজ্ঞ। সম্রাটের রাজ জ্যোতিষিও। তিনি মহাকাশের তারাদের নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। টাইকোর সহকারী ছিলেন জোহান কেপালার। টাইকোর মৃত্যুর পরে তাঁকেই বসানো হয় স¤্রাটের গণিতজ্ঞ ও প্রধান রাজ জ্যোতিষির পদে। সেকালে রাজ জ্যোতিষির প্রধান কাজই হলো সম্রাটের ভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করা, তারাদের গতিপথ দেখে রাজ্যের ভালোমন্দের আগাম খবর জানানো। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে দেশে এসব রাজ জ্যোতিষিরাই ছিল রাজা-বাদশাহদের প্রধান মন্ত্রণাদাতা। তাঁরা বুজরুকি করে রাজাদের ভুল পথে চালাতেন। প্রজাদের ওপর অবর্ণনীয় নীপিড়ন নেমে আসত এসব রাজ জ্যোতিষিদের বুজুরুকির কারণে।
কেপলার ছিলেন একদম আলাদা। ভবিষ্যৎ গণনায় মোটেও আগ্রহ ছিল না তাঁর। তবুও সম্রাটের অনুরোধে কিছু কিছু গণানা করতেন। তবে তিনি স্বীকার করতেন এসবে কোনো অলৌকিকতা নেই। আবহাওয়ার মেজাজ-মর্জি বুঝেই করতেন কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী। রাজাকে বলতেন এরজন্য জ্যোতিষ হওয়ার দরকার নেই। একটু জ্ঞান থাকলে যে কেউই এ কাজ করতে পারে। রাজা রোদলফও কেপলারকে পীড়াপিড়ি করতেন না। কেপলার তাঁর শিক্ষক ছিলেন। যথেষ্ঠ সম্মান করতেন তিনি কেপলারকে। কেপলার কোপার্নিকাসের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। সেটা ক্যাথোলিক ধর্মমতের বিরোধি। তবু রাজা রোদালফ তাঁকে বাঁধা দেননি গবেষণায়। রোদলফ অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না। রাজ গণিতজ্ঞের পদে বসিয়ে কেপলারকে তিনি জ্ঞানচর্চার প্রসারেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কেপলারের স্বাধীনতা ছিল, তিনি জ্যোর্তিবদ্যার চর্চা করতেন। গ্রহ-নক্ষত্রদের চলার পথ নিয়েও করেছিলেন গবেষণা। কিন্তু তাঁর হাতে ভালো কোনো টেলিস্কোপ ছিল না।
সেই সময় ইতালিতে গ্যালিলিওর ব্যাপক নামডাক। নানা রকম যন্ত্রপাতি তৈরি করে তিনি সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল টেলিস্কোপ। এর আগেও টেলিস্কোপ ছিল না তা নয়। তবে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপের ধারেকাছেও ছিল না আর কারও টেলিস্কোপ। গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আকাশ দেখেন। তারপর ঘোষণা করেন কোপার্নিকাসই ঠিক। কেপলারের মতো অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না গ্যালিলিও। প্রাগের সম্রাটের মতো রোমান সম্রাট অতটা মহানুভব ছিলেন না। তাছাড়া রোমের ভেতরেই তো পোপোর ভ্যাটিকান। তাঁদের কথাই ইতালি তথা ইউরোপে দৈব বাণী। ভ্যাটিক্যানের বিরোধিতা করে এমন বুকের পাটা ইতালিতে কারও ছিল না। খ্রিস্টান ধর্ম আসলে অ্যারিস্টোটলের মতের বাইরে যেতে পারেনি। এজন্য তাঁকে অবর্নণীয় নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। এরপর কেপলার দেখালেন কীভাবে, কোন পথে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে। তিনি গ্রহগুলোর চলার পথের জন্য গাণিতিক সূত্রও আবিষ্কার করলেন।
কেনই বা সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলো ঘুরছে। কেন ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে না অনন্ত মহাকাশের দিকে? এ প্রশ্নের সমাধান তিনি দিতে পারলেন না। সমাধান এলো সপ্তদশ শতাব্দীতে। নিউটনের হাত ধরে।

নিউটন দেখালেন, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী এমনি এমনি ঘোরে না। এদের ভেতরে এক ধরনের অদৃশ্য আকর্ষণ বল আছে। সেই আকর্ষণ বলের নাম মধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বল শুধু সূর্য আর গ্রহগুলোর মধ্যেই নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুর ভেতর ক্রিয়া করে।
নিউটন মহাকর্ষ বলের জন্য একটা সূত্র দিলেন। সেটা হলো, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের মান তত বেশি হবে যত বস্তুদুটোর ভর বেশি হবে। যেকোনো একটার ভর বাড়লেও মহাকর্ষ বলের মান বাড়ে। কিন্তু বস্তু দুটোর মধ্যে দূত্ব যত বাড়ে তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় টান তত কমে। এই কমা আবার সহজ-সরল ভাবে কমা নয়, বর্গাকারে। অর্থাৎ দূরত্ব যদি বেড়ে দ্বিগুণ হয় তবে মহকর্ষ বলের মান কমে আগের মানের এক চতুর্থাংশে নেমে আসবে।
পৃথিবীতে আমরা হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছি, কোনও বস্তু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ছিটকে মূহশূন্যে চলে যাচ্ছ না, এর কারণও ওই মহাকর্ষ বল। নিউটন দেখালেন মহাকর্ষ বল শুধু আকর্ষণই করে, বিকর্ষণ করে না কখনও।
ভারী বস্তুর মহাকর্ষীয় প্রভাব কতদূর পর্যন্ত কাজ করে?
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলে এর প্রভাব অসীম পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু এটাও ঠিক এই বল খুবই দুর্বল। মহাবিশ্বে, পৃথিবীতে মহাকর্ষ বল ছাড়াও আরও তিন রকম বলের হদিস বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল আর দুর্বল নিউক্লিয় বল।
মহাকর্ষ বল কতটা দুর্বল তার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। শুকনো তেলহীন মাথার চুলে একটা চিরুনি ঘষুন। আর মাটিতে ছড়িয়ে দিন কিছু কাগজের টুকরো। এবার ঘষা চিরুনিটা নিয়ে যান কাগজের টুকরোগুলোর কাছাকাছি। চিরুনি কাগজের টুকরোগুলোর কাছে পৌঁছনোর আগেই সেগুলো লাফ দিয়ে উয়ে আসবে চিরুনির গায়ে। এটা কেন হলো? চিরুনি মাথার চুলে ঘষা হয়েছিল। তাই ওতে তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎচ্চুম্বকীয় বলের একটা ক্ষেত্র। সেই বিদ্যুৎচুম্বক ক্ষেত্রই আকর্ষণ করেছে কাগজের টুকরোগুলোকে। কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছিল পৃথিবী তার সমস্ত মহাকর্ষ বল দিয়ে, সমস্ত ভর ভর ব্যবহার করে- নিউটনের সূত্র আমাদের তা-ই শেখায়। অন্যদিকে চিরুনিতে তৈরি হয়েছে খুব সামান্য বিদ্যুৎশক্তি। এইটুকুন বিদ্যুৎচ্চম্বকীয় শক্তির কাছে হার মেনেছে গোটা পৃথিবীরর মহাকর্ষ বল। সামান্য বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল পৃথিবীর বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কাগজের টুকরোগুলোকে মহাকর্ষীয় বলকে কাঁচকলা দেখিয়ে।
চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরো তোলা হলো। তারমানে এই নয়, টুকুরোগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবমুক্ত হলো। চিরুনি, আপনি, কাগজ-সবই তো পৃথিবীর মহাকর্ষেও ক্ষেত্রের মধ্যেই রয়েছে। পৃথিবীর আকর্ষণ বল সবার ওপরই কাজ করছে। পৃথিবীর মহাকর্ষক্ষেত্রের ভেতর দাঁড়িয়ে অনেক হম্বিতম্বি করা যায়। পৃথিবীর কথাই ধরা যাক। এর মহাকর্ষ বলের সীমা অসীম। কিন্তু বস্তুকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে হলে সেই বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের থাকতে হবে। এই দূরত্বের বাইরের বস্তুকে পৃথিবী তাঁর নিজের বুকে টেনে নিতে পারবে না। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সেই দূরত্ব পর্যন্ত পৃথিবীর চারপাশের এলাকাকে মহাকর্ষ ক্ষেত্র বলে।
বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে তাঁর মহাকর্ষ ক্ষেত্র কত দূর পর্যন্তর বিস্তার করে থাকবে। যেমন সূর্যের এই মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সীমা পৃথিবী থেকে অনেক বেশি। আবার বুধ গ্রহের মহাকর্ষ সীমা পৃথিবীর থেকে অনেক কম।
আবার আরেকটা কথাও সত্যি। এই মহকর্ষ ক্ষেত্রের ভেতর থেকে কোনো হালকা বা গতিশীল বস্তুও বেরিয়ে যেতে পারে না। যেমন পারে না বায়ুমণ্ডলও।
বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় পদার্থগুলো পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। কারণ, গ্যাসের প্রতিটা পরমাণুকে পৃথিবী মহাকর্ষ বল দ্বারা নিজের দিকে টানছে। অনেকে হয়তো পালটা যুক্তি দেখাবেন। বলবেন, মহাকর্ষ বলই যদি গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু বা অণুগুলোকে আকর্ষণ করে রাখে তবে তাদের কেন এত ওপরে ওঠার প্রবণতা?
একটা কথা বোধহয় কারো অজনা নয়, কঠিন পদার্থের ভেতর অণু-পরামণুগুলো বেশ শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধনের কারণে গায়ে গায়ে লেগে থাকে।  এদের অণু-পরমাণুগুলো তাই মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না। নিতান্ত ভঙ্গুর না হলে একটা হালকা কঠিন পদার্থের ওপর তুলানামুলক ভারী কোনো কঠিন পদার্থ রাখলেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু তরল পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো অনেকটা মুক্তভাবে থাকে। অনেকগুলো তরল পদার্থ একটা পাত্রে যখন রাখা হবে, তখন একটা হিসাব নিশ্চিতভাবে এসে যাবে- কে ওপরে থাকবে আর কে নিচে থাকবে। এখানেও এদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় মহাকর্ষ বল। যে তরলের ঘণত্ব বেশি তার ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব বেশি থাকবে। তাই তুলনামূলক ভারী তরলটা মাহাকর্ষ টানের ফলে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকতে চাইবে। অন্যদিকে হালকা তরলের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব তুলনামূলক কম হওয়ায় সে ভারী তরলকে নিচের দিকে জায়গা ছেড়ে দেবে। আর নিজে উঠে যাবে ওপরে। এক বালতি পানির ভেতর কিছু মধু ঢেলে দেখলেই এ ব্যাপারটার সত্যতা মিলবে।
ঠিক ওপরের মতোই ঘটনা ঘটে গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থে। গ্যাসীয় পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো বলতে গেলে প্রায় মুক্তভাবে থাকে। সুতরাং এদের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাবও থাকে অনে কম। তবুও তো থাকে। আমাদের গোটা বায়ুমণ্ডলটাকে বলা যায় গ্যাসীয় পদার্থের সমুদ্র। সব গ্যাসের ঘনত্ব যেমন সমান নয়, তেমনি সব গ্যাসের পরমাণু সমান ভারী নয়। স্বাভাবিকভাবেই ভারী ও বেশি ঘনত্বের গ্যাসগুলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে। হালকা গ্যাসগুলো উঠে যায় ওপরের দিকে।
এখানে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে, বায়ুমণ্ডলের স্তর যেখানে শেষ, অন্যবস্তুকে নিজের বুকে টেনে আনার ক্ষমতার সীমাও কি সেখানে শেষ ?
না, সেখানে নয়। আমাদের পৃথিবীতে মোট যে গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ তা দিয়ে মহাকর্ষ সীমার পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বায়ুমণ্ডলীয় সীমার বাইরেও মহাকর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে। বায়ুর ছড়িয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্যের কথা ভাবলে এই প্রশ্নটা মাথায় এসে যেতে পারে। এ কথা ঠিক, গ্যাসের পরিমাণ যাই হোক, তাকে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তার সবটুকু আয়তন ওই গ্যাস দখল করে। কিন্তু মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে এমন গ্যাস পাত্র হিসেবে ধরলে চলবে না, কারণ গ্যাস পুরো ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যেতে চাইলেও মহাকর্ষ বলের টান তা হতে দেয় না।
চাইলেই কি মহাকর্ষ অগ্রাহ্য করা যায়?
অনেক পুরোনো প্রশ্ন। চাইলেই সব কিছু সম্ভব। তবে এজন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। নিউটনের মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সাতে বস্তুর গতি জড়িয়ে। একমাত্র গতিই পারে বস্তুকে মহাকর্ষক্ষেত্রকে উপেক্ষা করে বস্তু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে। সেটা কীরকম গতি? এর ব্যাখ্যায় নিউটন টেনেছিলেন একটা কামানের উদাহরণ। তাঁর প্রিন্স্রিপিয়া অব ম্যাথমেটিকা বইটির ৩ নং ভলিউমের ৬ নং পৃষ্ঠায় ছিল বিস্তারতি ব্যাখ্য। সাথে একটা ছবিও ছিল। সেই ছবিটাই এখানে দেওয়া হলো।

ধরাযাক, খুব উঁচু একটা পাহাড়। সেই পাহাড়ের ওপর একটা কামান রাখা হলো। কামান থেকে একটা গোলাটা কিছুদূর গিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। নিউটনের প্রথম সূত্র বলে, বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ নাক করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির। আর গতিশীল বস্তু সুষম বেগে চলতে থাকবে অনন্তকাল। নিউটনের এই সূত্রটা কাজ করে যেখানে বাহ্যিক বলের প্রভাব নেই, শুধু সেখানেই। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে মহাকর্ষ বলের প্রভাব রয়েছে। তাই পাহাড় থেকে ছোড়া কামানের গোলা কামান থেকে সোজা পথে চলতে পারবে না একটানা। পৃথিবরে আকর্ষণে গোলার অভিমূখ ক্রমেই নিচের দিকে বেঁকে যাবে। এবং বাঁকানো পথে মাটিতে আঘাত করবে। এতো প্রথমবার ।
এবার কামানের শক্তি একটু বাড়িয়ে দিন। সেই শক্তি গোলার ওপর বাড়তি বল প্রয়োগ করবে। ফলে গোলাটার গতি প্রথমবারের চেয়ে বেশি হবে। তাই আগের বারের একটু বেশিদূর যেতে পারবে গোলাটি। অর্থাৎ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রথমবারের তুলনায় বেশিক্ষণ লড়তে পেরেছে দ্বিতীয় গোলাটি। এভাবে আরেকটি বেশি গতি বাড়ালে গোলা আরো বেশি দূর যেতে পারবে। পর্যায়ক্রমে কামানের শক্তি যদি বাড়তেই থাকে, ফলে যদি গোলার ওপর ধ্বাক্কা বলও পর্যায়ক্রমে বাড়ে, তাহলে প্রতিবারই একটু একটু বেশি দূরত্বে গিয়ে পড়বে কামানের গোলা।
পৃথিবী গোলককার। কামানের গোলায় বাঁকানো পথে গিয়ে পড়ছে মাটিতে। ধরা যাক, কামানের শক্তি এতটাই বাড়ানো হলো কামানটি পেরিয়ে গেল হাজার কিলোমিটার। হ্যাঁ, এটা ঠিক কামানের গোলার অত শক্তি নেই। তবে এ যুগের মিসাইলগুলো কিন্তু অতদূর যেতে পারে। নিউটনের পরক্ষীটা ছিল পুরোটাই কাল্পনিক। কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে তা অসম্ভব নয়। তাই আমরাও কামানের গোলা দিয়েই পরীক্ষাটাকে আরেকটু এগিয়ে নিই।
ধরা যাক, এবার আরও বেশি ভল প্রয়োগ করে কামানের গোলাটা ছোড়া হলো। এবার সে গিয়ে পড়ল ২০৫০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর পরীধির অর্ধেক পথ সে পাড়ি দিয়ে ফেলল বাঁকানো পথে। এবার ধাক্কা বল দ্বিগুন করে ফেলি। তাহলে গোলাটা নিশ্চয়ই আর দ্বিগুন দূরে গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ কামান থেকে ৪১ হাজার কিলোমিটিার পথ দূরে গিয়ে পড়বে। কিন্তু পৃথিবী গোল। সর্বোচ্চ পরিধি ৪০০৭৫ কিলোমিটার। সূতরাং কামানের গোলাটা এবার বাঁকানো গোলাকার পথে গোটা পৃথিবীকেই পদক্ষিণ করে ফেলবে।
কিন্তু কামান দাঁড়িয়ে আছে তার চলার পথে। গোলাটা পুরো পৃথিবী ঘুরে কামানের পেছনে এসে ধাক্কা মারবে। পৃথিবী ঘুরে আসতে লাগবে অনেক সময়। ততক্ষণে যদি আমরা কামানটাকে সরিয়ে নিই পাহাড় থেকে, তাহলে কি হবে?
সাদা চোখে দেখলে মনে হবে, কামানের সামনের দিক থেকে ছোড়া গোলা পুরো পৃথিবী ঘুরে এসে কামানের পেছন বারাবর আসতে ৪০০৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু গোলার ওপর যে বল প্রয়োগ করা হয়েছে তাতে কামান সেই পাহাড় পেরিয়ে আরও ৯২৫ কিলোমিটার সামনে এগিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ার কথা। কিন্তু কামানের গোলো সেখানেও পড়বে না।  নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র মেনে ঘুরতেই থাকবে বার বার। ঠিক যেভাবে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। তেমনিভাবে কামানের গোলাটিরও একটি কক্ষপথ তৈরি হবে পৃথিবীর চারপাশে। অবিরাম সে ঘুরতেই থাকবে, যদি বাতাসের বাধা না থাকে।
বাতাসের বাঁধা নেই। কিন্তু মহাকর্ষের প্রভাব আছে। তাই কামানের গোলাটা ভূপৃষ্ঠে পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে গোলার গতিশক্তি। আসলে তখন গোলাটার গতিশক্তির কারণে একটা একটা বল তৈরি হচ্ছে। সেই বলটা চাইছে গোলাটাকে পৃথিবীর আকর্ষণ কাটিয়ে একটা সোজা পথে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পৃতিবীর মহাকর্ষ বল। মহকর্ষ বল গোলটাকে টেনে পৃথিবীতে নামাতে চাইছে। সেটাতে সে আগে সফলও হয়েছে, নামাতে পেরেছে কামানের গোলাকে। তখন অবশ্য গোলার গতিশক্তি কম ছিল। কিন্তু এখন আর গোলার গতিশক্তি মহাকর্ষীয় বলকে ছেড়ে কথা কইবে না। শুরু হবে দুই বলের লড়াই। এ লড়াইয়ে দুই বলের শক্তিই সমান। তাই কেউ কাউকে হারাতে পারবে না। কামানের গোলা গতিশক্তি নিয়ে সোজা চলতে চায়, পৃথিবীর মহাকর্ষ তাকে সেই চলায় বাধা দেয়। যেহেতু দুটোরই শক্তি সমান, তাই গোলাও মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে না। আবার মহাকর্ষ বলও গোলাকে টেনে মাটিতে নামাতে পারে না। তখন গোলাটা পৃথিবীর কক্ষপথে অবিরাম ঘুরবে।
ধীরে ধীরে কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। মহাকর্ষ বল অজেয় নয়। যত বেশি বলে কামান গোলা ছুড়ছে, গোলার গতি তত বাড়ছে, পৃথিবীর মহাকর্ষ বলকে তত বেশি পরাস্ত করে গোলা দূরে সরে যেতে পারছে। তারপর গোলা যখন একটা নির্দিষ্ট গতি লাভ করছে তখন মহাকর্ষ আর গোলার শক্তি সমান হচ্ছে।
কিন্তু এমন কি হতে পারে না, এই যুদ্ধে গোলা জিতে যাবে!
নিশ্চয়ই পারে। পাঠকদের বুঝতে বাকি নেই, সেটা পারে একমাত্র গতি বাড়িয়েই। হ্যাঁ, গোলার গতি একটা সময় এমন হতে পারে যখন পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের আর সাধ্য নেই গোলাকে আটকে রাখে। তখন গোলাটা সোজা সেই গতিতে ছিটকে চলে যাবে মহাশূন্যের গহীনে।
নূন্যতম যে বেগে চললে গোলাটা মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে, সেটাই হলো পৃথিবীর মুক্তিবেগ। গোলার বেগ যদি সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার হয়, তাহলে সেটা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু কামানের সাধ্য নেই অত বেগে গোলা ছোড়ার। নিউটনের সময় কামানই ছিল গোলা নিক্ষেপের মোক্ষম হাতিয়ার। এরচেয়ে ভালো নিক্ষেপক আর ছিল না। কিন্তু মানুষ থেমে থাকে না, বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তিকেও এগিয়ে নেয় সমান তালে। বিংশ শতাব্দীতেই রকেট এসেছে। এই রকেটের কতই না ব্যবহার। যুদ্ধক্ষেত্রে ছোট্ট গোলা ছুঁড়তে কিংবা দূরদেশে মিসাইল দিয়ে আঘাত হানতে যেমন রকেট করিৎকর্মা, মহাশূন্যযানগুলো পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রকেটের সাহায্যে। মানুষ যেদিন চাঁদে মহাকাশযান পাঠালো, সেদিনই নিউটনের সেই কামানগোলা পরীক্ষার সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া গেল। পৃথিবীর মুক্তবেগের চেয়ে বেশি বেগে রকেট উৎক্ষেণ করা হলো। সেই রকেট মহাকাশযানকে বয়ে নিয়ে গেল পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তিকে হারিয়ে দিয়ে।
মুক্তিবেগের ব্যাপার-স্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বস্তুর ভরের। যে বস্তুর ভর যত বেশি তার মুক্তি বেগও ততবেশি। সূর্যের কথাই ধরা যাক, সূর্যের মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ৬১৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীখে যদি সূর্যের আকর্ষণ বল কাটিয়ে মহাশূন্যে ছিটকে যেতে হয়, তাহলে এর বেগ হতে ৬১৭ কিলোমিটারের বেশি।
ব্ল্যাকহোলের ব্যাখ্যায় নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বেশি কাজের নয়। তবু মুক্তিবেগটা দরকার হবে। তাই এটাকে ভালো করে মনে রাখুন। সময়মতো মুক্তিবেগের ক্যারিশমা জানাব।

পরের পর্ব>>

কৃষ্ণগহ্বর

১৮৮৩ সাল। ফিলোসফিক্যাল ট্রানজাকশন অব দ্য সোসাইটির পত্রিকায় বৃটিশ জ্যোতির্বিদ জন মিশেল একটি গবেষণাপত্র লেখেন। মিশেল অদ্ভুত এক বস্তুর কথা বলেন সেখানে। ভীষণ ভারী বস্তুটা, আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যদি ঘনত্বও খুব বেশি হয়, মিশেল বলেন, সেই নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় বল হবে অনেক শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী? সেটা ঠিকঠাক গণনা করে বলতে পারেননি মিশেল। বলেছিলেন, এতটাই বেশি সেই মহাকর্ষ টান, সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। আর আলোই যদি বেরোতে না পারে, সেই নক্ষত্রকে আমরা কখনোই দেখতে পাব না। কিন্তু মিশেল এই ধারণা কেন করলেন?
মিশেলের এই ধারণার পেছনে ছিল নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব। নিউটন মনে করতেন, আলোক রশ্মি শুধুই রশ্মি নয়, কণাও। আর আলো যেহেতু কণা, তাই আলো বোধ হয় তাঁর গতিসূত্র মেনে চলে। মেনে চলে মহাকর্ষ তত্ত্বও। নিউটনের আলোর কণা তত্ত্ব বহুদিন পর্যন্ত রাজত্ব করে।
মিশেলও নিউটনের সঙ্গে একমত ছিলেন। মিশেলের পক্ষে ছিল নিউটনের মুক্তিবেগ। নিউটন বলেছিলেন, পৃথবী কিংবা সূর্যের মতো ভারী বস্তুগুলো মহাকর্ষ বল দিয়ে ছোট বস্তুগুলোকে নিজের বুকে আটকে রাখে। ছোট বস্তুকে যদি সেই মহাকর্ষ টান এড়িয়ে মহাশূন্যে ছুটে যেতে হয়, তাহলে তাকে পৃথিবীর মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার (৭ মাইল)। রকেটের বেগ সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেশি। তাই রকেট পৃথিবীর মহাকর্ষ টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে পারে। মিশেল বলেন, সেই ভারী নক্ষত্রটার ভর এতটাই বেশি হবে, তার মুক্তিবেগ হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। তাই সেটার মহাকর্ষক্ষেত্র থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারবে না। মিশেল সেই ভারী আলোখেকো বস্তুটার নাম দিলেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণতারা।

মহাকর্ষের পটভূমি

১৬৬৫ সাল। ব্রিটেনে তখন প্লেগের মহামারী। কাতারে কাতারে লোক মরছে। ভয়ার্ত মানুষগুলো আতঙ্কে দিশেহারা। প্রাণভয়ে পালাচ্ছে শহর ছেড়ে। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজেও লেগেছে মহামারীর বাতাস। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ বিজ্ঞানীও ভীত। ক্যামব্রিজ ছেড়ে চলে গেলেন লিঙ্কনশায়ারের খামারবাড়িতে। সেখানে তাঁর মা আর সৎ বাবা বসবাস করেন। সেই গ্রীষ্মটাই মোড় ঘুরিয়ে দেয় পদার্থবিজ্ঞান ইতিহাসের। এটা নিয়ে প্রায় রূপকথার মতো একটা গল্পও চালু হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। আপেল পড়ার গল্প। নিউটন একদিন আত্মমগ্ন হয়ে বসে ছিলেন একটা আপলে গাছের নিচে। হঠাৎ একটা আপেল গাছ থেকে পড়ে মাটিতে। নিউটনের মাথায় তখন একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। আপেলটা মাটিতে পড়ল কেন? কেন ওপরে উঠে গেল না? তাহলে কি পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে?
নিউটন
রোমান্টিকদের বিশ্বাস সেদিনের সেই আপেল পড়ার ঘটনাই মহাকর্ষ বলের হদিস পাইয়ে দেয় নিউটনকে। এ গল্প সত্যি কি মিথ্যা, নিশ্চিত করে বলার জো নেই। সত্যি হতেও পারে। তবে স্রেফ একটা আপেল পড়ার ঘটনা থেকে মহাকর্ষ বলের জন্ম, একথা বিশ্বাস করা কঠিন। নিউটন অনেক দিন থেকেই মহাকর্ষ বল নিয়ে ভাবছিলেন। হাতড়াচ্ছিলেন কীভাবে এই রহস্য সমাধান করা যায়। লিঙ্কনশায়ারের সেই আপেল পড়ার ঘটনা হয়তো নিউটনের ভাবনার জগতে গতি এনে দিয়েছিল। কিন্তু শুধু সেই ঘটনার কারণেই মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার হয়নি এটা সত্যি। কারণ মহাকর্ষ বল নিয়ে নিউটনের আগে অনেক বিজ্ঞানীই ভেবেছেন। যদিও তাঁরা সমাধান বের করতে পারেননি।
মহাকর্ষ বলটা কী? আমরা যে পৃথিবীর ওপর হাঁটছি, ঘুরছি-ফিরছি পৃথিবীর বুক থেকে অনন্ত মহাশূন্যে পড়ে যাচ্ছি না, সেটা মহাকর্ষ বলের কারণেই। আবার ওই যে পড়ে যাবার কথা বললাম, সেটাই বা কেমন? গাছের আপেল মাটিতে কেন পড়ে? কেন কোনো কিছু ওপরে ছুড়ে মারলে তা আবার নিচে ফিরে আসে, মাটিতে আছাড় খায়? এর পেছনে একটাই বল কাজ করছে। মহাকর্ষ বল। অনন্ত মহাবিশ্বে আমরা পড়ছি না, কারণ পৃথিবী তার আকর্ষণ শক্তি দিয়ে আমাদের ধরে রেখেছে। আবা মহাশূন্যে বিশাল বিশাল অঞ্চল ফাঁকা। একদম কিছুই নেই। কী পরিমাণ ফাঁকা সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। ফাঁকা বলে সেখানে মহকর্ষ বলের কারসাজিও কম। তাই সেখানে পড়াপড়ির বিষয়টা কল্পনাও করা যায় না। তাহলে আমরা পৃথিবীর বুক থেক মহাশূন্যে পড়ছি না একই সাথে দুটো কারণে। পৃথিবী তার মহাকর্ষ টানের সাহায্যে আমাদের ধরে রেখেছে। আর মহাশূন্যের ফাঁকা অঞ্চলে আকর্ষণ করার মতো কিছু নেই যে আমারা মহশূন্যে কোনো এক দিকে ঝাঁপ দিলেই সেদিকে ভীমবেগে পড়ে যাব।
নিউটন মহাশূন্য বলটা একেবারে খাতা-কলমে প্রমাণ করেছেন। তাই বলে কি প্রাচীনকালের মানুষ মহাকর্ষ বলের কোনো হদিস জানত না। জানত এক প্রকার। সেটাকে আসলে মহাকর্ষ বললে মশকরা করা হবে। প্রাচীন গ্রিসেই আধুনিক সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয়। গ্রিক পণ্ডিত মনে করতেন বস্তুর মাটিতে পড়ার পেছনে স্বর্গীয় ব্যাপার-স্যাপার জড়িয়ে আছে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয়, সেসব বস্তু ওপরে নিক্ষেপ করলে আবার মাটিতে ফিরে আসবে। যেসব বিষয়গুলো মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারত না, সেখানেই হাজির হতো দেবতা, শয়তান, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি অলৌকিক বিষয়। গ্রিক দার্শনিকদের কাছে বস্তু কেন মাটিতে পড়ে তার ব্যখ্যা ছিল না। তেমনি যেসব বস্তু ওপরে উঠে যায়, তার কারণও তাঁদের জানা ছিল না। আদিম যুগে মানুষ আগুন দেখে ভয় পেত। দিশেহারা হয়ে পড়ত বনের দাবানলে। আগুনের কাছে একদম অসহায় ছিল সেই মানুষগুলো। তাই আগুনকে পুজো করত আদিম যুগের মানুষেরা। অনেক পরে মানুষ আগুনের ব্যবহার শেখে। তখন দেবতার আসন হারায় আগুন। অবশ্য এই আধুনিক যুগেও কোনো কোনো সমাজে আগ্নিপুজো করা হয়ে। তবে তাদের সংখ্যা নগন্য, তারা ব্যতিক্রম।
গ্রিক যুগেও এমন বহু বহু বিষয়কে অলৌকিক মনে করা হত। যেমন আগুন ওপরে উঠে যায় কেন? ওপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প, ধোঁয়া, বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ইত্যাদি। এর ব্যাখ্যা গ্রিক দার্শনিকদের কাছে ছিল না। তাই এগুলোর সাথে স্বর্গের যোগ আছে বলে মনে করতেন। তাই এরা স্বর্গের টানে ওপরে উঠে যায়।
আকাশের জ্যোতিষ্কমণ্ডলি দেখা যায় খোলা চোখেই। কত কত তারা আকাশে। একই তারা নিয়ে একেক দেশে একেক গল্প চালু আছে। তারাদেরও নামও আলাদা। একই তারা কোনো দেশে দয়াময় দেবতা, কোনো দেশে আবার ভয়ঙ্কর দানব। কেন এমন হলো? এর পেছনরে কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। কালপুরুষ যখন আকাশের গায়ে ঝলমল করে তখন হয়তো কোনো দেশে সবুজ ফসলে ভরে ওঠে। আবার একই সময়ে কোনো দেশ হয়তো তলিয়ে যায় বানের জলে, কোনো দেশ হয়তো ভয়ঙ্কর খরায় পুড়ে ছারখার। যে দেশ সবুজ ফসলে ভরে ওঠে, সেই দেশ হয়তো কালপুরুষ দয়াময় দেবতা হিসেবে গণ্য হয়। বন্যা কিংবা খরা কবলিত দেশগুলোতে কালপুরুষকে দেখা হয় ভয়ঙ্কর দানবরূপে। এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠে পৌরণিক কাহিনিগুলো। সেসব কাহিনির নায়ক-নায়িকা, ভিলেন, দানব, রাক্ষস, দেব-দেবী সব চরিত্রগুলোই গড়ে উঠেছে কোনো না কোনো তারাকে ঘিরে। সমাজের সুখ-দুঃথ, হাসি-কান্না, বন্যা, মহামারি জড়িয়ে আছে সেসব কাহিনির আড়ালে। মানুষ নিজে যা করতে পারে না, সেই অসম্ভব কাজগুলো করিয়ে নেই কল্পকাহিনির চরিত্রগুলো দিয়ে। এভাবেই সেসব চরিত্র মিশে যায় মানুষের দৈননন্দিন জীবনে। আর সেই কল্প কাহিনির চরিত্রগুলো খুঁজে নেয় রাতের আকাশে, কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের ভিড় থেকে।

প্রাচীন যুগেই জন্ম পুরাণ কাহিনিগুলো। তখনই সুত্রপাত জ্যোতির্বিদ্যার। মানুষ আকাশের তারা দেখে পথ চিনতে, চাষ-বাসের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে শেখে। সেকালে তাঁরা দেখে কিছু মানুষ ভবিষ্যৎ বলতে পারত। তাদের বলা হত গণক ঠাকুর কিংবা জ্যোতিষ। এর বেশিরভাগ বুজরুকি। তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো ফলে যেত। তবে সেটা মোটেও ভাগ্য গণনা করে নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ বিশ্লেষণ করে কিছু মানুষ পেয়ে যেত আবহাওয়ার আগাম সংবাদ। কৃষিনির্ভর সেই সমাজে আগাম আবহাওয়ার সংবাদ জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নিউটনের মহাকর্ষে

সেকালে গ্রিসে পৃথিবীকে সমতল মনে করত মানুষ। তখন স্বাভাবিকভাবেই উপর-নিচ-এর ধারণাটা ছিল পরম। তখন মনে করা হতো যেসব বস্তু বা প্রাণী স্বর্গীয় তাদের অবস্থান উপরে, স্বর্গপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় তাদের অবস্থান মাটিতে কিংবা পাতালপুরিতে। যেসব বস্তু স্বর্গীয় নয় সেগুলোকে ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে একটা সময় আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। তারপর এক সময় প্রমাণ হলো পৃথিবী সমতল নয়, গোলাকার। তখন উপর-নিচের অগের তত্ত্ব ভেঙে পড়ল। তাই পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে আগের ধারণা আর টিকল না। বস্তু কেন ওপর দিকে ছুঁড়ে মারলে তা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে তার নতুন সমাধান দরকার হয়ে পড়ল।
 টলেমি
তখন অ্যারিস্টোটল জোড়াতালি দিয়ে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন। সেটা হলো,পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। আকাশের সব গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সকল বস্তুর গতি তাই পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে। এজন্য বস্তুকে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলেও তা পৃথিবীতে ফিরে আসে। সে সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অ্যারিস্টোটলের প্রভাব ব্যাপক। সবাই চোখ বুঁজে অ্যারিস্টোটলের থিওরি মেনে নিলেন। পরে খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে টলেমি নামে এক দার্শনিক মহাবিশ্বের একটা মডেল দাঁড় করালেন। সেটা অ্যারিস্টোলের মতের সাথে মিল রেখেই। টলেমির মডেল মহাবিশ্ব বেশ কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর কেন্দ্রে আছে পৃথিবী। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে যথাক্রমে চাঁদ, শুক্র, সূর্য ও মঙ্গল। এর সবাই আছে একই সরল রেখায়। অন্যগহগুলো তখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সেগুলোর স্থান হয়নি টলেমির মডেলে। একবারে বাইরের স্তরে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে আছে আকাশের অন্য তারাগুলো। টলেমির সেই মডেল দেখে এখনকার প্রথম শেণি পড়ুয়া একটা বাচ্চাও হাসবে। কিন্তু সেকালে গোটা পৃথিবীর লোক সেই মডেল মেনে নিয়েছিল।
টলেমির মডেল
ষোড়শ শতাব্দীতে এসে বাঁধল গোল। পোলিশ জৌতির্বিদ নিকোলাস কোপর্নিকাস বললেন, অ্যারিস্টোটলের মতবাদ ভুল। বললেন, সূর্য নয়, বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে একটা বইও লিখলেন কোপার্নিকাস। বইটি ছাপা হলো তাঁর মৃত্যুর আগমুহূর্তে। কিন্তু কোপার্নিকাসের কথা কেউ বিশ্বাস করল না।
টাইকো ব্রাহে ছিলেন প্রাগের সম্রাট দ্বিতীয় রোদলফের গণিতজ্ঞ। সম্রাটের রাজ জ্যোতিষিও। তিনি মহাকাশের তারাদের নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। টাইকোর সহকারী ছিলেন জোহান কেপালার। টাইকোর মৃত্যুর পরে তাঁকেই বসানো হয় স¤্রাটের গণিতজ্ঞ ও প্রধান রাজ জ্যোতিষির পদে। সেকালে রাজ জ্যোতিষির প্রধান কাজই হলো সম্রাটের ভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করা, তারাদের গতিপথ দেখে রাজ্যের ভালোমন্দের আগাম খবর জানানো। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে দেশে এসব রাজ জ্যোতিষিরাই ছিল রাজা-বাদশাহদের প্রধান মন্ত্রণাদাতা। তাঁরা বুজরুকি করে রাজাদের ভুল পথে চালাতেন। প্রজাদের ওপর অবর্ণনীয় নীপিড়ন নেমে আসত এসব রাজ জ্যোতিষিদের বুজুরুকির কারণে।
কেপলার ছিলেন একদম আলাদা। ভবিষ্যৎ গণনায় মোটেও আগ্রহ ছিল না তাঁর। তবুও সম্রাটের অনুরোধে কিছু কিছু গণানা করতেন। তবে তিনি স্বীকার করতেন এসবে কোনো অলৌকিকতা নেই। আবহাওয়ার মেজাজ-মর্জি বুঝেই করতেন কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী। রাজাকে বলতেন এরজন্য জ্যোতিষ হওয়ার দরকার নেই। একটু জ্ঞান থাকলে যে কেউই এ কাজ করতে পারে। রাজা রোদলফও কেপলারকে পীড়াপিড়ি করতেন না। কেপলার তাঁর শিক্ষক ছিলেন। যথেষ্ঠ সম্মান করতেন তিনি কেপলারকে। কেপলার কোপার্নিকাসের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। সেটা ক্যাথোলিক ধর্মমতের বিরোধি। তবু রাজা রোদালফ তাঁকে বাঁধা দেননি গবেষণায়। রোদলফ অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না। রাজ গণিতজ্ঞের পদে বসিয়ে কেপলারকে তিনি জ্ঞানচর্চার প্রসারেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কেপলারের স্বাধীনতা ছিল, তিনি জ্যোর্তিবদ্যার চর্চা করতেন। গ্রহ-নক্ষত্রদের চলার পথ নিয়েও করেছিলেন গবেষণা। কিন্তু তাঁর হাতে ভালো কোনো টেলিস্কোপ ছিল না।
সেই সময় ইতালিতে গ্যালিলিওর ব্যাপক নামডাক। নানা রকম যন্ত্রপাতি তৈরি করে তিনি সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল টেলিস্কোপ। এর আগেও টেলিস্কোপ ছিল না তা নয়। তবে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপের ধারেকাছেও ছিল না আর কারও টেলিস্কোপ। গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আকাশ দেখেন। তারপর ঘোষণা করেন কোপার্নিকাসই ঠিক। কেপলারের মতো অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না গ্যালিলিও। প্রাগের সম্রাটের মতো রোমান সম্রাট অতটা মহানুভব ছিলেন না। তাছাড়া রোমের ভেতরেই তো পোপোর ভ্যাটিকান। তাঁদের কথাই ইতালি তথা ইউরোপে দৈব বাণী। ভ্যাটিক্যানের বিরোধিতা করে এমন বুকের পাটা ইতালিতে কারও ছিল না। খ্রিস্টান ধর্ম আসলে অ্যারিস্টোটলের মতের বাইরে যেতে পারেনি। এজন্য তাঁকে অবর্নণীয় নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। এরপর কেপলার দেখালেন কীভাবে, কোন পথে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে। তিনি গ্রহগুলোর চলার পথের জন্য গাণিতিক সূত্রও আবিষ্কার করলেন।
কেনই বা সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলো ঘুরছে। কেন ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে না অনন্ত মহাকাশের দিকে? এ প্রশ্নের সমাধান তিনি দিতে পারলেন না। সমাধান এলো সপ্তদশ শতাব্দীতে। নিউটনের হাত ধরে।

নিউটন দেখালেন, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী এমনি এমনি ঘোরে না। এদের ভেতরে এক ধরনের অদৃশ্য আকর্ষণ বল আছে। সেই আকর্ষণ বলের নাম মধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বল শুধু সূর্য আর গ্রহগুলোর মধ্যেই নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুর ভেতর ক্রিয়া করে।
নিউটন মহাকর্ষ বলের জন্য একটা সূত্র দিলেন। সেটা হলো, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের মান তত বেশি হবে যত বস্তুদুটোর ভর বেশি হবে। যেকোনো একটার ভর বাড়লেও মহাকর্ষ বলের মান বাড়ে। কিন্তু বস্তু দুটোর মধ্যে দূত্ব যত বাড়ে তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় টান তত কমে। এই কমা আবার সহজ-সরল ভাবে কমা নয়, বর্গাকারে। অর্থাৎ দূরত্ব যদি বেড়ে দ্বিগুণ হয় তবে মহকর্ষ বলের মান কমে আগের মানের এক চতুর্থাংশে নেমে আসবে।
পৃথিবীতে আমরা হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছি, কোনও বস্তু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ছিটকে মূহশূন্যে চলে যাচ্ছ না, এর কারণও ওই মহাকর্ষ বল। নিউটন দেখালেন মহাকর্ষ বল শুধু আকর্ষণই করে, বিকর্ষণ করে না কখনও।
ভারী বস্তুর মহাকর্ষীয় প্রভাব কতদূর পর্যন্ত কাজ করে?
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলে এর প্রভাব অসীম পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু এটাও ঠিক এই বল খুবই দুর্বল। মহাবিশ্বে, পৃথিবীতে মহাকর্ষ বল ছাড়াও আরও তিন রকম বলের হদিস বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল আর দুর্বল নিউক্লিয় বল।
মহাকর্ষ বল কতটা দুর্বল তার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। শুকনো তেলহীন মাথার চুলে একটা চিরুনি ঘষুন। আর মাটিতে ছড়িয়ে দিন কিছু কাগজের টুকরো। এবার ঘষা চিরুনিটা নিয়ে যান কাগজের টুকরোগুলোর কাছাকাছি। চিরুনি কাগজের টুকরোগুলোর কাছে পৌঁছনোর আগেই সেগুলো লাফ দিয়ে উয়ে আসবে চিরুনির গায়ে। এটা কেন হলো? চিরুনি মাথার চুলে ঘষা হয়েছিল। তাই ওতে তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎচ্চুম্বকীয় বলের একটা ক্ষেত্র। সেই বিদ্যুৎচুম্বক ক্ষেত্রই আকর্ষণ করেছে কাগজের টুকরোগুলোকে। কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছিল পৃথিবী তার সমস্ত মহাকর্ষ বল দিয়ে, সমস্ত ভর ভর ব্যবহার করে- নিউটনের সূত্র আমাদের তা-ই শেখায়। অন্যদিকে চিরুনিতে তৈরি হয়েছে খুব সামান্য বিদ্যুৎশক্তি। এইটুকুন বিদ্যুৎচ্চম্বকীয় শক্তির কাছে হার মেনেছে গোটা পৃথিবীরর মহাকর্ষ বল। সামান্য বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল পৃথিবীর বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কাগজের টুকরোগুলোকে মহাকর্ষীয় বলকে কাঁচকলা দেখিয়ে।
চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরো তোলা হলো। তারমানে এই নয়, টুকুরোগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবমুক্ত হলো। চিরুনি, আপনি, কাগজ-সবই তো পৃথিবীর মহাকর্ষেও ক্ষেত্রের মধ্যেই রয়েছে। পৃথিবীর আকর্ষণ বল সবার ওপরই কাজ করছে। পৃথিবীর মহাকর্ষক্ষেত্রের ভেতর দাঁড়িয়ে অনেক হম্বিতম্বি করা যায়। পৃথিবীর কথাই ধরা যাক। এর মহাকর্ষ বলের সীমা অসীম। কিন্তু বস্তুকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে হলে সেই বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের থাকতে হবে। এই দূরত্বের বাইরের বস্তুকে পৃথিবী তাঁর নিজের বুকে টেনে নিতে পারবে না। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সেই দূরত্ব পর্যন্ত পৃথিবীর চারপাশের এলাকাকে মহাকর্ষ ক্ষেত্র বলে।
বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে তাঁর মহাকর্ষ ক্ষেত্র কত দূর পর্যন্তর বিস্তার করে থাকবে। যেমন সূর্যের এই মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সীমা পৃথিবী থেকে অনেক বেশি। আবার বুধ গ্রহের মহাকর্ষ সীমা পৃথিবীর থেকে অনেক কম।
আবার আরেকটা কথাও সত্যি। এই মহকর্ষ ক্ষেত্রের ভেতর থেকে কোনো হালকা বা গতিশীল বস্তুও বেরিয়ে যেতে পারে না। যেমন পারে না বায়ুমণ্ডলও।
বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় পদার্থগুলো পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। কারণ, গ্যাসের প্রতিটা পরমাণুকে পৃথিবী মহাকর্ষ বল দ্বারা নিজের দিকে টানছে। অনেকে হয়তো পালটা যুক্তি দেখাবেন। বলবেন, মহাকর্ষ বলই যদি গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণু বা অণুগুলোকে আকর্ষণ করে রাখে তবে তাদের কেন এত ওপরে ওঠার প্রবণতা?
একটা কথা বোধহয় কারো অজনা নয়, কঠিন পদার্থের ভেতর অণু-পরামণুগুলো বেশ শক্তিশালী রাসায়নিক বন্ধনের কারণে গায়ে গায়ে লেগে থাকে।  এদের অণু-পরমাণুগুলো তাই মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না। নিতান্ত ভঙ্গুর না হলে একটা হালকা কঠিন পদার্থের ওপর তুলানামুলক ভারী কোনো কঠিন পদার্থ রাখলেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু তরল পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো অনেকটা মুক্তভাবে থাকে। অনেকগুলো তরল পদার্থ একটা পাত্রে যখন রাখা হবে, তখন একটা হিসাব নিশ্চিতভাবে এসে যাবে- কে ওপরে থাকবে আর কে নিচে থাকবে। এখানেও এদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় মহাকর্ষ বল। যে তরলের ঘণত্ব বেশি তার ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব বেশি থাকবে। তাই তুলনামূলক ভারী তরলটা মাহাকর্ষ টানের ফলে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকতে চাইবে। অন্যদিকে হালকা তরলের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব তুলনামূলক কম হওয়ায় সে ভারী তরলকে নিচের দিকে জায়গা ছেড়ে দেবে। আর নিজে উঠে যাবে ওপরে। এক বালতি পানির ভেতর কিছু মধু ঢেলে দেখলেই এ ব্যাপারটার সত্যতা মিলবে।
ঠিক ওপরের মতোই ঘটনা ঘটে গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থে। গ্যাসীয় পদার্থের অণু-পরমাণুগুলো বলতে গেলে প্রায় মুক্তভাবে থাকে। সুতরাং এদের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাবও থাকে অনে কম। তবুও তো থাকে। আমাদের গোটা বায়ুমণ্ডলটাকে বলা যায় গ্যাসীয় পদার্থের সমুদ্র। সব গ্যাসের ঘনত্ব যেমন সমান নয়, তেমনি সব গ্যাসের পরমাণু সমান ভারী নয়। স্বাভাবিকভাবেই ভারী ও বেশি ঘনত্বের গ্যাসগুলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে। হালকা গ্যাসগুলো উঠে যায় ওপরের দিকে।
এখানে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে, বায়ুমণ্ডলের স্তর যেখানে শেষ, অন্যবস্তুকে নিজের বুকে টেনে আনার ক্ষমতার সীমাও কি সেখানে শেষ ?
না, সেখানে নয়। আমাদের পৃথিবীতে মোট যে গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ তা দিয়ে মহাকর্ষ সীমার পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বায়ুমণ্ডলীয় সীমার বাইরেও মহাকর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে। বায়ুর ছড়িয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্যের কথা ভাবলে এই প্রশ্নটা মাথায় এসে যেতে পারে। এ কথা ঠিক, গ্যাসের পরিমাণ যাই হোক, তাকে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তার সবটুকু আয়তন ওই গ্যাস দখল করে। কিন্তু মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে এমন গ্যাস পাত্র হিসেবে ধরলে চলবে না, কারণ গ্যাস পুরো ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যেতে চাইলেও মহাকর্ষ বলের টান তা হতে দেয় না।
চাইলেই কি মহাকর্ষ অগ্রাহ্য করা যায়?
অনেক পুরোনো প্রশ্ন। চাইলেই সব কিছু সম্ভব। তবে এজন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। নিউটনের মহাকর্ষ ক্ষেত্রের সাতে বস্তুর গতি জড়িয়ে। একমাত্র গতিই পারে বস্তুকে মহাকর্ষক্ষেত্রকে উপেক্ষা করে বস্তু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে। সেটা কীরকম গতি? এর ব্যাখ্যায় নিউটন টেনেছিলেন একটা কামানের উদাহরণ। তাঁর প্রিন্স্রিপিয়া অব ম্যাথমেটিকা বইটির ৩ নং ভলিউমের ৬ নং পৃষ্ঠায় ছিল বিস্তারতি ব্যাখ্য। সাথে একটা ছবিও ছিল। সেই ছবিটাই এখানে দেওয়া হলো।

ধরাযাক, খুব উঁচু একটা পাহাড়। সেই পাহাড়ের ওপর একটা কামান রাখা হলো। কামান থেকে একটা গোলাটা কিছুদূর গিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। নিউটনের প্রথম সূত্র বলে, বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ নাক করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির। আর গতিশীল বস্তু সুষম বেগে চলতে থাকবে অনন্তকাল। নিউটনের এই সূত্রটা কাজ করে যেখানে বাহ্যিক বলের প্রভাব নেই, শুধু সেখানেই। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে মহাকর্ষ বলের প্রভাব রয়েছে। তাই পাহাড় থেকে ছোড়া কামানের গোলা কামান থেকে সোজা পথে চলতে পারবে না একটানা। পৃথিবরে আকর্ষণে গোলার অভিমূখ ক্রমেই নিচের দিকে বেঁকে যাবে। এবং বাঁকানো পথে মাটিতে আঘাত করবে। এতো প্রথমবার ।
এবার কামানের শক্তি একটু বাড়িয়ে দিন। সেই শক্তি গোলার ওপর বাড়তি বল প্রয়োগ করবে। ফলে গোলাটার গতি প্রথমবারের চেয়ে বেশি হবে। তাই আগের বারের একটু বেশিদূর যেতে পারবে গোলাটি। অর্থাৎ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রথমবারের তুলনায় বেশিক্ষণ লড়তে পেরেছে দ্বিতীয় গোলাটি। এভাবে আরেকটি বেশি গতি বাড়ালে গোলা আরো বেশি দূর যেতে পারবে। পর্যায়ক্রমে কামানের শক্তি যদি বাড়তেই থাকে, ফলে যদি গোলার ওপর ধ্বাক্কা বলও পর্যায়ক্রমে বাড়ে, তাহলে প্রতিবারই একটু একটু বেশি দূরত্বে গিয়ে পড়বে কামানের গোলা।
পৃথিবী গোলককার। কামানের গোলায় বাঁকানো পথে গিয়ে পড়ছে মাটিতে। ধরা যাক, কামানের শক্তি এতটাই বাড়ানো হলো কামানটি পেরিয়ে গেল হাজার কিলোমিটার। হ্যাঁ, এটা ঠিক কামানের গোলার অত শক্তি নেই। তবে এ যুগের মিসাইলগুলো কিন্তু অতদূর যেতে পারে। নিউটনের পরক্ষীটা ছিল পুরোটাই কাল্পনিক। কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে তা অসম্ভব নয়। তাই আমরাও কামানের গোলা দিয়েই পরীক্ষাটাকে আরেকটু এগিয়ে নিই।
ধরা যাক, এবার আরও বেশি ভল প্রয়োগ করে কামানের গোলাটা ছোড়া হলো। এবার সে গিয়ে পড়ল ২০৫০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীর পরীধির অর্ধেক পথ সে পাড়ি দিয়ে ফেলল বাঁকানো পথে। এবার ধাক্কা বল দ্বিগুন করে ফেলি। তাহলে গোলাটা নিশ্চয়ই আর দ্বিগুন দূরে গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ কামান থেকে ৪১ হাজার কিলোমিটিার পথ দূরে গিয়ে পড়বে। কিন্তু পৃথিবী গোল। সর্বোচ্চ পরিধি ৪০০৭৫ কিলোমিটার। সূতরাং কামানের গোলাটা এবার বাঁকানো গোলাকার পথে গোটা পৃথিবীকেই পদক্ষিণ করে ফেলবে।
কিন্তু কামান দাঁড়িয়ে আছে তার চলার পথে। গোলাটা পুরো পৃথিবী ঘুরে কামানের পেছনে এসে ধাক্কা মারবে। পৃথিবী ঘুরে আসতে লাগবে অনেক সময়। ততক্ষণে যদি আমরা কামানটাকে সরিয়ে নিই পাহাড় থেকে, তাহলে কি হবে?
সাদা চোখে দেখলে মনে হবে, কামানের সামনের দিক থেকে ছোড়া গোলা পুরো পৃথিবী ঘুরে এসে কামানের পেছন বারাবর আসতে ৪০০৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু গোলার ওপর যে বল প্রয়োগ করা হয়েছে তাতে কামান সেই পাহাড় পেরিয়ে আরও ৯২৫ কিলোমিটার সামনে এগিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ার কথা। কিন্তু কামানের গোলো সেখানেও পড়বে না।  নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র মেনে ঘুরতেই থাকবে বার বার। ঠিক যেভাবে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। তেমনিভাবে কামানের গোলাটিরও একটি কক্ষপথ তৈরি হবে পৃথিবীর চারপাশে। অবিরাম সে ঘুরতেই থাকবে, যদি বাতাসের বাধা না থাকে।
বাতাসের বাঁধা নেই। কিন্তু মহাকর্ষের প্রভাব আছে। তাই কামানের গোলাটা ভূপৃষ্ঠে পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে গোলার গতিশক্তি। আসলে তখন গোলাটার গতিশক্তির কারণে একটা একটা বল তৈরি হচ্ছে। সেই বলটা চাইছে গোলাটাকে পৃথিবীর আকর্ষণ কাটিয়ে একটা সোজা পথে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পৃতিবীর মহাকর্ষ বল। মহকর্ষ বল গোলটাকে টেনে পৃথিবীতে নামাতে চাইছে। সেটাতে সে আগে সফলও হয়েছে, নামাতে পেরেছে কামানের গোলাকে। তখন অবশ্য গোলার গতিশক্তি কম ছিল। কিন্তু এখন আর গোলার গতিশক্তি মহাকর্ষীয় বলকে ছেড়ে কথা কইবে না। শুরু হবে দুই বলের লড়াই। এ লড়াইয়ে দুই বলের শক্তিই সমান। তাই কেউ কাউকে হারাতে পারবে না। কামানের গোলা গতিশক্তি নিয়ে সোজা চলতে চায়, পৃথিবীর মহাকর্ষ তাকে সেই চলায় বাধা দেয়। যেহেতু দুটোরই শক্তি সমান, তাই গোলাও মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে না। আবার মহাকর্ষ বলও গোলাকে টেনে মাটিতে নামাতে পারে না। তখন গোলাটা পৃথিবীর কক্ষপথে অবিরাম ঘুরবে।
ধীরে ধীরে কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। মহাকর্ষ বল অজেয় নয়। যত বেশি বলে কামান গোলা ছুড়ছে, গোলার গতি তত বাড়ছে, পৃথিবীর মহাকর্ষ বলকে তত বেশি পরাস্ত করে গোলা দূরে সরে যেতে পারছে। তারপর গোলা যখন একটা নির্দিষ্ট গতি লাভ করছে তখন মহাকর্ষ আর গোলার শক্তি সমান হচ্ছে।
কিন্তু এমন কি হতে পারে না, এই যুদ্ধে গোলা জিতে যাবে!
নিশ্চয়ই পারে। পাঠকদের বুঝতে বাকি নেই, সেটা পারে একমাত্র গতি বাড়িয়েই। হ্যাঁ, গোলার গতি একটা সময় এমন হতে পারে যখন পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের আর সাধ্য নেই গোলাকে আটকে রাখে। তখন গোলাটা সোজা সেই গতিতে ছিটকে চলে যাবে মহাশূন্যের গহীনে।
নূন্যতম যে বেগে চললে গোলাটা মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে, সেটাই হলো পৃথিবীর মুক্তিবেগ। গোলার বেগ যদি সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার হয়, তাহলে সেটা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু কামানের সাধ্য নেই অত বেগে গোলা ছোড়ার। নিউটনের সময় কামানই ছিল গোলা নিক্ষেপের মোক্ষম হাতিয়ার। এরচেয়ে ভালো নিক্ষেপক আর ছিল না। কিন্তু মানুষ থেমে থাকে না, বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তিকেও এগিয়ে নেয় সমান তালে। বিংশ শতাব্দীতেই রকেট এসেছে। এই রকেটের কতই না ব্যবহার। যুদ্ধক্ষেত্রে ছোট্ট গোলা ছুঁড়তে কিংবা দূরদেশে মিসাইল দিয়ে আঘাত হানতে যেমন রকেট করিৎকর্মা, মহাশূন্যযানগুলো পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রকেটের সাহায্যে। মানুষ যেদিন চাঁদে মহাকাশযান পাঠালো, সেদিনই নিউটনের সেই কামানগোলা পরীক্ষার সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া গেল। পৃথিবীর মুক্তবেগের চেয়ে বেশি বেগে রকেট উৎক্ষেণ করা হলো। সেই রকেট মহাকাশযানকে বয়ে নিয়ে গেল পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তিকে হারিয়ে দিয়ে।
মুক্তিবেগের ব্যাপার-স্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বস্তুর ভরের। যে বস্তুর ভর যত বেশি তার মুক্তি বেগও ততবেশি। সূর্যের কথাই ধরা যাক, সূর্যের মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ৬১৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ পৃথিবীখে যদি সূর্যের আকর্ষণ বল কাটিয়ে মহাশূন্যে ছিটকে যেতে হয়, তাহলে এর বেগ হতে ৬১৭ কিলোমিটারের বেশি।
ব্ল্যাকহোলের ব্যাখ্যায় নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বেশি কাজের নয়। তবু মুক্তিবেগটা দরকার হবে। তাই এটাকে ভালো করে মনে রাখুন। সময়মতো মুক্তিবেগের ক্যারিশমা জানাব।

পরের পর্ব>>

Posted at July 15, 2020 |  by Arya ঋষি

বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানী মহলের সব চেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ঈশ্বর কনা(GOD particle) তথা হিগস বোসন (higgs boson) কণা । আমরা মাঝে মধ্যেই এই হিগস বা বোসন কনার কথা TV বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি যে , কোন এক বিজ্ঞানী গোষ্ঠী হিগস বোসন এর সন্ধান পেয়েছেন তো অন্য কোন গোষ্টী এইটার খুব কাছে ।কিন্তু কি এই হিগস বোসন ? কেনই বা বিজ্ঞানীদের এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথা? এবার এটা সম্পর্কে কিছু জানা যাক 

আমরা জানি স্পিনের ভিত্তিতে মৌলিক কণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
-বোসন(স্পিন সংখ্যা পূর্ণ সাংখ্যিক)
-ফার্মিয়ন(স্পিন সংখ্যা ১/২ এর গুনিতক)

বোসন কণা কি টা জানেন তো? যে সব অতিপারমানবিক কণারা বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন মেনে চলে তাদের বোসন কণা বলা হয় । তবে এই বোসনের বোস শব্দ এসেছে একজন বাঙালী বিজ্ঞানীর নাম হতে । আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু হচ্ছেন সেই মহান বিজ্ঞানী যার নামানুসারেই এই কণাদের নাম বোসন বলা হয় । সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯২১ সালের মে মাসের কোন এক সময় ঢাকায় আসেন এবং একই বছরের জুনের ১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রীডার পদে যোগদান করেন । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্ক যে সমীকরণ দিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কিন্তু এই তত্ত্বের মধ্যে একটি ত্রুটি ছিল । আর এই ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আইনস্টাইন ,পল ডিরাক এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের আর বড় বড় বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কোন একটি কক্ষে বসে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক থাকা অবস্থায় এই ত্রুটির সমাধান করে বসেন মেধাবি সত্যেন্দ্রনাথ বসু ।

ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্কের সমীকরণের জন্য প্রয়োজন ছিল কোয়ান্টাম অবস্থার তাপবলবিদ্যাগত সম্ভাবনা(Probability ) নির্ধারণ করা । আর এই কাজটি সমাহারতত্ত্ব ব্যবহার করে সত্যেন্দ্রনাথ বসু করেছিলেন । বসু তাঁর এই কাজের প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের কাছে পাঠান , আইনস্টাইন এ প্রবন্ধের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং তা নিজেই জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সাইট Zeitschrift für Physik পত্রিকায় ১৯২৪ সালে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন । অধ্যাপক বসুকে তাই কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয় । তাঁর এই অবদানের জন্য কণাদের নাম দেয়া হয়েছে বোসন কণা ।বোসন কণারা আবার প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের –
ক) মৌলিক বোসন কণা এবং
খ ) যৌগিক বোসন কণা বা মেসন ।

বোসন কণারা হচ্ছে যৌগিক তবে প্রমিত মডেল বা Standard Model অনুযায়ী মৌলিক বোসন কণা হচ্ছে ৫ ধরনের –
- ৩ ধরনের গেজ বোসন (Gauge Bosons)
- ১ টি হিগস্ বোসন (Higgs Boson)
- ১ টি গ্রাভিটন (Graviton)

আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হল হিগস-বোসন। এই কণার হিগস নামকরন করা হয়েছে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিগস বোসনের এর নাম অনুসারে । তবে এটা নিয়া আলোচনা করতে গেলে যে দুটি বিষয় মাথায় আসে তার একটি সার্ণ(CERN-European Organization for Nuclear Research) এর LHC(LARGE HADRON COLLIDER) ।সার্ন এর LHC সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ,লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার হল পৃথিবীর বৃহত্তম কণা ত্বরক বা কনা পিষণকারী যন্ত্র ! এটি পৃথিবীর যন্ত্রও বটে ! এটি ভুঅভ্যন্তরে অবস্থিত ২৭ কিলোমিটারের একটি রিং আকৃতির যন্ত্র । এটিকে একটি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার দ্বারা কন্ট্রোল করা হয় ! ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটনসমৃদ্ধ বিপরীত গামী রশ্মির কনাগুলো প্রায় আলোর গতিতে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে নিযুক্ত হয় ! এর অভ্যন্তর ভাগ একদম বায়ুশূন্য এবং তাপমাত্রা -২৭১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা , মহাশূন্যের তাপমাত্রার চাইতেও কম ! তবে এর রশ্মি নির্গমনকারী দুই টিউবের চারেপাশে তরল হিলিয়ামের প্রবাহ থাকে যা এর চৌম্বকক্ষেত্রসহ পুরো ব্যবস্থাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে !

বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী পিটার হিগস এর নামানুসারে এর নামকরন করা হয়। এটা এমন একটা উপাদান যার সাহায্যে ভরের উৎপত্তি জানা যাবে। ধারনা করা হয়ে থাকে বিগ ব্যাং এর সাথে সাথে কিছু কনার উৎপত্তি ঘটেছিল যারা ছিল ভরবিহীন। কিন্তু পরবর্তীতে এরা ভর লাভ করে।আপনি নিশ্চয় হাসছেন, এ আবার কোন পাগলের প্রলাপ। ভর কি হুদায় উইড়া আসে নি? প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে আলোচনায় আমরা জেনেছিলাম যে কোয়ার্কদের আপেক্ষিক গতিবেগের জন্য নিউট্রন, প্রোটনের ভরের সৃষ্টি হয় । আর মহাবিশ্বের সুচনালগ্নের এই ভরহিন কণার জন্য হিগস ফিল্ড নামক আরেকটা তত্ত্ব আছে। এর নাম করন করা হয় হিগস ফিল্ড নামে । অর্থাৎ কনাগুলো যখন এই হিগস ফিল্ডের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে তখন এরা ভর লাভ করবে।

এলএইচসি তে দুটি প্রোটন কনার সংঘর্ষের ফলে কিছু কনার সৃষ্টি হয় যার একটার ভর অনেকটা হিগসের তাত্ত্বিক কনার কাছাকাছি, যা হিগস কনা নামে পরিচিত।LHC এর টিউবের ভিতর কনারা আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তবে কণাদের এমন ১ বিলিয়ন সংঘর্ষে মাত্র ১ বারই হিগস বোসন কণা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।হিগস বোসন কণা উৎপাদনের চারটি প্রক্রিয়া আছে।
-হিগস স্ট্রালং
-গ্লুউন ফিউশন
-উইক বোসন ফিউশন
-টপ ফিউশন

সংক্ষেপে, হিগস বোসন হচ্ছে এমন একটা অনুমিত বা প্রেডিক্টেড কনা, যার ভর স্টান্ডার্ড এলিমেন্টে আগে থেকেই অনুমিত ছিলো এবং যা হিগস ফিল্ডের বোসন কনা নামে পরিচিত ।এই মৌলিক কনা গুলো অশূন্য হিগস ফিল্ডের সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করে থাকে। ফোটন ও সেই জাতীয় শক্তি আদানপ্রদানকারী গেজ কণার সাথে যুক্ত হয়ে এটি W+ W-, Z0 নামে ভারী মেসন তৈরী করে যেগুলি সবই ফোটন বা হিগস কণার মত বোসন। এটা সালাম, ওয়াইনবার্গ, গ্ল্যাশোর স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস কণা ও হিগসের প্রতিসাম্য ভঙ্গ ব্যবহারের ফল।ইলেক্ট্রন, নিউট্রিনো, কোয়ার্ক এসব কণার সাথে যুক্ত হয়েও হিগস কণা তাদের ভর দেয়।

আরেক ভাবে বলা যায় হিগস বোসন কনা হচ্ছে এমন একটা কনা যেটা এতোদিনের অসম্পূর্ণ স্টান্ডার্ড এলিমেন্টাল ফিজিক্সের তত্ত্ব কে সম্পূর্ন করে।


হিগস ফিল্ড কি?
এক ধরণের ফিল্ডের মধ্য দিয়ে চলার সময় মৌলিক কণাগুলো ঐ ফিল্ডের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় সংঘর্ষ বা ইন্টার‍্যাকশন করছে, আর সেই ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রাই বলে দিচ্ছে যে সেই কণার ভর কত হবে।বিগ ব্যাংয়ের পরে যখন মহাবিশ্ব কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে তখন হিগস ফিল্ড তৈরী হয়। আর হিগস ফিল্ড তৈরী হবার আগে সমস্ত কণাই ছিল ভরহীন। এই হিগস ফিল্ড তৈরী হলে – ফিল্ডের সাথে ভরহীন কণাগুলো নানাভাবে ইন্টার‍্যাকশন করতে থাকে ও কণাগুলো ভরযুক্ত হতে থাকে। ভরযুক্ত হবাব সাথে সাথে আবার কণাগুলোর বেগও কমে আসে। হিগস ফিল্ডের সাথে ইন্ট্যারেকশণের মাত্রাই বলে দেয় কণার ভর কতো হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নিউট্রিনোগুলোর ভর খুব কম, কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এদের ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা কম। অন্যদিকে, ইলেক্ট্রন কিংবা কোয়ার্ক, নিউট্রিনোর তূলনায় বেশী ভারী – কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এই কণাগুলোর ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা নিউট্রিনোর চাইতে বেশী।
হিগস ফিল্ড এমন একটা তাত্ত্বিক ক্ষেত্র যা অদৃশ্যমান এবং চুম্বক শক্তি এর মতো । এটা মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে । মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে মৌলিক কনা ছড়িয়ে থাকুক না কেনো, এর মধ্যে দিয়ে পাস করলে , সে তখন বাকী কনাগুলোকে ডেকে আনবে , একটা আরেকটার সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করবে। ফোটন এখানে বাহক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং বলা যায় পার্টিকেল গুলোর কোন অস্তিত্বই ছিলোনা কিন্তু যখন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় তখন তা ভর লাভ করে।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী লিউ লেডারম্যান হচ্ছেন একজন আজ্ঞেয়বাদী(যিনি ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে সন্ধিহান,কখনো বলেন না যে ঈশ্বর নেই আবার অস্বীকারও করেন না) পদার্থবিদ। তিনি ই সর্বপ্রথম এর নাম দেন গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কনা। কিন্তু বিজ্ঞানী হিগস এর বিরোধিতা করে বলেন তিনি নিজেই ঈশ্বরে বিশাসী না, তাছাড়া এই কনার আবিষ্কারের জন্য তার অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন goddam particle। কিন্তু প্রকাশক বইতে এ নামটা পরিবর্তন করে গডস পার্টিক্যাল করে দেন।... আর তখন থেকেই তা গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কণা নামে পরিচিত হওয়া শুরু করে ! আজ আমাদের পাশের গ্রামে এক হুজুর এই ঈশ্বর কণা নিয়ে ওয়াজে বয়ান দিয়ে বলছিলেন , "নাউজুবিল্লাহ, জাহান্নামি নাস্তিকেরা নাকি ইসরাইলের ষড়যন্ত্রে ঈমান ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বর কণা বের করেছে । " কথা গুলো শোনার পরে আমার বাবা ঈমান হারানোর বিচলিত হয়ে এই কথাগুলো আমাকে বলছিলেন । যাই হোক ধর্ম নিয়ে টানব না ... আমার অনেক বন্ধুও এই ঈশ্বর কণা নিয়ে চিন্তিত । তাই বলছি ঈশ্বর কণা কেবল পদার্থবিজ্ঞানের একটি টার্ম । 
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস অণু আবিষ্কার করার পর মনে করলেন এই অণুকে আর ভাঙ্গা যায় না এবং অণুই হচ্ছে পরম ক্ষুদ্র কণা। কিন্তু এখন আমরা জানি যে অণু কোন পরম ক্ষুদ্র কণা নয় এবং কোন মৌলিক কণা ও নয়। আমাদের এই মহাবিশ্বের সব কণাকে একটি মৌলিক কাঠামোতে বিভক্ত করা যায়। যে তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা ভাগ করতে পারি তাকে The Standard Model of Particle Physics বলে। এই তথ্য অনুসারে মহাবিশ্বের ব্যারিওনিক ম্যাটার অর্থ্যাত যাদের প্রোটন এবং নিউট্রন রয়েছে কিন্তু ইলেকট্রন বা নিউট্রিনো নেই, তাদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফার্মিওন যেখানে কণাগুলোর ভর আছে এবং ইলেকট্রিক চার্জ আছে। অন্যদিকে, আরেকটি ভাগ হল বোসন যেখানে কণাগুলো প্রকৃতির বল ধারণ করে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে আরেকটি অভিনব কণার সন্ধান মিলতে পারে বলে 1960 সাল থেকে আশাবাদী ছিলেন পদার্থবিদেরা। অবশেষে 4 জুলাই, 2012 সালে CERN এ অবস্থিত Large Hadron Collider(LHC) দিয়ে সেই অভিনব কণার সন্ধান মেলে। বিজ্ঞানী পীটার হিগস এবং আমাদের বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বোস এর নামানুসারে এই নতুন কণার নাম দেওয়া হয় হিগস-বোসন কণা। এই হিগস-বোসন এর চিহ্ন  হলো H0।
 এই হিগস-বোসন মহাবিশ্বের একটি অনেক বড় রহস্য ছিল একসময়। তবে আমরা এখন এই হিগস-বোসন এর ব্যাপারে অল্প কিছু হলেও জেনেছি। হিগস হল একটি বোসন কণা এবং একটি মৌলিক কণা।  প্রথমে ধারণা করা হয় যে এই কণার ভর আণবিক নিউক্লিয়াস এর এক হাজার ভাগের এক ভাগ। তবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ  করে দেখা যায় যে এই কণার ভর হলো 125 Gev যেটি প্রোটনের ভর এর চেয়ে 130 গুন বেশি। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো হিগস-বোসন এর কোন প্রকার স্পিন নেই, ইলেকট্রিক চার্জ নেই এবং কোন সাধারন বলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে না। অন্যদিকে, কোন সব বোসন কণার যেমন ক্ষেত্র আছে: যেমন ফোটন এর রয়েছে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তেমনি হিগস-বোরন এরও আছে হিগস ফিল্ড। ধারণা করা হচ্ছে যে এই মহাবিশ্বের যেকোনো কিছুর ভর আছে এই হিগস ফীল্ড এর জন্য। কোন বস্তু জড়তায় থাকতে পারে এই হিগস ফীল্ড এর কারণেই। যে বস্তুর যত ভর বেশি রয়েছে সেই বস্তু হিগস ফীল্ড এর সাথে ততবেশি মিথস্ক্রিয়া করে। অন্যদিকে, হিগস-বোসন শুধু বেশি ভর বস্তু দের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বলে ফোটন আলোর গতিতে ছুটতে পারে অর্থাৎ এই হিগস ফীল্ড এর কারণে সব বস্তু আলোর গতিতে ছুটতে পারে না।
এই হিগস-বোসন আবার অনেক আনস্টেবল। এর জীবনকাল সময় মাত্র 1.56*10^-22 সেকেন্ড এবং এই সময়ের পরে হিগস কণা রূপান্তরিত হয় Bottom-Antibottom pair, দুটি w-বোসন, দুটি Gluon, Tau-Tntitau Pair, দুটি z-বোসন এবং দুটি   ফোটন এ। মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার 10^-12 সেকেন্ড পরেই এই হিগস ফীল্ড তৈরি হয়।
বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যায় যে এই হিগস কণার ভর একটি ক্রিটিকাল মাত্রায় আছে। হিগস কণার ভর যদি এই মাত্রার থেকে আর একটু বেশি হয় তবে পুরো মহাবিশ্ব কলাপ্স করতে পারে একটি বিন্দুতে। হিগস এর এই ভরের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে বলা হয় Phase Transition। তবে এই কোলাপস আর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মিলে মহাবিশ্বের কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন যে Dark Matter এর সাথে এই হিগস কণার সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে আমাদের জানার এখনো অনেক কিছু বাকি। হয়তো এই হিগস-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে পারলে আমরা মহাবিশ্বের সকল রহস্যের সমাধান খুঁজে পাব, না হয় Quantum Theory of Gravity পাবো। তাই আমাদের এখন এই Hìggs-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
Source1-https://atlas.cern/updates/atlas-feature/higgs-বোসন
source2-https://phys.org/news/2013-12-collapse-universe-closer.html

তথ্যঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Higgs_boson
https://en.wikipedia.org/wiki/Photon
https://en.wikipedia.org/wiki/Electromagnetism
https://home.cern/topics/large-hadron-collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Large_Hadron_Collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Satyendra_Nath_Bose

হিগস বোসন

বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানী মহলের সব চেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ঈশ্বর কনা(GOD particle) তথা হিগস বোসন (higgs boson) কণা । আমরা মাঝে মধ্যেই এই হিগস বা বোসন কনার কথা TV বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি যে , কোন এক বিজ্ঞানী গোষ্ঠী হিগস বোসন এর সন্ধান পেয়েছেন তো অন্য কোন গোষ্টী এইটার খুব কাছে ।কিন্তু কি এই হিগস বোসন ? কেনই বা বিজ্ঞানীদের এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথা? এবার এটা সম্পর্কে কিছু জানা যাক 

আমরা জানি স্পিনের ভিত্তিতে মৌলিক কণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
-বোসন(স্পিন সংখ্যা পূর্ণ সাংখ্যিক)
-ফার্মিয়ন(স্পিন সংখ্যা ১/২ এর গুনিতক)

বোসন কণা কি টা জানেন তো? যে সব অতিপারমানবিক কণারা বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন মেনে চলে তাদের বোসন কণা বলা হয় । তবে এই বোসনের বোস শব্দ এসেছে একজন বাঙালী বিজ্ঞানীর নাম হতে । আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু হচ্ছেন সেই মহান বিজ্ঞানী যার নামানুসারেই এই কণাদের নাম বোসন বলা হয় । সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯২১ সালের মে মাসের কোন এক সময় ঢাকায় আসেন এবং একই বছরের জুনের ১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রীডার পদে যোগদান করেন । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্ক যে সমীকরণ দিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কিন্তু এই তত্ত্বের মধ্যে একটি ত্রুটি ছিল । আর এই ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আইনস্টাইন ,পল ডিরাক এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের আর বড় বড় বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কোন একটি কক্ষে বসে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক থাকা অবস্থায় এই ত্রুটির সমাধান করে বসেন মেধাবি সত্যেন্দ্রনাথ বসু ।

ম্যাক্স-প্ল্যাঙ্কের সমীকরণের জন্য প্রয়োজন ছিল কোয়ান্টাম অবস্থার তাপবলবিদ্যাগত সম্ভাবনা(Probability ) নির্ধারণ করা । আর এই কাজটি সমাহারতত্ত্ব ব্যবহার করে সত্যেন্দ্রনাথ বসু করেছিলেন । বসু তাঁর এই কাজের প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের কাছে পাঠান , আইনস্টাইন এ প্রবন্ধের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং তা নিজেই জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সাইট Zeitschrift für Physik পত্রিকায় ১৯২৪ সালে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন । অধ্যাপক বসুকে তাই কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয় । তাঁর এই অবদানের জন্য কণাদের নাম দেয়া হয়েছে বোসন কণা ।বোসন কণারা আবার প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের –
ক) মৌলিক বোসন কণা এবং
খ ) যৌগিক বোসন কণা বা মেসন ।

বোসন কণারা হচ্ছে যৌগিক তবে প্রমিত মডেল বা Standard Model অনুযায়ী মৌলিক বোসন কণা হচ্ছে ৫ ধরনের –
- ৩ ধরনের গেজ বোসন (Gauge Bosons)
- ১ টি হিগস্ বোসন (Higgs Boson)
- ১ টি গ্রাভিটন (Graviton)

আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হল হিগস-বোসন। এই কণার হিগস নামকরন করা হয়েছে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিগস বোসনের এর নাম অনুসারে । তবে এটা নিয়া আলোচনা করতে গেলে যে দুটি বিষয় মাথায় আসে তার একটি সার্ণ(CERN-European Organization for Nuclear Research) এর LHC(LARGE HADRON COLLIDER) ।সার্ন এর LHC সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ,লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার হল পৃথিবীর বৃহত্তম কণা ত্বরক বা কনা পিষণকারী যন্ত্র ! এটি পৃথিবীর যন্ত্রও বটে ! এটি ভুঅভ্যন্তরে অবস্থিত ২৭ কিলোমিটারের একটি রিং আকৃতির যন্ত্র । এটিকে একটি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার দ্বারা কন্ট্রোল করা হয় ! ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটনসমৃদ্ধ বিপরীত গামী রশ্মির কনাগুলো প্রায় আলোর গতিতে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে নিযুক্ত হয় ! এর অভ্যন্তর ভাগ একদম বায়ুশূন্য এবং তাপমাত্রা -২৭১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা , মহাশূন্যের তাপমাত্রার চাইতেও কম ! তবে এর রশ্মি নির্গমনকারী দুই টিউবের চারেপাশে তরল হিলিয়ামের প্রবাহ থাকে যা এর চৌম্বকক্ষেত্রসহ পুরো ব্যবস্থাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে !

বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী পিটার হিগস এর নামানুসারে এর নামকরন করা হয়। এটা এমন একটা উপাদান যার সাহায্যে ভরের উৎপত্তি জানা যাবে। ধারনা করা হয়ে থাকে বিগ ব্যাং এর সাথে সাথে কিছু কনার উৎপত্তি ঘটেছিল যারা ছিল ভরবিহীন। কিন্তু পরবর্তীতে এরা ভর লাভ করে।আপনি নিশ্চয় হাসছেন, এ আবার কোন পাগলের প্রলাপ। ভর কি হুদায় উইড়া আসে নি? প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে আলোচনায় আমরা জেনেছিলাম যে কোয়ার্কদের আপেক্ষিক গতিবেগের জন্য নিউট্রন, প্রোটনের ভরের সৃষ্টি হয় । আর মহাবিশ্বের সুচনালগ্নের এই ভরহিন কণার জন্য হিগস ফিল্ড নামক আরেকটা তত্ত্ব আছে। এর নাম করন করা হয় হিগস ফিল্ড নামে । অর্থাৎ কনাগুলো যখন এই হিগস ফিল্ডের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে তখন এরা ভর লাভ করবে।

এলএইচসি তে দুটি প্রোটন কনার সংঘর্ষের ফলে কিছু কনার সৃষ্টি হয় যার একটার ভর অনেকটা হিগসের তাত্ত্বিক কনার কাছাকাছি, যা হিগস কনা নামে পরিচিত।LHC এর টিউবের ভিতর কনারা আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তবে কণাদের এমন ১ বিলিয়ন সংঘর্ষে মাত্র ১ বারই হিগস বোসন কণা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।হিগস বোসন কণা উৎপাদনের চারটি প্রক্রিয়া আছে।
-হিগস স্ট্রালং
-গ্লুউন ফিউশন
-উইক বোসন ফিউশন
-টপ ফিউশন

সংক্ষেপে, হিগস বোসন হচ্ছে এমন একটা অনুমিত বা প্রেডিক্টেড কনা, যার ভর স্টান্ডার্ড এলিমেন্টে আগে থেকেই অনুমিত ছিলো এবং যা হিগস ফিল্ডের বোসন কনা নামে পরিচিত ।এই মৌলিক কনা গুলো অশূন্য হিগস ফিল্ডের সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করে থাকে। ফোটন ও সেই জাতীয় শক্তি আদানপ্রদানকারী গেজ কণার সাথে যুক্ত হয়ে এটি W+ W-, Z0 নামে ভারী মেসন তৈরী করে যেগুলি সবই ফোটন বা হিগস কণার মত বোসন। এটা সালাম, ওয়াইনবার্গ, গ্ল্যাশোর স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস কণা ও হিগসের প্রতিসাম্য ভঙ্গ ব্যবহারের ফল।ইলেক্ট্রন, নিউট্রিনো, কোয়ার্ক এসব কণার সাথে যুক্ত হয়েও হিগস কণা তাদের ভর দেয়।

আরেক ভাবে বলা যায় হিগস বোসন কনা হচ্ছে এমন একটা কনা যেটা এতোদিনের অসম্পূর্ণ স্টান্ডার্ড এলিমেন্টাল ফিজিক্সের তত্ত্ব কে সম্পূর্ন করে।


হিগস ফিল্ড কি?
এক ধরণের ফিল্ডের মধ্য দিয়ে চলার সময় মৌলিক কণাগুলো ঐ ফিল্ডের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় সংঘর্ষ বা ইন্টার‍্যাকশন করছে, আর সেই ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রাই বলে দিচ্ছে যে সেই কণার ভর কত হবে।বিগ ব্যাংয়ের পরে যখন মহাবিশ্ব কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে তখন হিগস ফিল্ড তৈরী হয়। আর হিগস ফিল্ড তৈরী হবার আগে সমস্ত কণাই ছিল ভরহীন। এই হিগস ফিল্ড তৈরী হলে – ফিল্ডের সাথে ভরহীন কণাগুলো নানাভাবে ইন্টার‍্যাকশন করতে থাকে ও কণাগুলো ভরযুক্ত হতে থাকে। ভরযুক্ত হবাব সাথে সাথে আবার কণাগুলোর বেগও কমে আসে। হিগস ফিল্ডের সাথে ইন্ট্যারেকশণের মাত্রাই বলে দেয় কণার ভর কতো হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, নিউট্রিনোগুলোর ভর খুব কম, কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এদের ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা কম। অন্যদিকে, ইলেক্ট্রন কিংবা কোয়ার্ক, নিউট্রিনোর তূলনায় বেশী ভারী – কেননা হিগস ফিল্ডের সাথে এই কণাগুলোর ইন্টার‍্যাকশনের মাত্রা নিউট্রিনোর চাইতে বেশী।
হিগস ফিল্ড এমন একটা তাত্ত্বিক ক্ষেত্র যা অদৃশ্যমান এবং চুম্বক শক্তি এর মতো । এটা মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে । মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে মৌলিক কনা ছড়িয়ে থাকুক না কেনো, এর মধ্যে দিয়ে পাস করলে , সে তখন বাকী কনাগুলোকে ডেকে আনবে , একটা আরেকটার সাথে যুক্ত হয়ে ভর লাভ করবে। ফোটন এখানে বাহক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং বলা যায় পার্টিকেল গুলোর কোন অস্তিত্বই ছিলোনা কিন্তু যখন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় তখন তা ভর লাভ করে।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী লিউ লেডারম্যান হচ্ছেন একজন আজ্ঞেয়বাদী(যিনি ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে সন্ধিহান,কখনো বলেন না যে ঈশ্বর নেই আবার অস্বীকারও করেন না) পদার্থবিদ। তিনি ই সর্বপ্রথম এর নাম দেন গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কনা। কিন্তু বিজ্ঞানী হিগস এর বিরোধিতা করে বলেন তিনি নিজেই ঈশ্বরে বিশাসী না, তাছাড়া এই কনার আবিষ্কারের জন্য তার অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন goddam particle। কিন্তু প্রকাশক বইতে এ নামটা পরিবর্তন করে গডস পার্টিক্যাল করে দেন।... আর তখন থেকেই তা গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কণা নামে পরিচিত হওয়া শুরু করে ! আজ আমাদের পাশের গ্রামে এক হুজুর এই ঈশ্বর কণা নিয়ে ওয়াজে বয়ান দিয়ে বলছিলেন , "নাউজুবিল্লাহ, জাহান্নামি নাস্তিকেরা নাকি ইসরাইলের ষড়যন্ত্রে ঈমান ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বর কণা বের করেছে । " কথা গুলো শোনার পরে আমার বাবা ঈমান হারানোর বিচলিত হয়ে এই কথাগুলো আমাকে বলছিলেন । যাই হোক ধর্ম নিয়ে টানব না ... আমার অনেক বন্ধুও এই ঈশ্বর কণা নিয়ে চিন্তিত । তাই বলছি ঈশ্বর কণা কেবল পদার্থবিজ্ঞানের একটি টার্ম । 
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস অণু আবিষ্কার করার পর মনে করলেন এই অণুকে আর ভাঙ্গা যায় না এবং অণুই হচ্ছে পরম ক্ষুদ্র কণা। কিন্তু এখন আমরা জানি যে অণু কোন পরম ক্ষুদ্র কণা নয় এবং কোন মৌলিক কণা ও নয়। আমাদের এই মহাবিশ্বের সব কণাকে একটি মৌলিক কাঠামোতে বিভক্ত করা যায়। যে তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা ভাগ করতে পারি তাকে The Standard Model of Particle Physics বলে। এই তথ্য অনুসারে মহাবিশ্বের ব্যারিওনিক ম্যাটার অর্থ্যাত যাদের প্রোটন এবং নিউট্রন রয়েছে কিন্তু ইলেকট্রন বা নিউট্রিনো নেই, তাদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফার্মিওন যেখানে কণাগুলোর ভর আছে এবং ইলেকট্রিক চার্জ আছে। অন্যদিকে, আরেকটি ভাগ হল বোসন যেখানে কণাগুলো প্রকৃতির বল ধারণ করে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে আরেকটি অভিনব কণার সন্ধান মিলতে পারে বলে 1960 সাল থেকে আশাবাদী ছিলেন পদার্থবিদেরা। অবশেষে 4 জুলাই, 2012 সালে CERN এ অবস্থিত Large Hadron Collider(LHC) দিয়ে সেই অভিনব কণার সন্ধান মেলে। বিজ্ঞানী পীটার হিগস এবং আমাদের বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বোস এর নামানুসারে এই নতুন কণার নাম দেওয়া হয় হিগস-বোসন কণা। এই হিগস-বোসন এর চিহ্ন  হলো H0।
 এই হিগস-বোসন মহাবিশ্বের একটি অনেক বড় রহস্য ছিল একসময়। তবে আমরা এখন এই হিগস-বোসন এর ব্যাপারে অল্প কিছু হলেও জেনেছি। হিগস হল একটি বোসন কণা এবং একটি মৌলিক কণা।  প্রথমে ধারণা করা হয় যে এই কণার ভর আণবিক নিউক্লিয়াস এর এক হাজার ভাগের এক ভাগ। তবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ  করে দেখা যায় যে এই কণার ভর হলো 125 Gev যেটি প্রোটনের ভর এর চেয়ে 130 গুন বেশি। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো হিগস-বোসন এর কোন প্রকার স্পিন নেই, ইলেকট্রিক চার্জ নেই এবং কোন সাধারন বলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে না। অন্যদিকে, কোন সব বোসন কণার যেমন ক্ষেত্র আছে: যেমন ফোটন এর রয়েছে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তেমনি হিগস-বোরন এরও আছে হিগস ফিল্ড। ধারণা করা হচ্ছে যে এই মহাবিশ্বের যেকোনো কিছুর ভর আছে এই হিগস ফীল্ড এর জন্য। কোন বস্তু জড়তায় থাকতে পারে এই হিগস ফীল্ড এর কারণেই। যে বস্তুর যত ভর বেশি রয়েছে সেই বস্তু হিগস ফীল্ড এর সাথে ততবেশি মিথস্ক্রিয়া করে। অন্যদিকে, হিগস-বোসন শুধু বেশি ভর বস্তু দের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বলে ফোটন আলোর গতিতে ছুটতে পারে অর্থাৎ এই হিগস ফীল্ড এর কারণে সব বস্তু আলোর গতিতে ছুটতে পারে না।
এই হিগস-বোসন আবার অনেক আনস্টেবল। এর জীবনকাল সময় মাত্র 1.56*10^-22 সেকেন্ড এবং এই সময়ের পরে হিগস কণা রূপান্তরিত হয় Bottom-Antibottom pair, দুটি w-বোসন, দুটি Gluon, Tau-Tntitau Pair, দুটি z-বোসন এবং দুটি   ফোটন এ। মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার 10^-12 সেকেন্ড পরেই এই হিগস ফীল্ড তৈরি হয়।
বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যায় যে এই হিগস কণার ভর একটি ক্রিটিকাল মাত্রায় আছে। হিগস কণার ভর যদি এই মাত্রার থেকে আর একটু বেশি হয় তবে পুরো মহাবিশ্ব কলাপ্স করতে পারে একটি বিন্দুতে। হিগস এর এই ভরের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে বলা হয় Phase Transition। তবে এই কোলাপস আর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মিলে মহাবিশ্বের কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন যে Dark Matter এর সাথে এই হিগস কণার সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে আমাদের জানার এখনো অনেক কিছু বাকি। হয়তো এই হিগস-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে পারলে আমরা মহাবিশ্বের সকল রহস্যের সমাধান খুঁজে পাব, না হয় Quantum Theory of Gravity পাবো। তাই আমাদের এখন এই Hìggs-বোসন এর রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
Source1-https://atlas.cern/updates/atlas-feature/higgs-বোসন
source2-https://phys.org/news/2013-12-collapse-universe-closer.html

তথ্যঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Higgs_boson
https://en.wikipedia.org/wiki/Photon
https://en.wikipedia.org/wiki/Electromagnetism
https://home.cern/topics/large-hadron-collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Large_Hadron_Collider
https://en.wikipedia.org/wiki/Satyendra_Nath_Bose

Posted at July 08, 2020 |  by Arya ঋষি
রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
সংস্কৃতে “রাম” শব্দের অর্থ যে ঘুরে বেড়ায়, এবং এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল রোমিং (Roaming)। তাই রাম আর রোমিং সমান!
এটি, এবং হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে আরও অনেক অন্যান্য কুৎসিত, হাস্যকর এবং গভীরভাবে মর্যাদাহানিকর উল্লেখ ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বারা প্রকাশিত পাঠ্যবইতে পড়ানো হচ্ছে।
২০১১ সালে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।
অতীত এবং ঐতিহ্য শিরোনামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যেখানে ভগবান রামের বিষয়ে অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং অপমানকর উল্লেখ রয়েছে, যা ক্রোধ আর যাতনা উদ্রেক করছে। বইটির চতুর্থ অধ্যায় হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস ধারা এবং এটি বিশেষভাবে অবমাননাকর।
অধ্যায়টিতে বলা হয়েছে যে সংস্কৃতে *রাম” শব্দের অর্থ যাযাবর, অথবা একজন ব্যক্তি যে ঘুরে বেড়ায়। এবং “রাম” শব্দের সাথে “রোমিং” শব্দের বেশ মিল আছে। সংস্কৃত এবং ইংরেজির এই “মিল” পরে এই অধ্যায়ে ভিত্তি গঠন করেছে  অত্যন্ত অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা রচিত জঘন্য এবং নিন্দিত “আর্য আক্রমণ তত্ত্বের”।
অধ্যায়ে বলা হচ্ছে যে বহু পূর্বে, একদল যাযাবর মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি থেকে খাদ্য আর চারণভূমির খোঁজে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারপর এই যাযাবরেরা “আদি নিবাসীদের” সাথে মিশে যায় এবং তাদের সাথে যুদ্ধও করেছিল।
মধ্য এশিয়ার এই যাযাবরেরা আদি নিবাসীদের সাথে অধিকাংশ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং উপমহাদেশের উত্তর ভাগে বসবাস শুরু করার পর ভারতীয় উপদ্বীপেও বাস করা আরম্ভ করে। অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
“দক্ষিণ ভারতে এই যাযাবরদের বসবাস শুরু করার কাহিনীই হল রামায়ণ।” তাই “রাম” বলতে রামায়ণের একজন যাযাবরকে বোঝায়, পাঠ্যবই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে!
বইতে লেখা আছে,
“আদি নিবাসীদের ওপর বিজয়লাভের কাহিনীগুলি মুখের কথায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করল এবং তার থেকে গল্প উদ্ভুত হতে লাগল। সেই গল্পগুলিতে পরাজিতদের কাহিনীর খলনায়ক হিসেবে পেশ করা হতে লাগল এবং রাক্ষস, অসুর, অসভ্য এবং ডাকাত রূপে বর্ণনা করা হতে থাকল। বিজয়ীদের লেখা এরূপই একটি গল্প হল রামায়ণ, এবং তাই রাবণকে শয়তান আর বিপজ্জনক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।”

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিলকিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।


অধ্যায়ে আরো বলে যাওয়া হয়েছে যে “ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর” অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি এবং ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষাগুলিতে বেশ মিল রয়েছে। মধ্য এশিয়ার কৃষিজীবীরা খাদ্যের অভাবের কারণে ইউরোপ, ইরান এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচরণ করা শুরু করেছিল।
অধ্যায়ে এই ভুয়ো দাবী করা হয়েছে যে সংস্কৃতের এবং অন্যান্য যে ভাষাগুলিতে আমরা আজ কথা বলে থাকি সেগুলির জন্ম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠী থেকে হয়েছে। অধ্যায়ে ঋকবেদ এবং জেন্দ আবেস্তার (পার্সিদের পবিত্র গ্রন্থ) মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
“এই কারণেই মিল রয়েছে, কিন্তু দুটি গ্রন্থের মধ্যে মিল আছে।”, অধ্যায়ে বলা হয়েছে। এর অভূতপূর্ব উদাহরণ পেশ করা হয়েছে: ঋক বেদে দেব হলেন ঈশ্বর এবং অত্যন্ত সন্মানীয় যেখানে জেন্ড আবেস্তায় দায়েভ বলতে শয়তানদের বোঝায়। জেন্দ আবেস্তায় উচ্চতম দেব হলেন আহুর যেখানে অসুর বলতে তাদের বোঝায় যাদের মধ্যে কিছু ঋণাত্মক গুণাবলী বর্তমান।”
অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, ”
ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষাগুলিতে যারা কথা বলত তাদের মধ্যে সম্ভবত কোন বিবাদের কারণে সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘাতের ফলে সেই ভাষা উপগোষ্ঠীর একটি ভাষায় কথা বলা একই দল উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ভারতীর উপমহাদেশে প্রবেশ করে। এবং যে ভাষা তাদের সাথে বিবর্তিত হয়ে ওঠে সেটি পরবর্তীতে ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী নামে পরিচিত। ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রাচীনতম লেখ হল ঋক বেদ।”
অধ্যায়ে এই ভুল দাবীও করা হয়েছে যে বৈদিক গ্রন্থগুলিতে “ইন্দো-আর্য”দের প্রচরণ এবং উপমহাদেশে তাদের বসতি স্থাপনের কাহিনী পাওয়া যায়, এবং এই যাযাবরেরা এখানে যে সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিল তা বৈদিক সভ্যতা নামে পরিচিত।
“আর্য আক্রমণ তত্ত্ব” নামক ধারণাটি ভুয়ো এবং এখন তা পুরোপুরি নিন্দিত, ইউরোপীয়দের এবং পরে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা এটি একটি হানিকর উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছিল। ঐতিহাসিক সমীর দাস বলেছেন, “প্রতারণা, অসততা, এবং ছলনার ভিত্তিতে বানানো এই তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম আক্রমণকারীদের দ্বারা লুটতরাজ, লুণ্ঠন, এবং অকহতব্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রোধের উদ্রেকের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করা।”
“এই ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে ঐতিহাসিকেরা এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে উত্তর এবং পূর্বে বসবাসকারী ভারতীয়রা আসলে আক্রমণকারীদের উত্তরসূরী এবং ভারতীয় উপদ্বীপের বর্তমান বসবাসকারীদের পূর্বপুরুষদের তারা দখলচ্যুত করেছিল। এখানে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে পরবর্তীতে মুসলিম আক্রমণও একই উদাহরণ অনুসরণ করে এবং তাই রেগে যাওয়ার কিছুই নেই। এই উদ্দেশ্যে মাথায় রেখেই এই গল্প ফাঁদা হয়েছিল।” বসু বলেছেন।  অধিকাংশ জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই ব্যাখ্যা সমর্থন করেন।
অনেকে এই কথাও তুলে ধরেছেন যে তৃণমূলের সাথে যুক্ত থাকা পণ্ডিত এবং এই দলের বেশ কিছু নেতার দ্বারা প্রচারিত এই মিথ্যা আখ্যান যে ভগবান রাম মূলত উত্তর ভারতীয়দের আরাধ্য দেবতা এবং বাংলায় তাঁর কোন স্থান নেই, তার সাথে এই অধ্যায়ের পাঠগুলি বেশ খাপ খায়।  গত বছরের লোকসভা ভোটের পর অমর্ত্য সেনও একই সুরে কথা বলেছিলেন, যে ভোটে বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টি অভূতপূর্ব ফলাফল লাভ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমাজবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মতামত রেখেছেন যে, “উদ্দেশ্য হল বাংলা আর বাঙালিকে একটি পৃথক সত্ত্বা হিসাবে দর্শানো যার কিছুই উত্তর  ভারতীয়দের সাথে মেলে না, যে উত্তর ভারতীয়দের পূর্বপুরুষেরা বহিরাগত আক্রমণকারী। এই ভুয়ো এবং ধূর্ত তত্ত্বের একটি লুক্কায়িত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে: বিজেপিকে বহিরাগতদের পার্টি হিসাবে বর্ণনা করা।”
ইতিহাসের পাঠ্যবইটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক শিরীন মাসুদ দ্বারা সম্পাদিত, যিনি বইটির “বিজ্ঞানসম্মত অনুমান”ও (পরিকল্পনা) তৈরি করেছেন। কাউন্সিলের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা এই বইটি প্রস্তাবিত ও গৃহীত হয় তার সভাপতি হলেন জনৈক অভীক মজুমদার (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক) এবং কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দে এর একজন সদস্য।
২০১১ সালের জুলাইতে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তক যাচাই করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও মাসুদ, মজুমদার এবং দে ছিলেন। এই বিষয়ে গত বছর গঠিত হওয়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও তাঁরা আছেন।
বর্তমান রাজ্য সরকারের শাসনকালীন প্রকাশিত হওয়া পাঠ্যবই অতীতেও জনরোষের কারণ হয়েছে যখন রামধনুর মত শব্দ পাল্টে রংধনু করে দেওয়া হয়, যা অনেকের মত মুসলিম তোষণের জন্যই করা।
অভিভাবক এবং কিছু পণ্ডিতদের কাছ থেকে প্রতিবাদ আসা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এই ভুলভাল ইতিহাস সম্বলিত পাঠ্যবইগুলি পড়িয়ে যাচ্ছে, এবং হিন্দুধর্মকে ঠাট্টা করা জারী আছে।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়দীপ মজুমদারের লেখা মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন শুভম ক্ষত্রী।

রাম মানে রোম ব্যাখ্যা

রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
রাম মানে রোম ব্যাখ্যা
সংস্কৃতে “রাম” শব্দের অর্থ যে ঘুরে বেড়ায়, এবং এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল রোমিং (Roaming)। তাই রাম আর রোমিং সমান!
এটি, এবং হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে আরও অনেক অন্যান্য কুৎসিত, হাস্যকর এবং গভীরভাবে মর্যাদাহানিকর উল্লেখ ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বারা প্রকাশিত পাঠ্যবইতে পড়ানো হচ্ছে।
২০১১ সালে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।
অতীত এবং ঐতিহ্য শিরোনামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যেখানে ভগবান রামের বিষয়ে অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং অপমানকর উল্লেখ রয়েছে, যা ক্রোধ আর যাতনা উদ্রেক করছে। বইটির চতুর্থ অধ্যায় হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস ধারা এবং এটি বিশেষভাবে অবমাননাকর।
অধ্যায়টিতে বলা হয়েছে যে সংস্কৃতে *রাম” শব্দের অর্থ যাযাবর, অথবা একজন ব্যক্তি যে ঘুরে বেড়ায়। এবং “রাম” শব্দের সাথে “রোমিং” শব্দের বেশ মিল আছে। সংস্কৃত এবং ইংরেজির এই “মিল” পরে এই অধ্যায়ে ভিত্তি গঠন করেছে  অত্যন্ত অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা রচিত জঘন্য এবং নিন্দিত “আর্য আক্রমণ তত্ত্বের”।
অধ্যায়ে বলা হচ্ছে যে বহু পূর্বে, একদল যাযাবর মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি থেকে খাদ্য আর চারণভূমির খোঁজে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারপর এই যাযাবরেরা “আদি নিবাসীদের” সাথে মিশে যায় এবং তাদের সাথে যুদ্ধও করেছিল।
মধ্য এশিয়ার এই যাযাবরেরা আদি নিবাসীদের সাথে অধিকাংশ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং উপমহাদেশের উত্তর ভাগে বসবাস শুরু করার পর ভারতীয় উপদ্বীপেও বাস করা আরম্ভ করে। অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
“দক্ষিণ ভারতে এই যাযাবরদের বসবাস শুরু করার কাহিনীই হল রামায়ণ।” তাই “রাম” বলতে রামায়ণের একজন যাযাবরকে বোঝায়, পাঠ্যবই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে!
বইতে লেখা আছে,
“আদি নিবাসীদের ওপর বিজয়লাভের কাহিনীগুলি মুখের কথায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করল এবং তার থেকে গল্প উদ্ভুত হতে লাগল। সেই গল্পগুলিতে পরাজিতদের কাহিনীর খলনায়ক হিসেবে পেশ করা হতে লাগল এবং রাক্ষস, অসুর, অসভ্য এবং ডাকাত রূপে বর্ণনা করা হতে থাকল। বিজয়ীদের লেখা এরূপই একটি গল্প হল রামায়ণ, এবং তাই রাবণকে শয়তান আর বিপজ্জনক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।”

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অল্পকাল পরেই বাংলায় বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের “ইসলামীকরণ” শুরু হয়ে গেছিলকিন্তু সম্প্রতি এটি বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।


অধ্যায়ে আরো বলে যাওয়া হয়েছে যে “ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর” অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি এবং ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষাগুলিতে বেশ মিল রয়েছে। মধ্য এশিয়ার কৃষিজীবীরা খাদ্যের অভাবের কারণে ইউরোপ, ইরান এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচরণ করা শুরু করেছিল।
অধ্যায়ে এই ভুয়ো দাবী করা হয়েছে যে সংস্কৃতের এবং অন্যান্য যে ভাষাগুলিতে আমরা আজ কথা বলে থাকি সেগুলির জন্ম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠী থেকে হয়েছে। অধ্যায়ে ঋকবেদ এবং জেন্দ আবেস্তার (পার্সিদের পবিত্র গ্রন্থ) মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
“এই কারণেই মিল রয়েছে, কিন্তু দুটি গ্রন্থের মধ্যে মিল আছে।”, অধ্যায়ে বলা হয়েছে। এর অভূতপূর্ব উদাহরণ পেশ করা হয়েছে: ঋক বেদে দেব হলেন ঈশ্বর এবং অত্যন্ত সন্মানীয় যেখানে জেন্ড আবেস্তায় দায়েভ বলতে শয়তানদের বোঝায়। জেন্দ আবেস্তায় উচ্চতম দেব হলেন আহুর যেখানে অসুর বলতে তাদের বোঝায় যাদের মধ্যে কিছু ঋণাত্মক গুণাবলী বর্তমান।”
অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, ”
ইন্দো-ইরানী ভাষা উপগোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষাগুলিতে যারা কথা বলত তাদের মধ্যে সম্ভবত কোন বিবাদের কারণে সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘাতের ফলে সেই ভাষা উপগোষ্ঠীর একটি ভাষায় কথা বলা একই দল উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ভারতীর উপমহাদেশে প্রবেশ করে। এবং যে ভাষা তাদের সাথে বিবর্তিত হয়ে ওঠে সেটি পরবর্তীতে ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী নামে পরিচিত। ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রাচীনতম লেখ হল ঋক বেদ।”
অধ্যায়ে এই ভুল দাবীও করা হয়েছে যে বৈদিক গ্রন্থগুলিতে “ইন্দো-আর্য”দের প্রচরণ এবং উপমহাদেশে তাদের বসতি স্থাপনের কাহিনী পাওয়া যায়, এবং এই যাযাবরেরা এখানে যে সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিল তা বৈদিক সভ্যতা নামে পরিচিত।
“আর্য আক্রমণ তত্ত্ব” নামক ধারণাটি ভুয়ো এবং এখন তা পুরোপুরি নিন্দিত, ইউরোপীয়দের এবং পরে বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা এটি একটি হানিকর উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছিল। ঐতিহাসিক সমীর দাস বলেছেন, “প্রতারণা, অসততা, এবং ছলনার ভিত্তিতে বানানো এই তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম আক্রমণকারীদের দ্বারা লুটতরাজ, লুণ্ঠন, এবং অকহতব্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রোধের উদ্রেকের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করা।”
“এই ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে ঐতিহাসিকেরা এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে উত্তর এবং পূর্বে বসবাসকারী ভারতীয়রা আসলে আক্রমণকারীদের উত্তরসূরী এবং ভারতীয় উপদ্বীপের বর্তমান বসবাসকারীদের পূর্বপুরুষদের তারা দখলচ্যুত করেছিল। এখানে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে পরবর্তীতে মুসলিম আক্রমণও একই উদাহরণ অনুসরণ করে এবং তাই রেগে যাওয়ার কিছুই নেই। এই উদ্দেশ্যে মাথায় রেখেই এই গল্প ফাঁদা হয়েছিল।” বসু বলেছেন।  অধিকাংশ জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই ব্যাখ্যা সমর্থন করেন।
অনেকে এই কথাও তুলে ধরেছেন যে তৃণমূলের সাথে যুক্ত থাকা পণ্ডিত এবং এই দলের বেশ কিছু নেতার দ্বারা প্রচারিত এই মিথ্যা আখ্যান যে ভগবান রাম মূলত উত্তর ভারতীয়দের আরাধ্য দেবতা এবং বাংলায় তাঁর কোন স্থান নেই, তার সাথে এই অধ্যায়ের পাঠগুলি বেশ খাপ খায়।  গত বছরের লোকসভা ভোটের পর অমর্ত্য সেনও একই সুরে কথা বলেছিলেন, যে ভোটে বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টি অভূতপূর্ব ফলাফল লাভ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমাজবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মতামত রেখেছেন যে, “উদ্দেশ্য হল বাংলা আর বাঙালিকে একটি পৃথক সত্ত্বা হিসাবে দর্শানো যার কিছুই উত্তর  ভারতীয়দের সাথে মেলে না, যে উত্তর ভারতীয়দের পূর্বপুরুষেরা বহিরাগত আক্রমণকারী। এই ভুয়ো এবং ধূর্ত তত্ত্বের একটি লুক্কায়িত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে: বিজেপিকে বহিরাগতদের পার্টি হিসাবে বর্ণনা করা।”
ইতিহাসের পাঠ্যবইটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক শিরীন মাসুদ দ্বারা সম্পাদিত, যিনি বইটির “বিজ্ঞানসম্মত অনুমান”ও (পরিকল্পনা) তৈরি করেছেন। কাউন্সিলের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা এই বইটি প্রস্তাবিত ও গৃহীত হয় তার সভাপতি হলেন জনৈক অভীক মজুমদার (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক) এবং কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দে এর একজন সদস্য।
২০১১ সালের জুলাইতে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তক যাচাই করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও মাসুদ, মজুমদার এবং দে ছিলেন। এই বিষয়ে গত বছর গঠিত হওয়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিতেও তাঁরা আছেন।
বর্তমান রাজ্য সরকারের শাসনকালীন প্রকাশিত হওয়া পাঠ্যবই অতীতেও জনরোষের কারণ হয়েছে যখন রামধনুর মত শব্দ পাল্টে রংধনু করে দেওয়া হয়, যা অনেকের মত মুসলিম তোষণের জন্যই করা।
অভিভাবক এবং কিছু পণ্ডিতদের কাছ থেকে প্রতিবাদ আসা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এই ভুলভাল ইতিহাস সম্বলিত পাঠ্যবইগুলি পড়িয়ে যাচ্ছে, এবং হিন্দুধর্মকে ঠাট্টা করা জারী আছে।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়দীপ মজুমদারের লেখা মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন শুভম ক্ষত্রী।

Posted at July 06, 2020 |  by Arya ঋষি

Tags

Text Widget

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation test link ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Blog Archive

© 2013 Arya Rishi. WP Theme-junkie converted by Bloggertheme9Published..Blogger Templates
Blogger templates. Proudly Powered by Blogger.
back to top